আফগানিস্তান সাম্রাজ্যবাদের বধ্যভূমি

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

বিগত ঊনবিংশ শতাব্দির শুরুতে তৎকালীন পরাশক্তি বৃটিশ সাম্রাজ্যকে চূড়ান্তভাবে উৎখাতের পর একই শতাব্দির শেষভাগে এসে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বীর আফগান যোদ্ধারা। এই পরাজয়ের জের ধরেই বৃটিশ সাম্রাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন অল্পদিনেই খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। মাত্র কয়েক দশক পর এসে এবার আরেক জবরদখলকারী বর্তমান দুনিয়ার অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় সামরিক জোট ন্যাটোকেও লজ্জাজনকভাবে নিজেদের ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করে সারা দুনিয়াতে অপরাজেয় জাতি হিসেবে নিজেদের শির উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বীর আফগান জাতি। দেশকে শত্রুর কবল থেকে স্বাধীন করার গৌরবময় এই যুদ্ধ পরিচালনা করেছে বহুল আলোচিত তালেবান সংগঠন। এই সংগঠনের যোদ্ধারা যে অসীম সাহস ও অতুলনীয় বীরত্ব দেখিয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

আফগানিস্তান প্রসঙ্গে বিশ্বজয়ী মহাবীর আলেকজান্ডারের বহুল আলোচিত উক্তি ছিল- “আপনি যদি আফগানিস্তানে ঢুকতে চান তাহলে সেটা বেশ সহজ। কিন্তু যখন বেরিয়ে আসতে চাইবেন তখন সেটা খুব কঠিন হয়ে যাবে”। কথাটা তিনি সাধারণ পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন এমন নয়, বরং যারা দেশটি জবরদখল করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন। গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের এই ঐতিহাসিক মন্তব্যটি দু-চার বছর বা দু’-একশ’ বছর আগের নয়। তিনি বলেছিলেন, খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ সালে, অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। সেই সময়ে আফগানিস্তান ছিল পারস্য সা¤্রাজ্যের শাসনে। পারস্য স¤্রাট তৃতীয় দারিয়ুসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আলেকজান্ডার আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তার হাতে দারিয়ুসের বিশাল বাহিনী পরাস্ত হয়েছিল।

এর মধ্য দিয়ে প্রাচীন পারস্য সা¤্রাজ্যের পতনেরও সূচনা হয় বলে অনেকে মনে করেন। পরে ভারত আক্রমণ করে আলেকজান্ডার ব্যর্থ হন। আরো পরে পারস্যের পূর্বপ্রান্তের প্রদেশ আফগানিস্তানে একটি গ্রিক রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের অংশ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্রের নাম ছিল ব্যাক্ট্রিয়া।

আলেকজান্ডারের অন্যতম সেনাপতি সেলুকাস, যার নামটি একটি বিস্ময়বাক্যের মধ্যে (‘সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’) অমর হয়ে আছে, সেই সেলুকাসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্ট্রিয়ায় গ্রিকরা পরবর্তী তিনশ’ বছর ধরে শাসন জারি রাখে।

আজও আফগানিস্তানের কোনো কোনো প্রতœখননে যে গ্রিক শহরের অবিকল নমুনা উঠে আসে, তার কারণ ব্যাক্ট্রিয়ায় এই গ্রিক শাসন। আফগানিস্তানের কিছু শহরের নামে এখনো আলেকজান্ডার বেঁচে আছেন; যেমন কান্দাহার। শব্দটির উৎপত্তি ইস্কান্দার থেকে। যেটি আলেকজান্ডারের ফারসি উচ্চারণ ইস্কান্দার থেকে উদ্ভূত।

ঐতিহাসিক এই আলোচনার উদ্দেশ্য আফগানিস্তানের ইতিহাস পর্যালোচনা করা নয়, বরং বলতে চাচ্ছি, আলেকজান্ডারের উক্তির তাৎপর্য। এই আফগানিস্তানকে তিনি বলেছিলেন ‘অপরাজেয়’। দেশটির আরো একটি ‘ডাকনাম’ আছে। সেটি হলো, সা¤্রাজ্যসমূহের গোরস্তান বা ‘এৎধাবুধৎফ ড়ভ ঊসঢ়রৎবং’. এই নামটিও যথার্থ। কারণ, যত বড় বড় বীর এই দেশটি দখল করতে গেছেন, তাদের প্রায় কেউই অক্ষত ফিরতে পারেননি। দখলে রাখা তো দূরের কথা। সেই আলেকজান্ডারের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য বহিঃশক্তি আফগানিস্তান দখল করেছে বা করার চেষ্টা করেছে।

কিন্তু আলেকজান্ডার যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে গিয়েছিলেন, সেটি কেউই মনে রাখেনি। একের পর এক তারা আফগানিস্তান দখল করতে গেছে, পরিণতিতে চরম পরাজিত হয়েছে, সা¤্রাজ্য খান খান হয়েছে। এই অবধারিত পরিণতির ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে শোচনীয় ও করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল ব্রিটিশদের। তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেপরোয়াভাবে নাক গলাবার চেষ্টা করলে যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৩৯ সালে। ১৮৪২ সালে কাবুলে ব্রিটিশের সৈন্যসামন্ত ও তাদের পরিজন মিলিয়ে ছিল ১৬ হাজারের মতো মানুষ। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অতি বাড়াবাড়ির কারণে এরা আফগানদের হাতে আক্রান্ত হয়। আফগানরা তাদের তাড়া করে খাইবার পাসের দুর্গম রাস্তায় নৃশংসভাবে হত্যা করে।

আরও পড়তে পারেন-

১৬ হাজার দখলদার বৃটিশের মধ্যে সাড়ে চার হাজার সৈনিক ছাড়া বাকিরা ছিল বেসামরিক মানুষ, শিশু, নারী। কিন্তু আফগানরা কাউকে ক্ষমা করেনি। মাত্র একজন সৈনিক ডাক্তার ব্রাইডেন ঘোড়ার পিঠে ঝুলতে ঝুলতে জালালাবাদ শহরে তাদের ঘাঁটিতে ফিরতে পেরেছিলেন। তা-ও সম্ভব হয়েছিল সম্ভবত আফগানদের ইচ্ছাতেই। তারা চাইছিল, অন্তত একজন ব্রিটিশ যেন ঘাঁটিতে ফিরে গিয়ে তাদের করুণ পরিণতির কথা রিপোর্ট করতে পারে।

এগুলো পুরনো দিনের কথা। ব্রিটিশ জাতির সেই করুণ ইতিহাসও সা¤্রাজ্যবাদীদেরকে কোনো শিক্ষা দিতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত সেনাবাহিনীও আফগানিস্তান দখল করে। তাদের শোচনীয় পরিণতি আমাদের সকলের জানা। আফগানদের সর্বশেষ শিকার বর্তমান বিশ্বের একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি তার সামরিক মিত্রদের নিয়ে (ন্যাটো) আফগানিস্তানে দখল মজবুত করতে বৃহৎ এক জোট গঠন করেছিল। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সর্বাত্মক হামলার পর ২০ বছর ধরে পৃথিবীর সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থশক্তি দিয়ে দেশটিকে পদানত করার চেষ্টা করে আমেরিকা। তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে একটি দেশ দখলের সেই চেষ্টা অনেক আগেই ব্যর্থ হয়ে যায়। তার আলামত আমরা দেখতে পাই, যখন ২০১১ সালে দেশটি আফগান প্রতিরোধযোদ্ধা তথা তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনার ধারাবাহিকতায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তালেবানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত পর্বে আসেন। ২০২০-এর ফেব্রুয়ারিতে কাতারের মধ্যস্ততায় উভয়ের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আর এর মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তালেবানের সম্ভাব্য বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তানে তার দেশের নিশ্চিত পরাজয়টি আর প্রলম্বিত করতে চাননি। তিনি এখান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার আগেই তালেবানের অগ্রাভিযান জোরদার হয়। কোনো কোনো এলাকায় আফগান সরকারি বাহিনী যুদ্ধ না করে পাশের দেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তখন কোনো কোনো পর্যবেক্ষক এমনকি মার্কিনিদেরও কেউ কেউ বলেছিলেন যে, ন্যাটো জোটের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান মাত্র ছয়মাসের মধ্যে আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে। অথচ বাস্তবে আমরা যা দেখতে পেলাম, জোট সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার আগেই গত ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে রাজধানী কাবুলের চূড়ান্ত পতন ঘটে যায়।

কাবুলের পতনের পর মার্কিন মদদপুষ্ট আফগান সরকারের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন হেলিকপ্টার ভর্তি টাকা নিয়ে। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আফগানিস্তানের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে পরাজিত পশ্চিমাবিশ্ব দৃশ্যত এত নগ্ন মিথ্যা প্রচারণা শুরু করে যে, আফগানিস্তান থেকে দখলদার বিদেশী শক্তিকে উৎখাত করে তালেবান যেনো ‘মহা অপরাধ’ (!) করে ফেলেছে। এখন তালেবানরা যাতে প্রতিশোধ না নেয়, বিদেশী আগ্রাসী শক্তির লোকজন এবং তাদের দালালদের যেন হত্যা না করে, সেটাই যেন বিশ্বের দেশগুলোর মূল চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।

যারা এত বছর ধরে মভর্কিন-ন্যাটো জবরদখলকারী সেনাদের নির্বিচার হত্যা, খুন, জখম, ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ করেনি, তারাই এখন তালেবানের কাছে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল আচরণের প্রত্যাশা করছেন। আমেরিকার জবরদখলের কারণে আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে লাখো নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ড্রোন হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ অসংখ্য বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে তারা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে আফগানিস্তানের মানুষের ওপর। কত মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে মার্কিন সৈন্যরা, তার কোনো হিসেব নেই। কূটনীতিতে নয়, কোনো অপকৌশলে নয়, তৃতীয় কোনো দেশের সেনাসমর্থনেও নয়, মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজেদের পাহাড়সম দৃঢ় মনোবল এবং সীমিত সামরিক সামর্থ্য নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে পশ্চিমা দখলদারদের পরাস্ত করে বিজয়ী হয়েছে তালেবান। অদম্য মনোবলের ওপর ভর করে দীর্ঘ দুই দশকের নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর নিজেদের দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে তারা। এই বিজয় নিঃসন্দেহে আকাশ ছোঁয়া গৌরবের। কারণ, এই আধুনিককালেও তালেবান প্রমাণ করে দিল, আফগান জাতির স্বাধীনতার চেতনার কাছে পরাশক্তির ভয়ংকর মারণাস্ত্র কতটা অসহায়।

বিজয়ী তালেবান আমেরিকার দালালদের সহজেই হত্যা করতে পারত। কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারত। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটো জোটের দূতাবাস দখল করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারত। কিন্তু তারা এসব করেনি। বরং সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযমের নজির স্থাপন করেছে। বিদেশিদের দূতাবাস থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার এবং বিমানে করে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি মার্কিন ও ন্যাটোর যেসব দোসর ২০ বছর ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে, মানুষ হত্যায় দখলদারদের সহযোগিতা করেছে, তাদের কাউকেও পাকড়াও করেনি তালেবান। প্রাণের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত ওই ব্যক্তিদের মধ্যে দেশ ছেড়ে যাবার প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখা গেছে কাবুল বিমানবন্দরে।

তালেবানের বিজয়ের পর পশ্চিমা ও ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়ায় যেন শোকের মাতম শুরু হয়। তারা মিথ্যাচার শুরু করে, তালেবানের শাসনে আফগান নারীরা আবার চার দেয়ালে বন্দি হয়ে যাবে, তাদের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হবে। নাগরিকদের স্বাধীনতা হরণ করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু তালেবান নেতৃত্ব এসব মিথ্যাচারের মোকাবেলায় যে বুদ্ধিমত্তা ও নৈপুণ্য দেখিয়েছে, তাতে প্রমাণিত হয়ে যে, ২০ বছর আগের তুলনায় এখনকার তালেবান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও অনেক বেশি দক্ষ। তালেবানের কূটনৈতিক নৈপুণ্যের কাছে পশ্চিমা বাঘা বাঘা রাজনীতিক ও সমরবিদরা কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে। তালেবানের এই কূটনৈতিক দক্ষতার প্রকাশ ঘটে কাবুলে উপস্থিতির দিনেই তাদের উপ-প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের ঘোষণায়। তিনি বলেন, তালেবানের মূল লক্ষ্য আফগানিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন করা’। তবে তারা এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী। ১৬ আগস্ট কাতারের দোহা থেকে দেয়া বিবৃতিতে বারাদার বলেন, তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চায় না। তালেবান মনে করে, আফগানিস্তানের সব শ্রেণির মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান।

তিনি এর সাথে যোগ করে আরো বলেছেন, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বিষয়ে তালেবান আবারও জানিয়ে দিয়েছে কোনো বিদেশি শক্তির দরকার হবে না তারাই যথেষ্ট। তারা যখন পরাশক্তিগুলোকে হারাতে পেরেছে, তখন আফগানদের নিরাপত্তাও দিতে পারবে। দেশবাসীকে নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ দিয়ে এই আহ্বান জানিয়েছে তালেবান।

তিনি আরো বলেছেন, ইসলামী অনুশাসনের আওতায়, সব আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি, মানবাধিকার, সংখ্যালঘুদের অধিকার, নারী অধিকার এবং বাকস্বাধীনতার প্রতি তালেবান সম্মান প্রদর্শন করে। এ ছাড়া, তালেবান নারীর শিক্ষা, চাকরি, সম্পদের মালিকানা ও ব্যবসা করার অধিকার প্রদান করবে। এসব হবে ইসলামী আইন ও জাতীয় স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে। এ প্রসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয়। কোনো দেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছায় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে, এটাই আন্তর্জাতিক বিশ্বের স্বীকৃত রীতি।

আমেরিকার বিখ্যাত পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় দেখা গেছে, আফগানিস্তানের ৯৯ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ আইনের দেশ পরিচালনার পক্ষে। পিউ রিসার্চের ওয়েবসাইটে ঢুকে যে কেউ পুরো রিপোর্টটি দেখে নিতে পারবেন। তাতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মানুষের কত শতাংশ একই ধরনের আইন চায়, তারও দেখা মিলবে। এখন আমাদের দেশের কথিত ‘প্রগতি’শীলদের পিঠ যতই চুলকাক, আফগানরা যুদ্ধ করে নিজেদের মুক্ত করেছে। এখন তারাই নিজেরা নিজেদের আদর্শ ও দেশ পরিচালনা পদ্ধতি ঠিক করবে। বাইরে থেকে কারো নাক না গলানোই বোধ হয় সম্মানজনক। আমেরিকার লজ্জাজনক পরাজায়ের পর অন্যদের এ নিয়ে মাথা না ঘামানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আফগানরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রীতির সেই অধিকারবলে ইসলামকে তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নিলে কারো কিছু বলার থাকতে পারে না। আমরা আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি যে, তারা আফগানিস্তানে ইসলাম নির্দেশিত সর্বস্তরে সুশাসন, ইনসাফ, সুবিচার, মানবাধিকার, মানুষের মর্যাদাবোধ, সুশিক্ষা ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমন এক শান্তিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে তুলবে, যেটা সারা বিশ্বে উন্নতি, শৃঙ্খলা ও শান্তিতে নজির স্থাপন করতে সক্ষম হবে। যাতে পুঁজিবাদি বিশ্বের ভণ্ডামি ও নাগরিক শোষণের প্রতারণা বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। এতে করে দেশে দেশে জালিমদের বিরুদ্ধে মজলুম জনতার চেতনাবোধ জেগে উঠতে গভীর প্রেরণা যোগাবে। নিপীড়ক ও শোষকদের মসনদ একে একে খসে পড়বে, ফিরে পাবে গণমানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ও সুশাসনের স্বাদ।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।