আমিরুল মুমিনীন বাদশা হারুনুর রশিদ

- প্রতিকী ছবি।

।। মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার ।।

আমিরুল মুমিনীন হারুনুর রশীদ ইবনে আলা মাহদী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনুল মনসুর তার ভাই হাদীর ইন্তিকালের পরে বাগদাদের সিংহাসনে অধিষ্ঠ হোন। বাদশা হারুনুর রশিদের খেলাফতকাল ছিল মুসলমানদের উন্নতি সাধনের যুগ। তার শাসনকালে বাগদাদ সভ্যতার শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছে যায়। বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির কারণে খ্যাতি লাভ করে। বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়। প্রাসাদের অপর পাশে ফুল-ফলের বাগান। দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাগদাদের বিখ্যাত গ্রন্থাগার বাইতুল হিকমা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এ সময় ইসলামি শিল্প ও সঙ্গীতের যথেষ্ট প্রসার হয়। বাইতুল হিকমাহ ছিল আব্বাসীয় আমলে ইরাকের বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রন্থাগার, অনুবাদ কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটিকে ইসলামি স্বর্ণযুগের একটি প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাইতুল হিকমাহ এ সময়তো সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়।

ব্যবসা-বাণিজ্যে ও চাষাবাদে ব্যাপক উন্নিত করা হয়। যার ফলে দরিদ্রতা, অভাব-অনটন দুরীভূত হয়ে যায়। পারস্পরিক ভালোবাসা সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও উন্নতির সুবাতাস বইতে শুরু করে। মোটকথা বাগদাদ জ্ঞান, সাংস্কৃতি ও বানিজ্যের প্রাণ কেন্দ্র হয়ে উঠে। বাদশা, উজির ও জনগণ একে অপরের সহযোগী ও হিতৈষী  হয়ে আন্তরিকতার সাথে বসবাস করতে থাকে। বাদশা হারুনুর রশিদের শাসন আমলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য কর্মাবলীর অন্যতম হলো, আরবদের পানির কষ্ট লাঘব করার জন্য ১০ লাখ দিনার ব্যায়ে নির্মিত নাহরে জুবাইদা।

বাদশা হারুনুর রশিদ ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার দানশীল, আমানতদার ও সজ্জন প্রকৃতির লোক। তার দরবারে আলেম-ওলামাদের বেশ সমাদর ছিল। আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাসির তাঁর রচিত আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ্য করেন, বাদশা হারুনুর রশীদ প্রতিদিন তার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে এক হাজার দিরহাম দান করতেন। হজ্জে যাওয়ার সময় একশজন ফকীহ ও তাদের সন্তানদের হজ্জ করাতেন। আর যে বছর নিজে যেতেন না, সে বছর তিনশজনকে হজ্জ করাতেন এবং তাদের জন্য উন্নতমানের পোষাক ও প্রচুর অর্থ হাদিয়া প্রদান করতেন। দানে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী। ফকীহ ও কবিদের ভালোবাসতেন। তিনি দৈনিক একশ রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। বিশেষ কোনো ওজর ব্যতিত মৃত্যু পর্যন্ত তার ধারাবাহিকতা জারি রাখেন। (আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া-১০/৩৭১)।

বাদশা হারুনুর রশীদের শাসন আমলে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন বড় ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়নি। মাঝে-মাঝে কিছু জায়গায় বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিত। বাদশা দক্ষতার সাথে তা সমাধান করতেন। তবে আফ্রিকায় ইদরিসিয়া নামে নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ইদরিস বিন আব্দুল্লøাহকে কোনো ভাবেই দমন করা যাচ্ছিল না। আর আন্দুলুস পূর্ব থেকে আব্বাসী খেলাফতের আওতামুক্ত ছিল। রোমও বার্ষিক কর আদায়ের শর্তে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

কিন্তু বাদশা ছাকফুর কর আদায়ে অস্বীকৃতি জানায়। সেই সাথে বাদশা হারুনুর রশিদকে ধমকি প্রদর্শন করে পত্র লেখেন যে, যদি মঙ্গল চান, তাহলে আমাদের থেকে আদায় করা খাজনাসূমহ দ্রুত ফিরিয়ে দেন। অন্যথায় কালক্ষেপণ করলে তরবারীর মাধ্যমে কথা বলবো। পত্র পড়ে বাদশা হারুনুর রশিদ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন এবং উত্তরে লিখলেন, তোমার জবাব দেয়ার জন্য আমরা রওয়ানা হচ্ছি। নিজ চোখেই উত্তর দেখ! বাদশা হারুনুর রশিদ তৎক্ষণাৎ সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। সৈন্য দল পৌঁছার সাথে সাথে শহরকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়। বাদশা ছাকফুর প্রতিরোধের সময়টুকুও পায়নি। অবস্থা বেগতিক দেখে আত্মসমর্পণ করে এবং খাজনা পরিশোধের শর্তে শান্তি চুক্তি করে।

বাদশা হারুনুর রশিদ শান্তি চুক্তি শেষে বাগদাদে ফিরে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে আবার খবর আসে যে, ছাকফুর আবারো তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। বাদশা হারুনুর রশিদ আবারো সৈন্য নিয়ে ফিরে আসেন। এবারো ছাকফুর তার ভুল স্বীকার করে খাজনা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বাদশা হারুনুর রশিদকে বাহলুলের উপদেশ

১৮৮ হিজরীত বাদশা হারুনুর রশিদ হজ্জ থেকে ফেরার পথে কুফা অতিক্রম করার সময় বাহলুল এর সাথে সাক্ষাত হয়। (বাহলুল হচ্ছেন, দুনিয়া বিমুখ আবেদ। পুরো নাম, আবু উহাইব বাহলুল বিন আমর। তিনি হযরত আব্বাস রাযি. এর বংশের মানুষ ছিলেন। তিনি মাজনুন হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তবে তিনি ছিলেন, একাধারে হাস্যরসিক, সুসাহিত্যিক, সূক্ষ¥জ্ঞানের অধীকারী।)  বাহলুল বললো, হে আমিরুল মুমিনীন শুনুন! বাদশা বললেন, বলে যাও হে বাহলুল! তখন বাহলুল বললেন, মনে করেন সমগ্র পৃথিবীর তুমি মালিক হয়েছো এবং সব মানুষ তোমার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। তাতে কী হলো? আগামীকাল তোমার গন্তব্য কি কবরের গহ্বর নয়? সেখানে মানুষ একের পর এক তোমার উপর মাটি দিতে থাকবে।

খলিফা বললেন, বাহলুল তুমি উত্তম বলেছো। আরো কিছু বলো! বাহলুল বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আল্লাহ যাকে সম্পদ ও সৌন্দর্য দিয়েছেন, সে তার সৌন্দর্যের পবিত্রতা রক্ষা করলে এবং সম্পদ দিয়ে দুঃখিজনের প্রতি সহমর্মিতা করলে তার নাম আল্লাহর দফতরে পুণ্যবানদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে।” একথা শুনে খলিফা ভাবলেন, বাহলুল কিছু পেতে চায়। তাই খলিফা বললেন, আমি তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করার আদেশ দিচ্ছি! বাহুলুল বললেন এমন করবেন না, হে আমিরুল মুমিনীন। কারণ, ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা যায় না। বরং হকদারকে হক ফিরিয়ে দিন এবং আপনার নিজের ঋণ নিজে পরিশোধ করুন।

এবার খলিফা বললেন, আমি তোমার জন্য ভাতা জারির আদেশ দিচ্ছি, যা দিয়ে তুমি তোমার খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে পারবে! বাহলুল বললো, হে আমিরুল মুমিনীন! এসবের প্রয়োজন নেই! কেননা, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দিবেন আর আমাকে ভুলে থাকবেন এমন হবেই না! দেখুন। আমার এই দীর্ঘ জীবন কাটিয়ে এলাম যখন আপনি ভাতা জারি করেননি। আপনি চলে যান। আপনার ভাতা আমার কোন প্রয়োজন নেই। খলিফা বললেন, এক হাজার দীনার গ্রহণ করেন। বাহলুল বললেন, এগুলো এর যথাযথ মালিককে পৌঁছে দিন। সেটাই হবে আপনার জন্য উত্তম। আমি এগুলো দিয়ে কী করবো? যাও। এখান থেকে চলে যাও, তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো! খলিফা চলে গেলেন। দুনিয়া তার কাছে নির্দিষ্ট অনুভূত হলো। অন্য এক জায়গায় আছে যে, একদিন বাদশাহ হারুনুর রশীদ তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন বাদশাহ তাকে ডাক দিলেন, বাহলুল! ওই পাগল! তোরকি আর জ্ঞান ফিরবে না? বাহলুল বাদশাহর এ কথা শোনে নাচতে নাচতে গাছের উপরের ডালে চড়লেন এবং সেখান থেকে ডাক দিল, হারুন! ওই পাগল! তোর কি কোনদিন জ্ঞান ফিরবে না?

বাদশাহ গাছের নিচে এসে বাহলুলকে বললেন, আমি পাগল নাকি তুই, যে সারাদিন কবরস্থানে বসে থাকে? বাহলুল বলল, আমিই বুদ্ধিমান। বাদশাহ বললেন, কীভাবে? বাহলুল রাজপ্রাসাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, আমি জানি এই রঙিলা দালান ক্ষণিকের আবাসস্থল, এবং এটি (কবরস্থান) স্থায়ী নিবাস; এজন্য আমি মরার পূর্বেই এখানে বসবাস শুরু করেছি। অথচ তুই গ্রহণ করেছিস ঐ রঙ্গশালাকে আর এই স্থায়ী নিবাসকে (কবর) এড়িয়ে চলছিস। রাজপ্রসাদ থেকে এখানে আসাকে অপছন্দ করছিস! যদিও তুই জানিস এটাই তোর শেষ গন্তব্য! এবার বল, আমাদের মধ্যে কে পাগল? বাহলুলের মুখে এ কথা শোনার পর বাদশাহর অন্তর কেঁপে উঠল, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁর দাড়ি ভিজে গেল।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তুমিই সত্যবাদী। আমাকে আরও কিছু উপদেশ দাও! বাহলুল বললেন, তোমার উপদেশের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। তাকে যথার্থভাবে আঁকড়ে ধরো।

বাদশাহ বললেন,  তোমার কোন কিছুর অভাব থাকলে আমাকে বলো, আমি তা পূরণ করব। বাহলুল বললেন, হ্যাঁ, আমার তিনটি অভাব আছে, এগুলো যদি তুমি পূরণ করতে পার তবে সারা জীবন তোমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করব। বাদশাহ বললেন, তুমি নিঃসঙ্কোচে চাইতে পার।

বাহলুল বললেন, মরণের সময় হলে আমার আয়ু বৃদ্ধি করতে হবে।

বাদশাহ বললেন, আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

বাহলুল বললেন, আমাকে মৃত্যুর ফেরেশতা থেকে রক্ষা করতে হবে।

বাদশাহ উত্তর করলেন, আমার পক্ষে তাও সম্ভব নয়।

এবার বাহলুল বললেন, আমাকে জান্নাতে স্থান করে দিতে হবে এবং জাহান্নাম থেকে আমাকে দূরে রাখতে হবে।

বাদশাহর দু’চোখ অশ্রুসিক্ত। গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন, আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

বাহলুল সতর্কতার ভঙ্গিতে বললেন, তবে জেন রাখ, তুমি বাদশাহ নও বরং তুমি অন্য কারও অধীনস্ত। অতএব, তোমার কাছে আমার কোন চাওয়া বা প্রার্থনা নেই।

ইয়াহিয়া ইবনে খলিদ ইবনে বারমাক

বারমাক ছিলেন ইরানের এক সরদার পরিবারের কর্তা। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি বৌদ্ধ নেতা ছিল। আব্বাসীয় খেলাফতের সময় তারা ব্যাপক আকারে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করেন। বারমাকের ছেলের নাম ছিল খালেদ। খালেদ ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে বনু উমইয়াদের খেলাফতকালে খোরাসানে আব্বাসীয়দের পক্ষে ব্যাপক কাজ করেন। আব্বাসী খেলাফাত প্রতিষ্ঠা হলে প্রথম খলিফা আবুল আব্বাস সাফফাহ খালেদকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। খলিফা মনসুর এর শাসন আমলেও কিছুদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তাকে ইরাকের মসুল শহরের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়।

খালিদের ছেলে ছিল ইয়াহিয়া। খলিফা মাহদী ইয়াহিয়া বারমাককে তাঁর ছেলে হারুনুর রশীদের জন্য গৃহ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন। ইয়াহিয়া বারমুক তখন থেকে হারুনুর রশীদের সাথে থাকতেন। হারুনুর রশীদ খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পরে বারমাকীদের সম্মান বৃদ্ধি পায়। আস্তে আস্তে পুরো রাজ্য জুড়ে তাদের প্রসিদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ভালোবাসা ও বিশ্বাস বাড়তে থাকে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বাদশা হারুনুর রশীদের সামনে ভয়ের উদ্বেগ হলো যে, খেলাফত বারমুকীদের হাতে চলে যাবে। এই চিন্তা থেকে খলিফা হারুনুর রশিদ ইয়াহিয়া বারমাকী ও তার তিন ছেলে ফজল, মুহাম্মদ মুসাকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি রাখে এবং জাফর ইবনে ইয়াহিয়া বারমুকীকে হত্যা করে। সেই সাথে বারমুকীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি শেষ হয়ে যায়। ইয়াহিয়া বারমুকীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ঐ বছরই তার মৃত্যু হয়।

আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়ায় ইয়াহিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ইয়াহিয়া ইবনে খালিদ ইবনে বারমুক ছিলেন অভিজাত মানসের অধিকারী ও বাগ্মী, সুষ্ঠু বুদ্ধি সম্পন্ন নিপুন মতামতের অধিকারী। তার সিদ্ধান্ত ও কর্ম ছিল কল্যাণকর। একদিন তিনি তার সন্তানদের বললেন, সব বিষয় সম্পর্কেই কিছু না কিছু জ্ঞান আহরণ করবে। কেননা, কেউ কোন বিষয়ে অজ্ঞ হলে তার বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়। তিনি আরো বলতেন, ‘যা কিছু শুনবে তার উত্তমগুলো লিখে রাখবে, যা লিখবে তার উত্তমগুলো মুখস্থ করবে এবং যা মুখস্থ করবে তার উত্তমগুলো ব্যক্ত করবে। দুনিয়ার সম্পদ সম্পর্কে বলতেন, যখন দুনিয়া (পার্থিব সম্পদ) এগিয়ে আসে তখনও ব্যয় করবে। কেননা তা স্থায়ী হবে না এবং যখন দুনিয়া পিছিয়ে যাবে তখনও ব্যয় করবে। কেননা, তাও স্থায়ী হবে না।

কারাগারে থাকা অবস্থায় তার সন্তান বললো, বাবা, ক্ষমতার প্রতিপত্তি ও অঢেল প্রাচুর্যের পরে আমরা আজ এ অবস্থায় পৌঁছেছি। ইয়াহিয়া বললেন, বাবা! মাজলুমের বদ দুআয় আমরা রাতের আধারে চলছিলাম এবং সে বদ দোয়ার ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ উদাসিন থাকেননি। তারপর বলেন, সময় দীর্ঘদিন নীরবতা পালন করে থাকে, পরে যাদের ব্যাপারে সময় মুখ খোলে তাদেরকে রক্ত কান্না কাঁদিয়ে ছাড়ে। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া-১০/৩৫৫)

বাদশা হারুনুর রশীদের মৃত্যু

দীর্ঘ ২০ বছর খেলাফতের স্বর্ণযুগের ইতি টেনে ১৯৩ হিজরী সনের জুমদাল উখরায় তিনি ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বছর। বাদশা হারুনুর রশীদ ছিলেন ন¤্র-ভদ্র ও খোশ মেজাজের মানুষ। দিল ছিল খুব নরম। নসিহত শোনার প্রতি যথেষ্ট যতœবান ছিলেন। নসিহত শ্রবণকালে আবেগাপ্লুøুত হয়ে যেতেন। চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠতো। অশ্রু গড়িয়ে পরতো শুশ্রƒ বেয়ে।

একবার প্রসিদ্ধ আলেম ইবনে সাম্মাক রহ. বসে ছিলেন। এমতাবস্থায় বাদশা পিপাসার্ত হয়ে পানি চাইলেন। বাঁদী পানি দিলেন। ইবনে সাম্মাক বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আপনাকে যদি পানি না দেয়া হয়, তবে কি আপনি আপনার অর্ধেক রাজত্বের বিনিময়ে হলেও পানি পান করবেন? বাদশা বললেন, হ্যাঁ! বাঁদশা পানি পান করার পরে ইবনে সাম্মাক আবার বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! এই পানকৃত পানি যদি আপনার শরীর থেকে প্র¯্রাবের মাধ্যমে বের না হয়,তাহলে আপনি চিকিৎসার জন্য কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবেন?

খলিফা বললেন, আমি চিকিৎসার জন্য বাকি অর্ধেক রাজত্ব দিয়ে দিব! তখন ইবনে সাম্মাক বললেন, যে রাজত্বের মূল্য এক গ্লাস পানির থেকেও কম সেই রাজত্ব নিয়ে গর্ব করা এবং তার জন্য রক্ত ঝড়ানো কখনো উচিত নয়। ইবনে সাম্মাকের কথা শোনে বাদশা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বাদশা হারুনুর রশিদ ছিলেন আব্বাসী খেলাফতের ৫ম শাসক । তিনি ২৫ বছর বয়সে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।