আল্লামা বাবুনগরী (রহ.): উম্মাহর মানসপটে ও ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল

অগণিত ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীদের এতিম করে পরকালের পথে যাত্রা করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক এবং ঈমান-আক্বিদা ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর হযরত আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)। গত ১৮ আগস্ট বুধবার দুপুর ১২টায় ৬৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী একটি ঐতিহ্যবাহী আলেম ও বুযূর্গ ঘরানার উত্তরসূরি। তাঁর পিতা আল্লামা আবুল হাসান (রহ.)ও দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহাদ্দিস এবং বিখ্যাত তানযীমুল আশতাত গ্রন্থের লেখক ছিলেন। তাঁর নানা মাওলানা শাহ মুহাম্মদ হারুন (রহ.) ছিলেন বাবুনগর আজিজুল উলূম মাদরাসার পরিচালক। বর্তমানে তাঁর মামা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এ দায়িত্বে আছেন। এ মাদরাসা থেকেই মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ১৯৭৬ সালে দাওরায়ে হাদীসে প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ হয়ে জামিয়াতুল উলূমুল ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউনে উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগে দুই বছর অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে সনদ লাভ করে ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরে এসে বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।

২০০৩ সালে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস এবং শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর ছাত্র ও খলীফা ছিলেন।

অপরদিকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিবের দায়িত্ব পান। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর ইন্তেকালের পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমির পদে মনোনীত হন।

আরও পড়তে পারেন-

সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আপোষহীন আলেম হিসাবে আল্লামা বাবুনগরী (রহ.)এর সুখ্যাতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সদালাপী ও বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন। বড় বড় সংকটে ধৈর্য ও দৃঢ়তায় অবিচল থাকতেন। ইলমি ও আধ্যাত্মিক ধারা পরম্পরার উত্তরসূরি এই আলেম হকের উপর অবিচল ও সত্যউচ্চারী আলেমদের জন্য আদর্শ ছিলেন। তাঁর ইন্তিকালে এদেশের দ্বীনি আকাশের আরো একটি নক্ষত্রের পতন হলো।

আমরা কেউই চিরদিনের জন্য দুনিয়ায় আসিনি। মানুষের ভালবাসার লোকগুলিকেও আল্লাহ চিরদিনের জন্য দুনিয়াতে পাঠান না। কিন্তু তাঁরা একটি জনগোষ্ঠির মনোগঠনে যেমন, তেমনি তাদের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে যান।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর একজন মুসলিম সাধক ও সফল মুসলিম নেতা। তিনি যেই ময়দানে অগ্রসর হয়েছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা তাঁর পদচুম্বন করেছে। তিনি ঈমান-আক্বিদা ও হক প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে আপোষহীনতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। বাতিল যখনি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তিনি তখন গর্জে উঠেছেন। মুসলিম উম্মাহর দরদী রাহবার আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) মরেও উম্মাহর মানসপটে ও ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। তিনি পরপারে পাড়ি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে।

সত্যিকার অর্থে যারা নিজেদের সবকিছু বিলীন করে মুসলিম উম্মাহ, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন, তাঁরা কখনও মরেন না, বিলীন হয়ে যান না। যেভাবে শায়খুল হিন্দ (রহ.), গাঙ্গুহী (রহ.), মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) মরেননি। শুধুমাত্র তাঁদের দেহটা আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আদর্শ ও কর্মে আমাদের মাঝে এখনও তাঁরা বেঁচে আছেন। ঠিক সেভাবেই আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর আদর্শ ও কর্মে। তাঁর স্মৃতি ও প্রভাব বাংলাদেশের ধর্মীয় ও ঈমান-আক্বিদা সুরক্ষার আন্দোলনে দীর্ঘকাল বহাল থাকবে। বাংলাদেশের ধর্মচর্চার ইতিহাসে যেমন, তেমনি গণমানুষের চিন্তা ও বিবেকের প্রতিনিধি হিসেবে চিরকাল তিনি বেঁচে থাকবেন। এই দেশের মানুষ তাঁকে কখনই ভুলবে না।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।