ইসকন: আলো-আঁধারের ধাঁধা

।। মুজাজ্জাজ নাঈম ।।

মানুষ দুটি উপাদানের সমষ্টি। একটি বস্তুগত, অন্যটি অপার্থিব। মানবদেহ বস্তুগত উপাদানে সৃষ্ট, এর খাদ্যও বস্তুগত, পৃথিবীর মাটি-পানি থেকেই উৎপন্ন। রূহ ঐশী আদেশ, এর খাদ্যও ঐশী প্রত্যাদেশের মধ্যেই লুকায়িত। পাশ্চাত্য দুনিয়া একতরফা মানবদেহের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে গবেষণা করেছে দীর্ঘদিন। পুরোটা সময়ে রূহের চাহিদা ছিলো একেবারে অবহেলিত। এজন্য পাশ্চাত্যের জনজীবনে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক স্পিরিচুয়াল ভ্যাকুয়াম-আধ্যাত্মিক শূন্যতা। পুরো পাশ্চাত্য সভ্যতাআত্মিকভাবে দীনতার স্বীকার। যেকোনো আধ্যাত্মিক দাওয়াতে সাড়া দেয়ার জন্য উন্মুখ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। পাশ্চাত্যের এই আচরণ টের পেয়েছিলেনভারতীয় ধর্মযাজক শ্রীল প্রভুপাদ। ষাটের দশকে তিনি পরিব্রাজক সন্ন্যাসী হিসেবে আমেরিকায় গমনকরে তার আধ্যাতিক মতাদর্শ প্রচার করতে শুরু করেন।

ভারতবর্ষ প্রাচীনকাল থেকেই নানা ধর্ম ও আধ্যাত্মিক মতবাদে সমৃদ্ধ। এই ভূখণ্ডে যত ধর্মীয় মতবাদ ও আধ্যাত্মিক তত্ত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তার শুমার করা মুশকিল। পাশ্চাত্যের আধ্যাত্মিক শূন্যতাকে প্রভুপাদ ভারতীয় উপাদান দিয়ে পূর্ণ করতে চাইলেন। ভারতীয় ধর্মাচার থেকে তুলে নিলেন কৃষ্ণচরিত্রটিকে। প্রতিষ্ঠা করলেন Society for Krishna Consciousness(ISKCON)।‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ’প্রতিষ্ঠা করে তিনি হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের গুণকীর্তন গাইতে শুরু করলেন। পশ্চিমের আধ্যাত্মিক শূন্যতায় তাঁর প্রচারিত কৃষ্ণপ্রেম দারুন সাড়া জাগাতে সমর্থ হলো। ষাটের দশকের আমেরিকা ছিলো ব্যক্তিবাদের চরম উৎকর্ষে নিপীড়িত। সামাজিক জীবন ভীষণভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো। ব্যক্তি মাত্রই ছিলো একাকিত্বের চাদরে ঢাকা। প্রভুপাদের কৃষ্ণপ্রেম এই সমাজে আশার আলো দেখাতে সামর্থ্য হয়েছিলো। ভারতীয় আধ্যাত্মিক উপাদানে সিক্ত হয়েছিলো পাশ্চাত্যের খাঁ খাঁ জমিন। বস্তুত পানির ধর্মই হলো পিপাসা নিবারণ করাÑ পানি সে পবিত্রই হোক, কিংবা অপবিত্র হোক! পিপাসার অতিশায়নে মানুষ কখনও কখনও ভুল করে বসে, ঢোকে ঢোকে গিলে খায় নাপাক পানি। নাপাকেই সে তৃপ্ত হয়, কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে সাকির প্রতি। আমেরিকার তরুণ প্রজন্ম তাই করেছিলো।

১৯৬৬ সালে ‘ইসকন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এর চোখে ধরার মতো প্রসার ঘটে। ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রভুপাদ হয়ে ওঠেন পাশ্চাত্যের বিকল্প সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। হাজারের বেশি আমেরিকান যুবক-যুবতী তার হাতে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা লাভ করে। আমেরিকায় সক্রিয় ছিলো‘অ্যান্টি-কাল্ট’ গোষ্ঠিগুলো। এদের কাজ ছিলো নতুন যেকোনো ধর্মীয় মতবাদ ও সংগঠনকে রুখে দেয়া। ইসকন এদের আক্রমণের মুখে পড়লে জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স ও টমাজ হপকিন্সের মতো ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা তাকে স্বাগত জানান। এতে পাশ্চাত্যে তার ভিত্তি মজবুত হয়। আমেরিকার বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন পর্যন্তইসকনের ভক্তে পরিণত হন। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কণ্ঠে গাওয়া কৃষ্ণকীর্তণ ÔMy sweet Lord’ নামে। (https://bit.ly/39Z2rgf) ১৯৭৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদের মৃত্যু হয়।

দুই.

১৯৮৭ সালে অনুষ্ঠিত জম্বু ও কাশ্মীরের প্রাদেশিক নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়। ফলে কাশ্মীর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সংকীর্ণ পথটুকুও বন্ধ হয়ে যায়। জন্ম নেয় স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন স্বশস্ত্র সংগঠন। ধারণা করা হয়, পাকিস্তান হয়ে এসব সংগঠনের অস্ত্রের জোগান এসেছিলো আফগান মুজাহিদগণের পক্ষ থেকে। অবশ্য তখন ভারত সরকারের গলাফাটানো চিৎকারে কান দেয়নি কোনো পরাশক্তি। এভাবেই কেটে যায় প্রায় বারোটি বছর। ভারত আশার আলো দেখে ২০০১ সালের দিকে। টুইন টাওয়ার হামলার পরে তালিবানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে আমেরিকার। বন্ধুত্ব থেকে শত্রুতায় রূপ নেয়। প্রেসিডেন্ট বুশ তালিবান ও আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ঘোষণা করে ÔWar on Terror’। এই তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তালিবান ও আল-কায়েদাকে পরাস্ত করতে আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো ভারতকে পাশে রাখা। অপরদিকে কাশ্মীর ইস্যুতে আমেরিকার সমর্থন ছিলো ভারতের জন্য বিরাট পাওনা।

গাটছাড়া বাঁধে ভারত-আমেরিকা। শুরু হয় প্রেসিডেন্ট বুশের সাথে ভারতের লম্বা খাতির। এ খাতিরকে আরও গাঢ় করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় ভারত সরকার। প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বিভিন্ন এম.পি, এমনকি সিনেটেও লবির জন্য ঠিক করা হয় প্রবাসী ভারতীয়দের। ২০০৩ সালে গঠিত হয় ‘আমেরিকান হিন্দু ফাউন্ডেশন’। এর কাজ ছিলো আমেরিকায় জন্ম নেয়া ভারতীয় বাবা-মা’র দ্বিতীয় প্রজন্মকে সুগঠিত করে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে বাস্তবায়ন করা। ভারত সরকারের এসব পদক্ষেপ পুরোপুরি গ্রাস করে ইসকনকে। আধ্যাত্মিক শূন্যতা মুকাবেলা করায় ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো ইসকন। এই জনপ্রিয়তাকেই ভারত সরকার তার কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে। কৃষ্ণপ্রেম বিতরণের জন্য জন্ম নেয়া সংগঠনটি হয়ে ওঠে ভারত সরকারের কূটনৈতিক প্রতিনিধি। ইসকন শুরু করে নতুন মিশন, নতুন নেতৃত্বে। ছড়িয়ে পরে পৃথিবীর নানা প্রান্তরে- যেখানে কোনো স্পিরিচুয়াল ভ্যাকুয়াম নেই, সেখানেও।

শ্রীল প্রভুপাদের মৃত্যুর পর তার দর্শন থেকে সরে আসতে থাকে ইসকন। আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে ইসকনের নীতিনির্ধারণে।২০০৮ সালে ইসকনের নীতিনির্ধারণী সংস্থা GBC শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থাবলিতে ফুটনোট ও টীকা যোগ করার মাধ্যমে অর্থবিকৃতির অপচেষ্টা করে। (GBC Resolution 311) এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইসকন ছাড়ে অনেক কর্মী। পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রভাব ও আধিপত্য বজায় রাখতে ইসকন একের পর এক সরতে থাকে প্রভুপাদের দর্শন থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেমিনিজমকে প্রমোট করারও অভিযোগ তুলেছেন ভক্তদের বিরাটএকটি অংশ। নারী নেতৃত্ব কিংবা নারী দীক্ষাগুরু সৃষ্টির ব্যাপারে প্রভুপাদ ছিলেন কঠোর। অথচ ক্ষমতা ও প্রভাব বজায় রাখতে সে সব দর্শনের কোনো তোয়াক্কাই নেই জিবিসির। বছর দুয়েক আগে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে সমকামীদের বিয়ের আয়োজন করেন ইসকনের প্রভাবশালী ধর্মগুরু মহারাজ চন্দ্রমুখ স্বামী। এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সাও পাওলোর ভক্তি ইয়োগা হাউজে। (https://bit.ly/2Ki2hBr).

ইসকনের অন্যতম প্রধান ধর্মগুরু ও জিবিসির সদস্য হৃদায়ানন্দ মহারাজাও কোনো প্রকার রাখ-ঢাক ছাড়াই প্রকাশ্যে সমকামী বিয়ের পক্ষে মতামত প্রদান করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।

এসব সমালোচনার জের ধরে ইসকন ছাড়ে অনেক ভক্ত। চৈতন্য দাস নামের সাবেক এক ইসকন কর্মী তাঁর ব্লগে ইসকনের এসব অপকর্মের নথিগুলো তুলে ধরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার একটি ইসকন সেন্টারে পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনেরও দাবি তুলেছেন চৈতন্য দাস। তিনি অভিযোগ করেন যে, কর্মীদেরকে ইসকনের যাবতীয় বক্তব্য ও নির্দেশ বিনা বাক্য ব্যয়ে পালন করতে হয়। স্বাধীন মতপ্রকাশের কোনো সুযোগ নেই সেখানে। ইসকনের কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিমত করলে হতে হয় শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত। (https://bit.ly/39zLfHC).

ইসকনের যাত্রা শুরু হয়েছিলো বিতর্ক দিয়েই। দেবতা শিবপ্রধান হিন্দুধর্মীয় মতাদর্শ থেকে সরে এসে কৃষ্ণপ্রধান ধর্মমত প্রচার করার জন্যও শুরু থেকেই খোদ সনাতন হিন্দু সমাজে বিতর্কিত হন শ্রীল প্রভুপাদ। অনেক ধর্মগুরু তো ইসকনকে মূলধারার হিন্দু সংগঠন বা মতবাদ বলতেও নারাজ। বরং শুরু থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে ইসকনের সংঘর্ষ হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এতসব দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও একটা আধ্যাত্মিক বোধ দেখা দিয়েছিলো প্রভুপাদের আমলে। তাঁর মৃত্যুর পরে সেটুকুও বিলুপ্ত হয়।

তিন.

বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানের বরাত দিয়ে আবু রুশদ লিখেছেন, ‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দপ্তর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলত এটা ইহুদিদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে দাঙ্গা সৃষ্টি করা’। (আবু রুশদ, বাংলাদেশে ‘র’, পৃ. ১৭১)।

ইসকনে ইহুদিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অনেক পুরোনো। এ অভিযোগ যে নিছক ভিত্তিহীন নয়, এর যথেষ্ট প্রমাণ আছে। ইসকনে ‘প্রভু’রা নামপরিবর্তনের মাধ্যমে আত্মপরিচয়কে খুব সহজেই লুকিয়ে ফেলে। ইসকনের প্রভাবশালী নেতা জয়াদ্বৈত স্বামীর আসল নাম ‘জে ইসরায়েল’ (Jay Israel)। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে একটি বনেদি ইহুদি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জেবিসির আরেকজন প্রভাবশালী নেতা হলেন রাধানাথ স্বামী, যার প্রকৃত নাম রিচার্ড স্লাভিন (Richard Slavin)। তিনিও একজন ইহুদি পরিবারের সন্তান। জে ইসরায়েল ও রিচার্ড স্লাভিন প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর যাবত ইসকনের নীতিনির্ধারক হিসেবে কর্মরত। (https://bit.ly/3c7d83g)

ছদ্মনামের আড়ালে লুকানো বাকিধর্মগুরুদের আসল পরিচয় পেলে বোঝা যাবে, ইসকনে ইহুদিদের প্রভাব ঠিক কতটুকু। তবে এ প্রভাব যে দৃষ্টিকটু এবং অস্বাভাবিক, তা কৃষ্ণভক্তদের দাবি থেকেই কিছুটা আঁচ করা যায়।

ইসকনকে ঘিরে নানামুখী সন্দেহ, সংশয় ও প্রহেলিকার মধ্যে একটি কথাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে- সংগঠনটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মপ্রচারের চেয়েও বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা তৎপরতা এবং সাম্প্রতিককালে ইসরায়েল ও ভারতীয় গোয়েন্দা তৎপরতার আদর্শ মাধ্যম হয়ে উঠেছে কি-না। এই উৎকণ্ঠা আরও উত্তাপ ছড়ায়, যখন ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরাইলের প্রতি বিশেষ সখ্যতা প্রমাণিত হয়।

বাংলাদেশে ইসকনের তৎপরতাকে ঘিরে সন্দেহের বহু কারণ আছে। বাংলাদেশে কোনকালেই কোনরকম স্পিরিচুয়াল ভ্যাকুয়াম বা আধ্যাত্মিক শূন্যতা ছিলো না। প্রাচীনকাল থেকেই এদেশ ধর্মীয় মতাদর্শে টইটুম্বুর ছিলো। তাহলে এখানে ইসকনের এত ব্যাপক কর্মতৎপরতার মূল হেতুটা কী? এ সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়, যখন ইসকনের জন্মভূমি ভারতের তুলনায় এখানে ইসকন নিয়ন্ত্রনাধীন মন্দিরের সংখ্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ইসকন মন্দিরের সংখ্যা ছিলো ৩৫টি। গত এক দশকে এই সংখ্যায় প্রায় দ্বিগুন বেড়ে দাড়িয়েছে ৭১টিতে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আছে ৬টি। অবশ্য এ তথ্যটিও পুরোনো- ২০১৯ সালের। গত দুই বছরে এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে, তা আমাদের জানার বাইরে। ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন, ভারতেই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়। অথচ দৈত্যাকার এই দেশটিতে ইসকনের মন্দির সংখ্যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলো মাত্র ৬৮টি। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য মধ্যযুগের শ্রী চৈতন্য থেকে আগত। চৈতন্যের থিওরি বলে, ‘নির্যবন কর আজি সকল ভূবন’। (বাংলাদেশের ইতিহাস, মধ্যযুগ, পঞ্চম সংস্করণ, পৃ. ২৬২)।

যবন মানে অহিন্দু, বিশেষত মুসলমান। পঞ্চাশের দশকে হিন্দুসভার অনেক নেতা চাইতেন, ভারত হবে অখ-। সে অখ- ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমান সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মধ্যে মিলে-মিশে একাকার হয়ে যাবে। তাদের আলাদা কোনো জাতিগত পরিচয় বাকি থাকবে না। ইসকনের সাম্প্রতিক তৎপরতা থেকে এ সন্দেহও অমূলক নয় যে, ইসকন অখ- ভারত প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে চলছে কি-না?

চার.

বাংলাদেশে প্রভাব বাড়ছে ইসকনের। বর্তমানে এখানে ইসকনের মোট স্থায়ী বা আজীবন সদস্য প্রায় অর্ধ লাখ। অথচ ২০০৩/২০০৪ সালের দিকেও এ সংখ্যা ছিলো ১৯০০ তে। সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে ভয়ানক হলো ক্ষমতা ও দাপট বৃদ্ধি। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে ইসকন সদস্যরা। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস. কে সিনহা থেকে শুরু করে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের একটা বিরাট তালিকা আছে, যাদের ব্যাপারে ইসকন সদস্য হওয়ার জোড়ালো দাবি উত্থাপন করা হয়। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অমিত সাহার বিরুদ্ধেও ইসকনের সদস্য হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। এ সন্দেহ আরও ঘনিভূত হয়, যখন অমিত সাহার নাম আসামির তালিকা থেকে রহস্যজনকভাবে বাদ পড়ে। পরে অবশ্য তিনি গ্রেফতার হন।একজন ইসকন কর্মীর ভাষ্য থেকে জানা যায়, দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ৩/৪ জন করে রয়েছে ইসকন কর্মী। নতুন নিয়োগ হচ্ছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেও ২/১ জন করে রাখা হচ্ছে ইসকন সদস্যদের। শোনা যায়, এ চিত্র নাকি প্রশাসনের ক্ষেত্রেও সত্য।

সাম্প্রতিক সময়ে বহু নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয় ইসকন। বেশ কয়েকটি স্কুলের বাচ্চাদের প্রসাদ খাইয়ে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ বলানোর অভিযোগ উঠে এর বিরুদ্ধে। ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ালে দুঃখ প্রকাশ করেন ইসকনের দায়িত্বশীলরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির দখলের অভিযোগও আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। দেশের আন্তঃধর্মীয় শান্তি ও সহাবস্থানকে বিনষ্ট করার জন্য অনেক হিন্দু পণ্ডিতও ক্ষোভ ঝেড়েছেন ইসকনের প্রতি।

কাগজে-কলমে ইসকন ধর্মীয় সংগঠন হলেও এর নানামুখী তৎপরতা সন্দেহজনক, রহস্যময়। ইসকন কি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, নাকি ভারত ও ইসরাইলের গোয়েন্দা তৎপরতার গোপন হাতিয়ার, নাকি দুটোই? এসব প্রশ্নের কোন উত্তম জবাব নেই। কৃষ্ণভক্ত এ সংগঠনটি কৃষ্ণগহ্বরের মতোই অধরা, অজানা। এর রয়েছে কৃষ্ণশক্তি (dark energy), যার উৎস সম্পর্কে আমরা অজ্ঞাত। ইসকন নিজেকে আলোর ফেরিওয়ালা হিসেবে উপস্থাপন করে, অথচ মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসে এর ভয়ঙ্কর অন্ধকার চরিত্র। আলো-আধাঁরের এই ধাঁধাঁ সমাধানের দায়িত্ব দেশের গোয়েন্দা বিভাগের।নয়তো আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে।