ইসলামে দাম্পত্য জীবন এবং আদর্শ পাত্র-পাত্রী নির্বাচন

।। মুফতি হুমায়ুন কবির উখিয়াভী ।।

হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে মহানবী (সা.) পর্যন্ত সকল ধর্মেই বিবাহ একটি স্বীকৃত বিষয়। কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত বিবাহ-শাদীকে তাকওয়া পরিপন্থী ভেবে বৈরাগ্যতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু এমন ভাবনা বাতিল করে ইসলামে বলা হয়েছে, বৈরাগ্যতার কোনো স্থান ইসলামে নেই। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন- “لا صرورة في الإسلام” “ইসলাম ধর্মে দুনিয়া ত্যাগ, বিবাহ-শাদী বর্জন এবং বৈরাগ্যতা ইত্যাদির কোনো স্থান নেই”। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ১৭২৯)।

স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-

هُوَ الَّذِىْ خَلَقَكُمْ مِنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَالِيَسْكُنَ اِلَيْهَا.

“তিনিই সেই সত্ত্বা- যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্ত্বা থেকে; আর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে, যেন তার নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারে।” (সূরা আ’রাফ, আয়াত- ১৮৯)।
বিবাহ-শাদী ব্যতীত সুশৃঙ্খলভাবে মানবজাতির বংশ বিস্তারে চিন্তাই করা যায় না। বিবাহ আল্লাহ তাআলার পরম নিয়ামত এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-

وَمِنْ أَيَاتِهِ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْا اِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَّرَحْمَةً.

“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীদের সৃজন করেছেন। যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও দয়ার বন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন”। (সূরা রূম, আয়াত- ২১)।

আল্লামা আলাউদ্দীন হাছকাফী (রহ.) বলেছেন, বিবাহ এমন একটি ইবাদত, যা আদম (আ.) থেকে আরম্ভ হয়ে বেহেশতে যাওয়ার পরও বিদ্যমান থাকবে। (আদ্দুররুল মুখতার- ৪/৬৬ পৃষ্ঠা)।

এই সম্প্রীতি ও সম্পর্ক স্থায়ী ও মধুর থেকে মধুরতর হওয়ার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কতিপয় গুণাবলী বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত জরুরি, যার প্রধান গুণ হচ্ছে উভয়ের মধ্যে দ্বীনদারী-ধার্মিকতা ও মানবতা। তাই পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের সময়েই এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত জরুরি। অন্যথায় ইহকাল ও পরকাল দু-জাহানেই অশান্তির গ্লানি বহন করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। তাই আদর্শ পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের কিছু আবশ্যকীয় বিষয় নি¤েœ উপস্থাপন করা হল।

আদর্শ পাত্রীর গুণাবলী

(১) দ্বীনদারী ও ধার্মিকতা
দাম্পত্য জীবন স্থায়ী, স্বাচ্ছন্দময়, সুখী ও স্বার্থক হওয়ার জন্য স্ত্রীর মধ্যে যেসব গুণাবলী থাকা আবশ্যক তন্মধ্যে প্রধান গুণ হলো- তার দ্বীনদারী বা ধার্মিকতা। কারণ, স্ত্রী ধর্মীয় দিক থেকে উদাসীন হলে নিজের সম্ভ্রম ও সতীত্ব রক্ষার ক্ষেত্রেও দুর্বল হয়ে পড়বেন। ফলে প্রবৃত্তির ধোঁকায় পড়ে নানা ভুল কর্ম দ্বারা স্বামীকে লোক সমাজে অপদস্থ, অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে থাকবে। আর আত্ম-মর্যাদাবোধের কারণে এতে স্বামীর অন্তর অস্থির ও অশান্ত হয়ে উঠবে। যার ফলে দাম্পত্য জীবন দিন-দিন খুবই কঠিন, সংকীর্ণ ও দুর্বিষহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে থাকবে। এক্ষেত্রে স্বামী যদি পুরুষোচিত স্বভাবের কারণে সম্মান ও আত্ম-মর্যাদাবোধের পথ বেঁচে নেন এবং স্ত্রীকে বাঁধাদান করেন, তবুও এ বিপদের অবসান ঘটানো অনেক কঠিন; বরং প্রায় অসম্ভব। আর যদি স্বামী ছাড় দেন এবং তার সাথে তাল মিলিয়ে চলেন, তাহলে ক্রমান্বয়ে তার আত্ম-মর্যাদাও শেষ হয়ে যাবে এবং তার দ্বীনও অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। আর যদি স্ত্রী ধর্মীয় ত্রুটির পাশাপাশি রূপসী ও সুন্দরী হয়ে থাকেন, তাহলে তো বিপদ আরো কঠিন। কারণ, স্বামীর পক্ষে তাকে ত্যাগ করাও মুশকিল হবে, আবার সঙ্গে রাখাও কঠিন হবে। এতে উক্ত স্ত্রী ধীরে ধীরে স্বামীকে পাপের দিকে ধাবিত করবেন। অথচ নিজেকে এবং পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা স্বামীর দায়িত্বে পড়ে। এই দায়িত্ব পালনে স্ত্রীকে যখন সহযোগী হিসেবে পাবে না, তখন জীবন হয়ে উঠবে আরো অতিষ্ঠ। তাই দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ জন্যই মহানবী (সা.) ধর্মের দিকটাকে অন্যান্য গুণাবলীর উপর প্রাধান্য দিয়ে ইরশাদ করেছেন-

تنكح المرأة لأربع: لمالها ولحسبها وجمالها ولدينها، فاظفر بذات الدين.
“সাধারণত: রমণীদের বিবাহ করা হয় তার সম্পদ, বংশগত মর্যাদা, সৌন্দর্য ও তার দ্বীন-ধার্মিকতার দিক বিবেচনা করে। তবে তুমি দ্বীনদার-ধার্র্মিক রমণী বিবাহ করে কামিয়াবি ও সফলতা অর্জন করে নাও”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫০৯০)।

তবে রূপ-লাবণ্যতা দেখে বিাবহ করাও দোষের নয়। আবার রূপকে প্রাধান্য দেয়াটাও ঠিক নয়। তাই ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয়ার দিকসমূহ বর্ণনা করে মহানবী (সা.) বলেছেন-

من نكح المرأة لمالها وجمالها حرم مالها وجمالها،ومن نكحها لدينها رزقه الله عزّ وجل مالها وجمالها.
“যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে তার ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্যের মোহে পড়ে বিবাহ করে, তাকে তার সম্পদ ও সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করা হবে। আর যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে তার দ্বীনদারীর প্রতি লক্ষ্য করে বিবাহ করবে, আল্লাহ তাকে তার সম্পদ ও সৌন্দর্য দান করবেন”। (কূতুল কুলূব ফী মু’আমালাতিল মাহবূব- ২/৪১৩)।
অন্য এক হাদীসে আরো সতর্কবাণী এসেছে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-

لاتنكح المرأة لجمالها فلعل جمالها يرديها،ولا لمالها فلعل مالها يطغيها،وانكحوا المرأة لدينها.
“রূপের মোহে কোনো রমণীকে বিবাহ করো না; হয়তো তার রূপ তাকে ধ্বংস করে দিবে এবং সম্পদের লোভে বিবাহ করো না; হয়তো তার সম্পদ তাকে অবাধ্য করে তুলবে; বরং তাকে বিবাহ করো তার দ্বীনের প্রতি লক্ষ্য করে”। (কূতুল কুলূব ফী মু’আমালাতিল মাহবূব- ২/৪১৩)।

(২) আখলাক ও চরিত্র
মানবজাতির প্রকৃত সৌন্দর্য হল তার চরিত্র ও আখলাক। স্বামী দ্বীনের উপর অবিচল থাকার জন্য স্ত্রী উত্তম চরিত্রের হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সদালাপী, সুমিষ্টভাষী, ন¤্র-ভদ্র, ধৈর্যশীলা, পরশ্রীমনা, স্বামীভক্ত ও স্বামী অনুরাগীনী ইত্যাদি গুণে সমৃদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা, স্ত্রী যদি কটূ সংলাপী, অহংকারী, উদাসীন, অসংযত, বেপরোয়া ও অকৃতজ্ঞ হয়, তাহলে উপকারের তুলনায় তার ক্ষতির পরিমাণই অধিক হবে। নারীদের অসংযত যবানের উপর ধৈর্য্য ধারণ করা একটি কঠিন বিষয়। তাই আল্লাাহ তা’আলা অনেক সময় অসংযত রমণীর দ্বারা অলিদের পরীক্ষা করে থাকেন। এই আখলাক ও চরিত্র অনেকটা দ্বীনি শিক্ষা ও তা’লীম-তরবিয়্যাতের মাধ্যমে অর্জিত হয়; আবার অনেক সময় বংশগত হয়। তাই উভয় দিকে লক্ষ্য রেখে খোঁজ-খবর নেওয়া দরকার।

(৩) সুন্দরী-রূপসী হওয়া
পাত্রী নির্বাচনে রূপসী ও সুন্দরী হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখাও একটি জরুরি বিষয়। কেননা, পুরুষের চরিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে স্ত্রীর রূপের অনেক ভূমিকা রয়েছে। কারণ, মানুষের মন অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা তৃপ্তি পায় না এবং তার উপর সন্তুষ্টও থাকে না। আর রূপ-সৌন্দর্য রকমারী ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। একেক জনের একেক জিনিস পছন্দনীয়; তাই প্রত্যেকেই স্বীয় পছন্দ অনুযায়ী পাত্রী নির্বাচন করার চেষ্টা করে। এজন্য শরীয়ত পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখে বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। আর উল্লিখিত হাদীসে যে রূপ-লাবণ্য দেখে বিবাহ না করার কথা বলা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বীনদারী-ধার্মিকতা না থাকা অবস্থাতে শুধু সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই বিবাহ করা। এর অর্থ এই নয়, মানুষকে সৌন্দর্য থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ ও তার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া পাত্র-পাত্রী দেখে নেওয়ার নির্দেশ থেকেও বুঝা যায় সৌন্দর্য দেখে বিবাহ করার গুরুত্ব।
(৪) মোহরানা স্বল্প হওয়া: রমণীর মোহরানা কম হওয়াও একটি লক্ষণীয় বিষয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-

خير النّساء احسنهنّ وجوهها وأرخصهنّ مهورا إلخ.
“সর্বোত্তম রমণী সে, যে রূপসী-সুন্দরী এবং তার মোহর স্বল্প”। (তাবকাতুশ শাফেয়ীয়াতিল কুবরা- ৬/৩১০)।
হযরত ওমর (রাযি.) মোহরানায় সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন। মহানবী (সা.) একাধিক স্ত্রীকে দশ দিরহাম মোহরের বিনিময়ে বিবাহ করেছেন। হযরত ওমর (রাযি.) মোহরের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করতে নিষেধ করে বলেন, সমগ্র জাহানের সর্দার রাসূল (সা.) চারশত দিরহামের অধিক মোহরানা দিয়ে কোন রমণীকে বিবাহ করেননি এবং নিজের কন্যার ক্ষেত্রেও এর অতিরঞ্জিত মোহর ধার্য্য করেননি। মোহরানার মধ্যে অতিরঞ্জন করা যদি সম্মান ও মর্যাদার বিষয় হতো, তাহলে এর জন্য মহানবীই (সা.) ছিলেন সর্বাধিক উপযুক্ত এবং এব্যাপারে তিনিই সর্বাগ্রে থাকতেন। অন্য একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

بركة المرأة سرعة تزويجها وسرعة رحمها ويسّر مهرها. (المغني عن حمل الأسفار: ১৪৫১)
“নারীদের জন্য বরকতের বিষয় হচ্ছে, যথাসময়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাওয়া, উপযুক্ত সময়ে তাড়াতাড়ি সন্তান জন্ম দেওয়া এবং যথা সম্ভব মোহরানা সহজ সাধ্য হওয়া”। অন্য হাদিসে এসেছে-

إن أعظم النّكاحبركة ايسرها مئونة.
অর্থাৎ- সর্বাধিক বরকতময় ঐ বিবাহ, যার ব্যয় সর্বাধিক স্বল্প। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২৪৫২৯)।

(৫) অধিক সন্তান প্রজননকারীনী হওয়া:
রমণী অধিক সন্তান প্রসবীণী হওয়াও লক্ষণীয় বিষয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-
تزوّجوا الودود الولود فإنّي مكاثر بكم الأمم.
“তোমরা স্বামী প্রেমী, অধিকহারে সন্তান প্রসবকারীনী পাত্রী বিবাহ করো। কেননা, আমি অবশ্যই তোমাদের নিয়ে অন্যান্য উম্মতের উপর আধিক্যের গর্ব করব। (সুনানে আবু দাবুদ, হাদীস নং- ২০৫০)। আর এটি বংশ ও লক্ষণ অনুসন্ধান করে, সুস্থ ও যুবতী দেখে বিবাহ করার দ্বারা অর্জন হবে।

(৬) উত্তম বংশ-মর্যাদার হওয়া:
পাত্রীর বংশগত দিক লক্ষ্য করা খুবই প্রয়োজন। অর্থাৎ, পাত্রীর ভালো বংশের, ধর্মীয় পরিবারের হওয়া বাঞ্চনীয়। কেননা ভালো বংশের মেয়েই সাধারণত ভালো হয়ে থাকে, আবার তার কাছ থেকে ভালো বংশও বিস্তার হয়। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

تخيّروا لنطفكم إلخ.
“তোমরা তোমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য উত্তম বংশের পাত্রী নির্বাচন করো। (কেননা, বংশের ধারা পরবর্তীদের মাঝে ক্রমাগত চলতে থাকে)”। ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ১৯৬৮)। অর্থাৎ; ভালো বংশের মেয়ে হলে ভালো বংশেরই বিস্তার ঘটবে।

(৭) বুদ্ধিমতী ও মেধাবী হওয়া:
স্ত্রী বুদ্ধিমতী ও মেধাবী হওয়া একান্ত কাম্য। কারণ, বিবাহের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রীতি-ভালোবাসার মাধ্যমে উত্তম জীবন-যাপন। আর বুদ্ধিমতী স্ত্রী ব্যতীত এ লক্ষ্যে পৌঁছা খুবই কঠিন ব্যাপার। আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদেরকে স্বামীর অবর্তমানে সংরক্ষণকারীনী বলেছেন। বুদ্ধিমতী না হলে তো এটা প্রায় অসম্ভব বিষয়।

(৮) পাত্রের পছন্দনীয় হওয়া:
যে রমণীকে পাত্রের ভালো লাগে, যার প্রতি তার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, তাকেই বিয়ে করা উচিৎ। একটি হাদীসে এসেছে, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, রমণীরা পুরুষের প্রমোদ ও বিনোদনের পাত্র। অতএব, তোমাদের কেউ বিনোদনের পাত্র গ্রহণ করতে চাইলে সে যেন ভালো এবং সুন্দরটাই গ্রহণ করে। অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা মানুষের মন শান্তি পায় না। মন শান্তি না পেলে তাকে নিয়ে সংসার শান্তিময় হওয়া কঠিন। আর সকলের পছন্দ একরকম নয়। অতএব, প্রত্যেকেই নিজ নিজ পছন্দ মত পাত্রী নির্বাচন করবে এবং বিবাহের পূর্বে তা দেখে নিবে। যেমন- নবী (সা.) বলেছেন, তা দেখে নেয়ার জন্য।

عن المغيرة بن شعبة، أنه خطب امرأة، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: انظر إليها، فإنه أحرى أن يؤدم بينكما.
হযরত মুগিরা ইবনে শো’বা (রযি.) এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে রাসূল (সা.) বলেন, তুমি তাকে দেখে নাও। কেননা, তা তোমাদের উভয়ের মাঝে সম্পর্ক স্থায়িত্যের জন্য অধিক কার্যকর। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ১০৮৭)।

উক্ত হাদীস দ্বারা পাত্র নিজে পাত্রীকে দেখাটা ইবারাতুন্নাছ (মূলপাঠের ভাষ্য) দ্বারা প্রমাণিত এবং পাত্রী নিজে পাত্রকে দেখা দেওয়াটা ইকতিযাউন্নাছ (মূল পাঠের দাবি) দ্বারা প্রমাণিত।

(৯) রমণী কুমারী হওয়া:
পাত্রী নির্বাচনে রমণী কুমারী হওয়াও একটি লক্ষণীয় বিষয়। অর্থাৎ- পাত্র অবিবাহিত হলে পাত্রীও অবিবাহিত হওয়া বাঞ্চনীয়। পাত্রী কুমারী হলে কয়েকটি লাভ আছে, যেমন-

১. কুমারী রমণী অধিক স্বামী সোহাগিণী হয়। স্বামীকে প্রাণ খুলে ভালোবাসে। তাই কুমারী বিবাহ করলে নবী কারীম (সা.)এর বাণী “তোমরা স্বামী সোহাগিণী মেয়েদের বিবাহ করো”। এই অর্থের উপর যথার্থ আমল হয়। মানব প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই প্রথম পরিচিত ব্যক্তিকে পূর্ণ আগ্রহে গ্রহণ করে। তার সাথে প্রীতি-ভালোবাসা বিনিময় করে মুক্ত মনে ও নিষ্কলুষভাবে। আর যে রমণী পূর্বে বিয়ে করেছে, তার এ অবস্থা না হওয়াটাই স্বাভাবিক।

২. রমণী কুমারী হলে তার প্রতি স্বামীর পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও প্রীতির সঞ্চার হয়। প্রত্যেকেই নতুন মানব প্রকৃতি পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে নেয়।

৩. রমণী কুমারী হলে স্বামীর প্রতি তার পূর্ণ আকর্ষণ থাকে। কারণ, বিধবা হলে অনেক কিছু পূর্বের স্বামীর সাথে তুলনা করে এবং তাতে কোন কোন বিষয়ে পূর্ব স্বামীকে উত্তম দেখতে পেয়ে দ্বিতীয় স্বামীর প্রতি হতাশা জাগার আশংকা থাকে। নবী কারীম (সা.) জাবের (রাযি.)কে বলেন, জাবের তুমি বিয়ে করেছো? জাবের (রাযি.) বললেন, জ্বী, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)। পুনরায় রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কুমারী বিয়ে করেছো নাকি বিধবা? জাবের (রাযি.) বললেন, বিধবা। নবী (সা.) বললেন, তুমি কুমারী কেন বিয়ে করনি? তা হলে তুমি তার সাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারতে এবং সেও তোমার সাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারতো। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৪৯৪৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ১৮১২)।

তবে, প্রয়োজনে বিধবা বিবাহ করাও মন্দ নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রে খুবই উত্তম কাজ। যেমনটি জাবের (রাযি.) করেছিলেন।

(১০) রমণী ভিন্ন বংশের হওয়া:
ইমাম গাযালী (রহ.) ও আবু ইসহাক সিরাজী (রহ.)এর দৃষ্টিতে ভিন্ন বংশের রমণী বিয়ে করা উত্তম। ইমাম শাফিয়ী (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে, যারা নিকটাত্মীয় নারীদের বিয়ে করে থাকে, তাদের সন্তানাদি অনেক সময় নির্বোধ হয়ে থাকে। তবে এ ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস প্রমাণিত নেই। মনে হয় এটি তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন। আমাদের দেশে একটি এলাকা আছে, যেখানে অনেক মানুষের সন্তানাদির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণ হয় না। আমি তার কারণ জানতে চাইলে এক মুরুব্বি বললেন- এই এলাকার লোকেরা ভিন্ন বংশের মেয়েদের বিয়ে করে না, আবার নিজেদের মেয়েও ভিন্ন বংশের ছেলেদেরে কাছে বিয়ে দেয় না। আপন বংশের মধ্যেই বিবাহ-শাদী সীমাবদ্ধ রাখে। কিন্তু এর কোন তাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিতে পারলো না। এটা কোনো শরয়ী বিষয়ও না। তবে এতটুকু বলা যায়, নিকটাত্মীয় হলে তাদের গুণাবলী ভালোভাবে জ্ঞাত হওয়া সম্ভব, যা সাধারণত অনিকটাত্মীয়ের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। সর্বাপেক্ষা লক্ষণীয় গুণ হচ্ছে দু’টি- ১. দ্বীনদারী। ২. আখলাক ও চরিত্র। অত:পর অন্যান্য গুণাবলী বিবেচ্য হবে।

(১১) আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে নিজের তুলনায় পাত্রী ধনী না হওয়া। কারণ, অনেক সময় অর্থদম্ভ স্বামীর নির্দেশনা মানার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

(১২) ওলামায়ে কোরামগণের স্ত্রী মাদরাসা কেন্দ্রিক জীবন-যাপন পছন্দকারীনী হওয়া আবশ্যক। অন্যথায় দাম্পত্য জীবনে অনেক সময় প্রতিকূল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। সন্তানদের শিক্ষার বিষয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়।

আদর্শ পাত্রের গুণাবলী

পাত্র নির্বাচনেও পাত্রী পক্ষের জন্য পাত্রের উত্তম গুণাবলীর প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত প্রয়োজন; বরং পাত্রী নির্বাচনের চেয়ে পাত্র নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন নারীর কল্যাণে আরো বেশি জরুরি। কেননা, বিবাহ এমন একটি বন্ধন, যে বন্ধনে স্বামীর কর্তৃত্ব বেশি হয়ে থাকে। কারণ, শরীয়াহ মতে তালাকের মালিক একমাত্র স্বামী। স্ত্রীকে স্বামীর নিকট অর্পণ ব্যতীত সে তালাকের মালিক হতে পারে না। তাই যেন তেন পাত্রের হাতে কেউ যেন স্বীয় কন্যা তুলে না দেয়, খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে পাত্রীর অভিভাবকদেরই সর্বাধিক লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, সভ্য সমাজে অভিভাবক বিহীন বিয়ে কল্পনাও করা যায় না। নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন-

أيمّا امرأة نكحت بغير إذن وليها فنكاحها باطل‘فنكاحها باطل‘فنكاحها باطل.
“যে কোনো মহিলা তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তাহলে তার সে বিয়ে বাতিল বা বর্জণীয় ও অগ্রহণযোগ্য।” (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ১১০২)।

অতএব, পাত্রীর অভিভাবকের জন্য পাত্রের গুণাবলীর প্রতি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। ধর্মীয় বিষয়ে উদাসীন, দুশ্চরিত্র, স্ত্রীর অধিকার আদায়ে অক্ষম, বংশগত দিক দিয়ে অসামঞ্জস্য, কুশ্রী, বিদআতি, ফাসেক, অত্যাচারী কোনো পাত্রের হাতে যেন নিজের আদরের দুলালীকে তুলে না দেয়। বরং ধার্মিক, সৎচরিত্রবান, স্ত্রীর অধিকার আদায়ে সক্ষম, বংশগত দিক দিয়ে উন্নত, সুশ্রী, বিশুদ্ধ আকীদা পোষণকারী, প্রকৃত সুন্নী, ন্যায়পরায়ণ, ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত পাত্রের নিকট বিয়ে দেবে। সর্বাধিক দেখার বিষয় হচ্ছে , খোদাভীতি বা তাকওয়া। যার মধ্যে যত তাকওয়া সে তত উপযুক্ত পাত্র।

আল্লাহ তাআলা বলেন- إِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ.ٍ “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানী ব্যক্তি তিনিই, যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মুত্তাকী বা আল্লাহ ভীরু।” (সূরা আল হুজরাত, ১৩ আয়াত)।

এক ব্যক্তি হযরত হাসান বসরী (রহ.)কে জিজ্ঞাসা করলো- আমার কন্যার বিয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব এসেছে। আমি কোন পাত্রকে প্রাধান্য দিবো এবং কার নিকট বিয়ে দিবো?

আরও পড়তে পারেন-

হাসান বসরী (রহ.) বললেন- এদের মধ্যে যে বেশি মুত্তাকী তার নিকট তোমার কন্যাকে বিয়ে দাও। কারণ, স্বামী যদি তাকে পছন্দ করে এবং ভালোবাসে, তাহলে তার যথার্থ মর্যাদা দিতে পারবে। আর যদি পছন্দ না করে বা ভালো না বাসে, তাহলে তার উপর অত্যন্ত যুলুম-অত্যাচার করবে না। একটি হাদীস শরীফের বর্ণনায় এসেছে- من زوج كريمته من فاسق قطع رحمها. “যে তার কন্যাকে কোন ফাসেক-পাপাচারীর নিকট বিয়ে দিলো, সে আত্মীয়তার হক নষ্ট করে দিলো।”(শুআবুল ঈমান, হাদীস নং- ৮৩৩৪)।

পাত্র-পাত্রী দেখার বিধান:
যেহেতু পাত্র-পাত্রী পছন্দ হওয়াও বিয়ে-শাদীতে একটি লক্ষণীয় বিষয়, সেহেতু এর নিয়ম-নীতিও জেনে রাখা একটি লক্ষণীয় বিষয়। বিয়ে করার লক্ষ্যে পাত্র যেমন পাত্রীকে পছন্দ হওয়ার জন্য দেখে নিতে পারবেন, তেমনই পাত্রীও পাত্রকে দেখে নিতে পারবেন এবং পাত্রীর অভিভাবক পাত্রীকে দেখাতে পারবেন। তবে কোনোভাবে কোন দিক দিয়েই সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। ইসলাম কোনো ক্ষেত্রেই সীমালঙ্ঘনকে সমর্থন করে না। পাত্র-পাত্রী পরস্পর না দেখে বিবাহ করা যদিও জায়েয-বৈধ, কিন্তু ঠিক নয়। দেখে বিবাহ করাই সুন্নাত। যার বহুবিধ উপকার বিদ্যমান।

(এক)
عن المغيرة بن شعبة أنه خطب امرأة، فقال النّبي صلى الله عليه وسلم: انظر اليها، فإنه أحرى أن يؤدم بينكما.
“হযরত মুগীরা বিন শো’বা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি এক মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান করেন। রাসূল (সা.) শোনে তাকে বললেন, তুমি পাত্রীটি দেখে নাও। কেননা, এটা তোমাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা সৃজনে সহায়ক হবে”। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ১০৮৭)।

এই হাদীসে পাত্রীকে দেখার বৈধতা দান এবং সুন্নাহ প্রমাণ হওয়ার সাথে সাথে তার উপকারিতার প্রতিও ঈঙ্গিত রয়েছে। নবী কারীম (সা.) পাত্রীকে দেখে নিতে বলেছেন। তাহলে পাত্রের জন্য যেমন দেখাটা বৈধ-জায়েয, তেমনই পাত্রীর জন্যও পাত্রকে বিয়ের পূর্বে দেখা দেওয়া এবং অভিভাবকদের জন্য দেখানোও বৈধ এবং জায়েয হবে। এটা যারা إقتضاءالنص বা নির্দেশের চাহিদা বুঝেন তাদের বুঝতে তেমন কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কারণ, পাত্রের জন্য ‘দেখা’ এই নির্দেশের দ্বারা জাযেয প্রমাণিত। আর পাত্রীর জন্য ‘দেখা দেওয়া’ হলো জায়েয কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর, বরং সুন্নাতেরই সহযোগিতাকরণ। আর সুন্নাতের সহযোগিতাও সুন্নাহ হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-

تَعَاوَنوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَاتَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ.
“ভালো এবং তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো, আর গোনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না।” (সূরা আল মায়েদা- ২)। ফলে পাত্রী নিজেকে দেখার সুযোগ দিবে, আর পাত্রও দেখে নেবে। সাধারণত এটাই নিয়ম। তবে মেয়েদের অজ্ঞাতসারেও যদি পাত্র দেখে নিতে পারে, তাও চলবে।

(দুই) হযরত ওমর (রাযি.) নিজে বিবাহ করার জন্য হযরত আলী (রাযি.)এর নিকট তার একটি মেয়ের প্রস্তাব দেন। হযরত আলী (রাযি.) মেয়ের বয়স স্বল্প বলে প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। কেউ কেউ হযরত ওমর (রাযি.)কে বললেন, প্রকৃতপক্ষে হযরত আলী (রাযি.) আপনাকে মেয়েটি না দেওয়ার জন্যই এটি বলেছেন। তখন হযরত ওমর (রাযি.) পুনরায় প্রস্তাব পাঠান। তখন আলী (রাযি.) বললেন, আমি মেয়েটি আপনার নিকট পাঠাচ্ছি। আপনার দেখে পছন্দ হলে আপনি তাকে বিবাহ করতে পারবেন। হযরত ওমর (রাযি.) দেখে পছন্দ করেছেন এবং বিবাহও করেছেন। (মুসান্নিফে আব্দুর রায্যাক)।

এই ঘটনা থেকে প্রতিয়মান হয়, পাত্রী দেখা এবং দেখানো সবই প্রয়োজনে জায়েয। ওমর (রাযি.) ও আলী (রাযি.)এর সুন্নাত আমাদের জন্য আদর্শ হওয়াতে কোনরূপ দ্বিধা নেই। তবে কতটুকু দেখতে পারবে, তার সীমারেখা আছে। এজন্য সংক্ষেপে তার কিছু নিয়ম নিম্নে বর্ণনা করছি।

পাত্র-পাত্রী সরাসরি দেখার নিয়মাবলী:
(১) পাত্রী পাত্রকে শুধু মুখম-ল এবং পা দেখাতে পারবেন। এর বেশি দেখাতে পারবেন না। তবে এসব অঙ্গের প্রতি বার বার দৃষ্টি দিতে পারবেন। কাপড়ের উপর দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার শরীরের উপর অনুসন্ধানী দৃষ্টি ফেরাতে পারবেন। বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী পরস্পরে দেখে নেওয়ার বিষয় না হলে এই দেখাও তাদের জন্য বৈধ হতো না।

(২) পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে স্পর্শ করতে পারবেন না। মুসাফাহাও করতে পারবেন না। কারণ, হাদীস শরীফে শুধু দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, স্পর্শ করার নয়। তবে পরস্পর কথা বলতে পারবেন। পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝার জন্য মতবিনিময় করতে পারবেন।

(৩) পাত্রীর অভিভাবক বা মাহরামদের থেকে কোনো পুরুষের উপস্থিতি ছাড়া নির্জন ঘর বা স্থানে পাত্র-পাত্রী একত্রিত হতে পারবেন না।

(৪) পাত্রের সঙ্গে পাত্রীর জন্য মাহরাম নয় এমন কোনো পুরুষ থাকতে পারবে না। শুধুমাত্র পাত্রই তাকে দেখতে পারবেন। কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায়, পাত্রের সাথে অথবা আলাদাভাবে পাত্রের পিতা, চাচা, মামা, বন্ধু বা এধরণের অন্য কোনো আত্মীয় পাত্রীকে দেখতে চায়। এটা জায়েয নয়।

(৫) পাত্র-পাত্রী উভয়েই স্বাভাবিক সাজসজ্জা করতে পারবেন; যা উভয়ের শ্রী-বর্ধনে সাহায্য করে। তবে এমন সাজসজ্জা করতে পারবেন না, যাতে শরীরের প্রকৃত রূপ ও আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায় এবং অপর পক্ষ প্রতারিত হওয়ার আশংকা থাকে। যেমন- বয়ষ্ক পাত্র সাদা চুল বা দাড়িকে খেজাব বা কলপ করে যাওয়া। পাত্রী অত্যাধিক মেকআপ করে কালো চেহারা সম্পূর্ণ ঢেকে নিয়ে ফর্সা করে উপস্থিত হওয়া। এসব ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। ঈমানদার কাউকে ধোঁকা দিতে পারে না।

(৬) বর্তমান সমাজে পাত্রী দেখতে গিয়ে ছবি তোলার প্রবণতা দেখা যায়, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ, শরীয়তে যাদেরকে দেখার অনুমতি দেয়নি তারাও ছবিতে দেখার সুযোগ পেয়ে যায়। তাই এ কাজ থেকে নিজেও বিরত থাকবে এবং অন্যদেরকেও বিরত রাখতে সহযোগিতা করবে।

গোপনে পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়:
পাত্র সরাসরি পাত্রীকে দেখার সময় তার মুখম-ল, হাত, পা ব্যতীত অন্য কোন অংশ পর্দাবিহীন অবস্থায় দেখতে পারবে না। যদিও পর্দার উপর দৃষ্টি রেখে পাত্রীর দেহের গঠন অনুমান করার চেষ্টা করতে পারবে। কিন্তু যখন পাত্র গোপনে পাত্রীকে দেখার চেষ্টা করবে, তখন তার দৃষ্টি শুধু মুখম-ল, হাত ও পায়ের উপর সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। কারণ, পাত্রী যেহেতু জানবে না কেউ তাকে দেখছে, তাই পর্দার প্রতি তার সতর্কতা নাও থাকতে পারে; বরং সে সাধারণ কাপড়ে তার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে। ফলে তার মাথা, চুল, হাতের কনুই বা বাহু পর্যন্ত পাত্রের দৃষ্টিগোচর হওয়ার আশংকা থাকবে। যেহেতু এমন পরিস্থতি থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা পাত্রের পক্ষে সম্ভব হবে না, তাই গোপনে পাত্রী দেখতে গিয়ে যদি এমন কিছু পাত্রের চোখে পড়ে যায়, তাহলে এতে তার গোনাহ হবে না। কিন্তু যেখানে পাত্রীর পেট-পিঠ খোলা থাকার আশংকা থাকে, সেখানে পাত্রী দেখার চেষ্টা করা জায়েয হবে না এবং খেয়াল রাখতে হবে, যেন পাত্রী ছাড়া অন্য কোনো বেগানা-অনাত্মীয় মহিলার উপর দৃষ্টি না পড়ে।

সারকথা: ইসলামী শরীয়তের আলোকে পাত্র-পাত্রী পরস্পর না দেখে যদিও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয-বৈধ। কিন্তু পরস্পর বিবাহের পূর্বে দেখে নেওয়াটাও উত্তম; বরং পাত্রীকে দেখে নেওয়া অনেকের মতে সুন্নাত।

পাত্রীকে দেখা এবং পাত্রী নিজে দেখা দেওয়া ও অভিভাবক তাকে দেখানোর ব্যবস্থা করা সম্পূর্ণ জায়েয-বৈধ।

কিন্তু পরস্পর দেখার ক্ষেত্রে শরীয়তের বর্ণনাতীত সীমালঙ্ঘন করা কোনো ভাবইে জায়েয হবে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাঁর মর্জি মোতাবেক চলার তাউফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: মুফতি ও সিনিয়র উস্তাদ দারুল উলূম হাটহাজারী।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।