।। মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী ।।
নফল ইবাদত যতই ছোট হোক, তা যদি নিয়মিত করা হয় এবং অভ্যাসে পরিণত করা হয়, তখন তার সওয়াব, তার পুরস্কারটা বড় হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা চাইলে নফল ইবাদতের উসিলায় বান্দার গোনাহগুলো মাফ করে দিতে পারেন। কেয়ামতের দিন অনেক ঈমানদার থাকবে, যারা দুনিয়াতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করার কারণে পরকালে জান্নাত পাবেন। ইসলামে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম।
নফল অর্থ অতিরিক্ত। অর্থাৎ তা ফরয এবং ওয়াজিবের অতিরিক্ত। একে ফরয ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবেও গণ্য করা হয়। নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা না করা উচিত। কেননা, এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাধ্যম। নফল ইবাদতের সওয়াব বেশি দরকার হবে কেয়ামতের দিন, হাশরের ময়দানে। যেদিন ফরয ইবাদতের ত্রুটির কারণে বান্দা আটকে যাবে, তখন তার নফল ইবাদতগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দৈনিক অনেক নফল ইবাদত আছে, যা অতি সহজেই করা যায়। এর সওয়াবও বেশি। যেমন সাধ্যমতে নফল নামায পড়া, যিকির করা, তাসবীহ পড়া, দুরুদ শরীফ পড়া, কুরাআন তিলাওয়াত করা, কবর যিয়ারত করা, মাসনুন দুআগুলো প্রয়োজনের সময় পড়া, ভাল কাজের আগে বিসমিল্লাহ পড়া, দান সদকা করা, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, যে কোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা, সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা, এমনকি একজন মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলাও নফল ইবাদতের সওয়াব। সুবহানাল্লাহ।
আরও পড়তে পারেন-
- বাংলায় হিন্দু রেনেসাঁস: প্রগতিশীলতা ও ইসলামবিদ্বেষ
- পরিবেশ বিপর্যয়— রুশ সাম্রাজ্যের শাপে বর?
- ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস ও হিন্দিবাদী রবীন্দ্রনাথ
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
নফল ইবাদত দ্বারা মূলত আল্লাহর প্রতি বান্দার মুহাব্বতের পরিমাপ করা হয়। ফরয এবং ওয়াজিবের দায়িত্বগুলো পালন করার পর, অতিরিক্ত নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা মূলত আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ। বান্দার পক্ষে কখনও সম্ভব নয় যথাযথভাবে ফরয ও ওয়াজিবগুলো পালন করা; বরং ওগুলো পালন করতে গিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়াই স্বাভাবিক। তার ঘাটতি পূরণে নফল ইবাদত বেশি প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আবু দাউদ শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব হবে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলবেন, তোমরা আমার বান্দার নামাযের দিকে তাকাও, যদি ফরয নামাযে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা বলবেন, দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল ইবাদত আছে কি না? নফল ইবাদত থাকলে আল্লাহ নির্দেশ দিবেন, তোমরা ফরযের দূর্বলতাগুলো নফল দ্বারা পূর্ণ করে দাও।
আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, নামাযের পর যাকাতের বিষয় ওঠানো হবে এবং নফল দান-সদকা দ্বারা ফরয যাকাতের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পূরণ করা হবে। তাই ইবাদতের সুফল ভোগ করতে আমাদের কর্তব্য হলো, নফল ইবাদত বেশি বেশি করা।
মুসলিম শরীফে এসেছে, নফল ইবাদত দ্বারা আল্লাহর দরবারে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। নফল ইবাদত দ্বারা সগিরা গোনাহ মাফ হয়ে যায়। নফল ইবাদতে ব্যস্ত থাকলে মানুষ গোনাহ থেকে বাঁচতে পারে। নফল ইবাদত দ্বারা মানুষ আল্লাহর প্রিয় হয়।
মুসনাদে আহমদের একটি হাদীসে এসেছে, বেশি বেশি নফল ইবাদত করা রাসূল (সা.)এর অভ্যাস ছিলো। তিনি এত বেশি তাহাজ্জুদের নামায আদায় করতেন যে, তার পা মোবারক ফুলে যেতো। বেশি বেশি নফল ইবাদত করলে, রাসূল (সা.)এর সঙ্গে জান্নাতে থাকার সুযোগ হবে। সহীহ মুসলিমের হাদীস- একদা রাবিয়া ইবনে কাব আসলামি (রাযি.), রাসূল (সা.)কে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জান্নাতে আপনার প্রতিবেশী হয়ে থাকতে চাই। রাসূল (সা.) তাকে বললেন, বেশি বেশি নফল ইবাদত করো।
অনেকের ধারণা, নফল মানে অতিরিক্ত ইবাদত। তা না করলে তো গোনাহ নেই । তাই নফল ইবাদত করে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ফরয এবং ওয়াজিব পালনে যে ত্রুটি ও দুর্বলতা হয়ে যায়, তা পূরণ করা হবে নফল ইবাদত দিয়ে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের আলোকে নফল ইবাদত করার ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: সি. শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল করিম চট্টগ্রাম।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/