।। আল্লামা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী।।
সদকা ফিতর কী ও কেন?
ফিতর শব্দের অর্থ রোযা খোলা, ভাঙ্গা ও পরিত্যগ করা। ইসলামী শরীয়তে সদকা ফিতির মানে হলো, আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দার উপর একটি সদকা নির্ধারণ করেছেন যা রমযান মাস শেষে রোযা শেষ হওয়ার খুশি ও শুকরিয়া হিসেবে আদায় করতে হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযাকে ভুল ত্রুটি থেকে পাক-পবিত্র, দরিদ্র ও নিঃস্বদের পানাহারের ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে সদকা-ফিতিরকে ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগেই সদকা-ফিতির আদায় করবে, তার ফিতরা মকবুল হিসাবে গন্য হবে। আর যে ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে, তার ফিতরা সাধারণ সদকা গণ্য হবে। (জামউল ফাওয়ায়েদ- ১/১৪৫)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ঐ দিন ভিক্ষা চাওয়া থেকে ভিক্ষুকদের মুক্ত করে দাও।
সদকা ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার পরে তাৎক্ষণিকভাবে বিলম্বে আদায়ে ক্ষেত্রে কোনটি উত্তম এ ব্যাপারে বাহরুর রায়েক কিতাবে সদকা ফিতির ওয়াজিব হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (২/২৫১)।
ঈদের দিনের পূর্বে সদকা ফিতির দেওয়াও বৈধ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় সাহাবীগণ ঈদের দিনের আগেই সদকা ফিতির আদায় করে দিতেন। (মিনহাতুল খালেক আলা বাহররি রায়েক- ২/২৫১)।
কোনো ব্যক্তির এই পরিমাণ সম্পদ আছে, যাতে যাকাত ওয়াজিব হওয়া না হওয়া উভয়টিরই সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যাকাতের নেসাবের সমপরিমাণ বা অতিরিক্ত মূল্যমানের বিলাসী তৈজসপত্রের সম্পদ থাকলে তার উপরে যাকাত ওয়াজিব হবে। এ ব্যক্তির উপর ঈদের দিন সদকা দেওয়া ওয়াজিব। চাই এ সম্পদ ব্যবসার হোক বা না হোক। আবার এ সম্পদের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হোক বা না হোক। শরীয়তের পরিভাষায় এমন দানকে সদকা ফিতির বলা হয়।
কোনো কারণে কেউ রোযা রাখতে না পারলেও তার উপর সদকা ফিতির ওয়াজিব। কোনো শিশু সন্তান ঈদের দিন সুবহে সাদেরকের আগে জন্মগ্রহণ করলে, তার পক্ষ থেকে সদকা ফিতির আদায় করা ওয়াজিব। আর সুবহে সাদেকের পরে জন্ম নিলে তার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। (ফাতওয়া আলমগিরী- ১/১৯২)।
সদকা ফিতরের পরিমাণ
সদকা ফিতিরের পরিমাণ হলো, আটা, গম বা গমের ছাতু হলে অর্ধ সা। (নূরুল ইযাহ- ৩৯৫)। আটা, গম বা গমের ছাতু (পুরনো সের আশি তোলার মাপ অনুযায়ী) এক সের সাড়ে বার ছটাক দিতে হবে। আর আধুনিক ওজন মাপে এক কেজি ৬৫৭ গ্রাম বা তার সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে দুই সের অথবা নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে কিছু বেশী দেওয়া ভালো। খেজুর, যব অথবা কিসমিস দিলেও গম ইত্যাদির দিগুন তথা সাড়ে তিন সের দিতে হবে। বর্তমানের আধুনিক ওজনের যা তিন কেজি ৩১২ গ্রাম বা তার সমপরিমাণ মূল্য। (বেহেশতী জেওর- ২/২৩০)।
কেউ এসব জিনিস ছাড়া অন্য কিছু যেমন চাউল ইত্যাদি দিতে চাইলে, হিসেব করে খেজুর, গম, যব, কিসমি ইত্যাদির সমপরিমাণ মূল্য আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গমের উপর অনুমান করে তার সমপরিমাণ চাউল দিলে তা জায়েয হবে না। কেননা ফিক্বাহর কিতাবে বলা হয়েছে, হাদীসে যে সব জিনিস দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে এসবের মূল্য দিতে হবে। ফিক্বাহবিদগণ বলেন, গম প্রভৃতির মূল্য দেওয়াই উত্তম। আর যে সকল জিনিস দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে, তার মূল্য দেওয়াই উত্তম। (ফাতওয়া আলমগীরী- ১/১৯২)।
রমযান মাসের শেষ তারিখ জন্ম গ্রহণকারী নবজাতকের পক্ষ থেকে সদকা ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। (কিফায়তুল মুফতী- ৪/২৯৪)।
একজন মানুষের ফিতরা একজন অথবা একাধিক ফকীরকে দিতে পারবে। (হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা মারাকী- ৫৯৬)।
ফিদিয়ার জরুরী মাসআলাসমূহ
কোনো ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদির অসিয়ত করে গেলে, তার অসিয়ত পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের কম হলে, তা আদায় করতে কোনো অসুবিধে নেই। আর অসিয়ত এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে অধিক হলে, তার অসিয়ত বাস্তবায়নে সকল অংশীদারের অনুমতির প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের থেকে কোনো একজন অংশীদারও যদি অনুমতি না দেয়, অসিয়ত পুরা করা যাবে না। অংশীদারের কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার অনুমতি গ্রহণ যেগ্য নয়। সুতরাং মৃত ব্যক্তির ঐ অসিয়ত যা এক তৃতীয়াংশের অধিক মালের উপরে করা হয়েছে, না বালেগের অংশে তা কার্যকর করা যাবে না।
কোনো ব্যক্তি অসিয়ত করে এই পরিমাণ সম্পদ রেখে মৃত্যু বরণ করে যে, তা সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা সব অসিয়ত সম্পন্ন হতে পারে। তাহলে অংশীদারের উপর এ অসিয়ত পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য। এতে অবহেলা করা কিংবা কৌশলগতভাবে এ ফিদিয়াকে টালবাহানার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে বণ্টন করে নিলে সকলেই গোনাহগার হবে।
অসিয়ত পালনে যেসব বিষয় অতীব জরুরী
ক. প্রতি দিনের জন্য বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাযের ফিদিয়া আদায় করতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযের ফিদিয়া পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য। সুতরাং এক দিনের নামাযের ফিদিয়া হচ্ছে, সাড়ে দশ সের গম অথবা তার মূল্য।
খ. প্রতিটি রোযার ফিদিয়া পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য দিতে হবে। আবার নযর ও মান্নতের রোযার ফিদিয়াও একই পরিমাণ দিতে হবে।
গ. যেসব বৎসরের যে পরিমাণ সম্পদের যাকাত বাকী রয়ে গেছে, তা যথাযতভাবে হিসাব করে আদায় করতে হবে।
ঘ. ফরয হজ্ব আদায় না করে থাকলে মৃতের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাতে হবে। আর এর সমস্ত প্রয়োজনাদি ও খরচ তার ওয়ারীশদের বহন করতে হবে।
ঙ. অসিয়তকারী ঋণগ্রস্ত থাকলে ঋণদাতার প্রাপ্য অনুসারে তা পরিশোধ করতে হবে।
চ. ফিতরা বাকী থাকলে প্রত্যেকটির পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য আদায় করতে হবে।
ছ. কুরবানী না করে থাকলে ঐ বৎসর ছাগল অথবা গরুর এক সপ্তমাংশের মূল্য পরিমাণ সদকা করে দিতে হবে।
জ. তিলাওয়াতে সিজদা আদায় না করে থাকলে, সাবধানতা হচ্ছে প্রত্যেক সিজদার পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য সদকা করতে হবে।
ঝ. কাযা নামায ও রোযার সঠিক হিসাব জানা না থাকলে অনুমান করে তা আদায় করতে হবে।
ঞ. কাফফারা আদায়ের জন্য প্রতি জন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ানো জরুরী। শুধু এক বেলা খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না। এক বেলা খাওয়ানো হয়েছে এমন মিসকীনকে আবার দ্বিতীয় বেলা খাওয়ানো ওয়াজিব। চাই এটি একই দিনে হোক বা ভিন্ন দিনে। (আহসানুল ফাতওয়া- ৪/৪৪০)।
উক্ত নিয়মাবলী মৃত ব্যক্তির অসিয়ত করে সে পরিমাণ সম্পদ রেখে মারা গেলে কার্যকর হবে। নতুবা অংশীদার গণের উপর তা আদায় করা জরুরী নয়। তবে সেচ্ছায় তারা সহানুভূতি করলে যথেষ্ট সওয়াব রয়েছে। (জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৩৯২-৯৩)।
প্রসঙ্গঃ যাকাত
যাকাত শব্দটি আরবী ‘তাযকিয়াতুন’ ধাতু থেকে নির্গত। এর অর্থ পবিত্র করা। আবার পবিত্রতা বৃদ্ধি হওয়া উন্নতি লাভ করা ইত্যাদি অর্থেও যাকাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যাকাত মানুষের জন্যে যেহেতু কৃপণতা, গুনাহ ও আযাব থেকে পরিত্রাণ এবং সম্পদ বৃদ্ধি ও অন্তর পবিত্র হওয়ার উপায়, তাই এর নাম যাকাত রাখা হয়েছে। কুরআন মাজীদে এর প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (হে রাসূল!) আপনি তাদের সম্পদ থেকে সদকা তথা যাকাত গ্রহণ করুন। যাতে আপনি তাদেরকে পবিত্র ও বরকতময় করতে পারেন। (সূরা তাওবা-১০২, আল-মাসালিহুল আক্বলিয়া লিল আহকামিন নাকলিয়া- ১৩৫)।
হিজরী দ্বিতীয় সনে রোযার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে যাকাত ফরয হয়। (শরহে নুকায়া- ১/১৪৫)।
কুরআন মাজীদে যাকাতের বিধান
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে নামায, রোযা, হজ্ব ও অন্যান্য ফরয বিধানের সাথে যাকাতকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেছেন। যাকাতের ফযীলতের অধিক্যতা বোঝাতে নামাযের আলোচনার পর তাকে বত্রিশ স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। (ফাতওয়া শামী- ১/২৫৬)।
কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা নিয়ামননুবর্তীতার সাথে নামায আদায় করো এবং যাকাত দাও। আপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমরা নামায আদায় করো এবং যাকাত দাও”। (সূরা বাক্বরা- ৪৩)।
হাদীসে বর্ণিত যাকাতের বিধান
যাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
(ক) হযরত উমামা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্বের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি যে, তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করো। রমযান মাসে রোযা রাখো এবং তোমাদের মালের যাকাত আদায় করো।
(খ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। ১. এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। ২. নামায আদায় করা। ৩. যাকাত প্রদান করা। ৪. বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্ব করা। ৫. রমযান মাসে রোযা রাখা। (বুখারী কিতাবুল ঈমান)।
যাকাতের শিক্ষা ও তাৎপর্য
মানুষ যখন তার জীবন-যাপনের প্রধান উপকরণ, জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন এবং অনেক পরিশ্রম ও কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত অত্যাধিক প্রিয় বস্তু ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ তথা যাকাত হিসেবে প্রদান করে, তখন কৃপণতার কদর্যতা অন্তর থেকে দুরিভূত হয়ে তাতে ঈমানের এক বিশেষ শক্তি ও দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়। কেননা পরিশ্রমের উপার্জিত সম্পদ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করা এমন একটি নেক আমল, যা মানুষের ভিতরে লুকায়িত সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপবিত্রতা তথা কৃপণতা দূর করে দেয়। আবার এটি এমন একটি আমল, যা পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার সুসম্পর্ক ও নৈকট্যতার বন্ধন সুগভীর করে। বলা বাহুল্য, খুবই কষ্টে অর্জিত মানুষের প্রিয় সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা নফসের জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ এ ত্যাগেরে কারণে আল্লাহ তাআলার সাথে যাকাত আদায় কারীর সম্পর্ক বেশী হয়ে, ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পায়, যাকাত প্রদানের মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের সহানুভূতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মানুষের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। এ মহতি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ধনী ব্যক্তিদের উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে। এমনটি না হলেও মানবতার চাহিদা ছিলো গরীবের সাহয্যে এগিয়ে আসা। সহানুভূতি শীলতা হচ্ছে মানুষের একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন গুণ। যাকাত ও সদকা গুনাহ থেকে মুক্তির এবং বরকত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি উত্তম পন্থা। সমাজে বিভিন্ন রকম অসহায় দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত লোক থাকে, নানা ধরণের দুর্ঘটনা ও বিপদ-আপদে এসব লোক জর্জরিত হতেই পারে। সুতরাং সাহায্য-সহানুভূতির মাধ্যমে বিপদ-আপদ দূরীকরণের ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহলে অনাহার ও অর্ধহার ইত্যাদিতে জন-জীবন ও সমাজ ব্যবস্থার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যাবে। (আহকামে ইসলাম আকল কি নযর মে- ১৩৬)।
হযরত উমর (রাযি.) থেকে মারফু সূত্রের বর্ণিত। তিনি বলেন, যে সব সম্পদের সাথে সদকা কিংবা যাকাতের সম্পদ মিশ্রিত থাকবে, এসব সম্পদকে তা ধ্বংস করে দিবে। (জামউল ফাওয়াইদ- ১/১৪২)।
উল্লেখ্য, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্যে সম্পদ নিসাব পরিমাণ হওয়ার পরও উক্ত সম্পদের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হবে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো সম্পদের যাকাত বছর অতিবাহিত হওয়া ছাড়া ওয়াজিব হবে না।
যাকাত অনাদায়ের শাস্তি ও কঠোরতা
হাদীস শরীফে যাকাতের ফযীলত, যাকাত প্রদানে উৎসাহ যেমন বর্ণিত হয়েছে, তেমনি যাকাত অনাদায়কারী ব্যক্তি সম্পর্কে কঠিন শাস্তি ও কঠোরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা যে ব্যক্তিকে ধন-সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে তার যাকাত আদায় করলো না, কিয়ামতের দিন এসব ধন-সম্পদকে তার জন্যে বিষধর সাপের আকৃতিতে রূপান্তরিত করে দেয়া হবে। যে সাপের চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে। (অত্যন্ত বিষধর সাপের চিহ্ন এমন হয়ে থাকে)। সাপটি ঐ ব্যক্তির উভয় চোয়াল দংশন করে বলবে, আমি তোমার সম্পদ! আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ!!
হযরত বুরাইদা (রাযি.) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত, যে জাতি যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত করে শাস্তি প্রদান করেন।
যাকাতের মাসায়েল
১. কারো কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা কিংবা এর যে কোনো একটির সমমূল্যের মূদ্রা বা টাকা থাকলে তার উপর যাকাত ফরয। এ ক্ষেত্রে নগদ টাকা-পয়সা ইত্যাদি স্বর্ণ-রূপার বিধানের অন্তর্ভূক্ত। (দুররে মুখতার, ফাতওয়া শামী- ৩/২২৮)।
২. মিল-কারখানা ইত্যাদির যন্ত্রপাতির উপর যাকাত ফরয না হলেও তার থেকে উৎপাদিত পন্যের উপর যাকাত ফরয। আসবাবপত্র তৈরীর উদ্দেশ্যে কারখানায় রাখা কাঁচামালের উপরও যাকাত ওয়াজিব।
৩. স্বর্ণ কিংবা রূপার তৈরী যে কোনো জিনিস যেমন গহনাপাতি আবার কাপড়ের পাড়, লেস, জরি ওয়াজিব। যদিও এ লেস, নকশা ও জরি কাপড়ের সাথে লেগে থাকে।
৪. কারো কাছে কিছু নগদ অর্থ অল্প পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা স্বল্প পরিমাণ রূপা এবং কিছু ব্যবসার মাল রয়েছে যা পৃথকভাবে কোনটাই যাকাতের নিসাব পরিমাণ পৌঁছায় না। এ অবস্থায় সবগুলো জমা করে যদি সর্বমোট মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমাণ হয়, তাহলে যাকাত আদায় করা ফরয। এর থেকে কম হলে যাকাত আদায় করতে হবে না।
৫. প্রভিডেন্ট অনুত্তলিত টাকার উপর যাকাত ফরয নয়। কিন্তু চাকুরী শেষ হওয়ার পর এ ফান্ডের টাকা হস্তগত হলে এবং তা নিসাবের সমপরিমাণ হলে যাকাত ফরয হবে। আর এ অর্থ হাতে আসার পূর্বে বিগত বছর গুলোর যাকাত আদায় করা ফরয নয়। (কিফায়তুল মুফতী- ৪/২৬০)।
৬. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বছর শেষ হওয়ার পূর্বে যাকাত আদায় করলে তা জায়েয হবে। (আলমগীরী- ২/১৮৬)।
শরীয়তের পরিভাষায় যে সম্পদ নিসাবধারী ব্যক্তির মূল সম্পদের সাথে বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যে কোনো সময় বেড়ে যায়।
৭. যদি বছরের মধ্যবর্তী সময়ে নিসাব পরিমাণ অর্থ থেকে সম্পদের বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে উৎপাদিত এ সম্পদকে মূল অর্থের সাথে মিলিয়ে যাকাত আদায় করতে হবে। চাই এটা মুল সম্পদ থেকে বেড়ে যাক বা অন্য কোনো সম্পদ থেকে। যেমন মিরাস, হেবা ইত্যাদি। আর মুস্তাফাদ মাল সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস হলে, যেমন- ছাগল, উট ও ভেড়া ইত্যাদি। তাহলে মালের সাথে মুস্তাফাদ মাল মিলিত হবে না। বরং তার জন্য সর্ব সম্মতিক্রমে নতুনভাবে বছর অতিবাহিত হতে হবে। (তাহভী-৭১৫)।
সুতরাং হানাফী মাযহাবের মতানুসারে মূল সম্পদ নিসাব পরিমাণ হলে, মালে মুস্তাফাদ তার সাথে মিলিত হবে। আর নিসাব পরিমাণ না হলে মিলাতে হবে না। আবার উভয়টা মিলে নিসাব পরিমাণ হলে, এর জন্য উভয়টির উপর এক বছর অতিবাহিত হতে হবে। (আলমগিরী- ১/১৭৫)।
৮. একজন মিসকীনকে যাকাত ফরয হওয়া সমপরিমাণ সম্পদ দেওয়া মাকরূহ। কেউ এভাবে দিয়ে দিলে, তার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। (হিদায়া- ১/২০৮)।
৯. যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো, কোনো রকম পরিশ্রমের বিনিময় ছাড়া তার প্রকৃত হক্বদারকে যাকাত প্রদান করা।
১০. যাকাত আদায় হওয়ার জন্য অপর একটি শর্ত হল যাকাতের হক্বদারের পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়া। এমন না করলে যাকাত আদায় হবে না।
১১. হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব নয় বরং তা সম্পূর্ণ রূপে সদকা করা ওয়াজিব। ফাতওয়া শামী গ্রন্থে কুনিয়ার উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হারাম সম্পদ নিসাব পরিমাণ হলে, তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। বরং তা সম্পূর্ণভাবে সদকা করে দিতে হবে। (ফাতওয়া শামী- ২/২৯১)। সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে ব্যক্তি কোনো ফকীরকে হারাম সম্পদ সদকা করে, সওয়াবের আশা রাখবে। সে কাফির হয়ে যাবে।
১২. হালাল ও হারাম সংমিশ্রিত সম্পদের উপর যাকাত ফরয দুররে মুখতার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মালে যিমারের যাকাতের বিধান
শরীয়তের পরিভাষায় যে সম্পদের দ্বারা মালিকানা থাকা সত্ত্বেও তা থেকে উপকৃত হওয়া সম্ভব নয়।
১৩ . মালে যিমারের উপর যাকাত ফরয নয়। (দুররে মুখতার- ১/২৬৬)।
১৪. যাকাত ওয়াজিব হওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করা বাঞ্চনীয়, দেরী করা অনুচিত। এতে বিলম্বকারী গোনাহগার হবে। কোনো ব্যক্তি যাকাত আদায়ে বিলম্ব করার সময় সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গেলে, ফরয তরকের গোনাহ থেকে রেহাই পাবে না। (হাশিয়া মারাকী- ৩৮৮)।
১৫. যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে হক্বদার হিসাবে আদায়কারীর উসূল তথা মাতা পিতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী এবং ফুরু তথা ছেলে মেয়ে ও তাদের সন্তান-সন্তুতি ছাড়া অবশিষ্ট সকল আত্মীয় স্বজন যেমন, আপন ভাই-বোন চাচা, ভাতিজা, খালা ও মামাকে দেওয়া জায়েয। (কিফায়তুল মুফতী- ৪/২৬২)।
ইমাম সুন্দুসী (রাহ.) বলেন, যাকাত সদকা ও ফিতরা সাত শ্রেণীর লোক থেকে কোনো এক প্রকারকে দেওয়া সর্বোত্তম। তারা হল, ১. আপন গরীব ভাই, ২. দরিদ্র বোন, ৩. দরিদ্র ভাতিজা, ৪. দরিদ্র ভাতিজী, ৫. দরিদ্র খালা, ৬. দরিদ্র চাচা, এবং দরিদ্র মামা। এর পর পাওয়ার অধিক উপযুক্ত হচ্ছে যথাক্রমে নিজ প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এং শহরবাসী।
১৬. যাকাত এবং সদাকা আলেম ও তালিবে ইলম তথা যে সম্প্রদায় ইসলামী দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত এবং মুসলিম জাতির খেদমতের উদ্দেশ্যে ইলম অন্বেষণকারী এবং দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করা সবচেয়ে উত্তম।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রাহ.) নিজের মালের যাকাত সর্বদা আলেম সম্প্রদায়ের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। তিনি বলতেন আমি নবূয়তের সম্মানের পরে আলেমগণ থেকে বেশী সম্মানিত আর কাউকে দিখি না। আলেম সম্প্রদায় অর্থ-বিত্তহীন হয়ে গেলে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের কাজ থেমে যাবে, ব্যাহত হবে। এতে দ্বীনী কার্যসমূহে শিথিলতা দেখা দিবে। (এহয়াউল উলুমিদ্দীন যাকাত অধ্যায়।
আরও পড়তে পারেন-
- বাংলায় হিন্দু রেনেসাঁস: প্রগতিশীলতা ও ইসলামবিদ্বেষ
- পরিবেশ বিপর্যয়— রুশ সাম্রাজ্যের শাপে বর?
- মাহে রমযান: সিয়াম সাধনা, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
ফাযায়েলে ইলম ওয়াল উলামা গ্রন্থে একটি হাদীস উদ্বৃত করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি তালিবে ইলমকে এক টাকা পরিমাণ দান করলে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ দান করলো। এছাড়া দুররে মুখতার ফাতওয়া শামী ও ফাতওয়া আলমগীরীতে বর্ণিত হয়েছে যে, যাকাত ও সদকা মূর্খ ফকীর থেকে দরিদ্র আলেমকে দেওয়া উত্তম। (ফাতওয়া রহীমিয়া- ৭/১৬৯)।
১৭. কেউ ঋণ দিলে এবং গ্রহীতা তা স্বীকার করে আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিলে অথবা ঋণ প্রদানকারীর নিকট বিদ্যমান প্রমাণাদি দিয়ে আদালতে স্মরণাপন্ন হয়ে তা আদায় করা সম্ভব হলে এমন সম্পত্তির উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। অন্যথায় ঋণের টাকা হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ওয়াজিব হবে না। এ ধরণের ঋণের টাকা হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরগুলো হিসেব করে সম্পূর্ণ যাকাত আদায় করতে হবে।
কাফফারা কী?
কাফফারা হলো একটি গোলাম আযাদ করা অথবা ৬০টি রোযা ধারাবাহিকভাবে এক সাথে রাখা। এ ধারাবাহিকতায় একটি রোযা ভেঙ্গে গেলে পুণরায় নতুনভাবে ৬০টি রোযা রাখতে হবে। রোযা রাখার শক্তি না থাকলে, ষাট জন মিসকীনকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। বর্তমানে গোলাম দাসীর প্রচলন না থাকায় রোযা রাখা বা মিসকীন খাওয়ানোর যে কোনো একটি নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
ফিদিয়ার জরুরী মাসআলাসমূহ
কোনো ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদির অসিয়ত করে গেলে, তার অসিয়ত পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের কম হলে, তা আদায় করতে কোনো অসুবিধে নেই। আর অসিয়ত এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে অধিক হলে, তার অসিয়ত বাস্তবায়নে সকল অংশীদারের অনুমতির প্রয়োজন হবে।
এ ক্ষেত্রে তাদের থেকে কোনো একজন অংশীদারও যদি অনুমতি না দেয়, অসিয়ত পুরা করা যাবে না। অংশীদারের কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার অনুমতি গ্রহণ যেগ্য নয়। সুতরাং মৃত ব্যক্তির ঐ অসিয়ত যা এক তৃতীয়াংশের অধিক মালের উপরে করা হয়েছে, না বালেগের অংশে তা কার্যকর করা যাবে না।
কোনো ব্যক্তি অসিয়ত করে এই পরিমাণ সম্পদ রেখে মৃত্যু বরণ করে যে, তা সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা সব অসিয়ত সম্পন্ন হতে পারে। তাহলে অংশীদারের উপর এ অসিয়ত পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য। এতে অবহেলা করা কিংবা কৌশলগতভাবে এ ফিদিয়াকে তাল-বাহানার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে বণ্টন করে নিলে, সকলেই গোনাহগার হবে।
অসিয়ত পালনের মাসায়েল
ক. প্রতি দিনের জন্য বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাযের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। এক ওয়াক্ত নামাযের কাফ্ফারা পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য। সুতরাং এক দিনের নামাযের কাফ্্ফারা হচ্ছে, সাড়ে দশ সের গম অথবা তার মূল্য।
খ. প্রতিটি রোযার কাফ্ফারা পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য দিতে হবে। আবার নযর ও মান্নতের রোযার কাফ্ফারাও একই পরিমাণ দিতে হবে।
গ. যেসব বৎসরের যে পরিমাণ সম্পদের যাকাত বাকী রয়ে গেছে, তা যথাযতভাবে হিসাব করে আদায় করতে হবে।
ঘ. ফরয হজ্ব আদায় না করে থাকলে মৃতের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাতে হবে। আর এর সমস্ত প্রয়োজনাদি ও খরচ তার ওয়ারীশদের বহন করতে হবে।
ঙ. অসিয়তকারী ঋণগ্রস্ত থাকলে ঋণদাতার প্রাপ্য অনুসারে তা পরিশোধ করতে হবে।
চ. ফিতরা বাকী থাকলে প্রত্যেকটির পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য আদায় করতে হবে।
ছ. কুরবানী না করে থাকলে ঐ বৎসর ছাগল অথবা গরুর এক সপ্তমাংশের মূল্য পরিমাণ সদকা করে দিতে হবে।
জ. তিলাওয়াতে সিজদা আদায় না করে থাকলে, সাবধানতা হচ্ছে প্রত্যেক সিজদার পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম অথবা তার মূল্য সদকা করতে হবে।
ঝ. ক্বাযা নামায ও রোযার সঠিক হিসাব জানা না থাকলে অনুমান করে তা আদায় করতে হবে।
ঞ. কাফফারা আদায়ের জন্য প্রতি জন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ানো জরুরী। শুধু এক বেলা খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না। এক বেলা খাওয়ানো হয়েছে এমন মিসকীনকে আবার দ্বিতীয় বেলা খাওয়ানো ওয়াজিব। চাই এটি একই দিনে হোক বা ভিন্ন দিনে। (আহসানুল ফাতওয়া- ৪/৪৪০)।
বর্ণিত নিয়মাবলী মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে সমপরিমাণ সম্পদ রেখে মারা গেলে কার্যকর হবে। নতুবা অংশীদারগণের উপর তা আদায় করা জরুরী নয়। তবে সেচ্ছায় তারা সহানুভূতি পরবশ হয়ে আদায় করলে যথেষ্ট সওয়াব রয়েছে। (জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৩৯২-৯৩)।
লেখকঃ উস্তাদুল হাদীস ওয়াল ফিক্বহ এবং সহকারী শিক্ষা পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগাম।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/