।। ইসমাইল বিন আমিন ।।
ইস্তিশরাক, Orientalism, প্রাচ্যবাদ-শব্দত্রয় একই অর্থ বহন করে। সম্প্রতি আরব বিশ্বে ইস্তিশরাক একটি তুমুল আলোচিত বিষয়। সম্ভবত সর্বপ্রথম এই বিষয়ে স্বতন্ত্র বই লেখেন মুস্তফা আস-সিবায়ী (মৃত- ১৯৬৪ খ্রি.)। অবশ্য তাঁর আগে জামালুদ্দিন আফগানী এবং স্যার সৈয়দ আহমদসহ আরো মনীষীরা ইস্তিশরাক মোকাবেলায় কলম ধরেছিলেন। ১৯৭৮ সালে এডওয়ার্ড সাইদের Orientalism বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর লেখালেখি হতে থাকে।
ইস্তিশরাকের সংজ্ঞা জানার আগে ইতিহাস থেকে ঘুরে আসা যাক। হাজার বছর আগ থেকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে জ্ঞানের আদানপ্রদান চলতে থাকে। জ্ঞানপিপাসুরা এতে কোন জাতভেদের ধার ধারেনি। উদার মনে নিয়েছে, দিয়েছে। ইসলাম আসার পর এই আদান-প্রদান প্রবল মাত্রা লাভ করে। উমাইয়া ও আব্বাসীয়া খেলাফতকালে মুসলিমরা পৃথিবী চষে বেড়ায় জ্ঞানাহরণের জন্য। অন্য ভাষার জ্ঞানগুলো তারা আরবিতে রূপান্তরিত করে। এরপর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে সেগুলোকে উচ্চ থেকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যায়।
মুসলিম বিশ্ব যখন ইবনে রুশদ, ইদ্রিসী, ইবনুস সামাহ, আব্বাস ইবনে ফিরনাস আর ইবনুল বাইতারদের জ্ঞানের আলোয় প্রদীপ্ত, ইউরোপ তখন অজ্ঞতার অতল গভীরে নিগুঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত । ফলে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসতে থাকে আন্দালুস, সিসিলি, কায়রো এবং বাগদাদে। শিষ্যত্ব গ্রহণ করে মুসলিম জ্ঞানতাপসদের। অতঃপর প্রাচ্য থেকে আহরিত জ্ঞান তারা বিলিয়ে দেয় ইউরোপের দিকে দিকে। এই ধারায় প্রথম দিকে যাঁদের নাম জানা যায় তাঁরা হলেন-
(১) ফরাসী যাজক পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার (৯৪৬-১০০৩)। তিনি আন্দালুসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করেন। দেশে ফিরে ৯৯৯ সালে রোমান ক্যাথলিক গির্জার ফাদার নির্বাচিত হন। আরবের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ইউরোপে পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে ধরা হয়।
(২) পিটার দ্য ভেনারেবল (১০৯২-১১৫৬)। বিভিন্ন আরবি গ্রন্থাদি ভাষান্তরে তার অবদান ছিলো। তিনি একটা অনুবাদক টিম তৈরি করেন। তাদেরকে দিয়ে কুরআনে কারীমের অনুবাদ করান।
(৩) জেরার্ড ডি গ্রেমন (১১১৪ -১১৮৭)। বিজ্ঞান বিষয়ক আরবি বইপত্র ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করে ইউরোপে প্রসিদ্ধি লাভ করেন তিনি।
প্রাচ্যের ভাষা ও সেখানকার জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখা ছিলো এঁদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা গোষ্ঠীর হয়ে নয়। ক্রুসেড যুদ্ধে সম্মুখ সমরে পশ্চিমা খ্রিস্টশক্তি ব্যর্থ হওয়ার পর প্রাচ্যচর্চা গির্জার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। গির্জা সশস্ত্র যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে এর মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে নামে। সেই প্রেক্ষিতে ১৩১২ সালে ভিয়েনায় ফাদার পঞ্চম ক্লিম্যান্টের আহ্বানে একটি সম্মেলন হয়। বলা যায় এই সম্মেলনই ছিলো ইস্তিশরাকের আনুষ্ঠানিক সূচনা। সেখানে ইউরোপের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবি, হিব্রু, গ্রীক এবং কিলদানিয়া (সীরিয় ও আর্মেনীয়ান) ভাষা পাঠদানের সিদ্ধান্ত হয়। তবে ভাষা শেখার এই উদ্যোগ নিছকই শিক্ষার উদ্দেশ্যে নয়; বরং এর পেছনে ছিলো ধর্মীয় কারণ। ঐতিহাসিক রাদসিল তার ‘মধ্যযুগে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়’ নামক গ্রন্থে বলেন, “এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিলো কেবলই খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও গির্জা সম্পর্কিত, জ্ঞানগত নয়”।
১৩১২ সালের এই ভিয়েনা সম্মেলন থেকে নিয়ে সবসময় এমন একদল লোক ইউরোপে থাকতো, যারা ইসলাম ও আরবী ভাষা শিখতো। কুরআন, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সম্পর্কিত আরবী বইপত্র অনুবাদ করতো। এভাবে চলতে থাকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত। তবে এতোদিনে ইস্তিশরাক কেবল খ্রিস্টানদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এতে যুক্ত হয় নাস্তিক, ইহুদি ও অন্যান্যরাও। সবাই নিজ নিজ উদ্দেশ্যে প্রাচ্যচর্চায় নিবিষ্ট হয়। অবশ্য ইসলাম মুকাবিলায় ছিলো প্রায় সবাই এক। এদিকে খ্রিস্টানরাও কেবল ধর্মপ্রচারে থেমে থাকেনি। তারা দেখেছে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে খ্রিস্টান বানানো যতটা সহজ, মুসলমানদেরকে ততটা নয়। কারণ, তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। তাই তারা এই ভিত নড়বড়ে করার জন্য এর গোড়ায় সন্দেহের কুঠারাঘাত হানে। নবীজির চরিত্র থেকে নিয়ে তাঁর ওপর অবতীর্ণ কুরআন, হাদীস ও মুসলমানদের ইতিহাসসহ ইসলামের সর্বত্র তারা সন্দেহের বিজ বপন করে যায়। এতে তাদের উদ্দেশ্য কেবল মুসলমানদের বিশ্বাস দুর্বল করা নয়, খ্রিস্টান এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে ইসলাম গ্রহণ থেকে ফিরিয়ে রাখাও।
কলোনিয়াল সময়ে এসে প্রাচ্যবিদদের কার্যপরিধি আরো বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের পাশাপাশি দখলকৃত এলাকাগুলোতে পশ্চিমা সভ্যতা ছড়িয়ে দেয়া, জাতীয়তাবাদী চেতনা উস্কে দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে টুকরো টুকরো করে ফেলা, খেলাফতের পরিবর্তে গণতন্ত্রকে প্রাচ্যে জনপ্রিয় করে তোলা, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে রাষ্ট্র, সমাজ এমনকি দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত সবকিছু থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের মাঝে সীমাবদ্ধ করে দেয়া ইত্যাদি নানান কাজে তারা যুক্ত হয়ে পড়ে।
ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো প্রাচ্যবিদদেরকে তাদের উদ্দেশ্য পূরণে খুব ভালোভাবে কাজে লাগায়। বলা যায়, দূরদূরান্তে তাদের উপনিবেশ স্থাপন থেকে নিয়ে সেটা ধরে রাখার কৌশল নির্ধারণে সর্বত্র প্রাচ্যবিদদের পরামর্শ কাজ করে। কারণ, তারা প্রাচ্যের জনগণের ভাষা, ধর্ম, সমাজ, চরিত্র, আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কে এতো বিস্তর জ্ঞান রাখে, যতটা প্রাচ্যের লোকেরাও রাখে না।
সর্ববৃহৎ সা¤্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র বৃটেন সবসময় একদল প্রাচ্যবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রাচ্যে তার কলোনিগুলো পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করে থাকতো। এক আলাপচারিতায় ডক্টর ইব্রাহিম লুব্বান (রহ.)কে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থোনি ইডেন তার রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে প্রাচ্যবিদ ও আরববিদদেরকে জমা করা হতো। গুরুত্বসহকারে তাদের মতামত শোনা হতো এবং সে আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। কিছু বৃটিশ প্রাচ্যবিদ আরবের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলো। যুদ্ধের সময় তারা এই সম্পর্ককে আড়াল বানিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতো”।
আফ্রিকায় উপনিবেশ কায়েম এবং তা টেকসই করার ব্যাপারে ফ্রান্সকে যেসব প্রাচ্যবিদ সহায়তা করে, তাদের অন্যতম ছিলো ‘সিলভেস্টার ডি স্যাসি’। ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রাচ্যের সব বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করা হতো এবং বিশেষ মুহূর্তে যুদ্ধমন্ত্রীও তার সাথে পরামর্শ করতো। ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের আরেকজন প্রসিদ্ধ উপদেষ্টা ছিলো প্রাচ্যবিদ ‘লুই ম্যাসিনন’। ইসলাম বিষয়ে বিশেষভাবে তার পরামর্শ নেয়া হতো।
এছাড়া জার্মান সাম্রাজ্যবাদের উপদেষ্টা ছিলো প্রাচ্যবিদ ‘কার্ল হেনরিচ বেকার’। মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার নীতি নির্ধারণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ ‘ভেসিলি বার্থোল্ড’। ইন্দোনেশিয়ায় হোলেন্ডের পরামর্শক হিসেবে দীর্ঘ ১৭ বছর কাজ করে লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ‘স্নোক হারগ্রোনজে’।
প্রাচ্যবিদরা এতোদিন বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলেও কলোনিয়াল যুগের মাঝামাঝি সময়ে এসে তাদের একত্রিত হওয়ার একটা জায়গা তৈরি হয়। ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত হয় “আন্তর্জাতিক ওরিয়েন্টালিস্ট ঐক্য সংস্থা”। ১৮৭৩ সালে এর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় প্যারিসে। তখন থেকে অদ্যাবধি কয়েক বছর পরপর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
আরও পড়তে পারেন-
আহলে কুরআন: কুরআন বলে ‘তুমি মিথ্যাবাদি’
মুমিন জীবনে নামাযের গুরুত্ব
আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা আবশ্যক যে, ইস্তিশরাক তথা প্রাচ্যবাদের ইতিহাসে সকল প্রাচ্যবিদ ইসলাম বিরোধিতাকে সামনে রেখে প্রাচ্যচর্চা করেছেন, তা নয়। উদার এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করা কিছু প্রাচ্যবিদও রয়েছেন। তবে ইসলামের মৌলিক গতিপ্রকৃতি না বোঝার ফলে তাদের কলম থেকেও অনেক ভুল তথ্য প্রসবিত হয়েছে। অবশ্য উদার মানসিকতা নিয়ে ইসলাম বিষয়ে কাজ করা প্রাচ্যবিদদের অনেকে ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইসলাম নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে তারা এই ধর্মকে আলিঙ্গন করে নেন এবং হয়ে ওঠেন তার ভাষ্যকার। এঁদের মাঝে রয়েছেন বিখ্যাত অস্ট্রীয়ান প্রাচ্যবিদ লিওপোল্ড ওয়েইজ (পরবর্তী নাম মুহাম্মদ আসাদ), মরিয়ম জামিলা, রজার গারাউদি প্রমুখ। এছাড়া অনেক প্রাচ্যবিদ এমন ছিলেন, যাঁরা ইসলাম দ্বারা খুব প্রভাবিত হন; যদিও ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য তাঁদের হয়নি। যেমন- বৃটিশ প্রাচ্যবিদ এডওয়ার্ড উইলিয়াম লেন এবং জর্জ সেল।
উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে পাঠক হয়তো অনুমান করতে পারছেন যে, ইস্তিশরাক কিংবা প্রাচ্যবাদকে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সহজ নয়। কালের আবর্তে ইস্তিশরাকের গতি-প্রকৃতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নানা দিকে বাঁক নিয়েছে। ফলে ইস্তিশরাক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা যার যার অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর সংজ্ঞা দিয়েছেন। কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় তাঁরা ঐকমত্যে আসতে পারেননি। তবে সার্বিক বিবেচনায় রিয়াদের মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফারুকের নিম্নোক্ত সংজ্ঞাটা তুলনামূলক সবচে উপযুক্ত মনে হয়।
“ইস্তিশরাক মানে প্রচ্যের জ্ঞানান্বেষণ এবং প্রাচ্যকে জানা-বোঝার ক্ষেত্রে প্রাজ্ঞতা অর্জন। মুস্তাশরিক তথা প্রাচ্যবিদ বলা হয়, যে প্রাচ্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং তার প্রভাব ও শাখাপ্রশাখার ব্যাপারে প্রাজ্ঞ”।
কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমান মুস্তাশরিকরা আর এই নাম ব্যবহার করছে না। তারা এখন ইস্তিশরাকের পরিবর্তে ব্যবহার করছে ‘ইসতি রাব’, ‘ইলমুল ইসলামিয়্যাত’ ইত্যাদি নতুন নতুন শব্দ। ১৯৭৩ সালে তাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সবার ঐকমত্যে ইস্তিশরাক শব্দটির ব্যবহার পরিহার করার সিদ্ধান্ত হয়।
আসলে ‘ইস্তিশরাক’ শব্দটিও কি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কোন শব্দ, নাকি অন্য কোন শব্দ ব্যবহারের সমস্যা এড়াতে এই শব্দের পরিকল্পিত ব্যবহার?
শায়খ আলাবী ইবনে আব্দুল কাদের আস-সাক্কাফের তত্ত্বাবধানে একদল গবেষক কর্তৃক প্রণীত ‘মাওসুআতুল আদয়ান’ নামক বিশ্বকোষে দাবি করা হয় যে, মুসলিম বিশ্বে ‘তানসির’ তথা ‘ক্রিশ্চিয়ানাইজেশন’ শব্দের অধীনে খ্রিস্টধর্ম প্রচার যখন মুসলিমদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে, তখন তারা এই ‘ইস্তিশরাক’ তথা ‘প্রাচ্যবাদ’ শব্দের আশ্রয় নেয়। এই দাবির পেছনে অবশ্য শক্ত যুক্তি রয়েছে। ‘ইস্তিশরাক’ শব্দ সমালোচিত হওয়ার পর সেটা পরিবর্তন প্রমাণ করে যে, ইস্তিশরাকও অন্য কোন শব্দ থেকে পরিবর্তিত। আর সে শব্দটি ‘তানসির’ তথা ‘ক্রিশ্চিয়ানাইজেশন’ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, ইস্তিশরাকের ইতিহাস থেকে আমরা এটাই জানতে পারি যে, মূলত প্রথম দিকে এই আন্দোলন ছিলো খ্রিস্টধর্ম প্রচারের আন্দোলন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন ও নতুন নতুন বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এর শাখা-প্রশাখা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বিস্তৃতি ঘটে।
উপসংহারে এসে বলতে হয় যে, ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব যেসব চাতুর্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করে এগিয়েছে তন্মধ্যে সবচে কার্যকর ও ধ্বংসাত্মক ছিলো এই ‘ইস্তিশরাক’ (প্রসিদ্ধ পরিভাষা হিসেবে)। অতীতে মুসলিম দেশগুলোতে উপনিবেশ কায়েম এবং বর্তমানে মুসলিম মননে পশ্চিমা উপনিবেশ ইস্তিশরাকের যাদুকরী সাফল্যেরই অংশবিশেষ। এই বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা ও এর মোকাবেলায় যদি আজও মুসলিম উম্মাহ মনোনিবেশ না করে, তবে আগামীতে আরো ভয়ংকর সংকটে পতিত হওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে।
তথ্যসূত্র :
(১) د.محمد خليفة حسن أحمد : آثار الفكر الاستشراقي في المجتمعات الإسلامية.
(২) علوي بن عبد القادر السقاف : موسوعة الأديان.
(৩) مصطفى السباعي : الاستشراق و المستشرقون ما لهم وما عليهم.
(৪) إعداد المحسن بن علي بن صالح سويسي بإشراف الدكتور حامد غنيم أبو سعيد : مؤتمرات المستشرقين العالمية.
(৫) د.محمد فاروق النبهان : الاستشراق ، تعريفه ، مدارسه ، آثاره.
(৬) د. مازن بن الصلاح مطبقاني : المؤتمر الدولي الخامس والثلاثون حول الدراسات الآسيوية ودراسات شمال أفريقيا ، مجلة صيد الفوائد.
(৭) أ.د.علي بن إبراهيم الحمد النملة : المستشرقون والتنصير [ دراسة للعلاقة بين ظاهرتين، مع نماذج من المستشرقين المنصرين] IslamHouse.com
লেখক: শিক্ষার্থী, ইফতা প্রথম বর্ষ, দারুল উলূম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/