ঈদ আনন্দ সবার জীবনে বয়ে আসুক

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা ও বিসর্জনের পর আনন্দ আর শিহরণের সওগাত নিয়ে আসে ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, খুশি আর উৎসব। ঈদের কথা মনে পড়লেই মুসলমানদের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। শিহরণ আর পুলকের সঞ্চার হয় মনের গভীরে। ঈদ আসার আগে থেকেই হৃদয়ের আয়নায় ভেসে উঠতে থাকে সুখ আনন্দের স্মৃতিগুলো, উৎসব-আমেজের খুশির মুহূর্তগুলো। হৃদয়ে জাগে সুখের স্বপ্ন, জীবনে উদিত হয় আনন্দের সূর্য।

নতুন জামা পরিধান করা, বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়া, সুগন্ধি আতর মেখে সবার সাথে ঈদের নামায পড়তে যাওয়া, নামায শেষে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা, রাগ অভিমান ভুলে শত্রুকে  হাসি উপহার দেয়া, এরপর ঘরে ঘরে ফিরনি, পায়েস, কোর্মা-পোলাও সহ আরো নানা রকমের মিষ্টান্ন খাওয়ার ধুম পড়াসহ আরো কত শখ আর স্বপ্ন হৃদয়ে এসে জড়ো হয়।

সেদিন শুধু আনন্দই আর আনন্দ। এই আনন্দ ধনী-গরিব ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মাঝে সমানভাবে বয়ে আসে। সবার মুখে হাসি ফুটে তখন। পথের ভিক্ষুক থেকে নিয়ে রাজপ্রাসাদের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত সবার মুখে থাকে এই হাসি আর আনন্দ। এতে ধনী গরিবের কোন ভেদাভেদ নেই। নেই পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ। বিত্তশালীরা অসহায় মানুষগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। জ্ঞানী আর মর্যাদার উচ্চশিখরে অধিষ্ঠিত মহান ব্যক্তিরা গ্রামের নিম্নমানের  মানুষগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করবে না। সবাই পরস্পরের সুখ আনন্দ ভাগ করে নেবে। কারণ, ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মাঝে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই ঈদের ভাবার্থটি সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায়।

আরও পড়তে পারেন-

কিন্তু এই আনন্দের দিনেও কিছু মানুষের জীবনে নেমে আসে দুঃখের অন্ধকার, শোক আর হাহাকার। তাদের আনন্দ ধুলোয় উড়ে যায়। নতুন জামা নেই তাদের, ছেঁড়া জামাই তাদের ঈদের পোশাক। দু’ মুঠো ভাত জোটে না তাদের পেটে। উপবাসই তাদের নিত্যসঙ্গী। এই আনন্দের দিনেও তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে আর হৃদয় থেকে ঝরে বেদনার বিন্দু বিন্দু রক্ত। তারা ঈদ পার করে দুঃখ বেদনায়। বুকভরা চাপা যন্ত্রণা নিয়ে তারা প্রতিবার ঈদ পালন করে।

সেই অসহায় মানুষগুলোর প্রতিও আমাদের সমবেদনা জানাতে হবে। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, নিছক আনন্দ উপভোগ ঈদের উদ্দেশ্য নয়। নিজের সুখ অপরকে বিলি করা, অন্যের দুঃখের অংশীদার হওয়া, ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে শামিল হওয়াই ঈদের মূল উদ্দেশ্য। তাই ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ফিতরার বিধান রয়েছে যেন সবাই একসাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে।

তবে এই আনন্দ উপভোগের মাঝেও আমরা যেন প্রভুর অবাধ্যতায় লিপ্ত না হই, অপসংস্কৃতি ও প্রবৃত্তির খপ্পরে না পড়ি, সেদিকেও আমাদের সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কারণ, ঈদের এই আনন্দ তো আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের। এ আনন্দ গুনাহ মাফের। এ আনন্দ হাজার বছরের চেয়েও উত্তম রাত্রিকে কাছে পাওয়ার। এ আনন্দ সকল ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে ইতিকাফ করার। এ আনন্দ কুরআন তিলাওয়াতের। এ আনন্দ তাকওয়া অর্জনের।

কারণ, রমযানের রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের নির্ধারিত দিনগুলোর পরে এই ঈদ আসার মানে হল পাপের যাবতীয় কালিমা দূর করে আমরা যেন পবিত্র হয়ে এই ঈদ উদযাপন করি। যাতে আমাদের ঈদ উদযাপন সার্থক হয়।

ইসলামের নিয়মে ঈদ পালন করতে সহজ হয়। কিন্তু কিছু লোক তবুও পবিত্র হতে চায় না। পুরো বছর মন মতো চলে। সর্বদা মনের খেয়াল-খুশিকেই অনুসরণ করে। পবিত্র মাসে আর পবিত্র দিনেও তারা শুদ্ধ হতে চায় না। এরা ঈদকে শুধু আনন্দ আর উপভোগের মাধ্যম মনে করে। তারা কিন্তু ঈদের আনন্দ পূর্ণরূপে উপভোগ করতে পারে না।

ঈদের দিনে নতুন কাপড় পরিধান করা সুন্নাত। তবে যাদের নতুন পোশাক নেই তারা ব্যবহৃত কাপড় পরিষ্কার করে পরিধান করবে। কিন্তু শুধু নতুন কাপড় পড়লে হবে না তা সুন্নাহ মত হয়েছে কিনা তাও দেখতে হবে। অন্যথায় গোনাহগার হতে হবে। পুরুষরা মেয়েলী কাপড় আর মেয়েরা পুরুষালী কাপড় পরিধান করবে না, তা সম্পূর্ণ হারাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের উপর অভিশাপ করেছেন।

তাছাড়া আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটূট রাখাও ঈদের অন্যতম শিক্ষা। এভাবে আমরা ঈদ পালন করব, এটাই আমাদের ঈদ, এটাই নবীর আদর্শ, এটাই মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি।

– ইরশাদ উল্লাহ (চকরিয়া)

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।