কমলা দাসের ইসলাম গ্রহণ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

।। মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান ।।

ভারতীয় ষাটোর্ধ্ব বয়সী লেখিকা কমলা দাস হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। একমাত্র সত্যধর্ম ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তিনি তার সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কেননা, এই নারীর পার্থিব জগতের সুনাম, প্রতিপত্তি কোনো কিছুর অভাব ছিলো না। তাছাড়া এমন কোন জাগতিক ভোগ সুখের লালসাও তাকে প্রভাবিত করেনি। নিছক দ্বীনের জন্যই তিনি লালায়িত ছিলেন, যে দ্বীন আল্লাহর মনোনীত। যুগে যুগে এভাবেই মানুষ শান্তিময় ইসলামে দাখিল হয়েছেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তৎকালে কতিপয় ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলেও, আরবের ভয়ঙ্কর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব উমর মহানবী (সা.)কে হত্যা করতে রওয়ানা হলেন মুক্ত তরবারী হস্তে। পথিমধ্যে তার বোন এবং ভগ্নিপতির ইসলাম গ্রহণের সংবাদ পেয়ে থমকে গিয়ে প্রথমে সেখানে উপস্থিত হন। তাঁদের কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। অতঃপর তিনি মহানবী (সা.)এর কাছে ছুটে গিয়ে তাঁর পদতলে তরবারী রেখে কালেমা পাঠ করে ইসলামে দাখিল হয়ে যান। আল্লাহর কী শান! নবীকে হত্যা করতে গিয়েও তার পক্ষে সম্ভব হলো না তাকে হত্যা করা, বরং নিহত হলো তার মধ্যকার গোমরাহীর পশুত্বটাই। তলোয়ারে নয়- উদারতায়, পার্থিব লোভ লালসায় নয়- ঈমানী জোশেই সেকালে দলে দলে মানুষ ইসলামে প্রবেশ হয়েছেন। তাদের একমাত্র কাম্য ছিল পারলৌকিক শান্তি, এই প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত।

কালক্রমে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে সারা দুনিয়ায়। মানুষ দলে দলে ইসলামের শান্তিময় ছায়াতলে এসে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে ইসলামী খিলাফত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। বিশ্ব জুড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো খ্রীস্ট মতবাদ। বিশ্বের প্রায় দুই তৃতীয়াংশে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের শাসন কায়েম হয়ে গেল। খ্রিস্টধর্ম একেশ্বরবাদী নয়। পিতা-পুত্র-পবিত্রাত্মা; এই তিন মিলিয়ে যে স্রষ্টার ধারণা, তা ইসলামের পরিপন্থি। কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “ইব্রাহীম (আ.) ইহুদী বা খ্রিস্টান ছিলেন না, তিনি একনিষ্ঠ মুসলমান ছিলেন এবং মুশরিকদের দলভুক্ত ছিলেন না। (সূরা আলে ইমরান আয়াত- ৬৭)। অতএব, খ্রিস্ট মতবাদ যে ইসলাম পরিপন্থি, তা বলাই বাহুল্য।

দুনিয়া জুড়ে খ্রিস্টান শাসন চালু হবার পর কিছু লোক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা এবং অন্যান্য প্ররোচনায় ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে। আবার কেউ কেউ ধর্মান্তরিত না হয়েও খ্রিস্টানদের অনুকরণ এবং অনুসরণ করতে থাকে। ফলতঃ কতিপয় মুসলমান সত্যধর্ম ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে এবং কতিপয় মুসলমান শুধু নামধারী মুসলমান রয়ে গেছে। এই নামধারী মুসলমান তো ঈমান হারিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। এদের নসীবে নেই নবীর শাফাআত এবং আল্লাহর রহমত। এদেরকে নামের মুসলমান বলা যায়, কিন্তু প্রকৃত মুসলমান নয়।

আমাদের দেশেও একদল লোক মুসলমান নামধারী হয়েও ইসলামের শরয়ী বিধান অবমাননা করে চলে অবলীলায়। ইসলাম পরিপন্থি কাজকে তারা চালু করতে চাইছে প্রগতির অজুহাত দিয়ে। কেন? ইসলাম কি প্রগতিশীল নয়? প্রগতির নামে তারা যা আমদানি করছে তা বাতিল এবং ইসলাম পূর্ববর্তী ইহুদি-খ্রিস্টান-পৌত্তলিকদের আচার-আচরণ; সেগুলো কী করে প্রগতিশীল হয়? সেও তো একরকমের পশ্চাৎপদতা, পেছনের দিকে ফিরে যাবার প্রবণতা, বাতিলের প্রতি মোহ এবং মুগ্ধতা। আর, সেগুলোই তো ইসলাম থেকে মুসলমানকে গোমরাহীর দিকে আকর্ষণ করছে।

১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে সাপ্তাহিক মেঘনা পত্রিকায় ‘সাত কোটি শিষ্যের ভগবান এখন মুসলমান’ শীর্ষক একটি রচনা পড়েছিলাম। সেই রচনাটি একজন নওমুসলিমকে নিয়ে লেখা হয়েছিল। তার নাম ডক্টর শিবশক্তি মহান্ত মহারাজ। ভারতের বৃন্দাবনে এবং আরও দু’জায়গায় তার আশ্রম ছিল। তার শিষ্য সংখ্যা ছিল প্রায় সাত কোটি। শিষ্যরা তাকে ‘ভগবান’ বলে ডাকতো। তিনি ধর্মগুরু হলেও উচ্চ ডিগ্রীধারী ছিলেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরিয়েন্টালিজমে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বের দশটি প্রধানতম ধর্মের উপর ডক্টর অব ডিভাইনিটি এবং অরিয়েন্টালিজমে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তাছাড়া তিনি ১২টি ভাষা জানতেন। ১৯৩৬ সালে মথুরায় তার জন্ম। ১৯৮৪ সালে একরাতে তিনি স্বপ্নে  হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)কে দেখতে পান এবং তাঁর হাতে হাত রেখে কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। একই রাতে একই স্বপ্ন দেখেন তার স্ত্রীও। অতঃপর ১৯৮৫ সালে স্ত্রী এবং কন্যাসহ তিনি ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন আনুষ্ঠানিকভাবে। ইসলামে দীক্ষিত হবার পর তিনি নাম গ্রহণ করেন ইসলামুল হক। তার স্ত্রীর নাম রাখা হয় খাদিজা এবং কন্যার নাম আয়েশা।

ড. শিবশক্তির অধ্যয়ন, পিএইচডি, ডক্টরেট ডিগ্রী তাকে সত্যের সন্ধান দিয়েছিল। তাই তিনি তার পূর্বপুরুষের ঈশ্বর বাক্যে আস্থা রাখতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। সেই ঈশ্বর বলেন-

“জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্যচ।
তস্মাদ পরিহার্য্যহের্তে নত্বং শোচিতুমর্হসি॥

অর্থাৎ- যে জন্মে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যে মরে তার জন্ম নিশ্চিত। সুতরাং অবশ্যম্ভাবী বিষয়ে শোক করা উচিত নয়। -গীতা-২/২৭।

সেই ঈশ্বর আরো বলেছেন-

“বাসাংসি জীর্নানি যথাবিহায়
নবানি গৃহ্নাতি নরোহ পরানি।
তথা শরীরানি বিহায় জীর্ণা
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী॥”

অর্থাৎ- যেমন মানুষ জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেরূপ আত্মা জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর পরিগ্রহ করে। (গীতা-২/২২)।

এই যে নতুন শরীর অর্থাৎ পুনর্জন্ম লাভের প্রলোভন, তাতেও ড. শিবশক্তিকে টলাতে পারেনি। আল্লাহর যে কিতাবে কোন অসত্য কথন নেই, সেই কিতাব কুরআনুল কারীম। এই কিতাবের প্রতি যার ঈমান সুদৃঢ় হয়, তিনিই সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান পান। অসামান্য পাণ্ডিত্যের অধিকারী ড. শিবশক্তির নসীব হয়েছিল, তাই মৃত্যুবরণ না করেই তিনি পুনর্জন্ম লাভ করেছিলেন। এ পুনর্জন্ম পৌত্তলিক ধর্মগ্রন্থের কথিত অলীক পুনর্জন্ম নয়। এ পুনর্জন্ম বাস্তব এবং তা হলো অন্ধকার থেকে আলোয় প্রত্যাবর্তন। এই জনমে বারংবার জন্ম-মৃত্যুর ঘূর্ণাবর্ত নেই। জন্ম এবং মৃত্যু শুধু একবারই হয়। “কুল্লু নাফসিন যা-ইক্বাতুল মাঊত”। সকল আত্মাই মৃত্যুর স্বাদ পাবে। অতঃপর আখেরাতের অনন্ত জীবন। সেই জীবনে সুখ দুঃখ আছে। কার নসীবে কী ঘটবে তা নির্ণিত হবে ইহকালের কৃত কর্মের উপর। তাই বলা হয়েছে- ইহকাল উপার্জনের একমাত্র সময়। যে যেমন কামাই করবে, ফল তার তেমনই হবে। সাত কোটি পৌত্তলিক শিষ্যের কথিত ভগবান শিবশক্তির চৈতন্যের উদয় হয়েছিল। তাই আল্লাহ্ তাকে সঠিক পথের সন্ধান নসীব করেছিলেন।

ভারতের মালয়লাম ভাষার বিখ্যাত সাহিত্যিক কমলা দাস (মাধবীকুট্টি) ১৯৯৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছেন। ড. শিবশক্তি যেমন অর্থ, প্রতিপত্তি, সম্মানের কাঙাল ছিলেন না, কমলা দাসও তেমনি। তিনি ইংরেজি এবং মালয়লাম ভাষায় গল্প-কবিতা রচনা করে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছেন। অর্থ-প্রতিপত্তি-খ্যাতির লোভে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। ইসলাম গ্রহণের কারণ হিসেবে তিনি বলেন- “ইসলামের   পর্দা প্রথাই আমাকে আকৃষ্ট করেছে। পর্দার মাধ্যমে একজন নারীকে বিশেষ সম্মান করা হয়। মেয়েরা এতেই সুরক্ষা পায়”।

আরও পড়তে পারেন-

ড. শিবশক্তি মহান্ত মহারাজ ও কমলা দাসের মতো জ্ঞানী ব্যক্তিদের ধর্মান্তরিত হবার আরও অনেক খবর আমাদের জানা আছে। বিখ্যাত উর্দু সাহিত্যিক কৃষ্ণ চন্দ্র ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন জনৈক ঊর্দূ লেখিকাকে বিয়ে করার জন্য। পরবর্তীতে তিনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। গণেশ নাথ (নৃত্যশিক্ষক) একজন নৃত্যশিল্পী। তিনি অভিনেত্রী রওশন জামিলকে বিয়ে করতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গওহর জামিল হয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে পশ্চিম বঙ্গের অর্ণব ব্যানার্জী বিয়ে করেন সংসদ সদস্যা পান্না কায়সার (সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী)এর কন্যা টিভি নাট্যাভিনেত্রী শমী কায়সারকে। তার আগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে নাম নেন রিজওয়ান রশীদ। তার স্ত্রী এবং সন্তানও রয়েছে। একা তিনি মুসলমান হলেন, শুধু একটি মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করার জন্যই, একথা বলা কি অসঙ্গত হবে? যদি ফেরদৌসী মজুমদার, ফিরোজা বেগম, বিপাশা আইচের মতো শমী কায়সারও অর্ণব ব্যানার্জীকে মেনে নিতেন, তাহলে নিশ্চয় তার রিজওয়ান রশীদ হবার আবশ্যক ছিল না। সাপ্তাহিক খবরের কাগজে (৮ জুন/’৯৯ সংখ্যা) অর্ণব ব্যানার্জীকে প্রশ্ন করা হয়, “নামায পড়েন?” উত্তরে তিনি বলেন, “এখনও শিখছি। তবে বিয়ের দিন কবুল বলার আগে মাগরিবের তিন রাকাত ফজরের নামায পড়েছি।” মাগরিবের তিন রাকাত ফজরের নামায না হয়ে ফরয নামায হওয়ার কথা। ভুলটা অর্ণব ব্যানার্জীর, না কম্পোজিটরের, তা কী করে বুঝবো? তবে মাগরিবে আরো দু’ রাকাত সুন্নাত নামায আছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি।

কমলা দাস শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত ছিলেন, যে শ্রীকৃষ্ণকে তিনি ঈশ্বর বলে মানতেন। যিনি তার গ্রন্থে বলেছেন-

“মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্যাজী মাংনমস্কুরু।
মামে বৈষ্যসি সত্যংতে প্রতিজানে প্রিয়োহসিমে॥

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ।
অহংত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মাশুচঃ॥”

অর্থাৎ- একমাত্র আমাতেই চিত্ত রাখো, আমাকে ভক্তি করো, আমার পূজা করো, আমাকে নমস্কার করো; আমি সত্য প্রতিজ্ঞা পূর্বক বলছি, তুমি আমাকেই পাবে। কেননা, তুমি আমার প্রিয়। সকল ধর্ম পরিত্যাগ করে তুমি একমাত্র আমারই স্মরণ গ্রহণ করো; আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করবো, শোক করো না। (গীতা- ১৮/৬৫, ৬৬)।

কমলা দাস এ ধর্মের ভগবদ্বাক্যে আস্থা স্থাপন করতে পারেননি। কেননা, এ ধর্মে ভগবানের সংখ্যা প্রচুর। শ্রীকৃষ্ণ ব্যতিরেকেও বিষ্ণু, ব্রহ্ম, হরি, শিব, দূর্গা, কালী ইস্তক শ্রীচৈতন্য পর্যন্ত শুধু নয়, একালের লোকনাথ ব্রহ্মচারী পর্যন্ত বলেন-

“রণে বনে জলে যেখানেই বিপদে পড়িবে,
আমাকে স্মরণ করিও; আমি রক্ষা করিব”।

সকল ভগবানই স্ব-স্ব দলে টানতে চায়। এই টানাটানির ঠেলা যিনি সইতে চান না, তিনি আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বস্ত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আর, তাদের নারী, গাড়ি, বাড়ি, অর্থ, প্রতিপত্তি ইত্যাদি কোন কিছুরই লোভ থাকে না। তারা ইসলামে আত্মার শান্তি খুঁজেন।

ড. শিবশক্তির অর্থ-সম্পদের অভাব ছিলো না, প্রভাব-প্রতিপত্তিও ছিলো; ছিলো না শুধু আত্মার শান্তি। ইসলামে তিনি তা খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই প্রবীণ বয়সে তিনি সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। শুধু ইসলাম গ্রহণ নয়, প্রাত্যহিক জীবনাচারে ইসলামকে তিনি প্রতিফলিত করেছিলেন। সাহিত্যিক কমলা দাসও তার জাগতিক সম্পদ, প্রতিপত্তি থাকতেও শান্তির অভাব বোধ করেছিলেন আত্মায়। তাই ষাটোর্ধ্ব বয়সে তিনি ইসলাম কবুল করেন। এ ধর্মান্তরের মধ্যে কোন জাগতিক বস্তুর লালসা থাকার যুক্তি নেই। তিনি ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই ধর্মান্তরিত হন। তার লক্ষ্য পারলৌকিক মুক্তি। আর সেই মুক্তিদাতা একমাত্র আল্লাহই। এটা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি আজ পর্দানশীন মুসলমান সুরাইয়া বেগম হতে পেরেছেন।

পরিতাপ, আমাদের দেশের মুসলমান নামধারী কথিত বুদ্ধিজীবী, ডক্টর, সাহিত্যিকরা ইসলামে কোন সৌন্দর্যের সন্ধান পান না। তারা যতোই পাণ্ডিত্য খ্যাতিতে পৌঁছেন, ততোই ইসলাম বিরোধিতায় পাকাপোক্ত হন। এদের কেউ কেউ ইসলামী বিধান মতে মৃতদেহ জানাযা এবং দাফনের পক্ষপাতি নন। তাদের মৃতদেহ যায় নরকংকাল হবার জন্য হাসপাতালে। এটাকে তারা একটি মহৎ কাজ বলে মনে করেন। কেননা, এটা ইসলামী বিধান বহির্ভূত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার এবং ভাস্কর্যমূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা বদ্ধপরিকর। মৌলবাদীরা নাজায়েয বলায় তাদের রোখ্ (জেদ) আরো বেড়ে যায়। কোটি টাকার বাজেটে শহীদ মিনার সেখানে গড়া চাই। তাদের বলা- “ভাষা আন্দোলনের প্রতীকই হলো শহীদ মিনার”। তারা মানতে নারাজ- ইসলামে প্রতীকী মূর্তি গড়ার বিধান নেই। বরং প্রতীকী মূর্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মূলোৎপাটনই মুসলমানের কর্তব্য।

আমাদের প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবীরা মৌলবাদ ঠেকাতে এক পায়ে খাড়া। ইসলামী আদর্শ তাদের কাছে অনুসরণযোগ্য নয়। সেগুলো তাদের বিবেচনায় পরিত্যাজ্য। প্রশ্ন একটাই- যেখানে ইসলাম অনুপস্থিত থাকবে, তার নাম কেন হবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সরস্বতী পূজাসহ বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কাজ চলে, তাহলে সাধারণ মানুষ ভাবতেই পারে, ইসলামে নিশ্চয় ওসব জায়েয আছে। এতে ইসলামের ভাবমমূর্তি বিনষ্ট হয় না কি? এমতাবস্থায় মৌলবাদীদের প্রতিবাদ না করে গত্যন্তর কোথায়?

ড. শিবশক্তি এবং সাহিত্যিক কমলা দাস শ্রীকৃষ্ণের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি বলে আজ স্বধর্ম ত্যাগ করে ইসলামের শান্তিময় ছায়াতলে সমবেত হয়েছেন। তাঁরা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে। দ্বীনদার মুসলমানের কর্তব্য হবে সেই আদর্শ মহামানবের জীবন ও বাণীকে অনুসরণ করা।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।