তোমাদের প্রতি…
প্রিয় বন্ধুরা!
আশা করি সকলেই ভালো আছো। পবিত্র হজ্জ ও কুরবানীর মতো মহামূল্যবান দু’টি ইবাদত কিছুদিন পূর্বেই আমাদের মাঝে অতিবাহিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন, তাঁরা হজ্জের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় গিয়েছেন। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। আরাফায় অবস্থান করেছেন, জমারায় পাথর নিক্ষেপ করেছেন। হাদীসে আছে, হজ্জে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত। যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করে এবং সেখানে কোনো প্রকারের অনর্থক ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত না হয়, সে মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ। আমাদের মধ্যে যাদের এখনো তাওফীক হয়নি, যারা এখনো হজ্জ করতে পারিনি, আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হজ্জ করার তাওফীক দান করুন। বাইতুল্লাহ এবং মসজিদে নববী যিয়ারত করার সৌভাগ্য নসীব করুন। আমীন।
বন্ধুরা! আজ থেকে আমরা সবাই একটা কাজ করবো। প্রত্যেক পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করবো, যেন তিনি আমাদেরকে হজ্জ-উমরাহ এবং নবীজির রাওযা যিয়ারত করার তাওফীক দান করেন। পাশাপাশি প্রতিদিন অল্প অল্প করে টাকা মাটির ব্যাংকে জমা করবো, হজ্জ আদায়ের নিয়তে। ইনশাআল্লাহ, আমাদেরকে অতিদ্রুত হজ্জ ও বাইতুল্লাহ যিয়ারতের জন্য কবুল করে নিবেন।
বন্ধুরা! হজ্জের পাশাপাশি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানী। সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সকলে কুরবানী করেছি। প্রতি বছর আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ পশু যবাই করা হয়। সাওয়াবের উদ্দেশ্যে, আল্লাহর জন্য। আমরা কি কখনো ভেবেছি, এই পশুগুলো আমাদেরকে কী বার্তা দিয়ে কুরবানী হয়? নীরবে তারা আমাদেরকে এই বার্তা দেয় যে, আল্লাহর জন্য আমরা অবুঝ জন্তুরা আমাদের মাথা কুরবানী করে দেই, তোমরা বুদ্ধিমান মানুষরা কী আল্লাহ তাআলার জন্য অন্তত মাথাটা ঝুঁকাতে পারবে না!?
বন্ধুরা! এখন জুন-জুলাই মাস চলছে। প্রচ- গরমের মাস। বিশ^জুড়ে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠছে। গরমের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খবরে আসছে, ইউরোপিয়ান অঞ্চলে প্রচ- দাবদাহে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন। আমাদের দেশেও অনেক গরম পড়ছে। এত গরম, মনে হচ্ছে সূর্য যেনো তার যৌবনের তাপ দিয়ে পুরো পৃথিবীকে ঝলসে দিবে। সূর্যের তাপের ভয়ে আকাশ থেকে মেঘগুলোও যেন পালিয়েছে। তাদের কোনো চিহ্নও নেই। আসলে রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বড় নেয়ামত। কিন্তু আমরা যখন অতিরঞ্জন করি, নাফরমানি করি, তখন এগুলো আমাদের জন্য মুসিবত হয়ে দাঁড়ায়।
সুতরাং অতিরিক্ত গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি ইসতিগফার করবো। বৃষ্টির জন্য দুআ করবো। গরম থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখবো। এই গরমে সকল জীব-জন্তু যে জিনিসের প্রতি সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়, তা হলো, পানি। হাদীসে আছে, সবচেয়ে উত্তম সাদকাহ হচ্ছে, পানি পান করানো। আমরা সকলে হাদীসের ঐতিহাসিক ঘটনা দুটি জানি। বনি ইসরাইলের এক গুনাহগার মহিলা পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়েছিল। বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করেছেন এবং জান্নাত দান করেছেন। অপর এক মহিলা একটি পিপাসার্ত বিড়ালকে আটকে রেখেছিল, পানি পান করতে দেয়নি। বিড়ালটি মারা গিয়েছিল। বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা ঐ মহিলাকে জাহান্নামে দিয়েছেন।
বন্ধুরা! পানি পান করানো পানির মতো সহজ একটি কাজ। কিন্তু এর প্রতিদান ও বিনিময় অনেক! কাজেই এই গরমে আমরা আল্লাহর সৃষ্টিকূলকে পানি পান করাবো এবং অশেষ বিনিময় অর্জন করবো। ইনশাআল্লাহ।
– তোমাদের পরিচালক ভাইয়া
ইলমের জন্য হতে হবে ইবনে আব্বাসের মতো নিবেদিত প্রাণ
বিশ্ব পরিবর্তনশীল। বিশ্বের এ পরিবর্তন কেউ ঠেকাতে পারবে না। পরিবর্তনশীল এ পৃথিবীতে চলতে গিয়ে কোথায় কী বলতে হবে, কী করতে হবে, ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবনকে কীভাবে পরিচালিত করতে হবে, এ ধরনের নানা প্রশ্ন এসে হাজির হয়। এসব প্রশ্নের একটিই উত্তর, ইলম অর্জন। ইলম অর্জন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
তাই আমাদের ইলম অর্জন করতে হবে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবিসর্জনের মাধ্যমে। যেমন আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন কালের মহাপুরুষ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.)।
নবীজি (সা.)এর ইন্তিকালের সময় ইবনে আব্বাসের বয়স ছিল মাত্র তেরো বছর। নবীজির ইন্তেকালের পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, যেসব প্রবীণ সাহাবী বেঁচে আছেন তাদের কাছ থেকে ইলমে হাদীস অর্জন করবেন। হৃদয়ের এ বাসনা ব্যক্ত করলেন তার এক আনসারী সাথীর কাছে। বললেন, এখনো অনেক সাহাবী জীবিত আছেন। চলো আমরা প্রিয় নবী (সা.)এর হাদিসগুলো তাদের কাছ থেকে অন্বেষণ করি এবং সেগুলো হিফজ করি। কিন্তু তার সাথী তাকে বললেন, আমি তো তোমার কথায় আশ্চর্য হচ্ছি! এখনো বড় বড় সকল সাহাবী জীবিত আছেন, তোমাকে ইলমে হাদীস শিখতে হবে কেন?
ইলমের অমীয় সুধার পিপাসায় কাতর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এসব কথায় দমলেন না। নেমে পড়লেন হাদিস অন্বেষণে। হাদিসের ভালবাসায় ছুটে যেতেন দিক-দিগন্তে। হাদিস সংগ্রহ করতে গিয়ে হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.)এর কত রাত নির্ঘুম কেটেছে, কত প্রভাত যে সন্ধ্যা হয়েছিল, তা লিখে শেষ করা যাবে না। ইলম অন্বেষণ করতে গিয়ে তিনি আকাশকে বানিয়েছেন তাবু। মরুর তপ্ত বালু ছিল তাঁর বিছানা। দিনের আলোয় তিনি পথ চলতেন। রাতে চোখ বুলিয়ে মুখস্ত করা হাদিস পাঠ করতেন। ভাবনায় থাকতেন, কীভাবে নিজের হাদিসের ভা-ারকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়।
অনেক সময় এমন হতো, তিনি পথ চলতে চলতে কোনো একজন সাহাবীর বাড়িতে গিয়ে বিশ্রামের সময় পৌঁছতেন। বিশ্রামের সময় ডাক দিলে অন্যের কষ্ট হবে ভেবে তিনি সেই সাহাবীর দরজার পাশে সঙ্গে করে নেয়া চাদর বিছিয়ে বসে থাকতেন। বাতাস কখনো কখনো ধুলোবালি উড়িয়ে এনে তার শরীরে নিক্ষেপ করতো। তিনি সে ধুলো গায়ে মেখে প্রশান্তি অনুভব করতেন। বিরক্ত হতেন না। কেননা এ ধুলো যে ইলমের পথের ধুলো।
এভাবে নিভৃত সাধনা ও মেহনতের মাধ্যমে সবাইকে ছাড়িয়ে তার যুগে তিনি হয়ে উঠেন তাফসীর, হাদীস, ভাষা-সাহিত্য ইত্যাদি শাস্ত্রের গভীর এক সমুদ্র। তাঁকে বলা হতো, জ্ঞানের সরোবর কিংবা চলমান পাঠাগার। আমরা যারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.)এর মতো ইলমের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন তালিবুল ইলম হতে চাই আমাদেরও প্রয়োজন সীমাহীন স্পৃহা, অবিরাম মেহনত, বিজ্ঞ উস্তাদের বিরামহীন দীর্ঘ সাহচর্য ও সুদৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।
– মুহাম্মদ জমির উদ্দীন বিন শফি
আরও পড়তে পারেন-
- নূপুর শর্মা, হেট স্পিচ ও বাকস্বাধীনতা
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
সমান অধিকার
এক মাওলানা সাহেব আলোচনা করছিলেন যে, ইসলাম সমঅধিকারের নাম। ইসলাম ধর্মে প্রত্যেকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। পেছন থেকে এক মেয়ে বলে ওঠলো, মাওলানা সাহেব! আপনি বলছেন, ইসলামে প্রত্যেকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে নারী-পুরুষের মাঝে এত বৈষম্য কেন?
ছেলেদেরকে সকল প্রকারের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তারা যেখানে খুশি যেতে পারে। সময় অতিবাহিত করতে পারে। তাদেরকে কেউ বাধা দিতে পারে না। কিন্তু মেয়েদের বেলায় উল্টো। তাদের উপর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এবং বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। যেখানে-সেখানে যেতে পারবে না। একাকী যেতে পারবে না। এটা কি বে-ইনসাফি নয়!?
মাওলানা সাহেব মনযোগ সহকারে মেয়েটির কথা শুনলেন এবং বললেন, বেটি! তুমি কি কামারের দোকান দেখেছো? দোকানি লোহা সারা দিন বাহিরে রাখে। সেটার উপর কত ধুলো-বালি পড়ে- হিসেব নেই। কিন্তু এরপরও সেটা নষ্ট হয় না। আর তুমি যদি স্বর্ণকারের দোকানে যাও এবং তার কাছ থেকে হীরা তালাশ করো, তাহলে দোকানি প্রথমে মযবুত একটি বাক্স খুলবে। ঐ বাক্সের ভেতর আরো একটি বাক্স থাকবে। তার ভেতরে মোলায়েম একটি ছোট্ট কৌটার ভেতর হীরা থাকবে। কারণ, স্বর্ণকার জানে, যদি এই হীরাতে কোনো প্রকারের দাগ পড়ে যায়, তাহলে তার মূল্য কমে যাবে। কাজেই হীরাকে মূল্যবান রাখার জন্য মযবুত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বেটি! ছেলেদের উদাহরণ হচ্ছে, লোহার মতো। সারাদিন বাইরে থাকলেও কিছু হয় না। মেয়েদের উদাহরণ হচ্ছে, হীরার মতো। যাকে খুব নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। এবার তুমি নিজেই চিন্তা করে বলো, ইসলাম তোমাকে হীরার মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছে, নাকি তোমার অধিকার হরণ করেছে? অবশ্যই ইসলাম তোমাকে অধিক সম্মান দান করেছে। সুতরাং নিজের সম্মান ও মূল্য অনুধাবন করা উচিত।
– সালমান ফারসী
ইতিহাসের পাতা থেকে
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনু আবদিল আযীয (রহ.) ইনতেকালের সময় এগারো সন্তান রেখে যান। তাঁর পরিত্যক্ত সম্পদ ছিল মোট ১৭ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা)। পাঁচ দিনার তাঁর কাফন বাবদ ব্যয় হয়ে গেল। দুই দিনার দিয়ে কবরের জন্য জমি ক্রয় করা হয়। অবশিষ্ট দিনারগুলো এগার সন্তানের মাঝে বণ্টন করা হয়। প্রত্যেকের ভাগে ঊনিশ দেরহাম করে পড়ে।
খলীফা হিশাম বিন আবদিল মালিকও ইনতেকালের সময় এগারো সন্তান রেখে যান। তাঁর পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে প্রত্যেক সন্তান দশ লাখ দিরহামের মালিক হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেন, হযরত উমর ইবনু আবদিল আযীয (রহ.)এর এক সন্তান এক দিনে একশ ঘোড়া জিহাদের জন্য দান করেছেন। আর হিশাম বিন আবদিল মালিকের ছেলে মসজিদের দরজায় ভিক্ষা করছে, মানুষ তাকে সদকা দিচ্ছে।
– জিয়া চিতরালী
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/