।। ড. হাফেজ এবিএম হিজবুল্লাহ ।।
কোথায় চলছে আমাদের তরুণ-যুবকরা? যাদের নিয়ে সমাজ ভাবে, তারা আজকের তরুণ ও যুবক। তারাই আমাদের আগামী দিনের চালিকা শক্তি। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান তারাই। তাদের মাঝেই সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ, সমাজ ও পরিবারের স্বপ্ন দেখে সাধারণ জনগণ। ছেলে হোক মেয়ে হোক এ তরুণ ও যুবকরা দিকভ্রষ্ট এবং বিভ্রান্ত হলে, দেশ, জাতি ও পরিবার হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
মানুষের জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো তারুণ্যে উদ্দিপ্ত যৌবন কাল। এ জন্যই সে সময় তাকে বলা হয় তরুণ ও যুবক। তরুণেরা যা করতে পারে শৈশবের শিশু এবং কৈশোরের কিশোরেরা তা পারে না। প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার সাথে সাথেই সূচনা হয় তারুণ্যের। তারুণ্যের পথেই আসে যৌবনের ঢেউ। আর যৌবনের জোয়ারে চোখে মুখে ভাসে রং বেরংয়ের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেউ হারিয়ে যায় বিভ্রান্তির অতল গহ্বরে।
আবার কেউ আরোহণ করে সাফল্যের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। পরিবেশ পরিস্থিতি ছেলে হোক বা মেয়ে, তাদেরকে নিয়ে খেলা করে। বৈচিত্র্যময় জীবনের হাতছানি দেয়। কেউ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে হারিয়ে যায় মানবিকতার পরিবর্তে পঙ্কিলতার পিচ্ছিল পাশবিকতার জঙ্গলে। আবার কেউ তাদের আহবান প্রত্যাখ্যান করে এগিয়ে যায় সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে। তাদের নিকট চূড়ান্ত সফলতা মানে আখিরাতের স্থায়ী প্রশান্তির ঝর্ণাধারার সুশীতল ছায়ায় অবগাহনের স্বপ্ন। তাই ক্ষণিকের পার্থিব আমোদ ফূর্তি বর্জন করে তারা অগ্রাধিকার দেয় আখিরাতের সুখময় মহাজীবনকে। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দুনিয়ামুখী ও আখিরাতমুখীদের সম্পর্কে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। ইমাম আহমাদ (রহ.) ও হযরত আবু মূসা আশআরী (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“من أحب دنياه أضربآخرته، ومَن أحبّ آخرته أضرّبدنياه، فآثر وامايبقَى على مايفنى”.
‘যে পৃথিবীকে পছন্দ করবে তার আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যে আখিরাতকে পছন্দ করবে তার দুনিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যা স্থায়ী, তাকে যা ধ্বংস হয়ে যাবে তার উপর প্রাধান্য দাও।’ (আহমাদ: মুসনাদ ৪/৪১২ ও ইবন হিব্বান, সহীহ/২৪৭৩)।
তাই সার্থক জীবনের জন্য চাই বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবন। যে জীবন পরিচালিত হবে আল্লাহ প্রদত্ত ও নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত আদর্শের ভিত্তিতে। কারণ, তিনি আমাদেরকে তাঁরই ‘ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- (وَمَاخَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإنْسَ إِلالِيَعْبُدُونِ)
‘আমি জিন ও মানব সৃষ্টি করিনি; তবে শুধুই আমার ইবাদাতের জন্য।’ (যারিয়াত- ৫৬)। আমাদের জীবন, মৃত্যু, ইবাদাত-বন্দেগী; সে তো আল্লাহরই জন্য। তাই নয় কি? আল্লাহ তো তাই আমাদেরকে ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَاشَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
‘বলে দিন, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু; সবই রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। এর জন্যই আমি নির্দেশিত হয়েছি এবং ইসলাম গ্রহণকারীদের মাঝে আমিই প্রথম।’ (আন’আম: ১৬২-১৬৩ আয়াত)।
তাছাড়া তিনি শুধু এ ইবাদাতের জন্যই আমাদেরকে দান করেছেন পৃথিবীর ভোগসত্ত্ব। বিনিময়ে তিনি কিছুই চাননি আমাদের কাছে। শুধু বলেছেন, আমার ইবাদাত করো। এটা তাঁর চাওয়া নয়। এটা তাঁর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মাত্র। তিনি আমাদের ইবাদাতের মুহতাজ (মুখাপেক্ষি) নন। কিন্তু প্রতি মুহূর্তই আমরা তাঁর রহমতের মুহতাজ। আমরা সবই তো পেলাম, কিন্তু দিলামটা কী? তাই আমাদের জীবনকে করতে হবে নেক আমল দ্বারা সমৃদ্ধ। আমলে সালিহ হবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ব্যক্তিগত জীবন থেকে আরম্ভ করে সামষ্টিক জীবনের প্রতিটি স্তরে প্রতিফলিত হতে হবে আল্লাহর বিধান। কিন্তু আমরা কত নালায়েক ও বেকুব যে, আমরা পার্থিব জগতকে পরকালীন জীবনের উপর প্রাধান্য দিয়ে যা খুশি তাই করছি। অথচ আমাদের জন্য আখিরাতই চূড়ান্ত গন্তব্য। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
{بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَالآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى}
‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছো, অথচ আখিরাতই হলো উত্তম ও স্থায়ী। (সূরা আ’লা- ১৬-১৭ আয়াত)।
হ্যাঁ, তোমরা তো পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য, ভোগ বিলাস ও বিনোদনকে প্রাধান্য দাও; অথচ আখিরাতের সফলতাই হলো উত্তম ও স্থায়ী। ইবনে কাসীর (রহ.) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দাও। তোমাদের জীবন যাপনে বিলাসিতাকে অগ্রাধিকার প্রদান করো। অথচ আখিরাতে আল্লাহর প্রতিদান উত্তম ও স্থায়ী। কেননা, দুনিয়া হীন ও শেষ হয়ে যাবে; আর আখিরাত সম্মানিত ও স্থায়ী। অতএব, বিবেকবান মানুষ কী করে অস্থায়ীকে স্থায়ীর উপর প্রাধান্য দেয় এবং যা অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যাবে তাকে নিয়ে মেতে আছে, আর স্থায়ী নিবাস যার কোনো ক্ষয় বা লয় নাই; তার ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করছে?
ইবনে জারীর (রহ.) তাবারী ‘আরফাজা সাকাফী’ থেকে একটি বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, আমি ইবন মাসউদকে সূরা আ’লা পড়তে বললাম।
তিনি যখন { بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا} পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন তিলাওয়াত বন্ধ করে উপস্থিত সাথীদের দিকে ফিরে বললেন, ‘আমরা আখিরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছি’। সবাই নিরব থাকলেন।
আরও পড়তে পারেন-
- মুসলমানদের জন্য রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা করানো সুন্নাত
- করোনা মহামারি ও আমাদের করণীয়
- জান্নাত পেতে চাইলে শিরকমুক্ত নেক আমল করতে হবে
- দুর্দিন ও দুঃসময়ে নবী জীবন থেকে সান্ত্বনা
- মাহে মুহাররম ও আশূরা: করণীয় ও বর্জনীয় আমলসমূহ
তিনি আবার বললেন, ‘আমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছি; আমরা এর চাকচিক্য দেখতে পেয়েছি; আমরা এর নারীদের, খাবার-পানীয় দেখতে পেয়েছি; আখিরাত আমাদের আড়ালে চলে গেছে। তাই নগদ প্রাপ্তিকে আমরা গ্রহণ করেছি, আর বাকিকে আমরা ত্যাগ করেছি’। (ইবন কাসীর)।
তারুণ্য ও যৌবনের উন্মাদনায় আখিরাত থেকে আমরা অনেক দূরে, বহু দূরে। আমরা কি জানি আমাদের যৌবন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে? দেহ সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসিত হবো?
এক হাদীসে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কেউ পার পাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর একটি হল- وَشَبَابِهِ فِي مَاأَبْلاهُ
‘তার যৌবন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে যে, কিসে তা ক্ষয় করেছে’। (তাবারানী: মু’জাম সাগীর/৭৬০)।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে- وعن جسمه في ماأبلاه
‘তার দেহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে যে, কিসে তা ক্ষয় করেছে।’ (তিরমিযী/২৪১৭)। হে তরুণেরা, হে যুবকেরা! পারবো তো এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে?
জান্নাতীগণ হবেন সদা যুবক জানো হে যুবক! জান্নাতে কোনো বৃদ্ধ বা বয়ষ্ক থাকবে না। কোনো অসুস্থ বা রোগাগ্রস্ত থাকবে না। আচ্ছা! তাহলে যারা বয়োবৃদ্ধ হয়ে ইন্তিকাল করছেন, তারা কেমন হবেন? যারা অসুস্থ হয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তারা কেমন হবেন? উত্তর শুনুন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্যে-
ينادى مُنادٍ : إنَّ لكم أن تَصِحُّوا فلا تسقَموا أبدًا ، و إنَّ لكم أن تحيوا فلا تموتوا أبدًا ، و إنَّ لكم أن تشِبُّوا فلا تهرَموا أبدًا ، و أنَّ لكم أن تنعَموا فلا تبْأسوا
‘জান্নাতীদের বলা হবে, তোমরা সুস্থ থাকো, এরপর তোমরা কখনও অসুস্থ হবে না। তোমরা জীবন যাপন করো, কখনও তোমাদের মৃত্যু হবে না। তোমাদের জন্য রয়েছে বিলাসিতা, এরপর কখনও তোমরা দুর্ভোগে পতিত হবে না। তোমরা যুবক হয়ে যাবে, এরপর তোমরা কখনও বৃদ্ধ হবে না।’ (তাবারানী: মু’জাম সাগীর- ২১২)। আল্লাহু আকবার। কী চমৎকার সুসংবাদ।
তুমি কি শোননি হে যুবক, কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা আসহাবে কাহাফের যুবকদের প্রশংসায় কী বলেছেন? তারা তাদের ঈমানের হেফাযতে সব কিছু ছেড়ে অজানা গন্তব্যে বেরিয়ে পড়েছিল। আল্লাহ ইরশাদ করেন-
إِذۡ أَوَى ٱلۡفِتۡيَةُ إِلَى ٱلۡكَهۡفِ فَقَالُواْ رَبَّنَآ ءَاتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحۡمَةٗ وَهَيِّئۡ لَنَا مِنۡ أَمۡرِنَا رَشَدٗا ‘
স্মরণ কর সে সময়ের কথা যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল, তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের রব! আপনি নিজ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিন। (সূরা কাহাফ, ১০ আয়াত)।
আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তারা সব কিছু ত্যাগ করলো। সত্য পথে অটল থাকার জন্য রাব্বুল আলামীনের দরবারে দু’আ করল। হ্যাঁ, আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দিলেন। তাদের প্রশংসায় ইরশাদ করেন-
أنهم فتية آمنوا بربهم وزدنهم هدي ‘
একদল যুবক যারা নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে হিদায়াতে প্রভূত উৎকর্ষ দান করেছিলাম। (সূরা কাহাফ, ১৩ আয়াত)।
যুবকদের সম্পর্কে হাদীসে বাশারাত (সুসংবাদ):
যুবকদের সম্পর্কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কিছু সুসংবাদ দান করেছেন। যেমন- আল্লাহর আরশের ছায়ায় যে সাত শ্রেণির মানুষকে স্থান দেয়া হবে তাদের এক শ্রেণি হলো- وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّهِ ‘সেই যুবক যে তার রবের ইবাদাতে বেড়ে উঠেছে’। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৬০)।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত إن الله ليعجب من الشاب الذي ليست له صبوة ‘আল্লাহ সেই যুবকের জন্য আনন্দবোধ করেন যার মাঝে বালখিল্যতা নেই।’ (মুসনাদে আহামাদ, হাদীস নং- ১৭৩৭১)। অন্য এক হাদীসে হযরত আনাস ইবন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত,إن الله يحب الشاب التائب ‘আল্লাহ তাওবাকারী যুবককে ভালোবাসেন।’ (যুরকানী: মুখতাসারুল ফাওয়ায়েদ- ২১৮)।
যুবকগণের সাথে সাহাবীগণের ব্যবহার
সাহাবীগণ যুবকদের আদর-যতœ করতেন। তরুণ তালিবুল ইলমদের স্বাগত জানাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) কোনো তালিবুল ইলমকে দেখলে বলতেন-
مَرْحَبًا بِكُمْ يَنَابِيعَ الْحِكْمَةِ، وَمَصَابِيحَ الظُّلْمَةِ، خُلْقَانَ الثِّيَابِ، جُدُدَ الْقُلُوبِ، حُلْسَ البُيُوتِ، رَيْحَانَ كُلِّ قَبِيلَةٍ
‘তোমাদেরকে খোশ আমদেদ। তোমরা হিকমত (জ্ঞান)এর ঝর্ণাধারা, অন্ধকারের মিসবাহ (মশাল), জীর্ণ বস্ত্রধারী, অন্তর নবায়নকারী, ঘরের শোভা বর্ধক, প্রতিটি কাবীলার (গোত্র) ফুল।’ (সুনানে বাইহাকী: শুআবুল ঈমান- ১৬০০)। আরও একজন সাহাবী আবূ সা’ঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু কোনো যুবককে দেখলে বলতেন-
مَرْحَبًا بِوَصِيَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُوَسِّعَ لَكُمْ فِي الْمَجْلِسِ، وَأَنْ نُفَهِّمَكُمُ الْحَدِيثَ فَإِنَّكُمْ خُلُوفُنَا، وَأَهْلُ الْحَدِيثِ بَعْدَنَا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের সম্পর্কে অসিয়ত করেছেন তাদেরকে খোশ আমদেদ; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের বিষয়ে আমাদেরকে ওসিয়্যাত করেছেন, আমরা যেন তোমাদের জন্য মাজলিস প্রশস্ত করি, তোমাদেরকে হাদীস বুঝিয়ে দেই। কেননা, তোমরাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং আমাদের পরে তোমরাই হাদীসের বাহক।’ (সুনানে বাইহাকী, শু’আবুল ঈমান- ১৭০০)।
তিনি কোনো যুবককে দেখলে বলতেন, ‘হে ভ্রাতুষ্পুত্র! কোনো বিষয় যদি তোমার সন্দেহ হয় তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করে নেবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি সন্দেহমুক্ত হবে। কেননা, তুমি সন্দিহান হয়ে ফিরে যাওয়ার চাইতে ইয়াকীনের উপর ফিরে যাবে; আমার নিকট এটাই বেশি প্রিয়।’ (সুনানে বাইহাকী: শুআবুল ঈমান- ১৭০০)।
যুবক বয়সেই আখিরাতের সঞ্চয় করতে হবে
‘হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জুমুআর খুতবার তালাশ করছিলাম। কিন্তু এটা আমাকে অপারগ করে দেয়। তখন আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাামের এক সাহাবীর শরণাপন্ন হয়ে তাঁকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, ‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুমুআর দিন খুতবায় বলতেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ لَكُمْ عِلْمًا فَانْتَهُوا إِلَى عِلْمِكُمْ، وَإِنَّ لَكُمْ نِهَايَةً فَانْتَهُوا إِلَى نِهَايَتِكُمْ، فَإِنَّ الْمُؤْمِنَ بَيْنَ مَخَافَتَيْنِ بَيْنَ أَجَلٍ قَدْ مَضَى لَا يَدْرِي كَيْفَ صَنَعَ اللهُ فِيهِ، وَبَيْنَ أَجَلٍ قَدْ بَقِيَ لَا يَدْرِي كَيْفَ اللهُ بِصَانِعٍ فِيهِ، فَلْيَتَزَوَّدِ الْمَرْءُ لِنَفْسِهِ، وَمِنْ دُنْيَاهُ لِآخِرَتِهِ، وَمِنَ الشَّبَابِ قَبْلَ الْهَرَمِ، وَمِنَ الصِّحَّةِ قَبْلَ السَّقَمِ، فَإِنَّكُمْ خُلِقْتُمْ لِلْآخِرَةِ وَالدُّنْيَا خُلِقَتْ لَكُمْ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا بَعْدَ الْمَوْتِ مِنْ مُسْتَعْتَبٍ وَمَا بَعْدَ الدُّنْيَا دَارٌ إِلَّا الْجَنَّةُ وَالنَّارُ، وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِي وَلَكُمْ
‘হে মানবজাতি! তোমাদের জন্য রয়েছে ইলম। তোমরা সেই ইলম অর্জন কর। তোমাদের রয়েছে একটি পরিণতি; তোমরা সেই পরিণতিতে পৌঁছে যাও। কেননা, মুমিনের রয়েছে দু’টি ভয়, একটি মেয়াদ যা গত হয়েছে। সে জানে না সে মেয়াদে আল্লাহ কী করেছেন। আর একটি মেয়াদ রয়েছে, সে জানে না এ মেয়াদে আল্লাহ কী করবেন। তাই মানুষের উচিত সে নিজের সঞ্চয় সংগ্রহ করবে। দুনিয়াতেই আখিরাতের সম্বল আহরণ করবে।
বার্ধক্যের পূর্বেই যৌবনে আমল করবে। অসুস্থ হওয়ার পূর্বেই সুস্থতার কদর করবে। কেননা, তোমাদেরকে আখিরাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, আর দুনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে তোমাদের জন্য। কসম সেই সত্ত্বার যাঁর হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, মৃত্যুর পর ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না এবং দুনিয়ার পর কিছুই নেই; আছে শুধু জান্নাত ও জাহান্নাম। আমি আল্লাহর নিকট আমার ও তোমাদের জন্য ইসতিগফার করছি।’ (সুনানে বাইহাকী, শু’আবুল ঈমান- ১০০৯৭)।
হযরত সুফিয়ান সাওরী বলতেন, হে যুবকেরা! কিয়ামুল লাইলে (তাহাজ্জুদ) অভ্যস্ত হও। কেননা, শক্তি-সামর্থ ও কর্ম চঞ্চলতার কারণে যৌবনেই রয়েছে কল্যাণ। হাদীসে রয়েছে এর প্রমাণ-
يعجب ربك تعالى للشاب ليست له صبوة
‘তোমার রব সেই যুবকের ব্যাপারে আশ্চর্য হন, যার মাঝে নেই শিশু সুলভ চঞ্চলতা।’ (সাখাবী: আল মাকাসিদুল হাসানা- ৫৮৬)।
এ জন্যই আমরা দেখতে পাই, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবক-তরুণদেরকে সামর্থবান হলেই বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন। কারণ, এ বয়সটাই জীবনের কঠিন একটি স্তর। যারা নিরাপদে এ স্তর অতিক্রম করতে পেরেছে তারাই সফল। আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তা থাকলে কোনো পাপে যুবক ঘায়েল হবে না। শয়তান যুবকদেরকেই বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট ও পাপাচার-অনাচারে লিপ্ত করতে সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালায়। বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করে এবং নিজস্ব ঈমানী স্বকীয়তা প্রদর্শনে নিরুৎসাহিত করে।
অতএব, হে যুবক ফিরে এসো সত্যের পথে। ঈমানের জ্যোতিতে আলোকিত করো দিলকে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
লেখক: অধ্যাপক, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/