জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে কিয়াম ও মুনাজাত কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত নয়

।। মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত রাফি ।।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন জীবনবিধান। মানবজীবনের প্রতিটি সমস্যার আলোকিত সমাধান এবং প্রত্যেক অবস্থার যথার্থ বিশ্লেষণ ইসলামে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলামের প্রতিটি শাখা-প্রশাখাকে পূর্ণতা দান করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম”। (সূরা-মায়িদা- ৩)।

কুরআন-সুন্নাহয় কিছু বিষয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর কিছু বিষয় কোনো মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে বর্ণিত হয়েছে। মানবজীবনের এমন কোনো সমস্যা বা বিষয় খুঁজে পাওয়া অসম্ভব, যার সঠিক ও যথাযোগ্য সমাধান ও ব্যাখ্যা কুরআন-সুন্নাহয় (সুস্পষ্টভাবে বা কোনো মূলনীতির আওতায়) উল্লিখিত হয়নি। একজন ঈমানদারের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে তার জীবনকে কুরআন-সুন্নাহর রঙে রাঙানো; কুরআন-সুন্নাহর সাজে সাজানো এবং কুরআন-সুন্নাহ-বহির্ভুত কর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজের জীবনকে ক্ষতির সম্মুখীন করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা।

ইসলামের শাশ্বত বিধানাবলী থেকে কোনো কিছু বিয়োজন করার সুযোগ যেমন কারো জন্য নেই, ইসলামের বিধানাবলীতে কোনো কিছু সংযোজন করার অধিকারও তেমন কারো জন্য নেই। হযরত আয়েশা (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-

من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد.

“যে ব্যক্তি আমাদের ইসলামে এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত করবে- যা ইসলাম থেকে নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে”। (বুখারী, হাদীস ২৫৫০)।

হযরত জাবের (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) খুতবায় বলতেন-

أما بعد، فإن خير الحديث كتاب الله، وخير الهدي هدي محمد، وشر الأمور محدثاتها، وكل بدعة ضلالة

“সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে কুরআনের বাণী। সর্বোত্তম পথনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মদ (সা.)এর উপদেশ। সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে নবোদ্ভাবিত বিষয়। আর প্রত্যেক নবোদ্ভাবিত বিষয় হচ্ছে পথভ্রষ্টতা। (মুুসলিম, হাদীস- ২০৪২)।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ইসলামে বিদআত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ইসলামের অনেক শাখা-প্রশাখায় কিছু অবুঝ ও অতি ভক্তি-আপ্লুত মুসলমানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বিদআতের আবির্ভাব ঘটেছে। এসব বিদআতের মধ্য থেকে এ প্রবন্ধে মাত্র দু’টি বিদআতের আলোচনার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।

জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত

কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত উম্মে সালামা (রযি.) বর্ণনা করেন-

فلما مات أبو سلمة أتيت النبي -صلى الله عليه وسلم- فقلت يا رسول الله إن أبا سلمة قد مات، قال : ্র قولى اللهم اغفر لي وله وأعقبني منه عقبى حسنة

“যখন আবূ সালামা (রাযি.) ইন্তিকাল করেন, তখন আমি রাসূল (সা.)এর দরবারে এসে আরয করলাম- হে আল্লাহর রাসূল, আবূ সালামা ইন্তিকাল করেছেন। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি বল, হে আল্লাহ! আমাকে এবং তাঁকে ক্ষমা করে দিন। আর আমাকে তাঁর চেয়ে উত্তম বদলা দান করুন”। (মুসলিম, হাদীস- ২১৬৮)।

যে কেউ তার মৃত মুসলমান ভাইয়ের জন্য যে কোনো সময় একাকী দুআ করতে পারবে। এতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে তার জন্য গুরুত্বসহকারে সম্মিলিতভাবে দুআ করার বিধান শুধু জানাযার নামায। জানাযার নামায প্রকৃতপক্ষে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ। জানাযার নামাযের পর গুরুত্বসহকারে সম্মিলিতভাবে পুনরায় দুআ করা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় অনেক সাহাবায়ে কেরামের জানাযার নামায পড়িয়েছেন, সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) হাজার হাজার মু’মিনের জানাযার নামায পড়েছেন। কিন্তু কোনো বিশুদ্ধ বর্ণনায় তাঁরা জানাযার নামাযের পর দুআ করেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায় না। এ জন্য ফুকাহায়ে কেরাম (রহ.) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন এবং এটিকে মাকরূহ বলেছেন। যথা-

ইমাম বুরহানুদ্দীন মাহমূদ বিন আহমদ আল-হানাফী (রহ.) [মৃত্যু ৬১৬ হি.] বলেন-

ولا يقوم الرجل بالدعاء بعد صلاة الجنازة؛ لأنه قد دعا مرة.

“কেউ যেন জানাযার নামাযের পর দুআ করতে উদ্যত না হয়। কারণ, সে তো একবার দুআ করেছে”। (আল-মুহীতুল বুরহানী- ৩/১০৯, ইদারাতুল কুরআন, করাচী)।

ইমাম আবূ বকর বিন হামিদ আল-হানাফী (রহ.) বলেন-

إن الدعاء بعد صلاة الجنازة مكروه.

“জানাযার নামাযের পর দুআ করা মাকরূহ”। (বারজুনদী শরহু মুখতাসরুল বিকায়া- ১৮০)।

ইমাম তাহির বিন আব্দুর রশীদ আল-বুখারী আল-হানাফী (রহ.) [মুত্যু ৫৪২ হি.] বলেন-

لا يقوم بالدعاء في قراءة القرآن لأجل الميت بعد صلاة الجنازة وقبلها.

“জানাযার নামাযের পূর্বে এবং পরে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন পড়ে দুআ করতে উদ্যত হবে না”। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া- ১/২২৫, আশরফিয়া)।

আল্লামা সিরাজুদ্দীন আলী বিন উসমান আওশী আল-হানাফী (রহ.) [মৃত্যু ৫৬৯ হি.] বলেন-

إذا فرغ من الصلاة لا يقوم بالدعاء.

“(জানাযার) নামায শেষ করে দুআ করবে না”। (ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ- ১৩৩, মাকতাবাতুল ইত্তিহাদ)।

ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন শিহাব কারদারী বাযযাযী (রহ.) [মৃত্যু ৮২৭ হি.] বলেন-

لايقوم بالدعاء بعد صلاة الجنازة؛ لأنه دعا مرة.

“কেউ যেন জানাযার নামাযের পর দুআ করতে উদ্যত না হয়। কারণ, সে তো একবার দুআ করেছে”। (ফাতাওয়া বাযযাযিয়্যাহ- ১/৫৩, যাকারিয়া)।

মুল্লা আলী কারী (রহ.) [মৃত্যু ১০১৪ হি. বলেন-

ولا يدعو للميت بعد صلاة الجنازة؛ لأنه يشبه الزيادة في صلاة الجنازة.

“জানাযার নামাযের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করবে না। কেননা, তা জানাযার নামাযে (কিছু) বৃদ্ধি করার সাথে সামঞ্জস্য রাখে”। (মিরকাত- ৪/১৭০, যাকারিয়া)।

এছাড়াও আরো অনেক ফুকাহায়ে কেরাম (রহ.) জানাযার নামাযের পর দুআ করতে নিষেধ করেছেন। প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ততার দিকে লক্ষ্য রেখে সব উল্লেখ করা হল না।

কতিপয় সংশয়ের নিরসন

(ক) হযরত আবূ হুরায়রা (রযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন-

إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء.

“যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য নামায পড়বে, তখন খাঁটি মনে তার জন্য দুআ করবে”। (আবূ দাঊদ, হাদীস- ৩২০১)।

এ হাদীস দ্বারা জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআর প্রবক্তাগণ জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআ করাকে জায়েয সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে থাকেন।

আরও পড়তে পারেন-

নিরসন: এ হাদীস দ্বারা জানাযার নামাযের পর ‘সম্মিলিতভাবে দুআ করা’ জায়েয সাব্যস্ত করা কোনোভাবেই সঠিক নয়। এটি হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা বৈ কিছু নয়। কেননা-

(১) এ হাদীসে যে দুআর কথা বলা হয়েছে, তা মূলত নামাযের ভেতরের দুআ; বাইরের দুআ নয়। উম্মাতের সর্বজন সমাদৃত হাদীসের ভাষ্যকার ও ফকীহগণ সকলেই এরূপ অর্থই করেছেন। হাদীসের বিশিষ্ট ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) [মৃত্যু ৮৫৫ হি.] এ হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন-

وفيه من الفقه أن الميت يدعى له في الصلاة عليه، ولكن بالإخلاص، ولا يكون ذالك إلا بصفاء الخاطر عن الكدورات الدنيوية، والشواغل الشيطانية، والخضوع والخشوع بالقلب والجوارح.

“এ হাদীস থেকে এ কথা জানা যায় যে, মৃতের জন্য নামাযের মধ্যে দুআ করা হবে; তবে তা একান্ত নিষ্ঠা ও খাঁটি মনে হতে হবে। এ সময় পার্থিব কদর্যতা ও শয়তানী চিন্তা-ভাবনা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখতে হবে এবং তা সকাতর ও বিনয়াবনত অন্তর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে করতে হবে”। (শরহু সুনানে আবী দাঊদ- ৬/১৪৩)।

আল্লামা আইনী (রহ.)এর এ বক্তব্য দ্বারা এ কথা পরিস্ফুট হয় যে, হাদীসে উল্লিখিত দুআ দ্বারা নামাযের ভেতরের দুআই উদ্দেশ্য।

(২) এ হাদীসটি হযরত যায়দ বিন আসলাম (রাযি.) থেকেও বর্ণিত, তিনি বলেন-

أن رسول الله –صلى الله عليه وسلم- قال في الصلاة على الميت : أخلصوه بالدعاء.

“রাসূল (সা.) মৃতের নামাযের ব্যাপারে বলেছেন যে, তোমরা খাঁটি অন্তরে তার জন্য দুআ করো”। (আল-মুদাওওয়ানা, ইমাম মালেক (রহ.), ১/১৭৪)।

এ বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, হাদীসে যে দুআর কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে জানাযার নামাযের ভেতরের দুআ; বাইরের দুআ নয়।

(৩) উম্মাতের বিশিষ্ট ফকীহগণ উপর্যুক্ত হাদীসকেই জানাযার নামাযের মধ্যে মৃতের জন্য দুআ করার দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। যেমন- ইবনু কুদামা ও বুহুতী (রহ.) প্রমুখ বলেন-

ويدعو في التكبيرة الثالثة لقول النبي –صلى الله عليه وسلم- : إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء.

“আর তৃতীয় তাকবীরে দুআ করবে। কেননা, রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা মৃতের জন্য নামায পড়বে, তখন খাঁটি মনে দুআ করবে”। (ইবনু কুদামা, আশ-শারহুল কবীর- ২/২৪৭, বুহুতী, কাশশাফুল কিনা- ২/১১৩)।

ইমাম নববী (রহ.) এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন-

ومحل هذا الدعاء التكبيرة الثالثة.

“এ দুআ করার জায়গা হল তৃতীয় তাকবীর”। (আল-মাজমূ- ৫/২৩৬, দারুল ফিকর)।

সুতরাং এ হাদীস দ্বারা জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআ করা জায়েয সাব্যস্ত হয় না।

(খ) হযরত ইবরাহীম হুজায়রী (রহ.) বলেন-

رأيت ابن أبي أوفى –رضي الله عنه- وكان من أصحاب الشجرة، وماتت ابنته ……ثم كبر عليها أربعا، ثم قام بعد ذالك قدر ما بين تكبيرتين يدعو، وقال : كان رسول الله –صلى الله عليه وسلم- يصنع على الجنائز.

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রযি.)-এর মেয়ে ইন্তিকাল করলে তিনি তাঁর জানাযার নামায পড়ান। জানাযার নামাযে চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে দুআ করেন। অতঃপর বলেন, রাসূল (সা.) জানাযায় এমন করতেন। (কানযুল উম্মাল- ১৫/৩০২, হাদীস ৪২৮৪৪, দারুল কুতুবিল ইমলিয়্যাহ)।

জানাযার নামাযের পর দুআর প্রবক্তাগণ এ হাদীস পেশ করে বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রযি.) তাঁর মেয়ের জানাযায় চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে দুআ করেছেন এবং বলেছেন, রাসূল (সা.)ও এমন করতেন। অতএব, জানাযার নামাযের পর দুআ করা এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

নিরসন: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রযি.)এর এ দুআ জানাযার নামাযের সালামের পরে ছিল না; বরং চতুর্থ তাকবীরের পর সালামের পূর্বে ছিল। এ বর্ণনা সংক্ষিপ্ত। ইমাম নববী (রহ.) কিতাবুল আযকারে পুরো ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন-

أنه كبر أربع، فمكث ساعة حتى ظننا أنه سيكبر خمسا، ثم سلم عن يمينه وعن شماله، فلما انصرف قلنا له : ما هذا؟ فقال : إني لا أزيدكم على مارأيت رسول الله –صلى الله تعالى عليه وسلم- يصنع أو هكذا صنع رسول الله –صلى الله تعالى عليه وسلم-. قال الحاكم أبو عبد الله : هذا حديث صحيح. (الفتوحات الربانية على الأذكار النبوية، باب أذكار الصلاة على المبت : ৪/১৮০، المكتبة الإسلامية، رياض.)

“তিনি অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রযি.) চতুর্থ তাকবীরের পর এতক্ষণ সময় দাঁড়িয়ে রইলেন যে, আমরা মনে করলাম পঞ্চম তাকবীর বলবেন। অতঃপর ডানে-বামে সালাম ফিরালেন। যখন নামায শেষ করলেন, তখন আমরা বললাম, এমন করলেন কেন? তিনি বললেন, রাসূল (সা.)কে যেরকম করতে দেখেছি, তা থেকে আমি কোনো কিছু বৃদ্ধি করব না। অথবা তিনি বললেন, রাসূল (সা.) এমনটি করেছেন”।

অতএব, সালামের পূর্বে যেহেতু জানাযার নামায শেষ হয় না, এজন্য এ দুআ জানাযার নামাযের অন্তর্ভুক্ত এবং আমাদের আলোচনা-বহির্ভুত। তবে জানাযার নামাযে সালামের পূর্বে দুআ করা না করার হুকুম সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের ‘যাহিরুর রিওয়ায়াহ’ (প্রসিদ্ধ বর্ণনা) হল- দুআ করবে না; বরং চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে দিবে। (আল-বাহরুর রায়েক- ২/১৮৩, যাকারিয়া)।

(গ) জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআর প্রবক্তাগণ যদি বলেন যে, জানাযার নামাযের পর দীর্ঘদুআ মাকরূহ; সংক্ষিপ্ত-দুআ মাকরূহ নয়। ফুকাহায়ে কেরাম জানাযার নামাযের পর যে দুআ করা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে দীর্ঘদুআ উদ্দেশ্য; সংক্ষিপ্ত-দুআ নয়।

নিরসন : (ক) সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘদুআর বিষয় তো আসবে পরে, প্রথমে তো জানাযার নামাযের পর দুআ করা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। এটি তো প্রমাণিত নয়। সুতরাং দীর্ঘ আর সংক্ষিপ্তের মাঝে পার্থক্য করা বোকামি বৈ কিছু নয়।

(খ) ফুকাহায়ে কেরাম (রহ.) জানাযার নামাযের পর মুতলাক (একেবারে) দুআকে নিষিদ্ধ বলেছেন, দীর্ঘদুআর সাথে এ হুকুম নির্দিষ্ট করেননি। উপরন্তু তাঁদের যদি দীর্ঘ দুআ উদ্দেশ্য হতো, তাহলে কোনো না কোনো ফকীহের আলোচনায় তা সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত হত। কিন্তু তা হয়নি।

জানাযার নামাযের পর কিয়াম

বর্তমান কিছু কিছু জায়গায় জানাযায় নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পূর্বে ‘প্রচলিত কিয়াম’ করতেও দেখা যায়। এই রেওয়াজ কেবল মাত্র শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছর পূর্বেও এটির অস্তিত্ব ছিল না। এটি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বিদআতপ্রবণরা যেহেতু সাধারণত কিয়াম করে তারপর মুনাজাত করে থাকেন। এজন্য তারা জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাতের পূর্বে কিয়াম করা শুরু করে দিয়েছেন। এটি বিদআত এবং মাকরূহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন, দীনের সহীহ বুঝ দান করুন, সকল প্রকার বিদআত ও কুসংস্কার থেকে দূরে রাখুন এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের আচার-সভ্যতা ও রীতি-নীতি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ২য় বর্ষ, ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।