জিজ্ঞাসা-সমাধান / পরিচালনায়- ফতোয়া বিভাগ, দারুল উলূম হাটহাজারী

জুমার দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তি প্রসঙ্গে

(৯৩৮৩) রহিমা আক্তার, পূর্ব বশিকপুর, ফুলগাজী, ফেনী।

জিজ্ঞাসা: জনৈক আলেমের মুখে শুনতে পেলাম- শুক্রবারে মারা গেলে নাকি কবরের আযাব চিরতরে মাফ হয়ে যায়। কথাটা কতটুকু যথার্থ, সত্য হলে কোন ধরনের মানুষের কবরের আযাব মাফ হয়?

সমাধান: শুক্রবারে মারা গেলে চিরতরে কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়; এমন কোনো বর্ণনা হাদীসের গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় না। তবে শুক্রবার দিনে অথবা রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাআলা কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন এই মর্মে একাধিক বর্ণনা হাদীসের গ্রন্থসমূহে রয়েছে। যেমন এক হাদীসে রয়েছে-

ما من مسلم يموت يوم الجمعة أو ليلة الجمعة إلا وقاه الله من فتنة القبر

অর্থ যে মুসলিম জুমআর দিনে অথবা রাতে মারা যাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে বাঁচাবেন। এই মর্মের হাদীসগুলো দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হলেও একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে অধিকাংশ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে হাসান পর্যায়ের বলেছেন।

হাদীসটির ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, কবরের ফেতনা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কবরের আযাব এবং সাওয়াল।

আল্লামা কাশ্মিরী (রহ.) বলেন, ফেতনা দ্বারা কবরের সাওয়াল উদ্দেশ্য। মোল্লা আলী কারী (রহ.) হাদীসটির ব্যাখ্যায় কবরে শাস্তি মাফ হওয়ার ব্যাপারে নেককার মুমিনদের সাথে ফাসেক মুসলমানকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

হাদীসের বর্ণনা সমূহের মধ্যে ‘শুক্রবারে ইন্তিকাল করলে, চিরতরে কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়’ এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না এবং জুমআর দিনে মারা গেলে যে ফযীলতের কথা হাদীসে এসেছে এটা শুধু জুমআর দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এমন শর্তযুক্ত বর্ণনাও পাওয়া যায় না; বরং হাদীসের বর্ণনা এখানে শর্তমুক্ত সেটাকে নির্দিষ্ট কোনো শর্তের সাথে সংযুক্ত না করাটাই শ্রেয়। অর্থাৎ কবরের ফিৎনা থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়ার আশা রাখাই শ্রেয়। তার পরের আযাবের ব্যাপারে নয়। (জামেউত তিরমিযী- ১০৭৪, আহমদ বিন হম্বল- ৬৫৭২, তহাবী- ২৭৯, শরহে মাশকিলুল আসার- ২/২৫১, মিরকাত- ৩/৫১৫,আরফুশ শাযী- ২/৩৫১

মক্কা-মদীনার ছবি অংকিত জায়নাময প্রসঙ্গে

(৯৩৮৪) মুহাম্মদ ইসমাঈল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: মক্কা-মদীনার ছবি অংকিত জায়নামাযের ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এবং জায়নামাযের ব্যবহার কখন থেকে শুরু হয়েছে।

সমাধান: বর্তমান প্রচলিত মক্কা-মদিনার ছবি অঙ্কিত জায়নামাযে নামায আদায় করতে যদি নামাযের একাগ্রতায় ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে ছবির উপর সাদা কাপড় রেখে নামায আদায় করা, অথবা উহা পরিহার করাই উত্তম। আর যদি নামায আদায় করতে নামাযের একাগ্রতায় ব্যাঘাত না ঘটে, তাতে নামায আদায় করতে কোনো সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানা থেকেই জায়নামাযের ব্যবহার পাওয়া যায়। (সহীহ বুখারী- ৩৭৩, সহীহ মুসলিম- ২৯৯, শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী- ৩৫৬, মারাকিউল ফালাহ- ৩৬২)

পিতা-মাতার হুকুম পালন প্রসঙ্গে

(৯৩৮৫) এন আমীন, গালুয়া, ঝালকাঠি।

জিজ্ঞাসা: মাতা-পিতার সম্মতিতে বা অসম্মতিতে বিয়ে করার পর তারা যদি ছেলেকে বলে যে, এ বউ তুই রাখতে পারবি না। বউকে তালাক দিতে হবে। নচেৎ সম্পূর্ণরূপে অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এমতাবস্থায় মাতা-পিতার কথা মানলে বউ রাখা যাবে না। বউ রাখলে মাতা-পিতার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এক্ষেত্রে শরীয়তের পরামর্শ কী?

সমাধান: কুরআন-হাদীস ও ফেকাহ শাস্ত্রের গ্রন্থাবলী অধ্যয়নে প্রতীয়মান হয় যে, (ক) শরীয়তে বিবাহ বন্ধন স্থায়ী রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। অন্যায় বা বেআইনিভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ করা জুলুম ও কবীরা গুনাহ। আর গুনাহ ও শরীয়ত বিরোধী কাজে কারো হুকুম পালন করা বৈধ নয়। (খ) এবং সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা বড় গুনাহের কাজ। সন্তান যদি অবাধ্য হয়, তাহলে তাতে সন্তান গুনাহগার হবে।

(গ) শরীয়তের দৃষ্টিতে কেবল সন্তানকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেই বঞ্চিত হয় না; যতক্ষণ না পিতা মাতা তাদের জীবদ্দশায় অন্য সন্তানদেরকে সম্পত্তি বন্টন করে মালিকানা বানিয়ে যাবে।

সুতরাং আপনার জন্য করণীয় হবে যে, স্ত্রীকে ভালোভাবে বুঝানো যেন শ^শুর শাশুড়ির সাথে সদ্ব্যবহার ও শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ করে এবং যতদূর সম্ভব তাদের সেবা যতœ করার চেষ্টা করে। তদসঙ্গে আপনার পিতা-মাতাকেও বিনয়ের সাথে মাসআলা বুঝিয়ে দিবেন এবং বলবেন যেন কল্যাণকামী হয় এবং ধৈর্য ধারণ করে। (সূরা মুহাম্মদ- ২২/২৩, সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩, সুনানে তিরমিযী- ৩২৬, সহীহ মুসলীম- ৭৪০০, সুনানে আবি দাউদ- ২৯৬, সহীহ মুসলীম- , মিশকাত- ৪২৩)।

ফাসেক ব্যক্তির পেছনে নামায পড়া প্রসঙ্গে

(৯৩৮৬) মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ, মোমেনশাহী।

জিজ্ঞাসা: হাইস্কুলের হেড জনৈক মাওলানা সাহেব একটি মসজিদ ও ঈদগাহের ইমাম। উক্ত ইমাম সাহেবের পিছনে নামায সহীহ হবে কি?

সমাধান: হাইস্কুলের উক্ত হেড মাওলানা সাহেব যদি বালক বালিকাদের একই সঙ্গে পর্দাহীন অবস্থায় পাঠদান দেয়, তাহলে উক্ত মাওলানা সাহেবের পেছনে নামায পড়া মাকরূহ হবে। কেননা, পর্দা ইসলামের ফরয বিধান। আর ফরয লঙ্ঘনকারী কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত শরীয়তের পরিভাষায় সে ফাসেক বলে গন্য হবে। আর ফাসেক ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহ। সুতরাং তার পেছনে নামায পড়াও মাকরূহ।

হ্যাঁ উক্ত মাওলানা সাহেব যদি খালেস দিলে তাওবা করে ফিরে আসে এবং তার আকিদা বিশ^াস ও ক্বিরাত যদি সহীহ থাকে তাহলে উক্ত মাওলানা সাহেবের পেছনে নামায পড়তে কোনো আপত্তি নেই। (দুররে মুখতার- ২/৩৫৬, বাহরুর রায়েক- ১/৬১০, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৩৮৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১৪১, হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন- ২/৩৫০)।

বিদেশে মাল পাচার করা প্রসঙ্গে

(৯৩৮৭) মুহাম্মদ আব্দুল মালেক, পাইকরাজ, তোয়াক্কুল, গোয়াইনঘাট, সিলেট।

জিজ্ঞাসা: আমাদের দেশ থেকে অন্য দেশে কোন কিছু পাচার করা এবং অন্য দেশ থেকে আমাদের দেশে পাচার করা জায়েয হবে কি? জনৈক আলেম বলেন, এজাতীয় ব্যবসা হারাম। আসলেও কি তাই।

সমাধান: আমাদের দেশে থেকে অন্য কোনো দেশে কোনো কিছু পাচার করা বা আমাদের দেশে নিয়ে আসার দুটি পদ্ধতি রয়েছে: ১ সরকার কর্তৃক অনুমতির মাধ্যমে আমদানি ও রফতানি। ২ সরকারের বিধি নিষেধ অমান্য করে অবৈধভাবে আমদানি ও রফতানি করা। প্রথম পদ্ধতি বৈধ। দ্বিতীয় পদ্ধতি নাজায়েয ও অবৈধ। কারণ সরকার যদি দেশের কল্যাণে এমন কোনো আইন কানুন করে যা শরীয়ত বিরোধী নয়। তাহলে তা মান্য করা জনসাধারণের উপর আবশ্যক। এ বিধান শরীয়ত কর্তৃক বৈধ মালামালের ক্ষেত্রে। আর শরীয়ত কর্তৃক অবৈধ মালামালের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক অনুমতি থাকুক বা না থাকুক তা আমদানি ও রফতানি যেকোনো মুসলমানের জন্য অবৈধ। (সূরা নিসা- ৫৯, সহীহ বুখারী- ২৮৬৬, রদ্দুল মুহতার- ১৬৯)।

চুল লম্বা রাখা প্রসঙ্গে

(৯৩৮৮) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মতিফিল ঢাকা।

জিজ্ঞাসা: মেয়েদের মতো লম্বা লম্বা চুল রাখা পুরুষের জন্য ঠিক হবে কি?

সমাধান: পুরুষের জন্য চুল লম্বা রাখার যে তিন পদ্ধতি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে এই তিন পদ্ধতিতে চুল লম্বা রাখা হলো সুন্নতি পদ্ধতি। আর এই তিন পদ্ধতির বাহিরে গিয়ে চুল লম্বা রাখা; এটা হলো সুন্নাত বহির্ভূত পদ্ধতি। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে তিন পদ্ধতি প্রমাণিত আছে তা হলো এই জুম্মা, লিম্মা, ওফরা।

জুম্মা: মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত রাখাকে বলা হয়।

লিম্মা: মাথার চুল কানের লতির নিচে এবং কাঁধের উপরে রাখাকে বলে।

ওফরা: মাথার চুল কানের লতি পর্যন্ত রাখাকে ওফরা বলা হয়।

এই তিন পদ্ধতির বাইরে গিয়ে কেউ যদি নিজের ইচ্ছামতো চুল লম্বা রাখে আর তা মহিলাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, তাহলে তা নাজায়েয বলে বিবেচিত হবে। কারণ, মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীদের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন। এ থেকেই অনুমান করা যায় এটা কত বড় ভয়াবহ গুনাহ। (সহীহ বুখারী- ৫৬৫৬, মিশকাত- ৩৮০, ফাতহুল বারী- ৫৮৮৫, শামায়েলে তিরমিযী- ৩, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল- ৮/৩৩২, আহসানুল ফাতাওয়া- ৮/৭৯)।

দুরুদ ও কিয়াম প্রসঙ্গে

(৯৩৮৯) মুহাম্মদ ইউসুফ, পশ্চিম দিগর পানখালী, ফাসিয়াখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার।

জিজ্ঞাসা: চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলে ব্যাপক আকারে প্রচলিত দরুদ صلاة يا رسول الله عليكم অর্থাৎ সালাতুন ইয়া রাসূলাল্লাহ আলাইকুম ও কিয়াম অর্থাৎ ইয়ানবী সালামু আলাইকা এর ব্যাপারে উলামায়ের কিরামের অভিমত কী?

সমাধান: (ক) ফিকহে হানাফির গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়ন করে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, صلاة يا رسول الله عليكم ইহা হাদীসে বর্ণিত কোনো দুরুদ নয়; বরং মানুষের বানানো দুরুদ, যদি কোনো ব্যক্তি তা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে বা তাঁর রূহ উপস্থিত হওয়ার আকিদা বিশ^াস রেখে পাঠ করে, তাহলে শিরকের আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি এই আকিদা বিশ^াস না রেখে পড়ে, তাহলে কোনো অসুবিধে নেই। তবে হাদীসের বর্ণিত যে কোনো দুরুদ পাঠ করাই উত্তম।

হ্যাঁ, এ দরুদ পড়া জরুরি বা অধিক সাওয়াব মনে করে পড়লে বিদআত হবে।

(খ) কিছু কিছু ওয়াজ মাহফিলে এক শ্রেনির মানুষ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে দাড়িয়ে ‘ یا نبی سلام علیک’ পড়ার যে প্রচলন রয়েছে তা সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদীন থেকে প্রমাণিত নয়, অতএব যদি কোনো ব্যক্তি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে বা তাঁর রূহ উপস্থিত ও দর্শক (হাযির-নাযির) হওয়ার আকিদা-বিশ^াস রেখে উক্ত সালাম পড়ে তাহলে শিরিকের আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া এ আকিদা বিশ^াস না রেখেও যদি সাওয়াবের কাজ মনে করে মিলাদ মাহফিলে দুরুদ পড়াকে আবশ্যক মনে করে এবং কেউ না পড়লে তাকে তিরস্কার করে থাকে, তাহলে বিদআত হবে।

উল্লেখ্য, উক্ত সালামের বাক্য আরবি গ্রামার অনুযায়ী নবীজির শানে অসঙ্গতিপূর্ণ। (সুনানে আবি দাউদ- ২/৬৩৫, কিফায়াতুল মুফতী- ২/২২১, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম হাটহাজারী- ১/২৪৯, ইমদাদুল ফাতাওয়া- ১১/৩৫৩)।

পিতা মাতার সাথে অসদাচরণ প্রসঙ্গে

(৯৩৯০) মুহাম্মদ শিবলী, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।

জিজ্ঞাসা: জনৈক সরকারি কর্মচারি সরকারি বিধি মোতাবেক পেনশন (অবসর) গ্রহণের পর পেনশনের (এককালীন) প্রাপ্ত টাকা দ্বারা হজ্জ করার ইচ্ছা করেন। একথা শোনে তার বড় ছেলেও তার সাথে হজ্জে যাওয়ার বায়না ধরে। এতে পিতা কিছুতেই রাজী হন না। অবশেষে ছেলে নানা ধরনের ভয়-ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পিতাকে সম্মত হতে বাধ্য করে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে হজ্জ করা জায়েয হবে কি?

সমাধান: ছেলে হয়ে পিতার সাথে এমন আচরণ করা কবিরা গুনাহ। শরীয়ত পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার ও উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। প্রশ্নের বর্ণনা মতে ছেলে তার পিতাকে বল প্রয়োগ করে পিতার সম্পদ দিয়ে এভাবে হজ্জে যাওয়া তার জন্য জায়েয হবে না। (আল মুজামুল আওসাত- ৪/৬৬, রদ্দুল মুহতার- ৬/৪৫৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/২৮১)।

বর্গা গরুর লাভ্যাংশ বন্টন প্রসঙ্গে

(৯৩৯১) মুহাম্মদ আব্দুল মালেক খন্দকার, দক্ষিণ কাজিরচর, মুলাদী, বরিশাল।

জিজ্ঞাসা: একটি মাদি বাছুর তিন হাজার টাকা দাম ধরে বর্গা দেয়া হলো। প্রায় দু’বছর পালনের পর গরুটি একটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চাসহ গরুটি আট হাজার টাকা বিক্রি করা হলো। আট হাজার থেকে বর্গা দেয়ার সময় ধার্যকৃত তিন হাজার টাকা বাদ দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা বর্গাদার ও মালিকের মধ্যে বন্টন করা। অর্থাৎ বর্গাগ্রহীতা নিলো আড়াই হাজার টাকা। আর গরুর মালিক নিলো আড়াই হাজার এবং পর্বের ধার্যকৃত গরুর মল্য বাবত তিন হাজারসহ মোট সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। কেউ কেউ বলছেন, এভাবে গরু বর্গা দেয়া নাজায়েয। তাহলে গরু বর্গা দেয়ার শরীয়তসম্মত নিয়ম কী?

সমাধান: প্রশ্নে উল্লিখিত গরু বর্গা দেয়ার পদ্ধতিটি নাজায়েয এবং এভাবে বর্গাদার ও বর্গা গ্রহিতার মাঝে বর্গা দেয়া পশুর বিক্রিত মূল্য বণ্টন বা তার বাচ্চা ভাগাভাগির শর্তে বর্গা দেয়া নাজায়েয।

তবে হ্যাঁ, সর্বসম্মতভাবে গরু লালন-পালন করার সময় সীমা ঠিক করে তার ন্যায্য পরিশ্রমিক নির্ধারণ করে নেবে। আর গরুর মালিক গরু লালন-পালন সংক্রান্ত সকল খরচ বহন করবে। তাহলে উক্ত পদ্ধতি বৈধ বলে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে গরু ইজারা গ্রহীতা গরু লালনপালনের কারণে নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। আর গরু ও গরুর বাছুরসহ সকল মুনাফা গরুর মালিক পাবে। (মুহিতে বুরহানী- ১২/৫১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৪/৪৭১, কিফায়াতুল মুফতী- ১১/৪৮১)।

জোড়া লাগানো দুই বোনের বিবাহ প্রসঙ্গে

(৯৩৯২) মাওলনা মুহাম্মদ মুছা, চেয়ারম্যানহাট উত্তর মসজিদ, চরফ্যাশন, ভোলা।

জিজ্ঞাসা: জমজ দু’টি মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। এরা দু’জন পাশাপাশি জোড়া লাগানো। এছাড়া এদের সব কিছুই এক শরীরের মতোই ভিন্ন ভিন্ন। পেশাব-পায়খানা একই সাথে দু’জনকে করতে হয়। ক্ষুধা লাগলে দু’জনের একই সাথে ক্ষুধা লাগে। ঘুম ধরলেও দু’জনের ঘুম ধরে একই সাথে। এরা এখন বিয়ে যোগ্য। এদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?

সমাধান: যে জমজ দুটি মেয়ে এক সাথে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হলো, অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ যদি তাদেরকে চিকিৎসা ইত্যাদির মাধ্যমে পৃথক করতে পারে তাহলে পৃথক করে ফেলবে, পৃথক করার পর দুই ব্যক্তির নিকট দু’জনকে বিবাহ দিবে।

আর যদি তাদেরকে চিকিৎসা ইত্যাদির মাধ্যমে পৃথক করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদেরকে বিবাহ দেয়া জায়েয হবে না। কেননা, জমজ দুটি মেয়ে তারা পরস্পরে বোন হওয়ার কারণে উভয়কে এক সাথে এক ব্যক্তির নিকট বিবাহ দেয়া হারাম। অতএব তাদেরকে বিবাহ ছাড়াই থাকতে হবে। (সূরা নিসা- ২৩, দুররে মুখতার- হেদায়া- ২/২৮৮, ফাতাওয়া শামী- ১/২৬৩, ইমদাদুল ফাতাওয়া- ৪/৫০৮)।

মায়ের দুধের দাবি প্রসঙ্গে

(৯৩৯৩) মৌলভী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বালুয়াকান্দি মাদরাসা, হাসনাবাদ বাজার, রায়পুরা, নরসিংদী।

জিজ্ঞাসা: মহল্লার জনৈক ইমাম সাহেব বলেন, অল্প বয়সের শিশু মারা গেলে জানাযার আগে তার মায়ের কাছ থেকে দুধের দাবি ছাড়িয়ে নিতে হয়। আমি এটাকে বিদআত বললে, তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এ নিয়ে এলাকায় বিরাট হট্টগোল চলছে। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?

সমাধান: অল্প বয়সের শিশু মৃত্যুবরণ করলে জানাযার আগে তার মায়ের কাছ থেকে দুধের দাবি ছাড়িয়ে নিতে হবে, এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় না। অতএব এটা একটি ভিত্তিহীন দাবি, যা বর্জনীয়।

প্রকাশ থাকে যে, শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে পূর্ণ তাহকীক ব্যতীত, যেকোনো মন্তব্য করা এবং দলীল ছাড়াই সে মতের উপর স্থির হয়ে থাকা কখনোই জায়েয নয় এবং একে অপরকে গালি গালাজ করা; চাই তা শরীয়তের বিষয় নিয়ে হোক বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে সর্বাবস্থায় গুনাহে কবিরার অন্তর্ভুক্ত। এজন্য আমাদেরকে গালি-গালাজসহ সকল প্রকারের অশ্লীল ব্যবহার থেকে বেচে থাকা অপরিহার্য। (সহীহ মুসলিম- ১/৮, ফাতহুল মুলহিম- ১/৩৩৭, খাযানাতুল আকমাল- ১/৭৫)।

“আর্তুগ্রুল গাজী”/ সিনেমা দেখা প্রসঙ্গে

(৯৩৯৫) মুফতি হাসানুর রহমান, কুড়িগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: উম্মুল মাদারিসের সম্মানিত মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, বর্তমান বিশ্বে বহু আলোচিত উসমানি খেলাফত নিয়ে বানানো “আর্তুগ্রুল গাজী” ড্রামা/সিনেমা যা তুর্কি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি। সর্বসাধারণ থেকে নিয়ে মাদরাসার ছাত্ররাও এই সিনেমা নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যায়। উক্ত সিনেমা দেখা জায়েয আছে কি না? যদি জায়েয না হয়, তাহলে তার কারণসমূহ কী? এ বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ এবং বান্নুরি টাউন করাচি ও বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের মতামত কী? কুরআন-হাদীসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন!

সমাধান: “আর্তুগ্রুল গাজী” এটা তুর্কি ঐতিহাসিক ড্রামা/সিনেমা । যার মধ্যে খেলাফতে উসমানির প্রধান উসমানের বাবা আর্তুগ্রুল এবং তার গোত্রের অবস্থা সিনেমা আকারে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, এই সিনেমার সিরিজগুলো অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং হৃদয়স্পর্শী! যা পুরুষ- মহিলার অবাধ মেলামেশার স্বপ্ন দেখায়। ইতিহাসবিদগণের তথ্য অনুযায়ী এই সিনেমার ট্রেইলার/ঘটনাগুলো সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত। তিক্ত হলেও সত্য যে, অনেক ওলামায়ে কেরাম জনসাধারণকে এই সিনেমা দেখা থেকে সচেতন না করে, তাঁরা নিজেরাতো দেখেনই এবং অন্যকে দেখার জন্য দাওয়াতও দেয়। যা একজন আলেম হিসেবে নিন্দনীয় এবং পরিতাপের বিষয়। অথচ কুরআন হাদীসের আলোকে এই কথা প্রতীয়মান হয় যে, এই সিনেমা দেখা সম্পূর্ণ হারাম এবং নাজায়েয়।

দারুল উলূম দেওবন্দ এবং বান্নুরী টাউন করাচীসহ বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামগণ এই সিনেমা হারাম হওয়ার বিষয়ে একমত। সত্যান্বেষী ব্যক্তির জন্য উচিত হবে, কুরআন হাদীসের আলোকে সমাধান পাওয়ার পর এমন হারাম কাজ থেকে নিজে বেঁচে থাকা এবং সমাজকে বাঁচিয়ে রাখা! আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন॥ হারাম হওয়ার কারণ সমূহ:-

১। জরুরত না থাকা সত্ত্বেও ভিডিও করা।

২ হারাম মিউজিক ব্যবহার করা ।

৩। সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ।

৪। পুরুষ-মহিলার অবাধ মেলামেশা।

৫। সময়ের অপচয়।

৬। ফরয-ওয়াজিব ছেড়ে দেয়া।

৭। গুনাহকে গুনাহ মনে না করা।

৮। অবৈধ প্রেম-ভালবাসাকে প্রমোট করা।

৯। চোখের গুনাহ ইত্যাদি (সূরা লোকমান- ১১, রুহুল মাআনী- ২১-২২/৭৮, সহীহ বুখারী- ৭২৩, সুনানে তিরমিযী- ২৩৩, হাশিয়া ইবনে আবেদীন- ৯/৫৭৮, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৪০৬, ফাতাওয়ায়ে বাযযাযিয়া- ২/২০২)।

মহরের দায় মুক্তিপ্রসঙ্গে

(৯৩৯৬) এ.কে.এম মফিজুল ইসলাম, থানা পল্লী উন্নয়ন অফিসার, রেইসকোর্স, কুমিল্লা।

জিজ্ঞাসা: বাসর রাতে স্বামী স্ত্রীকে তার মহরানার দায় থেকে মুক্তি চাইলে; স্ত্রী খুশি মনে তা মাফ করে দিলে তা মাফ হবে কি?

উপর্যুক্ত জিজ্ঞাসার সমাধানে মাসিক মুঈনুল ইসলাম (অক্টোবর/৯৭ ইং সংখ্যায়) বলা হয়েছে যে, বাসর রাতে স্বামীর অনুরোধে স্ত্রী যদি সন্তুষ্ট চিত্তে তার মহর মাফ করে দেয়, তাহলে তা মাফ হয়ে যাবে। কারণ, মহর স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত হক বা অধিকার। এ অধিকার ইচ্ছা করলে, স্ত্রী যেমন গ্রহণ করতে পারে; তেমনি পারে বর্জন করতে।

অথচ একই প্রশ্নের উত্তরে মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৫ ইং সংখ্যায় লেখা হয়েছে যে, মহর আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি প্রাপ্য। এটি ঠিকমতো পরিশোধ করা স্বামীর উপর ফরয দায়িত্ব। তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করতে অক্ষম হলে স্ত্রীর নিকট সময় চেয়ে নেয়া যেতে পারে। মাফ চাওয়াটা চরম কাপুরুষতা বা প্রতারক মনোবৃত্তির পরিচায়ক। বিবাহের প্রথম রাতে লজ্জাবনতা স্ত্রীর হাত ধরে মহরানা মাফ চাওয়ার অভিনয় করাটা একটা ভন্ডামি। এটা শরীয়ত সম্মত কোন কাজ নয়। একই প্রশ্নের পরস্পর বিরোধী জবাবের সমাধান কী?

আরও পড়তে পারেন-

সমাধান: মহর স্বামীর পক্ষ হতে স্ত্রীর প্রাপ্য হক। তার প্রাপ্য হক সে যে কোনো সময় যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। অতএব, স্ত্রী যদি তার প্রাপ্য হক বাসর রাতে স্বামীর অনুরোধে কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি ছাড়া খুশি মনে মাফ করে দেয়, তাহলে মাফ হয়ে যাবে। তবে কোনো অপারগতা ছাড়া স্ত্রীর নিকট মহর মাফ চাওয়াটা চরম কাপুরুষতা ও হীনমন্যতার পরিচায়ক। উপর্যুক্ত জিজ্ঞাসার সমাধানে উভয় পত্রিকার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কেননা, মাসিক মুঈনুল ইসলামের মধ্যে উক্ত প্রশ্নের সমাধান দেয়া হয়েছে। আর মাসিক মদীনা পত্রিকায় মহর মাফ চাওয়ার বিধান কী, তা বর্ণনা করেছেন। মাফ করে দিলে মাফ হবে কি না? তা বলা হয়নি। আর মুঈনুল ইসলামে তাও বলা হয়েছিল।

মাসবুক ব্যক্তির তাশাহহুদ পড়া প্রসঙ্গে

(৯৩৯৭) এস.এম আবুল কাশেম, ক্লিপটন গ্রুপ, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযের জামাআতে শরীক হতে গিয়ে কোনো মুসল্লী কোনো এক রাকআতও পেল না, শুধু বৈঠক পেল। এমতাবস্থায় তাকে তাশাহহুদ পড়তে হবে কি?

সমাধান: ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়ন করে জানা যায় যে, মাসবুক ব্যক্তি নামাযের যে অংশে ইমামকে পেয়েছে ঐ অংশ থেকে অন্যান্য মুক্তাদির মতো ইমামের সাথে নামায আদায় করবে। সে হিসেবে শেষ বৈঠকে যেহেতু তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব; তাই মাসবুক ব্যক্তির উপরও মুক্তাদি হিসেবে তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যে মুসল্লি এক রাকআত পেল বা শুধু শেষ বৈঠক পেল, তাঁর জন্য তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব; যদি সে সেটি না পড়ে, তাহলে সে গুনাহগার হবে। তবে তার নামায আদায় হয়ে যাবে। (দুররে মুহতার- ৩/১৬৫ ও ২০০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১৪৯, আহসানুল ফাতাওয়া- ৩/৩৭৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া- ১০/৪০৯, ৪১০)।

ঝাঁড়ফুঁক প্রসঙ্গে

(৯৩৯৮) এইচ, এম নিজাম উদ্দিন হেলালী, বরইতলী, চকরিয়া, কক্সবাজার।

জিজ্ঞাসা: বিপদাপদ দূর, রোগ মুক্তি ও মনের আশা পূরণের জন্য ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয আছে কি?

সমাধান: যদি ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ এমন আমল ও দুআয়ে মাসুরার মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা কুরআন হাদীসের অন্তর্ভুক্ত ও কুফর-শিরক মুক্ত। তাহলে ঐ আমল ও দুআয়ে মাসুরার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর, রোগমুক্তি ও মনের সৎ আশা পূরণের জন্য ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ইত্যাদি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ; বরং সেবার নিয়তে করা সওয়াবের কাজ। (সহীহ বুখারী- ৫৭৩৬, ফাতহুল বারী- ১০/২৪০, ফাতহুল মুলহিম- ১০/২৭৬, রদ্দুল মুহতার- ৯/৬০০)।

টাখনুর নিচে কাপড় পড়া প্রসঙ্গে

(৯৩৯৯) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: আমরা জানি পুরুষের টাখনুর নিচে পায়জামা বা লুঙ্গি পরা হারাম। কিন্তু পায়ে মোজা থাকা অবস্থায় টাখনুর নিচে পায়জামা, লুঙ্গি বা প্যান্ট পরা জায়েয কি না?

সমাধান: অসংখ্য হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পা খালি হোক বা মোজা পরিহিত হোক, কোনো অবস্থাতেই টাখনু আবৃত হয়ে যায় এমন যে কোনো ধরনের কাপড়, পায়জামা, লুঙ্গি, প্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করা পুরুষের জন্য নাজায়েয ও কবীরা গুনাহ। (সহীহ বুখারী- ৫৭৮৭ ও  ৫৭৮৮, সুনানে তিরমিযী- ১৭২১, সহীহ মুসলিম- ১০৬)।

জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা প্রসঙ্গে

(৯৩৯৪) মুহাম্মদ রেজাউল করিম, হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: ১২ই রবিউল আউয়ালে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা এবং মৃত ব্যক্তির উপর সাওয়াব রিসানীর জন্য একত্রিত হওয়া ইত্যাদি কর্মগুলোকে বিদআত বলা হয়।

প্রশ্ন হলো- এগুলো কোন প্রকার বিদআত এবং এর অপকারিতা কী? এরূপ বিদআত কারীকে কি বিদআতী বলা যাবে? বিদআতের সংজ্ঞা কী?

সমাধান: মুহতারাম প্রশ্নকারী! আপনি মৌলিকভাবে চারটি বিষয় জানতে চেয়েছেন।

(ক) ১২ই রবিউল আউয়ালে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা, মৃত ব্যক্তির উপর সাওয়াব রিসানীর জন্য একত্র হওয়া ইত্যাদি কর্মগুলো কোনো প্রকারের বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।

(খ) এই বিদআতগুলোর অপকারিতা কী?

(গ) এ ধরনের বিদআতকারীকে কি বিদআতী বলা যাবে?

(ঘ) বিদআতের সংজ্ঞা কী?

(ক) ওলামায়ে কিরাম বিদআতের অভিধানিক ও পারিভার্ষিক অর্থকে কেন্দ্র করে বিদআতকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন।

১। বিদআত অভিধানিক অর্থে দুই প্রকার। যথা- বিদআতে হাসানাহ بدعت حسنة ও বিদআতে সাইয়িআহ بدعت سیئہ ।

২। বিদআত পারিভাষিক অর্থে দুই প্রকার। যথা- আমলগত বিদআত (بدعت في العمل) ও আকিদাগত বিদআত بدعه في العقائد والاعتقاد. । প্রথমভাগ হিসেবে ১২ই রবিউল আউয়ালে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করা, মৃত ব্যক্তির উপর সাওয়াব রিসানীর জন্য একত্রিত হওয়া ইত্যাদি কর্মগুলোকে বিদআতে সাইয়িআহ (بدعت سیئہ  ) এর অন্তর্ভুক্ত। আর ২য় ভাগ হিসেবে আমলগত বিদআত ( بدات في العمل) এর অন্তর্ভুক্ত। তবে এ ধরনের বিদআতের কারণে মানুষ ফাসেক ও বিদআতী হয়, কাফের বা মুশরিক হয় না।

(খ) প্রকৃতপক্ষে বিদআত (اشراک فی النبوۃ  )  অর্থাৎ নবুওয়াতে অংশীদার হওয়ার দাবি করা। কেননা, বিদআতের হাকীকত হলো, দ্বীন নয় এমন বিষয়কে দ্বীনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গুনাহকে ইবাদত মনে করা। এ জন্য সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেছেন,

 البدعۃ الى ابليسي احب من كل المعاصي لان المعاصي يتاب عنها والبدعۃ لا يتاب عنها.

 অর্থ- সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিদআত শয়তানের নিকট সবচেয়ে প্রিয়। কেননা, মানুষ (অন্যান্য) গুনাহ থেকে তাওবা করে, আর বিদআত থেকে (বিদআতকে ইবাদত মনে করার কারণে) তাওবা করে না। অতএব অন্যান্য গুনাহ যদিও আল্লাহর নাফরমানি, কিন্তু দ্বীনকে ধ্বংসকারী নয়, কিন্তু বিদআত এমন এক বড় গুনাহ, যা দ্বীনকে ধ্বংস করে। সুতরাং বিদআত ইবাদাত রূপে আল্লাহর নাফরমানি ও দ্বীনকে ধ্বংসকারী হওয়ার কারণে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিদআত থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।

(গ) এ ধরনের বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তিকে বিদআতী বলা যাবে।

(ঘ) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনের যুগসমূহের পর নব আবিষ্কৃত যে সকল বিষয়কে দ্বীনের বিষয় মনে করে করা হয়, তাকে বিদআত বলে। (আল ই’তিসাম- ১/২৭, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম হাটহাজারী- ১/৩০৭, ২৭৮ ও ২৭৭)।

ইতিকাফ অবস্থায় গোসল করা প্রসঙ্গে

(৯৪০০) তাছির আহমদ, দক্ষিণ বালিয়া, বাংলাবাজার, ভোলা।

জিজ্ঞাসা: মাসিক মুঈনুল ইসলামের বিগত কোনো এক সংখ্যায় ইতিকাফের বর্ণনায় দেখতে পেলাম যে, ইতিকাফ অবস্থায় ফরয গোসল ছাড়া অন্য কোনো গোসল করতে পারবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ একটা নদীমাতৃক দেশ। এদেশের মানুষ গোসল ছাড়া থাকতে পারে না। এমনকি অনেক লোক মাথা গরম হয়ে পাগলের মতো হয়ে যায়। কাজেই ওযর হিসেবে কি গোসল করতে পারবে? যদি না পারে করণীয় কী?

সমাধান: ওয়াজিব ইতিকাফকারী ও রমযানের শেষ দশকের ইতিকাফকারীর জন্য মানবীয় ও শরয়ী  এবং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। বের হলেই ইতিকাফ ভেঙে যাবে, সুতরাং ফরয গোসল ছাড়া গরম ও গায়ের দুর্গন্ধের কারণে গোসল করার জন্য বের হওয়া জায়েয নেই, তবে হ্যাঁ, যদি অতীব প্রয়োজন হয় এবং মসজিদে গোসলের পানি না পড়ার মতো গোসল এর সুব্যবস্থা থাকে, তাহলে মসজিদে গোসল করবে, অন্যথায় ভেজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে, আর যদি এর দ্বারাও প্রয়োজন পূরণ ও সমস্যা দূর না হয়, তাহলে ইস্তিঞ্জা করতে গিয়ে অজু পরিমাণ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাবান ইত্যাদি ছাড়া স্বাভাবিক গোসল করারও অবকাশ রয়েছে। (দুররে মুখতার- ৩/৫০১, নাহরুল ফায়েক- ২/৪৬, মারাকিউল ফালাহ- ৭০২, আহসানুল ফাতাওয়া- ৪/৫১৫)।

কসম ভঙ্গের কাফফারা প্রসঙ্গে

(৯৪০১) মুহাম্মদ আরমান উদ্দিন হেলালী, বানিয়ারচর সিকদার পাড়া, চকরিয়া, কক্সবাজার।

জিজ্ঞাসা: প্রতিদিন এক হাজার বার দরূদ শরীফ এবং এক হাজার বার কালিমা শরীফ পাঠ করার আমি শপথ করেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন যথারীতি আমল করার পর আর পাঠ করার সুযোগ হয়নি। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?

সমাধান: ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়নে জানা যায় যে কোনো ব্যক্তি যখন কসম করে তখন তার ওপর ওই কাজটা করা আবশ্যক হয়ে যায় (সেটা যদি ভালো কাজ হয়, তাহলে অবশ্যই পালনীয়। আর যদি খারাপ কাজ হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই বর্জনীয়) এবং সে যদি সে কাজ না করে বা কসম ভঙ্গ করে, তাহলে তার ওপর কসম ভঙ্গ করার কাফফারা আসবে।

আর কসম ভঙ্গ করার কাফফারা যতাক্রমে নিম্নে দেওয়া হলো-

১. একজন গোলাম আজাদ করা। ২. অথবা দশজন মিসকীনকে পেট ভরে দু’বেলা নিজ পরিবারের মতো খাবার খাওয়ানো। ৩. অথবা দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় প্রদান করা। যদি এগুলোর কোনোটিই পালন করা সম্ভব না হয় তাহলে ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোযা রাখা।

সুতরাং প্রশ্ন-উত্তর সূরতে যেহেতু আপনি দৈনিক ১০০০ বার দরূদ শরীফ ও ১০০০ বার কালিমায়ে তাইয়িবা পড়ার কসম করেছেন; আর সেটা কয়েকদিন আদায় করার পর আর আদায় করতে পারেননি। তাই উক্ত সূরতে আপনার কসমটি ভেঙে গেছে। ফলে আপনার উপর কসমের কাফফারা ওয়াজিব হবে। আর কাফফারা দেয়ার নিয়ম উপরে উল্লেখ আছে। তথা গোলাম আযাদ করা। আর যেহেতু বর্তমান যুগে গোলামের প্রচলন নেই; তাই এটা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয়টা যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেগুলো দিয়ে কাফফারা আদায় করবেন। আর যদি এই তিন সূরতের কোনোটাই সম্ভব না হয়, তাহলে চতুর্থ তথা আপনি ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোযা রাখলে, আপনার কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলার আমল করার তৌফিক দান করুন আমীন। (সূরা মায়েদা- ৮৯, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ২/৩০০, ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া- ২৭১-২৭২, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ- ১২/৪৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ২/৬৮)।

(৯৪০২) হাফেয মুহাম্মদ আবুল কাশেম খান বারহাট্টা, নেত্রকোনা।

জিজ্ঞাসা: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাদের মধ্যে কে কে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং হযরত হামযা (রাযি.) এর হত্যাকারী কে ছিলো।

সমাধান: ইতিহাস ও সিরাতের কিতাবাদি অধ্যয়নে জানা যায় যে, মহানবী (সা.) এর চাচাদের মধ্য হতে মাত্র দুজন চাচা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। যথা হযরত হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব ও হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাযি.)। হুযূর (সা.) এর প্রিয় চাচা হযরত হামযা (রাযি.) এর হত্যাকারী হলো ওয়াহশী। যিনি জুবায়ের ইবনে মুতঈমের গোলাম ছিলো। তবে অবশ্যই পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছিলেন। (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) (সিরাতুন নববী লি ইবনে হাশেম- ৩-৪/১২২, আসাহহুস সিয়ার- ৩ ও ১০৫, সিরাতুল মোস্তফা- ২/৪০০-৪০১)।

এক ব্যক্তির একাধিক জানাযা প্রসঙ্গে

(৯৪০৩) রশীদ আহমদ, দারুল ফিফজ আলিয়া মাদরাসা, শাহবাগ, জকিগঞ্জ, সিলেট।

জিজ্ঞাসা: আমাদের মহল্লার জনৈক ব্যক্তি লন্ডনে মারা যাওয়ার পর, সেখানে তার ওয়ারিশগণ তার নামাযে জানাযা পড়েন। পরে দেশে আনার পর তার ওয়ারিশগণ আবার তার জানাযা পড়তে পারবেন কি?

সমাধান: ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়ন করে জানা যায় যে মৃত ব্যক্তির ওলী যদি একবার মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে অথবা অন্য কাউকে পড়ানোর অনুমতি প্রদান করে অথবা অন্যরা জানাযার নামায পড়ার সময় ওলী/অভিভাবক সেখানে নামাযে শরীক হয়, তাহলে পুনরায় জানাযার নামায পড়া জায়েয নেই।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত সূরতে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণের মধ্যে যদি ওলীও থাকে তাহলে উক্ত মৃত ব্যক্তিকে দেশে আনার পর পুনরায় জানাযার নামায পড়া জায়েয হবে না। তাই তা বর্জনীয় এবং পরিহারযোগ্য। (ফাতহুল কদীর- ২/১২৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/২২৫, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৪৭, বাহরুর রায়েক- ২/৪৭)।

তিলাওয়াতে সিজদা প্রসঙ্গে

(৯৪০৪) কামরুজ্জামান, দারুল উলূম হাফেজিয়া মাদরাস, জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা।

জিজ্ঞাসা: কোনো ব্যক্তি সিজদার আয়াত লিখলে অথবা কন্ঠস্থ করলে, তাকে সিজদা করতে হবে কি?

সমাধান: যদি কোনো ব্যক্তি সিজদার আয়াত লিখে, তার উপর সিজদা করা আবশ্যক নয়। আর কেউ যদি একস্থানে নির্দিষ্ট কোনো সিজদার আয়াত কন্ঠস্থ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য একাধিকবার পাঠ করে, তাহলে তার উপর কেবল একবার সিজদাহ করা ওয়াজিব হবে। (দুররে মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার- ৪/৫৫৪, জামেউস সগীর- ১০২, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৫৫৮, হেদায়া- ৭/৬৬)।

মাকরূহ শব্দের তাহকীক

(৯৪০৫) ইসমাঈল মিয়া, ডিসি রায় রোড, ঢাকা।

জিজ্ঞাসা: মাকরুহ শব্দের অর্থ কি? মাকরূহে তানযিহী এবং তাহরিমীর মধ্যে পার্থক্য কী?

সমাধান: মাকরূহ শব্দের অর্থ অপছন্দনীয় ও নিন্দিত। মাকরূহে তানযিহী ও তাহরিমীর মধ্যে পার্থক্য হলো, তানজিহী হচ্ছে অপছন্দনীয় ও সহনীয় পর্যায়ের নিন্দিত এবং তার কর্তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে না। আর তাহরিমী হচ্ছে হারামের কাছাকাছি পর্যায়ের নিন্দিত এবং তার কর্তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মোটকথা, মাকরূহে তাহরিমী পরিত্যাজ্য। (তা’রিফাত- ২২৫, রদ্দুল মুহতার মাআ দুররিল মুখতার- ১/৪৩৮, ওয়াজিয ফি উসূলিল ফিকহ- ৪৫)।

হজ্জ প্রসঙ্গে

(৯৪০৬) কফিল উদ্দিন, ঢাকা।

জিজ্ঞাসা: জনাব খালেদ সাহেবের স্ত্রীর উপর গত বছর হজ্জ ফরয হয়েছে এবং এ বছর তার ফুফাতো ভাই স্বীয় স্ত্রীকে নিয়ে হজ্জে যাচ্ছে, সাথে এলাকার দু’জন প্রতিবেশী মহিলা তাদের স্বামীসহ একই কাফেলাতে যাচ্ছে। এখন খালেদ সাহেবের স্ত্রী তাদের সাথে যেতে পারবে কি না?

সমাধান: মহিলার হজ্জ আদায়ের জন্য স্বামী বা মাহরাম থাকা শর্ত। স্বামী বা মাহরাম ব্যতীত সে হজ্জে যেতে পারবে না। ফুফাতো ভাই যেহেতু মাহরাম নয়, তাই তার সাথেও যাওয়া যাবে না। (সহীহ মুসলিম- ৪১৩, বাহরুর রায়েক- ২/৫৫২, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী- ১/২১৯)।

মালে নিসাব প্রসঙ্গে

(৯৪০৭) মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম, দেওয়াননগর, হাটহাজারী।

জিজ্ঞাসা: সালাম বাদ জানার বিষয় হলো এই যে, কী পরিমাণ টাকা থাকলে যাকাত, হজ্জ ও কুরবানী ওয়াজিব হবে? আশা করি বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে উপকৃত করবেন।

সমাধান: নিত্য প্রয়োজনীয় খরচাদি এবং ঋণ ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য পরিমাণ টাকা তথা- বর্তমান বাজার মূল্য হিসাবে ৬৩,০০০/-  (তেষট্টি হাজার) টাকা থাকলে বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যাকাত ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে কুরবানীর দিনগুলোতে উক্ত পরিমাণ টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবে। আর পরিবারস্থ লোকদের ভরণ-পোষণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খরচাদি ব্যতীত হজ্জে আসা-যাওয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকলে হজ্জ ফরয হবে।  হিদায়া- ১/১৮৫, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৪২৬ ও ২৯৬-৯৭, দুররুল মুখতার- ৯/৪৫৩)।

কুরবানীতে শরীক করা প্রসঙ্গে

(৯৪০৮) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: কুরবানীর পশু ক্রয় করার পরে অন্য কোনো ব্যক্তিকে উক্ত পশুতে শরীক করা যাবে কিনা? যেমন এক ব্যক্তি ১টি গরু ক্রয় করার পর উক্ত গরুতে আরও তিন চার জন শরীক করতে চাইলে শরীক করতে পারব কী?

সমাধান: কুরবানীর পশু ক্রয় করার সময় অন্য কাউকে শরীক করার ইচ্ছা বা নিয়্যাত থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থায় অন্যকে শরীক করা জায়েয আছে। তবে উত্তম হলো, ক্রয় করার পূর্বে যে কয়জনকে শরীক করবে তা নির্দিষ্ট করে নেওয়া। (ফাতাওয়ায়ে শামী- ৯/৪৬০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া- ২৬/৩১৪)।

কুরবানী প্রসঙ্গে

(৯৪০৯) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: যদি কোনো ব্যক্তি পশু কুরবানীর মান্নত করে অতঃপর তা কুরবানীর শরীকের মাধ্যমে আদায় করে তাহলে এর দ্বারা তার মান্নত আদায় হবে কি না? এবং অন্যান্য শরীকদারদের কুরবানীতে কোনো সমস্যা হবে কি না?

সমাধান: যদি ঐ ব্যক্তি পশু থেকে গরু/মহিষের মতো পশু উদ্দেশ্য নেয়, তাহলে শরীকী কুরবানী দ্বারা তার মান্নত পূরণ হবে না; বরং তার পুরো একটি গরু/মহিষ কুরবানী করতে হবে। আর যদি পশু থেকে তার উদ্দেশ্য হয় ছাগল, ভেড়ার মতো পশু, তাহলে কুরবানীর পশু শরীক হয়ে মান্নত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে এবং এর দ্বারা অন্যান্য শরীকদারদের কুরবানীতে কোনো অসুবিধা হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে- ৪/২৪৪, রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার- ৯/৪৭২)।

নামের শুরুতে মুছাম্মৎ ব্যবহার প্রসঙ্গে

(৯৪১০) আয়েশা সিদ্দিকা শিরীন, কাঁচিঝুলি, মসজিদ রোড, ময়মনসিংহ।

জিজ্ঞাসা: মুছাম্মৎ শব্দের অর্থ কী? মেয়েদের নামের পূর্বে মুছাম্মৎ ব্যবহারের গুরুত্ব কতটুকু।

সমাধান: “মুসাম্মৎ/মোসাম্মত” শব্দটি আরবি মোসাম্মাতুন (مسماۃ) থেকে উদ্ভূত। আরবি মোসাম্মাহ (مسماۃ) স্ত্রীলিঙ্গ, (مسمی) পুংলিঙ্গ।

শব্দটি “আত-তাসমিয়া” ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য (مصدر) থেকে গঠিত কর্ম বাচক বিশেষ্যের (مفعول) একবচন স্ত্রীলিঙ্গ, (واحد مؤنث) এর রূপ-(সিগাহ)। অর্থ হলো নাম রাখা হয়েছে এমন একজন মহিলা। সে হিসেবে কারো নাম যদি মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম হয়, তার অর্থ হবে মেয়েটির নাম রাবেয়া বেগম রাখা হয়েছে।

আরবি থেকে আগত মোসাম্মৎ শব্দের উৎস-অর্থ যাই হোক না কেন, বাংলায় শব্দটি এখন একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও অর্থ ধারণ করেছে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অভিধান অনুযায়ী মোসাম্মৎ শব্দের অর্থ মুসলিম মহিলাদের নামের পূর্বে ব্যবহৃত উপাধি।

নামের পূর্বে মুহাম্মদ/মুসাম্মৎ লেখার প্রচলনটা শুধু উপমহাদেশেই রয়েছে। ইংরেজ আমলে হিন্দুরা ব্যাপকহারে তাঁদের নামের পূর্বে শ্রী ব্যবহার করতো, অনেক মুসলমান তখন না বুঝেই হিন্দুদের মত নিজেদের নামের পূর্বে শ্রী লেখা শুরু করে। তখনকার ওলামায়ে কেরাম নিজেদের স্বতন্ত্রতা ধরে রাখতে পুরুষের নামের পূর্বে মুহাম্মদ এবং মহিলাদের নামের পূর্বে মোসাম্মাৎ যুক্ত করার উৎসাহ দিতেন বলে জনশ্রুতি আছে। তবে বর্তমানে এর তেমন কোনো প্রয়োজন না থাকলেও “উরফ” হিসাবে পুরুষের নামের পূর্বে মুহাম্মদ এবং মহিলাদের নামের পূর্বে মোসাম্মৎ ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা নেই। বাকি সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করা যাবে না।

(৯৪১১) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: এক পশুর সামনে দ্বিতীয় পশু জবেহ করা ঠিক হবে কি না? অনেকে এক পশুর সামনে একাধিক পশু জবেহ করে। তাদের এই কাজ কতটুকু শরীয়ত সম্মত।

সমাধান: এক পশুর সামনে দ্বিতীয় পশু জবেহ করা নিষেধ এবং এটি একটি বর্জনীয় কাজ।

হযরত উমর (রাযি.) এক ছাগলের সামনে দ্বিতীয় ছাগল জবেহ করতে নিষেধ করতেন। (মুসান্নিফ আব্দুর রাজ্জাক- ৪/৪৯৪, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া- ২৬/১৫৫।

আকীকা প্রসঙ্গে

(৯৪১২) ফাতেমা আক্তার, ফেনী।

জিজ্ঞাসা: সম্মানীত মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার আবেদন এই যে, আমরা লোকমুখে একটি কথা শুনতে পাই যে, সন্তানের জন্য দেয়া আকীকার পশুর গোশত নাকি তার মা খেতে পারে না। এখন আমার জানার বিষয় হলো, শরয়ী দৃষ্টিতে কথাটি কতটুকু সত্য।

সমাধান: শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রশ্নোল্লিখিত কথাটি একেবারে ভিত্তিহীন একটি কথা। বরং আকীকার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হলো যে, আকীকার গোশত খাওয়া এবং সদকার ক্ষেত্রে এটি কুরবানীর মতো অর্থাৎ কুরবানীর গোশত যেমন সবাই খেতে পারে তেমন আকীকার গোশতও সবাই খেতে পারবে। সন্তানের মাতা-পিতা, দাদা-দাদীসহ সকল আত্মীয় স্বজনরা খেতে পারবে। (মিশকাত- ১/২৭, মুয়াত্তা মালেক- ১৮৬, আওজাজুল মাসালেক- ৯/২২১)।

(৯৪১৩) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: মুহতারাম মুফতি সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হলো এই যে, কুরবানীর গরুতে আকীকার অংশ শরীক করা সহীহ হবে কি না?

সমাধান: কুরবানীর গরুতে আকীকা করাও সহীহ হবে এবং কুরবানী করাও সহীহ হবে। কারো অংশ কুরবানী হিসেবে আর কারো অংশ আকীকা হিসেবে। কিন্তু সাত শরীকের অতিরিক্ত হতে পারবে না। (বাদায়েউস সানায়ে- ৪/২০৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৩৫১, রদ্দুল মুহতার- ৯/৫৪০)।

(৯৪১৪) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: নাবালেগ বাচ্চার আযানের হুকুম কী? বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: নাবালেগ বাচ্চা যদি বুঝ সম্পন্ন হয়, তথা-কিবলা ও নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবগত থাকে, তাহলে তার আযান ফুকাহায়ে কিরামের সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ বিহীন জায়েয। আর যদি নাবালেগ বাচ্চা অবুঝ হয়, তথা কিবলা ও নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অনবগত, তাহলে তার আযান সহীহ হবে না। ফলে পুনরায় আযান দেয়া মুস্তাহাব। (হাশিয়া ইবনে আবেদীন- ২/৭৭, ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া- ১/৫৩-৫৪, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১১০)।

(৯৪১৫) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: বিদআতি ব্যক্তি পেছনে নামায পড়ার শরয়ী হুকুম এবং এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কিরামের বিশুদ্ধতম মতটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: বিদআতি ব্যক্তি যদি এমন কোনো কাজ বা এমন কোনো আকীদা পোষণ না করে; যেগুলো কুফরীর পর্যায়ে পড়ে। তাহলে তার পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয আছে। পক্ষান্তরে বিদআতি ব্যক্তি যদি এমন কোনো আকীদা পোষণ করে অথবা এমন কোনো কাজ করে, যেগুলো কুফরীর পর্যায়ে পড়ে, তাহলে তার পেছনে নামায পড়া কোনো অবস্থাতেই জায়েয হবে না। আর এটাই ফুকাহায়ে কিরামের বিশুদ্ধতম মত। (বাহরুর রায়েক- ১/৬১০-৬১১, তুহফাতুল ফুকহা- ১/২২৯, মারাকিউল ফালাহ- ৩০৩)।

(৯৪১৬) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: নামাযরত অবস্থায় যদি কোনো মুসল্লির এক চতুর্থাংশ পরিমাণ সতর প্রকাশিত হয়ে যায়, তাহলে তার নামাযের হুকুম কী?

সমাধান: ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ অধ্যয়নের দ্বারা এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, নামাযরত অবস্থায় যদি কোনো মুসল্লির  কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ সতর প্রকাশিত হয়ে যায় এবং এমতাবস্থায় তার উপর তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়, তাহলে ফুকাহায়ে কিরামের বিশুদ্ধতম মত হলো, এ মুসল্লির নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। (হাশিয়ায়ে তাহতবী- ৩৩৭, ‏আলফাতাওয়া আলওয়ালওয়ালজিয়া- ১/১২৫, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ২/২২)।

(৯৪১৭) নামঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: ঈদের নামাযে সানা কখন পড়বে। অতিরিক্ত তিন তাকবীরের পূর্বে নাকি পরে এবং এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কিরামের বিশুদ্ধ মত কোনটি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ অধ্যয়নে এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা তথা উভয় ঈদের নামাযে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই তাকবীরে তাহরীমার পর, অতিরিক্ত তিন তাকবীরের পূর্বে সানা পড়ে নিবে। এটাই ফুকাহায়ে কিরামের বিশুদ্ধ মত। (হাশিয়ায়ে ইবনে আবদীন- ৩/৬১, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮০, মুহিতে বুরহানী- ২/৪৮০, বাহরুর রায়েক- ২/২৮০)।

গুরুজনকে পায়ে ধরে সালাম করা প্রসঙ্গে

(৯৪১৮) তাজকিরা রহিম, নতুনপাড়া, মাস্টার বাড়ী, নারায়ণতলা, সুনামগঞ্জ।

জিজ্ঞাসা: সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমরা গুরুজনকে পায়ে ধরে সালাম করে থাকি। আবার এভাবে সালাম না করলে বেআদব বলে মনে করা হয়। প্রকৃত পক্ষে শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বামী, শ^শুর-শাশুড়ি, মাতা-পিতা এবং অন্যান্য মুরুব্বীগণকে সালাম করার কি এটাই নিয়ম।

সমাধান: ইসলামের বিধান হচ্ছে, মাতা-পিতা ও স্বামীর সামনে হলে সালাম করবে এবং প্রয়োজন মনে করলে মুছাফাহা, মুয়ানাকাও করতে পারবে। আর শ^শুর-শাশুড়িকে শুধুমাত্র সালাম করবে, এর বেশি নয় এবং সালাম করার সুন্নত ও ইসলামী পদ্ধতি হচ্ছে মুখে স্পষ্টভাবে আসসালামু আলাইকুম বলা। অতএব কারো সম্মান প্রদর্শনের জন্য মাথা নত করে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা ইসলামী শরীয়া বিরোধী সংস্কৃতিরই অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের জন্য এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। (সুনানে তিরমিযী- ২৭২৭ ও ২৭২৮, তবরানী- ১/৩৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৪২৫, দুররে মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার- ৯/৫৫০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া- ২৮/২২০)।

জামাতে নামাযে প্রয়োজনীয় আহ্বান প্রসঙ্গে

(৯৪১৯) আবু বকর, ঢাকা।

জিজ্ঞাসা: আমার জানার বিষয় এই যে, আমাদের দেশে প্রায় মসজিদে দেখা যায় নামাযের জামাত দাড়ানোর পূর্বে মুয়াজ্জিন সাহেব দাড়িয়ে বলেন, ‘দাড়িয়ে কাতার সোজা করি, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখি’ তখন ইমাম এবং মুসল্লিগণ দাড়ান এবং ইমাম সাহেব নামায পড়ান। এইভাবে জামাতে নামায আদায় করলে, শরীয়তের আলোকে নামায ও জামাতের কি কোনো সমস্যা হবে?

সমাধান: ঈমানের পর সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে নামায। আর প্রত্যেক কাজের একটা পরিপূরক থাকে; যার উপর ওই কাজের পরিপূর্ণ সাওয়াব-পাওয়া নির্ভরশীল হয়। তেমনি নামাযের একটা পরিপূরক হচেছ, কাতার সোজা করা। কেননা, হাদীস শরীফে কাতার সোজা করাকে নামাযের পরিপূরক বলা হয়েছে। নামায আদায়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ সাওয়াব অর্জন করতে হলে, যেমনি তার সকল সুন্নত ও মুস্তাহাবের প্রতি যতœবান হতে হয়, তেমনি নামায খুশু খুযুর সাথেও আদায় করতে হয়। নামাযে খুশু খুযু বিনষ্টকারী সকল কাজ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর যে সকল কারণে নামাযের খুশু খুযু নষ্ট হয়, তন্মধ্যে একটা হচ্ছে নামাযের মধ্যে মোবাইল ফোন বেজে ওঠা, যা মুসল্লির নামাযের খুশু খুযু নষ্ট করে। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ এবং সাহাবায়ে কিরামের আমল ও ফিকাহবিদদের মতামত দ্বারা একথা প্রতীয়মান হয় যে, মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব অথবা ইমাম সাহেব যদি নামায শুরু হওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন যে, “দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করি, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখি” অতঃপর জামাতের সাথে নামায আদায় করা হয়, তাতে জামাতের সাথে নামায আদায়ে কোনো প্রকার সমস্যা হবে না। (সূরা মায়েদা- ২, শরহুল মুসলিম লিন নববী হাদীস নং- ৪৩৬, আবু দাউদ হাদীস নং- ৬৬৩, দুররে মুখতার মাআশ শামী- ২/৩৭১)।

(৯৪২০) মুহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন পাটওয়ারী, জাফরাবাদ টাইটেল মাদরাসা, পুরানবাজার, চাঁদপুর।

জিজ্ঞাসা: কোনো এক বিরাট জনসমাবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুকাব্বিরগণের রুকু-সিজদার তাকবীর বলতে আগ-পিছ করার কারণে কেউ রুকুতে কেউ সিজদায় চলে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন জামাতে অংশগ্রহণকারী সবাইকে নামায পুনরায় পড়তে হবে নাকি যারা উল্টাপাল্টা করেছে শুধু তাদেরকে পুনরায় পড়তে হবে? একাকী পড়তে হবে, না জামাতের সাথে পড়তে হবে?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী যে সমস্ত মুসল্লিগণ রুকু এবং সিজদায় আগ-পিছ হওয়ার পরও ইমামের সহিত সমস্ত রুকনগুলো সামান্য সময়ের জন্য হলেও পেয়েছে। তাদের নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর যাদের কোনো একটা রুকন ছুটে গিয়েছে, অর্থাৎ তারা ইমামের পূর্বে রুকু অথবা সিজাদায় চলে গিয়েছে, কিন্তু ইমাম ওই রুকু বা সিজদায় যাওয়ার পূর্বে তারা উঠে গিয়েছে। সামান্য সময়ের জন্যও ইমামকে উক্ত রুকনে পায়নি। তখন তাদের নামায পুনরায় পড়তে হবে।

হ্যাঁ যদি ইমামের পরে যায় এবং সামান্য সময় ইমামের সাথে শরীক হয়, তখন নামায সহীহ হয়ে যাবে। যাদের নামাযে সমস্যা হয়েছে, তাদের নামাযকে পুনরায় পড়তে হবে। জামাতে অংশগ্রহণকারী সকলের পড়া লাগবে না। (দুররে মুখতার- ২/৬২৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া- ১/১৬২, বাহরুর রায়েক- ২/১৩৬, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া- ৯/২৮৬)।

(৯৪২১) মোশাহিদুল ইসলাম, বি-বাড়ীয়া।

জিজ্ঞাসা: (ক) যদি কোনো মসজিদে মাওলানা, মুফতি ও মুহাদ্দিস সাহেবগণ থাকে এবং সেখানে একজন অবিবাহিত হাফেয সাহেবও থাকে। আর অবিবাহিত হাফেয সাহেব যদি ইমামতি করে, তাহলে তার পেছনে মাওলানা, মুফতি ও মুহাদ্দিস সাহেবের নামায সহীহ হবে কি হবে না?

(খ) যদি কোনো আলেম বিমা এর সাথে জড়িত থাকে এবং সে মানুষকে ধোকা দেয়, আবার চুরি করে ধরাও পড়েছে। এমন আলেমের পেছনে নামায পড়ার হুকুম কী?

(গ) যদি কোনো আলেম এ কথা বলে, যে ব্যক্তি কোনো ওয়াহাবীর ঘরে খানা খাবে, তার বউ তালাক হয়ে যাবে। অতঃপর সে নিজেই ওয়াহাবীদের ঘরে খেলো, তাহলে তার বউ তালাক হবে কি না? আর এমন বলনে ওয়ালার পেছনে নামায পড়ার হুকুম কী?

বি.দ্র. উপর উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর জবাব দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: (ক) মসজিদের মাঝে যদি ইমাম সাহেব নির্ধারিত থাকে তাহলে তার অনুমতি ব্যতীত অন্য কারো ইমামতি করার অগ্রাধিকার নেই। তার অনুপস্থিতি যে ব্যক্তি নামাযের বিধান সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা জ্ঞাত সেই নামায পড়াবে। প্রশ্নের বর্ণনা মতে হাফেয সাহেব যদি নামাযের বিধান সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না রাখে তাহলে তাদের উপস্থিতিতে তার জন্য নামায পড়ানো মাকরুহে তাহরীমি হবে।

হ্যাঁ, তা সত্ত্বেও যদি তার নামায পড়ানোর উপর তার থেকে যোগ্য লোকেরা এবং কওমের লোকেরা সন্তুষ্ট থাকে তাহলে মাকরূহ হবে না।

(খ) প্রশ্নের বর্ণনা মতে বাস্তবেই যদি কোনো আলেমের মাঝে প্রশ্নোক্ত বিষয় বিদ্যমান থাকে এবং সে তা থেকে ফিরে না আসে। তাহলে এমন আলেমের পেছনে নামায পড়া যাবে না। কেউ যদি পড়ে নেয় তাহলে মাকরূহে তাহরীমির সাথে নামায আদায় হয়ে যাবে।

(গ) এই দেশে ওয়াহাবী বলতে ঐ সকল লোকদেরকে বুঝায় যারা প্রকৃত পক্ষে সুন্নাতের অনুসারী, তাদের ঘরে খাবার খাওয়ার দ্বারা কারো স্ত্রী তালাক হবে না। সুতরাং সে নিজেও ওয়াহাবীর ঘরে খাবার খাওয়ার দ্বারা তার স্ত্রীর উপরও তালাক পতিত হবে না। এমন কথা বলনেওয়ালার পেছনে নামায পড়ার জন্য দেখতে হবে, তার আকীদা-বিশ^াস কেমন; যদি এমন আকীদা পোষণ করে যা শিরক যেমন- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর জাতি নূর দ্বারা সৃষ্টি অথবা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিমুল গায়েব ইত্যাদি। তাহলে তার পেছনে নামায সহীহ হবে না। আর যদি এমন আকীদা পোষণ করে যা বিদআত যেমন- প্রচলিত মিলাদ কিয়াম জায়েয ইত্যাদি, তাহলে তার পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। (রদ্দুল মুহতার- ৩/৫২৫ ও ৫২৭, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৩৮৬ ও ৩৮৯, আবু দাউদ হাদীস নং- ৫৯৪, আশবাহ ওয়ান নাযায়ের- ১/১৫৮, মাবসুত- ৬/৭৯)।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।