জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগ

ব্যবসায়িক স্বার্থে কমিশন দেয়া প্রসঙ্গে

(৯৩১৫) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা।

জিজ্ঞাসা: আমি একজন কাপড় ব্যবসায়ী, আমার আশেপাশে অনেক বস্ত্র প্রতিষ্ঠান আছে। যে কারণে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা করতে হয়। পাইকাররা আমার কাছ থেকে বেশিরভাগ বাকিতে লেনদেন করে। সুযোগ সুবিধা না পেলে তারা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এখন তাদেরকে ধরে রাখা এবং বাকির পরিবর্তে নগদে লেনদেনের উপর ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটা নিয়ম করতে চাচ্ছি। তা হলো-

বছরে তাদেরকে একটা টার্গেট নির্ধারণ করে দিব। অর্থাৎ তাদেরকে বলব, বছরে আমার সাথে ৫ লাখ টাকার লেনদেন করতে পারলে এবং লেনদনকালীন বিশেষ প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার মধ্যে বাকী সীমাবদ্ধ রেখে বছর শেষে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে পারলে ৫% কমিশন দেব।

এখন আমার জানার বিষয় হলো, লেনদেনের ক্ষেত্রে এধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয আছে কি না, জানালে উপকৃত হবো।

সমাধান: ব্যবসায় বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতার জন্য কমিশন ঘোষণা উক্ত ব্যবসায়ীর ঐচ্ছিক ব্যাপার। যদি শরয়ী ব্যবসা নীতির পরিপন্থি কোনো বিষয় এতে বিদ্যমান না থাকে, তবে শরীয়তও এর উপর নিষিদ্ধারোপ করে না। প্রশ্নোক্ত বর্ণনানুযায়ী ব্যবসায়িক উন্নতির স্বার্থে তথা ক্রেতা ধরে রাখা এবং তাদেরকে বাকির পরিবর্তে নগদ লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে নির্ধারিত কমিশন দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয। এতে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ৮/৬০, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ৯/৪৮, দুররুল মুখতার- ১৫/১৭৬, রদ্দুল মুহতার- ১৫/১৮২)।

বন্ধকী জমিতে চাষাবাদ প্রসঙ্গে

(৯৩১৬) মুহাম্মদ হযরত আলী, নওগাঁ।

জিজ্ঞাসা: আব্দুল মালেকের টাকার প্রয়োজন বিধায় আব্দুল খালেক থেকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা হাওলাত নিল। আব্দুল খালেক টাকা দেয়ার সময় আব্দুল মালেক থেকে জামানত স্বরূপ ১০ কাঠা জমি নিয়ে বললো, যতোদিন টাকা ফেরত দেয়া হবে না, ততোদিন আমি জমি আবাদ করবো এবং বাৎসরিক হারে উক্ত টাকা থেকে ২০০ টাকা করে বিয়োগ করবো। এভাবে আব্দুল খালেক জমিন আবাদ করে ভোগ করছেন। জামানতের জমি এভাবে চাষাবাদ করে ভোগ করা তার জন্য জায়েয হবে কি-না, অনুগ্রহ করে জানাবেন।

মাধান: বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকী বস্তু থেকে কোনো ধরনের উপকার হাসিল করতে পারবে না। কারণ, তা বিনিময়হীন লাভ, যা ঋণের কারণে অর্জিত হয়। আর হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, প্রত্যেক এমন ঋণ; যদ্বারা কোনোরূপ উপকার অর্জন হয়, তাই (উপকার) সুদ। আর সুদ সর্বাবস্থায় হারাম। যদিও ঋণগ্রহীতা (জমির মালিক) উপকার গ্রহণের অনুমতি দেয়। কেননা, তিনি হয়তো সমাজে উপকার গ্রহণের প্রচলন থাকায় অথবা চুক্তির শর্তের বাধ্যবাধকতার কারণে অনুমতি দিচ্ছেন। আর এই উভয় অবস্থাতেই অনুমতি দেয়ার অর্থ সুদের ক্ষেত্রে অনুমতিদান হয়ে যায় বিধায় এই অনুমতি জায়েয হওয়ার জন্য ধর্তব্য নয়।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আব্দুল খালেকের জন্য বন্ধকী জমি চাষাবাদ করে ভোগ করা জায়েয হবে না। কারণ, তা বিনিময়হীন লাভ; যা সুদের অন্তর্ভুক্ত। যদিও চাষাবাদের বাৎসরিক বিনিময় ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে জায়েয করার জন্য। কিন্তু তা (দুইশত টাকা) ১০ কাঠা জমির বাৎসরিক ন্যায্য ভাড়া হয় না। তা সত্ত্বেও ঋণ গ্রহীতা (জমির মালিক) চাষাবাদের অনুমতি দিয়েছে ঋণের কারণে বা ২০০ টাকার বিনিময়ে, চাষাবাদের শর্তের কারণে, যা বন্ধকী চুক্তির চাহিদার পরিপন্থি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণ চুক্তিপত্রে চাহিদার পরিপন্থি শর্তারোপ করতে নিষেধ করেছেন।

স্মর্তব্য যে, বন্ধক গ্রহীতা বন্ধকী বস্তু থেকে উপকার গ্রহণ করতে চাইলে, দুই পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন করতে পারেন। (১) নতুন করে ভাড়া চুক্তি করবে এবং উপকৃত হওয়ার পরিমাণ, সময় এবং ন্যায্য মাশুল নির্ধারণ করে দখলস্বত্ব নবায়ন করবেন। অন্যথায় বন্ধকী চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।

২) অথবা বন্ধকগ্রহীতা উক্ত ১০ কাঠা জমি ধার হিসেবে নিবেন। এমতাবস্থায় এর দ্বারা বন্ধকী চুক্তি বাতিল হবে না; বরং শুধু বন্ধকগ্রহীতার (ঋণদাতার) দায়বদ্ধতা থেকে বস্তুটি বেরিয়ে যাবে।

লক্ষণীয়, ধার চুক্তি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বস্তুটি বন্ধকের দায়বদ্ধতায় ফিরে যাবে। পক্ষান্তরে ইজারা চুক্তির শেষে বন্ধকী চুক্তি নবায়ন করতে হবে। (হাশিয়ায়ে ইবনে আবদীন- ১০/৮৩ ও ১০/১৩০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৪/৪৪০)।

আইয়্যামে বীজের রোযা প্রসঙ্গে

(৯৩১৭) আবুল বাশার, সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী।

জিজ্ঞাসা: আইয়্যামে বীজের রোযা কাকে বলা হয়? মাসওয়ারি নফল রোযা রাখতে চাইলে কোন কোন তারিখে বা বার রোযা রাখা উত্তম, শরীয়তের আলোকে জানাবেন।

সমাধান: হিজরী সন অনুযায়ী প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখকে আইয়্যামে বীয বলা হয়। এই তিন দিনের রোযাকে বলা হয় আইয়ামে বীযের রোযা। এই দিনগুলোতে রোযা রাখা মুস্তাহাব।

বিভিন্ন হাদীস ও ফিকহের নুসুসের আলোকে একথা স্পষ্ট হয় যে, প্রতিমাসে তিন দিন রোযা রাখা সুন্নাত, মুস্তাহাব। আর তা আইয়্যামে বীযের মধ্যে হলে সেটা হবে স্বতন্ত্র মুস্তাহাব। অর্থাৎ এতে একসাথে দুটি মুস্তাহাব আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যাবে।

তাছাড়া প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখাও মুস্তাহাব। অনেক হাদীসে এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাই মাসওয়ারী নফল রোযা রাখতে চাইলে প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (সম্ভব না হলে অন্য যে কোনো তিন দিন) এবং প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা অতি উত্তম আমল। (সুনানে ইবনে মাযাহ- ১৭০৮, সুনানে নাসায়ী- ২৪২৪, বাহরুর রায়েক- ২/৪৪৯, বাদায়েউস সানায়ে- ২/২১৮)।

মসজিদের দ্রব্যসামগ্রী নিলামে তোলা প্রসঙ্গে

(৯৩১৮) মাওলানা আবু হানিফ সিরাজী, ঠিকানাবিহীন।

জিজ্ঞাসা: অনেক সময় দেখা যায় মসজিদের সামান্য দ্রব্যসামগ্রী নিলামে তুলে অনেক দামে বিক্রি করা হয়। এভাবে বিক্রি করা জায়েয আছে কি না?

সমাধান: শরীয়তের নীতিমালা অনুযায়ী দাম হাঁকিয়ে বা নিলামে তুলে পণ্য বিক্রয় জায়েয। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিটি নিলামে বিক্রির পর্যায়ভুক্ত হওয়ায় জায়েয হবে। তবে শর্ত হলো, প্রত্যেক ক্রেতাই ক্রয় করার উদ্দেশ্যে দাম বলবে, দাম বাড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য থাকলে তা মাকরূহ হবে। অর্থাৎ- দাম বাড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রেতার সূরতে দালালির জন্য এভাবে দাম তোলা নাজায়েয। এতে বিক্রেতা পরোক্ষভাবে জড়িত না থাকলে তার গুনাহ হবে না। (ফাতহুল কাদীর- ৬/৪৭৯ ও ৬/৪৭৬)।

শ^শুরপক্ষ কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করা প্রসঙ্গে

(৯৩১৯) মুহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, হালিশহর, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: আমি মুহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, বয়স ৩০ বছর। আমি ২০১৫ সালে বিবাহ করি, সে ঘরে আমার ৪ বছর বয়সী একজন কন্যা সন্তান রয়েছে। স্ত্রী বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অপারগ বা গর্ভধারণ করলে জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমি দ্বিতীয় বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে প্রথম স্ত্রী আপত্তি জানালেও পরে সম্মতি দেন। সুতরাং আমি ২০২১ সালের নভেম্বরে আমার আপন ফুফাতো বোনকে (প্রাপ্ত বয়স্ক) তার সম্মতিক্রমে শরীয়তসম্মতভাবে কাজী অফিসে গিয়ে তার পরিবারকে না জানিয়ে গোপনে বিবাহ করি। এখন আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবারকে বিবাহের কথা জানানো হলে তারা আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি চাপ প্রয়োগ করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, মানসিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আমার কাছে তালাক চাইতে বাধ্য করছে এবং আমার স্ত্রী নিজের অসম্মতিতে বাধ্য হয়ে আমার কাছে তালাক চাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবার দ্বীনদার এবং তার এক ভাই হাটহাজারীর ফারেগ। তারা সকলেই ইসলাম মেনে চলেন।

এ পরিস্থিতিতে মুফতি সাহেবের প্রতি আমার প্রশ্ন-

ক) আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতি তার পরিবারের দিক থেকে আমার কাছে তালাক গ্রহণে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরাধ বা অন্যায় কি না এবং এমন অন্যায়ের শরীয়তে কী শাস্তির বিধান রয়েছে?

খ) এমতাবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রীর পিতা-মাতা ও ভাইয়ের কী কর্তব্য বা দায়িত্ব রয়েছে?

গ) এমন সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আমার জন্য পরামর্শ কী? উল্লেখ্য যে, আমি দ্বিতীয় বিবাহ জরুরতে করেছি, শয়তানের ধোকায় বা প্ররোচনায় পড়ে নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে বা বিধানের আলোকে আমার এই সমস্যার সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: অভিভাবকের অগোচরে ছেলে-মেয়েদের বিবাহ সম্পাদন করা অনুচিত ও অপছন্দনীয়। তা সত্ত্বেও ছেলে-মেয়ে উভয়ে সাবালক ও বুদ্ধিমান হলে এবং উভয়ে স্বেচ্ছায় দু’জন সাক্ষীর সামনে ইজাব কবুল করে নিলে শরীয়তের দৃষ্টিতে ওই বিবাহ বন্ধন সহিহ ও সঠিক বলে বিবেচিত হয়। এমতাবস্থায় ছেলের তালাকবিহীন উক্ত মেয়েকে অন্যত্র বিবাহ দেয়া জায়েয হবে না। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত বর্ণনা মতে মেয়েকে চাপ প্রয়োগ করে স্বামী কর্তৃক তালাক চাওয়া জঘন্যতম অপরাধ। এ জন্য মেয়ের পরিবারকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। তবে মেয়ের অভিভাবকদের উক্ত বিবাহে শরীয়ত সমর্থিত কোন কারণে আপত্তি থাকলে; যেমন- মেয়ে নিজেদের গায়রে কুফুতে অর্থাৎ ধার্মিকতা এবং স্ত্রীর মহর ও ভরণ-পোষণ দেয়ার যোগ্যতাহীন ছেলের সাথে বিবাহ বসলে অথবা মহরে মিসিলের কমে বিবাহে আবদ্ধ হলে উক্ত বিবাহের জন্য মুসলিম আদালতের শরণাপন্ন হয়ে উক্ত বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানানোর অধিকার আছে। এ পর্যায়ে আদালতের সিদ্ধান্তে বিবাহ বিচ্ছেদের পর ইদ্দত শেষে অন্যত্র বিবাহ দেয়া জায়েয হবে, এর আগে নয়। (রদ্দুল মুহতার- ৩/৮৫, হিদায়া- ৫/১০৯, আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতিহী- ৮/২৩৫, রদ্দুল মুহতার- ৩/৫৬)।

মাইকে আযান দেয়া প্রসঙ্গে

(৯৩২০) রাশেদুল ইসলাম, সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে দুই তিন মিনিটের হাঁটা দূরত্বে মসজিদ আছে। এখন প্রায় সব মসজিদে মাইকে আযান দেয়া হয়। দেখা যায়, অনেক মসজিদে এত উচ্চ আওয়াজে মাইকে আযান দেয়া হয় যে, কাছাকাছি সব মসজিদের আযানের আওয়াজে হট্টগোলের মতো হয়ে যায়। আবার অতি উচ্চ আওয়াজের কারণে মসজিদের কাছাকাছি অবস্থানকারীদের শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে মসজিদে আযান দেয়া হয়, তাদের জ্ঞাতসারে অন্য আরো কয়েকটি মসজিদের আযানের আওয়াজকে অতিক্রম করে যায় মতো উচ্চ আওয়াজে আযানের মাইকের সাউন্ড সেট করা জায়েয হবে কি না? তাছাড়া মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তিকে আঘাত করে, এমন উচ্চ আওয়াজে আযান দেয়া যাবে কি না? অনুগ্রহ করে শরীয়তের তথ্যের আলোকে জানাবেন।

সমাধান: প্রথমে আমাদের জানতে হবে আযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, লোকদেরকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবগত করা এবং জামাতের দিকে আহ্বান করা। এক্ষেত্রে আমরা সাহাবায়ে কেরামের আমল অনুসন্ধান করে জানতে পারি, তাঁরা সাধ্যানুযায়ী উচ্চ আওয়াজে আযান দিতেন। যেমন বর্ণিত আছে, এক সাহাবি আযানের শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন-  فاذا کنت فی غنمک او بادیتک، فاذنت بالصلاۃ فارفع صوتک بالنداء অর্থাৎ- “তুমি যখন তোমার মেষপালের নিকট বা তোমার বসতিতে নামাযের আযান দিবে, তখন তোমার আওয়াজকে উচ্চ করবে”।

আবার শরীরের ক্ষতি হয় এমন অতিরিক্ত উচ্চ আওয়াজে আযান দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাও আরোপিত হয়েছে। যেমন- উমর (রাযি.) এক সাহাবীকে কষ্ট করে উচ্চ আওয়াজে আযান দিতে দেখে বলেন, أما تخشی ان تنقطع مریطاؤیک ‘তুমি কি তোমার নাভী ও তলপেটের মধ্যবর্তী রগ ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করো না’।

উপর্যুক্ত প্রমাণদ্বয় থেকে বুঝা যায় যে, আযান উচ্চ আওয়াজে হবে। তবে এমন অতিরিক্ত উচ্চ আওয়াজে নয়, যাতে মুয়াজ্জিন সাহেবের নিজের শারীরিক কোনো ক্ষতি হয়। বর্তমানে যেহেতু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির কারণে অধিকাংশ মসজিদে মাইকের সাহায্যে আযান দেয়া হয়, তাই অতিরিক্ত উচ্চ আওয়াজ হলে শ্রোতাদের ক্ষতি হয়। এজন্য মহল্লাবাসী ও মুয়াজ্জিন সাহেবের জন্য উচিত হলো, এমনভাবে মাইকের সাউন্ড সেটআপ করা, যাতে আযানের উদ্দেশ্যও পূরণ হয় এবং মহল্লাবাসীর কোনো ক্ষতিও না হয়। আর মসজিদ যদি এমন কাছাকাছি হয় যে, মাইক ছাড়াই মহল্লাবাসী সবার নিকট আযানের আওয়াজ পৌঁছে যায়, তাহলে অনর্থক মাইকে আযান দেয়ার প্রয়োজন নেই, মুখেই আযান দিয়ে দিবে। অথবা একটু আগে পরে করে দিবে। তাছাড়া যেহেতু একই সময় আযান হয়, তাই এক মসজিদে মাইকে দিবে, বাকীগুলিতে মাইক ছাড়া দিবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ২০৯, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৩২৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১১২)।

সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি প্রসঙ্গে

(৯৩২১) মৌলভী মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ, তোয়াক্কুল মাদরাসা, গোয়াইনঘাট, সিলেট।

জিজ্ঞাসা: ‘সত্যের মাপকাঠি’র অর্থ কী? জনৈক আলেম বলেন, সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি নন। তিনি তার দাবির স্বপক্ষে দু’টি যুক্তি পেশ করেন। (ক) পবিত্র কুরআন মাজীদে সাহাবায়ে কিরাম যে সত্যের মাপকাঠি, এর কোন দলীল নেই। (খ) সাহাবায়ে কিরামকে যদি সত্যের মাপকাঠি মানা হয়, তাহলে নবী (সা.) আর সাহাবাদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না। এ নিয়ে আমাদের এলাকায় খুবই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান প্রদানে বাধিত করবেন।

সমাধান: ক. সত্যের মাপকাঠি বলতে বোঝায় কোন বিষয়ে সত্যতা যাচাই বাছাই করার মাধ্যম বা পন্থা। আর সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন-সুন্নাহ তথা দ্বীনের সকল বিষয়ে তাঁরা যেভাবে অনুধাবন ও উপলব্ধি করেছেন, সেভাবেই তার মর্ম গ্রহণ করা। তাঁদের বুঝের বাইরে বিপরীত ব্যাখ্যা বা বিকৃত বিশ্লেষণ গ্রহণ না করা। সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি হওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা বাকারার ১৩নং আয়াতে ইরশাদ করেন- اٰمِنُوۡا کَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ ‘তোমরা ঈমান আনয়ন করো, যেমন তারা (সাহাবায়ের কেরাম) ঈমান এনেছে’। সূরা বাকারার ১৩৭ নং আয়াতে আরো ইরশাদ করেন- فَاِنۡ اٰمَنُوۡا بِمِثۡلِ مَاۤ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ فَقَدِ اهۡتَدَوۡا অর্থাৎ- ‘যদি তারা ঈমান আনয়ন করে যেভাবে তোমরা (সাহাবায়ে কেরাম) ঈমান এনেছো, তাহলে তারা সঠিক পথের দিশা পাবে’। উক্ত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম ঈমান ও আমলসহ দ্বীনের সর্বক্ষেত্রে সত্যের মাপকাঠি।

আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ অনুকরণের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা তাওবার ১১০নং আয়াতে ইরশাদ করেন-

 وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ وَ اَعَدَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

অর্থাৎ- ‘আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য।

উক্ত আয়াতে মুহাজির ও আনসার সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণকারীদের বরং সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণকারীদের দুটি সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। প্রথমত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি, দ্বিতীয়ত জান্নাত প্রাপ্তি।

পক্ষান্তরে সাহাবায়ে কেরামের তরীকা ব্যতীত ভিন্নপথ অবলম্বনকারীদের পরকালে ভয়ঙ্কর জাহান্নামের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ১৯৫ নং আয়াতে ইরশাদ করেন-

وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الۡهُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا

অর্থাৎ- “আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ”।

উক্ত আয়াতে যে মুমিনীন বলা হয়েছে তা থেকে উদ্দেশ্য সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুম। সুতরাং বুঝা গেল সাহাবাদের বিরুদ্ধাচরণ করলে জাহান্নামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ ফরমান- যে ব্যক্তি আমার পরে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের জন্য জরুরি হলো তোমরা আমার সুন্নাত ও আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাতকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে। আর দ্বীনের ক্ষেত্রে শরয়ী প্রামাণ্যহীন নিত্যনতুন কাজ থেকে দূরে থাকবে। কারণ, ইবাদাতের ক্ষেত্রে নতুন কাজ বিদআত। বিদআত হলো পথভ্রষ্টতা। রাসূল (সা.) আরো ইরশাদ করেন, বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। সব দলই জাহান্নামী, শুধু একদল হবে জান্নাতী। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ঐ জান্নাতী দল কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে সুপ্রতিষ্ঠিত ও অবিচল থাকবে।

এর দ্বারা বুঝা গেলো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এক পথ অর্থাৎ সীরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

এমন আরো অনেক কুরআনের আয়াত ও অসংখ্য আহাদীসে সহীহা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা সত্যের পথে অবিচল ছিলেন। তারা উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য সত্যের মাপকাঠি।

খ. সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানলে নবী আর সাহাবাদের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না; একথাটি সম্পূর্ণ ভুল ও বানোয়াট। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হযরত জিব্রাঈল (আ.) সরাসরি ওহী নিয়ে এসেছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম হলেন ওহীয়ে ইলাহির সর্বপ্রথম সম্বোধিত ব্যক্তিবর্গ। নবুওয়াতী ক্রোড়ে প্রতিপালিত প্রথম কর্মীদল। পয়গামে ইলাহীর প্রত্যক্ষদর্শী, প্রেক্ষাপটের সরাসরি অবলোকনকারী।

রাসূল (সা.)এর অমূল্য বাণী যারা সরাসরি শ্রবণ করেছেন ও বর্ণনা করেছেন, দেখেছেন নবীর কর্ম-পদ্ধতি। তাঁরই নেগরানিতে আমলের অনুশীলনকারী এবং আগত উম্মাতের জন্য উন্নত মননশীল মুয়াল্লিম ও কামিল মুরশিদ। এ কারণে কুরআন সুন্নাহর ইরশাদ সমূহের প্রেক্ষাপট ও কার্যকারণ সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবগত হওয়া তাদের জন্য সহজলভ্য ছিল।

আরও পড়তে পারেন-

দ্বিতীয়ত: সকল সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহপাক কর্তৃক নির্বাচিত। রাসূলের সংশ্রব গ্রহণ করার সৌভাগ্য যাদের হয়েছিল। তাঁদের এ সৌভাগ্য স্বয়ং আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে অর্জিত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা নিজে তাদের নির্বাচন করেছেন রাসূলের সাহচর্যের জন্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মানবসমাজ হতে আমার সাহাবীদের নির্বাচন করেছেন। অতঃপর আমার সাহাবীদের মধ্য হতে চার জনকে তথা আবু বকর, ওমর, উসমান ও আলী (রাযি.)কে বিশেষভাবে নির্বাচন করেছেন এবং আমার বিশেষ সঙ্গী বানিয়েছেন।

উপরের আলোচনা পর্যালোচনা দ্বারা একথাই প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য সত্যের মাপকাঠি এবং সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মেনে অনুসরণ করা রাসূলের পূর্ণাঙ্গ অনুকরণ করার নামান্তর। সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) ঈমানের কষ্টি পাথর, যার নিরিখে অবশিষ্ট সকলেরই ঈমান পরীক্ষা করা হবে। দ্বীনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাঁরা সত্যের মাপকাঠি। আর এ কথা চিরন্তন সত্য যে, সাহাবায়ে কেরাম হলেন আল্লাহ প্রদত্ত মনোনীত সত্যের ঝান্ডাবাহক, যাদের নিরিখে পরবর্তী নীতি হবে হক বা বাতিল হওয়া।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, সাহাবায়ে কেরাম সকল প্রকার সমালোচনার ঊর্ধ্বে। সাহাবীদের প্রতি মুহাব্বত রাখা ওয়াজিব। তাদের সমালোচনা দোষত্রুটি অন্বেষণ করা পথভ্রষ্টতা এবং সম্পূর্ণ অমার্জনীয় অপরাধ। সাহাবীদের সমালোচনাকারী ফাসেক ফাজের পথভ্রষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্য ও সঠিকটা বোঝার তাওফীক দান করুন। (সূরা বাকারা- ১৩ ও ১৩৭, সূরা তাওবা- ১০০ ও ১১৭, সূরা নিসা- ১১৫, সুনানে আবি দাউদ- ৪৬০৭, সুনানে তিরমিযী- ২৬৪১, মুজামুস সগীর- ২/২৯)।

বিয়ের পূর্বে শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে

(৯৩২২) মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বানিয়ারচর মাদরাসা, সিকদারপাড়া, চকরিয়া, কক্সবাজার।

জিজ্ঞসা: আমি অবিবাহিত। একবার বড় ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে বললাম, আমি যদি তোমার স্ত্রীর সাথে কখনও কথা বলি বা তোমার শ^শুর বাড়ী যাই, তাহলে আমি বিয়ে করলে আমার স্ত্রী তিন তালাক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার এ অঙ্গীকার ঠিক রাখতে পারিনি। এরপর ভাবীর সাথে কথাও বলেছি এবং ভাবীর বাবার বাড়ীও গিয়েছি। এখন আমার করণীয় কী?

সমাধান: প্রশ্নোল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া লেগে ভাবির সাথে কথা বলা বা তার বাবার বাড়ীতে যাওয়ার সাথে বিবাহ করলে স্ত্রীর উপর তিন তালাককে শর্তযুক্ত করেছিলেন। যে শর্ত আপনি পরবর্তীতে ভঙ্গ করেছেন, অর্থাৎ তার সাথে কথাও বলেছেন এবং তার বাবার বাড়ীতেও গিয়েছেন। তাই এখন যদি আপনি বিবাহ করেন, তাহলে সাথে সাথে স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হলো, আপনি নিজে বিবাহ না করে, বরং ফুজুলী কোনো ব্যক্তি আপনার বিবাহ সম্পাদন করবে এবং আপনি মৌখিক কোনো কিছু স্বীকার না করে মহর আদায় কিংবা স্বামী-স্ত্রী সূলভ আচরণের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করবেন। (দুররে মুখতার- ৪/৫৮২, হিদায়া- ২/৩৬৪, মাবসুত- ৬/১৩০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/৫৩৫, রদ্দুল মুহতার-৫/৬৭২)।

তালাক প্রসঙ্গে

(৯৩২৩) মুফতি সিরাজুল ইসলাম, রংপুর।

জিজ্ঞাসা: আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে দীর্ঘ দিন যাবত সংসার করে আসছেন। সংসার জীবনে তাদের একে অপরের সাথে ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি হয় এবং ঝগড়ার পর্যায়ে অনেক সময় রাগত হয়ে স্বামী স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে বলে থাকেন যে, ‘তোকে তালাক দিয়ে দিমু’। এরকম কয়েক দিন যাওয়ার পর একদিন স্ত্রী স্বামীর বড় ভাইকে বলেন যে, আপনি এর একটা সমাধান করে দিন যে, আপনার ভাই খালি তালাক দেয়ার কথা বলে। এই কথা তৎক্ষণাৎ তার স্বামী শুনে বলে ওঠে যে, তোকে এক তালাক দুই তালাক তিনি তালাক দিয়ে দিলাম।

এখন মুফতিয়ানে কেরামের কাছে জিজ্ঞাসা হলো, এই অবস্থায় কি তার স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা হয়ে গেছে? যদি হয়ে থাকে, তাহলে কয় তালাক পতিত হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

সমাধান: তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামী শরীয়তে একটি গর্হিত এবং অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ। অযথা এর অপব্যবহার নিন্দনীয়। একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে শরীয়ত তালাক দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে একত্রে তিন তালাক প্রদান করা বিদআত ও গোনাহের কাজ। কিন্তু কেউ দিয়ে দিলে পতিত হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী, অর্থাৎ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পর পর তিন তালাক দেয়ার দ্বারা স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে এবং তাদের পরস্পর বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ফলে তাদের এক সাথে সংসার করা হারাম। (সূরা বাকারা- ২৩০, মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা- ৪/১১, ফাতহুল কাদীর- ৩/৪৪৯)।

ইউটিউব থেকে বয়ান শোনা প্রসঙ্গে

(৯৩২৪) তাসলিমা বেগম, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।

জিজ্ঞাসা: ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন হক্কানী উলামায়ে কেরামের ধর্মীয় আলোচনা ও বয়ান পাওয়া যায়। এ পর্যায়ে অনেক আলেম সুদর্শন, সুকণ্ঠি এবং অন্যদিকে অনেক আলেম বয়স্ক ও বৃদ্ধ হয়ে থাকেন। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, মুসলিম নারীদের জন্য বেগানা পুরুষ আলেমের বয়ান ইউটিউবে দেখা ও শোনা জায়েয হবে কি না?

সমাধান: ইউটিউবে মুসলিম নারীদের জন্য হক্কানি আলেমদের বয়ান শোনার ক্ষেত্রে দু অবস্থা: (ক) যদি পর পুরুষের (বক্তা) প্রতি আকৃষ্ট বা বিভিন্ন ধরনের কল্পনা-জল্পনার আশঙ্কা ইত্যাদি হয়, তাহলে সর্ব সম্মতভাবে হারাম। (খ) অথবা কোনো ধরণের কল্পনা-জল্পনা বা আকৃষ্ট ইত্যাদি হবার আশঙ্কা না থাকলেও বর্তমান ফিতনার যামানায় অনিরাপদ হওয়াই স্বাভাবিক, বিশেষ করে সুন্দর, সুদর্শন বক্তার চেহারা দেখে ও সুমিষ্ট কণ্ঠ শোনে মহিলাদের বিভিন্ন আকৃষ্টমূলক মন্তব্য করার ও কুধারণা সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ রয়েছে। এ কারণে মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষ আলেমদের ভিডিও বয়ান (ইউটিউবে ইত্যাদিতে) দেখা নাজায়েয। তাই তা থেকে বেঁচে থাকবে।

উল্লেখ্য যে, মহিলাদের জন্য নসিহত শোনার ইচ্ছা হলে বা প্রয়োজন মনে করলে, অডিও থেকে শোনা যেতে পারে, তবে শর্ত হলো, কণ্ঠস্বরের মোহে পড়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে হবে। (সূরা নূর- ৩০, মাবসুতে সুরাখসী- ১০/১৫৩, ইলাউস সুনান- ১৭/৪০৯, ফাতাওয়ায়ে কাযীখান- ৯/২৯৪)।

তালাক প্রসঙ্গে

(৯৩২৫) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঠিকানাবিহীন।

জিজ্ঞাসা: কোনো একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলেছে যে, তুমি যদি এই কথাটা তোমার বাবার বাড়ির কারো কাছে বলো, তাহলে তুমি তালাক হয়ে যাবে। পরে ঐ ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করেছে যে, তুমি এ কথাটা বলেছ কি না? স্ত্রী জানালো- বলেছি। এরপর স্ত্রী পুনরায় বললো, ‘আমাকে ছাইড়া দিস না কেন?’ তখন রাগত হয়ে স্বামী বলে ওঠে, ‘তোকে ছেড়ে দিলাম’।

এ ঘটনার ১১-১২ বছর পর তাদের মাঝে আবার ঝগড়া হয়। তখন স্ত্রী বলে, আমাকে ছাইড়া দিস না কেন? তখন স্বামী বলে ওঠল, ‘যা তোরে ছাইড়া দিলাম’। ৫-৭ মিনিট পরে পাশে থাকা মানুষজনকে বললো, ‘সে আমার জন্য হারাম হয়ে গেছে’। কারণ, স্বামী মনে করেছে তিন তালাক হয়ে গেছে। তার পর স্ত্রী বলছে যে, আমার বাবার বাড়িতে আমি কোন কথা বলি নাই, আর স্বামীকে যে আগে বলেছিলো, আমার বাবার বাড়িতে বলেছি এটা স্বামীকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলো। কারণ, স্বামী দূরে থাকতো, এতে ভয় পেয়ে যাতে স্বামী কাছে আসে।

উল্লেখ্য ১নং ও ২নং তালাকের পর স্বামী তার কাছে রাত্রি যাপন করেছে এবং তাদের দু’টি বাচ্চা আছে। তাই মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আবেদন, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধানের আশাবাদী।

সমাধান: প্রশ্নোল্লিখিত বিবরণে স্ত্রীর বক্তব্য ‘আমার বাবার বাড়িতে আমি কোন কথা বলিনি’। আর পূর্বে যে বলেছিল, “আমার বাবার বাড়িতে যে বলেছি, সেটা স্বামীকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছি” একথা সত্য হলে প্রথম ঘটনায় শর্ত পাওয়া না যাওয়ায় স্ত্রীর উপর কোন তালাক পতিত হয়নি। আর দ্বিতীয় ঘটনায় স্ত্রীর কথার জবাবে স্বামীর বক্তব্য ‘তোকে ছেড়ে দিলাম’ বাক্যটি আমাদের দেশীয় পরিভাষায় তালাকে সরীহ তথা তালাকের জন্য ব্যবহৃত সুস্পষ্ট শব্দ। তাই উক্ত বাক্য দ্বারা স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। অতঃপর স্বামী তার সাথে রাত্রি যাপন করায় স্ত্রীর রাজআত (ফিরিয়ে নেয়া) হয়ে গেছে। আর তৃতীয় ঘটনায় স্ত্রীর কথার জাবাবে স্বামীর বক্তব্য “যা তোকে ছাইড়া দিলাম” বাক্যটির মাধ্যমেও স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। তৃতীয় ঘটনার পর স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত না হলে। মৌখিকভাবে অথবা স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরণের মাধ্যমে রজআত করলে পুনরায় সংসার করতে পারবেন। আর ইদ্দত অতিবাহিত হয়ে গেলে নতুন করে মহর ধার্য করত পুনরায় বিবাহ করে সংসার করতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমান অবস্থায় স্বামীর আর মাত্র এক তালাকের অধিকার অবশিষ্ট থাকবে। (বাহরুর রায়েক- ৩/২৬৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/৪২০, হিদায়া- ২/৩৮৫, আশবাহুন নাযায়ের- ২/৩০৮, রদ্দুল মুহতার- ৪/৫৩০, বাদায়েউস সানায়ে- ৩/১৬৩, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ৪/৪৬৩)।

মোবাইলের রিংটোন প্রসঙ্গে

(৯৩২৬) ইফতিখার আহমদ, পূর্ব বশিকপুর, ফুলগাজী, ফেনী।

জিজ্ঞাসা: মোবাইল ফোনে রিংটোন হিসেবে গানের সুর বুঝায়, এমন যন্ত্রসঙ্গীতের সুর সেট করা যাবে কি না?

অনেক দ্বীনদার মানুষ ও আলেমকেও এমন রিংটোন সেট করতে দেখা যায়। হতে পারে এটা অসতর্কতামূলক। এ বিষয়ে সমাধান আসলে অনেকে সতর্ক হতে পারবেন বলে আশাবাদী।

সমাধান: ইসলামী শরীয়তে বাদ্যযন্ত্র মিশ্রিত গান গাওয়া এবং বাদ্যযন্ত্র (মিউজিক) বাজানো বা শোনা জায়েয নেই, চাই তা সরাসরি হোক কিংবা টেলিভিশন মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে হোক। তদ্রুপ, মোবাইল ফোনে রিংটোন হিসেবে গানের সুর বুঝায়, এমন যন্ত্রসঙ্গীতের সুর সেট করাও জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য, ইদানিং প্রায় মুসলমান ভাই-বোনদের, এমনকি অনেক ধর্মীয় জ্ঞানীদেরকেও দেখা যায়, অসচেতনতাবশত মোবাইল ফোনে রিংটোন হিসেবে গান, বিভিন্ন ধরনের মিউজিকের সুর ইত্যাদি সেট করেন। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কাজেই এমন গর্হিত কর্ম হতে বেঁচে থাকা সকলের জন্য একান্ত অপরিহার্য। (দুররে মুখতার- ৯/৫৬৬, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী- ৫/৪০৬, হাশিয়া তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার- ১১/১২৪)।

সমবায় সমিতির ব্যবসা পরিচালনা প্রসঙ্গে

(৯৩২৭) মুহাম্মদ তোফায়েল আহমাদ নোমান, উদ্যোক্তা পাঞ্জেরী সঞ্চয় ও সমবায় সমিতি, রাজিবপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।

জিজ্ঞাসা: আমরা আমাদের এলাকার নবীন উলামা এবং সমমনা কিছু সাথীকে নিয়ে একটি সঞ্চয় ও সমবায় সমিতির উদ্যোগ নিয়েছি। এই সমিতির উদ্দেশ্য হলো, সমিতির সাথিদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং সমাজে বিরাজমান সুদি কারবারের মুকাবেলা করে আদর্শ ইসলামি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা। ছোট ছোট সঞ্চয় একত্র করে হালাল উপায়ে মানুষকে লাভের পন্থা নির্দেশ করা এবং অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সাথে রেখে নবীন উলামায়ে কেরামকে ব্যবসায় প্রশিক্ষিত করে তোলা।

সমবায় সমিতির মডেল ও কাঠামো বজায় রেখে সদস্যদের থেকে মাসিক জামানত গ্রহণের ভিত্তিতে আমরা নিম্নে বর্ণিত ব্যবস্থাগুলো চালু করতে চাই-

(১) বাইয়ে মুদারাবা: সমিতির সঞ্চিত টাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী যথা- চাল, ডাল, তেল, লবণ, আটা ইত্যাদি পাইকারি ব্যবসার জন্য বিনিয়োগ করা হবে এই শর্তে যে, উক্ত ব্যবসার ৪০% অথবা ৫০% লভ্যাংশ সমিতির থাকবে, আর বাকিটা যারা শ্রম দিবে তারা পাবেন।

(২) বাইয়ে মুয়াজ্জল: কারো নির্দিষ্ট কোনো পণ্যের প্রয়োজন পড়লে আমরা পণ্য ক্রয় করে তাকে দিয়ে দিবো। এর বিনিময়ে সে নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদেরকে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে দিবে। ক্রয়মূল্যের চেয়ে পণ্যের মূল্য এতটুকু বেশি নির্ধারণ করা হবে, যেন সমিতির কিছুটা লাভ থাকে।

(৩) বাইয়ে সালাম: মানুষের যখন টাকার প্রয়োজন পড়বে তখন তারা আমাদের সমিতি থেকে টাকা নিয়ে যাবে। এই মর্মে যে, এর বিনিময়ে তারা নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদেরকে নির্দিষ্ট ধরনের নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান বা অন্য কোন পণ্য দিবে। এ পণ্যের পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারণ করা হবে যে, তাতে সমিতির লাভ থাকে।

(৪) আর উক্ত সমিতির লভ্যাংশ সদস্যদের মাঝে তাদের মূলধন অনুপাতে সমানভাবে বণ্টন করে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, যারা শ্রম দিবে তারা সমিতির সদস্যই হবে। এক্ষেত্রে শরীয়তের আলোকে কোনো সমস্যা হবে কি?

এ ছাড়া উল্লিখিত পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা শরয়ীভাবে সঠিক হচ্ছে কি না, বিস্তারিত জানানোর আশা করছি। এ বিষয়ে উত্তম কোন রূপরেখা থাকলে সেটি দিয়েও আমাদেরকে সহযোগিতা করার আবেদন করছি।

সমাধান: ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রাচীন ও আধুনিক সুদ ব্যবস্থাসহ যাবতীয় অনৈতিক লেনদেনের কোনই স্থান নেই। ইসলামে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল সুদের লেনদেন হারাম করেছে। তাই নিষিদ্ধ যাবতীয় লেনদেন, সুদপ্রথা বাদ দিয়ে যদি আপনাদের বর্ণিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য হাসিলে সমবায় সমিতি পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তা প্রশংসনীয়। কারণ, ইসলাম অবশ্যই পারস্পরিক সহযোগিতা মূলক প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মতৎপরতা অবৈধ করেনি। সুদের অপবিত্রতা মুক্ত হয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান বৈধ ও সুষ্ঠু পদ্ধতিতে নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করে, ইসলাম তাকে উৎসাহিত করে থাকে।

উপরোল্লিখিত ইসলামী অর্থনীতির ভাবধারার আলোকে আপনাদের উল্লেখ্য উদ্যোগ সমূহের শরয়ী পর্যালোচনা-

(১) পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ‘মুদারাবা’ ব্যবসা একটি উত্তম পদ্ধতি। এতে এক পক্ষের মূলধন এবং অপর পক্ষের শুধু শ্রম। ব্যবসার মুনাফা উভয়পক্ষের মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক কিংবা চুক্তি অনুপাতে কমবেশি বণ্টিত হয়। তাই আপনারা চাইলে বর্ণিত পদ্ধতিতে ‘মুদারাবা’ ব্যবসা করতে পারবেন। এ পর্যায়ে মুদারাবা ব্যবসার শর্তাবলী যথাযথ লক্ষণীয়। উল্লেখ্য, পণ্য কেন্দ্রিক তথা পণ্যকে মূলধন বানিয়ে মুদারাবা ব্যবসা শরিয়াহ ভিত্তিক হওয়ার মধ্যে হানাফী মাযহাবের ফুকাহাদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন পরিলক্ষিত হলেও পরবর্তী বিজ্ঞ ফিকাহবিদদের বিশ্লেষণ এটাই যে, এ ধরনের মুদারাবা ব্যবসা পদ্ধতি জায়েয। যুগের চাহিদা ও ব্যবসায়িক মহলে এ ধরনের কারবার ব্যাপক হওয়ায় এটাই নির্ভরযোগ্য মত বলে তারা আখ্যায়িত করেছেন।

(২) আপনাদের দ্বিতীয় উদ্যোগটিও জায়েয এবং শরীয়ত কর্তৃক এতে কোন সমস্যা নেই। তবে লক্ষ রাখতে হবে, এ লেনদেন যেন ব্যবসায়িক পদ্ধতিতেই হয়। আর তা এভাবে যে, সামর্থহীন বা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু/পণ্যটি খরিদ করে তার কাছে বিক্রি করা এবং পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে মূল্য (কেনা মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি হোক) এবং আদায়ের সময় নির্ধারণ করা। আর এটিই হলো ‹বাইয়ে মুয়াজ্জল› এর প্রকৃত রূপ। আর যদি এরূপ না করে এমনটি করা হয় যে, পণ্যটি তার কাছে বিক্রি করার সময় বলে দেয়া, যদি এতো দিনের ভেতর আদায় করা হয় তবে পণ্যটির মূল্য এতো, অন্যথায় এতো। আর এতোদুভয়ের কোনটি চূড়ান্তও করা হয়নি। তখন এটা ‘বাইয়ে মুয়াজ্জল’ সদৃশ হলেও মূলত ভিন্ন। ফলে তা জায়েয হবে না।

(৩) আপনাদের তৃতীয় উদ্যোগ তথা আপনাদের বর্ণিত ‘সালাম এর লেনদেন’ যদি ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে হয়, অর্থাৎ কোন ব্যবসায়ি বা কৃষক নিজের চাষ বা ব্যবসার কাজের জন্য নির্ধারিত মৌসুমে পণ্য দেয়ার চুক্তিতে আপনাদের কাছে পণ্যের মূল্য চায় বা আপনারা তাদেরকে নিজেদের ব্যবসায় জড়ানোর জন্য অগ্রিম মূল্য আদায় করে দিবেন, যাতে প্রয়োজনের সময় নির্ধারিত সময়ে মৌসুমে পণ্য হাসিল করতে পারেন। তাহলে তা জায়েয়। আপনারা চাইলে এমন কারবার করতে পারেন। তবে এতে ‘বাইয়ে সালাম’ এর শর্তাবলী অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। শর্তগুলো হলো- (ক) মূল্য নির্ধারণ করা। (খ) পণ্য নির্ধারণ করা। অর্থাৎ- পণ্য ধান, চাউল, ডাল, নাকি অন্য কোন পণ্য তা নির্ধারণ করা। (গ) পণ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা। (ঘ) পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণ করা। (ঙ) পণ্য আদায়ের সময় নির্ধারণ। (চ) পণ্য বাজারজাত বা প্রচলন আছে এমন হওয়া। এরই ভিত্তিতে যদি উল্লিখিত শর্তাবলী আপনাদের ‘সালাম’ লেনদেনে বিদ্যমান থাকে, তাহলে ‘বাইয়ে সালাম’ এর বর্ণিত কারবার শুদ্ধ হবে। অন্যথায় শরীয়ত কর্তৃক অশুদ্ধ লেনদেন বলে গণ্য হবে। আর যদি স্বাভাবিক কর্জ/ঋণ হিসেবে দেয়া হয় এবং পরস্পর চুক্তি করা হয় যে, নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পণ্য দ্বারা এটি আদায় করবে এবং এতে নিজেদের লাভের জন্য পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারণ করা, যাতে আপনাদের নিজেদের লাভ হয়, তাহলে তা জায়েয হবে না।

(৪) এক্ষেত্রে পারস্পরিক সন্তুষ্টচিত্তে চুক্তির মাধ্যমে মুনাফা বণ্টন করা যায়। এতে কোন সমস্যা নেই, তবে শরীয়তের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে হতে হবে।

* ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা শরিকদের বিনিয়োগকৃত পুঁজির অনুপাতে বণ্টন না করে প্রকৃত মুনাফা অনুপাতে বণ্টন করা।

* কোন শরীককে পূর্ব নির্ধারিত অংকের মুনাফা দেয়ার শর্তে না করা।

* শরিকগণ যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয় যে, প্রত্যেককে তার পুঁজি অনুযায়ী শতকরা হারে মুনাফা প্রদান করা হবে, তা জায়েয আছে। উভয়ের পুঁজি সমান হোক বা বেশি। এ ক্ষেত্রে উভয়ের কাজের সিদ্ধান্ত হতে পারে কিংবা কোন একজনের।

* যে শরীকের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে কাজ করবে, তাকে তার পুঁজি অনুপাত অপেক্ষা বেশি মুনাফা প্রদান করা জায়েয। আর মুনাফা অর্ধেক হারে বণ্টন হলে, তাও জায়েয এবং তাদের পৃথকভাবে ন্যায্য বেতন প্রদান করাও জায়েয।

* যে শরিকদার কাজ করবে না বলে শর্তারোপ করেছে, তাকে তার পুঁজি অপেক্ষা বেশি মুনাফা প্রদান করা নাজায়েয। তবে তাকে তার পুঁজি অনুপাত কম মুনাফা দেয়া জায়েয।

* উভয়ের পক্ষ থেকে কাজ করার শর্ত থাকা সত্ত্বেও মুনাফার অনুপাত মূলধনের অনুপাত থেকে যদি ভিন্ন হয়, তাহলে এ প্রক্রিয়াও জায়েয। (আলমুগনী- ৭/১২৪, ইমদাদুল ফাতাওয়া- ৮/৯১, সূরা বাকারা- ২৮২, আলমাবসুত- ১৩/২৮ ও ৩০ ও ১২/১৪৭, হিদায়া শরহে বিদায়াতুল মুবতাদী- ৩/২১, ফাতাহুল কাদীর- ৬/ ২৪৩ ও ৪১৬, মুসান্নিফ ইবনে আবি শায়বা- ১০/৫৯২, সুনানে বায়হাকী- ৫/৩৫০, বাদায়েউস সানায়ে- ৭/২৪, বেনায়া- ১০/২৯৯)।

সদকায়ে ফিতর প্রসঙ্গে

(৯৩২৮) মুহাম্মদ আশরাফ, জামালপুর।

জিজ্ঞাসা: আমাদের গ্রামে কিছু লোক বলে বেড়ায় যে, দেশের প্রধান খাদ্য দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। যেমন- আমাদের দেশে চাউল। চাউল ব্যতিত অন্য কিছু, যেমন- টাকা ইত্যাদি দিয়ে আদায় করলে আদায় হবে না। তিনি নাকি এক মুফতি সাহেবকেও জিজ্ঞাসা করেছেন। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, চাউল দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় হবে কি না? আর যদি চাউল দিয়ে আদায় করা যায়, তাহলে চাউলের পরিমাণ কতটুকু হবে এবং কোন ধরনের চাউল দিতে হবে, বিস্তারিত দলিলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের আলোকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সদকায়ে ফিতর মুদ্রা তথা টাকা কিংবা যে কোন পণ্য দ্রব্যাদি দ্বারা আদায় করা জায়েয আছে। শুধু দেশীয় প্রধান খাদ্য বস্তু দিয়ে আদায় করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা ইসলামী শরীয়তে নেই। যারা এমন বলে তাদের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও গলত; বরং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) তৎসময়ের প্রচলিত মুদ্রা তথা দেরহাম দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করেছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে সম্পূর্ণ সহীহ সনদে হাদীস বর্ণিত আছে যে-

حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ يَقُولُ: أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ، فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ، الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ.

অর্থাৎ- হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমযানে সদকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে দেরহাম দ্বারা আদায় করতেন। (ইবনে আবি শায়বা- ২/৩৯৮, হাদীস- ১০৪৭২)।

অনুরূপভাবে তৎকালীন প্রধান খাদ্যের পরিবর্তে অন্য বস্তু দ্বারা যাকাত ফিতরা আদায়ের প্রমাণও হাদীস শরীফে পাওয়া যায়। যেমন- সহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখ হয়েছে যে, হয়ত তাউস (৪২৩) (রহ.) বলেন, মুআয (ইবনে জাবাল রাযি.) ইয়ামেনবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্তু আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এসো। এটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী (সা.)এর সাহাবীগণের জন্যও উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রাযি.)এর ব্যাপার হলো এই যে, সে তার বর্ম ও যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। (মহিলাদের লক্ষ্য করে) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের অলংকার থেকে হলেও সদকা করো। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণ্যদ্রব্যের যাকাত সেই পণ্য দ্বারাই আদায় করতে হবে এমন নির্দিষ্ট করে দেননি। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও গলার হার খুলে দিতে আরম্ভ করলেন। হযরত ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, সোনা ও রূপার বিষয়টি পণ্যদ্রব্য থেকে পৃথক করেননি, বরং উভয় প্রকারেই যাকাত স্বরূপ গ্রহণ করা হতো। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ১৪৪৮)।

সুতরাং চাউল কিংবা অন্যান্য, অথবা নগদ অর্থ দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে চাইলে আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে যে বছর যে পরিমাণ টাকা সদকায়ে ফিতর হিসেবে নির্ধারিত হবে, সে নির্ধারিত টাকা দিয়ে চাউল কিংবা অন্যান্য দ্রব্য যেটুকু পাওয়া যায়, তা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করবে। যদি কারো কাছে চাউল থাকে, আর সে চাউল দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে চায়, তাহলে সেও ওই নির্ধারিত টাকা সমপরিমাণ চাউল সদকা করলে সঠিকভাবে সদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে যাবে।

ফিকাহশাস্ত্রের বিভিন্ন কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ আছে যে, সদকায়ে ফিতর ইত্যাদি টাকা, চাউলসহ অন্যান্য বস্তু দ্বারা আদায় করলেও সঠিকভাবে আদায় হয়ে যাবে। বরং অনেক ক্ষেত্রে টাকা দ্বারা আদায় করা উত্তমও বটে। (জামেউস সগীর- ১৩৬, রদ্দুল মুহতার- ২/২৮৫ ও ৩৬৪, ইনায়া- ২/২৯৫, নূরুল ইযাহ- ৭২৪, কিফায়াতুল মুফতি- ৪/৩১৫)।

যাকাত ব্যবহার প্রসঙ্গে

(৯৩২৯) মাওলানা হুসাইন আহমদ জাহাঙ্গীর, কাঁচপুর, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ।

জিজ্ঞাসা: আমাদের দেশের বেসরকারি মাদরাসাগুলোর লিল্লাহ বোর্ডিং ফান্ডে যে পরিমাণ যাকাত-ফিতরার অর্থ জমা হয়, তা দিয়ে সেসব মাদরাসার সারা বছরের বোর্ডিং খরচ অনায়াসে ভালভাবে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, এই অর্থ ‘তাহলীল’ নামক পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়। এভাবে যাকাতের অর্থ দিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেয়া ঠিক হবে কি?

সমাধান: ফিকহের বিভিন্ন গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করে একথা প্রতীয়মান হয় যে, যাকাত ফিতরার টাকা নির্দিষ্ট খাতে ব্যবহার করা শরীয়তের বিধান। এর বিপরীত করা এবং এর জন্য হীলার আশ্রয় নেয়া শরীয়তের চাহিদার পরিপন্থী।

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাদরাসাসমূহ যাকাত ফিতরার টাকা লিল্লাহ বোর্ডিং এবং উপযুক্ত খাতে ব্যবহার করবে। আর শিক্ষকদের বেতন মাদরাসার সাধারণ ফা- থেকে আদায় করবে। বিনা প্রয়োজনে মাদরাসার যাকাত-ফিতরার ফা- থেকে হীলার মাধ্যমেও শিক্ষকদের বেতন আদায় করা অনুচিত।

তবে হ্যাঁ, যদি মাদরাসার সাধারণ ফা-ে এমন সংকট দেখা দেয় যে, যাকাত ফিতরার টাকা হীলা করা ছাড়া কোনোভাবেই শিক্ষকদের বেতন আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না এরকম অপারগতা দেখা দিলে কোনো একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে মাদরাসায় দানের প্রতি উৎসাহিত করে তাকে যাকাত-ফিতরার টাকা দান করা যেতে পারে। এরপর তিনি যদি উক্ত টাকা মাদরাসায় দান করে দেন, তাহলে এইরূপ হীলা জায়েয হবে। (ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ২/১৯৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ২/৪৭৩, রদ্দুল মুহতার- ৩/১৯১)।

এমএলএম ব্যবসা প্রসঙ্গে

(৯৩৩০) ইবরাহীম মিজান, উখিয়া, কক্সবাজার।

জিজ্ঞাসা: বর্তমান সময়ে প্রচলিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পদ্ধতি জায়েয কি না? যদি নাজায়েয হয়, তাহলে জায়েযের কোন পদ্ধতি আছে কি না, জানালে উপকৃত হতাম।

সমাধান: মাল্টিলেভেল (এমএলএম)এর ব্যবসা পদ্ধিতিটিই নাজায়েয, যা জায়েয হওয়ার কোনো সুরত নেই। তাই উক্ত পন্থায় ব্যবসা করা থেকে সকলের জন্য বেঁচে থাকা আবশ্যক।

যেসব কারণে মাল্টিলেভেল ব্যবসা অবৈধ: অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা। আর তা এভাবে যে, এমএলএম কোম্পানিগুলোতে লক্ষ করা যায় যে, তাদের ডাউন লেভেল ব্যক্তিদের থেকে আপ লেভেলের ব্যক্তিরা কমিশন পায়। অথচ ডিস্ট্রিবিউটরের নিকটতম ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের জন্য আপলেভেলের কোনো শ্রম নেই। অথচ ডাউনলেভেল যতই দীর্ঘ হবে, আপলেভেলের ব্যক্তিদের কমিশন ততই বাড়তে থাকবে। আর এটি হলো শ্রমহীন বিনিময়, যা অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণের নামান্তর, যা নাজায়েয।

ধোঁকা বা অনিশ্চয়তা: আর তা এভাবে যে, ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে ডাউনলেভেলের সংখ্যা হিসেবে কমিশন দেয়া হবে। আর ডিস্ট্রিবিউটর তার ডাউনলেভেল বাড়াতে পারবে কি না তা অনিশ্চিত। আর এটি হলো ‘গারার’ যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।

এক চুক্তির জন্য অন্য চুক্তিকে শর্ত করা: আর তা এভাবে যে, এমএলএম কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্য পরিবেশক হওয়া শর্ত। আর এটি হলো, এক চুক্তির জন্য অন্য চুক্তির শর্ত, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। উপর্যুক্ত কারণ ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলোর প্রতি লক্ষ করলে একথা প্রতীয়মান হয় যে, এমএলএম ব্যবসা পদ্ধতি নাজায়েয। (সূরা বাকারা- ১৮৮, আহকামুল কুরআন- ২/২১৬, সহীহ মুসলিম- ১৫১৩, ইবনে হিব্বান- ৫৯৫১, সুনানে তিরমিযী- ১২৩০, ইবনে মাজাহ- ২১৯৪)।

জুমার নামায প্রসঙ্গে

(৯৩৩১) মুফতি খন্দকার হারুনুর রশীদ, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক- নাযারাতুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া ফতেহপুর, গোয়াইনঘাট, সিলেট।

জিজ্ঞাসা: প্রথম প্রশ্ন- জুমার নামায কার ওপর ফরয এবং কার ওপর ফরয নয়; নাকি সবার ওপর ফরয?

দ্বিতীয় প্রশ্ন- জুমার নামায কোথায় পড়লে আদায় হবে এবং কোথায় পড়লে আদায় হবে না; নাকি যেকোনো স্থানে বা সর্বত্র পড়ে নিলেই আদায় হয়ে যাবে? এই প্রশ্নটি প্রথমটির সম্পূরক।

আরেকটি কথা, যার ওপর জুমা ফরয সে যদি এমন স্থানে জুমা পড়ে যেখানে আদায় হওয়ার শর্তগুলো অনুপস্থিত, তাহলে সে কী করবে? অথবা কারো ওপর যদি জুমার নামায ফরয না হয়ে থাকে আর সে এমন স্থানে জুমা পড়ে নেয়; তখন করণীয় কী? আমাদের ফিকহের কিতাবাদি কী বলে এবং বাস্তবতা কী? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ফায়সালা কামনা করছি।

সমাধান: জুমার নামায সবার উপর ফরয নয়; বরং ঐ সমস্ত লোকের উপর ফরয, যাদের মধ্যে নি¤েœাক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাবে। ১। স্বাধীন হওয়া (বাংলাদেশে সবাই স্বাধীন)। ২। পুরুষ হওয়া। ৩। মুকীম হওয়া। ৪। সুস্থ হওয়া। ৫। হাটতে সক্ষম হওয়া। ৬। দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হওয়া।

আর যদি এ শর্তগুলো না পাওয়া যায়, তথা গোলাম, নারী, মুসাফির, অসুস্থ ব্যক্তি, হাটতে অক্ষম, অন্ধ; এ সমস্ত লোকের উপর জুমার নামায ফরয নয়। অর্থাৎ- জুমা আদায় অপরিহার্য নয়। তবে জুমার নামায পড়লে (যাদের উপর ফরয তাদের সাথে) আদায় হয়ে যাবে।

সর্বত্র জুমা পড়লেই জুমা আদায় হবে না। বরং ঐ স্থানে জুমা পড়লে আদায় হবে যে স্থানে নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাবে। যথা-

১) শহর বা উপশহর হওয়া।

২) বাদশাহ বা তার প্রতিনিধি কিংবা তাদের অনুমতি প্রাপ্ত উপযুক্ত খতীব সাহেব নামায সম্পাদন করা।

৩) যোহরের সময় হওয়া।

৪) যে জায়গায় নামায আদায় করবে, সেখানে উপস্থিতির ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের উপস্থিতির অনুমতি থাকা।

৫) নামাযের পূর্বে খুতবা প্রদান করা।

৬) জামাতের সাথে নামায আদায় করা।

এসব শর্তের সাথে জুমার নামায আদায় করলে নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর যদি এসব শর্তের একটিও পাওয়া না যায়। তাহলে ঐ স্থানে জুমার নামায আদায় করা সহীহ হবে না।

যার উপর জুমা ফরয যদি তিনি এমন স্থানে থাকেন যেখানে জুমা আদায়ের শর্তগুলো অনুপস্থিত, তাহলে তিনি যোহর আদায় করবেন।

তেমনিভাবে যার উপর জুমা ফরয নয়, যদি তিনি এমন স্থানে থাকেন, যেখানে জুমা আদায়ের শর্তগুলো অনুপস্থিত। তাহলে তিনিও যোহর আদায় করবেন। (মুসান্নিফে আবি শায়বা- ৪/৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/২০৫, হিদায়া- ১/১৫০-৫১, বাদায়েউস সানায়ে- ২/১৯০)।

যে কোন সমাধানের উপর আরও জানার থাকলে ফোন করতে পারেন-
আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.)
মোবাইল- ০১৮১৭-৭০৫৯৯২
নির্ধারিত সময়: সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবার, রাত ৯টা থেকে ১০টা।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।