জিজ্ঞাসা-সমাধান

পরিচালনায়- ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ
আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

তহারাত (পবিত্রতা)

(৯২৪৮) আবুল কালাম, রাজশাহী।
জিজ্ঞাসা:
হায়েয-নেফাস অবস্থায় কোনো মহিলা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে কি না? এবং ছোট বাচ্চাদেরকে শিক্ষা দিতে পারবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

সমাধান: মহিলারা হায়েয-নেফাস অবস্থায় নিজে কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করতে পারবে না এবং তিলাওয়াত করে করে শিক্ষাও দিতে পারবে না। তবে আয়াতকে ভেঙে ভেঙে এক এক শব্দ করে শিক্ষা দিতে পারবে। (আল মুহীতুল বুরহানী -১/৪০২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/৯২, রদ্দুল মুহতার -১/৪৮৭)।

যাকাত

(৯২৪৯) মাওলানা নূরুল হক্ব, মানিকগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা:
আমি প্রতি বছর নিয়মিত যাকাত আদায় করি। মাঝে এক বছর বেশ কিছু ব্যস্ততার দরুন সময়মত যাকাত দিতে পারিনি। যাকাতের টাকা ভিন্ন করে রেখেছিলাম। পরে যাকাত দিবো বলে। পরে তা আদায় করেছি কি না এ নিয়ে সন্দিহান। নিশ্চিতভাবে কোনোটাই মনে পড়ছে না। এখন আমার করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: আপনাকে ঐ বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা, যাকাত আদায় করা হয়েছে কি না এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে, যাকাত না দেওয়ার বিষয়টিই বিবেচ্য হবে এবং পুনরায় যাকাত প্রদান করতে হবে। (ফাতাওয়া কাযী খান -১/১৬০, ফাতহুল কাদীর -২/১৫৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া -২/১৮০)।

(৯২৫০) আব্দুল্লাহ বি-বাড়ীয়া।
জিজ্ঞাসা:
বর্তমান অনেক মানুষই অভাবে আছে। আমার জানামতে একজন প্রতিবেশী খুব অভাবে কালাতিপাত করছে। তবে সে কারও কাছে প্রকাশ করে না। আমি তাকে যাকাত দিতে ইচ্ছুক। তাকে যদি যাকাতের কথা উল্লেখ করে দেই, তাহলে লজ্জায় নিতে চাইবে না। তাই গিফ্টের কথা বলে তাকে কি যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে? এতে কি আমার যাকাত আদায় হবে?

সমাধান: জী, গিফটের কথা বলে যাকাত প্রদান করা যাবে। প্রদান করার সময় মনে মনে যাকাতের নিয়ত করলে যাকাতও আদায় হয়ে যাবে। যাকাত হকদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একপ্রকার গিফ্ট ও হাদিয়া। তাই গিফটের কথা বলাতে কোনো সমস্যা হবে না। যাকাতের অর্থ প্রদান করার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো নিয়ত। যাকাতের নিয়ত রেখে মুখে অন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করলেও যাকাতই আদায় হবে। নিয়তকেই বিবেচনা করা হবে মুখের উচ্চারিত শব্দকে নয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস -১, আন নাহরুল ফায়েক -১/৪১২-৪১৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/১৭১, রদ্দুল মুহতার -২/২৬৮)।

(৯২৫১) আনসারুল করিম, চাঁদপুর।
জিজ্ঞাসা:
জনৈক ব্যক্তি নিজের টাকায় একটা মসজিদ নির্মাণ করে এবং সেই মসজিদে একজন ইমাম নিয়োগ দেয়। ঐ ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয। সে তার যাকাতের টাকা থেকে ইমামের বেতন দিতে চাচ্ছে। জানার বিষয় হলো, ঐ ব্যক্তি যদি ইমাম সাহেবকে তার যাকাতের টাকা থেকে বেতন দেয় তাহলে তার যাকাত আদায় হবে কি?

সমাধান: না, ঐ ব্যক্তির যাকাত আদায় হবে না। কেননা, ইমাম সাহেবের বেতন একটি বিনিময় চুক্তি হিসেবে প্রদান করা হয়। যাকাত আদায়ের মূল শর্ত হচ্ছে বিনিময় ব্যতিরেকে নিঃশর্তে কোন গরিব লোককে মালিক বানিয়ে দেয়া।

সুতরাং ইমাম সাহেবকে বেতন হিসেবে যাকাতের টাকা দিলে যাকাতই আদায় হবে না। তবে ইমাম সাহেব এমনিতে দরিদ্র হলে বেতন বাদে অতিরিক্ত টাকা যাকাত থেকে দান করা যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে -২/৩৯, ফাতহুল কাদীর -২/২৫৯,আল বাহরুর রায়েক -২/২১৬, রদ্দুল মুহতার -২/২৫৬-২৫৮)।

(৯২৫২) নুরুয যামান, রাজশাহী।
জিজ্ঞাসা:
এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য কিছু টাকা চেয়েছে। সে যাকাতের নেসাবের মালিক। আমি যদি তাকে যাকাতের টাকা দেই তাহলে আমার যাকাত আদায় হবে কি?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যাকাতের নেসাবের মালিক হওয়ায় তাকে যাকাত প্রদান করা বৈধ নয়। তাকে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না এবং ঐ ব্যক্তির জন্যও যাকাত গ্রহণ বৈধ হবে না। অবশ্য যদি তার মেয়ে যাকাত গ্রহণের হকদার হয় তাহলে সেই মেয়েকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস -৬৫২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস -১৬৩৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/১৮৯)।

(৯২৫৩) মিজানুর রহমান, ফরিদপুর।
জিজ্ঞাসা:
আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ইসলামের প্রচার প্রসার ও ধর্মীয় শিক্ষাদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এসব প্রতিষ্ঠানসমূহের বেশির ভাগই মুসলমানদের যাকাত-ফিতরা দ্বারা পরিচালিত। এসব প্রতিষ্ঠানে গোরাবা ফান্ড ও এতিমখানা রয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ধর্মপ্রিয় মুসলমানরা মুক্ত হস্তে দান করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী কমিটি এতিমখানা ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে বা মাদরাসার উন্নয়ন প্রকল্পের কোনো খাতে ব্যবহার করেন। ফলে প্রতিষ্ঠানে বেশ সমস্যা সৃষ্টি হয়। এখন আমার প্রশ্ন হলো, এ জাতীয় টাকা ব্যক্তিগত কাজে বা অন্য খাতে ব্যবহার বৈধ কিনা?
সমাধান: যাকাত ও ফিতরার অর্থ যাকাত-ফান্ডেই ব্যয় করতে হবে। ভিন্ন কাজে ব্যয় করার অনুমতি নেই। দায়িত্ববান ও রক্ষণশীল মাদরাসাগুলোতে যাকাত ও ফিতরার টাকা যথাযথরূপেই ব্যবহার করা হয়। সঠিক খাতে ব্যবহারে ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলগণ খুবই সতর্ক থাকেন।

কোনো ব্যক্তি নিজস্ব কাজে বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করলে অবশ্যই তাকে সেই টাকা আপন ফান্ডে ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় আমানতের খিয়ানতকারী বলে বিবেচিত হবেন এবং গুনাহগার হবেন। অবশ্য নিতান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে যাকাতের ফান্ড থেকে ঋণ নিয়ে ব্যয় করা যাবে। অথবা হিলায়ে তামলীক করে ভিন্ন খাতে ব্যয় করা যাবে।

কোনো মাদরাসায় যদি ঋণ নিয়ে বা হিলায়ে তামলীক করে যাকাতের টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয় তাহেল কর্তৃপক্ষকে অহেতুক সন্দেহ করা বা দোষারোপ করা ঠিক হবে না। (সুরা তাওবা, আয়াত -৬০, মাবসূতে সারাখসী -২/৩০৩, রদ্দুল মুহতার -২/২৭১, ২/৩৪৪-৩৪৫, ৩/৪৮০, তাবয়ীনুল হাকায়েক -২/৩০১)।

দান-সদকা

(৯২৫৪) ইবরাহীম ফুআদ, রাউজান।
জিজ্ঞাসা:
আমার পাশের বাড়িতে এক হিন্দুলোক ভাড়া থাকে। অভাব-অনটনে দিন পার করে। তাকে কি আমি নফল সদকা করতে পারবো?

সমাধান: হ্যাঁ, নফল দান খয়রাত অমুসলিমকেও করা যাবে। তবে যাকাত দেওয়া যাবে না। প্রতিবেশী অমুসলিমদের প্রয়োজনে মুসলিমদের এগিয়ে আসা উচিত। সাধারণ দানের ক্ষেত্রে মুসলিম অমুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই। যেই অভাবী হবে তাকেই দান ও সদকা করা ধনবান মুসলিমের দ্বীনি দায়িত্ব। প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব আরও গুরুত্ব সহকারে আদায় করা চাই। অমুসলিমকে দান করার বিষয়ে প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখয়ী (রহ.) বলেন, ‘অমুসলিমদেরকে যাকাত দিয়ো না, নফল সদকা দাও।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা -১০৫১২, মাবসূতে সারাখসী -৩/১১১, ফাতহুল কাদীর -৪/২৬০)।

(৯২৫৫) মুবারক, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা:
আমি একজন সাধারণ কৃষক এবং এটাই আমার পেশা। আমার বসতবাড়ি ব্যতীত শুধুমাত্র চাষাবাদের কিছু জমি আছে, যার উপর আমার পরিবারের ভরণ-পোষণ নির্ভর করে। এখন জানার বিষয় হলো, আমার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে কি না? আর আমার জন্য অন্যদের সদকায়ে ফিতর গ্রহণ করা বৈধ হবে কি না?

সমাধান: ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য ঈদের দিন সকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ বাদে ন্যূনতম সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা তার সমমূল্য সম্পদ থাকতে হবে। যদি ঈদের দিন আপনার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে আপনার উপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। আপনি অন্য কারও ফিতরার টাকা গ্রহণ করতে পারবেন না। আর যদি উপযুক্ত পরিমাণ সম্পদ না থাকে তাহলে আপনার উপর ফিতরা ওয়াজিব নয়। আপনি অন্যদের ফিতরার টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস -৭১৫৫, বাদায়েউস সানায়ে -২/৬৯)।

সিয়াম

(৯২৫৬) শরীফ হুসাইন, নাটোর।
জিজ্ঞাসা:
ইসলামের সূচনাপর্বে রমাযান মাসে সিয়ামের বিধান ছিলো না। পরে এ বিধান নাযিল হয়েছে। আমার জানার বিষয় হলো, রমাযানের বিধান কখন অবতীর্ণ হয়েছে? এবং রমাযান মাসে রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে সিয়ামের কোনো বিধান ইসলামে ছিলো কি না?

সমাধান: রমাযানে রোযা রাখার বিধান অবতীর্ণ হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে। দ্বিতীয় বর্ষের শাবান মাসেই রমাযানে রোযা রাখার হুকুম নাযিল হয়। এর পর থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়টি রমাযান মাস পেয়েছেন এবং রোযা রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবুল হাসান সালেহী (রহ.) (৮৮৫ হি.) বলেন-

فُرِضَ صَوْمُ رَمَضَانَ فِي السَّنَةِ الثَّانِيَةِ إجْمَاعًا , فَصَامَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ أَفْضَلُ الصَّلاةِ وَالسَّلامِ تِسْعَ رَمَضَانَاتٍ إجْمَاعًا اهـ .
‘সর্বসম্মত মতানুযায়ী দ্বিতীয় হিজরীতে রমাযানের রোযা ফরয হয়েছে। অতএব, সর্বসম্মত মতানুযায়ী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর রমাযানের রোযা রেখেছেন। (আল ইনসাফ ৩/২৬৯)।

ইমাম নববী রহ. (৬৭৬ হি.) বলেন-
صام رسول الله ﷺ رمضان تسع سنين ، لأنه فرض في شعبان في السنة الثانية من الهجرة وتوفي النبي ﷺ في شهر ربيع الأول سنة إحدى عشرة من الهجرة اهـ
‘রাসূল (সা.) নয় বছর রমাযানের রোযা রেখেছেন; কেননা, দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে রোযা ফরয হয়েছে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন একাদশ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে।’ (মাজমু- ৬/২৫০)।

রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বেও রোযার বিধান ছিলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কাতেও রোযা রাখতেন। মদিনাতে এসে আশুরার দিন তথা মুর্হারামের দশ তারিখের রোযা নিজেও রাখতেন এবং অন্যদেরকে রাখতে নির্দেশ দিতেন। রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই আশুরার রোযাই ওয়াজিব ছিলো। রমাযানের রোযার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর তা আর ওয়াজিব হিসেবে বাকি থাকেনি।

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন-
كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ، فَلَمَّا قَدِمَ المَدِينَةَ صَامَهُ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
‘জাহেলী যুগে কুরাইশ গোত্র আশুরার দিন রোযা রাখত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জাহেলী যুগে এই রোযা রাখতেন। অতঃপর যখন মদীনায় আগমন করলেন, তিনি নিজে এই দিন রোযা রাখলেন এবং রোযা রাখার আদেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস -২০০২)।

(৯২৫৭) নুমান, বরগুনা।
জিজ্ঞাসা:
আমি একটি দোকানের মালিক। দোকানে অনেক কর্মচারী আছে। সকলেই রোযা রাখে। ইফতারি এক সাথেই করা হয়। ইফতারির বিল আমিই দেই। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আমি এটি করি। অপরকে ইফতারি করানোর বিশেষ কোনো গুরুত্ব বা ফযীলত আমার জানা নেই। একজন বললেন, এতে নাকি অনেক নেকী অর্জন হয়। তাই আমি জানতে ইচ্ছুক যে, অপরকে ইফতারি করালে কী কী ফযীলত লাভ করা যায়? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: রোযাদারকে ইফতারি কারানো একটি বিশেষ নেকীর কাজ। আপনি আপনার কর্মচারীদের ইফতারি করিয়ে মূল্যবান কাজ করেছেন। এ জন্য আপনি বিশেষ ফযীলত প্রাপ্ত হবেন। ইনশাআল্লাহ। হযরত খালেদ বিন জুহানী (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-

مَنْ فَطَّرَصَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ، غَيْرَأَنَّهُ لَايَنْقُصُ مِنْ أَجْرِالصَّائِمِ شَيْئًا
‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করায়, তার জন্য রোযাদারের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। তবে এর ফলে রোযাদারের সওয়াব থেকে বিন্দু পরিমাণ সওয়াবও কমানো হবে না।’ (সুনানে তিরমীযী, হাদীস -৮০৭)।

হযরত সালমান ফারসী (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مَغْفِرَةً لِذُنُوبِهِ وَعِتْقَ رَقَبَتِهِ مِنَ النَّارِ، وَكَانَ لَهُ مِثْلَ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيْءٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَيْسَ كُلُّنَا نَجِدُ مَا نفَطِّرُ الصَّائِمَ، قَالَ: يُعْطِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلَى مَذْقَةِ لَبَنٍ أَوْ تَمْرَةٍ أَوْ شَرْبَةِ مَاءٍ، وَمَنْ أَشْبَعَ صَائِمًا سَقَاهُ اللَّهُ مِنْ حَوْضِي شَرْبَةً لَا يَظْمَأُ حَتَّى يَدْخُلَ الْجَنَّةَ.

‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, এই ইফতার তার গোনাহ মাফের কারণ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় হবে। তাকে রোযাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে, তবে রোযাদারের সওয়াব বিন্দু পরিমাণও কমানো হবে না। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকের তো রোযাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য নেই। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এই সওয়াব প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে দিবেন, যে রোযাদারকে এক চুমুক দুধ, বা একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি রোযাদারকে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এভাবে পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন যে, জান্নাত প্রবেশ অবধি সে আর পীপাসার্ত হবে না।’ (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস -১৮৮৭, আদ্দাওয়াতুল কাবীর, বাইহাকী, হাদীস -৫৩২)।

এই ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে সালাফে সালেহীনের অনেকেই একাকি ইফতার করতেন না। কাউকে না কাউকে শরীক করতেন। যেমন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে উমর (রাযি.)এর সম্পর্কে বর্ণিত আছে।

كان لا يفطر في رمضان إلا مع المساكين
‘তিনি মিসকীনদের ছাড়া রমাযান মাসে ইফতার করতেন না’। (হিলয়াতুল আওলিয়া -১/২৯৮)।
আবুস সাওয়ার আদাবী (রহ.) বলেন-
كَانَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي عَدِيٍّ يُصَلُّونَ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ، مَا أَفْطَرَ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَلَى طَعَامٍ قَطُّ وَحْدَهُ إِنْ وَجَدَ مَنْ يَأْكُلُ مَعَهُ أَكَلَ، وَإِلَّا أَخْرَجَ طَعَامَهُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَأَكَلَهُ مَعَ النَّاسِ، وَأَكَلَ النَّاسُ مَعَهُ.

‘বনী আদীর লোকজন এই মসজিদে নামায পড়তেন। তাদের কেউ কখনও একাকি ইফতার করতেন না। যদি তার সাথে খাবে এমন কাউকে পেতেন তাহলে খেতেন অন্যথায় খানা নিয়ে মসজিদে চলে যেতেন এবং লোকদের সাথে খেতেন এবং লোকজন তার সাথে খেতেন।’ (আল কারামু ওয়াল জূদ, বর্ণনা -৫৫)।

রোযাদারকে ইফতারি করানোর বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি এটি মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কল্যাণ বৃদ্ধি করে। একে অপরের প্রতি সহানভূতি ও সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত করে।

ইতিকাফ

(৯২৫৮) রাশেদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া।
জিজ্ঞাসা:
মান্নতের ইতিকাফের জন্য কি রোযা রাখা জরুরি? কেউ যদি এরূপ নিয়ত করে যে, ‘আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে আমি তিন দিন মসজিদে ইতিকাফ করব, তবে রোযা রাখব না, তার ইতিকাফ পালনের সঠিক পদ্ধতি কী?

সমাধান: হ্যাঁ, মান্নতের ইতিকাফের জন্য রোযা রাখা জরুরি। অন্যথায় মান্নতকারীর ইতিকাফ সহীহ হবে না। চাই তার মান্নত শর্তযুক্ত হোক বা শর্তহীন হোক।

কেউ যদি এরূপ নিয়ত করে যে, ‘আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে আমি তিনদিন মসজিদে ইতিকাফ করব, তবে রোযা রাখব না’, তাহলে তার মান্নত সহীহ হয়ে যাবে তবে তাকে রোযা সহকারেই তিনদিন তিনরাত মসজিদে ইতিকাফ পালন করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস -৯৭১৩, বাদায়েউস সানায়ে -২/১০৯, আল মুহীতুল বুরহানী -২/৪০৮)।

আরও পড়তে পারেন-

আহলে কুরআন: কুরআন বলে ‘তুমি মিথ্যাবাদি’
মুমিন জীবনে নামাযের গুরুত্ব
আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি

(৯২৫৯) আমীরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা:
স্ত্রী যদি কামরার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ইতিকাফ নেয়, সেই কামরায় স্বামীর থাকার অনুমতি আছে কি?

সমাধান: স্ত্রীর ইতিকাফের স্থান ভিন্ন ও পৃথক হলে একই কামরায় স্বামীও থাকতে পারবে। তবে অহেতুক কথাবার্তা বা শারীরিক চাহিদা পূর্ণ করা যাবে না। ইতিকাফের বিধানের ক্ষেত্রে মহিলা পুরুষ একই রকম। তাই স্ত্রী স্বামীর অনুমতিতে ইতিকাফ করলে স্বামীর দায়িত্ব তাকে ইতিকাফের বিধান যথাযথ পালন করার সুযোগ করে দেয়া। এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো দুইজন পৃথক পৃথক কামরায় অবস্থান করা। (ফাতহুল কাদীর -২/৪০৪, বাদায়েউস সানায়ে -৩/৩৬, রদ্দুল মুহতার -৬/৪৪৩)।

(৯২৬০) আব্দুল করীম, বাঁশখালী।
জিজ্ঞাসা:
ইতিকাফরত ব্যক্তি জানাযায় শরিক হতে পারবে?

সমাধান: ইতিকাফরত ব্যক্তি (ওয়াজিব ও সুন্নাত ইতিকাফের ক্ষেত্রে) মসজিদের বাইরের জানাযার নামাযে শরিক হবার উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। যদি বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। হযরত আয়েশা (রাযি.) বর্ণনা করেন-

السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ: أَنْ لَايَعُودَ مَرِيضًا، وَلَايَشْهَدَ جَنَازَةً
‘মু’তাকিফের জন্য নিয়ম হল, তিনি কোনো অসুস্থকে দেখতে যাবেন না। কোনো জানাযায় শরিক হবেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস -২৪৭৩)।

কিন্তু শরীয়তসম্মত বা স্বাভাবিক প্রয়োজনে বের হওয়ার পর ইত্যবসরে কোনো জানাযায় শরিক হলে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে সেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস -৯৬৪৩, বাদায়েউস সানায়ে -২/১১৪, আল মুহীতুল বুরহানী -২/৪০৬)।

হজ্ব-উমরা

(৯২৬১) সালমান, ফেনী।
জিজ্ঞাসা:
আমার কাছে নগদ টাকা জমা নেই। তবে এ পরিমাণ জমি আছে যে, হজ্জ সম্পন্ন করতে যা লাগে, সে পরিমাণ জমি বিক্রি করে দিলেও অবশিষ্ট জমি ও তার ফসল সংসারের প্রয়োজনীয় খরচের জন্য যথেষ্ট হবে। এমতাবস্থায় আমার উপর কি হজ্জ ফরয হয়েছে?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মতে আপনার উপর হজ্জ ফরয। হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য জমা টাকা থাকা শর্ত নয়। অতিরিক্ত স্থাবর সম্পত্তি থাকলেও হজ্জ ফরয হয়। কারো মালিকানায় সাংসারিক প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহ করার পর হজ্জের যাবতীয় খরচ সম্পন্ন করা পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার উপর হজ্জ ফরয। সে জমি থেকে অর্জিত আয় দিয়েও হজ্জ করতে পারে, আবার জমি বিক্রি করেও করতে পারে। আর যদি সাংসারিক খরচ নির্বাহ করার পর হজ্জ করার মতো আয় বাকি না থাকে, তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয নয়।

(৯২৬২) আব্দুল করিম, শরীয়তপুর।
সমাধান:
মক্কা নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকাকে ঘিরে চতুষ্পার্শ্বের একটি সীমানা টেনে দেওয়া হয়েছে তাকেই মীকাত বলে। হাদীসে মীকাত নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো স্থানের নাম উল্লেখ থাকলেও তাতে তা সীমাবদ্ধ নয়; বরং সেই স্থানের দু’ পাশের বরাবর এলাকাগুলোও এর অন্তর্ভূক্ত। তাই যে এলাকা দিয়েই মক্কা আগমন করুক না কেন, সেই এলাকার মীকাতের বরাবর এসে বা তার পূর্বে তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস -১৫৩১, বাদায়েউস সানায়ে -২/১৬৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া -১/২২১)।

(৯২৬৩) হাবীবুর রহমান, চট্টগাম।
জিজ্ঞাসা:
হজ্জ চলাকালীন অবস্থায় মহিলারা সর্বাবস্থায় পায়ে মোজা পরিধান করতে পারবে কি না? যদি না পারে, তাহলে কোন সময় ব্যবহার করতে পারবে? সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: মহিলারা ইহরাম অবস্থায় হাত ও পায়ে যে কোনো ধরনের মোজা পরিধান করতে পারবে, কিন্তু পুরুষেরা মোজা পরিধান করতে পারবে না। (বাদায়েউস সানায়ে -২/১৮৩, আল বাহরুর রায়েক -২/৩৪৮, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা -১/১৮৭, রদ্দুল মুহতার -২/৪৯০)।

(৯২৬৪) হাবীবুল্লাহ, নোয়াখালী।
জিজ্ঞাসা:
আমার দাদা বার্ধক্যের কারণে হজ্জে তাওয়াফের পর সাথে সাথে সায়ী করতে পারেনি; বরং তিনি প্রায় ২ ঘন্টা পর সায়ী করেছেন। এখন আমার জানার বিষয় হলো, তাওয়াফের দুই ঘন্টা পর সায়ী করার কারণে দম ওয়াজিব হবে কি না?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত সূরতে দম ওয়াজিব হবে না। তাওয়াফের পর পরই সাঈ করা সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। বিধায় তাওয়াফের পরে কোনো উযরের কারণে সাঈ করতে বিলম্ব হলে দম ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত দেরি করলে মাকরূহ হবে। (মাবসূতে সারাখসী ৪/৫২, আল বাহরুর রায়েক ৩/২৫৭, রদ্দুল মুহতার -২/৫০০)।

নিকাহ-তালাক

(৯২৬৫) মুফিজুদ্দীন, কক্সবাজার।
জিজ্ঞাসা:
আমি দুই বছর পূর্বে বিবাহ করেছি। স্ত্রীকে নিয়ে আমি সংসার করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার শ^শুর বাড়ির লোকেরা চাচ্ছে না যে, আমাদের সংসার টিকে থাক। তারা তাদের মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র বিবাহ দিতে চায়। তারা বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে যেন আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেই। আমি পরিষ্কার ভাষায় তাদেরকে জানিয়ে দেই যে, আমি কখনই আমার স্ত্রীকে তালাক দিবো না। এক দিন তারা আমাকে ধরে নিয়ে যায় এবং একটি রুমে আটকে রাখে। কিছুক্ষণ পর একটি কাগজ নিয়ে আসে এবং তাতে দস্তখত করতে আমাকে বাধ্য করে। দস্তখত না করলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। এক পর্যায়ে আমি দস্তখত করতে বাধ্য হই। তবে মুখে কোনো কথা উচ্চারণ করিনি। পরে জানতে পারি যে, সেই কাগজে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম মর্মে বক্তব্য ছিলো। তারা আমার থেকে দস্তখত নিয়ে আমার স্ত্রিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে তদবীর করতে চাচ্ছি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, সেই দস্তখতের কারণে কি তালাক পতিত হয়েছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: প্রশ্নোক্ত সূরতে আপনার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়নি। কথা বলতে সক্ষম এমন ব্যক্তি থেকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক তালাক আদায় করার ক্ষেত্রে মৌখিক উচ্চারণের মাধ্যমে তালাক দিলেই কেবল তা কার্যকর হবে। মুখে কিছু না বলে আকার ইঙ্গিতে বা লিখিত আকারে স্ত্রীকে তালাক দিলে তার তালাক কার্যকর হবে না। আপনি যেহেতু মুখে তালাক দেওয়ার বিষয়টি উচ্চারণ করেননি তাই সেই কাগজে লিখিত তালাক পতিতও হয়নি। শরয়ী কারণ ব্যতীত জোরপূর্বক কারও থেকে তালাক গ্রহণ করা বা তালাক দিতে বাধ্য করা শরয়ী দৃষ্টিতে একটি জঘণ্য অপরাধ। মুসলিমদের উচিত প্রতিটি কাজে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা। তিনি সবই দেখছেন এবং তার কাছে সবাইকে কৃতকর্মের জন্য হিসাব দিতে হবে। (ফাতাওয়া খানিয়া-১/২৮৪, রদ্দুল মুহতার-৪/৪২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৪৪৫)।

(৯২৬৬) জমীরুদ্দীন, ফরীদপুর।
জিজ্ঞাসা:
আমার বোনকে তার স্বামী বায়িন তালাক দিয়েছে। এখন সে স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করছে। আমরা তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে চাচ্ছি কিন্তু স্বামী পক্ষ রাজি হচ্ছে না। তারা বলছে যে, ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ তো আমাদেরকেই দিতে হবে, তাই আমাদের এখানে থেকে ইদ্দত শেষ করে যাবে। অন্যথায় আমরা বাড়তি কোনো খরচ দিতে পারবো না। আমার জানার বিষয় হলো, শরীয়তে তালাক প্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত স্বামীর বাড়িতে পালন করার কোনো নিয়ম আছে কি?

সমাধান: জ্বী, তালাক প্রাপ্তা মহিলা স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করবে এটিই নিয়ম।
কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ

‘তোমরা তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিবে না এবং তারাও যেন বের না হয়। তবে প্রকাশ্য কোনো অশ্লীল কাজ করলে ভিন্ন কথা।’ (সূরা তালাক- ১)।

ইমাম আবু বকর জাস্সাস (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
فيه نهي للزوج عن إخراجها ونهي لها من الخروج وفيه دليل على وجوب السكنى لها مادامت في العدة لأن بيوتهن التي نهى الله عن إخراجها منها هي البيوت التي كانت تسكنها قبل الطلاق فأمر بتبقيتها في بيتها ونسبها إليها بالسكنى

‘এই আয়াতে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে বের করে দেয়া এবং স্ত্রীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এবং আয়াতে ইদ্দতে থাকাকালীন স্ত্রীকে বসবাসের স্থান দেওয়ার দলীল আছে। কারণ যে ঘর থেকে আল্লাহ তাদের বের করতে নিষেধ করেছেন, সেটা ঐ ঘর যে ঘরে তারা তালাকের পূর্বে বসবাস করত। আল্লাহ তাদেরকে সেই ঘরে রাখার আদেশ দিয়েছেন এবং তার সাথে বসবাসের স্থান যোগ করে দিয়েছেন’। (আহকামুল কুরআন- ৫/৩৪৮)।

সুতরাং স্বামীর বাড়িতে পর্দা করে ইদ্দত পালন করা সম্ভব হলে সেখানেই পালন করবে। অন্য কোথাও যাবে না। আর যদি স্বামীর বাড়িতে ইদ্দত পালন করা কোনো কারণে সম্ভব না হয় তাহলে পিতার বাড়িতে বা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার-৫/২২৫, আল বাহরুর রায়েক-৪/২৬৯, তাবয়ীনুল হাকায়েক-৩/২৭১, কিফায়াতুল মুফতী- ৮/৫৯৭)।

(৯২৬৭) মাওলানা আব্দুল্লাহ, নওঁগা।
সমাধান:
বহুদিন ধরে আমার স্ত্রীর সন্তান হচ্ছে না, তাই আমি অন্যের ছোট মেয়ে সন্তান লালন পালন করতে চাই। ঔষধ সেবন করে স্ত্রীর স্তনে দুধ নামিয়ে যদি সেই মেয়ে শিশুকে খাওয়ানো হয়, তাহলে কি সে আমার মাহরাম হবে? সে বড় হলে কি তার সাথে আমাকে পর্দা করতে হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: কৃত্রিম উপায়ে কোনো মহিলার স্তনে দুধ সঞ্চার করে কোনো শিশুকে খাওয়ালে আপনার জন্য সেই মেয়ে মাহরাম বিবেচিত হবে। আপনারা তার দুধ পিতা মাতা গণ্য হবেন। তবে দুধের সঞ্চার কৃত্রিম উপায়ে হওয়ায় এ বিধানটি দুধ সম্পর্কে অন্যান্য বিধানের মতো ব্যাপক হবে না। সাধারণ ক্ষেত্রে দুধ সম্পর্কের কারণে যতগুলো নর-নারীর সাথে মাহরামের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার সবগুলোই উপর্যুক্ত সূরতে প্রযোজ্য হবে না। বিস্তারিত জানার জন্য বিজ্ঞ কোনো আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় হবে। (সূরা নিসা ২৩, সহীহ বুখারী (৩১০৫), ফাতওয়া কাজীখান ১/২৫০, মুহীতুল বুরহানী ৪/৯৫, বাহরুর রায়েক ৩/৩৯৪, তাতারখানিয়া- ৪/৩৬৩)।

লেনদেন

(৯২৬৮) সামীউল হক, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা:
এক ব্যক্তি ব্যবসার উদ্দেশ্যে আমার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা কর্জ নিয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও সে সেই টাকা আদায় করছে না। সে আমার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সে ঋণ আদায় করবে না এটিই আমার প্রবল আশঙ্কা। সেই ব্যক্তির কিছু কাঁচা মাল আমার গোডাউনে রাখা আছে। আমার জানার বিষয় হলো, আমি কি সেই কাঁচা মাল আটকে দিতে পারবো? যদি সে শেষ পর্যন্ত আমার টাকা ফেরত না দেয় তাহলে কি আমি সেই মাল বিক্রি করে টাকা নিতে পারবো?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি ঋণের টাকা আদায় না করে; এবং তালবাহানা করে তাহলে তার সম্পদ আটকে রাখার অধিকার আপনার আছে। তার সম্পদ আটকে দিয়ে তার থেকে টাকা আদায় করতে পারবেন। আর যদি সে কোনোভাবেই টাকা না দেয় তাহলে সেই সম্পদ বিক্রি করে আপনার টাকা নিয়ে নিতে পারবেন। তবে লক্ষ রাখতে হবে যে, ঋণের অধিক সম্পদ বিক্রি করা বা বিনষ্ট করা বৈধ হবে না। (রদ্দুল মুহতার-৬/১৫১, হাশিয়াতুত তাহতাবী ৪/৮৬, কিফায়াতুল মুফতি ১১/১৪৩)।

(৯২৬৯) কাশেম আলী, চট্টগ্রাম
জিজ্ঞাসা:
আমি একজন ব্যবসায়ী। প্রায় প্রতি দিনই কোন না কোন কিছু বাকিতে বিক্রি করতে হয়। বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে নগদে বিক্রির তুলনায় টাকা বেশি ধরে বিক্রি করি। ক্রেতাও জানে যে বাকিতে নেয়ার কারণে টাকা বেশি ধরা হচ্ছে। সে জেনে বুঝেই ক্রয় করে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, এভাবে বাকিতে বেশি দাম ধরে বিক্রি করা শরীয়তসম্মত কি না?

সমাধান: কোনো পণ্যের দাম নগদের তুলনায় বাকিতে বেশি ধরা শরীয়তসম্মত। চুক্তির সময় পণ্যটি বাকিতে বিক্রি হচ্ছে এবং কত দামে বিক্রি হচ্ছে তা নিশ্চিত হতে হবে। চুক্তির সময় দাম সুনিশ্চিত হলে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আর কোনো আাপত্তি থাকবে না।

যদি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় মূল্য নির্দিষ্ট না করা হয়, তাহলে জায়েয হবে না। প্রকাশ থাকে যে, বাকিতে বিক্রি করার পর যদি ক্রেতা সঠিক সময়ে দাম পরিশোধ করতে না পারে এবং আরও সময় চায় তখন পুনরায় টাকা বৃদ্ধি করা যাবে না। (শরহুল মাজাল্লাহ; মাদ্দা ২৪৫-২৪৭, হিদায়া-৩/৭৪, কিফায়াতুল মুফতী-১১/১৩৫)।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।