জিজ্ঞাসা-সমাধান

মাসবুক ব্যক্তির নামায প্রসঙ্গে

(৯৪২২) মুহাম্মদ রজব আলী, ফেনী।

জিজ্ঞাসা: মুহতারাম মুফতি সাহেব বরাবরে আমার জানার বিষয় হলো এই যে, মাসবুক ব্যক্তি যদি ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরায়, তখন তার নামায বাতিল হয়ে যাবে কিনা?

সমাধান: মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর পর দেখতে হবে যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাম ফিরিয়েছেন, নাকি ভুলে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাম ফিরিয়ে থাকেন, তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলে ফিরিয়ে থাকেন, তখন দেখতে হবে যে, ইমামের সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়েছেন, নাকি পরে। যদি সঙ্গে সঙ্গে ফিরান অথবা আগে ফিরান, তখন তার নামায বাতিল হবে না এবং সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। আর যদি পরে ফিরান তখনও তার নামায বাতিল হবে না। তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (দুররে মুখতার- ২/৪২২, ফাতহুল কদীর- ১/৪০০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/৯১, আল বাহরুর রায়েক- ১/৬৬২)।

নামায প্রসঙ্গে

(৯৪২৩) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: নাবালেগের পেছনে বালেগ ব্যক্তির ইকতিদা জায়েয আছে কিনা? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: নাবালেগের পেছনে বালেগের ইকতিদা কোনো অবস্থাতেই জায়েয হবে না। চাই তা ফরয নামাযে হোক কিংবা নফল নামাযে। আর এটাই ফুকাহায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মত। (জাওহারাতুন নায়ারা- ১/১১৬, হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন- ২/৩৮৭, আন নাহরুল ফায়েক- ১/২৫০)।

ঈদের দিন নফল নামায প্রসঙ্গে

(৯৪২৪) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে নফল নামায পড়ার হুকুম কী? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে নফল নামায পড়া মাকরূহ। চাই তা ঘরে হোক কিংবা ঈদগাহে। এটাই ফুকাহায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মত।  (আল বাহরুর রায়েক- ২/২৭৯, ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া- ১১০-১১১, মুহিতে বুরহানী- ২/৪৯৭)।

জানাযার নামায সংক্রান্ত

(৯৪২৫) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: জানাযার নামাযে ইমাম যদি পঞ্চম তাকবীর বলে ফেলেন, তখন মুক্তাদিগণ ইমামের অনুসরণ করবে কিনা? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: জানাযার নামাযে ইমাম যদি পঞ্চম তাকবীর দিয়ে ফেলেন, তখন মুক্তাদিগণ ইমামের অনুসরণ করবেন না; বরং মুক্তাদিগণ প্রত্যেকেই ইমাম সাহেবের সালামের অপেক্ষায় থাকবেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব সালাম ফিরাবেন, মুক্তাদিগণও তার সাথে সালাম ফিরাবেন। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১৬৪, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৩৪৪, ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া- ১৩৩)।

আউলিয়ায়ে কিরামদেরকে তা’জীমি সিজদা করা প্রসঙ্গে

(৯৪২৬) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: আউলিয়ায়ে কিরামদেরকে তা’জীমের জন্য সিজদা করা জায়েয আছে কিনা?

সমাধান: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। চাই তা ইবাদাতের জন্য হোক কিংবা ত’জীমের (সম্মানের) জন্য হোক। কেননা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ইবাদাতের উদ্দেশ্যে সিজদা করা কুফরী এবং সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সিজদা করা হারাম। (দুররে মুখতার মাআ রদ্দিল মুহতার- ৯/৬৩২, মিআতু মাসায়িল- ৬৬)।

টাখনুর নিচে জুব্বা পরিধান করা ব্যক্তির পেছনে নামায পড়া প্রসঙ্গে

(৯৪২৭) মুহাম্মদ শামছুদ্দিন, আনোয়ারা, চট্টগ্রম।

জিজ্ঞাসা: ইমাম সাহেবের জুব্বা যদি টাখনুর নিচে থাকে, তাহলে এমন ইমাম সাহেবের পেছনে নামায আদায় করার হুকুম কী?

জনৈক মুফতি সাহেব বলেছেন মাকরূহে তাহরীমির সাথে আদায় হয়ে যাবে। আবার অন্য একজন আলেম বলেছেন পুনরায় নামায পড়তে হবে। হযরত মুফতি সাহেবদের কাছে এই ব্যাপারে আমি কুরআন ও হাদীসের আলোকে সঠিক সমাধান চাচ্ছি।

সমাধান: পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে পায়জামা, লুঙ্গি বা জুব্বা পরিধান করা মাকরূহে তাহরীমী। তথা কবীরা গোনাহ। সর্বদা কবীরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি ফাসেকের অন্তর্ভুক্ত। আর ফাসেকের পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। তাই প্রশ্নে বর্ণিত ইমাম সাহেব যদি সর্বদা টাখনুর নিচে জুব্বা পরিধান করে থাকে, তাহলে তার পেছনে নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে মাকরূহে তাহরীমীর সাথে আদায় হবে এবং মুসল্লিদের জন্য পুনরায় নামায পড়া লাগবে না। তবে মসজিদ কমিটির দায়িত্ব হলো, ইমাম সাহেবকে তার উক্ত অবহেলার জন্য সতর্ক  করা, যদি ইমাম সাহেব উক্ত কাজ থেকে ফিরে আসে, তবে ভালো। অন্যথায় একজন মুত্তাকী, পরহেযগার ইমামতির উপযুক্ত কাউকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করা। কিন্তু একাকী নামায পড়ার চেয়ে এ ধরনের ইমামের পেছনে নামায আদায় করা উত্তম। (সহীহ বুখারী হাদীস নং- ৫৭৮৭, সুনানে আবি দাউদ হাদীস নং- ৪০৯৪-৯৫, মিরকাতুল মাফাতীহ- ২/৪৩৫, রদ্দুল মুখতার- ৩/৫২৯, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৯৩)।

জীবিত ব্যক্তির মিরাস বণ্টন প্রসঙ্গে

(৯৪২৮) মুসাম্মত রাবেয়া, ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: আমার পিতা আমাকে মোট ১০ শতাংশ জায়গা লিখে দিয়েছেন। এখন আমার পিতা জীবিত আছেন। আমার তিন কন্যা, কোনো ছেলে নেই। এমতাবস্থায় আমার স্বামী কোনো একজন মুফতি সাহেবের নিকট হতে আমার সম্পদের ফারায়েয বের করে নিয়েছেন। আমাকে তার প্রাপ্য সম্পত্তি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন এবং তার সম্পত্তি না দিলে আমি তার কাছে ঋণী থাকবো এবং আল্লাহর কাছে গ্রেফতার হবো বলে ধমকি দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় মুফতি সাহেবের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হলো, (ক) আমার জীবিত অবস্থায় আমার সম্পদের ফারায়েয বের করা কি জায়েয আছে?

(খ) এখন আমাকে তার প্রাপ্য সম্পদ দেয়ার জন্য কি চাপ প্রয়োগ করা জায়েয হচ্ছে?

(গ) এখন যদি আমার স্বামীকে সম্পদ না দেই, তাহলে কি আমি গুনাহগার হবো? আমার জিজ্ঞাসার সঠিক উত্তর প্রদানে মুফতি সাহেবের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

সমাধান: (ক) কুরআন-হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়নে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, স্বামী তার স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে তার মিরাসের মালিক হবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর। তার জীবদ্দশায় নয়। তাই স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী তার সম্পত্তির ফারায়েয বের করে নিজের প্রাপ্য সম্পদ দেয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করা স্বামীর জন্য কোনোভাবেই জায়েয হবে না।

(খ) স্বামীর জন্য স্ত্রীর সম্পত্তির ফারায়েয বের করা স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় তখন জায়েয হবে, যখন স্বামীর উদ্দেশ্য সৎ হবে। তথা মিরাসের ইনসাফ ভিত্তিক বণ্টন জেনে রাখা। যাতে স্ত্রীর মৃত্যুর পর সম্পদ বণ্টনে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে (যেমন, স্ত্রীর জীবদ্দশায় তার কাছ থেকে তার সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়া ইত্যাদি) স্বামীর জন্য স্ত্রীর সম্পদের ফারায়েয বের করা উচিত নয়।

(গ) স্ত্রী যদি জীবিত অবস্থায় স্বামীকে তার সম্পদ না দেয়, তাহলে স্ত্রীর কোনো গুনাহ হবে না; বরং স্বামী যদি স্ত্রীর কাছ থেকে তার সম্পত্তি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয়। তাহলে স্বামী সম্পদ আত্মসাৎকারী হিসেবে গণ্য হবে এবং সম্পদ আত্মসাৎ করার গুনাহ হবে। সর্বোপরি স্বামীর জন্য শরীয়ত কর্তৃক এ সমস্ত নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। (সূরা নিসা- ১২, সহীহ বুখারী- ১/৪৫৪, দুররে মুখতার মাআশ শামী- ১/৫২৭, রদ্দুল মুহতার মাআশ শামী- ১০/৫২৫, বাহরুর রায়েক- ৮/৪৮৮)।

শর্তসাপেক্ষে ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে

(৯৪২৯) মুহাম্মদ হানিফ, ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: আমি মুহাম্মদ হানিফ ১ লক্ষ টাকা জামীলকে ঋণ দিবো এই শর্তে যে, সে আমাকে টাকা ফেরত দেয়ার সময় ৯৮,০০০/- (আটানব্বই হাজার) টাকা দিবে এবং দুই হাজার টাকার বিনিময়ে সে আমাকে ২০ মন ধান দিবে। উক্ত সূরতে ঋণ দেয়া এবং নেয়া জায়েয হবে কিনা?

আর যদি জায়েয না হয় তাহলে জায়েয হওয়ার কোনো সূরত আছে কিনা?

সমাধান: কোনো ব্যক্তিকে মুনাফা দেয়ার শর্তে ঋণ দেয়া বৈধ নয়। এরূপ মুনাফা নেয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে ঋণের বিনিময়ে ২,০০০ টাকায় ২০ মন ধান নেওয়া সুদের লেনদেনের একটি অপকৌশল বিধায় এরূপ লেনদেন শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ এবং প্রশ্নোক্ত ঋণের মধ্যে (بیع بالشرط) ও পাওয়া যায়, যা নাজায়েয।

আর জায়েয পদ্ধতি হলো, ‘বাইয়ে সালাম’ অর্থাৎ দাম নগদ পরিশোধ করা এবং পরে নির্দিষ্ট সময়ে মাল গ্রহণ করা। তবে বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন- (১) নগদ কত টাকার বিনিময়ে কী দ্রব্য দেয়া হবে, তার শ্রেণি নির্ণয় করতে হবে। অর্থাৎ দ্রব্যটি কী হবে। যেমন; ধান, গম, যব ইত্যাদি (২) উক্ত মালের ধরণ বর্ণনা করতে হবে। (৩) মালের গুণ বর্ণনা করতে হবে (৪) মালের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। (৫) মাল কোন দিন কোন সময় ও কোথায় হস্তান্তর করা হবে, তা নির্ণয় করতে হবে। (৬) যে মালের উপর বাইয়ে সালাম নির্ধারণ হবে তা এমন মাল হতে হবে, যা লেনদেনের দিন থেকে পরিশোধের দিন পর্যন্ত বাজারে নিয়মিত পাওয়া যায়।

উল্লিখিত শর্তসমূহ পূরণ সাপেক্ষে এ ধরনের লেনদেন জায়েয হবে। (সুনানে সুগরা লিল বাইহাকী- ২০৫৬, বাদায়েউস সানায়ে- ১/২১২ ও ৭/১০৩)।

মসজিদ স্থানান্তর করা প্রসঙ্গে

(৯৪৩০) মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি।

জিজ্ঞাসা: আমার এলাকায় ১৯৮৩ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত একটি জুমআ মসজিদ রয়েছে। মসজিদটি ১ একর টিলা ভূমিতে অবস্থিত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মসজিদটি সংস্কার করার প্রয়োজনে টিলা ভূমির মাটি কেটে সমতল করা হয়।

মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তে মসজিদের পূর্বের মূল জায়গা থেকে স্থানান্তর করে ৩০-৪০ ফুট সামনের দিকে তথা পশ্চিম দিকে নতুন করে মসজিদ পুনঃনির্মাণ করা হবে।

মসজিদের জায়গা সরকারিভাবে কবুলিয়ত ভুক্ত এবং মসজিদের পূর্বের জায়গা সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যার উপর দিয়ে মানুষ, পশু এমনকি কুকুর, বিড়াল অবাধ চলা ফেরা বা নোংরা করার জন্য কোনো বাধা নেই। কেউ কেউ বলছেন, পূর্বের জায়গা সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।

মসজিদের চতুর্দিকে জায়গার অভাব নেই। কমিটির চিন্তা হলো, মসজিদ স্থানান্তর করে আশে পাশে দোকান-পাট অথবা ব্যবসার জন্য কিছু একটা করা। এখন আমার প্রশ্ন হলো-

১। আয়ের জন্য অথবা সৌন্দর্যের জন্য মসজিদ স্থানান্তর করা জায়েয আছে কিনা?

২। মসজিদের পূর্বের জায়গা অরক্ষিত রাখা যাবে কিনা?

৩। অরক্ষিত জায়গা অন্য যে কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা?

৪। আমাদের মসজিদের ইমামের মতে পূর্বের মসজিদের জায়গা রক্ষিত করার প্রয়োজন নেই এবং মসজিদ স্থানান্তরে কোনো সমস্যা নেই। কুরআন-হাদীসের আলোকে দলীল ভিত্তিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: (১) কুরআন-হাদীস ও ফিকহী গ্রন্থাবলী অধ্যয়নে একথা প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী শরীয়াতসম্মত পদ্ধতিতে কোনো জায়গায় একবার মসজিদ নির্মিত হলে, কেয়ামত পর্যন্ত তা মসজিদ হিসেবেই বহাল থাকে। তাই অপরিহার্য কারণ ব্যতীত উক্ত জায়গা হতে অন্যত্র মসজিদ সরিয়ে নেয়া জায়েয হবে না।

উপরোল্লিখিত নীতিমালার আলোকে প্রশ্নোক্ত সূরত অর্থাৎ ইনকাম বা সুন্দরের জন্য পুরাতন মসজিদকে তার আগের স্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া কোনোভাবেই জায়েয হবে না।

(২) যেহেতু শরীয়তের বিধান মোতাবেক ঐ জায়গা একবার শরয়ী মসজিদ হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে, তাই জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত কেয়ামত অবধি ঐ জায়গা মসজিদ হিসেবেই বহাল থাকবে। সুতরাং মসজিদ কমিটি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকদের জন্য পূর্বের মসজিদকে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আজান ইকামতের মাধ্যমে মসজিদ হিসেবে আবাদ রাখা জরুরি। আর তা যদি সম্ভব না হয় কিংবা মসজিদ এলাকা জনমানব শূন্য হয়ে যায়, তাহলে মসজিদের আদব রক্ষার্থে উক্ত মসজিদের জায়গা চতুর্দিক থেকে বেষ্টনী বা অন্য কোনো উপায়ে সংরক্ষণ করা এবং উক্ত মসজিদের আদব রক্ষা করা তাদের প্রত্যেকেরই ঈমানি কর্তব্য।  অন্যথায় মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী সকলেই গুনাহগার হবেন। 

(৩) উক্ত জায়গা বিক্রি করা, তাতে গাছগাছালি লাগানো, দোকান পাট ইত্যাদি স্থাপন কোনভাবেই জায়েয নাই। এমনকি মসজিদের কাজে ব্যবহৃত বা ওয়াকফকৃত জায়গায় কবরস্থান বানানো ও প্রচলিত (স্থায়ী) মক্তব মাদরাসা নির্মাণ করাও বৈধ নয়, তবে মসজিদের আদব বজায় রেখে সেখানে কুরআন-হাদীস শিক্ষা দেয়া-নেয়া যাবে।

(৪) প্রশ্নোক্ত মসজিদ নিয়ে ইমাম সাহেবের বক্তব্য (মসজিদ স্থানান্তরে কোনো সমস্যা নাই এবং পূর্বের মসজিদের জায়গা রক্ষিত করার কোনো প্রয়োজন নাই) সঠিক নয়। তাই ইমাম সাহেবের জন্য জরুরি হলো, উক্ত বক্তব্য থেকে ফিরে এসে খালেস নিয়তে আল্লাহর কাছে ভুল উক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জেনে-বুঝে সহি শুদ্ধভাবে শরীয়ত অনুযায়ী চলার তাওফীক দান করুন, আমিন। (সূরা জি¦ন- ১৮, দুররে মুখতার মাআশ শামী- ৬/৫৫, রদ্দুল মুহতার- ৬/৫৫, আল বাহরুর রায়েক- ৫/৪২১, আহসানুল ফাতাওয়া- ৬/৪৫১)।

ঘুষ দিয়ে ‘গ্রাম গাড়ি’ শহরে চালানো প্রসঙ্গে

(৯৪৩১) মুহাম্মদ মাহীর, কাজীর দেওরি, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: আমি একজন প্রাইভেট গাড়ি চালক। প্রতিদিন মালিকের কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে আমার দ্বীনি কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। এমতাবস্থায় এ পেশা পরিবর্তন করে আমি নিজে একটি সিএনজি ক্রয় করে চালাতে আগ্রহী। এখন হযরতের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, সিএনজি সাধারণত ২ শ্রেণীর হয়ে থাকে।

প্রথমত: মহানগরে চলাচলের জন্য অনুমোদনকৃত ‘চট্টমেট্টো’ ক্যাটাগরির নম্বর। আর দ্বিতীয়ত: শহর এলাকার বাহিরে চলাচলের জন্য জেলা ক্যাটাগরির নম্বর বা ‘গ্রাম গাড়ি’। আমি একজন শহর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাই শহর এলাকাতে গাড়ি চালাতে আগ্রহী। চট্টমেট্টো গাড়ি ক্রয় করা আমার সামর্থ্যে নেই। তাই আমি ‘গ্রাম গাড়ি’ ক্রয় করে শহর এলাকাতে চালাতে আগ্রহী। ঐ ক্ষেত্রে ট্রাফিক সার্জেন্টকে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা (আইন বহির্ভুতভাবে) প্রদান করতে হবে। কারণ, গ্রাম গাড়ি শহরে চলাচলের    

জন্য সরকার কর্তৃক অনুমতি নেই। এমতাবস্থায় উক্ত পেশা গ্রহণ করা আমার জন্য কতটুকু শরীয়তসম্মত হবে? এ বিষয়ে কুরআন হাদীসের আলোকে বিস্তারিতভাবে জানতে আগ্রহী।

সমাধান: সরকারের যে সমস্ত নিয়ম কানুন শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক না, তা মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আবশ্যক। বিধায় ‘চট্টগ্রাম সিরিয়ালের গাড়ি’ যা শহর এলাকাতে চালানো সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়। কিন্তু তা সরকারের পক্ষ হতে নির্ধারিত বেতনভুক্ত কর্মচারী ট্রাফিক সার্জেন্টকে প্রতিমাসে ২০০০ টাকা ঘুষ প্রদান করার মাধ্যমে চালানো আপনার জন্য কোনোভাবেই জায়েয হবে না। ওই ট্রাফিক সার্জেন্টের জন্যও এমন অনৈতিক অর্থগ্রহণ করে নিষিদ্ধ গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া জায়েয হবে না। (সূরা মায়েদা- ৪২, সুনানে তিরমিযী- ৩/৬১৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৩/২৯৬, আল মাওসুআ- ২২/২২৩)।

ওয়ারিশদের অনুমতি ব্যতীত মৃত ব্যক্তির টাকা দান করা প্রসঙ্গে

(৯৪৩২) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: জনৈক ব্যক্তির কিছু টাকা হাওলাত ছিলো বা আমানত ছিলো। পরবর্তীতে সে মৃত্যুবরণ করলে ঐ টাকা মাদরাসার এক গরিব ছাত্রকে দিয়ে দেই। এখন জানার বিষয় হলো, ঐ লোকের কিছু ধনী ওয়ারিশ জীবিত আছেন। যাদের কাছে ঐ টাকা কিছুই না। এখন কি তার হক থেকে দায়মুক্ত হওয়ার জন্য ঐ টাকা তার জীবিত ওয়ারিশদেরকে দিতে হবে? তা জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: কারো প্রাপ্য হক কিংবা আমানত হিসাবে রক্ষিত সম্পদ বা টাকা পয়সা আপনার কাছে থাকলে তা উক্ত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়া আপনার জন্য অবশ্যই জরুরি। আর যদি ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে তার রেখে যাওয়া আমানত বা হক তার জীবিত ওয়ারিশগণের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। কারণ, শরয়ী দৃষ্টিকোণে আমানতদাতা ও হকদারের মৃত্যুর পর, তার ওয়ারিশগণই উক্ত আমানতের হকদার। আর হকদারের হক তাদের কাছে যেকোন উপায়ে পৌঁছে দেয়া ওয়াজিব। তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও না পৌঁছিয়ে ঐ সম্পদ সদকা করার বিধান শরীয়তে নেই। (তবে নিরাপদ থাকার লক্ষ্যে তাদের অবহিত করা ছাড়া ঐ সম্পদ হাদিয়া বা অন্য যেকোন উপায়ে তাদের নিকট পৌঁছানো যাবে), আর যদি কোনো ওয়ারিশ জীবিত না থাকে বা জানা না থাকে, তাহলে উক্ত সম্পদ ঐ ব্যক্তির পক্ষ হতে গরিব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিবে। (দুররে মুখতার- ৯/৩০৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ৪/৩২৯, আল মাওসুআ- ৪৩/৭৯)।

মসজিদ পরিচালনার জন্য নিচতলা মার্কেট করে ভাড়া দেয়া প্রসঙ্গে

(৯৪৩৩) মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, ঈদগাহ, কক্সবাজার।

জিজ্ঞাসা: আমার জানার বিষয় হচ্ছে, আমার আব্বা একটি মসজিদের মুতাওয়াল্লী ছিলেন। তখন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মসজিদের কিছু ওয়াকফিয়া সম্পদ জোরপূর্বক দখল করে নেয়ার কারণে মামলা করে তা উদ্ধার করে নিতে আমার আব্বার অনেক টাকা ব্যয় হয় এবং প্রচুর ঋণ করতে হয়। যা মসজিদের জন্য করেছেন। অতঃপর আমার আব্বা এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তখন আমাকে মুতাওয়াল্লী বানানো হয়। কিন্তু মসজিদের কোনো শক্তিশালী ও সম্পদশালী কমিটি নেই। এখন মসজিদের ওই ঋণ পরিশোধ করা এবং বর্তমান অন্যান্য ব্যয় বহন করা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই মসজিদের সাধারণ মুসল্লিগণ পরামর্শ দিচ্ছেন, আমি যেনো বর্তমান মসজিদটি ভেঙে নতুন ফাউন্ডেশন দিয়ে বহুতল করে নির্মাণ করি এবং তা একটি কোম্পানী করে দিবে। কিন্তু কোম্পানীর শর্ত হলো, নিচতলা মার্কেট করে ভাড়া দিয়ে তার মিস্ত্রি খরচ বহন করবো। অর্থাৎ পরে আদায় করে দিবো। আর রানিং খরচ বহন করবো। এভাবে হলে মসজিদের পূর্বের ঋণও পরিশোধ করা সম্ভব হবে। বর্তমান পরিচালনাও সহজ হবে।

অতএব, আমার প্রশ্ন হলো, এভাবে যা একবার অনেকদিন মসজিদ ছিলো, তা আবার নিচতলা মার্কেট করে ভাড়া দেয়া যাবে কিনা? অন্যথায় আমাদের জন্য ঋণ পরিশোধ করা ও বর্তমানে ভালোভাবে মসজিদ পরিচালনা করা এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রয়োজনের খাতিরে এটা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে কিনা? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন। মসজিদের কোনো পাশে মসজিদ বাড়ানো বা মার্কেট করার সুব্যবস্থা নেই।

সমাধান: ফিকাহ শাস্ত্রের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়নে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কোনো জায়গা একবার শরয়ী পদ্ধতিতে মসজিদ সাব্যস্ত হলে, তা সাত জমিন থেকে সাত আসমান পর্যন্ত চিরতরের জন্য মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়। পরবর্তীতে তার কোনো অংশ মসজিদ থেকে বের করে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা এমনকি মসজিদ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজের জন্যও ব্যবহার করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। অতএব, প্রশ্নে বর্ণিত মসজিদের নিচতলা প্রশ্নোল্লিখিত প্রয়োজনের ভিত্তিতে মার্কেট কিংবা অন্য কোনো কাজের জন্য ব্যবহার করা কোনভাবেই জায়েয হবে না বিধায় এমন  চিন্তাধারা পরিহারযোগ্য। উক্ত মসজিদের মুসল্লিয়ানে কেরাম ও এলাকাবাসীর জন্য জরুরি হলো, দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার লক্ষ্যে এবং দান-সদকা করার মাধ্যমে উক্ত মসজিদের আর্থিক ফান্ড শক্তিশালী করার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ভালো কাজ করার ও  খারাপ  কাজ  থেকে  বেঁচে  থাকার তাওফীক দান করুন; আমিন। (দুররে মুখতার- ৬/৫১৬ ও ৫৪৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ২/৪০৮, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ৮/১৬২, হাশিয়ায়ে তাতারখানিয়া- ৮/১৫৯, ইলাউস সুনান- ১৩/২৪৮)।

কাযা নামায আদায় করা প্রসঙ্গে

(৯৪৩৪) আমিনুল হক, দুর্গা নারায়ণপুর, শেরপুর।

জিজ্ঞাসা: আমার বর্তমান বয়স ৫৭ বৎসর। গত ২০১৮ইং সনে পবিত্র হজ্জ করে এসেছি। আমি ২৫ বৎসর বয়সের আগে নামায-রোযা আদায় করিনি বললেই চলে।

শায়খ আব্দুল আজিজ (রহ.) মাজমু ফাতাওয়াতে লিখেছেন, অবহেলা বা অলসতা অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করলে, তার কাযা আদায় শুদ্ধ হবে না। তিনি আরও বলেন, আপনি যে সময়ে নামায পড়তেন না, রোযাও রাখতেন না, সেসময়ের নামায-রোযার কাযা আদায় করা আপনার উপর ওয়াজিব না; বরং আপনার উপর ওয়াজিব হলো, আল্লাহর নিকট সত্যিকারের অর্থে তাওবা করা।

(ক) পূর্বে যা গত হয়েছে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

(খ) নামায-রোযা ত্যাগ একেবারে ছেড়ে দেয়া।

(গ)  এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনো ফিরে যাবেন না।

তাওবার পাশাপাশি ওয়াজিব আমলসমূহ সময়মতো আদায় করা।  বেশি-বেশি নফল আমল করা।

এখন আমার প্রশ্ন হলো, এই দুই ক্ষেত্রে শরীয়তে আমার জন্য করণীয় কী? আমার কী জীবনের ছুটে যাওয়া নামায-রোযা আদায় করতে হবে নাকি শুধু তাওবা করে ভবিষ্যতের ফরয ওয়াজিব আমলসমূহ অব্যাহত রাখতে হবে?

উল্লেখ্য, উমরী কাযা  থাকা অবস্থায় চাশত, ইশরাক, তাহাজ্জুদ নামায আদায় করা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

সমাধান: ইসলামের যে পাঁচ স্তম্ভ তার অন্যতম দুই স্তম্ভ হচ্ছে নামায আর রোযা। তাই কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাতের আলোচনার পর নামায ও রোযার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিধায় ঐ দুই ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমান বালেগ নর-নারীর উপর ফরয। কখনো কোনো কারণে ঐ ইবাদাত ছুটে গেলে কিংবা দীর্ঘকাল অবহেলা বশত আদায় না করলে, পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করা আবশ্যক। শুধুমাত্র তাওবা করা যথেষ্ট নয়; এ বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কাযা নামায আদায়ের পাশাপাশি হাদীস শরিফে বর্ণিত নফল নামাযসমূহ আদায় করার মধ্যে কোনো প্রকার অসুবিধা নেই; বরং আদায় করার দ্বারা সওয়াবের অধিকারী হবেন। তবে অন্যান্য নফল নামায আদায় করার চেয়ে কাযা নামায আদায় করা উত্তম ও যুক্তি সংগত। কারণ, এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ওই কাযা নামায আদায় না করার কারণে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। নফল নামাযের জন্য নয়।

আরও পড়তে পারেন-

উল্লেখ্য যে, নামায ও রোযা তার নির্ধারিত সময়ে আদায় না করে, বিলম্বে আদায় করার কারণে যে গুনাহে কবিরা হয়েছে, তার থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য খালেস নিয়তে তাওবা করা জরুরি। শুধুমাত্র কাযা আদায় করার দ্বারা গুনাহমুক্ত হবেন না; বরং কাযা আদায় ও তাওবা উভয়টা জরুরি। (সহীহ বুখারী- ৫৯৭, সহীহ মুসলিম- ৬৮৪, সুনানে নাসায়ী- ৬১৪, দুররে মুখতার- ৩/৪৩৯ ও ৬৩৪, ফাতাওয়ায়ে শামী- ২/৬৪৬, হাশিয়ায়ে তাহতাবী- ৪৪০)।

সালাম প্রসঙ্গে

(৯৪৩৫) আয়ুব খান (ঝালকাঠী), হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম ।

জিজ্ঞাসা: আমরা জানি পরস্পর সাক্ষাতে সালাম দেয়া সুন্নাত। প্রশ্ন হচ্ছে, সালামের সুন্নাত পন্থা কী? আমাদের দেশে দেখা যায়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশকালে শিক্ষার্থীরা তাঁদেরকে সালাম দিয়ে থাকে। এটা সুন্নাত পন্থা কিনা? সুন্নাত তরীকা না হলে, এভাবে সালাম দেয়া বর্জনীয় কিনা?

সমাধান: হাদীস শাস্ত্রের সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়নে জানা যায় যে, সালাম দেয়া নবীজি (সা.)এর সুন্নাত। আর তা পালন করার জন্য রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)কে বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং সালাম দেয়ার বিভিন্ন নিয়ম কানুন বলেছেন। যার কতিপয় পন্থা এখানে উল্লেখ করা হলো-

১- দাঁড়ানো ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করবে।

২- চলমান ব্যক্তি অবস্থানরত ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করবে।

৩- আগন্তুক ব্যক্তি ঘরে থাকা ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করবে।

৪- কোন মজলিসে নতুন করে শরিক হওয়া ব্যক্তি মজলিসে আগ থেকে শরিক থাকা ব্যক্তিদেরকে সালাম প্রদান করবে।

৫- ছোটরা বড়দেরকে সালাম প্রদান করবে। সুতরাং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশকালে শিক্ষার্থীরা যে সালাম প্রদান করার কথা প্রশ্নে বর্ণিত, তা জায়েয। যদিও সালামের আদব হলো, ঘরে প্রবেশকারী সালাম দিবে এবং সালাম আদান প্রদানকারী মানুষের মাঝে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে আগে সালাম প্রদান করে।

অপর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রথম সালাম প্রদানকারী অহংকার থেকে মুক্ত। রাসূল (সা.) এর উক্ত হাদীসদ্বয়ের কারণে আগে সালাম প্রদান করা সর্বোত্তম হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। চাই সে ছাত্র হোক কিংবা শিক্ষক। মালিক হোক কিংবা শ্রমিক। বড় হোক কিংবা ছোট। (মিশকাতুল মাসাবীহ [বাবুস সালাম]- ৪০০ ও হাদীস নং- ৪৬৪৬, ৪৬৪০, ৪৬২৮, ৪৬২৯, ৪৬৪৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া- ২৮/১৮৫)। 

মোহর প্রসঙ্গে

(৯৪৩৬) মুহাম্মদ জুনায়েদ, ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: মোহরে ফাতেমী বর্তমান পরিমাণ অনুযায়ী ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এখন মেয়ে পক্ষ বলতেছে ৫ লক্ষ টাকা মোহরানা দিতে হবে; এক লক্ষ টাকা উসূল হবে। এখন এই মোহর কি শরীয়ত সম্মত হবে? আর মোহরে ফাতেমী বলে গণ্য হবে?

উল্লেখ্য, মেয়ে পক্ষের সাথে শুরু থেকেই কথা ছিলো বিবাহ মোহরে ফাতেমী অনুযায়ী হবে। এখন ওনারা ৫ লক্ষ টাকা মোহর দিতে বলতেছে। এখন সেটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

সমাধান: বিবাহে মোহরানার শরয়ী বিধান হলো, দশ দিরহামের কম না হওয়া (দশ দিরহামের পরিমাণ বর্তমান হিসেবে দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা বা ৩০ গ্রাম ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা বা তার বাজার মূল্য) এবং স্বামীর সামর্থের ঊর্ধ্বে না হওয়া। আর উত্তম ও বরকতময় মোহর হলো, নবী (সা.)এর অধিকাংশ স্ত্রী এবং তাঁর সকল কন্যাদের মোহর। যার পরিমাণ ৫০০ দিরহাম খাঁটি রূপা বা তার বাজার মূল্য ছিল। যেটি মোহরে ফাতেমী হিসাবে সুপরিচিত। তাই সকল মুসলমানদের জন্য রাসূল (সা.)এর অনুসরণে মোহরে ফাতেমী নির্ধারণ করা কাঙ্খিত। তবে পরস্পর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে মোহরে ফাতেমী থেকে কম বেশি করারও অনুমতি শরীয়তে রয়েছে; বরং উভয় পক্ষ মিলে পরামর্শের মাধ্যমে স্বামীর সাধ্যানুযায়ী মোহর ধার্য করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। কিন্তু এক্ষেত্রে  প্রশ্নে ধার্যকৃত মোহর মোহরে ফাতেমী বলে গণ্য হবে না; বরং মোহরে ফাতেমী হওয়ার জন্য ধার্যকৃত মোহর ৫০০ দিরহাম বা তার বাজার মূল্য সমপরিমাণ হতে হবে। এর কম বা বেশি হলে তা মোহরে ফাতেমী হিসেবে গণ্য হবে না । (সহীহ মুসলিম- ১/৪৫৮, আল মু’জামুল আওসাত- ১/৫০১, দারে কুতনী- ৩/২৪৫, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা- ৫/৭১)।

কাউকে কাফির বা ফাসিক বলা প্রসঙ্গে

(৯৪৩৭) মনিরুল হাসান, মহাখালী, ঢাকা।

জিজ্ঞাসা: “আল্ ফিরকাতুন নাজিয়াহ্” (বাংলা, পৃষ্ঠা নং ৭৭) নামক এক কিতাবে দেখতে পেলাম “মিশরে সর্বপ্রথম মীলাদ শরীফের যারা প্রচলন করে, তারা হলো ফাতেমীরা। আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) যাদেরকে বলেছেন কাফের ও ফাসেক”। মিশরে যারা সর্বপ্রথম এই কাজের সূচনা করে নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান এনেছিলো। তারপরও শুধু এই একটা মাত্র কাজের জন্য তাদেরকে কাফির ও ফাসিক বলা হলো কেনো? অন্যদিকে সূরা মায়েদা-এর ভেতর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

 وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না তারা কাফির, যালিম, ফাসিক”।

প্রশ্ন হলো, কোনো ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার পরও  এবং আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনার পরও যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করছে না (সুদ, ঘুষ, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদির কারণে) এরাও কি তাহলে কাফির বলে সাব্যস্ত হবে? কোনো মুসলমানকে কি কাফির বলা যাবে?

সমাধান: মীলাদ কিয়াম করা বিদআত। আর বিদআত আবিষ্কার করা জঘন্য কবিরা গুনাহ। এমন গুনাহ করলে মানুষ ফাসেক হয়ে যায়। এছাড়া এমন কিছু বিদআত আছে যা কুফরী; যেমন- নবীকে হাযের-নাযের বলে বিশ^াস করা। সুতরাং মীলাদ আবিষ্কারকারীদেরকে ‘ফাসেক’ বলতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে তাদেরকে ঢালাওভাবে কাফের বলা যাবে না। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) হয়তো তাদেরকে ঐ অর্থে কাফের বলে থাকতে পারেন।

যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে অথবা ভুল মনে করে বা  অপরাধযোগ্য সভ্যতার বিপরীত মনে করে, নিজের মনগড়া বানানো বিধানের অনুসরণে ফায়সালা-মীমাংসা করে, তখন সে কাফের বলে গণ্য হবে। আর যদি আল্লাহর বিধানের সত্যতাকে স্বীকার করে, কিন্তু নিজের প্রবৃত্তি অনুসরণে বা ক্ষমতাপ্রয়োগে পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদির কারণে আল্লাহর বিধানের বিপরীত ফায়সালা মীমাংসা করে, তখন সে ফাসেক, জালিম হবে; কাফের হবে না। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর বিধানকে অন্তর থেকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে তারাই কাফের। (সূরা মায়েদা- ৪৮, রুহুল মাআনী- ৪/১৪৬, ফিকহুল আকবার- ২৫৪, আকীদাতুল মাওহিদীন- ২৩৯, আকীদাতুত ত্বহাবী- ৮৮)।

মোহর আদায় প্রসঙ্গে

(৯৪৩৮) মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, দেওয়ান নগর, মৌলভী পাড়া।

জিজ্ঞাসা: বরের বয়স ৩৯। তিনি একজন হানাফী মুসলিম। আরেকজন হানাফী মুসলিম বিবি মরিয়মকে ১০/১/২০১১ সালে বিয়ে করি। তাদের বিয়েতে ধার্য কাবিন চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং নির্দিষ্ট দিন কাবিনের টাকা মাফ চাওয়া হয়। যা স্ত্রী মাফ করে দেন। বিয়ের দুই মাস পর কনে টালবাহানা করে পিতার বাসায় চলে যায়। পিতার বাসায় থাকা অবস্থায় বর তাকে পড়াশোনার খরচ বাবদ মাসিক ৯,৫০০X১২X৭= ৭,৯৮,০০০/- (সাত লক্ষ আটানব্বই হাজার) টাকা দেয়। এক্ষেত্রে বর তাকে মাসিক খোরাকী বাবদ ৩ হাজার বাদে বাকী টাকা কাবিনের টাকা হিসেবে ধরে মনে মনে আদায় করে দেয়। যার পরিমাণ ৬,৫০০X১২X৭= ৫,৪৬,০০০/- (পাঁচ লক্ষ ছেচল্লিশ হাজার) টাকা।

উল্লেখ্য বর স্ত্রীকে চারিত্রিক দোষের কারণে ১৫/৭/২০১৯ তারিখে  আইনীভাবে তালাক প্রদান করে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বরের হিসেবে কাবিনের টাকা আদায় হয়ে যায়। তাহলে তাকে কি আর কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে?

সমাধান: কুরআন-হাদীস ও ফিকহি গ্রন্থাবলী অধ্যয়নে একথা প্রতীয়মান হয় যে, মোহর স্বামীর নিকট স্ত্রীর প্রাপ্য হক ও পরিশোধযোগ্য হক বিধায় তা আদায় করা স্বামীর জন্য জরুরি। অপারগতা ছাড়া স্ত্রীর নিকট মোহর মাফ চাওয়া ও এর জন্য বাহানা করা অত্যন্ত কাপুরুষতা ও হীনমন্যতার পরিচায়ক। তাসত্ত্বেও যদি কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া স্ত্রী সন্তুষ্ট চিত্তে মাফ চাওয়ার দ্বারা মাফ করে দেয়, তাহলে মাফ হয়ে যাবে।

এই মোতাবেক উক্ত বরের স্ত্রী মরিয়ম তার প্রাপ্য হক (৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) মোহর মাফ চাওয়ার পর সন্তুষ্ট চিত্তে মাফ করে দিয়ে থাকলে, তা মাফ হয়ে বর তার হক থেকে দায় মুক্ত হয়ে যাবেন। আর যদি খুশি মনে মাফ না করে থাকে তবুও স্বামী পরবর্তীতে স্ত্রী মরিয়মকে খোরপোষ ভরণ-পোষণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যতীত প্রতি মাসে ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে ৭ বৎসরে সর্বমোট ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা মোহরের নিয়াতে আদায় করার দ্বারা তার প্রাপ্য মোহর (৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) পরিশোধ হয়ে যায়।

প্রশ্নের বর্ণনা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্নোক্ত উভয় সূরতে উক্ত স্বামীর জন্য স্ত্রীর প্রাপ্য মোহর আদায় হয়ে যাওয়ায়, তা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বার আর পরিশোধ করতে হবে না। তবে বিবাহের সময় যদি এমন চুক্তি থাকে, স্ত্রীকে পড়াশোনার জন্য স্বামী খরচ প্রদান করবে, তবে তা মহর থেকে কর্তন করা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার- ৪/২৩৯, বাদায়েউস সানায়ে- ৩/৪৩৮, বাহরুর রায়েক- ৩/৩২০)।

বদলী হজ্জ প্রসঙ্গে

(৯৪৩৯) মুহাম্মদ ইলিয়াস, সুলতানাত অফ ওমান।

জিজ্ঞাসা: ওমান থেকে স্থল পথে হজ্জ, উমরা ও যিয়ারত সম্পন্ন করতে বিশ দিনের উপরে সময় লাগে। এমতাবস্থায় বদলী হজ্জকারীদেকে যাওয়া-আসা, খাওয়া-দাওয়াসহ হজ্জ আদায় সংক্রান্ত সমুদয় খরচ দেয়ার পর তার প্রচলিত চাকরির নিয়মানুযায়ী আরো এক মাসের বেতন অতিরিক্ত দেয়া হয়। এরপরও অনেকেই এ ব্যাপারে দরকষাকষি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার চেষ্টা করে থাকেন। অর্থাৎ হিসাব-নিকাশ ছাড়া কন্ট্রাক্টের উপর বদলী হজ্জ জায়েয হবে কি?

সমাধান: বদলী হজ্জকারীদের জন্য কেবল মক্কা শরীফ যাওয়া-আসা, খাওয়া-দাওয়াসহ হজ্জ আদায় সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় খরচ গ্রহণ করা জায়েয হবে। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী হিসাব নিকাশ ছাড়াই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা বা বেতন নেওয়া নাজায়েয। (শরহে মুখতাসারুত তহাবী- ২/৪৯৫ ও ৪/৪৯৫, দুররে মুখতার- ৪/২২, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া- ৩/৬৫০, ফাতাওয়ায়ে শামী- ৪/২২)।

আকীকা প্রসঙ্গে

(৯৪৪০) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: আমার জানার বিষয় হলো যে, আকীকা করা ওয়াজিব, সুন্নাত নাকি মুস্তাহাব এবং আকীকার শরয়ী নিয়ম কী?

সমাধান: আকীকা করা মুস্তাহাব এবং এর শরয়ী নিয়ম হচ্ছে, বাচ্চার বয়স যখন সাত দিনে উপনিত হবে, তখন আকীকা করা মুস্তাহাব। তার মাথার চুল হলক করে নিবে এবং এর সমপরিমাণ ওজন করে ওজন অনুযায়ী স্বর্ণ অথবা রূপা সদকাহ করে দিবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ- ২/১৬৩ ও ২/১৬৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৪১৮, রদ্দুল মুহতার- ৯/৫৫৪)।

ইমামতি প্রসঙ্গে

(৯৪৪১) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: মুফতি সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হলো এই যে, দাড়ি শেভ করনেওয়ালা অথবা শরয়ী বিধান এক মুষ্টির চেয়ে কম রাখনেওয়ালা ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী এবং তার পেছনে নামায পড়া উত্তম হবে নাকি একাকী, কোনটি উত্তম হবে জানালে উপকৃত হতাম।

সমাধান: ফিকহের কিতাবাদি অধ্যয়নে এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, যে ইমাম দাঁড়ি শেভ করেন অথবা এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়ি রাখেন, তাকে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করা যাবে না। তার পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী হবে, যদি যোগ্য কোনো ইমাম থাকে। আর না থাকলে তার পেছনে মাকরূহের সাথে নামায আদায় করা উত্তম হবে; একাকী পড়ার চেয়ে। তবুও জামাত ছাড়বে না। তবে নেককার এবং সুন্নাতের অনুসারী ইমাম তালাশ করে নিয়োগ দেয়া আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে কাযীখান- ৭/৫৯, বাহরুর রায়েক- ১/৬১০ ও ৬১১, হাশিয়ায়ে তহতাবী- ৩০২)।

জুমআর নামায প্রসঙ্গে

(৯৪৪২) নওশাদ মাহমুদ, মাধবপুর, হবিগঞ্জ।

জিজ্ঞাসা: আমি শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি কাপড় উৎপাদন কারখানায় কর্মরত আছি। কারখানাটি চব্বিশ ঘণ্টা তিন শিফটে চালু থাকে। কারখানার অভ্যন্তরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য একটি বড় কামরা আছে। কিন্তু কোনো জামে মসজিদ নেই। ফলে জুমআর দিন যারা ‘এ’ শিফটে থাকে (যাদের ডিউটি সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত) তাদের সবার জন্য কারখানার বাইরে গিয়ে জুমআর নামায আদায় করা সম্ভব হয় না; যেহেতু চলমান মেশিন বন্ধ করা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় যারা ‘এ’ শিফটে ডিউটি করে শুধুমাত্র তাদের জন্য কারখানার অভ্যন্তরে নামাযের কামরায় ২.১৫ মিনিটে অথবা ২.৩০ মিনিটে জুমআর নামাযের ব্যবস্থা করা যায় কিনা?

এখানে উল্লেখ থাকে যে, উক্ত ফ্যাক্টরিতে কর্মরত লোক ব্যতীত সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

সমাধান: প্রশ্নের বর্ণনামতে কারখানার অভ্যন্তরে নামাযের কামরায় জুমআর নামায আদায় করতে পারবেন। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বা নিরাপত্তাজনিত কারণে যদি সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশের অনুমতি নাও থাকে তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে ফ্যাক্টরিতে কর্মরত লোকদের ব্যাপক অনুমতি থাকতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/২০৫, রদ্দুল মুহতার- ৩/২৫, মারাকিউল ফালাহ- ৫১০)।

আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া প্রসঙ্গে

(৯৪৪৩) নাম-ঠিকানা বিহীন।

জিজ্ঞাসা: সম্মানিত মুফতি সাহেব আমার জানার বিষয় হচ্ছে, আযানের পূর্বে দুরুদ শরীফ পড়া তথা- ‘আসসালাতু ওয়াসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’ এ ধরনের দুরুদ শরীফ পড়া শরীয়তসম্মত কিনা? কুরআন-হাদীসের আলোকে সঠিক সমাধান চাই।

সমাধান: শরীয়তে মুহাম্মদি (সা.)তে এ দুরুদ শরীফের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তবে সেই অগণিত ফযিলত পেতে হলে, শরীয়তের বর্ণিত স্থান ও সময়ের তোয়াক্কা বা খেয়াল রাখতে হবে। যে স্থান বা সময়ে দুরুদ শরীফ পড়ার কোনো ফযিলত কুরআন ও হাদীস এবং আসারে সাহাবাতে নেই এবং খাইরুল কুরুনের মধ্যেও তা ছিল না।

এমন স্থান বা সময়ে ফযিলত ও শরীয়তসম্মত মনে করে দুরুদ শরীফ পড়া বিদআত।

আর বিদআত হতে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। কারণ, হাদীস শরীফে বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলা হয়েছে। আরো অনেক ধমকি ও শাস্তির কথাও বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদীস শরীফে। অতএব, পূর্বে উল্লিখিত নীতিমালা এবং শরয়ীভাবে আযান চালু হওয়ার ইতিহাস দ্বারা বুঝা যায় যে, আযানের পূর্বে দুরুদ শরীফ পড়া তথা (আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ) এ ধরনের দুরুদ শরীফ পড়া বিদআত। কেননা, এ ধরনের দুরুদ শরীফ পড়া আসারে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং তা খাইরুল কুরুনেও ছিল না। সর্বপ্রথম এ দুরুদ পড়ার প্রচলন শুরু হয়েছে ৭১৯ হিজরীতে গভর্নর মিনতাস এর নির্দেশে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআন ও হাদীসের বিপরীতে নিজেদের মনগড়া আমল করা থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন। (সহীহ বুখারী হাদীস নং- ২৬৯৭, সুনানে আবি দাউদ- ৪৯৮, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম হাটহাজারী- ১/২৫১)।

মসজিদের জায়গায় ফল গাছ রোপণ প্রসঙ্গে

(৯৪৪৪) এলাকাবাসী, বায়তুন নূর জামে মসজিদ, উত্তর নাজিরপুর, নোয়াখালী।

জিজ্ঞাসা: যদি কেউ মসজিদের ওয়াকফকৃত জায়গায় নিজের জন্য কোনো ফল গাছ রোপণ করে, তাহলে সে ফলের হুকুম কী? উক্ত ফল তার ব্যক্তিগত ফল বলে গণ্য হবে, না মসজিদের ফল বলে গণ্য হবে? যদি সে উক্ত ফল খেতে চায় তাহলে করণীয় কী?

সমাধান: কেউ যদি মসজিদের জায়গায় গাছ রোপণ করে, তবে সেই গাছের ফলের হুকুম রোপণকারীর নিয়তের উপর নির্ভর হবে। (ক) রোপণকারী যদি মসজিদের নিয়তে অথবা নিজে ভোগ করার নিয়তে গাছ রোপণ করে, তবে সে গাছের ফল মসজিদের একক মালিকানা হিসেবে বিবেচিত হবে। কেউ যদি খেতে চায় মূল্য দিয়ে খেতে হবে। (খ) আর যদি জনসাধারণের নিয়তে রোপণ করে, তবে উক্ত গাছের ফল মসজিদের সকল মুসল্লি খেতে পারবে। প্রশ্নের বর্ণনামতে যেহেতু রোপণকারী নিজে ভোগ করার নিয়তে গাছ রোপণ করেছেন, তাই উক্ত গাছের ফল মসজিদের মালিকানা হিসেবেই বিবেচিত হবে। খেতে চাইলে মূল্য পরিশোধ করে খেতে হবে। (মুহিতে বুরহানী- ৭/১৪৭ ও ৭/১৭৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া- ৪/৪২০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৩২১ ও ২/৪১৮, বাহরুর রায়েক- ৫/৩৪১-৪২, ফাতাওয়ায়ে কাযীখান- ৩/২১৭, দুররে মুখতার- ৬/২১৭)।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।