জিজ্ঞাসা-সমাধান

পরিচালনায়- ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ
আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

তহারাত বা পাক-পবিত্রতা সংশ্লিষ্ট

(৯১৭৫) ঝুমুর, নোয়াখালী।

জিজ্ঞাসা: আমি সাধারণত: টেপের নিচে মগ রেখে অযু করি। যাতে অযুর ব্যবহৃত পানির ছিঁটা গায়ে না পড়ে। মুখ হাত ধৌত করে মাথা মাসাহ করার পর মগটা পানিতে ভরে যায়। এখন আমি কি সেই পনি দিয়ে পা ধৌত করতে পারবো? জানিয়ে বধিত করবেন।

সমাধান: আপনি যে পানি দিয়ে অযু করার কথা উল্লেখ করেছেন তা মায়ে মুসতামাল অর্থাৎ ব্যবহৃত পানি। ব্যবহৃত পানি দিয়ে অযু করলে বা অযুর কোনো অঙ্গ ধৌত করলে অযু শুদ্ধ হবে না। অতএব, আপনি সেই পানি দিয়ে পা ধৌত করতে পারবেন না। ধৌত করলে অযু শুদ্ধ হবে না। যদি কখনো এভাবে করে অযু সেই অযু দিয়ে নামায আদায় করে থাকেন, তাহলে সেই নামায পুনরায় পড়তে হবে। (শরহু মুখতাসারিত তাহাবী- ১/২২৯, মাবসূত সারাখসী- ১/৪৬, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৫ পৃষ্ঠা)।

সিয়াম বা রোযা সংশ্লিষ্ট

(৯১৭৬) মুহাম্মাদুল্লাহ, ফেনী।
জিজ্ঞাসা: আমার বিগত রমাযানের কয়েকটি রোযা ছুটে গেছে। এখন এক সাথে আদায় করতে চাচ্ছি। তবে নিয়তের বিষয়ে একটি সংশয়ে পড়েছি। প্রতিটি রোযার নিয়ত কি প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন করে করতে হবে? না কি এক সাথে নিয়ত করে নিলেই চলবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: লাগাতার কয়েকটি রোযা আদায় করার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক নিয়ত করাই উত্তম। প্রতিদিন সাহরী খাওয়ার সময় নিয়ত করে নিবেন। মূলত: নিয়ত উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়। রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খেলেও রোযার নিয়ত পূর্ণ হয়ে যায়। তবে এক সাথে নিয়ত করে নিলেও চলবে। (তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/৩১৫, ফাতহুল কাদীর- ২/৩১২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/৫৭)।

(৯১৭৭) আহমাদ কারীম, চট্টগ্রাম।

জিজ্ঞাসা: অনেক মহিলার দিনের বেলা মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ কোনো মহিলা যদি অনুভব করেন যে, আগামীকাল দিনে তার মাসিক বন্ধ হয়ে যাবে; তাহলে কি সে সাহরী খেয়ে রোযার নিয়ত করতে পারবেন? এমনিভাবে যাদের মাসিক রাতে বন্ধ হয় তারা কি পরের দিনের রোযা রাখতে পারবেন?

সমাধান: দিনের বেলা মাসিক বন্ধ হয়ে যাবে এ ধারণায় সাহরী খেয়ে রোযার নিয়ত করলেও রোযা হবে না। কেননা, সুবহে সাদিকের সময় মাসিক চলমান থাকার পর পরবর্তীতে বন্ধ হলেও ঐদিনের রোযা রাখার অনুমতি নেই।

হ্যাঁ, যদি রাতে বা সুবহে সাদিকের পূর্বে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পরের দিন রোযা রাখতে হবে। (আল-জাওহারাতুন নায়্যিরা- ১/১৩৬, ফাতহুল কাদীর- ২/৩১২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৫৭)।

(৯১৭৮) মনজুরুল হক, নেত্রকোনা।

জিজ্ঞাসা: একজন মহিলা দশটি রোযা রাখার মান্নত করেছেন। কোনদিন রাখবেন, কীভাবে রাখবেন- কোনো কিছুই মান্নতের সময় বলেননি। এখন জানার বিষয় হলো, তিনি রোযাগুলো কীভাবে রাখবেন? তার কি এই রোযাগুলোর জন্য কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে হবে, নাকি যেকোনো দিন রাখতে পারবেন?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত সূরতে মহিলার রোযার মান্নতটি কোনোরূপ শর্ত ছাড়া সংঘটিত হয়েছে। এরূপ মান্নতের রোযা যে কোনো সময় রাখা যাবে। সবগুলো একসাথে বা পৃথক পৃথকও রাখা যাবে। এ ধরনের মান্নতের রোযার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বা নির্দিষ্ট কোনো সূরত অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। (কিতাবুল আছল- ২/১৯৭, আল-জাওহারাতুন নায়্যিরা- ১/১৪৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/২০৯)।

(৯১৭৯) মুহাম্মদ নূর, সাভার, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা: যদি কোনো ব্যক্তি রমাযানের কাযা রোযা রাখার পরইচ্ছাকৃত ভেঙে ফেলে তাহলে কি তার উক্ত রোযার কাযা-কাফফারা উভয়টা করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: রমাযানের রোযার কাযা একটি ফরয বিধান। উযর ব্যতীত ইচ্ছাকৃত ভেঙে ফেলা গুরুতর গুনাহের কাজ। তবে কাযা রোযা ভাঙার কারণে শুধু কাযা আদায় করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। (তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/৩১৩, আলবাহরুর রায়েক- ৩/১৭, রদ্দুল মুহতার- ২/৪০৪)।

(৯১৮০) দীদারুল ইসলাম, হাটহাজারী।
জিজ্ঞাসা: সাহরীর সময় আমি পান খাই। অনেক সময় সুপারি দাঁতের মাঝে আটকে থাকে। এভাবেই কুলি করে রোযার নিয়ত করি। দিনের বেলায় সেই সুপারি বের করে চিবালে বা গিলে ফেললে রোযা ভেঙে যাবে কি না?

সমাধান: দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা সুপারি বা খাবারের টুকরো দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে ফেলে দিতে হবে। দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে ইচ্ছাকৃত গিলে ফেলা ঠিক নয়। সুপারির টুকরো ছোলার পরিমান হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। আর তারচে’ ছোট হলে রোযা নষ্ট হবে না। (মাবসূত সারাখসী- ৩/৯৩, ফাতাওয়া কাযীখান- ১/১০২, বাদায়েউস সানায়ে- ১/২৪২)।

(৯১৮১) খালেদ মাহমূদ, সুনামগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা: আমার এক চাচা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত। মলত্যাগ করতে তার খুবই কষ্ট হয়। মলত্যাগের সুবিধার্থে ডাক্তার তাকে এক প্রকার সাপোজিটর (পিছনের রাস্তায় ব্যবহার করার ঔষধ) ব্যবহার করতে দিয়েছেন। যেটা মলত্যাগের পূর্বে ব্যবহার করলে মলত্যাগের কষ্ট লাঘব হয়। জানার বিষয় হলো, রোযা অবস্থায় এ সাপোজিটর ব্যবহার করলে কি রোযার কোনো ক্ষতি হবে?

সমাধান: সাপোজিটর যদি পেটের অভ্যন্তরে পৌঁছে যায়, তাহলে রোযা ভেঙে যাবে। রোযা অবস্থায় অতীব প্রয়োজন না হলে তা ব্যবহার করবেন না। (কিতাবুল আছল- ২/১৯১, মাবসূত সারাখসী-৩/৬৭, আল-মহীতুল বুরহানী- ২/৩৮৩)।

(৯১৮২) কিফায়াতুল্লাহ, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
যদি কোনো ব্যক্তি রোযা রেখে সফর আরম্ভ করেন, এমতাবস্থায় তিনি সফরে গিয়ে রোযা ভেঙে ফেলতে পারবেন কি?

সমাধান: রোযা রাখার পর সফর করলে রোযা ভাঙতে পারবে না। কেননা মুকীম অবস্থায় তার উপর রোযা ফরয় হয়ে গিয়েছে। এখন সফরের কারণে এ ফরয শিথিল হবে না। তবে রোযা ভেঙে ফেললে শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। (মাবসূত সারাখসী- ৩/৬৭, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৯৪, আলমুহীতুল বুরহানী- ২/৩৯০)।

(৯১৮৩) আঁখি আখতার, নারায়ণগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা:
আমি বিবাহের পূর্বে সাধারণত সোমবার এবং বৃহস্পতিবার নফল রোযা রাখতাম। এখন বিবাহের পর বৃহস্পতিবার রোযা রাখতে পারি না। আমার স্বামী সাধারণত বৃহস্পতিবার বাসায় থাকেন। তাই রোযা রাখা সম্ভব হয় না। আমার প্রশ্ন হলো, তার কারণে কি আমি রোযা ছাড়তে পারবো? তিনি যদি আমাকে রোযা না রাখার নির্দেশ দেন, তাহলে কি তিনি গুনাহগার হবেন?

সমাধান: স্বামীর খেদমত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই নফলের কারণে স্বামীর খেদমতের ব্যাঘাত হলে খেদমতকেই প্রাধান্য দিতে হবে। নফল রোযা অন্য সময় আদায় করে নিবেন। একারণে হাদীসে নফল রোযা রাখার জন্য স্ত্রীকে স্বামীর অনুমতি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্বামীর অনুমতি হলে রাখতে পারবে, অন্যথা রাখতে পারবে না। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
لا تصوم المرأة وبعلها شاهد إلا بإذنه

“স্বামী উপস্থিত থাকলে স্ত্রী তার অনুমতি ব্যতীত রোযা রাখবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদীস- ৫১৯২)।
সুতরাং স্বামী যদি নফল রোযা না রাখার নির্দেশ দেন, এতে তিনি গুনাহগার হবেন না। (আল-মুহীতুল বুরহানী- ২/৪১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/২০১)।

(৯১৮৪) আমীনুল ইসলাম, বি, বাড়িয়া।
জিজ্ঞাসা
: আমি একবার রমাযানের রোযা কাযা আছে মনে করে কাযার নিয়তে একদিন রোযা রাখলাম। দুপুর বেলা আমার নিশ্চিতভাবে মনে পড়লো যে, আমার কোনো রোযা কাযা নেই। ততক্ষণাৎ আমি রোযা ভেঙে ফেললাম। জানার বিষয় হলো, এতে কি আমার উপর সেদিনের রোযা কাযা করা ওয়াজিব হয়েছে?
সমাধান: প্রশ্নোক্ত সূরতে আপনার রোযাটি মূলত নফল ছিলো। তাই সে রোযা ভাঙার কারণে আপনার উপর সেদিনের রোযার কাযা ওয়াজিব হয়নি। তবে সে রোযাটি কাযা করা উত্তম। (কিতাবুল আছল- ২/১৬৩, মাবসূত সারাখসী- ৩/৮১, বাদায়েউস সানায়ে- ২/১০৪)।

(৯১৮৫) মুহাম্মদ নূরুল হক, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
এক ব্যক্তির পাইলসের রোগ। মলত্যাগের সময় মলদ্বারে সৃষ্ট গোটা বেরিয়ে আসে। মলত্যাগ শেষে দাঁড়ালে সেটা আবার ভিতরে চলে যায়। জানার বিষয় হলো, মলদ্বারের গোটা বেরিয়ে আসার পর এভাবে ভিতর চলে গেলে কি তার রোযা ভেঙে যাবে?

সমাধান: মলদ্বারের সৃষ্ট নরম গোটা অংশটি যদি পেটের অভ্যন্তর থেকে বের হয় এবং তা পানি দিয়ে ধৌত করে বা কোনো ঔষধ ব্যবহার করে পরিষ্কার না করেই পুনরায় ভিতরে প্রবেশ করানো হয়, তাহলে রোযা ভেঙে যাবে। আর পরিষ্কার করে প্রবেশ করালে রোযা ভাঙবে না। তবে পেটের অভ্যন্তর থেকে বের না হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। (ফাতহুল কাদীর- ২/৩৪২, রদ্দুল মুহতার- ২/৩৯৭, হাশীয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী- ৬৭৬)।

(৯১৮৬) আবুল হুসাইন, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
আমাদের দেশ থেকে সৌদি আরব পশ্চিমে অবস্থিত। যে কারণে সৌদি আরব সফর করলে বারো ঘন্টার দিন ষোলো বা আঠারো ঘন্টা হয়ে যায়। জানার বিষয় হলো, কেউ যদি রমাযান মাসে রোযা রেখে দিনের বেলা সৌদি আরব সফর করে এবং পথিমধ্যে বাংলাদেশের সময় হিসেবে ইফতারের সময় হয়ে যায় তাহলে কি সে ইফতার করতে পারবে, না কি সৌদি আরবের ইফতারের সময় ইফতার করবে?

সমাধান: ইফতার সূর্যাস্তের সাথে সম্পৃক্ত। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির সফরকালে যেখানে সূর্যাস্ত হবে সেখানেই ইফতার করবে। যদি পথিমধ্যে ইফতারের সময় না হয় বরং সৌদি আরব যাওয়ার পর হয়, তাহলে সৌদি পৌঁছার পর ইফতার করবে। কেননা, কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা রাত পর্যন্ত রোযা পুরো করতে বলেছেন। যেখানে যে সময় রাত হয় সেখানকার মানুষ তখন ইফতার করবে। চাই সে অন্য যে কোনো দেশের হোক না কেনো। তবে হ্যাঁ, দিন যদি খুব বেশি দীর্ঘ হয়ে যায় এবং রোযা রাখা খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে, তখন সে দিন রোযা না রেখে স্বাভাবিক দিনে রোযা রাখবে। (সূরা বাকারা- ১৮৭, ১৮৪, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৮৩, রদ্দুল মুহতার- ২/৪২০)।

(৯১৮৭) মুহাম্মদ সাঈদ, রামু, কক্সবাজার।
জিজ্ঞাসা:
আমি অফিসে চাকরি করি; দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। যে কারণে আমার প্রায় সময় মাথাব্যথা ও কোমরে ব্যথা থাকে। এখন জানার বিষয় হলো, রমাযানের রোযা রেখে মাথাব্যথা বা কোমর ব্যথার জন্য ভিকস, বাম অথবা নিক্স জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারবো কি না? এতে রোযার কোনো সমস্যা হবে কি না?

সমাধান: রমাযানের রোযা রেখে মাথাব্যথা বা কোমর ব্যথার জন্য ভিকস, বাম অথবা নিক্স জাতিয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারবেন। এতে রোযার কোনো সমস্যা হবে না। শরীরের ত্বকে তেল বা ঔষধ ব্যবহার করলে সরাসরি পাকস্থলীতে যায় না। তাই রোযাও ভাঙবে না। (বাদায়েউস সানায়ে- ২/৯৩, হিদায়া- ১/১২০, রদ্দুল মুহতার- ২/৩৯৬)।

(৯১৮৮) মুহাম্মদ রুকনুদ্দীন, বরিশাল।
জিজ্ঞাসা:
আমি গত মুহাররমের দশ তারিখে ঘুম থেকে জাগ্রত হই ফজর নামায আদায় করার জন্য। তখন মুহাররমের রোযা রাখার কোন ইচ্ছা ছিল না। ফজরের নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে প্রায় ১০টা বেজে যায়। তখন আমার রোযা রাখার ইচ্ছা জাগে, সাথে সাথে নিয়ত করি। এখন জানার বিষয় হলো, আমার নিয়ত সহীহ হয়েছে কি না? সাহরী না খাওয়ায় কোনো সমস্যা হবে কি না?

সমাধান: রোযার সময় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ সময়ের অর্ধেক অতীত হওয়ার পূর্বেই নফল রোযার নিয়ত করলে নিয়ত সহীহ হবে। রোযাও আদায় হবে। ১০ই মুহাররমের রোযা নফল, তাই আপনার উপর্যুক্ত নিয়ত সহীহ হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কখনও দিনের বেলা নিয়ত করে রোযা রাখতেন। হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

“كان النبي -صلى الله عليه وسلم- إذا دخل علي قال: “هل عندكم طعام؟ ” فإذا قلنا: لا، قال: “إني صائم”.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো দিনের বেলা আমার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমার নিকট কি কোনো খাবার আছে? যদি আমরা বলতাম নেই, তখন তিনি বলতেন, আমি আজ রোযা রাখলাম”। (সুনানে আবী দাউদ, হাদীস নং-২৪৫৫)।

এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, নফল রোযার জন্য দিনের বেলাও নিয়ত করা যথেষ্ট।

উল্লেখ্য, রোযার জন্য সাহরী খাওয়া জরুরি নয় বরং মুস্তাহাব। সাহরী না খেলেও হাদীসে রোযা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

” أن النبي صلى الله عليه وسلم بعث رجلا ينادي في الناس يوم عاشوراء ্রإن من أكل فليتم أو فليصم، ومن لم يأكل فلا يأكل.

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন মানুষের মাঝে ঘোষণা করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি পানাহার করেছে সে যেন বিরত থাকে, আর যে ব্যক্তি পানহার করেনি সেও যেন রোযার নিয়তে বিরত থাকে” (সহীহ বুখারী- ১৯২৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া- ৩/৩৬৭, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৮৬, তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/৩১৩)।

(৯১৮৯) সাঈদুল ইসলাম, হবিগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা: অনেক সময় ডাক্তাররা অপারেশন করার জন্য রোগীকে বেহুঁশ করে বা কোনো একটা অঙ্গকে অবশ করে। জানার বিষয়, বেহুঁশ করার দ্বারা বা অঙ্গ অবশ করার দ্বারা রোযার কোনো সমস্যা হবে কি?
সমাধান: বেহুঁশ করার জন্য বা অঙ্গ অবশ করার জন্য যদি ঔষধ খাওয়ানো হয়, তাহলে রোযা ভেঙে যাবে। আর যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে বেহুঁশ করা হয়, তাহলে রোযা ভাঙবে না। কেননা ইনজেকশন রগে বা গোশতে পুশ করা হয়। আর রগ বা গোশত থেকে কোনো কিছু পেটে পৌঁছায় না। তাই এতে রোযা ভঙ্গ হবে না। (কিতাবুল আছল- ২/১৫১, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৯৩, আলমুহীতুল বুরহানী- ২/৩৮৪, রদ্দুল মুহতার- ২/৩৯৫)।

(৯১৯০) আমীনুল ইসলাম, রাজশাহী।
জিজ্ঞাসা:
আমি একজন হোমিও ডাক্তার। হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মধ্যে এমন কিছু ঔষধ রয়েছে, যেগুলো জিহ্বায় দিতে হয়। এগুলোর প্রতিক্রিয়া গলায় বা পেটে পৌঁছে না, জিহ্বার মাধ্যমেই রক্তে মিশে যায়। এখন জানার বিষয় হলো, রমাযানের রোযা রেখে রোগীরা যদি এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করেন, তাহলে রোযার কোনো সমস্যা হবে কি?

সমাধান: প্রশ্নে বর্ণিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ জিহ্বার মাধ্যমেই রক্তে মিশে গেলে এবং পেট বা মস্তিষ্কে না পৌঁছালে তা দ্বারা রোযা নষ্ট হবে না। আর ওযরের কারণে হলে মাকরূহও হবে না।সুতরাং রোযা রেখে রোগীরা এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারবে। তবে কোনভাবে যদি কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যায়, তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। (কিতাবুল আছল- ২/১৭৩, মাবসূত সারাখসী- ৩/১০০, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৯৩, রদ্দুল মুহতার- ২/৪০০)।

(৯১৯১) হাবীবুল্লাহ খান, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা:
কোনো ব্যক্তি যদি রমাযানের রোযার নিয়তের সময় শুধু রোযার নিয়ত করে; ফরয বা নফলকে নির্দিষ্ট না করে; তার নিয়ত সহীহ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: রমাযানের রোযার নিয়তকালে শুধু রোযার নিয়ত করলেই চলবে। সুনির্দিষ্টভাবে ফরয বলা বা স্মরণ করা আবশ্যক নয়। কেননা রমাযান মাসে রোযা রাখলে তা রমাযানের রোযা বলেই বিবেচিত হবে। এমনকি নফলের নিয়ত করলেও রমাযানের রোযাই আদায় হবে, নফল নয়। তাই শুধু রোযার নিয়ত করলে চলবে। তবে নির্দিষ্ট করে ফরয রোযার নিয়ত করাই উত্তম। (তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/৩১৫, আল-ইখতিয়ার লি তালীলিল মুখতার- ১/১২৭, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/২৫৯)।

যাকাত বিষয়ক

(৯১৯২) নূরুল আলম, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
আমাদের এলাকার অসহায় এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছেন। আমার কাছে বর্তমানে তাকে দেওয়ার মতো টাকা নেই। কিন্তু গত বছরের যাকাতের কিছু টাকা একজনকে দিবো বলে রেখে দিয়েছিলাম। এই টাকাগুলো যদি তাকে দিয়ে দেই, তাহলে কোনো সমস্যা আছে কি না? এতে আমার যাকাত আদায় হবে কি না?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত ব্যক্তিটি যাকাতের উপযুক্ত হলে তাকে যাকাতের ঐ টাকা দেওয়া যাবে। এতে আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, যাকাত ফরয হওয়ার সাথে সাথেই আদায় করা কর্তব্য। যাকাতের টাকা জমা রাখা উচিত নয়। (হিদায়া- ১/১১০, তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/২৯৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৮৯)।

(৯১৯৩) আমীর হোসেন, ভোলা।
জিজ্ঞাসা:
আমি ঢাকায় থাকি। ঢাকায় আমার একটি বাড়ি আছে। আর গ্রামেও পুরাতন বাড়ি আছে। গ্রামের বাড়ি আমার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। সেখানে বছরে এক দুই বার যাওয়া হয়। শুধু বাবার স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কি গ্রামের বাড়ির যাকাত দিতে হবে?

সমাধান: আপনার গ্রামের বাড়ির যাকাত ফরয নয়। গ্রামের বাড়ি আপনার বাসস্থান বলে বিবেচিত হবে। আর বাসস্থানের উপর যাকাত ফরয হয় না। (বাদায়েউস সানায়ে- ২/১১, আল-বাহরুর রায়েক- ২/২২২, রদ্দুল মুহতার- ২/২৬২)।

هُوَ الَّذِىْ خَلَقَكُمْ مِنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَالِيَسْكُنَ اِلَيْهَا.

(৯১৯৪) আকবর খান, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
আমি যাকাতের নেসাবের মালিক হয়েছিলাম। কিছু দিন পর টাকা খরচ হয়ে যায়। এখন এক বছর পার হলে কি যাকাত দিতে হবে?

সমাধান: বছরের শুরুতে নেসাবের মালিক হওয়ার পর বছর শেষ হাওয়ার পূর্বেই যদি টাকা খরচ হয় তাহলে যাকাত ফরয হবে না। কেননা, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শর্ত হলো, নেসাব পরিমাণ সম্পদ বছরের শেষ পর্যন্ত বাকি থাকতে হবে। অবশ্য বছরের মাঝে যদি টাকা খরচ হয়ে নেসাবের চে’ কমে যায় এবং বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই আবার নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তাহলে বছরের শেষে যাকাত দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে- ২/১৬, তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/২৮০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৭৫)।

(৯১৯৫) তাহমীদ, কক্সবাজার।
জিজ্ঞাসা:
ইংরেজি বছরের দিন এবং আরবী বছরের দিনের মাঝে কিছু পার্থক্য থাকে। আরবী বছরের দিন সব সময় কমবেশি হয়। যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে বছর গণনার কোন সাল ধর্তব্য হবে, আরবী বছরের না কি ইংরেজি বছরের?

সমাধান: যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে আরবী বছর ধর্তব্য। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর আরবী তারিখের হিসেবে বছর পুরো হলে যাকাত দিতে হবে। (আল-বাহরুর রায়েক- ২/২০৯, আন-নাহরুল ফায়েক- ১/৪১৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৭৫)।

(৯১৯৬) নূরুল আমীন, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
স্বামী যদি ঋণগ্রস্ত হয় এবং স্ত্রী যাকাতের নেসাবের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে স্ত্রীর উপর যাকাত আসবে কি না?

সমাধান: স্ত্রী নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয হবে। স্বামী ঋণগ্রস্ত হওয়াতে স্ত্রীর যাকাতের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না। স্ত্রী স্বীয় স্বামীকে যাকাত দিতে পারবেন। বরং ঋণগ্রস্ত স্বামীকে যাকাত দেওয়াই উত্তম হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস- ১৫৭৩, কিতাবুল আছল- ২/৯০, আল ইখতিয়ার- ১/১২২)।

(৯১৯৭) আহমদ কারীম, ফেনী।
জিজ্ঞাসা:
আমার স্ত্রীর দশ ভরি স্বর্ণ সুরক্ষার জন্য ব্যাংকে জমা রেখেছি। বছরান্তে এই স্বর্ণের উপর কি যাকাত ফরয হবে?

সমাধান: প্রশ্নোক্ত সূরতে ব্যাংকে জমা রাখা স্বর্ণের উপর যাকাত ফরয হবে। কেননা ব্যাংকে রাখা স্বর্ণের উপর আপনার পরিপূর্ণ মালিকানা রয়েছে। আর সম্পদে পরিপূর্ণ মলিকানা থাকলে বছরান্তে যাকাত ফরয হয়। (সুনানুল কুবরা বায়হাকি, বর্ণনা- ৭৬২০, কিতাবুল আছল- ২/৯৭, মাবসূত সারাখসী- ২/১৯৫)।

(৯১৯৮) মাহতাব উদ্দীন, নারায়ণগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা:
আমার ছেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে আমার সাথেই থাকে। ছেলের স্ত্রীকে বিবাহের সময় তিন ভরি স্বর্ণ দিয়েছিলাম। জানার বিষয় হলো, আমার যাকাত আদায়ের সময় সেই তিন ভরি স্বর্ণের যাকাতও কী আমাকে আদায় করতে হবে?

সমাধান: ছেলের স্ত্রীকে তিন ভরি স্বর্ণ দিয়ে দেয়ার পর ছেলের স্ত্রী তার মালিক হয়ে গেছে। এই স্বর্ণ এখন আর আপনার মালিকানায় নেই। তাই আপনাকে এগুলোর যাকাত দিতে হবে না। তবে ছেলের স্ত্রী যদি এই তিন ভরি স্বর্ণের সাথে আরো কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে এই তিন ভরি স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে। (শরহু মুখতাসারিত তহাবী- ২/৩১৯, মাবসূত সারাখসী- ২/৮৫, বাদায়েউস সানায়ে- ২/১৮)।

(৯১৯৯) আব্দুল আউয়াল, সিরাজগঞ্জ।
জিজ্ঞাসা:
শুনেছি প্রয়োজন অতিরিক্ত বস্তু বর্ধনশীল হলে যাকাত দিতে হয়। কখনও কখনও টাকা পয়সা জরুরি প্রয়োজনে রেখে দেই। এমতাবস্থায় যদি আমার উপর যাকাত ফরয হয়, তাহলে প্রয়োজনের জন্য রাখা টাকারও যাকাত দিতে হবে কি না?

সমাধান: টাকা পয়সা চাই প্রয়োজনের জন্য রাখা হোক বা প্রয়োজন ছাড়া রাখা হোক, নেসাব পরিমাণ হয়ে বছর পুর্ণ হলে যাকাত দিতে হবে। টাকা পয়সা স্বর্ণ-রূপার হুকুমে। স্বর্ণ-রূপায় যেমন প্রয়োজন অপ্রয়োজন ধর্তব্য নয়, টাকা পয়সার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন অপ্রয়োজন তেমনি ধর্তব্য নয়। (বাদায়েউস সানায়ে- ২/১৭, তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/২১৮, আল বাহরুর রায়েক- ২/২২২, রদ্দুল মুহতার- ২/২৬২)।

(৯২০০) খলীলুর রহমান, গাজীপুর।
জিজ্ঞাসা:
এক ব্যক্তি ষাট হাজার টাকার মালিক। মাসে তার বেতন দশ হাজার টাকা। যা দিয়ে তার মাস চলে যায়। এই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয হবে কি না?

সমাধান: কারো নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ প্রয়োজন অতিরিক্ত এবং বর্ধনশীল সম্পদ থাকলে বছরান্তে যাকাত ফরয হয়। রূপার দাম হিসেবে বর্তমানে ষাট হাজার টাকায় যাকাত ফরয হয়। সে ব্যক্তি যখন থেকে ষাট হাজার টাকার মালিক হয়েছে তখন থেকে আরবী বছর হিসেবে এক বছর পূর্ণ হওয়ার সময় তার কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ টাকা থাকলে যাকাত ফরয হবে। (শরহু মুখতাসারিত তহাবী- ২/৩৩৭, মাবসূত সারাখসী- ২/১৭২, বাদায়েউস সানায়ে- ২/৫১)।

(৯২০১) ফুরকান আহমদ, নরসিংদী।
জিজ্ঞাসা:
চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আমার কিছু বাস চলে। বাসগুলো আমার ব্যক্তিগত। বাসগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য জানা নেই। তবে বিশ লাখের উপরে হবে। আমি এখন জানতে চাচ্ছি, আমার এই বাসগুলোর মূল্যের কি যাকাত দিতে হবে?

সমাধান: আপনার বাসগুলোর মূল্যের যাকাত দিতে হবে না। তবে বাস থেকে যে আয় হবে তা নেসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে যাকাত দিতে হবে। (হিদায়া-১/৯৬, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৫৩, আল ইখতিয়ার-১/১০০)।

(৯২০২) মুহাম্মাদ হামীদুল্লাহ, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
আমার একটি দোকান ভাড়া দিয়েছি। ভাড়ার এডভান্সড হিসেবে দুই লক্ষ টাকা ভাড়াটিয়া থেকে নিয়েছি। প্রতি মাসে তা থেকে একটি অংশ ভাড়া হিসেবে কেটে রাখি। জানার বিষয় হলো, বছরান্তে এই দুই লক্ষ টাকার যাকাত আমাকে আদায় করতে হবে কি না?

সমাধান: এডভান্সড হিসেবে গৃহীত টাকা অগ্রীম ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে। টাকার মালিক আপনি বিবেচিত হবেন। বিধায় আপনাকে সেই দুই লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে। তবে যদি নিছক সিকিউরিটি হিসেবে টাকা নেওয়া হয় এবং চুক্তি শেষে ফেরত দিতে হয় তাহলে সেই টাকা আপনার কাছে আমানত হিসেবে থাকবে। আপনাকে তার যাকাত দিতে হবে না। মূল মালিকের উপর যাকাতের দায়িত্ব বর্তাবে। (মাবসূত সারাখসী- ২/১৯৭, বাদায়েউস সানায়ে- ২/১০, আলমুহীতুল বুরহানী- ২/৩০৫)।

(৯২০৩) মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা:
দুই বছর আগে একটা গাড়ি দশ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবহারের জন্য কিনেছিলাম। এখন সেটার মূল্য চার লাখ টাকা। এখন যদি এই গাড়ির যাকাত দিতে চাই তাহলে ক্রয় মূল্যের হিসেবে যাকাত দিবো, না কি বর্তমান বাজার মূল্যের হিসেবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

সমাধান: ব্যবহারের জন্য ক্রয় করার কারণে এই গাড়ির যাকাত দিতে হবে না। বিক্রয় মূল্য হিসেবেও না, ক্রয় মূল্য হিসেবেও না। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া-১/২৪০, ফাতওয়া হিন্দিয়া-১/২৪১, ফাতাওয়া কাযীখান-১/১২৩)।

(৯২০৪) আলাউদ্দীন, নেত্রকোনা।
জিজ্ঞাসা:
একজন ব্যক্তি আছেন যার খাবার-দাবার এবং সাধারণ সব খরচাদি তার নিজের আয়ের মাধ্যমে হয়ে যায়। খরচ করার পর তার কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এমন ব্যক্তির জন্য ঘর বাড়ির উন্নয়ন এবং ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না?

সমাধান: যাকাতের নেসাবের মালিক না হলে যাকাত গ্রহণ করা যাবে। তবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের যাকাত গ্রহণ না করাই শ্রেয়। স্বচ্ছলদের উচিত অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের যাকাত গ্রহণের জন্য সুযোগ করে দেওয়া। (হিদায়া- ১/১১০, তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/২৯৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/২৪৯)।

তালাক সংক্রান্ত

(৯২০৫) মুহাম্মদ রকিবুদ্দিন রোকন, ঠিকানাবিহীন।
জিজ্ঞাসা: যথাবিহীত সম্মান পূর্বক বিনীত আরজ এই যে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে ঝগড়া বিবাদে এভাবে লিপ্ত হয়ে পড়ে যে, স্ত্রীকে নিয়ে নিজ আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে যাবে। তাই স্ত্রীকে বলে স্বর্ণের গহনা অলঙকারগুলো পরিধান করতে। কিন্তু স্ত্রী স্বামীর দেয়া গহনা অলংকারাদী পরিতে অস্কীকার করে। এ তর্কে বিতর্কে প্রায় ২/৩ গণ্টা অতিবাহিত হয়। এক কথায় স্বামীর দেয়া গহনা অলংকারাদী স্ত্রী পরিধান করবে না। এক পর্যায়ে স্বামী তাকে সামাল দিতে না পারায় স্ত্রীকে বলে যদি গহনা অলংকারাদী পরিধান না করো তাহলে তোমাকে ১ তালাক, ২ তালাক, ৩ তালাক। বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। এ কথা বলার পর স্বামীর দেয়া গহনা অলংকার পরিধান করে স্বামীর আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে চলে যায়। ঘটনাটি সংঘটিত হয় ২০১৫ সালের শুরু দিকে। তারপর তারা রীতিমত ঘর সংসার করে আসছে। এখন জানার বিষয় হলো উক্ত মাসআলার শরয়ী সমাধান কি হবে?

বি.দ্র.- উপরোক্ত ঘটনায় কোনো স্বাক্ষী না থাকায় স্বামী আল্লাহ তাআলাকে হাযির নাযির করে হলফ করিয়া বীললেন ঘটনার বিবরণ সবই সত্য।

উলেখ্য আমার স্বামীর উপরোক্ত লিখিত বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করিলাম। স্ত্রী মুছাম্মত রাবেয়া খাতুন।

সমাধান: শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাককে কোনো কিছুর সাথে শর্তযুক্ত করলে যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত শর্ত পাওয়া যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত তালাক পতিত হয় না। সুতরাং উল্লিকিত মূলনীতির আলোকে আপনার প্রদত্ত বর্ণনা ও তার উপর আপনার স্ত্রীর সত্যায়ন মতে সমাধান এই যে, যেহেতু স্বামী প্রশ্নোক্ত ঘটনায় তালাককে, স্বীয় স্ত্রী, অলংকারাদী পরিধান না করার সাথে শর্তযুক্ত করেছিলেন, এদিকে স্ত্রী উক্ত মজলিসেই অলংকারাদী পরিধান করে নিয়েছিল, সেহেতু উল্লিখিত ঘটনায় উক্ত স্বামী কর্তক স্বীয় স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। সুতরাং তারা যথা নিয়মে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করতে পারবেন। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪৮৮ [মাকাতাবা যাকারিয়া], হেদায়া- ২/৩৮৫ [মাকতাবাতুল ফাতাহ])।

ববিধি

(৯২০৬) আবদুল হামিদ, নেত্রকোনা।
জিজ্ঞাসা:
শরীয়াতের দৃষ্টিতে কুকুর লালন-পালন করার বিধান কী? দলীল প্রমাণসহ জানালে ভালো হয়।

সমাধান: বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত কুকুর পালন করা শরীয়াত অনুমোদিত নয়। হাদীসে কুকুর পালনে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ঘরে কুকুর থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস-৩২২৫)।

তবে হ্যাঁ, শরীয়াত কর্তৃক নির্ধারিত প্রয়োজনে কুকুর পালনের অনুমতি আছে। প্রয়োজন ব্যতীত নিছক শখের বসে কুকুর পালন করলে হাদীসে সাওয়াব কমে যাওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর এবং পশু রক্ষাকারী কুকুর ছাড়া অন্য কোনো কুকুর পোষে, সে ব্যক্তির সাওয়াব থেকে প্রতিদিন দুই কীরাত পরিমাণ কমে যায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস, ৫৪৮১)।

এ হাদীসের ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম বিনা প্রয়োজনে কুকুর পালন করাকে মাকরূহ তাহরীমী বলেছেন। (আল-মুহীতুল বুরহানী- ৬/১২৮, ফাতাওয়া তাতারখানীয়া- ১৮/২২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ৫/৪১৭)।

(৯২০৭) মাওলানা সালাহ উদ্দীন, ভোলা।
জিজ্ঞাসা:
একজন ব্যক্তির এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। তিনি একেবারেই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এখন তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি তার এক ছেলেকে লিখে দিতে চান। মেয়েদেরকে কিছুই দিতে চান না। জানার বিষয় হলো, এক ছেলেকে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিলে কি সে ছেলে সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে? এবং এর কারণে কি তিনি গুনাহগার হবেন?

সমাধান: যদি কোনো পিতা তার জীবদ্দশায় ওয়ারিশদের মাঝে হেবা সূত্রে সম্পদ বণ্টন করতে চায় তার জন্য সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে, সমূদয় সম্পদ সকল ওয়ারিশদের মাঝে মীরাছের পদ্ধতিতে বণ্টন করা। তবে শরয়ী কোনো কারণে তাদের মাঝে কম বেশি করার অধিকার তার আছে। শরয়ী উযর ব্যতীত সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো ওয়ারিশকে কেবল ক্ষতি সাধন ও বঞ্চিত করার লক্ষ্যে কম বেশি করলে তিনি গুনাহগার সাব্যস্ত হবেন।

তবে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এই বণ্টনও কার্যকর হয়ে যাবে। অতএব, প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মতে পিতা যদি বাস্তবেই তার সমস্ত সম্পদ ছেলেকে লিখে দিয়ে মেয়েদের বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাহলে বিনা কারণে বঞ্চিত করলে পিতা গুনাহগার হবেন। তবে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এই হেবা কার্যকর ও শুদ্ধ হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস- ২৫৮৭, ফাতাওয়া কাযীখান- ৩/১৫৪, আল-বাহরুর রায়েক- ৭/২৮৮)।

মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর আরো লেখা পড়তে ভিজিট করুন-
https://mueenulislam.com/