।। মুশতারী তাসনীম মুন্নী ।।
জীবন পরিক্রমায় স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। সংসার জীবনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পায় উভয়ের দ্বীন ও দায়িত্বের। বৃক্ষরাজি যেমন ফলে ফুলে সজ্জিত হয়ে তার সৌন্দর্য ছড়ায়, ঠিক তেমনই নারী হচ্ছেন ফুলের মতো। তাকে শেকড় হয়ে আঁকড়ে রাখে স্বামী নামের বৃক্ষ। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “তারা তোমাদের আবরণ এবং তোমরা তাদের আবরণ”। (সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৭)। সুতরাং স্বামী স্ত্রী দুজনই সমান পরিপূরক।
নারীকে কুরআনের আলোকে বলা হয়েছে- “তবে সৎকর্মশীলা নারী বা সাধ্বী রমণী তারা, যারা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালেও তা সংরক্ষণ করেন, যা আল্লাহ তাআলা হেফাযত করেছেন”। (সূরা নিসা, আয়াত ৩৪)।
অপরদিকে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন “নারীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে তাদের দায়িত্ব নিয়েছো, আল্লাহর নামে বিশেষ অঙ্গ নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়েছো। (মুসলিম, ১২১৮ আয়াত)। এখানেও হক ও দায়িত্বে দুজনকেই বলা হয়েছে। এখানে এটাই প্রতীয়মান যে দুজনই দু’জনের জন্য হকদার!
স্বামী স্ত্রী মিলে সুখী জীবন যাপন করা অন্যতম ইবাদত। সংসারে হক, দায়িত্ব ও কর্তব্য যাই বলুন- ঠিক না থাকলে ইবাদত ও আমলেও ঘাটতি আসে। অপরদিকে সংসার জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ঘাটতি হলে সামাজিক সম্পর্কেও অবনতি আসে। আসে পারিবারিক জীবনে অশান্তি। সুতরাং আমরা আমাদের পারস্পরিক হকগুলো আবারও সংক্ষেপে জেনে নেই।
পুরুষদের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নারীর মহরের হক আসে। আর্থিক সমস্যা কিংবা গাফলতির কারণে মহরের অংকটা কাবিনের কাগজেই আটকে থাকে। কিংবা কখনোই মোহর পরিশোধ করার চিন্তা আজীবনও আসে না। এজন্য বিয়ের সময়ই সাধ্যমতো মহর রাখুন। যেনো পরিশোধ করা সহজ হয়। স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করুন। উপার্জন যেমন তাকে তেমন ভাবেই জীবন যাপনে অভ্যস্ত করুন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা, বস্ত্র, তার খোরাকির খোঁজ রাখুন। ভাষার সৌন্দর্য নম্রতায়। স্ত্রী যেন আপনার আচরণে সন্তুষ্ট থাকে সর্বদা খেয়াল রাখুন। উত্তম আচরণে অভ্যস্ত হোন।
আরও পড়তে পারেন-
- বাংলায় হিন্দু রেনেসাঁস: প্রগতিশীলতা ও ইসলামবিদ্বেষ
- পরিবেশ বিপর্যয়— রুশ সাম্রাজ্যের শাপে বর?
- মাহে রমযান: সিয়াম সাধনা, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল হলে সবার সম্মুখে নয় একান্তই নিজের মতো করে শুধরে দিন। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি রাখুন। সংসারে সুখ রাখতে শাসনের পাশাপাশি ক্ষমারও প্রয়োজন। মা এবং স্ত্রীর মধ্যে প্রতিযোগিতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কেননা জীবনের জন্য দুজনই আপনার চালিকাশক্তি।
স্ত্রীর সতীত্ব হেফাজত সবার ঊর্ধ্বে। শুধু শরীর নয় আপনার মনকেও হেফাজতে রাখুন। পরকীয়া হতে নিজেকে সরিয়ে রাখুন। অল্পে তুষ্ট থাকুন। স্বামীর উপার্জনের ওপর সন্তুষ্টি রাখুন। অপ্রয়োজনীয় চাহিদার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিবেন না। সংসারে বরকতের জন্য নিজেকে সংযত রাখুন। স্বামীর বাধ্য থাকুন! তার পছন্দগুলো নিজের করে নিন। স্বামীর পরিবার পরিজনের প্রতি শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালোবাসা রাখুন। স্বামীর প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। তার শরীর, মন এবং সামাজিক জীবনের প্রতি খেয়াল রাখুন। দুজনই একসাথে রাগান্বিত হবেন না। স্বামীর মেজাজ গরম হলে আপনি শান্ত হয়ে যান। ভাষাগত দিক হতে মেয়েরা ন¤্রতা অবলম্বন করাই উত্তম।
এবার আসি সম্মিলিত কিছু দৈনন্দিন কাজ নিয়ে। স্বামী স্ত্রীর রাগারাগি কখনোই সন্তানের উপস্থিতিতে না হয় খেয়াল রাখুন। কেননা বাবা মায়ের রাগ এবং ঝগড়া হতে সন্তানের মনে প্রতিহিংসার জন্ম নেয়। স্বামীর দোষ কিংবা স্ত্রীর দোষ সন্তানের সম্মুখে কারও সাথে শেয়ার করবেন না। এতে করে সন্তান বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলবে।
সংসারের টানাপোড়েন কখনোই ওদের সম্মুখে ছোট বয়সে দেখাবেন না। সন্তানের মনে এতে বিভ্রান্তিমূলক চিন্তা তৈরি হবে। স্বামী স্ত্রীর আমল বাড়িয়ে নিন। নামায, রোযা, পর্দা, নফল ইবাদত, দান সদকা, প্রতিবেশীদের প্রতি সহানুভূতি, পরিবারের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ছোটদের স্নেহ করার অভ্যেস ওদের সম্মুখেই তৈরি করুন। সন্তান আপনাদের সাথে আমলি হবে। ওদের পরবর্তী জীবনে এই আমলের প্রভাব বিকশিত হবে।
স্বামীর অনুপস্থিতি কিংবা স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে আপনাকে সংযত রাখুন। কর্মক্ষেত্রে কিংবা সমাজ জীবনে নিজেকে পরস্ত্রী বা পরপুরুষ হতে সরিয়ে রাখুন। আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত সংসার ও সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নিজের চোখের ও মনের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
মোটকথা, স্বামী যেমন একজন স্ত্রীর জন্য আশ্রয় এবং ভালোবাসার বটবৃক্ষ তেমনি একজন স্বামীর জন্যও স্ত্রী তেমনই শান্তিদায়ক ও ভালোবাসার আশ্রয়। একজন আরেকজনকে জানতে হলে একে অপরকে সময় দিন। একে অপরের ভালোলাগা ভালোবাসাকে ভাগ করে নিন। সুখ দুঃখের সঙ্গী হোন একে অপরে।
যখনই দাম্পত্য জীবনে একে অপরের জন্য পরিপূরক হবেন, তখনই সংসার জীবনে বরকত আসবে। সন্তানদের ভবিষ্যত হবে মসৃণ। আখিরাত আর জান্নাত হবে একসাথে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল সংসার আর দাম্পত্য জীবনকে রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ রাখুন। আমীন।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/