।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।
বর্তমানে মানব সমাজে ব্যাপক আকারে জুলুম-নির্যাতন ছড়িয়ে পড়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে জুলুমকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তার সাথে আবার জুলুমের নিন্দাও করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহ পরিণামের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম মুসলিম আবু যর (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ করেন-
يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً، فلا تظالموا
হে আমার বান্দাগণ! আমি জুলুমকে নিজের উপর হারাম করেছি এবং তোমাদের উপরও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর জুলুম করবে না। (সহীহ মুসলিম- ২৫৭৭)। রাসূল (সা.) আরও ইরশাদ করেন-
أتقوا الظلم فإن الظلم ظلمات يوم القيامة
তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুমের পরিণাম হবে খুবই অন্ধকার। (মুসলিম- ২৫৭৮)।
জুলুম কাকে বলে?
الظلم هو وضع الشيء في غير محله، ومجاوزة الحق والتعدي على الآخرين في أموالهم أو أعراضهم، ومن فعل شيئاً من ذلك فقد ظلم نفسه وظلم غيره.
অর্থাৎ- ‘জুলুম হচ্ছে কোনো কিছুকে অন্যায় জায়গায় রাখা, অধিকার লঙ্ঘন করা এবং অন্যায় প্রভাব প্রয়োগ করে অন্যের অর্থসম্পদ জবরদখল ও মর্যাদার উপর আঘাত করা এবং যে কেউ এর কোন একটা করেছে- বস্তুত সে নিজের উপর জুলুম করেছে এবং অন্যদের প্রতিও জুলুম করেছে’। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া)।
জুলুমের প্রকারভেদঃ জুলুম প্রথমত তিন প্রকার। যথা-
১) আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে জুলুম:
মানুষের উপর আবশ্যক হলো, তারা তাদের সকল ইবাদতকে সঠিক স্থানে রাখবে তথা এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। কিন্তু অনেক মানুষ তা না করে তাঁর ইবাদতে এমন এমন বস্তুকে শরীক করে থাকে, যা ইবাদত পাওয়ার কোন অধিকারই রাখে না। যেমন মূর্তি, গাছ, পাথর, ওলী-আওলীয়া ইত্যাদিকে মানুষ আল্লাহর সাথে শরীক নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের বাংলাদেশসহ আরও অনেক মুসলিম দেশের মাজারগুলোতে যে ধরনের শিরকের বাজার জমে উঠেছে, তা সুস্পষ্ট ও বিরাট একটি জুলুম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
নিশ্চয়ই শিরক একটি বিরাট জুলুম। (সূরা লুকমান, ১৩ আয়াত)।
২) বান্দা কর্তৃক তার নফসের উপর জুলুম:
মানুষ তার কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে নানা অপরাধ ও পাপকাজে লিপ্ত হয় এবং তাঁর প্রভুর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করে থাকে। সেই সাথে তারা ওয়াজিব ও ফরজ ইবাদতগুলো পালনে অলসতা করে। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَمَا ظَلَمَهُمُ اللّهُ وَلـكِن كَانُواْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
আর আল্লাহ তাদের উপর জুলুম করেননি। কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করতো। (সূরা নাহল- ৩৩)
৩) আল্লাহর সৃষ্ট ও তাঁর বান্দাদের উপর মানুষের জুলুম:
এই প্রকারের জুলুম হয়ে থাকে অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা, মারপিট, গালিগালাজ ইত্যাদির মাধ্যমে। সাধারণত সমাজের দুর্বল ও অসহায়দের উপরই এ প্রকারের জুলুম বেশি হয়ে থাকে।
বান্দার পারস্পরিক জুলুমের কিছু নমুনা
ক) কারও যমিন অন্যায়ভাবে জবর দখল করা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ
“যে ব্যক্তি কারো অর্ধহাত জমিন জবরদখল করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাতটি যমিন ঝুলিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী- ২৪৫৩ ও মুসলিম- ১৬১২)।
খ) অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় দেখতে চাই না যে, সে ঘাড়ে একটি চিৎকাররত ছাগল কিংবা ঘোড়া বহন করছে। সে আমাকে ডেকে বলছে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করুন!! তখন আমি বলব, আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবো না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় এমন একটি উট ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাত না করে যে উটটি আওয়াজ করতে থাকবে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!
আমি তখন বলব, আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবো না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় স্বর্ণ-রৌপ্য ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাত না করে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন! তখন আমি বলব, আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবো না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় কাপড়ের বোঝা ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাত না করে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন! তখন আমি বলব- আমি তোমার কোন উপকার করতে পারব না। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি”। (সহীহ বুখারী)।
গ) বিনা কারণে কোন প্রাণীকে কষ্ট দেয়া:
বিনা প্রয়োজনে কোন প্রাণী হত্যা করাও জুলুম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ فَرَأَيْتُ فِيهَا امْرَأَةً مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ تُعَذَّبُ فِي هِرَّةٍ لَهَا رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ
অর্থাৎ- আমার কাছে জাহান্নামকে পেশ করা হলো। তাতে দেখলাম বনী ইসরাঈলের একটি মহিলাকে একটি বিড়াল হত্যা করার অপরাধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। উক্ত মহিলা বিড়ালটিকে বেঁধে রাখত। সে নিজেও বিড়ালকে কোন কিছু খেতে দেয়নি এবং যমিন থেকে পোকা-মাকড় ধরে খাওয়ার জন্য ছেড়েও দেয়নি। এভাবে ক্ষুধার তাড়নায় বিড়ালটি মৃত্যুবরণ করলো। (সহীহ মুসলিম- ১৯৭২)।
ঘ) এতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা:
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
“যারা অন্যায়ভাবে এতীমদের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করে নিশ্চয় তারা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্বরই তারা প্রজ্বলিত অগ্নিতে প্রবেশ করবে”। (সূরা নিসা, ১০ আয়াত)।
ঙ) বিনা কারণে কাউকে হত্যা তরা, সুদ খাওয়া, মিথ্যা অপবাদ দেয়া ইত্যাদি:
হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
اجْتَنِبُوْاالسَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
অর্থাৎ- তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তা হলো (১) আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা (২) যাদু করা (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া (৫) এতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ওয়াসায়া অধ্যায়, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)।
এমনিভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মানুষকে কষ্ট দেয়া, চুরি করা, কারও নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়া, শ্রমিকের অধিকার নষ্ট করা, আমানতের খেয়ানত করা, মানুষের গিবত করা, মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করা, ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করাসহ আরও অসংখ্য জুলুম রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জুলুম:
বর্তমান কালে যে জুলুমটি দিবালোকের মতো সুষ্পষ্ট ও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে জুলুম। এ ক্ষেত্রে আমরা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান বা সরকারের পক্ষ হতে জন সাধারণের উপর যে জুলুম হচ্ছে তার কিছু উদাহরণ পেশ করার চেষ্টা করবো।
যুগে যুগে অনেক জালেম সরকার বা রাষ্ট্র নায়ক পৃথিবীর বুকে আগমন করেছে। তাদের প্রত্যেকেই করুণ ও ভয়াবহ পরিণতির শিকার হয়ে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ফেরাউন ভেবেছিল সে দুর্বলের উপর জুলুম করে চিরস্থায়ী হতে পারবে। কিন্তু সে আল্লাহর পাকড়াও হতে রেহাই পায়নি। কুরআন বলছে, সকাল-বিকাল ফেরাউন সম্প্রদায়ের সামনে জাহান্নামের আযাব পেশ করা হয়। কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ করা হবে।
আরও পড়তে পারেন-
- কওমি মাদ্রাসা: সামাজিক পুঁজি ও দারিদ্র্য বিমোচন
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
- সুখময় দাম্পত্য জীবনের নববী রূপরেখা
নমরুদ তাই ভেবেছিল। সেও একই ভাবে পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছে। এমনি আরও অনেক স্বৈরাচার পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দিয়ে শেষ রক্ষা পায়নি।
বর্তমান শতাব্দীর মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় স্বৈরশাসকের কথাই বলি। তিউনিসিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জয়নুল আবেদীনের নামটি খুবই সুন্দর। কিন্তু তার কাজগুলো শয়তানি কর্মকান্ড ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই অহংকারী জালেম সমগ্র তিউনিসিয়াকে একটি বিশাল জেলখানায় পরিণত করেছিল। এই জালেম ও স্বৈরাচার ভেবেছিল ক্ষমতায় সে চিরস্থায়ী হবে। তিউনিসিয়ার জমিন থেকে ইসলামের নাম নিশানা মিটিয়ে ফেলতে সে কোন প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি। ইসলাম পন্থিদের উপর যে নির্যাতন সে করেছে, তার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। সে তার রাষ্ট্রে মুসলিম মহিলাদের উপর হিজাবকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। কোন একজন আরব লেখক আফসোস করে বলেছেন-
زين العابدين منع في دولته الحجاب ففر مع زوجته متحجبةً إلى بلاد الحجاب
অর্থাৎ- জয়নুল আবেদীন তার দেশে মহিলাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছিল। পরিশেষে সে তার হিজাব পরিহিত স্ত্রীসহ হিজাবের দেশেই পলায়ন করতে বাধ্য হলো (তার এক সময়কার বন্ধু ফ্রান্স এবং অন্যান্য রাষ্ট্র তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় সে তার হিজাব পরিহিত স্ত্রীসহ সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছে)।
এছাড়া একটু অনুসন্ধান করলেই বিশ^ব্যাপী বিগত ও বর্তমান অগণিত জালেম শাসকের খোঁজ পাবেন এবং তাদের করুণ পরিণতির কথাও জানতে পারবেন। আফসোস, অতীত জালেম শাসকদের করুণ পরিণতি থেকে বর্তমান জালেমরা কোন শিক্ষা ও সতর্কতা গ্রহণ করছে না। কিন্তু জুলুমের অনিবার্য পরিণতি তারা এড়াতে পারবে না। কারণ, মজলুম জনতার ফরিয়াদ আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। তিনি জালেমদেরকে সাময়িক ছাড় দিলেও একেবারে ছেড়ে দেন না। দুনিয়া থেকেই তাদের করুণ পরিণতি শুরু হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, হে অন্যের উপর জুলুমকারী! জেনে রাখো, মজলুমের দুআ অচিরেই কবুল হবে। ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেন-
اتقوا دعوة المظلوم وإن كان كافراً؛ فإنه ليس دونها حجاب
তোমরা মজলুমের বদ দুআ থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফের হয়। কেননা মজলুমের দুআ কবুল হওয়ার কোন অন্তরায় নেই। (মসনদে আহমদ- ২২ পৃষ্ঠা)।
সুতরাং হে জালেম! জুলুম থেকে বিরত হও। অন্যথায় অচিরেই মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে জুলুমের ফলাফল তোমাকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে।
হে জালেম! তুমি আল্লাহর সেই বাণীকে স্মরণ করো, যেখানে তিনি ইরশাদ করেছেন-
وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاء
জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না। তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ অবনত হবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহ্বল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম- ৪২-৪৩)।
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন-
وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
আর তোমার পরওয়ারদিগার যখন কোন জুলুমপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয় তার পাকড়াও খুবই মারাত্মক, বড়ই কঠোর। (সূরা হুদ- ১০২)।
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন-
وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ
অর্থাৎ- জালেমরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ? (শূআরা- ২২৭)।
সুতরাং হে জালেম, এখনও সময় আছে। আল্লাহর বান্দাদের উপর জুলুম করা থেকে ক্ষান্ত হও। আল্লাহর কাছে তাওবা করো। তোমার জন্য এখনও তাওবার দরজা খোলা আছে। তাওবা করলে তোমার সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হে আল্লাহ! আপনি মজলুমদের দুআ কবুল করুন। জালেমদের পতনকে তরান্বিত করুন এবং তাদেরকে হিদায়াত করুন। দুর্বল ও অসহায়দেরকে সাহায্য করুন। আমীন।
লেখক: মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা, খতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ, টংগী, গাজীপুর।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/