পাঠকের রিসালাহ

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন, ইসলাম কি বলে?

মুসলিম জীবনের আনন্দ উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়; বরং তা নিহিত আছে আল্লাহর দেওয়া আদেশ পালন করার মাঝে।

কেননা, মুসলমানের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়; বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজে জড়িয়ে   থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখেরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা।

ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতকে থার্টিফার্স্ট নাইট বলা হয়। বর্ষবরণের নামে এ রাতকে ঘিরে পশ্চিমাদের যে কত আয়োজন তার কোনো শেষ নেই।

অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল, আজ মুসলমানরাও এ আয়োজনে পিছিয়ে নেই। আতশবাজি, পটকাবাজি, গান, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, মাদক সেবন, নারীর শ্লীলতাহানী, যেনা- ব্যভিচারসহ কত কিছুইনা হচ্ছে এ রাতে। 

এ সব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।

আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটে অসামাজিক কার্যকলাপ বহুগুণে বেড়ে যায়। নেশাদ্রব্য, আপত্তিকর নাচ-গানসহ বিভিন্ন বেহায়ামিপূর্ণ কীর্তিকলাপ দ্বারা থার্টি ফার্স্ট উদযাপন গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে চলে আসছে।

একটু লক্ষ, করলে দেখা যাবে, কয়েক দশক আগেও এ দিবসটি এভাবে উদযাপন করা হতো না। কিন্তু ভিনদেশের সংস্কৃতিতে আজ এ দিবসগুলোতে শরীয়ত বিরোধী ও গোনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে ঈমানদাররা তাদের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করছেন।

মূলত এটা খৃস্টানদের সংস্কৃতি হলেও প্রতি বছর অনেক মুসলিমও পালন করে থাকেন। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ি, শরীয়তের সীমালঙ্ঘন করে ফেলি। অশ্লীলতা ও নোংরামীতে লিপ্ত হয়ে পড়ি। এটা মুসলমানদের কোন সভ্যতা, সংস্কৃতি হতে পারে না।

আরও পড়তে পারেন-

বরং এটা একটি অপসংস্কৃতি। থার্টি ফার্স্ট নাইট বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ এবং অশ্লীলতার মহাপ্লাবন। এটি সম্পূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি। একজন ঈমানদার মুসলমান ও রুচিশীল-সচেতন মানুষ কিভাবে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও বেহায়াপনাকে সমর্থন করে তা বোধগম্য নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাক যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।  (সুরা আলে-ইমরান- ১৩১)।

থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের প্রেক্ষাপট

উৎপত্তি: প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জামশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন। প্রথমদিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হতো।

পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারিতে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে ২০০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। (সূত্র- ইন্টারনেট)।

থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন কি ইসলাম সমর্থিত?

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পূর্ণরূপে বিজাতীয় সংস্কৃতি। এ রাত্রিতে বলে ও ম্যাসেজের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো, আতশবাজি, পটকাবাজি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, ট্যাটো বা উল্কা অংকন, ডিজে পার্টি ও কনসার্ট, নেশা সেবনসহ বিজাতীয় সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্য রাখে। ইসলাম এটি কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা: এ রাত্রিকে কেন্দ্র করে চলে অশালীন ও বেহায়াপনার মহোৎসব। যুবতীরা আঁটসাঁট, অশালীন ও অর্ধ নগ্ন পোশাক পরিধান করে অবাধে চলাফেরা করে।

অথচ এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ওইসব নারী যারা হবে পোষাক পরিহিতা কিন্তু প্রায় নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। (সহিহ মুসলিম- ২১২৮)।

রাসূল (সা.) বলেছেন,  যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।  (আহমদ, আবু দাউদ- ৩৫১২, মিশকাত- ৪৩৪৭)।

যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারী সমাজ নষ্ট করার নীল নকশা: যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারী সমাজকে নষ্ট করার জন্যই  থার্টি ফার্স্ট নাইট বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে।

২০০০ সালের ৩১ শে ২৫ মিনিটে গুলশানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকারী এক তরুণীকে কিছু মাতাল যুবক শ্লীলতাহানি করে ও তার শরীরের বেশীর ভাগ কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।

আর ২০০১ সালের শাওন আখতার বাধনের ক্ষত-বিক্ষত দেহ কে না দেখেছেন? আরও কত বাধন। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় থার্টি ফার্স্ট নাইট একটি যৌন উৎসব। যা তাদের জন্য অসম্মান জনক।

অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা যেনার নিকটবর্তী হয়ো না।  (সূরা বনী-ইসরাইল- ৩২)।

অন্যত্র আছে, (হে নবী!) আপনি (মুমিনদের) বলে দিন, আমার পালনকর্তা সব ধরনের অশ্লীল বিষয়গুলো হারাম করেছেন।  (সুরা আরাফ- ৩৩)।

পরিশেষে সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি যে, জেনা, মদ্যপান ও অমুসলিমদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণের এই নিকৃষ্ট সংস্কৃতিকে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিলীন করা চাই।

এ লক্ষ্যে সকল মুসলিমকে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত অবস্থা তৈরি করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও অন্যদেরকে এই বিষয়ে সচেতন করার মাধ্যমে জান্নাত লাভ করার জন্য আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।  (আত-তাহরীম-৬)।

নাজমুল হাসান সাকিব

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।