পরিচালকের চিঠি
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সুপ্রিয় কিশোর বন্ধুরা! আশাকরি প্রচ- শীতের এই মৌসুমে সকলেই ভালো আছো। আজকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভালো থাকলেও জাতিগতভাবে ভালো নেই। চতুর্দিকে আমাদের পতন, হতাশা ও বিপদ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এই তো মাত্র কদিন আগে (২৩ ডিসেম্বর) আমাদের দেশের ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীতে রাত তিনটার দিকে একটি লঞ্চে আগুন লেগে ৪৭ জনের মৃত্যু হয় এবং আরো ৫৮ জন দূর্ঘটনার এক সপ্তাহ পরও নিখোঁজ রয়েছেন। আহ! কী মর্মান্তিক মৃত্যু! কত জনের স্বপ্ন, কত কল্পনা আগুনে পুড়ে আঙ্গার হয়ে গেল! কারো কারো তো হাড় ছাড়া কিছুই বাকি থাকেনি। এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যু সহ্য করার মতো নয়। মৃতদের মধ্যে নারী ও নিষ্পাপ শিশুও ছিল অনেক। আল্লাহ তাদের সকলের মৃত্যুকে শহীদি মওত হিসেবে কবুল এবং শোকাহত পরিবারের সকলকে সবরে জামিল দান করুন। আমীন।
বন্ধুরা, সংবাদপত্রের পাতা প্রতিদিন বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনা, আহত-নিহতের সংবাদে ভরপুর থাকে। এ ধরনের হৃদয়গ্রাহী দূর্ঘটনার দুটি কারণ। এক. যারা আমাদের অভিভাবকের আসনে আছেন, তাঁদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা এবং আমাদের অসতর্কতা ও অলসতা। যে লঞ্চটিতে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারে অভিযোগ আসছে যে, লঞ্চটিতে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ছিল। ইঞ্জিনে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত্রের পর একঘণ্টা পর্যন্ত লঞ্চটিকে চালানো হয়েছিল। এমনকি লঞ্চটি রওয়ানা হওয়ার আগে রুটিন চেক করা হয়নি। এগুলো সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা যদি প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে, নিজ স্বার্থকে একপাশে রেখে দায়িত্বশীল হই, তাহলে এমন মর্মান্তিক দূর্ঘটনা অনেকাংশেই কমানো যেতো।
আরও পড়তে পারেন-
- বাংলায় হিন্দু রেনেসাঁস: প্রগতিশীলতা ও ইসলামবিদ্বেষ
- পরিবেশ বিপর্যয়— রুশ সাম্রাজ্যের শাপে বর?
- আহলে কুরআন: কুরআন বলে ‘তুমি মিথ্যাবাদি’
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
বন্ধুরা, আমাদের প্রিয় নবী(সা.) বলেছেন, মুসলমানের উদাহরণ হচ্ছে একটা শরীরের মত। শরীরের কিছু অংশে ব্যাথা হলে পুরো শরীরে তা অনুভব হবে। লঞ্চ দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তারা সকলেই আমাদের ভাই। ঈমানের দাবি হচ্ছে, তাদের শোকে আমাদের শোকাহত ও ব্যথিত হওয়া। এই দূর্ঘটনায় কত পরিবারের যে স্বপ্ন ভঙ্গ হলো, কত শিশু এতিম হলো, কত নারী বিধবা হলো এবং কত পরিবার সমূলে উজাড় হয়ে গেল তার ইয়ত্তা নেই। এদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের দুঃখ ঘুচানোর চেষ্টা করা আমাদের সক্ষম সকলের দায়িত্ব।
বন্ধুরা আজ থেকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে আমাদের মুসলমান ভাইদের খুশিতে আমরা আনন্দিত হবো। তাঁদের দুঃখে আমরা ব্যথিত হবো। সাধ্যমতো প্রত্যেক অসহায় মুসলমান ভাইকে সহযোগিতা করবো, ইনশাআল্লাহ। তবেই আমাদের ঈমানী সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ হবে। সহীহ মুসলিমের হাদীসে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তাঁর ভাইকে সাহায্য করতে থাকে।
আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবার কথা হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের সহায় হোন; আমিন।
ইতি- তোমাদের পরিচালক ভাইয়া।
এক হাজার বছরের ভালোবাসা
– আবু সাইফ খালেদ
সে ই অ নে ক আ গে র কথা!
পৃথিবীতে একজন প্রতাপশালী বাদশাহ ছিলেন। ‘তুব্বা’ নামে যিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ।
তুব্বা বড় বাহাদুর ও ভয়ংকর ছিলেন।
তুব্বা পৃথিবীর পশ্চিমাঞ্চল বিজয় করার পর পূর্বাঞ্চল বিজয়ের নেশায় হেজায ভূমিতে পা রাখেন। ইয়াসরিব (মদিনা) অতিক্রম করার সময় তুব্বা তার ছেলেকে ইয়াসরিবের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করে যান। আর তিনি নিজেই গেলেন শাম (সিরিয়া) এবং ইরাকের দিকে।
কিন্তু ইয়াসরিববাসী চুক্তিভঙ্গ করে কিছুদিন পর তুব্বা’র ছেলেকে হত্যা করে।
পুত্র হত্যা এবং চুক্তিভঙ্গের সংবাদ তুব্বা’র কাছে পৌঁছতেই তুব্বা রাগে-ক্ষোভে কেঁপে উঠলেন। পুত্র হত্যার প্রতিশোধ নিতে তুব্বা দেরি করেনি। সাথে সাথেই ইয়াসরিবে (মদিনায়) ব্যাপক গণহত্যা চালানোর নির্দেশ দেন। এই লড়াই এতই ভয়ংকর এবং ব্যাপকতর ছিল যে, এ যুদ্ধে তুব্বার বক্তিগত ঘোড়াও মারা যায়।
তুব্বা কসম খেলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই শহরের (ইয়াসরিবের) প্রতিটি ইট ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সে সামনে কদম ফেলবে না।
রক্তের এমন হোলিখেলা দেখে কিছু ইহুদি আলেম তুব্বার কাছে এলেন এবং বললেন, “আমাদের কাছে আসমানি কিতাব আছে। সেখানে আল্লাহ তাআলার দেয়া সংবাদ লেখা আছে। এই পবিত্র শহরের নাম ‘তায়্যিবা’। এই পবিত্র জায়গা শেষ নবীর ঠিকানা হবে। এটা মদিনাতু-র-রাসূল (রাসূলের শহর)। এই শহর রক্ষার দায়িত্ব খোদ আল্লাহর নিজের। আপনি যতই এই শহরকে ধ্বংস করতে চান না কেন, ব্যর্থ হবেন।
সুতরাং আপনি আপনার এমন ভয়ংকর পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। আল্লাহর সৃষ্টিকূলের উপর রহম করুন!
তুব্বা এই আসমানি সুসংবাদ শোনে মাথা নিচু করে নিলেন। রক্তপাত বন্ধ করে কিছু ইহুদি উলামাকে সাথে নিয়ে ইয়েমেনের দিকে রওয়ানা হন।
(বর্ণিত আছে) ইহুদি আলেমগণ তুব্বাকে সময়ে সময়ে আখেরি যামানার পায়গাম্বারের বিভিন্ন গুনাবালী শুনাতেন।
এক সময় শেষ নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রতি তুব্বার অদৃশ্য মুহাব্বাত তৈরি হয়ে যায়।
শেষে তুব্বা চারশত ইহুদি আলেমের জন্য (যারা রাসূলুল্লাহ সা.-এর যিয়ারতের আশায় তুব্বার সঙ্গ ছেড়ে মদিনাতেই অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন) মদিনায় বাড়ি নির্মাণ করে দেন। প্রত্যেককে একটা একটা বাঁদি এবং প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ উপহার দেন।
তুব্বা বিশেষ গুরুত্ব সহকারে একটি ঘর এই উদ্দেশ্যে তৈরি করেন যে, শেষ নবী যখন এখানে হিযরত করবেন, এই ঘরেই অবস্থান করবেন।
রাসূলের নামে একটি চিঠিও লিখলেন। যেখানে নিজের ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ এবং রাসূলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেন।
চিঠির দুইটি পংক্তির তরজমা-
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আহমদ (সা.) আল্লাহ তাআলার রাসূল। যদি আমার হায়াত তাঁর যামানা পর্যন্ত লম্বা হতো, তাহলে আমি তাঁর সহযোগী হতাম”।
তুব্বা চিঠিতে মহর লাগিয়ে মদিনায় অবস্থানকারীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বড় আলেম তার কাছে হস্তান্তর করেন। এবং এ অসিয়ত করলেন যে, শেষ নবীর সাথে যদি তোমার সাক্ষাত হয়, তাহলে এই চিঠি তুমি তাঁর কাছে পৌঁছে দিবে। আর যদি তোমার সাক্ষাত না হয়, তাহলে তোমার বংশ পরিক্রমায় যার সাথে সাক্ষাত হয় তাকে এই চিঠি আমানতের সাথে শেষ নবীর খেদমতে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করবে।
তুব্বা এক বড় মুত্তাকি আলেমকে ঐ ঘরের কর্ণধার বানিয়ে দিলেন, যা তিনি শেষ নবীর জন্য নির্মাণ করেছিলেন।
অতঃপর এই বংশ থেকে এসেছেন হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি.), যার ঘরের সামনে রাসূলের উটনী বসেছিল। রাসূলকে মেহনানদারী করার সৌভাগ্য যার অর্জন হয়েছিল।
বলা হয়ে থাকে, তুব্বা বাদশার সেই চিঠি নাকি তখন পর্যন্ত হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর কাছে ছিল। এবং তিনি সেটা রাসূলুল্লাহ (সা.)এর খেদমতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। [সূত্র- তারিখে ইসলাম- ২/১৪৫]
বইয়ের আর্তনাদ!
আমি একটি বই। নিজের অতীত স্মরণ হলে আমি খুব খুশি হই। কী চমৎকার সময় ছিলো তখন, যখন সবাই আমাকে হাতে নিত! আমি চিত্তাকর্ষক কাহিনী শুনাতাম। দ্বীনের কথা বলতাম। বৈজ্ঞানিক বিষয়ে মানবজাতিকে অবগত করতাম। সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতাম। কবিতার মাধ্যমে মানুষকে কখনোও নিয়ে যেতাম হারানো অতীতে, কখনোও স্বপ্নময় ভবিষ্যতে।
আমি গবেষণা করে সত্য কথা বলতাম। এখনকার ইন্টারনেটের মতো না, যেখানে বাহ্যিকভাবে মনে হয় জ্ঞানের তুফান চলে, কিন্তু এই তুফানের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া অনেক দুষ্কর! আগে প্রতিটা মহল্লায় একটি পাঠাগার ছিল, চোখের জ্যোতি বিনষ্টকারি ইন্টারনেট ছিলো না। এই জন্য শিশু ও যুবকদের দৃষ্টিশক্তি ভালো ছিল। তাদের মাঝে শিষ্টাচার ও ভদ্রতার আগ্রহ ছিল।
স্মার্টফোন এই প্রজন্মের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। দিনের প্রশান্তি ছিনিয়ে নিয়েছে। তাদের কাছে সময়ের কোনো গুরুত্ব নেই বললেও চলে। নিজের ক্ষতির প্রতি কারো ভ্রক্ষেপ নেই। এভাবে ধীরে ধীরে তরুণ প্রজন্ম ইলম থেকে দূরে সরে গিয়ে, আমোদপ্রিয় হয়ে ওঠছে। এগুলো তাদের জাতীয় স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
আমি তরুণ প্রজন্মকে করজোড় করে অনুরোধ করছি, তোমরা আমাকে আপন করে নাও, যেভাবে তোমাদের পূর্বসূরীগণ আপন করে নিয়েছিল। তোমরা আমাকে পড়ো, যেভাবে পড়েছিল তোমাদের পূর্বপুরুষগণ।
আলোকিত হবে, ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে, যেভাবে আলোকিত হয়েছিল তোমাদের পূর্বপুরুষগণ। মনে রাখবে, আমাকে উপেক্ষা করে যদি তোমরা ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে যাও, তাহলে তোমাদের ভবিষ্যত হবে অন্ধকার এবং চরম হতাশার।
– সাগীর আহমেদ
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/