পাঠকের রিসালা

ছোটদের কাছ থেকে শেখা

মাঝে মাঝে ছোটদের থেকে কিছু শিখতে হয়। অনেক সময় তাদের চলনে-বলনে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না। এমনই এক ঘটনা ঘটলো একদিন ইশার নামাযের পর। নামায শেষে চা পান করতে বাইরে গেলাম। ফেরার পথে জামিয়ার শিক্ষাভবনের সিঁড়ি বেয়ে মেশকাত দরসগাহের দিকে যাচ্ছি। সিঁড়িতে হঠাৎ ছোট বাচ্চার গুনগুন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভাবলাম, এখানে ছোট বাচ্চা কোত্থেকে আসলো !

একটু পরই যখন ছোট বাচ্চাটি আমার সামনে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো। দেখলাম, আশ্চর্য ! সে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলে বলে নামছে, আর আমি!!! তখন নিজেকে খুবই ছোট মনে হলো! ভাবলাম, কুরআন-হাদীস ও অন্যান্য বই-পুস্তক পড়ে-শুনে অনেক কিছু জানা যায়, কিন্তু আমল খুব কম করা হয়। অথচ দেখুন, এই ছোট্ট বাচ্চাটি- সে না পড়েছে কুরআন, আর না হাদীস। তবুও কী সুন্দর করে সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! বলে বলে নিচে নামছে। আমিও তার দেখাদেখি তখন আল্লাহু আকবার বলতে বলতে উপরে উঠতে লাগলাম।

অথচ, আমি এই বিষয়টা আগ থেকেই জানতাম, নিচে নামতে সুবহানাল্লাহ বলতে হয় , আর উপরে উঠতে হলে আল্লাহু আকবার বলতে হয়। এটা রাসূলের সুন্নাত। কিন্তু আমল খুব কমই করা হয়েছে। তবে আজ যখন ছোট বাচ্চাটিকে দেখতে পেলাম, তখন আমার হৃদয়ের মাঝে অন্য ধরনের এক অনুভূতি সৃষ্টি হলো। আমিও আজ থেকে আল্লাহু আকবার বলে বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠবো আর সুবহানাল্লাহ বলে নামবো, ইনশাআল্লাহ।

বন্ধুরা ছোটদের থেকে কোনো কিছু জানা ও তাদের থেকে জ্ঞান- বিদ্যা গ্রহণ করা আশ্চর্য ও লজ্জার কোনো বিষয় নয়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখতে পাবেন, আমাদের সালফে সালেহীন, আকাবিরে হযরাত তাদের রায়-সিদ্ধান্তের বিপরীতে বাস্তব বিষয়টি যখন স্পষ্ট হয়ে যেতো, হক আর বাস্তবতাকে গ্রহণ করতে কোনো প্রকারের ইতস্ততবোধ করতেন না। যদিও সে মানে-গুণে, ইলমে-আমলে ও বয়সে আমাদের আকাবির থেকে অনেক ছোট হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক  দান করুন।

রিয়াদুল ইসলাম

ভারতে মুসলিম নির্যাতন: বিপন্ন মানবতা

পাক-ভারত উপমহাদেশের সমৃদ্ধির পেছনে মুসলমানদের ভূমিকা অপরিসীম। মুসলমানরা এ অঞ্চল প্রায় আটশত বছর পর্যন্ত শাসন করেছিলো। শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের প্রদীপ তারা উপমহাদেশে প্রজ্বলন করেছিলো। ইতিহাস অধ্যয়ন করলে বুঝা যায়, ইসলাম এবং মুসলমানদের আগমনের পূর্বে উপমহাদেশ ছিলো কুফরী এবং মূর্খতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। ছিলো না কোনো শিক্ষা-দীক্ষা এবং সুন্দর সমাজ। চারদিকে ছিলো কুফরী এবং যুলমের জয়জয়কার।

আরও পড়তে পারেন-

উপমহাদেশের শাসন থেকে যখন মুসলমানরা নৈতিকভাবে ছিটকে পড়লো, সুদূর সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে ব্রিটিশরা হিন্দুস্তানে অবৈধ আধিপত্য বিস্তার করলো। ব্রিটিশদের দুইশত বছরের শাসনের শুরু থেকেই এখনো পর্যন্ত ভারতের মুসলমানরা নিপীড়িত, নির্যাতিত এবং নিগৃহীত অবস্থায় আছে। শিক্ষা-জীবিকা এবং ব্যক্তিগত অধিকার থেকে তাদেরকে বারবার বঞ্চিত করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশেষভাবে গত এক দশকে ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের মাত্রা অনেকগুণে বেড়ে গেলো। মিথ্যা এবং ঠুকনো অজুহাত দিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদেরকে ধর্মীয় এবং নাগরিক অধিকার থেকে।

গো ভক্তির নামে মানুষ হত্যা এটা কোনো ধর্ম তো দূরের কথা, মানবতাও সমর্থন করে না। কিন্তু ভারতে উগ্রপন্থি হিন্দু সন্ত্রাসীদের হাতে গো হত্যার মিথ্যা অভিযোগে নিহত হওয়া কোনো মুসলিম পরিবারই এখনো ন্যায়-বিচার পায়নি; বরং বিপরীতে ভুক্তভোগী পরিবারই হয়রানির শিকার হয়। খোদ ভারতের তথাকথিত সেক্যুলার প্রশাসন এসব অন্যায় এবং সন্ত্রাসের প্রতি পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে।

কথিত নাগরিক পঞ্জির (এন. আর. সি) নাম দিয়ে ভারতের কোটি কোটি মুসলামানকে ভিটেবাড়ি এবং নিজ জন্মভূমিহীন করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে বিজেপি-প্রশাসন। অথচ ভারতের মাটির সাথে মুসলমানদের শত শত বছরের শেকড়ের সম্পর্ক।

মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীর সত্তর দশক ধরে ভারতীয় বাহিনীর অমানবিক অত্যাচারে নিষ্পেষিত হচ্ছে। অথচ স্বাধীনতা কাশ্মীরবাসীর নৈতিক এবং সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেই  অধিকারকে রাইফেল-কামানের নলের মুখে, কাশ্মীর বিষয়ক বিশেষ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার মাধ্যমে লুন্ঠন করে দিলো ভারতের বিজেপি সরকার। আশ্চর্য হচ্ছে, ভারতে মুসলমান এবং ইসলাম নির্যাতিত হচ্ছে আর বিশ্ব মানবতা মুখে হাত দিয়ে গ্যালারির দর্শকের ন্যায় তা অবলোকন করে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য একবিংশ শতাব্দিতে কোনো অভিভাবক নেই…!!!

ইদ্রিস মজুমদার

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।