পাশ্চাত্য শিক্ষা বনাম কওমী শিক্ষা

।। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।

আল্লাহ তাআ’লার অশেষ মেহেরবানি যে, তিনি মানবজাতিকে গড়-গঠন ও অবয়বের দিক দিয়ে সমস্ত মাখলুক থেকে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন- لَقَدْ خَلَقْنَا الإنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ অর্থাৎ- ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে’। অতঃপর মর্যাদার দিক দিয়েও সর্ব সেরা করেছেন তিনি তাদেরকে।
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। (বনী ইসরাইল-৭০)।

মানবজাতিকে মর্যাদাশীল করার জন্য আল্লাহ তাআ’লা এক নূরানী ও আলোকিত শিক্ষা দ্বারা আমাদেরকে ধন্য করেছেন। এই শিক্ষার মাধ্যমে আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের উম্মতকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার মেহনত করেন। যারা ভাগ্যবান তারা এই শিক্ষাকে গ্রহণ করেছেন, আর যারা গ্রহণ করেনি তারা ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ – يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

অর্থাৎ- তোমাদের কাছে এক উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ। এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। (আল-মায়েদা-১৫)।

আরো ইরশাদ করেন-
الر- كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَىٰ صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
অর্থাৎ- আলিফ-লাম-রা, এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন, পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে। (সূরা ইবরাহীম)।

আরো ইরশাদ করেন-
هُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ عَلَىٰ عَبْدِهِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ- وَإِنَّ اللَّهَ بِكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থাৎ- তিনি তাঁর দাসের প্রতি প্রকাশ্য আয়াত অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনয়ন করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু। (হাদীদ- ৯)।

কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা এ বিষয় প্রমাণিত যে, কুরআনী শিক্ষা দ্বারা মানুষ আলোকিত হয় এবং কুরআনী শিক্ষা ব্যতীত মানুষ অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। আরবের বড় বড় সাহিত্যিক, বড় বড় হেকিম ও ডাক্তারগণ এবং মহাকাশের তারকারাজি সম্পর্কে মহাজ্ঞানীদেরকে কুরআন মাজীদ অন্ধকার আখ্যা দিয়েছে।

কোন সাবজেক্ট জানার নাম আলো ও সভ্যতা নয়। এরিস্টটল, ফিসাগোরিস, প্লেটো ও জালিনুস সহ কত বড় বড় দার্শনিক অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলেন। সে সময়কার লোকজন হস্তশিল্পে বর্তমানের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিলেন, তারপরও কুরআনের ঘোষণায় তারা ছিলেন অন্ধকারে নিমজ্জিত।

আমরা ছিলাম না। কেউ নিজে প্রোগ্রাম করে জন্ম নেয়নি। আমার আত্মা, আমার ব্রেইন, হার্ট, চক্ষু, কান, ফুসফুস ও কিডনিসহ পুরো শরীর কোন ফ্যাক্টরিজাত প্রোডাক্ট নয়। অসীম দয়ালু আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের শরীরের সব অঙ্গ পরিচালনা করছেন।

والله أخرجكم من بطون أمهاتكم لا تعلمون شيئا وجعل لكم السمع والأبصار والأفئدة لعلكم تشكرون
অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার করো। (নাহাল-৭৯)।

তিনি আমাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করেছেন এবং আমাদেরকে কিছু দিনের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আবার আমাদেরকে তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

আরও পড়তে পারেন-

যে শিক্ষায় সৃষ্টিকর্তাকে চেনাজানার কোন আলোচনা নেই এবং তার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কোন সাবজেক্ট নেই, চিরকালের মঙ্গল-অমঙ্গলের জ্ঞান লাভের কোন ব্যবস্থা নেই, এই শিক্ষা আলো হওয়ার কী যুক্তি হতে পারে?
আলোকিত শিক্ষায় শিক্ষিতদের প্রতি অন্ধকারে নিমজ্জিত লোকের সমালোচনা করার উদাহরণ সভ্যদের প্রতি অসভ্যদের সমালোচনা করা, শিক্ষিতদের প্রতি মুর্খদের সমালোচনা করা এবং কাপড় পরিধানকারীদের নিয়ে উলঙ্গদের উল্লাস করার মতো৷

এদের প্রতি আল্লাহ তাআ’লা কুরআনে মাজীদে ইরশাদ করেন-
إن الذين أجرموا كانوا من الذين آمنوا يضحكون – وإذا مروا بهم يتغامزون – وإذا انقلبوا إلى أهلهم انقلبوا فكهين – وإذا رأوهم قالوا إن هؤلاء لضالون – وما أرسلوا عليهم حافظين – فاليوم الذين آمنوا من الكفار يضحكون – على الأرائك ينظرون – هل ثوب الكفار ما كانوا يفعلون –

অর্থাৎ- যারা অপরাধী, তারা বিশ্বাসীদেরকে উপহাস করতো এবং তারা যখন তাদের কাছ দিয়ে গমন করতো, তখন পরস্পরে চোখ টিপে ইশারা করতো। তারা যখন তাদের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরতো, তখন হাসাহাসি করে ফিরতো। আর যখন তারা বিশ্বাসীদেরকে দেখতো, তখন বলতো নিশ্চিত এরা বিভ্রান্ত। অথচ তারা বিশ্বাসীদের তত্ত্বাবধায়ক রূপে প্রেরিত হয়নি। আজ যারা বিশ্বাসী, তারা কাফিরদেরকে উপহাস করছে। সিংহাসনে বসে তাদেরকে অবলোকন করছে। কাফিররা যা করতো, তার প্রতিফল পেয়েছে তো? (মুতাফফিফীন)।

যেহেতু এই সমালোচকরা কাফিরদের ভাষ্যকার, তাই তারাও এই আয়াতের আওতাভুক্ত।
আমরা এদের প্রলাপ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি এবং দ্বীনি শিক্ষার হেফাজতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন। আমিন।

শিক্ষার উৎস

কওমী মাদরাসার শিক্ষা পবিত্র কুরআন ও হাদীস; যার উৎস আল্লাহ তাআলা। আমাদের সৃষ্টির উৎস আল্লাহ তাআলার সিফাতে খালক এবং আমাদের শিক্ষার উৎস আল্লাহ তাআলার সিফাতে ইলম। আল্লাহ মানব জাতির কল্যাণের জন্য যে শিক্ষা দান করেছেন, কওমী মাদরাসায় ঐ শিক্ষারই পাঠ ও পাঠন হয়। কতই না ভাগ্যবান ঐ সব ছাত্র-শিক্ষক, যারা আল্লাহর পবিত্র সত্তার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষায় আলোকিত হচ্ছেন এবং এই শিক্ষার সংরক্ষণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিচ্ছেন। আর কতই না আলোকিত পবিত্র ও বরকতময় ঐ প্রতিষ্ঠান, যেখানে ইলাহী শিক্ষার পাঠ ও পাঠন হয়।

এই শিক্ষা ও শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাঙ্গনের সাথে যাদের শত্রুতা, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও রাসূলের সাথেই তাদের শত্রুতা, আর যাদের আল্লাহ ও রাসূলের সাথে শত্রুতা, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।

পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য শিক্ষার অধিকাংশ উৎস ইহুদি, খ্রিস্টান ও নাস্তিক। তাই এই শিক্ষা নিজেই এক অন্ধকার। যারা এই শিক্ষা লাভ করেন, তারা ইহকালের অস্থিতিশীল জীবনের চাকচিক্য ভালো বুঝেন, কিন্তু আখিরাতের স্থিতিশীল জীবন থেকে তারা অন্ধকারে থাকেন।

يعلمون ظاهرا من الحياة الدنيا وهم عن الآخرة هم غافلو
অর্থাৎ- ‘তারা দুনিয়ার লাভ ক্ষতি ভালো বুঝেন, কিন্তু আখিরাত সম্পর্কে তারা পুরোই অজ্ঞ’। তাই যা বুঝেন তার জন্য শিক্ষা লাভ করেন এবং জীবন উৎসর্গ করেন। কিন্তু তারা আখিরাত না বুঝার কারণে তার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন মনে করেন না। তারা দুনিয়া বুঝেন, তাই তার জন্য পরিশ্রম করেন, কিন্তু তারা আখিরাত বুঝেন না তাই তার জন্য পরিশ্রমের প্রয়োজন মনে করেন না। তারা মনে করেন, দুনিয়া এতো দামী ও সম্মানী যে, তার জন্য অনেক পরিশ্রম প্রয়োজন। আর জান্নাত এক অলীক ও অবাস্তব বস্তু তার জন্য পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। অথবা তারা মনে করেন, জান্নাত এত সহজলভ্য জায়গা যে, আকাঙ্খা করলেই পাওয়া যাবে। এই হলো তাদের অন্ধকারের চিত্র। তাই এই শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে দুনিয়াদার বলা হয়।

তবে যারা কোন বুযূর্গের সান্নিধ্যে থেকে কিংবা তাবলীগে সময় দিয়ে মেহনত করেছেন অথবা দ্বীনদার পিতা-মাতার কাছ থেকে দ্বীন শিখেছেন, তারা দ্বীনদার বটে। তবে এই সংখ্যা খুবই নগন্য।

দ্বিতীয়ত: শিক্ষার উৎসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের মানসিকতা ও স্বভাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। এক শিক্ষার উৎস সর্বশক্তিমান ও সর্বপ্রশংসায় প্রশংসিত আমাদের আল্লাহ, আর অন্য শিক্ষার উৎস আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষপোষণকারী নিকৃষ্ট ও নিন্দনীয় কাফির মুশরিক। লক্ষ-কোটি প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ তাআ’লার, যিনি আমাদেরকে তাঁর শিক্ষা লাভের জন্য বাছাই করেছেন।

শিক্ষার অবস্থান

কওমী শিক্ষা স্বভাবগত শিক্ষা। কুরআন সুন্নাহের শিক্ষা। অর্থাৎ- কওমী মাদরাসা শিক্ষা মানুষের স্বভাবগত শিক্ষা। আমাদের স্বভাবের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআ’লা তিনি আমাদের স্বভাবের মুনাসিব শিক্ষা দান করেছেন। মানুষের চরিত্র ও জীবন যাপনের যে চিত্র ইসলাম পেশ করেছে, তার সমস্তই স্বভাবগত। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে হালাল হারাম স্বভাবগত ও নিরাপদ। সমস্ত ইবাদত, যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, তিলাওয়াত ও কুরবানী; সবই স্বভাবগত ও রুচিশীল। কে কাকে শাদি করতে পারবে বা পারবে না, তাও স্বভাবগত।

পক্ষান্তরে, পাশ্চাত্য শিক্ষা অস্বাভাবিক ও কৃত্রিম। যেমন- শূকর খাওয়া, মদ পান করা অস্বাভাবিক ও বিপদ যুক্ত। মহিলাদের বেপর্দা চলাফেরা, পুরুষের সাথে সহকর্ম ও সহশিক্ষা অস্বাভাবিক ও মহাবিপদযুক্ত। দাঁড়ি রাখা স্বভাবগত দাঁড়ি কাটা অস্বাভাবিক। নামায পড়া স্বভাবগত নামায ছাড়া অস্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রে কওমীদের জীবন যাপন স্বভাবগত, কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জীবন যাপন অস্বাভাবিক।

কওমী শিক্ষা মানবতার শিক্ষা

মানুষের গঠন ও শরীর মানবতা নয়, মানুষের বুদ্ধিও মানবতা নয়; বরং জন্মগতভাবে মানুষের অন্তরে নিহিত গুণাবলিকে মানবীয় গুণাবলী বা মানবতা বলে। যেমন- লজ্জা, দয়া,মার্জনা, ভালোবাসা, সততা, বিশ্বস্ততা, ইনসাফ, ন¤্রতা, বিনয় ইত্যাদি।

এসব গুণাবলী অকার্যকর ও সুপ্ত অবস্থায় অন্তরে চাপা থাকে। যে শিক্ষা অন্তর নিহিত এই গুণাবলীকে কার্যকর ও বিকশিত করে, তাকেই মানবতার শিক্ষা বলে।

কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে ভাল কাজ ও মন্দ কাজের পরিণাম কী হবে, মৃত্যুর সময় কী অবস্থা হবে, কবরে কী ঘটবে, কিয়ামতের দিন কার কী অবস্থা হবে, জান্নাতে কে যাবে আর জাহান্নাম কাদের জন্য? কওমী শিক্ষায় তার ব্যাপক আলোচনায় মানবিক গুণাবলী শক্তি সঞ্চয় করে এবং সক্রিয় হয়। তাই কওমী শিক্ষাকে মানবতার শিক্ষা বলা হয়। এই শিক্ষা নিছক বস্তুবাদ সর্বস্ব নয়, বরং এতে মানবতা ও আখিরাতের কল্যাণ-অকল্যাণ নিয়েই মুখ্য আলোচনা বিদ্যমান।

পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য শিক্ষা বস্তুবাদী শিক্ষা, তাতে শুধু বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়, আত্মা বা মানবতার শিক্ষা ও তার অনুশীলন সেখানে অনুপস্থিত।

যারা প্রকৃত মানবিক গুণসম্পন্ন, তারা কওমী শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু যারা মানুষরূপী পশু, তারা মানবতার শিক্ষা সহ্য করতে পারে না। তাই তাদের পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহ তাআ’লা তাদের হেদায়েত দান করুক। আমীন!

কওমী শিক্ষা আমাদের জাতীয় শিক্ষা

যে শিক্ষা কোন জাতির জাতীয়তাকে লালন করে, সে শিক্ষা ওই জাতির জাতীয় শিক্ষা। যেমন- বেদ, গীতা ইত্যাদি হিন্দুদের জাতীয় শিক্ষা, এই শিক্ষাই হিন্দুদের জাতীয়তাকে লালন করে এবং তাদেরকে অহিন্দুত্বে ক্রিয়াকলাপ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে। যদি হিন্দুদের জাতীয় শিক্ষাকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়, তাহলে দুই তিন জেনারেশন পর পৃথিবীতে হিন্দু জাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তারা জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে বটে তবে তারা হিন্দু থাকবে না; বরং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জাতির মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।

বর্তমানে হিন্দু খ্রিস্টানসহ যত জাতি তার জাতীয় বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও কৃষ্টি-কালচার নিয়ে পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে, তা তাদের জাতীয় শিক্ষার মাধ্যমেই বিদ্যমান। জেনারেল শিক্ষায় কারো জাতীয়তাকে লালন করে না।

মুসলমানদের জাতীয় শিক্ষা কুরআন, হাদীস। এই শিক্ষার মাধ্যমেই আরবদের থেকে মুসলমান নামক ভিন্ন জাতি তৈরি হয়। এই শিক্ষার কারণে মুসলমানদের আক্বীদা-বিশ্বাস, কৃষ্টি-কালচার, আচার-আচরণ ও তাহযিব-তামাদ্দুন কাফেরদের থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। তাদের ভাষা অভিন্ন, কিন্তু তাদের জাতীয়তা এই শিক্ষায় ভিন্ন হয়ে যায়। আজ দেড় হাজার বছর যাবত মুসলমান তার জাতীয় পরিচয় নিয়ে পৃথিবীতে বিদ্যমান, তার জাতীয় শিক্ষার মাধ্যমেই।

বর্তমানে চায়নাতে বেসরকারি হিসাব মতে বিশ-পঁচিশ কোটি মুসলমান রয়েছে। তাদের আইডি কার্ডে জাতীয়তা মুসলমান, কিন্তু জীবন যাপনে তাদের ও চায়নিজদের মধ্যে পার্থক্য নেই। জাতীয় শিক্ষার অনুপস্থিতিতে তাদের পোশাক-আশাক, কৃষ্টি-কালচার, তাদের পানাহার সবই চায়নিজদের মতো। বর্তমানে তাবলীগের মেহনতে স্বল্প পরিসরে তাদের জাতীয়তার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আমাদের জেনারেল শিক্ষা বৃটেন থেকে আমদানিকৃত। এদেশে তার বয়স দেড়শ বছরের মতো। এই শিক্ষা কোন জাতির জাতীয়তাকে লালন করে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম; সব এই শিক্ষা থেকে সমানভাবে উপকৃত হতে পারে। এই শিক্ষা বহুজাতিক শিক্ষা। যেরূপ আমাদের বিমানবন্দর, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমাদের হাসপাতাল, আমাদের স্টেডিয়াম বহুজাতিক, তদ্রুপ আমাদের জেনারেল শিক্ষাও বহুজাতিক।
যেহেতু কওমী শিক্ষা মুসলমানদের জাতীয় শিক্ষা। তাই পৃথিবীর কাফেররা এই শিক্ষাকে সহ্য করতে পারে না। তারা সর্বদা কওমী শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়। তাদের উদাহরণ ওই উলঙ্গ ব্যক্তির মত, যারা কোন হুজুরের মাথায় টুপি না থাকায় তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।

কোনো মুসলমান যদি আমাদের জাতীয় শিক্ষা অর্থাৎ কওমী শিক্ষার প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে বুঝে নিবেন যে, সে আমাদের জাতি নয়। এর মন মস্তিষ্ক কুফর ও বিজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
বিজাতিদের খারাপ মন্তব্যে আমাদের কী আসে যায়? যদি আমাদের আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাক্বওয়া ওয়ালা জীবনযাপন অপরিহার্য।

اللهم وفقني لما تحب وترضى من القول والعمل والفعل

লেখক: প্রবীণ আলেমে-দ্বীন, ভূগোলবিদ, গ্রন্থকার এবং শায়খুল হাদীস, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।