বিপদাপদে সবর ও ইন্নাল্লিাহ পড়ার ফযীলত

।। মুফতিয়ে আযম হযরত আল্লামা ফয়যুল্লাহ (রহ.) ।।

عن عَلِيٍّ رَضَي اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ * إِنَّ السَّقْطَ لَيُرَاغِمُ رَبَّهُ، إِذَا أَدْخَلَ أَبَوَيْهِ النَّارَ   فَيُقَالُ: أَيُّهَا السَّقْطُ الْمُرَاغِمُ رَبَّهُ أَدْخِلْ أَبَوَيْكَ الْجَنَّةَ، فَيَجُرُّهُمَا بِسَرَرِهِ حَتَّى يُدْخِلَهُمَا الْجَنَّةَ ( رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ مِشْكَاة: ص ١٥٣)

অনুবাদ: (৬০৩) হযরত আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মৃত প্রসবিত সন্তানের মাতা-পিতাকে জাহান্নামে দেওয়া হলে, সে তার রবের নিকট আবদার করবে।

তখন তাকে বলা হবে, হে মৃত প্রসবিত সন্তান, যে তার রবের নিকট আবদার করছো! তুমি তোমার মাতা-পিতাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। ফলে সে তার নাভীলতা দিয়ে তাদের টেনে নিয়ে যাবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করাবে। (তাখরীজ: ইবনে মাজাহ- ১৬০৮, মিশকাত- ১৭৫৭)।

ফায়দা: لَيُرَاغِم অর্থাৎ ঝগড়া করবে, বিতর্ক করবে। এটা হচ্ছে  اِستِعَارِة تَخئِيلِيَّة আল্লামা তীবী (রহ.) বলেছেন, এই হাদিসটি অন্য একটি হাদিসের অনুরূপ, যেখানে নবী কারীম (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করলেন, তখন আত্মীয়তার বন্ধন দাঁড়িয়ে গেল এবং আল্লাহর কোমর জড়িয়ে ধরল। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, থাম, তোমাকে যে ছিন্ন করবে আমি তাকে ছিন্ন করব, তোমাকে যে অবিচ্ছিন্ন রাখবে ঈমান থাকলে অবশ্যই আমি তাকে জান্নাত দেবো ঈমানের শর্তে।

عن أَبِي أُمَامَةَ رَوَاللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُولَى، لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُونَ الْجَنَّةِগ্ধ (رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه مِشْكَاة: ص ١٥٣)

অনুবাদ: (৬০৪) হযরত আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি বিপদের প্রথম আঘাতে সবর করো এবং সাওয়াবের আশা করো, তাহলে আমি তোমার জন্যে জান্নাত ব্যতীত অন্য কোনো জিনিস পছন্দ করব না। (তাখরীজ: ইবনে মাজাহ- ১৫৯৭, মিশকাত- ১৭৫৮)।

আরও পড়তে পারেন-

ফায়দা:  হাদিসে কুদসীতে স্বয়ং রাব্বুল আলামীন এই ঘোষণা দিলেন যে, বিপদের সময় যদি আদম সন্তান প্রথমেই ধৈর্যধারণ করে, তবে তিনি এর প্রতিদান হিসাবে জান্নাতই দিবেন। কাজেই প্রতিটি আদম সন্তানের অপরিহার্য কর্তব্য হলো, যখনই বিপদ আসে তখন থেকেই ধৈর্যধারণ করে ঐ সাওয়াব পুরস্কারের ভাগী হওয়া।

عن الْحُسَيْنِ بْنِ عَلَيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيَّ  ﷺ قَالَ: مَا مِنْ مُسْلِمٍ، وَلَا مُسْلِمَةٍ يُصَابُ بِمُصِيبَةٍ، فَيَذْكُرُهَا وَإِنْ طَالَ عَهْدُهَا فَيُحْدِثُ لِذَلِكَ اسْتِرْجَاعًا، إِلَّا جَدَّدَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ عِنْدَ ذَلِكَ فَأَعْطَاهُ مِثْلَ أَجْرِهَا يَوْمَ أُصِيْبَ بِهَا (رَوَاهُ أَحْمَدُ، ومِشْكَاة: ص ١٥٣)

অনুবাদ: (৬০৫) হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে কোনো মুসলমান নর-নারী কোনো বিপদে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি সে ঐ বিপদকে স্মরণ করে ‘ইন্নালিল্লাহ…’ পড়ে, যদিও তা দীর্ঘদিন পরেও হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে নতুন করে আবার সাওয়াব দান করবেন, যে পরিমাণ সাওয়াব বিপদে পড়ার সময় পেয়েছিল। (তাখরীজ: আহমদ- ১৭৩৫, মিশকাত- ১৭৫১)।

ফায়দা:  বিপদাপদে ধৈর্যধারণ এবং ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও নবীর সুন্নাত। এমনকি বিপদ দূরীভূত করে। অনেক দিন পরে আবারও যদি সে বিপদের কথা মনে পড়ে এবং তখনও ইন্নালিল্লাহ…. পড়ে, তবে আল্লাহ তাআলা নতুন করে সেদিনের সমপরিমাণ সাওয়াব দান করবেন। তাই এ হাদিস হতে প্রতীয়মান হয় যে, মুমিনের বিপদ সদা সর্বদা মর্যাদা বাড়ানোর জন্যই হয়।

عن أَبِي هُرَيْرَةَ رَضَ إِنَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ ﷺ: إِذَا انْقَطَعَ شِسْعُ أَحَدِكُمْ فَلْيَسْتَرْجِعْ فَإِنَّهَا مِنَ الْمَصَائِبِ. (رواه البيهقي، مشكاة: ص ١٥٣)

অনুবাদ: (৬০৬) হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কারো জুতোর ফিতা ছিঁড়ে গেলেও সে যেন ‘ইন্নালিল্লাহ…’ পড়ে, কেননা, এটিও একটি বিপদ। (তাখরীজ: বায়হাকী- ৯৬৯৬, মিশকাত- ১৭৬০)।

ফায়দা:  ছোট বড় সকল বিপদাপদ ও মুসিবতে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়া উচিত। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতি নিভে গেলেও ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়তেন।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।