।। আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।
নাস্তিক বৈজ্ঞানিকদের দর্শন
এই তথ্যের বিপরীতে বিজ্ঞানী এরিস্টটল, ল্যামার্ক, ডারউইন, এম্পেডোক্লিস, ডেমো-ক্রিটাস, বুফন, ডেভিস, আগস্টাইজম্যানসহ বিবর্তনবাদী বৈজ্ঞানীক-দের মতে পৃথিবী ও পৃথিবীতে যা কিছু বিদ্যমান, তার কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। তারা বলেন, “সূর্য ভেঙে এক টুকরো ছিটকে পড়ে পৃথিবীর আকার ধারণ করে। পৃথিবীর পানি থেকে বিভিন্ন কীট তৈরি হয়, এসব কীট হাজার হাজার বছরের বিবর্তনে বিভিন্ন জীব জন্তুর আকার ধারণ করে। এগুলো এমনিতেই হচ্ছে, এটাই প্রকৃতির স্বভাব। তার জন্য কোনো সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই”।
এই অযৌক্তিক ও কাল্পনিক মতবাদের উপর কিছু পর্যালোচনা করতে চাই।
আমরা দেখি, পৃথিবীতে কোনো ঘটনা যেমন, খুন, চুরি, এক্সিডেন্ট প্রভৃতি ঘটলে পুলিশ বা গোয়েন্দারা আসামী নির্ণয় করার জন্য প্রথমত কতগুলো সম্ভাব্য দিক ঠিক করে। যেমন- এই কারণে অমুকে এই কাজ করতে পারে, ওই কারণে তমুকে এই কাজ করতে পারে। এসব দিকগুলোকে ‘ধারণা’ বলা হয়। পুলিশ এসব ধারণার পর্যালোচনা করে এবং তার স্বপক্ষে প্রমাণ খোঁজার অভিযান চালায়। অতঃপর অকাট্য দলিল প্রমাণ সংগ্রহের পর আসামি সাব্যস্ত করে। কখনো কোনো অনুমান ও ধারণার উপর বিচার ফায়সালা হয় না।
বিবর্তন প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিকদের মন্তব্য যে মিথ্যা, তার প্রমাণাদি-
১. বিজ্ঞানীরা এক জীব থেকে অন্য জীবে রূপান্তরিত হওয়ার আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। তারা যত প্রমাণ পেশ করেছেন কোনটা মিথ্যা, কোনটা ধারণা। একটাকেও দলিল বা প্রমাণ বলা যায় না।
২. এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে কোনো মাকড়সা, ব্যাঙ, চড়ুইপাখি, তেলাপোকা প্রভৃতি ছোট ছোট জীব অন্য কোন পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে; তার কোনো প্রমাণ নেই। পৃথিবীতে কোনো মোরগ হাঁস হয়েছে, কোনো হরিণ ঘোড়া হয়েছে, কোন ঘোড়া জিরাফ হয়েছে, কোন বিড়াল বাঘ হয়েছে, কোন ব্যাঙ বানর হয়েছে, কোনো গাধা ঘোড়া হয়েছে, কোনো খরগোশ শূকর হয়েছে, কোনো বানর হনুমান হয়েছে, কোনো ছাগল ভেড়া হয়েছে, কোনো ভেড়া ছাগল হয়েছে, কোনো বানর মানুষ হয়েছে, তার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা তার কোনো দৃষ্টান্ত কোথাও পাওয়া যায়নি।
৩. কোনো অঙ্গ ব্যবহার না করলে বিলুপ্ত হয়ে যায়, আবার কোনো অঙ্গ ব্যবহার বেশি হলে তার আকার বড় হয়ে যায়, তারও কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
৪. মোরগ বা কোনো পাখি পানিতে বেশি সাঁতার কাটায় তার হাঁসের মতো পা হয়ে গেছে এবং ঠোঁটও বদলে গেছে, এটা একটা মিথ্যা কথা; তার কোনো বাস্তবতা নেই। যদি তাই হয়, তাহলে এখন তা হচ্ছে না কেন?
৫. ঘোড়া গাছের পাতা খাওয়ার জন্য মাথা উঠিয়ে বারংবার চেষ্টা করার কারণে জিরাফ হয়ে গেছে এটাও মিথ্যা কথা। তার কোনো নজীর নেই। যদি তাই হতো, তাহলে এখন তা কেন হচ্ছে না?
৬. বানর লেজ ব্যবহার না করায় লেজ পড়ে গেছে এবং শহরে বাস করতে করতে মানুষের আকার ধারণ করেছে, এটা পাগলের প্রলাপ। বর্তমানে কত বানর বছরকে বছর মানুষের সাথে বসবাস করছে একটারও লেজ পড়েনি এবং কোনোটা মানুষও হয়নি। এমনকি বানর-মানুষের মাঝামাঝি স্তরেরও কোন অস্তিত্ব নেই।
৭. প্রকৃতির স্বভাব যদি জীবের বিবর্তন হতো, আর বিজ্ঞানীদের মতে মন্থরগতিতে কয়েক হাজার বছরে যদি বিবর্তন হয়, তাহলে প্রত্যেক প্রাণীর সব সময়ই পূর্বেকার পরিবর্তনের পর হাজার বছর যাচ্ছে, তাতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না কেন?
৮. বানর যখন মানুষ হয়ে গেল, তাহলে বানর থাকলো কেন? ঘোড়া যখন জিরাফ হলো ঘোড়া থাকলো কেন?
৯. জীবের বিবর্তন যদি প্রকৃতির স্বভাব হয়, তাহলে বানর থেকে মানুষ, কিন্তু মানুষ থেকে কী হয়েছে? এবং ঘোড়া থেকে জিরাফ, কিন্তু জিরাফ থেকে কী হয়েছে?
১০. বানর থেকে মানুষ, মোরগ থেকে হাঁস ও ঘোড়া থেকে জিরাফ পরিবর্তনে যদি হাজার হাজার বছর লাগে, তবে পানি থেকে হাঁস, পানি থেকে জিরাফ এবং পানি থেকে মানুষের বিবর্তনে কত লক্ষ বছর লাগবে?
১১. কোটি কোটি নিদর্শন আমাদের সামনেÑ দুই-চার মাস থেকে দু’বছর কালের সীমিত সময়ে পানি (বীর্য) থেকে মানুষ, হাতি, ঘোড়া, গাঁধা, মহিষ, গরু, ছাগল, বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, বানর ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। প্রকৃতি এই সল্প সময়ে এত কঠিন বিবর্তন ঘটাতে পারলো, অথচ বিজ্ঞানীদের মতে এক পশু থেকে অন্য পশুতে রূপান্তরিত হতে হাজার হাজার বছর লাগে- এ মন্তব্য অবাস্তব তো বটেই, কল্পনাতীতও।
১২. ডিম থেকে পাখি, মাছ, সাপ, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদির বিবর্তন ১৫-২০ দিনে হচ্ছে, অথচ এক জাত থেকে অন্য জাতের বিবর্তনে বিজ্ঞানীদের মতে হাজার হাজার বছর লাগে। যদি বিজ্ঞানীদের কথা সত্য হতো তাহলে ডিম থেকে পাখিতে রূপান্তরিত হতে হাজার হাজার বছর লাগার কথা। কারণ, এক জাত থেকে অন্য জাতে রূপান্তরিত হওয়ার বিবর্তন থেকে ডিম পাখিতে রূপান্তরিত হওয়া অনেক বেশি কঠিন।
১৩. এক জীবের কোনো অঙ্গ অন্য জীবের অঙ্গের সাথে মিল থাকার অর্থ কি এই যে, একটা অন্যটা থেকে রূপান্তরিত হয়েছে? তাহলে আব্দুর রাহমানের শরীরের সাথে আব্দুল্লাহর হাজার মিল পাওয়ার কারণে আব্দুর রাহমানকে আব্দুল্লাহর ছেলে বলা সত্য হবে?
১৪. বিজ্ঞানীর কাছে বিবর্তনের প্রমাণাদির উদাহরণ হলো, রিক্সার চাকা মন্থরগতিতে ট্রাকের চাকায় রূপান্তরিত হয়েছে, তার প্রমাণ হলো রিং টিউব ও টায়ারে দুইটার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে- এ ধরনের হাস্যকর প্রমাণ ছাড়া তাদের কাছে কিছুই নেই।
১৫. বিবর্তন যদি স্বভাবগত ব্যাপার হতো, তাহলে নর অথবা নারী একটা হতো, দুটো কেন?
১৬. প্রকৃতির স্বভাব যখন বিবর্তন, তাহলে সর্বদা বিবর্তনের মাধ্যমেই জীব-জন্তুর আবির্ভাব ঘটত। এটা কীরূপ বিবর্তন যে, একবার-ই ঘটলো তারপর থেকে নর ও নারীর সংমিশ্রনের ধারাবাহিকতায় সর্বজাতের প্রজন্ম চলমান।
১৭. বিবর্তন চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এটা কীরূপ কারিশমা যে, মানব জাতির অস্তিত্বের পূর্বের যে যুগের অবস্থা শিক্ষিত-অশিক্ষিত কেউই জানে না, সে সময় সারা বিশ্বের বিবর্তন হয়ে গেল, কিন্তু যে যুগ থেকে ইতিহাস রচিত হলো, ওই সময় থেকে আর কোনো বিবর্তন নেই! কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এসব ফালতু কথা মেনে নিতে পারে?
১৮. সৃষ্টিকর্তা ছাড়া বিবর্তনের কারণে যদি মানুষ অস্তিত্ব লাভ করে, তবে তার জৈবিক চাহিদাও বিবর্তনের কারণে হয়েছে। এখন মানুষ যদি তার জৈবিক চাহিদা মিটাতে কারো সাথে যৌন আচরণ করে, খুন-চুরি-ডাকাতি ও নেশা গ্রহণ ইত্যাদি আচরণ করে, তবে তা অপরাধ হবে কেন? এটাতো স্বভাবগত কাজ, যা বিবর্তনের অনিবার্য ফলাফল।
আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণাদি
১. ইমাম আবু হানীফা (রহ.)এর সাথে একবার নাস্তিকদের বিতর্ক হলো। বিতর্কের দিন হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হলো, নাস্তিকরাও এসে উপস্থিত। কিন্তু সারা দিন চলে যাচ্ছে, ইমাম সাহেবের কোনো খবর নেই। অনেক অপেক্ষার পর ইমাম সাহেব আসলেন। তিনি এসে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বললেন- আমার আসার পথে একটি নদী পড়ে। কোনো নৌকা না থাকায় কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। পরে দেখি, একটা গাছ নিজে নিজেই তক্তা হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে তক্তাগুলো নিজে নিজে এক সাথে মিলে নৌকা হয়ে গেল। অতঃপর নদীতে গিয়ে এপার ওপারে মানুষ পারাপার আরম্ভ করতে শুরু করলো। এই নৌকা দিয়ে পার হয়ে আসলাম। এ কারণেই আসতে বিলম্ব হয়ে যায়।
নাস্তিকরা বলল, আপনার মতো একজন বিজ্ঞজনের এ ধরনের মিথ্যা বেহুদা কথা বলা উচিত নয়। এই হাজার হাজার শ্রোতাদের কেউ কি একথা বিশ্বাস করবে যে, এমনিতেই গাছ তক্তা হয়ে গেলো, আবার নৌকা হয়ে গেলো কোনো মিস্ত্রী ছাড়া, আবার কোনো লোক ছাড়াই মানুষ পার করাও আরম্ভ করে দিলো?
নাস্তিকের উত্তর শুনে ইমাম সাহেব বললেন, একটা নৌকা এবং তার পরিচালনা যদি মিস্ত্রী ও মাঝি ছাড়া সম্ভবপর না হয়, তাহলে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, গাছ-পালা, ফল-ফুল দ্বারা সজ্জিত এই পৃথিবী সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এমনিতেই হয়ে গেল? নিশ্চয়ই না!
বিতর্কে ইমাম সাহেবের বিজয় হলো, নাস্তিকরা পরাজিত হলো।
২. যানবাহনের অস্তিত্ব যদি তৈরিকারক ছাড়া না হতে পারে, তাহলে সেই তৈরিকারক কখনও সৃষ্টিকর্তা ছাড়া হতে পারে না। যানবাহন তৈরি সহজ, মানুষ তৈরি কঠিন। সহজটাই এই বিবর্তনের গতিতে হতে পারে না, অথচ কঠিনটা হয়ে যায়, তা পাগলের প্রলাপ।
৩. শহর বন্দর ও হাট বাজার যদি বিবর্তনের ফসল না হতে পারে, তাহলে তার তৈরিকারক মানুষও বিবর্তনের ফসল হতে পারে না; বরং সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি- তিনি হলেন আল্লাহ-
هو الله الخالق البارئ.
৪. বিল্ডিং-অট্টালিকা নিশ্চয়ই ইঞ্জিনিয়ার ও রাজমিস্ত্রীর তৈরি, পাগল ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করতে পারবে না। তদ্রƒপ ইঞ্জিনিয়ার ও রাজমিস্ত্রীও আরেক জনের তৈরি, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না; সেই জনের নাম হলো- আল্লাহ।
৫. তাঁতি ছাড়া তাঁত ও তাঁতের কাপড় তৈরি যদি অসম্ভবপর হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তাঁতির অস্তিত্বও অসম্ভব। এই সৃষ্টিকর্তা হলেন- আল্লাহ।
৬. বিবর্তনের মতবাদ ন্যাচারাল নয়, বরং ডারউইন-ল্যামার্ক-এম্পেডোক্লিসগণের আবিষ্কৃত। তাহলে নিশ্চয়ই তাদেরও কোনো আবিষ্কারক আছেন। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
৭. গাভীর দুধ গাভী ছাড়া অসম্ভব। গাভীও সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অসম্ভব। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
৮. হরিণের মৃগনাভি হরিণ ব্যতিত অসম্ভব, তাহলে হরিণও সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অসম্ভব। তিনি হলেন- আল্লাহ।
৯. স্যাটেলাইট, টেলিভিশন, ল্যাপটপ ও মোবাইলফোন বিবর্তনের ফসল হিসেবে অটোমেটিক হয়ে যায়নি। তাহলে নিশ্চয়ই তার আবিষ্কারকরাও অটোমেটিক হয়ে যায়নি। তাদেরও আবিষ্কারক আছে। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
১০. হাতির পায়ের চিহ্ন দেখে আদৌ কোনো পাগল বলবে না যে, হাতি ছাড়াই অটোমেটিক এই চিহ্ন হয়ে গেছে। বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখে কেউ বলবে না যে, এ চিহ্ন অটোমেটিক হয়ে গেছে। একটা পায়ের চিহ্ন দেখে যদি হাতি ও বাঘের অস্তিত্ব মেনে নিতে বাধ্য, তাহলে হাতি ও বাঘ দেখে তার সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করবো কোন যুক্তিতে? তিনিই হলেন আল্লাহ।
১১. মাকড়সার জাল যদি মাকড়সা ছাড়া অসম্ভবপর হয়, তাহলে মাকড়সাও সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অসম্ভব। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
১২. মৌমাছি ব্যতিত মধুর কল্পনা করা যায় না। তদ্রুপ সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত মৌমাছিরও কল্পনা করা যায় না। এই সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ।
১৩. লক্ষাধিক নবী-রাসূল যারা নিষ্পাপ, সত্যবাদী, বিজ্ঞানীদের চেয়ে হাজার গুণ বেশি জ্ঞানের অধিকারী, তারা বলছেন- পুরো জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ।
১৪. পৃথিবীর সকল মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী বলেন, জগতের সৃষ্টিকর্তা- আল্লাহ।
১৫. হিন্দু, বৌদ্ধসহ অনেক জাতি বলে থাকেন, সৃষ্টিকর্তা আছেন, তবে একাধিক।
১৬. পৃথিবীর সকল ধর্মগ্রন্থে আছে, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া জগতের কিছুই সৃষ্টি হয়নি।
১৭. ঝাড়বাতি, ঝিনুক, লাইট বিবর্তনের মাধ্যমে এমনিতেই পাওয়া যাওয়া যদি সম্ভবপর না হয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ তারকারাজি ও গ্রহ নক্ষত্র কোনো সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অস্তিত্বে আসার কোনো কল্পনাই করা যায় না। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
১৮. হাজার ভোল্টের লাইট যদি বিবর্তনের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করতে না পারে, তাহলে বিবর্তনের মাধ্যমে সূর্যের অস্তিত্বের কল্পনা করা যায় না। নিশ্চয়ই তার কোনো সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
১৯. এক মাহফিলের প্যান্ডেল ও শামিয়ানা যদি বিবর্তনের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করার কোনো সম্ভাবনা ও বাস্তবতা না থাকে, তাহলে আসমানও অটোমেটিক হয়ে যায়নি। নিশ্চয়ই কোনো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে অস্তিত্ব লাভ করেছে। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
আরও পড়তে পারেন-
- নূপুর শর্মা, হেট স্পিচ ও বাকস্বাধীনতা
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
২০. বিরিয়ানী, পোলাও, ভাত, ফিরনী, জর্দা, রোস্ট, দই, মিষ্টি, মুরব্বা ইত্যাদি যদি বিবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া যায়, তাহলে বলুন কোথায়? আর যদি বলেন, তৈরিকারক ছাড়া এগুলো পাওয়া সম্ভব নয়, তাহলে ধান, গম, মাছ, মাংস, আখ, ডাল, তরিতরকারীও কোনো সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অটোমেটিক অস্তিত্ব লাভ করতে পারেনি। তিনিই হলেন- আল্লাহ।
২১. হযরত নূহ (আ.)এর যুগের প্লাবনের ঘটনা এক হেভিওয়েট বাস্তবতা। বৈজ্ঞানিকদের সকল সাবজেক্টের প্রমাণাদির ওয়েটও তার সমান হবে না। হযরত নূহ তাঁর সম্প্রদায়কে পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহর গজব আসবে। অতঃপর বন্যা আসল। এই বন্যা বিবর্তনে হয়নি, নূহের দোয়ায় হয়েছে। যিনি বন্যা দিয়ে পৃথিবীর সবকিছুকে ধংস করে দিয়েছেন, তিনিই হলেন- আল্লাহ।
২২. যিনি কাওমে লূতকে বস্তিসহ উল্টিয়ে দিয়েছেন (যাকে এখন মৃত সাগর বলে), তিনিই হলেন- আল্লাহ।
২৩. এক আরব বেদুইনকে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি এমন উত্তর দিলেন, যা বৈজ্ঞানিকদের জ্ঞানের অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি বলেন-
البعرة تدل على البعير، وآثار الأقدام تدل على المسير، فالسماء ذات ابراج والأرض ذات فجاج، فكيف لا تدل على اللطيف الخبير.
অর্থাৎ- উটের বিষ্ঠা দেখলে উটের অস্তিত্ব জানা যায়। পায়ের চিহ্ন দেখলে পশু নির্ণয় করা যায়। তাহলে গ্রহ-নক্ষত্রে সজ্জিত আকাশ ও নদী-নালা, পাহাড়-পর্বতে সজ্জিত পৃথিবী কেন আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ হবে না?
২৪. ইমাম শাফিয়ী (রহ.) বলেন, عرفت ربي بفسخ العزائم প্রোগ্রাম ক্যান্সেল হওয়ার দ্বারা আমি আল্লাহকে জানলাম।
২৫. হাজার চেষ্টায়ও কেউ মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় না। এটাই প্রমাণ করে, এ জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালক আছেন। তিনি হলেন আল্লাহ- هو المحيي والمميت
২৬. হাজার চেষ্টায় রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। এটাই প্রমাণ করে বিবর্তনের দ্বারা হয়ে যায়নি। তার সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনি হলেন- আল্লাহ।
২৭. একটি গাছকে ইচ্ছা করলে কাটা যায়। মালিক ছাড়া কোনো নৌকা পানির স্রোতে চলতে পারে, তবে ইচ্ছে করলে তাকে আটকানো যায়। বোঝাই নৌকা খালি করা যায়, খালি নৌকা বোঝাই করা যায়। কোনো শক্তি বাঁধা সৃষ্টি না করলে পুকুর ভরাট করা যায়। টিলা কেটে পুকুর খনন করা যায়। তাহলে যে জগত পরিচালকহীন অবস্থায় এমনিতেই চলছে, সেখানে মানুষ হাজার চেষ্টার পরও কেন বাঁচতে পারে না? বরং অনিচ্ছায়-অপ্রস্তুত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। এটাই প্রমাণ করে যে, আমাদের জন্ম-মৃত্যু অদৃশ্যের কোনো শক্তির নিয়ন্ত্রনে তার হুকুম ব্যতিত কিছুই ঘটতে পারে না। তিনি হলেন আল্লাহ-
ذلكم الله ربكم خالق كل شيئ.
২৮. দু’ধরনের ফলের গাছ বা দু’ধরনের পশু দ্বারা নতুন জাতের আবিষ্কারই প্রমাণ যে, মূল গাছ ও পশু এমনিতেই হয়নি, কোনো আবিষ্কারকের আবিষ্কারে হয়েছে। তিনি হলেন- আল্লাহ।
এসব যুক্তি ও রেকর্ড প্রত্যাখ্যান করে এমন কতিপয় পাগল, যাদের জীবন সম্পর্কে কেউ জানে না- তারা কী মিথ্যাবাদী না সত্যবাদী, প্রতারক না ভালো মানুষ। তারা লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বের বিষয়ে কাল্পনিক কিছু মন্তব্য করছে। এটা মেনে নেয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। উপরন্তু এত দুর্বল ভিত্তির উপর এক মতবাদ দাঁড় করানো হাস্যকর ব্যাপার বটে।
বৈজ্ঞানিকদের বিবর্তনবাদের সকল আলোচনা মানব সৃষ্টির অনেক অনেক পূর্বের। তাদের জবাবদিহিতা না থাকায় যা ইচ্ছা তাই বলে। একটা পাথর সম্পর্কে বলে ফেলবে, এ পাথর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ১০ কোটি বছর পূর্বের। অপর আরেক পাথর নিয়ে বলবে, ওইটা এক কোটি বছর পূর্বের।
এসব মিথ্যার ধারাবাহিকতায় একাদশ-দ্বাদশ জীব-বিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র বইয়ের ২৯৮ পৃষ্ঠায় ভূতাত্তিক কালক্রম এর এক ছকে দেওয়া হয়েছে, যা শতভাগ পরিষ্কার মিথ্যা। এইরূপ মিথ্যা মিথ্যুকদের বাজারে চলছে সর্বদা। একজন মানুষও বললো না, কী পড়াচ্ছি আর কী পড়ছি?
সারকথা, বিজ্ঞানীদের বিবর্তনের ওই সব পয়েন্ট, যা দ্বারা সৃষ্টিকর্তা অস্বীকার হয়- পুরোটাই মিথ্যা, অবাস্তব ও অযৌক্তিক। বাস্তব ও সত্য মতবাদ হলো এই, যা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জানে যে, আসমান ও পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু বিদ্যমান, সব আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। লক্ষাধিক আম্বিয়া একথা বলে গেছেন, মানব জাতির আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল মানুষের এই বিশ্বাস যে, আল্লাহই পুরো জগতের সৃষ্টিকর্তা-
بَدِیْعُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ؕ اَنّٰی یَكُوْنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّ لَمْ تَكُنْ لَّهٗ صَاحِبَةٌ١ؕ وَ خَلَقَ كُلَّ شَیْءٍ١ۚ وَ هُوَ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمٌ۱۰۱ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْ١ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ خَالِقُ كُلِّ شَیْءٍ فَاعْبُدُوْهُ١ۚ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ وَّكِیْلٌ۱۰۲ لَا تُدْرِكُهُ الْاَبْصَارُ١٘ وَ هُوَ یُدْرِكُ الْاَبْصَارَ١ۚ وَ هُوَ اللَّطِیْفُ الْخَبِیْرُ۱۰۳
অর্থাৎ- তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কীরূপে আল্লাহর পুত্র হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গী নেই? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ। তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই ইবাদত করো। তিনি প্রত্যেক বস্তুর কার্যনির্বাহী। দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষèদর্শী, সুবিজ্ঞ। (সূরা আনআম- ১০১-১০৩)।
ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْ خَالِقُ كُلِّ شَیْءٍ١ۘ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ٘ فَاَنّٰی تُؤْفَكُوْنَ۶۲ كَذٰلِكَ یُؤْفَكُ الَّذِیْنَ كَانُوْا بِاٰیٰتِ اللّٰهِ یَجْحَدُوْنَ۶۳ اَللّٰهُ الَّذِیْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً وَّ صَوَّرَكُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَ رَزَقَكُمْ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ١ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْ١ۖۚ فَتَبٰرَكَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَ۶۴
অর্থাৎ- তিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা, সব কিছুর স্রষ্টা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছো? এমনিভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। আল্লাহ, পৃথিবীকে করেছেন তোমাদের জন্যে বাসস্থান, আকাশকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন। অতঃপর তোমাদের আকৃতি সুন্দর করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন পরিচ্ছন্ন রিযিক। তিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা। বিশ¡জগতের পালনকর্তা, আল্লাহ বরকতময়।
লেখক: প্রখ্যাত প্রবীণ আলেমে-দ্বীন, গবেষক, ভূগোলবিদ ও শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/