|| মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী ||
বাইতুল মুকাদ্দাসÑমসজিদে আকসা। মুসলমানদের হৃদয়ে সংরক্ষিত অপরাজেয় এক ভালোবাসার নাম। মুসলমানদের প্রথম কিবলা। নবী রাসূলগণের পূণ্যভূমি। যার বরকত এবং পূণ্যতার ঘোষণা কুরআন-হাদীসে বারবার এসেছে। মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর পরে যার পবিত্র মর্যাদা। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি মুসলমানের হৃদয় মসজিদে আকসার ভালোবাসায় সিক্ত। বাইতুল্লাহ এবং মসজিদে নববী যিয়ারতের পর প্রতিটি মুসলমানের মসজিদে আকসা ঘুরে আসার দিলি তামান্না হয় ।
বর্তমান সময়ে মুসলমানগণ হজ-উমরাহ আদায় করে যেভাবে মসজিদে নববী এবং রাওযায়ে আকদাস যিয়ারত করেন, ইসলামী খেলাফতের সময় মুসলমানগণ মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববী যিয়ারতের পর বাইতুল মুকাদ্দাস যিয়ারত করতেন। কিন্তু ইসলামী খেলাফত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর মুসলামনদের জীবনে নেমে আসে ভয়ঙ্কর দুর্দশা। খ্রিস্টীয়- ক্রুসেডারদের সহায়তায় জায়নবাদী ইহুদী সন্ত্রাসীরা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি অবৈধভাবে দখল করে নেয়। হাজার হাজার মুসলমানদেরকে তারা হত্যা করে। সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত সাধারণ মুসলমানদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্র দরজা। মুসলমানদের সাথে মসজিদুল আকসার বাহ্যিক সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। কিন্তু হৃদয়ের ভালোবাসা এবং আবেগ দিনদিন বাড়তে থাকে। একদিক দিয়ে মসজিদে আকসার জন্য তাদের চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়, অন্যদিকে তাদের হৃদয় বাইতুল মুকাদ্দাসের আজাদীর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে থাকে। প্রায় ৮ দশক ধরে মসজিদে আকসার দরজা সাধারণ মুসলমানদের জন্য রূদ্ধ। ইহুদিদের নাপাক হাতে নির্যাতিত এবং জর্জরিত। সাধারণ মুসলমানদের জন্য বাইতুল মুকাদ্দাসের যিয়ারতের সৌভাগ্য অর্জনের সুযোগ নেই। তবে মাঝে মধ্যে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে কেউ কেউ নিয়ন্ত্রিতভাবে মসজিদে আকসা যিয়ারতের সুযোগ পান। তাদের সফরনামা থেকে উঠে আসে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং মসজিদে আকসার বর্তমান সময়ের করুণ চিত্র। উপমহাদেশের বিখ্যাত ফিকাহবিদ, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী (হাফিযাহুল্লাহ) ৪/১/২০১৯ ইং তারিখে বাইতুল মুকাদ্দাস সফর করেন। সেখানে তিনি মসজিদে আকসাসহ বিভিন্ন ইসলামী এবং প্রাচীন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সফরের অনুভূতিগুলো কাগজে লিপিবদ্ধ করেন।
বাইতুল মুকাদ্দাস: সৌভাগ্য যেখানে পদচুম্বন করে
মক্কা মুকাররমা এবং মদীনা মুনাওয়ারার (আল্লাহ তাআলা এই দুই পবিত্র স্থানকে সকল প্রকারের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন) পর মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে সম্মানিত এবং পবিত্র স্থান হচ্ছে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং মসজিদে আকসা। মুসলমানদের প্রথম কিবলা। নবুওয়াত প্রাপ্তির পর মক্কী-জীবনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ ১৩ বছর পর্যন্ত মসজিদে আকসাকে কিবলা হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তখন এভাবে নামায আদায় করতেন, যেন বাইতুল্লাহ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা) সামনে থাকে। মদীনায় হিজরতের পর এই সুযোগ আর ছিলো না। কারণ মদীনা থেকে বাইতুল্লাহ এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের ভৌগলিক অবস্থান ছিলো বিপরীতমুখী। মদীনায় হিজরতের পর প্রায় ১৬/১৭ মাস পর্যন্ত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে আকসার দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। এরপর একদিন আল্লাহ তাআলার নির্দেশে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলা পরিবর্তন করলেন। মদীনার এক মসজিদে নামাযরত অবস্থায় মুসলমানগণ কেবলা পরিবর্তন করেন। মদীনার মসজিদে কিবলাতাইন যার স্মৃতি এখনও স্মরণ করে দেয়।
মসজিদে আকসার বিশেষ একটি ফযীলত হচ্ছে, এই মসজিদ বাইতুল্লার পর নির্মিত দুনিয়ার সর্ব প্রথম মসজিদ। হযরত আবু যর গিফারী রাদি. বলেন, আমি নবীজিকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, দুনিয়াতে সর্ব প্রথম কোন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিলো? নবীজি বলেন, মসজিদে হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপরে কোনটা? তিনি বলেন, মসজিদে আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, দুই মসজিদ নির্মাণের সময়ে কতো ব্যবধান ছিলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ৪০ বছর। (সহীহ মুসলিম- ৫২০) যে তিন মসজিদকে উদ্দেশ্য করে নবীজি সফর করার জন্য বিশেষভাবে অনুমতি দিয়েছেন তার মধ্যে মসজিদে আকসা অন্যতম। যা বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত। (সহীহ বুখারী- ১১৮৯)।
হযরত মায়মুনা বিনতে সাআদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাইতুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবীজি বলেন, ঐ জায়গাতেই হাশর-নশরের ময়দান হবে। (আহমদ-২৭৬২৬)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের ব্যাপারে বিশেষ সাওয়াবের সুসংবাদ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে মসজিদে আকসায় নামায আদায়ের ব্যাপারেও বিশেষ সাওয়াবের কথা উল্লেখ করেছেন। মসজিদুল আকাসায় এক রাকআত নামাযের বিনিময়ে ৫০০ রাকআত নামাযের প্রতিদান পাওয়া যাবে। (আহমদ- ৪১৪২) অন্য বর্ণনায় এর চেয়ে বেশি প্রতিদানের কথা উল্লেখ আছে।
বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর হযরত সুলাইমান আ. আল্লাহ তাআলার নিকট তিনটি দুআ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি দুআ ছিলো, যে ব্যক্তি নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে বাইতুল মুকাদ্দাসে আসবে, নামায আদায়ের পর যখন সে এখান থেকে বের হবে সে যেনো তার গুনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেনো সে আজই তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। নবীজি বললেন, হয়তো হযরত সুলাইমান আ. এর এই দুআ আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়েছে। (সুনান ইবনে মাজাহ- ১৪০৮)।
আরও পড়তে পারেন-
- মুসলমানদের জন্য রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা করানো সুন্নাত
- করোনা মহামারি ও আমাদের করণীয়
- জান্নাত পেতে চাইলে শিরকমুক্ত নেক আমল করতে হবে
- দুর্দিন ও দুঃসময়ে নবী জীবন থেকে সান্ত্বনা
- মাহে মুহাররম ও আশূরা: করণীয় ও বর্জনীয় আমলসমূহ
মুসলমানদের জন্য এই মসজিদের গুরুত্বের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে মেরাজের রাত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মসজিদে সকল নবীগণের ইমামতি করেছেন এবং এখান থেকেই নবীজির আসমানী সফর শুরু হয়েছিলো। বাইতুল মুকাদ্দাস শহরে যারা বসবাস করে, নবীজি তাদের জন্যও সুসংবাদ দিয়েছেন। নবীজি বলেন, যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসের এতো নিকটে অবস্থান করবে, যেখান থেকে মসজিদে আকসা দৃষ্টিগোচর হবে, এই জায়গা তার জন্য দুনিয়া এবং তার সমগ্র বস্তু থেকে উত্তম হবে। এছাড়াও পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মসজিদে আকসা এবং তার আশপাশের অঞ্চলকে বরকতময় জায়গা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। (দেখুন, সূরা বানি ইসরাঈল- ১, সূরা আরাফ- ১৩৭, সূরা আম্বিয়া- ৭১, সূরা সাবা- ৮১)।
এই বরকত আধ্যাত্মিকভাবেও অনুভব হয় আবার উপাদানগতভাবেও পাওয়া যায়। কেননা এই পবিত্র মাটিতে হাজারো নবী-রাসূলগণ বিশ্রাম করছেন। এই জায়গার বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানকার সুন্দর ও স্বচ্ছ আবহাওয়া এবং চতুর্দিকের দৃষ্টিনন্দন যাইতুনের বাগান। পবিত্র কুরআনে ফিলিস্তিনকে পবিত্রভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। (সূরা মায়েদা- ১২)।
এ ছাড়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়, এই পবিত্র ভূমিতে হাশরের ময়দান স্থাপিত হবে। এসব ফযীলত এবং বৈশিষ্ট্যের কারণে হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে একটা স্বপ্ন লালন করে আসছি, কবে যে বাইতুল মুকাদ্দাসে হাযির হওয়ার সৌভাগ্য হবে!!!
আসহাবে কাহাফের বস্তিতে
কোনো কোনো সময় মানুষের হৃদয়ের আশা স্বপ্নের ময়দানে বিচরণ করতেই থাকে। পরবর্তীতে একটা সময়ে গিয়ে অনেক প্রচেষ্টার পর তা আলোর মুখ দেখে। ১৯৯০-৯১ সনের কথা। পবিত্র রমাযান মাসে আমি, মুহতারামা আম্মাজান এবং আমার আহলিয়া সৌদিআরব সফর করি। উমরাহ আদায়ের পর হজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত জেদ্দা শহরে অবস্থান করার মনস্থ করি। পবিত্র হজ আদায় করে পুনরায় হিন্দুস্থানে ফিরে আসি। তৎকালীন ইসরাইলী প্রশাসনের সাথে ফিলিসতিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলমান ছিলো। সে সময়ের ইসরাইলী প্রশাসন বর্তমান সময়ের তুলনায় কিছুটা ভালো ছিলো। সন্ধি-চুক্তির প্রতি তাদেরকে আগ্রহী মনে হতো। সে সময় একটা বিষয়ে তাদের মাঝে আলোচনার কথা চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, বাইতুল মুকাদ্দাস ফিলিসতিন এবং ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রের রাজধানী হবে। তারা উভয়ে সম্মিলিতভাবে রাজধানীর দায়িত্ব পালন করবে। মনে মনে ভাবলাম, প্রথম যুগে মুসলমানদের জন্য বাইতুল মুকাদ্দাস সফর করা সহজ ছিলো। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী যিয়ারতের পর অনেকেই তৃতীয় হারাম বাইতুল মুকাদ্দাস যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করতেন। হয়তো এবার সেই পথ পুনরায় অবমুক্ত হবে। এই সংবাদ আমার হৃদয়ে আশাতীত আনন্দ দিয়েছিলো। প্রথম কিবলা যিয়ারত করতে পারার খুশির ঢেউ হৃদয়জুড়ে আছড়ে পড়তে লাগলো। এরইমাঝে স্বপ্নে দেখলাম, আমি বাইতুল মুকাদ্দাস সফরে গিয়েছি। মসজিদে আকসায় নামায আদায় করছি। এই স্বপ্ন বাইতুল মুকাদ্দাস সফরের আশা এবং আগ্রহকে আরো উত্তপ্ত করে দিলো। মনে মনে ভাবলাম, নিশ্চই অচিরেই আল্লাহ তাআলা বাইতুল মুকাদ্দাস সফরের ব্যবস্থা করে দিবেন। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যাও বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। কিন্তু এই অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হতে হতে দীর্ঘ সময় অতিক্রম হয়ে গেলো।
প্রথম প্রচেষ্টা
আমার সন্তান মুহাম্মদ যুফর আবেদীন নদভী (সাল্লামাহুল্লাহ)। দুবাই ইসলামিক ব্যাংক এর কর্মকর্তা। একবার তার কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়। সেখানে তার এক বন্ধু জনাব মুহাম্মদ নাঈম সাহেবের সাথে মুলাকাত হয়। যার ব্যবসায়িক কর্মকা- জর্দানেও বিস্তৃত। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম, জর্দান হয়ে সড়ক পথে মানুষ ফিলিসতিনে যায়। ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতিপত্রও মিলে যায়। অতঃপর তার পরামর্শের উপর ভরসা করে টিকিটও সংগ্রহ করে ফেললাম। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারলাম, তার জানাশোনাতে কিছুটা অসম্পূর্ণতা ছিলো। মূলত একাকি ওখানে যাওয়ার অনুমতি ইসরাইল কর্তৃপক্ষ দেয় না; বরং গ্রুপ আকারে যেতে হয়। তাহলে ইসরাইল সরকার অনুমতি দেয়। এরপর থেকে গ্রুপ ভিত্তিক যাওয়ার পদ্ধতি অনুসন্ধান করতে লাগলাম। হায়দারাবাদের এক ট্যুর গ্রুপের ব্যাপারে জানতে পারলাম, তারা গ্রুপ আকারে মসজিদে আকসা সফরে যায়। উক্ত গ্রুপের যিম্মাদার জনাব আবদুর রশীদ সাহেব। তার বিশেষ সহকারি হিসেবে আছেন তারই ভাই জনাব আবদুল ওয়াহিদ সাহেব।
সফরের তারিখ বার বার পরিবর্তন হতে লাগলো। সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জনাব আবদুল ওয়াহিদ সাহেবের সাথে আমাদের কাফেলা রওয়ানা হলো। আবদুল ওয়াহিদ সাহেব একজন ভদ্র-ন¤্র, রুচিশীল এবং রুটিনবদ্ধ মানুষ। পুরো সফরজুড়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টায় আমাদের সবাইকে আরাম এবং নিরাপদে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তারিখ পরিবর্তনের কারণে আমাদের কাফেলায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই বিয়োগ হয়েছেন, আবার অনেকে নতুনভাবে যোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ মোট চব্বিশ সদস্যের একটি কাফেলা দিয়ে আমাদের সফর শুরু হয়। কাফেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে, বিভিন্ন মতাদর্শ এবং সংগঠনের মানুষ এই কাফেলায় একত্রিত হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ এই কাফেলায় ছিলেন। উচ্চশিক্ষিত সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তাও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। অনেকেই তো পরিবারসহ আমাদের কাফেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। সকলেই ভদ্র-ন¤্র এবং একে অপরের অধিকারের প্রতি যতœবান ছিলেন। বিশেষভাবে যুবকদের খেদমতের আগ্রহ ছিলো ঈর্ষণীয়।
জর্দানের পথে
সৌদি পতাকাবাহী বিমানযোগে আমরা দুপুর ১ টায় হায়দারাবাদ শহর থেকে উড়াল দিলাম। মাঝে জেদ্দা শহরে অল্প কিছুক্ষণের বিরতির পর রাত সাড়ে নয়টায় আমাদের বহনকারী উড়োজাহায জর্দানের রাজধানী আম্মানের মাটি স্পর্শ করল। আম্মানের বিমানবন্দর আকারে তেমন বড় না হলেও আবার ছোটও কিন্তু নয়। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর আমরা সকলেই প্রচ- ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলাম। শীত নিবারণের যতো সহজলভ্য ব্যবস্থা আছে, আমরা সবাই তা গ্রহণ করতে লাগলাম। জ্যাকেট, সুয়েটার, ইনার, গরম পায়জামা, গরম মোজা, মাথা এবং কানে গরম টুপি অথবা রুমাল ইত্যাদি।
মৌসুমের প্রচ- শীতের সাথে সাথে শৈত্যপ্রবাহ আমাদের ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে ছাড়ছে। বিমানবন্দরের কর্মচারিগণ খুব নরম এবং শরীফ মেযাজের। বিমানবন্দর থেকে বের হতে আমাদের বেশি সময় ক্ষেপণ করতে হয়নি। মাত্র ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যে আমরা বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা ছেড়ে বাহিরে চলে এলাম। আমাদের ট্যুর অপারেটর এখানকার স্থানীয় ট্যুর অপারেটরের সাথে শুরু থেকেই যোগাযোগ রেখেছিল। তারাই এখানে আমাদের থাকা-খাওয়া, গাইড, ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদির দায়িত্ব নিবেন। এয়ারপোর্ট চত্বরে আরামদায়ক লাক্সারী বাস নিয়ে মেযবান কর্তৃপক্ষ আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা সবাই বাসে উঠলাম এবং প্রায় এক দেড় ঘন্টা সফর শেষে নির্ধারিত হোটেলে এসে পৌঁছলাম।
হোটেলে
হোটেলটি শহরের প্রাচীন এলাকায় অবস্থিত। আমরা যখন হোটেলে পৌঁছলাম, তখন খাবারের সময় প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। আমরা সময় ক্ষেপণ না করে আবদুল ওয়াহিদ সাহেবের নির্দেশনা অনুযায়ী সোজা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলাম। খাবারের ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে প্রত্যেকেই নিজ নিজ রুমে চলে গেলাম। হায়দারাবাদ থেকে আম্মান পর্যন্ত আমাদের সর্বমোট বারো ঘন্টার সফর হয়েছিলো। অনেকের তো গত রাতে ঘুম হয়নি। অনেকেই করিমনগরসহ (ভারতের একটি অঞ্চল) আরো বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। তাদের বিগত চব্বিশ ঘন্টা বিশ্রামের কোনো সুযোগ হয়নি। যার কারণে হোটেলের বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। একদিকে দীর্ঘ সফরের অসহনীয় ক্লান্তি, আবার অন্যদিকে হৃদয়জুড়ে সীমাহীন আনন্দ। কারণ আমরা এখন শামের পবিত্র ভূমিতে অবস্থান করছি। নবীজি যার অনেক ফযীলত এবং সম্মান বর্ণনা করেছেন। নববী যুগের মুলকে শাম আজকের জর্দান, লেবানন, ফিলিসতিন, ইসরাইল (!) নিয়ে গঠিত। [চলবে]
অনুবাদ এবং সংযোজন- আবু আবদির রহমান
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/