মাদরাসা শিক্ষা বনাম আধুনিক শিক্ষা: একটি পর্যালোচনা

।। শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানী ।।

[শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী (হাফি.) চলতি ১৪৪২-৪৩ হিজরি শিক্ষাবর্ষে দারুল উলূম করাচীর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মাদরাসা শিক্ষা বনাম আধুনিক শিক্ষা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক আলোচনা করেন। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনায় মুঈনুল ইসলামের সুপ্রিয় পাঠক সমীপে উক্ত আলোচনার নির্বাচিত অংশের অনুবাদ তুলে ধরা হল- নির্বাহী সম্পাদক]

বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন হালকায় আধুনিক শিক্ষা এবং দ্বীনি মাদারিসকে কেন্দ্র করে একটা বিষয়ে খুব আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত কিনা? হলে কীভাবে হওয়া চাই? এ বিষয় নিয়ে শুধু আলোচনা নয়; বরং বিতর্কও হচ্ছে। এ অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে, মানুষ এ বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার শিকার হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের ভুল ধারণা ও বিতর্ক চলতেই থাকবে, যার কোন শেষ থাকবে না।

আমার আশংকা হচ্ছে, আল্লাহ না করুন- যদি বিষয়টিকে মস্তিষ্ক থেকে নামানো না যায়, তাহলে আমরা আমাদের মূল পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো। যে পথের উপর আমরা দ্বীনি মাদারিসকে নিয়ে চলছি এবং যার উপর আমাদের আকাবিরগণ চলছিলেন, সেখান থেকে আমরা পদচ্যুত হয়ে পড়তে পারি। এজন্য আমি বিষয়টি নিয়ে অনর্থক সংশয় দূর করতে চাই। আর এজন্য আলোচনা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা আধুনিক শিক্ষার বিরুদ্ধে নয়। আধুনিক শিক্ষা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াতে চলার জন্য যা যা প্রয়োজন, যেমন- বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কমার্স, একাউন্টিংসহ আরো অন্যান্য যেসব বিষয় রয়েছে, বর্তমান সময়ে সেসব বিষয়কে আধুনিক শিক্ষা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। আর আমরা এসব শিক্ষার বিরোধী নয়।

আমার আব্বাজান মরহুম (মুফতী শফী রহ.)এর উক্তি অনুযায়ী বৈষয়িক এসব জ্ঞান শেখা এক পর্যায়ে ফরযে কেফায়া। মনে করুন, সমাজে যদি মানুষ ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেয় এবং তাতে করে কোথাও যদি চিকিৎসক বা ডাক্তার পাওয়া না যায়, তাহলে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন কী অবস্থা হবে? এটা মানুষের জন্য কঠিন সঙ্কট তৈরি করবে। সুতরাং কেউ যদি ডাক্তার হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি সামাজের গুরুত্বপূর্ণ এক প্রয়োজন পূরণ করল। আমরা কি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সব সময় অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো? আর নিজেরা বিজ্ঞানে উন্নতি করবো না? কখনও না, বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।

و اعدوا لهم ما استطعتم من قوة

আয়াতের এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ- তোমরা যত পারো শক্তি অর্জন করো। এটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে আমি আবারও বলছি, এর জন্য শর্ত হলো, টাকা উপার্জনের নিয়তে যেন না হয়; বরং শর্ত হলো খেদমতের নিয়তে হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য হতে হবে। তাহলে বাহ্যিকভাবে ডাক্তারি, বিজ্ঞান, কমার্স, হিসাব, টেকনিক্যাল জ্ঞানসহ যে কোনো আধুনিক শিক্ষাতেই মৌলিকভাবে কোনো দোষ নেই; বরং তা অর্জন করা একটি স্তর পর্যন্ত ফরযে কেফায়া। কিন্তু বিষয়টির উপর অনর্থক আলোচনা ওখানেই শুরু হয়, যখন আধুনিক শিক্ষাকে মাদ্রাসার সাথে মিলানোর কথা বলা হয়। বলা হচ্ছে, মাদ্রাসাতেও আধুনিক শিক্ষা পড়ানো হোক। পাঠ্যসূচীতে এমন কিছু পরিবর্তন করা চাই, যা যুগের চাহিদা অনুযায়ী হয় এবং সে অনুযায়ী মাদ্রাসা থেকে ছাত্ররা জ্ঞান অর্জন করতে পারে। মাদরাসা শিক্ষিতরা সিপিএস অফিসার হওয়া চাই, প্রকৌশলী ও ডাক্তার হওয়া চাই। তো এখানেই মূলত বোঝাপড়ার সমস্যা দাঁড়ায়।

ভালোভাবে উপলব্ধি করা চাই যে, মাদ্রাসাসমূহে আধুনিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। যার মধ্যে প্রথম উদ্দেশ্য সঠিক, আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভুল। প্রথম উদ্দেশ্য হলো যে, আমাদের ছাত্রদের দুনিয়াবী জ্ঞানের এতোটুকু জানাশোনা হোক, যার মাধ্যমে তাদের আলোচনায় গুরুত্ব সৃষ্টি হবে এবং তারা যখন পৃথিবীতে দ্বীনের প্রচার প্রসার করবে তখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে সমাজের সকল স্তরের মানুষের ভাষা-পরিভাষায় দ্বীন প্রচার করতে পারবে। আধুনিক শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য এটি। যেমন- ইংরেজি ভাষা।

ইংরেজি ভাষা যদি মাদ্রাসায় পড়ানো হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই; বরং উত্তম বলব এবং আমরা তো তা শেখাচ্ছিই। এ জন্য যে, যাতে করে উলামায়ে কেরাম ইংরেজি ভাষায় দ্বীনের প্রচার ও প্রসার করতে পারেন। যদি আমরা এসব বিষয়ে দারুল উলূমসহ (করাচী) দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহের ছাত্রদেরকে শিক্ষাদান করি, তাহলে তারা দুনিয়ার সম্যক পরিস্থিতি স¤পর্কে কিছু না কিছু জানতে পারবে। দুনিয়া কীভাবে চলছে, রাজনীতিতে কী হচ্ছে, সমাজে কী হচ্ছে ইত্যাদি। দ্বীনি মাদ্রাসায় এতটুকু শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, তারা যাতে আলেম হিসেবে সমাজের সকল স্তরে সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আমাদের তালিবুল ইলমরা যখন আলেম হয়ে বের হবে, তখন কেউ যাতে এ কথা বলতে না পারে যে, তাদের দুনিয়ার কোনো খবর নাই। তারা তো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ণ বে-খবর। এতে করে সমাজে তাঁর কথার কোনো গ্রাহ্যতা তৈরি হবে না।

তো এখন মাধ্যমিক পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার বিষয়সমূহ এজন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে করে সমাজে একজন আলেমের কথার গুরুত্ব তৈরি হয়। দুনিয়ার সামনে দ্বীনের প্রচার প্রসার করতে গেলে তাদের ভাষায় এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে খেয়াল করে যেন দাওয়াত দিতে পারে। كلم الناس على قدر عقولهم (মানুষের সাথে তাদের জ্ঞান ও মেধা অনুযায়ী কথা বলো)এর ভিত্তিতে যেন দাওয়াত দিতে পারেন। এই উদ্দেশ্যে যদি আপনি প্রয়োজন অনুপাতে ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস এবং সামাজ বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়েন, তাহলে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই; বরং বর্তমান সময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এই হিসেবে মাদ্রাসা সিলেবাসে এসব বিষয়ের উপর খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনুরূপভাবে দরসে নেজামীর নেসাবে কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে পেছনে রেখে বর্তমান সময়ে প্রয়োজন এমন কিছু বিষয় যোগ করা জরুরি। যেমন আগে গ্রিক দর্শনের প্রয়োজন ছিল, তাই তার প্রচলন ছিল। এখন তার স্থানে নতুন দর্শনশাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আগে গ্রিক দর্শন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হতো, এখন তার তেমন প্রয়োজন নেই।

আরও পড়তে পারেন-

যেমন- আগে মোল্লা হাসান পড়ানো হতো, সুল্লাম পড়ানো হতো, এখন এগুলো নেসাব থেকে বের হয়ে গিয়েছে। সেগুলোর স্থানে এখন সামাজিক অর্থনীতি পড়ানো হয়, ব্যবসায় শিক্ষা পড়ানো হয়। তো এগুলো সময়ের প্রয়োজনে পড়ানো হচ্ছে। একজন আলেম; তিনি আলেম হিসেবে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও দাওয়াত-তাবলীগের জন্য যে বিষয়গুলোর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের মাদরাসা সমূহেরও প্রয়োজন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য একমাত্র দ্বীনের খেদমতের প্রয়োজনে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হতে হবে। এজন্য নয় যে, সামাজ বিজ্ঞান পড়ে কোনো কো¤পানির ডিরেক্টর হয়ে যাবে। এভাবে আধুনিক শিক্ষা দ্বীনি মাদরাসা সমূহে প্রয়োজন অনুপাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার। এটাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য।

কিন্তু যদি আপনি মাদ্রাসা সিলেবাসে আধুনিক শিক্ষা এ উদ্দেশ্যেই পড়ছেন যে, আলেমগণ গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রাসাদে বসবে, সিএসপি অফিসার হবে। আর বলা হচ্ছে যে, সেখানকার পরিস্থিতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই আলেম-উলামাগণ সেখানে গিয়ে সেগুলো সংশোধন করে দিবে, তাহলে ভালোভাবে বুঝে নিন যে, এটা এমন একটা ধারণা- যা পাগলামো ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি আপনারা আলেমকে একই সময়ে আলেমও বানাবেন, পাশাপাশি সিএসপি অফিসারও বানাবেন, তাহলে আলেম যদি অফিসার হিসেবে তাঁর কার্যালয়ে বসেন, তখন তিনি ইলমের হক কীভাবে আদায় করবেন?

যদি আপনি সমস্ত আলেমকে সিএসপি অফিসার বানিয়ে দিলেন এজন্য যে, তারা রাষ্ট্র সংশোধন করবে এবং রাষ্ট্রে ইসলামী হুকুমত চালু করবে, তাই সমস্ত আলেমকে সিএসপি অফিসারের চেয়ারে বসিয়ে দিলেন, তাহলে ভাইয়েরা এই যে (পাকিস্তানে) তেইশ হাজার মাদ্রাসা আছে, যেগুলো ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিচ্ছে, ফিকাহ পড়াচ্ছে, হাদীস পড়াচ্ছে, কুরআনের তাফসীর পড়াচ্ছে এবং মুহাক্কিক তৈরি করছে, এগুলো কোথা থেকে আসবে যদি আপনি সকলকেই অফিসার বানিয়ে দেন।

মনে রাখবেন, আজকাল অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়।

আমার আব্বাজান মরহুম (মুফতী শফী রহ.) বলতেন, “সারা পৃথিবীর নিয়ম হলো যে মানুষ যে জ্ঞান নিজে শিখে এবং যে যোগ্যতা অর্জন করে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার জীবিকাও সে যোগ্যতার সাথে স¤পৃক্ত থাকে। যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করছে আল্লাহ তাআলা তার জীবিকাও সে যোগ্যতার সাথে জড়িয়ে রাখেন। যেমন, কেউ যদি ডাক্তারি পড়ে তখন তার জীবিকা কোথা থেকে হবে? ডাক্তারির মাধ্যমে হবে। একজন ব্যক্তি প্রকৌশল শিখছেন। তার জীবিকা প্রকৌশলী কাজের মাধ্যমে হবে। তো ভাই, এক ব্যক্তি যদি ইসলামী জ্ঞান শিখেন, তখন তার জীবিকাও ইসলামী শিক্ষার সাথেই স¤পৃক্ত থাকবে। হ্যাঁ, এটা অন্য বিষয় যে, বাছাই করার সময় দেখে নিতে হবে যে, ডাক্তারীর মাধ্যমে টাকা পয়সার উপার্জন এবং জীবিকার স্বচ্ছলতা বেশি থাকবে, নাকি দ্বীনি ইলম শিক্ষা-আলেম হওয়ার মাধ্যমে বেশি হবে। এটা তোমার ইচ্ছা। কিন্তু যদি তুমি এই পথ অবলম্বন করে নাও, তাহলে মনে করবে তোমার জীবিকাও এর সাথে স¤পৃক্ত। আল্লাহ তাআলা এরই মাধ্যমে তোমাকে দান করবেন”।

আব্বাজান (রহ.) আরো বলতেন যে, কোনো মাওলানা আজ পর্যন্ত ক্ষুধার কারণে মৃত্যুবরণ করেননি। কোনো মৌলভি দরিদ্রতার কারণে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যা করেননি। আল্লাহ তাআলা ইলমে দ্বীনের খেদমতের মাধ্যমেই তার জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন। তবে এটা ঠিক যে, তার জীবিকা স্বাভাবিক কিছুটা কম হয় অন্য আধুনিক শিক্ষার তুলনায়। যার বড় বড় অট্টালিকা দরকার, আলিশান বাংলো প্রয়োজন, বিলাসবহুল গাড়ি দরকার, সারা দুনিয়ার শান্তি ও স¤পত্তি দরকার, তাহলে সে যেন মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে না আসে। তার জন্য ঐ শিক্ষায় যাওয়া উচিত, যেখানে এসব আরাম-আয়েশ মিলবে। এখানে তো আমাদের বুযুর্গগণ ক্ষুধার্ত থেকে মোটা ও জীর্ণ পোশাক পরে দ্বীনের হেফাযত করেছেন। সুতরাং এখানে যা মিলবে তা হলো ডাল-রুটি। যদি এই ডাল-রুটির উপর তুমি সন্তুষ্ট হতে না পারো, তাহলে অন্য কোথাও যাও। আল্লাহ তাআলা এ ডাল-রুটিতে এত বরকত দান করেন যে, অনেক বড় অংকের বেতনধারীর জীবনে এমন বরকতের দেখা মিলে না।

রাষ্ট্রীয় প্রাসাদে এবং সচিবালয়ের অফিসার পদে এমন লোক হওয়া দরকার যারা দ্বীন শিখবে এবং দ্বীন কার্যকর করবে। তাদের মেজায দ্বীনি হওয়া, তাদের রুচি দ্বীনি হওয়া, দ্বীনের খেদমতের জন্য যাওয়া; এটা অবশ্য একটি বড় ধরনের উদ্দেশ্য। কিন্তু তার জন্য মাদ্রাসার নয়; বরং তার জন্য ভিন্ন আঙ্গিকের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চাই। মাদ্রাসার সাথে আরেকটি প্রতিষ্ঠান হতে পারে। যেমন আমাদের এখানে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা আব্বাজানের যুগ থেকে প্রতিষ্ঠিত আছে। কেন প্রতিষ্ঠিত আছে, যাতে সেখান থেকে ভালো যোগ্য মানুষ তৈরি হয়। আমাদের হেরা ফাউন্ডেশন স্কুল প্রতিষ্ঠিত আছে এবং আরো অনেক ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠিত আছে। যাতে সেখান থেকে ইসলামিক মন-মানসিকতার বৈষয়িক জ্ঞানের উচ্চশিক্ষিত মানুষ তৈরি হয়। তাদেরকে এতটুকু দ্বীনি শিক্ষা দিয়ে দেয়া যায়, যতটুকু ফরজে আইন এবং খাঁটি মুসলমান হতে পরে। যাতে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে যেন এসব শিক্ষিতরা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার ভিত্তির উপর চলতে পারে।

আমরা তো আধুনিক বিষয় পড়াতে চাই। কিন্তু প্রত্যেক কাজের একটি নিয়ম আছে। আমাদের একটি বিভাগ আছে, যেখানে দরসে নেজামীর সিলেবাস পড়ানো হয়। যা শুধুই ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়ে গঠিত। আরেকটি বিভাগ আছে, যেখানে ইংরেজি এবং আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত সিলেবাসে পড়ানো হয়। যা কলেজ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। সেখানে কলেজ থেকে আপনি এবার সিএসসি অফিসার তৈরি করুন, কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করুন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তৈরি করুন, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করুন, যেটা মন চায় তৈরি করুন। কিন্তু এটা এমন বিশেষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হবে, যা উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে হবে, মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে হবে, মাদ্রাসার আদর্শে আদর্শবান হবে। এমনটা যদি আপনি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তো এটা আলাদা উদ্দেশ্য। এসব বিষয়ে বির্তক করে, ঝগড়া-বিবাদ করে আল্লাহর ওয়াস্তে মাদ্রাসা সমূহের পাঠ্যসূচির সাথে মিলাবেন না। প্রত্যেক বস্তুকে তার আপন স্তরে রাখা হলে ইনশাআল্লাহ সীরাতে মুস্তাকিম অর্জন হবে এবং আমাদের আকাবিরদের রেখে যাওয়া আমানত হেফাযতে থাকবে। নয় তো আমার আশংকা হচ্ছে যে, আমরা মূল থেকেই দূরে সরে যাবো এবং মূল থেকে সরে গিয়ে কিছুই অর্জন হবে না। না দুনিয়া মিলবে, না দ্বীন। যদি দরসে নেজামীর মধ্যে আপনি এমন পরিবর্তন করেন, যা আপনাকে সিএসপি অফিসার বানাবে, তখন আপনি না সিএসপি অফিসার হতে পারবেন, না আলেম হতে পারবেন, না মুহাক্কিক হতে পারবেন, আর না লেখক হতে পারবেন।

অতএব, এই কিছু কথা যা আমি উপস্থাপন করেছি, এজন্য করেছি যে- আজকাল অনেকের মনে পরিকল্পিতভাবে সংশয়, সন্দেহ ও দ্বিধা তৈরি করা হচ্ছে। যার কারণে এই অঙ্গনে সমূহ ক্ষতি বয়ে আনার প্রবল আশংকা রয়েছে। এ কারণেই বিষয়টা আমি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি। জানি না আমি কতটুকু বুঝাতে পেরেছি। ইলমে দ্বীন অর্জন করতে হবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং নিজের শুদ্ধির জন্য। আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করার জন্য। আমাদেরকে এই নিয়ত করতে হবে। এই নিয়ত করে আমাদেরকে ইমাম মালেক (রহ.)এর সেই উক্তিটি স্মরণ করতে হবে, যেখানে তিনি বলেছেন, العلم لايعطيك بعضه حتى تعطيه كله অর্থাৎ- ইলম ততক্ষণ পর্যন্ত তার কিছু অংশ তোমাকে দিবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার সমগ্র অস্তিত্ব ইলমকে দিয়ে দিবে না। সুতরাং এখন কোমর বেঁধে বসতে হবে। এটা হবে না যে, আমি তালিবুল ইলমও হবো, আবার নামাযও কাযা করবো, মসজিদেও আসবো না, মোবাইলের অপব্যবহারও করবো। এতে করে প্রকৃত ইলম ও ইলমের উপকারিতা অর্জিত হবে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

[মূল বক্তব্যের পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত আনুবাদ]

অনুবাদ- মুফতী মুবারক হুসাইন

মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।