।। মুফতি এনায়েতুল্লাহ ।।
আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। বার বার ক্ষমতার খুব কাছে থেকে ছিটকে যাওয়া, উচ্চাভিলাষী ও সংস্কারমনা রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়া, তার রাজনীতির পথ-পরিক্রমা, দর্শন ইত্যাদি আলোচনার আজকের লেখার বিষয় হতে পারতো। কিন্তু বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ার সরকার গঠন ও রাজনীতির প্রেক্ষাপট ইত্যাদির বাইরে একটি রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা করা দরকার। এর কারণ একটু ভিন্ন ও বৈশ্বিক।
রাজনীতির পরিচিত পরিভাষা ডানপন্থি, বাম ধারা ও ইসলামপন্থী। জাতীয়তাবাদী, রক্ষণশীল এবং কট্টরদেরও ডানধারার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়। রাজনীতিতে ডানপন্থীরা জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলে, বামপন্থীরা বস্তুবাদী ও ইসলামপন্থীরা ধর্মভিত্তিক আধ্যাত্মিকতার রাজনীতি করে। বিশ্বের রাজনীতিতে ডান-বামের উত্থান-পতন পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু বৈশ্বিক রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের অবস্থা তথৈবচ। এর কারণ বিশ্লেষণের খুব প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ডানপন্থার উত্থানের বিপরীতে লাতিন আমেরিকাজুড়ে বামপন্থার লাল জোয়ার দেখা যাচ্ছে। এর মাঝে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ মালয়েশিয়ার নির্বাচনে নিরবে এগিয়ে গেছে একটি ইসলামি দল। দেশটির জোটভিত্তিক রাজনীতির মাঝে এককভাবে দলটি সর্বাধিক আসন পেয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ইতালিতে ক্ষমতায় আসে কট্টর ডানপন্থী দল ব্রাদার অব ইতালির নেতা জর্জিয়া মেলানি। তার জয়ে অনেকে শঙ্কিত, শঙ্কিত হওয়ারই কথা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্মৃতি এখনো টাটকা। রাশিয়ার ভøাদিমির পুতিন, চীনে সি জিন পিং, উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উন, ইরানের আয়াতুল্লাহ খামেনি, সৌদি আরবের মুহাম্মদ বিন সালমান বা ঘরের দুই পাশে নরেন্দ্র মোদি ও মিয়ানমারে মিন অং হ্লাইংয়ের শাসন দেখে সবাই তটস্থ। এ অবস্থায় মেলানির জয় নতুন করে ডানপন্থী পালে হাওয়া লাগবে। কিন্তু জর্জিয়া মেলানির জয় যদি ডানপন্থীদের উত্থানের অংশ হয়, তবে ব্রাজিলে লুলা দা সিলভার বিজয় এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া।
গত কয়েক বছরের নির্বাচনী রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে একধরনের লড়াই চলছে। একদিকে ডানপন্থীরা এগিয়ে যায় তো আরেকদিকে বামপন্থীরা জিতে যায়। সাম্প্রতিক নির্বাচনী পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে- জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, হাঙ্গেরি, স্পেন, ইতালিতে জাতীয়তাবাদী ডানপন্থীদের উত্থান ঘটছে।
অন্যদিকে লাতিন আমেরিকা বামপন্থাকে মুক্তির পাথেয় বলে বিবেচনা করছে। ব্রাজিলে লুলা দা সিলভার জয় এর সবশেষ উদাহরণ। লাতিন আমেরিকাজুড়ে বামপন্থার এই উত্থানকে গোলাপি জোয়ার বলা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরু ও হন্ডুরাসে বামপন্থীরা ক্ষমতায় এসেছে। গত বছর চিলিতে বামপন্থী তরুণ নেতা গ্যাব্রিয়েল বরিচ ক্ষমতায় এসেছেন। এ বছরের জুনে কলম্বিয়ায় গোস্তাভো পেত্রো নির্বাচিত হয়েছেন। কলম্বিয়ার ইতিহাসে তিনিই প্রথম বামপন্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।
ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় মালয়েশিয়া খুবই ছোট। বিশ্ব রাজনীতিতেও দেশটির উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। তবে দেশটি চীনের প্রভাববলয় থেকে মুক্ত নয়। এ কারণেই মালয়েশিয়ায় প্রধান ইসলামি দল ‘পার্টি ইসলাম সে মালয়েশিয়া’ (পাস)-এর বিস্ময়কর সাফল্যকে ভিন্নদৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। পুরনো ও বৃহৎ দলগুলো প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম আসন পেলেও পাস এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করেছে। এবারের নির্বাচনে তারা ৪৯টি আসনে জয় লাভ করেছে।
বিদেশি গণমাধ্যমে দলটিকে বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক, দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী দল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর মালয়েশিয়া ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রায়ই কটাক্ষ করে বলেন, ‘পাসের লোকজন ভালো করে কুরআন মাজিদ পড়তে পারেন ঠিক। কিন্তু তারা দেশ চালানোর যোগ্য না’। এমন পরিস্থিতিতে পাসের সভাপতি আব্দুল হাদি আওয়াংয়ের ‘ইসলামকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে তুলে ধরার ইচ্ছা’র পালে হাওয়া দিয়েছে নির্বাচনে পাসের বিস্ময়কর উত্থান। পাসের এমন সাফল্য দেশটিতে নতুন মেরুকরণের জন্ম দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের আগে পাস উত্তরাঞ্চলীয় নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গরাজ্য, যেমন- তেরেঙ্গানু, কেলানতান, পারলিস এবং কেদাহতে শক্তিশালী অবস্থায় ছিল। নির্বাচনের আগে কেউই আশা করেনি, পাস এককভাবে পার্লামেন্টের মোট আসনের ১০ শতাংশের বেশি আসন পাবে। এর আগে পাস সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২৩টি আসনে জয় পেয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিদ্যমান ভোটারদের বড় একটি অংশ পাসের ওপর এবার আস্থা রেখেছে। পাশাপাশি, যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারাও এতদিন ধরে চলে আসা বড় দলগুলোর বাইরে নতুন কোনো দলের ওপর আস্থা রাখতে চেয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে পেনাং রাজ্যের কথা বলা যায়। এই প্রদেশে তুলনামূলক লিবারেল মানসিকতার প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীও চীনা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর। অথচ এই পেনাং প্রদেশে পাস এবার প্রথমবারের মতো দুটো আসনে জয় পেয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, নতুন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পারিবারিক আসন বলতে যে আসনকে বোঝানো হয়, সেই পেরমাতাং পুয়াহ সিটেও পাসের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। পাসের এমন বিজয় ইংগিত দিচ্ছে, ইসলামভিত্তিক রাজনীতি মালয়েশিয়ার মূলধারার রাজনীতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
যদিও পাসের বিরুদ্ধে নানা মহলের তৎপরতা রয়েছে। পাসের সাবেক মন্ত্রীদের বিষয়ে নানা আপত্তি রয়েছে। পাস বিরোধীরা মনে করেন, পাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রী হলে দেশটিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে আসতে পারে। তবে এবার পাস যে ধরনের ফলাফল করেছে তাতে পাসকে এড়িয়ে কিছু করা যেকোনো সরকারের জন্য কঠিন।
আরও পড়তে পারেন-
- কওমি মাদ্রাসা: সামাজিক পুঁজি ও দারিদ্র্য বিমোচন
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
- সুখময় দাম্পত্য জীবনের নববী রূপরেখা
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে পাস পার্টির পথচলা ও এর প্রতিষ্ঠা নিয়ে কিছু তথ্য দিতে হয়। স্বাধীনতার পর থেকে মালয়েশিয়ার রাজনীতি ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদের রাজনীতি। মালয়েশিয়ার ওল্ড গ্র্যান্ড পার্টি ‘ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও, যা আমনো নামে পরিচিত) ছিল রাজনীতির মাঠে মূল প্রভাবক, একচ্ছত্র আধিপত্যের অধিকারী। চায়নিজ এবং ভারতীয়দের বিপরীতে মুসলিম মালয়দের একটি দল। জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে উজ্জ্বীবিত এই দলকে মুসলমানদের প্রতিনিধি ভাবা হতো। পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদের চেতনা প্রবল হয়ে ওঠলে ইসলামি মূল্যবোধ ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় আলাদা দলের শূন্যতা অনুভব করেন তৎকালীন মুসলিম রাজনীতিবিদরা। ফলে ১৯৫১ সালে আমনোর কয়েকজন সিনিয়র নেতা ‘পার্টি ইসলাম সে মালয়েশিয়া’ (পাস) নামে একটি স্বতন্ত্র ইসলামি দল প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ছিলেন আহমাদ ফুয়াদ হাসসান। তিনি মূলত আমনোর সিনিয়র নেতা। স্বতন্ত্র ইসলামি দল হলেও আমনোর প্রভাবমুক্ত ছিল না পাস। ফলে দ্বৈত সদস্যপদের সুযোগ ছিল। এর আগে অবশ্য মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল ছিল, কিন্তু সেগুলো বেশিদিন টেকেনি।
শুরুর দিকে পাস ছিল নামমাত্র ইসলামি দল। ১৯৬৯ পর্যন্ত পাসের প্রেসিডেন্ট বুরহানুদ্দীন আল হেলমি ছিলেন কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। পাসের ইসলামি আদর্শিক অবস্থানের ওপর সংগঠিত হতে বেশ সময় নেয়। ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের পর শুরু হয় দলের বাঁকবদল। নেতৃত্বের বাগডোর আলেমদের হাতে পৌঁছানোর তোড়জোড় শুরু হয়। ইরানে নিযুক্ত মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রাওয়া তার সহকর্মী আলেমদের সহযোগিতায় পাসের প্রেসিডেন্ট হন। শুরু হয় পাস পার্টির নতুন অভিযাত্রা।
পাস পার্টির নীতি ও পট-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের পোশাকে আসে পরিবর্তন। দলের নেতৃস্থানীয়দের মাথায় সাদা টুপি আর গায়ে জুব্বা। দলের মৌলিক কাঠামোতে এর দারুণ প্রভাব দেখা যায়। মফস্বল এলাকার সাধারণ মুসলমানদের মাঝে তৈরি হয় আলাদা আবেদন। যেখানে একটিমাত্র সংসদীয় আসন জেতা ছিল কঠিন, সেখানে একটি প্রদেশ শাসনের সৌভাগ্য অর্জন করে দলটি। ১৯৯০ সালে সাধারণ নির্বাচনে পাস পার্টি অবিস্মরণীয় জয় লাভ করে কেলানতান প্রদেশে। ভোটের রাজনীতিতে পাস আবির্ভুত হয় নতুন শক্তি হিসেবে চিন্তা ও চেতনায় মৌলিকত্ব নিয়ে।
পাসের আধ্যাত্মিক গুরু মাওলানা নিক আবদুল আজিজ বিন নিক মাত কেলানতান প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা করেছেন। তার সুশাসনের গল্প আজো শোনা যায় মালয়দের মুখে মুখে। ফলে পাস হয়ে উঠে সাধারণ মালয় মুসলিমদের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা।
হাল সময়ে ভোটের লড়াইয়ে পাস এখন জোটবদ্ধ প্রধান বিরোধী দলের শরিক। তবে আধুনিক মালয়শিয়ায় ইসলামের মৌলিকত্বকে স্পষ্টভাবে সামনে নিয়ে আসায় এবং নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো প্রকার রাখঢাক না করে ইসলামি বিচার ব্যবস্থা ও অন্য মৌলিক বিধানকে চালুর পক্ষপাতী। দেশের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ভিন্নধর্মের অনুসারী হলেও পাস পার্টি ইসলামকে আধুনিকায়নের পথে না নিয়ে মৌলিকত্বে অটল রাখতে বদ্ধ পরিকর, যেখানে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এসব বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে গেছেন বিভিন্ন সময়।
ক্ষমতার পালাবদলে মালয় মুসলমানদের বিশ্বস্ত নেতাদের দিকবদলের কারণে পাস এখন শক্তিশালী প্রভাবক। পাস পার্টির বর্তমান প্রধান আব্দুল হাদি আওয়াং একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া এই ইসলামি নেতার বয়স ৭৫। তিনি মারাং সংসদীয় আসনে ১৯৯০ সাল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন এবং এবারও বিজয়ী হয়েছেন। মাহাথির পরবর্তী দুই প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসীন এবং ইসমাইল সাবরির আমলে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা এবং তেরেঙ্গানুর মুখ্যমন্ত্রীর (১৯৯৯-২০০৪) দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া দেশের বাইরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ নানা ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময় থেকে নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে মালয়শিয়ার সর্ববৃহৎ ইসলামি রাজনৈতিক দলটি আগামী দিনে মালয়শিয়ার রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী প্রভাবক দল হিসেবে আবির্ভুত হতে যাচ্ছে- এটা অনেকটাই নিশ্চিত। ইউরোপের ডান আর লাতিনের বাম ঝড়ের মুখে এটাই সান্তনার বিষয়।
লেখক: সাংবাদিক।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/