।। আল্লামা মুফতি জসীমুদ্দীন ।।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, অর্থাৎ- “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতে আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারোটি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে এবং জেনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।”। (সূরা-তাওবা- ৩৬)।
উল্লিখিত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আরবি মাসের গণনা পদ্ধতি এবং তার নামকরণ এটা কোন মানুষের আবিষ্কৃত নয়। বরং তা সমগ্র জাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আসমান-জমীন সৃষ্টির সময়ই তা নির্ধারণ করেছিলেন। আর তাই তো শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ সব আহকাম- রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে এই চন্দ্র মাস, অর্থাৎ- আরবি মাসের উপর করেছেন নির্ভরশীল।
হিজরী সনের সূচনা
খলীফা হযরত উমর ফারুক (রাযি.)এর যুগে যখন আরব ছাড়িয়ে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে মুসলমানদের শাসন কর্তৃত্বের প্রসার ঘটে, তখন সরকারি দাফতরে নানা রেকর্ড, চিঠিপত্র, রসিদ ও অন্যান্য দলীল-দস্তাবেজের স্তুপ পড়ে যেতে থাকলো। এতে কোন লেখা বা আদেশটি কোন বছরের বা কোন সময়ের, এটা জানা কঠিন হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় হযরত আবু মূসা আশআরী (রাযি.) উমর (রাযি.)এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি লিখলেন, আমাদের কাছে আপনার এমন চিঠি আসে, যাতে আমরা বুঝতে পারি না এটা কোন সময়ের আদেশ। আপনি (অনুগ্রহ করে) কোনো তারিখ নির্ধারণ করুন।
অন্য আরেক বর্ণনায় এসেছে, হযরত উমর (রাযি.)এর কাছে এক চিঠি আসল যাতে শুধু শাবান মাসের উল্লেখ ছিল। হযরত উমর (রাযি.) বললেন, এটা কোন বছরের শাবান- কীভাবে বোঝা যাবে? তখন উমর (রাযি.) সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন, সময় নির্দিষ্ট করার জন্য একটা উপায় বের করুন। যার মাধ্যমে হিসাবাদি রাখা সহজতর হয়।
তখন কোন কোন সাহাবী রোমকদের সন-তারিখ গ্রহণ করার সুপারিশ করেন। হযরত উমর (রাযি.) বললেন, রোমকদের তারিখের গণনা অনেক দীর্ঘ। তারা তো আলেকজান্ডারের যুগ থেকে তারিখ গণনা করে। কেউ আরয করলেন, পার্সিকদের সন-তারিখ গ্রহণ করতে। হযরত উমর (রাযি.) বললেন, তারা তো প্রত্যেক বাদশার ক্ষমতাসীন হওয়ার ভিত্তিতে নতুন করে তারিখ গণনা শুরু করে থাকে।
বিভিন্ন মতামত ও আলোচনা শেষে স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত স্থির হলো। এখন প্রশ্ন হলো, কখন থেকে শুরু হবে? তিনটি মতামত সামনে আসলো। রাসূলুল্লাহ (সা.)এর জন্ম থেকে, তাঁর হিজরতের সময় থেকে এবং তাঁর ওফাতের সময় থেকে।
হযরত উমর (রাযি.) সিদ্ধান্ত দিলেন, হিজরতের বছর থেকে বর্ষপঞ্জি বা ক্যালে-ারের সূচনা করা হবে। কেননা, তার মাধ্যমেই হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্য রেখা সূচিত হয়েছে।
এটাই হিজরী নববর্ষের প্রসিদ্ধ ইতিহাস। তবে কোনো কোনো বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই হিজরতের সময় থেকে বর্ষ গণনা শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। (আশ শামারীখ ফী ইলমিত তারীখ- ১১-১৭ পৃষ্ঠা)।
মাহে মুহাররম বরকতময় এবং সম্মানিত মাস
এই মাস সম্মানিত এবং ফযিলতপূর্ণ মাস। যেমনটি তার অভিধানিক অর্থ দ্বারাই বুঝা যায়। কেননা, তার অর্থ হল, সম্মানিত এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এজন্যই তো ইসলামের পূর্বে অর্থাৎ আইয়ামে জাহেলিয়াতে এবং সপ্তম হিজরী পর্যন্ত এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল নিষিদ্ধ। যেমনটি উপর্যুক্ত আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করে দিয়েছেন। হযরত মুফতি শফী (রহ.) “মিনহা আরবাআতুন হুরুমুন”-এর তাফসীরে উল্লেখ করেন যে, অর্থাৎ- ঐ বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। আর তার সম্মান দুটি কারণে, এক- উক্ত মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ, দুই- উক্ত মাস বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এই মাসে ইবাদতের সাওয়াব বেশি পাওয়া যায়। তন্মধ্যে প্রথম হুকুম তো রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় হুকুম অর্থাৎ- তার তাৎপর্য; যেটা হচ্ছে, এই মাসে ইবাদতের গুরুত্ব এখনও বহাল রয়েছে।
এই চার মাসের মধ্যে মুহাররম হলো অন্যতম। আরবি হিজরি সনের প্রথম মাস হলো মুহাররম। এ মাসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব শুধুমাত্র শরীয়াতে মুহাম্মাদি (সা.)এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পূর্বেকার সমস্ত আম্বিয়া (আ.)এর শরীয়তেও এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ছিল বিদ্যমান। তার মধ্যে ইবাদতের সাওয়াবও বেশি হতো, গুনাহের শাস্তিও হতো বেশি এবং এ মাসের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহও ছিল নিষিদ্ধ।
এ মাসে রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে। আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ’। (সহীহ মুসলিম- ২/৩৬৮)।
অন্য এক হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ও আশূরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি’। (সহীহ বুখারী- ১/২১৮)।
সৃষ্টির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মাসের নাম হলো মুহাররম। যে মাসে মহান আল্লাহ তাআলা তার কুদরত প্রকাশ করেছেন এবং অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এই মাসে সংঘটন করেছেন। তাই তো, ইসলামী ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ মাস হল মুহাররম।
একটি ভুলের অবসান
অনেকে মনে করেন এই মাসের ফযীলত এ জন্য যে, হযরত হুসাইন (রাযি.) এই মাসে শাহাদাত বরণ করেন। এটা নিছক অজ্ঞতা ও মূর্খতা। কেননা, এই মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ইসলামের আগেও ছিল। বরং ইসলামের আগে তার হুরমাত বেশি ছিল। কেননা, তখন এই মাসে মারামারি, শিকার ইত্যাদি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সপ্তম হিজরীর পর তা রহিত হয়ে গেছে।
আশূরার ফযীলত ও ইতিহাস
মাহে মুহাররামের ১০ তারিখকে বলা হয় আশূরার দিন। এই দিনের নামকরণের ব্যাপারে একাধিক মতামত থাকলেও উল্লেখযোগ্য হল যে, তা ‘আশারা’ মূলধাতু থেকে নির্গত, যার অর্থ হল- ‘দশ’। সুতরাং আশূরার অর্থ হল দশম। মুহাররম মাসের মধ্যে আশূরার দিন হল সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ। এই দিনে রোযা রাখার ফযীলত মুহাররমের অন্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘আমি আশাবাদি যে, আশূরার রোযার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন’। (সহীহ মুসলীম- ১/৩৬৭)।
অন্য এক হাদিসে এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আশূরার দিনে পূর্বেকার নবীগণ (আ.) রোযা রাখতেন। সুতরাং তোমরাও এ দিনে রোযা রাখ’। (মুসাননাফে ইবনে আবি শায়বা)।
আরও পড়তে পারেন-
- নূপুর শর্মা, হেট স্পিচ ও বাকস্বাধীনতা
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আলি (রাযি.)কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন যে, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেন। তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মুহাররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযী- ১/১৫৭)।
তবে রোযা রাখার ক্ষেত্রে শুধু ১০ তারিখের রোযা রাখা মাকরূহ। যেমনটি ফিকাহ শাস্ত্রের কিতাব সমূহের মধ্যে পাওয়া যায়। তাই তার সাথে আগে বা পরে আরেকটি রোযা মিলিয়ে রাখা চাই। অর্থাৎ- ৯, ১০, ১১ অথবা ৯, ১০ বা ১০, ১১ তারিখের রোযা রাখা। এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, ‘তোমরা আশূরার রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশূরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ’। (মুসনাদে আহমদ- ১/২৪১)।
উক্ত হাদীস দ্বারা একটি কথা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, মুসলমানের প্রতিটি বিষয় যেন কাফির, মুশরিক, বিধর্মীদের থেকে পৃথক হয়। তাদের সাদৃশ্য যেন না হয়, এমনকি ইবাদতের মধ্যেও। কিন্তু আফসোস! আজ মুসলমান বিধর্মীদের অনুকরণ ও সাদৃশ্যের মধ্যে নিজেদের উন্নতি ও অগ্রগতি খুঁজে বেড়ায়।
তবে যদি কেউ কোন সমস্যার কারণে শুধুমাত্র ১০ তারিখের রোযা রাখে, তাহলে তাও রাখতে পারবে। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) এবং আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.) আশূরার রোযা সম্পর্কে বলেন, আশূরার রোযার তিন অবস্থা- আফযাল, মাফযোল, আদনা। অর্থাৎ- ৯, ১০, ১১ এই তিন দিন রোযা রাখা আফযাল (সবচেয়ে ভাল)। আর ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখে রোযা রাখা মাফযোল (মধ্যম অবস্থা), আর সবার নিচের অবস্থা হল শুধুমাত্র ১০ তারিখের রোযা রাখা।
এ দিনে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত করেছেন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন, বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। (বুখারী- ১/৪৮১)।
তবে এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে অনেক ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকে। যেমন- এ দিন আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, এ দিন আল্লাহ তাআলা লাওহ ও কলম সৃষ্টি করেছেন, এ দিন হযরত ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, হযরত ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদরীস (আ.)কে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় ইত্যাদি। এসব কথার কোন প্রমাণ্য ভিত্তি নেই।
ওয়াসআতে রিযিকের মাসআলা
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি আশূরার দিন নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য সচ্ছলতার (ভাল খাবারের) ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ তাআলা সারা বছর তাকে সচ্ছল রাখবেন”। অনেক হাদিস বিশারদ হাদিসটি জাল বললেও বেশিরভাগ ইমাম বলেছেন যে, হাদিসটি জাল নয়, যদিও কিনা তা যয়ীফ। সুতরাং কিছু শর্তের সাথে উহার উপর আমল করা যাবে। শর্ত হল- এটাকে ইবাদত মনে করা যাবে না, জরুরি বা আবশ্যকও মনে করা যাবে না এবং কেউ না করলে তাকে গাল-মন্দ করা যাবে না।
শাহাদাতে হুসাইন (রাযি.)
এ দিনে আরেকটি ঘটনা যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর তা হলো, শাহাদাতে হুসাইন (রাযি.)। নিঃসন্দেহে তা ইতিহাসের নির্মম ও খুবই হৃদয়বিদারক এক করুণ অধ্যায়। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু শাহাদাতে হুসাইন (রাযি.)কে উপলক্ষ বানিয়ে বর্তমানে যে সমস্ত বিদআত ও কুপ্রথা সমাজে, বিশেষভাবে শিয়া সম্প্রদায়ের মাঝে মরণব্যাধি রূপে বিস্তার লাভ করেছে, তা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। শোক প্রকাশার্থে শরীর রক্তাক্ত করা অথবা তাজিয়া ইত্যাদি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। হাদিস শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ‘নিশ্চয় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু বলি না, যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়’। অন্য এক হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই, যারা মুখ চাপড়ায় কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহেলী যুগের কথাবার্তা বলে’।
মুহাররম একটি সম্মানিত মাস, ইবাদতের মাস, বরকতের মাস। এটি কোন অভিশপ্ত বা মানহুস মাস নয়। যেমনটি শিয়ারা মনে করে থাকে। যে কারণে তারা এ মাসে বিবাহ-শাদি ইত্যাদি কোন খুশির কাজ করে না। ইসলামে এর কোন ভিত্তিই নেই। কারণ, যে মাসকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সম্মানিত করেছেন, তা কিভাবে অভিশপ্ত হতে পারে? সুতরাং যারা আল্লাহ তাআলার মনোনীত মাসকে অভিশপ্ত বলে, বাস্তবে তারাই হলো অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত।
পরিশেষে বলতে চাই, মাহে মুহাররম অতি তাৎপর্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মাস, ইবাদত ও গাম্ভীর্যতার মাস, কল্যাণ ও মঙ্গলের মাস। সমস্ত বিদআত ও কুসংস্কার থেকে পবিত্র হয়ে ইবাদতে অগ্রগামী হওয়ার মাস। মুহাররম ও আশূরা আমাদের জন্য এই বার্তা বয়ে আনে যে, আল্লাহর ইবাদতে অন্যের চেয়ে অগ্রগামী হওয়া চাই এবং আল্লাহর দ্বীন রক্ষার্থে সদা-সর্বদা জান-মালের কোরবানী দিতে প্রস্তুত থাকা চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বপ্রকার র্শিক, বিদআত ও কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার এবং সুন্নাত মুতাবেক যিন্দেগী গড়ার তাওফিক দান করুক। আমীন!
লেখক: মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এবং সহযোগী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব- নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/