।। মুফতি মুহাম্মদ জসীমুদ্দীন ।।
হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাযি.) থেকে বর্ণিত। একবার সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) হুযূরে আকরাম (সা.)এর নিকট আরয করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কুরবানী কী জিনিস?” হুযূর (সা.) ইরশাদ করলেন, “তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)এর সুন্নাত। (মুসনাদে আহমাদ)।
হযরত ইবরাহীম (আ.) যাকে আল্লাহ তাআলা কোটি কোটি মানুষ হতে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে নির্বাচিত করলেন, তাঁর উপাধি হলো খলীলুল্লাহ। তাঁর বংশধর থেকে আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্ম লাভ করেন। হযরত ইবরাহীম (আ.) থেকে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাআলা কঠিন থেকে কঠিনতর ঈমানী পরীক্ষা নেন এবং দুর্গম পথ অতিক্রমের মাধ্যমে তাঁকে তিনি উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেন। বান্দার জন্য নিদর্শন স্বরূপ পবিত্র কুরআনে এসব ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-
- আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিতে গিয়ে নিজ মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলো।
- সে যুগের সর্বাধিক প্রভাবশালী বাদশাহ নমরূদের কাছে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিতে গিয়ে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হলেন।
- দ্বীনের খাতিরে স্বীয় মাতৃভূমি ছেড়ে হিজরত করেছেন।
- আল্লাহ তাআলার দরবারে অনেক কান্নাকাটি ও প্রার্থনা করার পর সন্তান লাভ করেছিলেন। অতঃপর সেই একমাত্র আদরের শিশুকে আল্লাহর হুকুমে আরবের গহীন মরুজঙ্গলে রেখে আসলেন।
সেই শিশুটি যখন একটু বড় হয়ে চলা-ফেরা করতে শুরু করল, মাতা-পিতার অন্তরে আরও মমতাময়ী ও চক্ষু শীতল হওয়ার সময় হলো, তখন সেই একমাত্র কলিজার টুকরোকে প্রভুর পক্ষ থেকে কুরবানী করার নির্দেশ এলো। আর তখন সেই ছোট্ট শিশুটিও খোদার নির্দেশের প্রতি সম্মতি জানিয়ে বাবার ছুরির নিচে যবাই হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। হযরত ইবরাহীম (আ.) বৃদ্ধকালে প্রাপ্ত একমাত্র সন্তানকে আল্লাহর হুকুমে বিসর্জন দিতে গলায় ছুরি চালানো শুরু করলেন। আর সন্তানও সন্তুষ্টচিত্তে ছুরির নীচে শায়িত। ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আ.) জান্নাতী দুম্বা নিয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.)এর ছুরির নীচে হযরত ইসমাঈল (আ.)এর জায়গায় শুইয়ে দিলেন। আল্লাহর হুকুমে দুম্বা যবাই হলো, আর হযরত ইবরাহীম (আ.) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন।
হযরত ইবরাহীম (আ.)এর নির্ভেজাল নিয়্যাত এবং আল্লাহর প্রতি গভীর দাসত্বে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দেয়াটা আল্লাহ তাআলার নিকট এতই পছন্দনীয় হয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য নিদর্শন স্বরূপ সেই কুরবানীকে চির স্মরণীয় করে দিয়েছেন।
হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত ইসমাঈল (আ.) ও বিবি হাজেরা(আ.) খোদায়ী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি এমনভাবে অর্জন করলেন, যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা উনাদের ঐসব কর্মগুলোকে কুরবানীর মাধ্যমে স্মৃতিবাহী ও অবিস্মরণীয় করে দিয়েছেন। তাই তো আজ গোটা বিশ্বে কোটি কোটি মুসলমান এই সুন্নাতে ইবরাহীমীকে রেখেছেন জীবন্ত।
কুরবানীর ফযীলত
কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযীলত যে কত তাৎপর্যপূর্ণ সূরায়ে কাওসার পাঠ করলে তা বোঝা যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীব মুহাম্মাদ (সা.)কে সম্বোধন করে বলেন- “নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার (জান্নাতের একটি নহরের নাম, যার মধ্যে সকল প্রকার বরকত ও কল্যাণ নিহীত রয়েছে) দান করেছি। অতএব (উক্ত নেয়ামতের কৃতজ্ঞতায়), আপনি স্বীয় পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়–ন এবং তাঁরই নামে কুরবানী করুন”।
হাদীস শরীফেও কুরবানির অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নবী কারীম (সা.) কুরবানীর প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। একবার হুযূরে আকরাম (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)এর সামনে কুরবানীর আলোচনা করলেন। তখন সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) হুযূরে আকরাম (সা.)এর নিকট আরয করলেন, সেই কুরবানীর বিনিময়ে আমরা কী পাবো? হুযূর (সা.) ইরশাদ করলেন, “প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি পাবে”। পুনরায় সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) ভেড়ার পশমের ক্ষেত্রে কী পাওয়া যাবে? হুযূর (সা.) উত্তরে বললেন, “তার পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকি পাওয়া যাবে”। (মিশকাত)।
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, হুযূরে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, “কুরবানীর ঈদের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট কুরবানী অপেক্ষা অধিক প্রিয় আর কোন আমল নেই। কুরবানীকৃত পশু কিয়ামতের দিন তার শিং,পশম, খুর ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। কুরবানীর পশু যবাই করার সাথে সাথে তার রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা কুরবানী করে আনন্দিত হও। (তিরমিযি, মিশকাত)।
আরও পড়তে পারেন-
- বাংলায় হিন্দু রেনেসাঁস: প্রগতিশীলতা ও ইসলামবিদ্বেষ
- পরিবেশ বিপর্যয়— রুশ সাম্রাজ্যের শাপে বর?
- ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস ও হিন্দিবাদী রবীন্দ্রনাথ
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
অন্যত্র প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, কুরবানীর পশু পুলসিরাতের উপর তোমাদের বাহন হবে। সুতরাং মোটাতাজা পশু কুরবানী কর।
হাদীস শরীফে কুরবানীর অনেক বেশি ফযীলত ও গুরুত্ব বয়ান করা হয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত উচিত যে, কুরবানী ওয়াজিব না হলেও সামর্থ্য অনুযায়ী কুরবানী করার চেষ্টা করা।
ওয়াজিব কুরবানী না করার প্রতি ধমকি
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করার প্রতি হাদিস শরিফে অনেক সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরবানী করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের সঙ্গে আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)।
অন্য এক হাদিসে হযরত ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) দশ বছর মদীনায় অবস্থান কালীন প্রতি বছরই তিনি কুরবানী করেছেন। (তিরমিযী, মিশকাত)।
কুরবানীর আহকাম
শরীয়তের পরিভাষায় কোরবানী বলা হয় নির্দিষ্ট বয়সের নির্দিষ্ট পশুকে (উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা) নির্দিষ্ট দিনসমূহের (১০-১১-১২ই যিলহজ্জের) মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যবাই করা।
কুরবানী দুই প্রকার- ১. ওয়াজিব ২. নফল। ওয়াজিব কুরবানী আবার চার প্রকার। যথা- ১) মান্নতের কুরবানী। ২) ধনী হিসেবে ওয়াজিব কুরবানী অর্থাৎ কুরবানীর দিন গুলোতে(১০-১১-১২ই যিলহজ্জে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যতিত) নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে কুরবানী ওয়াজিব। ৩) কুরবানীর দিনসমূহের মধ্যে কোন গরিব লোক যদি কুরবানীর নিয়্যাতে পশু ক্রয় করে তবে তার উপর উক্ত পশু কুরবানী করা ওয়াজিব। ৪) ওসিয়তের কুরবানী অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর পূর্বে ওয়ারিসগণকে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়ত করে যায়, তবে ওয়ারিসদের উপর তার এক তৃতীয়াংশ মাল হতে কুরবানী করা ওয়াজিব।
নফল কুরবানী
মুসাফির ও গরিবের (যে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়) জন্যে কুরবানী করা নফল। এমনিভাবে হুযূরে আকরাম (সা.)এর নামে বা কোন বুজুর্গ কিংবা কোন মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করাও নফল।
কুরবানীর দিনসমূহ
১০ই যিলহজ্বের সুব্হে সাদিকের পর থেকে ১২ই যিলহজ্জের সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কোন সময় কুরবানী করা যাবে। তবে রাত্রি বেলায় কুরবানী করা মাকরূহ। ১০ম তারিখে কুরবানী করা উত্তম।
- যে সকল এলাকায় জুমা ও ঈদের নামায আদায় করার সকল শর্ত পাওয়া যায়, সে সকল এলাকায় ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করলে তা আদায় হবে না। তবে যদি ঐ এলাকার কোন এক স্থানে নামায সম্পন্ন হয়, তাহলে তারা কুরবানী করতে পারবে।
- যে সকল স্থানে ঈদ ও জুমআ শরীয়ত সম্মত, কিন্তু সেখানকার অধিবাসী যদি কোন কারণবশত ১০ তারিখে ঈদের নামায আদায় করতে না পারে, তাহলে ঈদের নামাযের স্বাভাবিক সময় পার হয়ে গেলে কুরবানী করতে পারবে। ঈদের নামাযের সময় হলো সূর্যোদয়ের ২০ মিনিট পর হতে সূর্য স্থির হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। যদি কোন কারণবশত এলাকার লোকেরা ১০ তারিখে ঈদের নামায আদায় করতে না পারেন, তবে ১১ তারিখে আদায় করে নিবেন। ১১ তারিখেও যদি নামায আদায় করতে না পারেন, তাহলে ১২ তারিখ আদায় করে নিবেন। ১২ তারিখের পর আর নামায পড়া যাবে না।
- কোন কারণবশত কুরবানীর দিনসমূহে ওয়জিব কুরবানী আদায় করা সম্ভব না হলে, সেই পরিমাণ টাকা ফকির-মিসকিনকে সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। তবে এতে করে দায়িত্ব আদায় হবে বটে, কিন্তু কুরবানীর সমপরিমাণ পুণ্য লাভ হবে না।
কাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব
প্রতিটি সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক, মুকীম, নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী নারী-পুরুষের উপর কুরবানী ওয়াজিব। যদি কোন ব্যক্তি ঈদের দিন সকাল থেকে ১২ই যিলহজ্জের সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সময় নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
- নেসাব হলো- সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা তার সমমূল্যের টাকা কিংবা ধনসম্পদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ, আসবাবপত্র এবং আয়ের মাধ্যম, যেমন- যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ব্যতিত।
- রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আসবাব নয়। সুতরাং এসব যন্ত্রপাতির মূল্য নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে।
- বসতঘর ব্যতীত অতিরিক্ত ঘরের মূল্য বা তার ভাড়া নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে।
- স্ত্রী লোক যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয় (নিজস্ব গয়না ইত্যাদির মাধ্যমে), তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
- কোন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
- যদি চার-পাঁচজন মিলে একসাথে ব্যবসা ইত্যাদি করে, তাহলে সম্পদ বণ্টন করলে যদি প্রত্যেকের ভাগে নেসাব পরিমাণ মাল আসে, তাহলে প্রত্যেকের উপর পৃথকভাবে কুরবানী ওয়াজিব হবে।
- যদি কেউ কুরবানীর মান্নত করে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব (চাই সে ধনী হোক বা গরিব হোক)। এবং উক্ত কুরবানীর গোস্ত সে এবং তার সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা (ঊর্ধ্বতন ও অধীনস্ত ) কেউ খেতে পারবে না।
- মান্নত যদি কোন নির্দিষ্ট পশুর উপর করা হয়, তাহলে উক্ত পশুটিই কুরবানী করতে হবে। আর যদি চায় কুরবানী না করে কোন গরিবকে দিয়ে দিবে, তাহলে তা করতে পারবে। যদি উক্ত পশুটি মারা যায়, তাহলে নতুন পশু দ্বারা কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।
- পাগল ও মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়; যদিও সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। তবে মুসাফিরের উপর কুরবানী করা মুস্তাহাব।
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ঋণের পরিমাণ থেকে অধিক সম্পদের মালিক হয় এবং তা নেসাব পরিমাণ হয়, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। যদি নেসাব থেকে কম হয়, তাহলে ওয়াজিব হবে না।
- নাবালেগ নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলেও (নির্ভরযোগ্য মতানুসারে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
- ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, স্ত্রী কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে বিবাহের সময় স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকলে (স্ত্রীর পক্ষ থেকে) কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
- গ্রহণযোগ্য মতানুসারে জমির মূল্য নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে না। কিন্তু তার (প্রয়োজনাতিরিক্ত) উৎপাদন নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে।
- অন্য কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে ওয়াজিব কুরবানীর ক্ষেত্রে যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হবে, তার অনুমতি আবশ্যক। অনুমতি ছাড়া ওয়াজিব আদায় হবে না।
কুরবানীর পশু
কুরবানীর জন্য শরীয়ত কয়েক প্রকার পশু নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলো দ্বারাই কুরবানী করতে হবে। নির্দিষ্ট এই পশু ছাড়া অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী শরীয়ত সম্মত হবে না।
- উট দিয়ে কুরবানী করার ক্ষেত্রে উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। এর থেকে একদিন কম হলেও কুরবানী সহীহ হবে না।
- গরু এবং মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বৎসর হতে হবে। এর থেকে একদিন কম হলেও হবে না।
- ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বৎসর হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বা ততোধিক বয়সের কোন ভেড়া বা দুম্বা এরূপ মোটাতাজা হয় যে, এক বৎসর বয়সীদের মাঝে ছেড়ে দিলে কোন পার্থক্য করা যায় না, তবে তা দিয়েও কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।
- কুরবানীর পশুর দাঁত উঠা জরুরি নয়। বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে দৃঢ় বিশ্বাস হলেই কুরবানী করা যাবে।
- কুরবানীর পশুর যদি কোন অঙ্গের অর্ধেক বা তার থেকে বেশি কিংবা পূর্ণ এক অঙ্গ বিকল হয়, তাহলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। সুতরাং কোন একটি চোখ বা একটি শিং বা একটি পা অর্ধেক বা তার বেশি বিকল হয়ে গেলে তা দিয়ে কুরবানী সহীহ হবে না।
- যে পশু অত্যন্ত রুগ্ন, অসুস্থ কিংবা এরূপ খোঁড়া যে, যবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে সক্ষম নয়, এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।
- সস্পূর্ণ কিংবা অধিকাংশ দন্তহীন পশু, যারা ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে না, এরূপ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।
- যে বকরির স্তনে একটি বাট নেই এবং যে গরুর স্তনে দুইটি বাট নেই, সেটা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।
- খুনছা অর্থাৎ যেই পশু নর কি মাদী বুঝা যায় না, সেই পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয নয়।
- পাগল পশু যদি ঘাস-পানি খায় এবং অন্যান্য পশুর সাথে ঘোরা-ফেরা করে, তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয।
- বৈধ এবং অবৈধ পশুর মিলনে যে বাচ্চা হয়, তার আকৃতি যদি বৈধ পশুর মত হয় (বৈধ পশু যদি মা হয়) তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয।
- যেই পশু সব সময় নাপাক ভক্ষণ করে, তার কুরবানী জায়েয নেই। তবে যদি উক্ত পশুকে কুরবানীর পূর্বে বেঁধে রেখে (উট ৪০দিন, গরু মহিষ ২০দিন, ছাগল-ভেড়া-দুম্বা ১০দিন) নাপাক খাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়, তবে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয।
- গর্ভবতী পশুর কুরবানী জায়েয, কিন্তু বাচ্চা হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে তার কুরবানী মাকরূহ। তার পরিবর্তে অন্য একটি পশু কুরবানী করবে।
- গর্ভবতী পশু যবাই করার পর জীবিত বাচ্চা বের হলে তা যবাই করে খাওয়া বৈধ হবে। আর বাচ্চা মৃত হলে তা যবাই বা খাওয়া বৈধ হবে না।
- কুরবানীর পশু যবাই করার পূর্বই যদি তার বাচ্চা হয়, তাহলে বাচ্চাটি সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি বাচ্চাটি যবাই করা হয়, তাহলে তার গোশত সদকা করা ওয়াজিব। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাটাকে জীবিত সদকা করাই উত্তম।
- যে পশুর কান আছে কিন্তু ছোট, সে পশু দিয়ে কুরবানী করতে কোন অসুবিধা নেই।
- অনুরূপ যে পশুর জন্মগত শিং নেই, সে পশু দ্বারা কুরবানী করায় কোন অসুবিধা নেই। অথবা যদি কোন কারণে শিং এর উপর থেকে খোলস পড়ে যায়, তাতেও কোন ক্ষতি নেই।
- জন্মগতভাবে এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট পশু দ্বারা কুরবানী বৈধ আছে।
- কুরবানীর জন্য পশু ক্রয় করার পর যদি এমন কোন দোষ তার মধ্যে সৃষ্টি হয়, যা কুরবানীর বৈধতার পরিপন্থি, তাহলে কুরবানীদাতা যদি স্বচ্ছল হয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য অপর একটি পশু দিয়ে কুরবানী করা ওয়াজিব। আর যদি গরিব হয়, তাহলে ঐ পশুই তার জন্য যথেষ্ট।
- যে পশু মাঝে মাঝে মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়, কিন্তু শারীরিকভাবে সবল থাকে, তাকে দিয়ে কুরবানী জায়েয।
- বাকীতে ক্রয়কৃত পশু দিয়েও কুরবানী করা যাবে।
- বন্ধ্যা পশু দিয়ে কুরবানী দেয়া জায়েয আছে।
- যে সকল পশু দ্বারা কুরবানী হয় না সেসকল পশু কুরবানীর দিনসমূহে কুরবানীর নিয়্যাতে যবাই করা মাকরূহ।
- কুরবানীর পশু যবাই করার পূর্বে সেটা দিয়ে উপকৃত হওয়া, যেমন- হালচাষ করা, তার দুধ পান করা, পশম কাটা ইত্যাদি মাকরূহ। তবে যদি কুরবানীর আগে পশুর খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনে হয়, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। আর যদি এগুলো বিক্রি করে তাহলে তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে। তবে যবাই করার পর যদি তার স্তনে দুধ থাকে, তাহলে সাথে সাথে সেই দুধ খাওয়া যাবে।
কুরবানীর পশুর অংশীদার
উট, গরু, মহিষের মধ্যে ৭ ব্যক্তি পর্যন্ত শরীক হতে পারবে। সাত থেকে কম হলেও কোন সমস্যা নেই। তবে সাত ভাগ বা সাত ব্যক্তির বেশি হলে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না এবং কারো অংশ এক সপ্তাংশ থেকে কম হলেও কারো কুরবানী সহীহ হবে না। ছাগল, ভেড়া, দুম্বাতে কেবলমাত্র এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে। এর থেকে বেশি হলে কারো কুরবানীই গ্রহণযোগ্য হবে না।
- কুরবানীতে সকলের সাওয়াবের নিয়্যাত থাকতে হবে। কোন একজন যদি গোশত খাওয়া বা লোক দেখানোর নিয়্যাত করে, তাহলে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না।
- একাধিক ব্যক্তি মিলে একটি ছাগল বা গরুর এক অংশের টাকার ব্যবস্থা করলে তন্মধ্যে একজনকে উক্ত টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে এবং সে যার পক্ষ থেকে চায় কুরবানী করবে। নতুবা কারো কুরবানীই সঠিক হবে না।
- যদি কুরবানীর নিয়্যাত ব্যতিত পশু ক্রয় করে থাকে এবং পরবর্তীতে তা দ্বারা কুরবানী করতে চায় এবং তাতে অন্যকে শরীক করতে চায়, তাহলে তা পারবে। ক্রেতা ধনী হোক বা গরিব, পশু কুরবানীর দিনসমূহের মধ্যে ক্রয় করুক কিংবা তার পূর্বে, সমস্যা নেই।
- কিন্তু কোন গরিব ব্যক্তি যদি কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে কুরবানীর নিয়্যাতে কোন পশু ক্রয় করে, তাহলে তার উপর উক্ত পশু কুরবানী করা ওয়াজিব। এবং তাতে না কাওকে শরীক করতে পারবে আর না সে তা বিক্রি করতে পারবে। তবে ধনী হলে তা পারবে।
- যদি কুরবানীর পশু যবাই করার পূর্বেই কোন শরীক মারা যায়, তাহলে তার অংশ বাতিল হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ওয়ারিসগণ যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তাহলে তা সহীহ হবে। কিন্তু ওয়ারিসদের মধ্যে যদি কেউ নাবালেগ থাকে অথবা কোন একজন অনুমতি না দেয়, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত মৃতের অংশ পৃথক না করা হবে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না।
- উট, গরু, মহিষের মধ্যে যদি সাত জনের কম শরীক হয়, যেমন পাঁচ বা ছয় জন, তাহলে প্রত্যেকে এক অংশ করে নিয়ে অবশিষ্ট অংশ নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে অথবা মাতা-পিতা বা কোন বুযূর্গ কিংবা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কুরবানী করতে পারবে। এমন দুই ব্যক্তি যারা উক্ত পশুতে শরীক নেই তারা ঐ অবশিষ্ট অংশকে বণ্টন করে নিতে পারবে না। তবে তারা দুজন মিলে যদি একজনকে মালিক বানিয়ে দেয়, তাহলে সে উক্ত অংশে শরীক হতে পারবে।
মৃতের পক্ষে কুরবানী
কোন ব্যক্তি যদি ওয়ারিশদেরকে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য ওসিয়্যাত করে যায়, তবে ওয়ারিশগণের উপর তার তিন ভাগের একভাগ মাল থেকে কুরবানী দেয়া ওয়াজিব এবং উক্ত কুরবানীর গোশত সদকা করে দিতে হবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির মাল না থাকে তাহলে ওয়ারিশগণের উপর তার পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।
যদি কোন ব্যক্তি কোন মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সাওয়াবের জন্য কুরবানী করে, তাহলে তার গোশত নিজেও খেতে পারবে এবং অন্যকেও খাওয়াতে পারবে। একটি অংশ কুরবানী করেও সকল মুসলমান মৃতের উপর ঈসালে ছাওয়াব করা যায়।
যবাই করার সুন্নাত তরীকা
নিজে যদি ভালভাবে যবাই করতে পারে, তাহলে স্বহস্তেই যবাই করা উত্তম। তবে অন্যের মাধ্যমেও যবাই করা যাবে। এক্ষেত্রে মালিক তার সম্মুখে দন্ডায়মান থাকা উত্তম। মেয়েদের যবাইও সহীহ আছে এবং টাকা দিয়ে যবাই করানোও জায়েয আছে।
- যে ব্যক্তি যবাই করবে তার জন্য “বিসমিল্লাহ ” বলা ওয়াজিব এবং তার সঙ্গে যদি অন্য কেউ ছুরিতে হাত লাগিয়ে থাকে, তাহলে তার উপরও “বিসমিল্লাহ” বলা ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃতভাবে যদি বিসমিল্লাহ না বলে তাহলে ঐ পশুর গোশত হারাম হয়ে যাবে। আর যদি ভুলক্রমে না বলে থাকে এবং যবাইকারী মুসলমান হয়, তাহলে গোশত হালাল হবে।
যবাইকারীর মুখ কিবলার দিকে করে নিবে। আর সম্ভব হলে পশুর মুখও কিবলার দিকে করে নিবে এবং এই দোয়া পড়বে-
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ- “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি ওয়ানুসুকী ওয়ামাহইয়াইয়া ওয়ামামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা-শারীকা লাহু ওয়াবিযালিকা উমিরতু ওয়াআনা আউয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা”।
অতঃপর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবাই করে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ صلی اللہ علیہ وسلم وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم علیہ السلام
- একা কুরবানী দিলে এভাবে পড়বে- “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া-খালীলিকা ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম”।
- শরীকদারগণের উপস্থিতিতে কুরবানী দিলে এভাবে পড়বে- “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্না কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া-খালীলিকা ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম”।
- অনুপস্থিত শরীকদারের কুরবানীর ক্ষেত্রে যার যার নাম উল্লেখ করে দোয়া শেষ করতে হবে। যেমন- “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন রাশেদুল ইসলাম, আশরাফ আলী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া-খালীলিকা ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম”।
দোয়ার মধ্যে (আও মিন্না); এখানে যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তারা যদি উপস্থিত থাকে, তাহলে “মিন্না” বলবে। আর যদি এর স্থানে তাদের নাম বলবে।
- যবাই করার পূর্বে ছুরি ভাল করে ধার দিয়ে নিবে। এক পশুর সামনে অন্য পশু যবাই করবে না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত জবাইকৃত পশু পুরোপুরি নিস্তেজ না হয়, তার চামড়া ইত্যাদি কাটা শুরু করবে না।
- প্রতিটি পশুর গলায় চারটি রগ আছে, জবাইয়ে সময় যে কোন তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে।
- যবাইয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন পশুর মাথা একেবারে পৃথক না হয়ে যায়। কারণ দেহ থেকে এভাবে মাথা পৃথক করলে যবাই মাকরূহ হবে।
কুরবানীর গোশত
- কুরবানী গোশতকে তিন ভাগ করা মুস্তাহাব। একভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখবে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দিবে, আরেক ভাগ গরিব-মিসকীনকে দান করবে। কুরবানীর পশুর কোন অংশ বিক্রয় করা হারাম। যদি কেউ কোন অংশ বিক্রি করে তাহলে তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
- শরীকানা পশুর গোশত পাল্লা দিয়ে ওজন করে বণ্টন করতে হবে, নতুবা তা বৈধ হবে না। তবে যে সকল অংশ ভাগ করা যায় না কিংবা তা ভাগ করে মিলানো কঠিন অথবা তা ওজন করে বণ্টনের রীতি দেশে প্রচলিত নয়, সেগুলো ওজন ব্যতিত পরস্পরের সম্মতিতে বণ্টন করে নিলে কোন অসুবিধা নেই।
- সকল অংশীদার যদি একই পরিবারের হয় অথবা তাদের খাওয়া দাওয় একই সঙ্গে হয়, তবে গোশত এভাবে ভাগ করার প্রয়োজন নেই। অনুরূপ যদি সকল অংশীদার সন্তুষ্টচিত্তে গোশত বণ্টন ব্যতীত এক সঙ্গে রান্না করে খায় বা আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়ায় বা গরিব মিসকিনকে দেয়, তাও জায়েয আছে।
- কসাই, যবাইকারী ইত্যাদির মজুরি হিসাবে কুরবানীর পশুর কোন অংশ দেয়া জায়েয নেই। তবে মজুরি দেয়ার পর গোশত ইত্যাদি পারিশ্রমিক হিসেবে নয় বরং এমনি যদি দিতে চায়, তাহলে তা পারবে।
- কুরবানীর গোশত যত দিন চায় রেখে দিতে পারবে।
কুরবানীর পশুর চামড়া
- কুরবানীর পশুর গোশতের মতো চামড়ারও একই হুকুম। অর্থাৎ যেই পশুর গোশত নিজে খেতে পারবে এবং অন্যকে দিতে পারবে, সেই পশুর চামড়াও চাইলে নিজে ব্যবহার করতে পারবে, আর চাইলে অন্যকেও দিতে পারবে। আর যেই কুরবানীর গোশত নিজে খেতে পারবে না বরং তা সদকা করে দিতে হয়, যেমন- মান্নত ইত্যাদি, সেই কুরবানীর চামড়াও নিজে ব্যবহার করতে পারবে না বরং তা সদকা করে দিতে হবে।
- কুরবানীর চামড়া বিক্রি করা মাকরুহ। যদি কেউ তা বিক্রি করে, তাহলে তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
- কুরবানীর চামড়ার মূল্য দিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা, পুল ইত্যাদি নির্মাণ করা বা ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন দেয়া বা অন্য কোন সামাজিক কাজে ব্যবহার করা জায়েয নেই।
- অনুরূপভাবে কুরবানীর কাজ করিয়ে কাজের মানুষকে বিনিময় হিসেবে চামড়া দিয়ে দেয়াও জায়েয নেই।
পরিশেষ, কুরবানীর সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো দ্বীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা। যা আমাদের জন্য প্রতি বছর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এই বার্তা বয়ে আনে যে, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে দ্বীনের জন্য জান এবং মালের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় বান্দারা। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য জান এবং মালের কুরবানী করার তাওফীক দান করুক। আমীন।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/