মাহে রমযান: ফাযায়েল ও মাসায়েল

।। আল্লামা মুফতি জসীমুদ্দীন ।।

রোযার সংজ্ঞা: রোযার মূলে ‘সাওম’ শব্দ রয়েছে, বহুবচনে সিয়াম। এর অর্থ বিরত থাকা, বিরত রাখা। শরীয়তে এর অর্থ আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের প্রারম্ভ হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি হতে বিরত থাকা।

রোযার ফযীলত: রোযা ফরয বা অবশ্য করণীয় এবং ইসলামের একটি স্তম্ভ। এটা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন- “হে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হলো যেভাবে তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা সংযমী হও”। (বাক্বারাহ্- ১৮৩)।

আরো ইরশাদ হয়েছে- “তোমাদের মধ্যে যে (রমযান) মাসকে পায়, সে যেন রোযা রাখে”। (সূরা বাক্বারাহ্- ১৮৫ আয়াত)।

হাদীস শরীফে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। (২) নামায কায়েম করা। (৩) যাকাত দেওয়া (৪) হজ্জ করা এবং (৫) রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

হযরত সালমান (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, প্রিয় নবীয়ে করীম (সা.) শা’বানের শেষ তারিখে আমাদেরকে নসীহত করেছেন যে, তোমাদের মাথার উপর এমন একটি মর্যাদাশীল মোবারক মাস ছায়া স্বরূপ আসছে, যার মধ্যে শবে কদর নামে একটি রাত্রি আছে, যা হাজার মাস হতেও উত্তম। আল্লাহ তাআলা রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন এবং রাত্রি জাগরণ অর্থাৎ তারাবীহ পড়াকে তোমাদের জন্য পুণ্যের কাজ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে কোন নফল আদায় করল, সে যেন রমযানের বাহিরে একটি ফরয আদায় করল। আর যে এই মাসে একটি ফরয আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করল।

হুযূর (সা.) আরও বলেন, এই মাস সবরের মাস এবং সবরের পরিবর্তে আল্লাহ পাক বেহেশত রেখেছেন। এটা মানুষের সাথে সহানুভূতি করার মাস। এ মাসে মুমিন লোকদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির জন্য উহা গুনাহ মা’ফের ও দোযখের অগুন হতে নাজাতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং উক্ত রোযাদারের সাওয়াবের সমতুল্য সাওয়াব সে ব্যক্তি লাভ করবে, অথচ সেই রোযাদারের সাওয়াব বিন্দু মাত্রও কম হবে না। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে নবী! আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সামর্থ্য নেই যে, সে অপরকে ইফতার করাবে অর্থাৎ পেট ভর্তি করে খাওয়াবে। হুযূর (সা.) বললেন, পেট ভর্তি করে খাওয়ানো জরুরি নয়, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে একটি খেজুর দ্বারা ইফতার করাবে, আল্লাহ পাক তাকেও উক্ত সাওয়াব প্রদান করবেন।

হুযূর (সা.) আরও বলেন, তা এমন একটি মাস যার প্রথম দিকে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়, দ্বিতীয়াংশে মাগফেরাত ও তৃতীয়াংশে দোযখ হতে মুক্তি দেয়া হয়। যে ব্যক্তি উক্ত মাসে আপন গোলাম ও মজদুর হতে কাজের বোঝা হালকা করে দেয় আল্লাহ পাক তাকে মাফ করে দিবেন, এবং দোযখের অগ্নি হতে নাজাত দান করবেন। হুযূর (সা.) আরও বলেন, চার কাজ রমযানে বেশি করে করবে। দুই কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং দুই কাজ যা না করে তোমাদের উপায় নেই। প্রথম এই যে, কালেমা তাইয়্যেবা ও আস্তাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি করে পড়বে। দ্বিতীয় দুই কাজ এই যে, আল্লাহর নিকট বেহেশতের প্রার্থনা করবে ও দোযখ হতে পানাহ চাইবে। যে ব্যক্তি এই মাসে কোন রোযাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিবসে তাকে আমার হাউসে কাওছার হতে এরকম পানি পান করাবেন, যার পর বেহেশতে প্রবেশ পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (বায়হাকী)।

হযরত আবু হোরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন রমযান মাস আসে, আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে, বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। অপর বর্ণনায় আছে, রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়।
ব্যাখ্যাঃ আসমানের দরজা সমূহ বা বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় মানে আল্লাহর বিশেষ রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। তৃতীয় বর্ণনায় এটা পরিষ্কারভাবে আছে। দোযখের দরজা বন্ধ করা হয় বা শয়তানকে আবদ্ধ করা হয় মানে দুনিয়াতে তখন গোনাহ হয় না।

হযরত সালেহ্ বিন সা’দ (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, বেহেশ্তে আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোযাদার ব্যতীত ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের নিয়্যাতে রমযানের রোযা রাখবে, তার পূর্বের ছগীরা গুনাহসমূহ মাফ করা হবে এবং যে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের নিয়্যাতে রমযানের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে, তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করা হবে। আর যে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের নিয়্যাতে ক্কদরের রাত্রি কাটাবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বলেন, মানব সন্তানের নেক আমল বাড়ানো হয়ে থাকে প্রত্যেক নেক আমল দশগুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত, কেবল রোযা ব্যতীত। কারণ, রোযা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিফল দান করব (যত ইচ্ছা তত)। বান্দা আমারই জন্য আপন প্রবৃত্তি ও খানা পিনা ত্যাগ করে।

রোযাদারের জন্য দুইটি (প্রধান) আনন্দ রয়েছে। একটি তার ইফতারের সময় এবং অপরটি বেহেশ্তে আপন পরওয়ারদিগারের সাথে সাক্ষাত লাভের সময়। নিশ্চয় রোযাদারে মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের খোশবু অপেক্ষাও অধিক সুগন্ধময়। রোযা হচ্ছে মানুষের জন্য দোযখের আগুন হতে রক্ষার ঢাল স্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারও রোযার দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে আমি একজন রোযাদার। (বুখারী ও মুসলিম)।

উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক ইবাদত আল্লাহর জন্য। তবে তা লোক দেখানোর জন্যও কেউ করতে পারে। যথা- নামায। কিন্তু রোযা কেউ লোক দেখানোর জন্য করতে পারে না। কেননা গোপনে কিছু খেতে একমাত্র আল্লাহর ভয় ছাড়া আর কিছুই তাকে বাধা দেয় না। অতএব, আল্লাহ নিজ হাতেই তাকে পুরস্কার দান করবেন। আর দাতা যখন নিজ হাতে দান করেন, বেশিই দান করেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যখন রমযান মাসের প্রথম রাত্রি আসে, শয়তান এবং অবাধ্য জ্বীনদের সকলকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। অতঃপর তার কোন দরজাই খোলা হয় না এবং বেহেশ্তের দরজাসমূহ খোলা হয়। অতঃপর তার কোন দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহবানকারী আহবান করতে থাকে যে, হে ভালোর অন্বেষণকারী অগ্রসর হও, হে মন্দের অন্বেষণকারী থাম। আল্লাহ তাআলা এই মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ হতে মুক্তি দেন, আর এটা প্রত্যেক রাত্রেই হয়ে থাকে”। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ্ ও আহমাদ)।

তিন ব্যক্তির জন্য হুযূরের বদ-দুআ: হযরত কা’ব বিন উজরা (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে। একদা নবীয়ে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন। তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা হাজির হলাম। অতঃপর হুযূর (সা.) মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা মোবরক রাখলেন এবং বললেন, আমীন। অর্থাৎ আল্লাহ তুমি কবুল করো। আবার যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠলেন, বললেন- আমীন, খুতবা শেষে হুযূর (সা.) যখন মিম্বর হতে অবতরণ করেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম- হুযূর! অদ্য মিম্বরে উঠার সময় যা কিছু শুনলাম ইতঃপূর্বে তা কখনও শুনিনি।

হুযূর (সা.) ইরশাদ করলেন, এইমাত্র জিব্রাইল (আ.) আমার নিকট আসলেন। যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমযান পাইল অথচ তার গোনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম- আমীন, অর্থাৎ তাই হোক। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হউক ঐ ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম লওয়া সত্ত্বেও সে আপনার দরুদ পড়ল না। আমি বললাম- আমীন।

আবার তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেই জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যার মাতা-পিতা অথবা উভয়ের একজন বার্ধক্যে পৌঁছেছে, অথচ সে তাদেরকে জান্নাতে পেঁৗঁছাতে পারল না, তদুত্তরে আমি বললাম, আমীন। অর্থাৎ- আল্লাহ তুমি কবুল করো। (হাকেম)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত। হুযূরে আকরাম (সা.) বলেন, পবিত্র রমযান উপলক্ষে আমার উম্মতকে পাঁচটি মর্যাদা দেয়া হয়। প্রথমত: রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ আমার নিকট মৃগনাভী হতেও বেশি পছন্দনীয়। দ্বিতীয়ত: সমুদ্রের মৎসও রোযাদারের জন্য ইফতার পর্যন্ত দুআ করতে থাকে। তৃতীয়ত: বেহেশত প্রতিদিন তাদের জন্য সজ্জিত করা হয় এবং আল্লাহ পাক বলেন, বান্দা দুনিয়ার ক্লেশ যাতনা দূরে নিক্ষেপ করে অতি শীঘ্রই তোমার নিকট আসছে। চতুর্থত: রমযানে দুর্বৃত্ত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। যার দরুন সে ঐ সব পাপ করাতে পারে না, যা অন্য মাসে করানো সম্ভব। পঞ্চমত: রমযানের শেষ রাতে রোযাদরের গোনাহ মা’ফ হয়ে যায়। (আহমদ, বায়হাকী)।

ইসলামের যুগ হতে এই যুগ পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমান রোযা ফরয বলে বিশ্বাস করে এবং তা পালন করে আসছেন। তাছাড়া যুক্তির দিক দিয়েও রোযা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয। যথা- (ক) রোযা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। আর যাকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করা হয়েছে, তার নির্দেশ পালন করা যুক্তিযুক্ত। (খ) রোযা দ্বারা সংযম শিক্ষা করা হয়। আর সংযম হলো একটি বাঞ্ছনীয় প্রশংসনীয় বিষয়। (গ) আল্লাহ তাআলা যে মানুষকে পানাহার করার ও যৌন ক্ষুধা মিটাবার সামগ্রী দান করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা আদায় করার জন্য তার নির্দেশে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আহার ইত্যাদি হতে বিরত থাকা যুক্তিসঙ্গত কথা।

রোযার উদ্দেশ্য: বিষপানে যেরূপ বাহ্যিক জীবনের অবসান হয়, পাপানুষ্ঠানেও তদ্রƒপ মানবতার মৃত্যু ঘটে। সারা বৎসরে এক মাস পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থেকে পাপ প্রবৃত্তির সংযম সাধনই রোযার উদ্দেশ্য। এ জন্য রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রোযা রেখে মিথ্যা কথা ও মিথ্যাচার ত্যাগ করেনি, তার এই রোযাতে আল্লাহ্র কোন কাজ নেই।

রোযার উপকারিতা: রোযা মানুষের দেহ ও আত্মার নানাবিধ উপকার সাধন করে থাকে। রোযার দ্বারা মানুষের আত্মার পবিত্রতা ও চিন্তা শক্তির প্রখরতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আবহমানকাল হতে ধার্মিকগণ উপবাস করতে এবং সুফি সাধকদেরকে রোযা রাখতে দেখা যায়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানেও এর বিশেষ উপকারিতা স্বীকৃত হয়েছে। ডা. সলোমান তার গার্হস্থ্য বিধিতে মানব দেহকে ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করে বলেন, ইঞ্জিন রক্ষা কল্পে মধ্যে মধ্যে ডকে নিয়ে চুল্লি হতে ছাই ও আঙ্গার সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশিত করা যেমন আবশ্যক, উপবাস দ্বারা মাঝে মধ্যে পাকস্থলি হতে অজীর্ণ ও বর্জ্য নিষ্কাশিত করাও তেমনটা দরকার।

রোযা কি মানব শরীরে কোন ক্ষতি করে: ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজে ডা. গোলাম মোয়াজ্জাম সাহেব কর্তৃক মানব শরীরের উপর রোযার প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা চালানো হয়। তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কেবল ওজন সামান্য কমে, তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নয়। বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এই রূপ রোযা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ তথা ডায়েট কন্ট্রোল অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। তৎকর্তৃক ১৯৬০ সালে গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে থাকে যে, রোযা দ্বারা পেটের শূল বেদনা বৃদ্ধি পায় তাদের এই ধারণা নিতান্তই অবৈজ্ঞানিক। কারণ, উপবাসে পাকস্থলির এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে- এই অতি কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূল বেদনা রোগীকে রোযা রাখতে নিষেধ করেন।

১৭ জন রোযাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলিতে এসিড খুব বেশি বা খুব কম, রোযার পরে তাদের এই উভয় দোষই সেরে গেছে। এই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন যে, রোযা দ্বারা রক্তের পটাশিয়াম কমে যায় এবং তাদের শরীরের ক্ষতি সাধিত হয়, তাদের এই ধারণাও অমূলক। কারণ পটাশিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া কম দেখা দিয়ে থাকে হৃদপিন্ডের উপর অথচ ১১ জন রোযাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রোকার্ডিগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোযার পূর্বেও রোযা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোযা দ্বারা এদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটেনি।

সুতরাং বুঝা গেল যে, রোযা দ্বারা রক্তের যে পটাশিয়াম কমে, তা অতি সামান্য স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে রোযা দ্বারা যে কোন মানুষ কিছুটা খিটখিটে মেজাজ হয়ে যায় তা রক্ত-শর্করা কমার দরুনই- যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও ক্ষতিকর নয়। অন্য সময় ক্ষুধা পেলেও এরূপ হয়ে থাকে। (চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগের দান)।

এক কথায় রোযা মানব শরীরের কোন ক্ষতি সাধন করে না। বরং তা নানাবিধ উপকারই করে থাকে। এছাড়া সফরের মুসাফিরকে এবং যুদ্ধের ময়দানে সেনানীকে পানাহার কষ্ট সহ্য করতে অভ্যস্ত করে তোলে এবং নায-নিয়ামতে ডুবন্ত বড়লোকদিগকে অনাহারক্লিষ্ট দীন দরিদ্রের ক্ষুৎ-পিপাসার কষ্ট উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।

রোযা পূর্বেও ফরয ছিল: উপর্যুক্ত প্রথম আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, রোযা পূর্বের উম্মতগণের প্রতিও ফরয ছিল। যদিও বিস্তারিতভাবে একথা জানা যায়নি যে, কোন উম্মতের উপর রোযা কত দিন বা কোন মাসে ফরয ছিল। এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটেনিকাতে বলা হয়েছে, জলবায়ু, জাতি-ধর্ম ও পারিপার্শ্বিকতাভেদে রোযার নিয়ম পদ্ধতি ভিন্ন হলেও এমন কোন ধর্মের নাম উল্লেখ করা কঠিন, যে ধর্মের ধর্মীয় বিধানে রোযার আবশ্যকতা স্বীকার করা হয়নি।

রোযার অস্বীকার: রোযার ফরযিয়ত তথা আবশ্যকতা যেহেতু কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত, অতএব রোযা অস্বীকার করা কুরআন ও হাদীসকে অস্বীকার করার নামান্তর এবং স্পষ্ট কুফরি। যে রোযাকে বিশ্বাস করে কিন্তু তা পালন করে না, সে ফাসেক, পূর্ণ মুসলমান নয়। ইসলামের একটি মূল স্তম্ভকে বাদ দিয়ে পূর্ণ মুসলমান বলে দাবি করার অধিকার তার নেই এবং থাকতে পারে না।

রোযার প্রকার: ১। ফরয রোযা; যা রমযান মাসে আদায় করা হয়ে থাকে। চাই তা রমযান মাসে আদায় করা হোক বা কাযা করা হোক। ২। ওয়াজীব রোযা; যেমন- মান্নত, কাযা ও নফল রোযা ইত্যাদি রেখে ভেঙ্গে ফেললে। ৩। নফল রোযা; যথা- উল্লিখিত রোযা ছাড়া যে কোন সময় রোযা রাখা। ৪। সুন্নাত; শাওয়ালের ছয় রোযা, আরাফার দিনের রোযা ইত্যাদি। ৫। আইয়্যামে-বিজ ইত্যাদির রোযা।

রোযা কোন ব্যক্তির উপর ফরযঃ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী, যিনি সুস্থ মস্তিকের অধিকারী হবেন, তাদের উপর রমযান শরীফের রোযা ফরয। তবে হায়েয-নিফাস, মুসাফির, অসুস্থ ব্যক্তির উপর রমযানের রোযা আদায় তাৎক্ষণিক ফরয নয় বটে, তবে কাযা আদায় করতে হবে।

যে সমস্ত দিনে রোযা রাখা নিষেধ

(১) ঈদুল ফিত্রের দিন। (২) ঈদুল আযহার দিন। (৩) আইয়্যামে তাশরীকের তিন দিন। অর্থাৎ- বছরে মোট ৫ দিন রোযা রাখা নিষেধ। ঐসব দিনে কোন ব্যক্তি রোযার নিয়ত করে রোযা রাখলে তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং পরবর্তীতে ক্বাযা রাখবে। এভাবে ঐ দিনসমূহে মান্নত মানলে তা অন্য দিনে পুরো করতে হবে।

রোযার নিয়ত: * রোযার জন্য নিয়ত মুখে বলা বা উচ্চারণ করা জরুরি নয়। বরং মনে মনে এই ইচ্ছা করলে হয়ে যাবে যে, আমি কালকে রোযা রাখব। রমযান মাসে ফরয রোযা রাখার সময় “রমযানের ফরয রোযা রাখছি”, এটা বলা জরুরি নয়। বরং রোযা রাখছি বা রাখব, বললেই হয়ে যাবে।

ক্বাযা, মান্নত কাফ্ফারার রোযার মধ্যে তা নির্দিষ্ট করা জরুরি। আর নফল রোযার মধ্যে শুধু রোযার নিয়ত করলে হয়ে যাবে।

কোন ব্যক্তি সারা দিন কিছু খায়নি, রোযার নিয়াতও করে নাই, তার রোযা আদায় হবে না।

রমযানের রোযার নিয়াত যদি কোন লোক মাসের শুরুতেই একসাথে করে নেয় এবং প্রতি দিন আলাদা নিয়াত ছাড়া রোযা রাখে, তার রোযা আদায় হয়ে যবে।

যদি কেউ রোযা রাখার আগের দিন বা রাত্রের যে কোন সময়, এমনকি রোযার দিন দুপুর হওয়ার এক ঘন্টা পূর্বে পর্যন্ত কোন ধরনের পানাহার না করে নিয়াত করলেও রোযা আদায় হয়ে যাবে।

একইভাবে রমযান মাসে যার উপর রমযানের রোযা ফরয, ঐ ব্যক্তি রমযানের দিনে নফল, কাযা বা মান্নতের নিয়াতে রোযা রাখলেও তা রমযানের রোযা হিসেবে আদায় হয়ে যাবে।

চাঁদ দেখার মাসআলা:
আসমান যদি মেঘাচ্ছন্ন হয়, তবে রমযানের চাঁদ প্রমাণ হওয়ার জন্য কম পক্ষে একজন দ্বীনদার মুসলমান সাক্ষী দিতে হবে। আর ঈদের চাঁদের প্রমাণের জন্য কমপক্ষে দুই জন দ্বীনদার পুরুষ সাক্ষী দিতে হবে।

আসমান পরিষ্কার থাকলে এক বড় জামাতের সাক্ষীর প্রয়োজন হবে।

চাঁদ দেখার ব্যাপারে ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হবে না।

যদি রমযানের চাঁদ একজন দেখে থাকে। যদি তার সাক্ষ্য শরীয়ত সম্মত মকবুল না হয়, তার সাক্ষের উপর শহরবাসীদের রোযা রাখতে হবে না, কিন্তু যে দেখেছে, তার রোযা রাখতে হবে।

শাবানের ২৯ তারিখ যদি রমযান শরীফের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সকলে রোযা রাখবে। আর যদি চাঁদ দেখা না যায়, অথবা আসমানে মেঘ হয়, যার কারণে চাঁদ দেখার সুযোগ না থাকে, তাহলে রোযা রাখবে না। যেহেতু হাদিস শরীফে তার নিষেধ এসেছে। বরং শাবানের ৩০ দিন পুরো করে রমযানের রোযা শুরু করবে।

শাবানের ২৯ তারিখ যখন চাঁদ দেখা যাওয়া নিয়ে সন্দেহ হয়, দুপুরের এক ঘন্টা আগ পর্যন্ত রোযার নিয়ত ব্যতিত কোন কিছু না খেয়ে অপেক্ষা করবে। এ সময়ের মধ্যে যদি চাঁদ দেখার সঠিক গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া না যায়, তাহলে রোযার নিয়ত করবে না, বরং খাবার খেয়ে নিবে।

আরও পড়তে পারেন-

২৯ শাবান সন্দেহযুক্ত (ইয়াওমুশ্ শক) দিনে এই নিয়্যাতে রোযার নিয়ত করা যে, কাল রমযান হলে রমযানের রোযা, না হয় কাযা বা নফল বা কাফ্ফারার রোযা হবে, এভাবে রোযা রাখা মাকরূহ।

কিন্তু কেউ ইয়াওমুশ্শকে নফল রোযার নিয়ত করে রোযা রাখার পর মাকরূহের কথা শুনল, তখন তার রোযা ভেঙ্গে ফেলাই ভাল হবে। তবে পরে তাকে নফল রোযার ক্বাযা করতে হবে।

যে ব্যক্তি সব সময় প্রতি মাসের নির্ধারিত দিনে রোযা রাখে, যদি তার সেই নির্ধারিত দিন ইয়াওমুশ্শক হয়ে যায়, তবে তার জন্য উক্ত দিনে রোযা রাখা মাকরূহ হবে না।

একই ভাবে শরীয়তে বিশিষ্ট ব্যক্তি, যেমন- মুফ্তী, ক্বাযী, মুক্বতাদা ও ওলামায়ে কিরামের জন্য ইয়াওমুশ্ শকের দিন রোযা রাখা মাকরূহ্ নয়।

কোন ব্যক্তি ২৯ শা’বান তার পূর্ব অভ্যাস হিসেবে রোযা রাখল। পরে প্রমাণ হল যে, সে দিন ১ রমযান ছিল, তার সে নফল রোযা ফরয হিসেবে আদায় হয়ে যাবে।

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়:
(১) নাকে এবং কানে ঔষধ প্রবেশ করালে। (২) ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভর্তি বমি করলে। (৩) কুলি করার সময় গলার ভেতর পানি চলে গেল। (৪) নারী স্পর্শ ইত্যাদি কারণে বীর্য নির্গত হলে। (৫) খাদ্য হিসাবে গণ্য নয় এমন বস্তু গিলে ফেললে। (৬) আগর বাতির ধোঁয়া ইত্যাদি ইচ্ছা করে নাক অথবা গলার মধ্যে প্রবেশ করালে এবং বিড়ি সিগারেট পান করলে। (৭) ভুলক্রমে খানা খাওয়ার পর রোযা ভঙ্গ হয়ে গেছে মনে করে পূণরায় ইচ্ছা করে খানা খেলে। (৮) রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরী খেলে। (৯) দিন বাকী থাকতে সূর্য প্রায় ডুবে গেছে মনে করে ইফতার করলে। উপরোল্লিখিত কর্মগুলো দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। এসব কারণে রোযা ভঙ্গ হলে ক্বাযা করা ওয়াজিব, কিন্তু কাফফারা ওয়াজিব নয়।

(১০) ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস বা পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য ক্বাযা ও কাফফরা দুটোই ওয়াজিব। (১১) দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি থুথুর সঙ্গে রক্ত গিলে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হবে। কিন্তু রক্তের পরিমাণ থুথুর চেয়ে কম হলে, যাতে রক্তের স্বাদ পাওয়া যায় না, তবে রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, বেহেশ্তী জেওর ২৬১)।

(১২) রোযা অবস্থায় পেশাবের রাস্তায় কোন ঔষধ রাখা অথবা তেল ইত্যাদি প্রবেশ দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে না।
(১৩) ধাত্রী যদি প্রসূতির প্রসব দ্বারে আঙ্গুল প্রবেশ করায়, কিংবা কোন মহিলা নিজেই নিজের যৌনাঙ্গে আঙ্গুল প্রবেশ করায়, অতঃপর সম্পূর্ণ আঙ্গুল বা কিয়দাংশ বের করার পর আবার ঢুকালে রোযা ভঙ্গ হবে না, যদি বীর্য বের না হয়।

(১৪) দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্য যদি ছনার ডাল বা তদপেক্ষা বড় হয়, তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে। ডালের চেয়ে ছোট হলে ভঙ্গ হবে না। আর মুখের বাহির থেকে অল্প ছোট জিনিসও মুখে দেওয়ার পর তা পেটে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

(১৫) যদি কেউ সাহরী খেয়ে পান মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে ঘুমিয়ে পড়ে এবং পান মুখে থাকা অবস্থায় প্রভাত হয়ে যায়, তবে তার রোযা শুদ্ধ হবে না। রোযা ক্বাযা করতে হবে।
(১৬) কাউকে জোরপূর্বক কিছু আহার করিয়ে দিলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করতে হবে, কাফ্ফরা ওয়াজিব নয়। (আলমগীরী ২/২)।

কাফফরা:
কাফফরা হচ্ছে একটি গোলাম মুক্ত করা অথবা ষাটটি রোযা একাধারে রাখা, তন্মধ্যে একটি রোযা ভঙ্গ হয়ে গেলে পুনরায় শুরু থেকে ষাটটি রোযা রাখতে হবে। যদি রোযা রাখার শক্তি না থাকে তবে ষাট জন মিসকিনকে দুবেলা পেট ভরে খানা খাওয়াতে হবে। বর্তমানে যেহেতু গোলাম-বাঁদীর প্রচলন নেই, তাই রোযা রাখা বা মিসকীন খাওয়ানোর নিয়ম দুটিই প্রযোজ্য।

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না বরং মাকরুহ হয়: (১) বিনা কারণে জিনিস চিবানো বা লবণ ইত্যাদির স্বাদ দেখার জন্য মুখে দিয়ে ফেলে দেওয়া, টুথপেষ্ট, মাজন কয়লা, ইত্যাদি দ্বারা দাঁত পরিস্কারা করা মাকরুহ। কিন্তু গলার ভেতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া- ৪/৪২৯)।

(২) গোসল ফরয অবস্থায় সারাদিন গোসল না করে থাকা। (৩) সিঙ্গা লাগানো অথবা কোন রোগীকে রক্ত দান করা, যা সিঙ্গা লাগানোর অন্তর্ভুক্ত। (৪) পরনিন্দা চর্চা করা এহেন বদভ্যাস সর্বৌতভাবে পরিতাজ্য তথা হারাম। রোযার দিনে পরনিন্দা চর্চা ততোধিক গোনাহের কাজ।

(৫) ঝগড়াঝাটি বা কোন কারণে মানুষ কিংবা প্রাণী জড়পদার্থ ইত্যাদিকে গালি দেওয়া। (৬) রোযাদার মহিলার জন্য ঠোটে রঙিন জিনিস লাগানো জায়েয বটে, কিন্তু তা মুখের ভিতরে প্রবেশ করার আশংকা থাকলে মাকরুহ। (আহসানুল ফাত্ওয়া- ৪/৪২৫)।

(৭) রোযা রাখা অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। কিন্তু রক্ত বের করার কারণে যদি এতই দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে যে, রোযা রাখার শক্তিই হারিয়ে ফেলবে তাহলে মাকরুহ হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া- ৪/৪২৫)।

(৮) রোযা অবস্থায় দাঁত উঠানো দাঁতে ঔষধ ব্যবহার করা একান্ত প্রয়োজনে জায়েয, কিন্তু বিনা প্রয়োজনে মাকরুহ। যদি রক্ত অথবা ঔষধ পেটের মধ্যে প্রবেশ করে অথবা যদি থুথুর চেয়ে তা বেশী বা সমপরিমাণ হয়ে যায়, অথবা যদি রক্ত এবং ঔষধের সমপরিমাণ স্বাদ অনুভূত হয়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। (দূররুল মুখতার- ৪/৪২৭)।

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ বা মাকরুহ হয় নাঃ
(১) মিসওয়াক করলে (২) চুল, দাঁড়ি, গোঁফে তেল লাগালে (৩) চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করলে। (৪) গরমের কারণে বা পিপাসায় গোসল করলে। (৫) খোশবু ব্যবহার বা তার ঘ্রাণ গ্রহন করলে। (৬) কোন প্রকার ইনজেক্শন বা টিকা দিলে (৭) ভুলক্রমে পানাহার করে ফেললে (৮) অনিচ্ছা সত্ত্বেও গলায় ধূলাবালি অথবা মাছি ইত্যাদি ঢুকে গেলে (৯) কানে পানি প্রবেশ করলে। তবে কানের পর্দা ফাটা হলে পানি প্রবেশের কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (১০) এমনিতেই বমি হলে (১১) স্বপ্নদোষ হলে (১২) দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত বের হলে, তবে যদি তা গলার মধ্যে প্রবেশ না করে তাহলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না (১৩) সাপ বিচ্ছু দংশন করলে। (১৪) শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ঔষধ বা রক্ত প্রবেশ করালে। (১৫) শরীরের যে কোন স্থান হতে রক্ত বের হলে। (১৬) শরীরের কোন অঙ্গ কেটে গেলে। (ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া)।

যে সব কারণে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে: (১) কোন প্রকার অসুখের কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় হলে রোযা ভঙ্গ করা বৈধ, কিন্তু পরে তা ক্বাযা করতে হবে। (২) গর্ভবতী স্ত্রীলোকের সন্তান বা নিজের প্রাণনাশের আশংকা হলে রোযা ভঙ্গ করা বৈধ, কিন্তু পরে তা ক্বাযা করতে হবে। (৩) যে সব স্ত্রী লোক নিজের বা অপরের সন্তানকে দুগ্ধ পান করান, তাদের যদি রোযা রাখার ফলে দুগ্ধ না আসে বা সন্তানের কষ্ট হয়, তবে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পরে ক্বাযা করতে হবে। (৪) শরীয়ত সম্মত মুসাফির অর্থাৎ শরয়ী ৪৮ মাইল দূরে সফর করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয়, তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। সফর অবস্থায় রোযা রাখতে কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম।

(৫) রোযা রাখা অবস্থায় সফর শুরু করলে তা পুরা করা জরুরী আর সফর অবস্থায় পানাহার করে বাড়ী ফিরে আসার পর দিনের কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকলে পানাহার থেকে বিরত থাকবে, কোন কিছু পানাহার না করা অবস্থায় সূর্য ঢলে পড়ার দেড় ঘন্টা পূর্বে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে নিয়ত করে রোযা রাখতে হবে। (৬) কেউ হত্যার হুমকি দিয়ে রোযা ভঙ্গে বাধ্য করলে রোযা ভেঙ্গে ফেলবে, পরে তার ক্বাযা করবে। (৭) কোন রোগীর ক্ষুধা বা তৃষ্ণা এমন বৃদ্ধি পেয়েছে যাতে কোন মুসলমান দ্বীনদার ডাক্তার বলেন যে, রোযা ভঙ্গ না করলে মৃত্যুর আশংকা রয়েছে, তাহলে রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তার ক্বাযা আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, রোগী, মুসাফির ও হায়েয নিফাসওয়ালা স্ত্রীলোক, যাদের ভঙ্গের অনুমতি আছে রোযার সম্মান রক্ষার্থে পানাহার না করা বাঞ্ছনীয়।

ইফতার: সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ণ ইয়াক্বীন হলে ইফতার করতে বিলম্ব করা মাকরূহ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে যদি সন্দেহের উদ্রেক হয় তাহলে দু’চার মিনিট বিলম্ব করা ভাল। এতদ্ব্যতীত সূর্যাস্তের নির্দিষ্ট সময় থেকে তিন মিনিট সতর্কতামূলক বিলম্ব করা সর্বাপেক্ষা উচিত।

খেজুর ও খুরমা দ্বারা ইফতার করা উত্তম। হুযূর (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, এটা খুবই বরকতময়। খেজুর একটি পূর্ণাঙ্গ সুন্নাত। খেজুর ব্যতীত অন্যান্য দ্রব্য দ্বারা ইফতার করা মাকরূহ নয়। ইফতারের সময় নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নাত। দোয়াটি হচ্ছে-
اللَّهُمَّ لَکَ صُمْتُ وَ عَلَی رِزْقِکَ أَفْطَرْتُ
উচ্চারণ- “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিয্ক্বিকা আফ্তারতু”। এছাড়াও আরো অনেক দোয়া বিভিন্ন রেওয়াতে দেখা যায়।

হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করিয়েছে অথবা কোন গাযীকে জেহাদের সামগ্রী দান করেছে, তার জন্যও তার অনুরুপ সাওয়াব রয়েছে। (বাইহাকী, মিশকাত)।

হযরত সালমান বিন আমের (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তা হল পবিত্রকারী। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার নিকট অধিক প্রিয় তারাই, যারা শীঘ্র ইফতার করে। (তিরমিযী, মিশকাত)।

তারাবীহ:
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা নিশ্চয় জানিও যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রমযান শরীফের রোযা ফরয করেছেন এবং তার রাত্রে তারাবীহর নামায সুন্নাত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি খালেছ নিয়তে ঈমানের সাথে শুধু সাওয়াবের আশায় এই মাসে দিনের বেলায় রীতিমত রোযা রাখবে এবং রাত্রিতে রীতিমত তারাবীহ্র নামায পড়বে, তার বিগত সব (ছগীরা) গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। (বেহেশতী জেওর)।

১। পবিত্র রমযান মাসে ইশা’র নামাযের ফরয ও সুন্নাতের পর বিশ রাকাত তারাবীহ্র নামায নারী-পুরুষ সবার উপর সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। পুরুষগণ তারাবীর নামায মসজিদে জামাতে আদায় করবে এবং মহিলাগণ ঘরে একাকী আদায় করবে।

২। তারাবীর জামাত সুন্নাতে কিফায়া। যদি মহল্লার মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং এমতাবস্থায় কেউ যদি নিজ গৃহে পৃথকভাবে তারাবীহ পড়ে ফেলে, তাহলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। যদিও সে ব্যক্তি জামাত ও মসজিদের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। আর মহল্লার কোথায়ও যদি জামাত অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে সকলেই সুন্নাত পরিত্যাগ করার গুনাহে গুনাহ্গার হবে।

৩। তারাবীহ্তে সমস্ত কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নাত। কোথাও কুরআনের হাফেয পাওয়া না গেলে, হাফেয সাহেব কুরআন শরীফ শোনানোর জন্য পারিশ্রমিক চাইলে ছোট ছোট সূরা দ্বারাই তারাবীহর নামায আদায় করে নিতে হবে। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন শরীফ শ্রবণ কোনক্রমেই কাম্য নয়। কেননা, কুরআন শোনানোর জন্য পারিশ্রমিক দেয়া-নেয়া দু’টোই হারাম।

৪। যদি কোন হাফিয সাহেব কোন মসজিদে বিশ রাকাত তারাবীহ্ পড়ে থাকেন, তাহলে একই রাতে সে হাফিয সাহেবের জন্য অন্য মসজিদে তারাবীহ পড়া হারাম।

৫। কারো দু’চার রাকাত তারাবীহ্ বাকী রয়ে গেলে যদি ইমাম সাহেব বিতিরের জামাত পড়তে দাঁড়িয়ে যান, তাহলে তিনি বিতিরের জামাতে শামিল হয়ে যাবেন এবং অবশিষ্ট তারাবীহ পরে পড়ে নিবেন। তবে কেউ বিতিরের পূর্বে অবশিষ্ট তারাবীহ্ পড়তে চাইলে তাও পারবে।

৬। কুরআন শরীফ এমন দ্রুত পাঠ করা, যার দরুন হরফ বাদ পড়ে যায়, গুনাহের কাজ। এমতাবস্থায় ইমাম ও মুক্তাদি কারো কোন সাওয়াব হবে না।

৭। জমহুর উলামাদের ফাতওয়া অনুসারে কোন অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বালককে তারাবীর ইমাম বানানো জায়েয নয়। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ- ১/৩৮২)।

সাহরী:
হযরত ইরবাজ ইবনে ছারিয়া (রাযি.) বলেছেন, একদা রমযানে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে সাহরী খেতে ডাকলেন এবং বললেন এসো এই মোবারক খানার দিকে। (আবু দাউদ, মিশকাত)।

হযরত আনাস (রাযি.) বলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরী খাবে, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে (বুখারী, মুসলিম)।

হযরত আমর ইবনে আস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাদের রোযাও আহলে কিতাবদের (ইহুদী-খ্রীস্টান) রোযার মধ্যে পার্থক্য হল, সাহ্রী খাওয়া (মুসলিম-মিশকাত)।

রোযাদার ব্যক্তির জন্য রাতের শেষভাগে সুবহে সাদিকের পূর্বে সাহরী খাওয়া সুন্নাত এবং বিশেষ বরকতময়। রাতের প্রথমার্ধ অতিক্রান্তের পর যখনই পানাহার করবে সাহ্রী ভক্ষণের সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু রাতের শেষাংশে খাওয়া উত্তম। মুয়ায্যিন যদি সুবহে সাদিকের পূর্বেই আযান দিয়ে দেয়, তাহলে সাহরী খেতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই, যতক্ষণ না সুবহে সাদিক হবে, সাহরী খাওয়ার পর রোযার নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট। তবে মুখদ্বারা নিন্মোক্ত বাক্য বলা উত্তম-
بِصَوْمِ غَدٍ نَوَیْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ

উচ্চারণ- “বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহ্রি রামাযান”। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ- ১/৩৮১ পৃষ্ঠা)।
উল্লেখ্য যে, সাহরীর নিয়্যাতে এক গ্লাস পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।

নামায, রোযা ইত্যাদির ফিদইয়া:
১। মাসআলা: কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় নামায রোযা ইত্যাদি কাযা করে থাকলে মৃত্যুর পর তার ফিদইয়া বা কাফফারা দেওয়ার জন্য ওসীয়্যাত করা ওয়াজিব।

২। মাসআলা: যে ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদির ওসীয়্যাত করে যায়, তার অছিয়ত যদি পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের অধিক সম্পদের উপর হয়, তাহলে এক তৃতীয়াংশ দিয়ে ওসীয়্যাত আদায় করার পর অবশিষ্ট ওসীয়্যাতের বাস্তবায়ন সমস্ত অংশীদারদের অনুমতি সাপেক্ষে হতে হবে। তাদের সকলে কিংবা একজনের কেউ অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক হলে তার অনুমতি গ্রহনযোগ্য নয়। বিধায় এক তৃতীয়াংশের অধিক সম্পদের উপর কৃত ওসীয়্যাত নাবালকের অংশ থেকে কার্যকর করা যাবে না। (হিদায়া, আলমগীরী, শামী দ্রষ্টব্য)।

৩। মাসআলা: যে ব্যক্তি ওসিয়ত করেছে এবং এই পরিমাণ সম্পদ রেখে গেছে যে, সে সম্পদের এক তৃতীয়াংশের দ্বারা সমস্ত অসিয়ত পূর্ণ হতে পারে, তাহলে অংশীদারদের উপর এ অসিয়ত পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য। যদি তাতে অবহেলা করে অথবা মৃত ব্যক্তির সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তার নামায, রোযা ইত্যাদির ফিদ্য়াকে কৌশলগত ভাবে টালবাহানার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে বন্টন করে নেয়, তাহলে সকলেই গুনাহ্গার হবে।

৪। মাসআলা: অসিয়তের বেলায় অবশ্যম্ভাবী (অসিয়ত) এবং অবশ্য পালনীয় (ফরায়েয) কার্যসমূহ পূর্ণ করার নিয়মে নিম্নে বর্ণিত হলো।

(ক) প্রতিদিনের বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাযের ফিদ্য়া (এক ওয়াক্ত নামাযের ফিদ্য়া পৌনে দুই সের গম অথবা তৎমূল্য, অর্থাৎ এক দিনের নামাযের ফিদ্য়া হচ্ছে সাড়ে দশ সের গম অথবা তৎমূল্য) দিতে হবে।

(খ) প্রত্যেক রোযার ফিদ্য়া পৌনে দুই সের গম অথবা তৎমূল্য। রমযান মাসের রোযা ছাড়াও নযর এবং মান্নতের রোযার ফিদ্য়া একই পরিমাণ দিতে হবে।

(গ) যে কয় বৎসরের এবং যে পরিমাণ সম্পদের যাকাত বাকী রয়েছে, সেগুলো কড়ায় গন্ডায় হিসেব করে আদায় করতে হবে।

(ঘ) ফরয হজ্জ অনাদায়ী থাকলে মৃতের পরিবারের অন্য কাউকে পাঠিয়ে বদলী হজ্জ করাতে হবে এবং তার ভাড়া ও সমস্ত প্রয়োজনাদীর খরচ বহন করতে হবে।

(ঙ) অসিয়তকারী যদি কারো কাছে ঋণগ্রস্থ থাকে, তাহলে ঋণ দাতার প্রাপ্য অনুসারে তা পরিশোধ করতে হবে।

(চ) যতগুলো ফিত্রা বাকী রয়েছে প্রত্যেকটির পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম বা তৎমূল্য আদায় করতে হবে।

(ছ) যদি কুরবানী অনাদায়ী থাকে, তাহলে অনাদায়ী বছর ছাগল অথবা গরুর সাতভাগের এক অংশের মূল্য পরিমাণ সাদ্কা করে দিতে হবে। (মুনিয়াতুল জলিল)।

(জ) যদি তিলাওয়াতে সিজ্দা বাকী থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে সাবধানতা হচ্ছে প্রত্যেক সিজদার পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম আথবা তৎমূল্য সাদক্বা করে দেয়া।

(ঝ) যদি কাযা নামায এবং রোযার সঠিক হিসাব জানা না থাকে, তাহলে অনুমান করে হিসাব করতে হবে।

(ঞ) কাফফারার জন্য প্রত্যেক মিসকিনের দুইবেলা পেটভরে খাওয়ানো আবশ্যক, একবেলা খাওয়ালে কাফ্ফারা আদায় হবে না। যাদেরকে একবেলা খাওয়ানো হয়েছে, তাদেরকেই দ্বিতীয় বেলা খাওয়ানো ওয়াজিব। একই দিনে হোক বা অন্যকোন দিনে হোক। (আহসানুল ফাতাওয়া- ৪/৪৪০ পৃষ্ঠা)।

উপরোল্লিখিত নিয়মাবলী ঐ অবস্থায় কার্যকর হবে, যখন মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে যাবেন এবং অসিয়ত পরিমাণ সম্পদ রেখে যাবেন। আর যদি অসিয়ত না করে থাকেন এবং পরিত্যক্ত সম্পদ অসিয়ত অনুযায়ী যথেষ্ট না হয়, তাহলে অংশীদারদের উপর ফরয এবং ওয়াজিব আদায় করা জরুরি নয়। তবে তারা যদি স্বেচ্ছায় সহানুভূতি প্রদর্শন করেন, তাহলে তাতে যথেষ্ট সাওয়াব আছে। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ- ৩৯২-৯৩)।

লেখক: মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুফতি ও সহকারী পরিচালক, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।