মুসলমানদের জীবন লাগামহীন নয়

বন্ধুরা! আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে মনে করি এবং মুহাম্মদী উম্মতের দাবীদার, শ্রেষ্ঠধর্ম, শ্রেষ্ঠনবী, শ্রেষ্ঠ কিতাবের অধিকারী ও শ্রেষ্ঠ জাতি বলে ভাবি, তাদেরকে সর্বক্ষণ একটি মৌলিক কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আমাদের জীবন লাগামহীন নয়। দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আমরা স্বাধীন নই। নীতি-আদর্শের ব্যাপারে আমরা মিসকীন নই। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা ও আদর্শের ক্ষেত্রে আমরা পরমুখাপেক্ষী নই। গন্তব্যহারা পথিক নই যে, যার তার কাছে পথ ও গন্তব্য জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। অভিভাবক ও পিতৃহীন জাতি নই যে, যাকে তাকে বাপ ডাকতে হবে, অভিভাবক বানাতে হবে। অসহায়, মিত্রহীন, বন্ধুহীন জাতি নই যে, যার তার কাছে নিজেদেরকে তুলে দিতে হবে। এমন কাঙ্গাল মুনিবের গোলাম আমরা নই, যিনি তাঁর গোলামদের খাওয়াতে পরাতে অপারগ হওয়ার কারণে অন্য কারো আশ্রয় খুঁজতে হবে।

বরং আমাদের রয়েছে এমন এক মুনিব, যাঁর হাতেই সব ধন ভান্ডার। যিনি নিজ মাখলুককে খাওয়ান তাদের কোন অধিকার ছাড়াই। যে তাঁকে মানে তাকে যেমন খাওয়ান, যে মানে না তাকেও তেমনি খাওয়ান। বরং অমান্যকারী ও অবাধ্যদেরকে একটু বেশীই খাওয়ান। আমাদের মুনিব আমাদের হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের নিমিত্তে এমন এক কিতাব পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে ১৪০০ বছরের ইতিহাসে ঘোর দুশ্মনরাও কোন ভুল ভ্রান্তি ও অসত্য অবাস্তব কিছু ধরে দিতে পারেনি। এমনি এক কিতাব, যার চ্যালেঞ্জ আজো পৃথিবীর সকল মানুষকে পরাস্ত করে রেখেছে। যিনি আমাদেরকে দিয়েছেন এমন কল্যাণকর এক জীবন ব্যবস্থা, যা আমাদের দুনিয়া-আখেরাত, হাশর-নশর, কবর সব জায়গায় নিরাপত্তার মালিক।

যিনি আমাদেরকে এমনি এক নীতি-আদর্শে বলীয়ান করে দিয়েছেন যে, সমগ্র বিশ্ব মানবকে আমরা দিতে পারি, কারো থেকে কিছুই ধার করার প্রয়োজন আমাদের নেই। কিন্তু হায় আফসোস! আমাদের অবস্থা সে ভিক্ষুকের ন্যায় হয়েছে যে টুকরী ভর্তি রুটি মাথায় নিয়ে এক টুকরা রুটির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। আমাদের অবস্থা সে পিপাসুর ন্যায়, স্বচ্ছ মিঠা পানির নহরে দাঁড়িয়ে পিপাসায় কাতর হয়ে যার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছে। বলছিলাম, আমরা লাগামহীন নই, যে পথে ইচ্ছা কামাই-রোজগার করব, যা ইচ্ছা ভোগ করব। যা মনে চায় তাই করব। যা পাই, যেখান থেকেই পাই, যেভাবেই পাই, বাছ বিচার না করে হালাল হারাম তমিয না করে পকেটে পুরব, এটা সম্ভব নয়।

আমাদের মুনিব আছেন, তিনি সব কিছু দেখছেন। সব কিছু শুনছেন। সব কিছুই তিনি জানেন, আবার বিচার দিবসের সাক্ষী স্বরূপ আমাদের সকল কাজকর্ম রেকর্ডও করে রাখছেন। তাঁর কাছ থেকেই আমরা এসেছি আবার তাঁর কাছেই আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন সব কিছুর হিসাব-নিকাশ হবে, কোন পথে আয় করেছি তা যেমন হিসাব দিতে হবে, কোন পথে ব্যয় করেছি সে হিসাবও দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে লাগামহীন জীবনের ধোঁকা থেকে রক্ষা করে দ্বীনের সহীহ্ বুঝ দান করুন। আমীন।

– মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী

মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লাহর মেহমানদারী

সাম্প্রতিক কালে আমাদের সিভিল সোসাইটিতে কোন একটি ফাংশান এলে অশালীন ক্রিয়াকলাপের ধুম পড়ে যায়। কমিউনিটি সেন্টার, ইনস্টিটিউট বা আকর্ষণীয় প্যান্ডেল তৈরি করতঃ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে খুবই উল্লাসের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় এসব ফাংশান। ভিডিও ধারণ, ছবি তোলা ও ছেলেমেয়েদের অবাধে মেলামেশার এক প্রকার হিড়িক পড়ে যায় তাতে। বিবাহানুষ্ঠানে তো গায়ে হলুদ, মেহদী, ফিতা কর্তন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এ জাতীয় বহু কুসংস্কারের সয়লাব চলছে অহরহ।

ইসলামিক ও একত্ববাদী কালচার পরিহার করে নাস্তিক্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী কালচারে রঙিন হয়ে পড়ছে বর্তমান সমাজের জনগণ। তাই অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে আমাদের সমাজ। দিন দিন অসংখ্য অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে সামাজিকতার জালে পা পেচিয়ে অনেক দুঃস্থ ও দরিদ্র লোককে এসব অনুষ্ঠান পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাধ্য না থাকলেও অগত্যা তাদের এ জাতীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হচ্ছে। এতে করে তাদের উপর তা খুবই দুর্বিসহ হয়ে পড়ছে।

কিন্তু আল্লাহ্র মেহমানদারী বা আপ্যায়নে এর কোনটাই পাওয়া যায় না। পোহাতে হয় না কোন প্রকারের কষ্ট-ক্লেশ বা দুঃখ-বেদনা। বরং পরস্পরে পরম ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের এক অপূর্ব দৃশ্য ফুটে উঠে এতে। স্বার্থ হরণকারী বা মামলা দায়েরকারী সকলেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যায় এক কাতারে।

বান্দাদের আপ্যায়নের জন্য আল্লাহ্ নির্ধারণ করে রেখেছেন দুই ঈদের মোট পাঁচ দিন। “রোযা আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দানকারী” বলা সত্ত্বেও এ দিনগুলোতে রোযা রাখা হারাম বলেছেন তিনি। কারণ, এতে তাঁর আপ্যায়নের প্রতি কিঞ্চিত হলেও বিরূপতা প্রকাশ পায়। তাই তো প্রতিটি বিত্তবান ব্যক্তির উপর তাঁর দেওয়া সম্পদ খরচ করে তাঁরই নামে আপ্যায়ন গ্রহণ (কুরবানী) করা ফরয করেছেন তিনি। তবে দু’টি বিষয়ে খুবই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এক. এ আপ্যায়নানুষ্ঠানে (কুরবানীতে) কোন অবস্থাতেই বর্তমান প্রচলিত অনুষ্ঠানাদির ন্যায় শরীয়ত পরিপন্থী কোন কর্ম সম্পাদন করা যাবে না। দুই. পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, “কুরবানীর জন্তুর রক্ত গোশ্ত বা চামড়া কিছুই আমার নিকট পৌঁছে না। পৌঁছে শুধু তোমাদের তাক্বওয়া।” সুতরাং লোক দেখানোর মানসে (রিয়া), খাজা বাবা ও মূর্তির নামে যবাই করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ্ আমাদেরকে যথার্থভাবে তাঁর মেহমানদারী গ্রহণের তাওফীক দান করুন। আমীন॥

– মাওলানা আলমগীর হোসাইন

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।