মুসলমানদের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়

।। আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।

আল্লাহ তাআলা অন্ধকারে নিমজ্জিত অসভ্য দিশেহারা মানুষকে শান্তির রাস্তা দেখানোর জন্য ষষ্ঠ শতাব্দীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)কে প্রেরণ করেন।

ইরশাদ হচ্ছে- “অবশ্যই তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, এ কিতাব দ্বারা তিনি তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন”। (মায়েদা- ১৫-১৬)।

“আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে”। (ইবরাহীম- ১)।

রাসূল (সা.) তাঁর ২৩ বছরের নূরানী জীবন উৎসর্গ করে অসভ্য মানব গোষ্ঠী থেকে সভ্য, শিক্ষিত, স্বচ্ছ, আলোকিত আত্মমর্যাদার অধিকারী মুমিনীনদের এক বিচক্ষণ জামাত তৈরি করেন। যাদেরকে আল্লাহ তাআলা শিক্ষা ও সভ্যতার মডেল রূপে স্বীকৃতি দেন।

“যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওই দিকেই ফেরাবো যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান”। (নিসা- ১১৫)।

কুরআন-সুন্নাহর ইত্তেবা ও সাহাবায়ে কেরামের জীবন আদর্শের অনুসরণের মধ্যেই কল্যাণ ও দুনিয়া অখেরাতের কামিয়াবী। এই রাস্তার উপর চলে মুসলমানগণ ১২শত বছর পৃথিবীতে সুপার পাওয়ারের স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সে সময় বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছিল, মানুষের জান, ধন-সম্পদ ও সম্মান নিরাপদ ছিল, ওই সময় মুসলমানদের দেশে অমুসলিমগণ জামাই আদরে জীবন যাপন করেছিল।

কিন্তু যখন মুসলমানদের মধ্যে সাহাবায়ে কেরামকে ছেড়ে কাফেরদের অনুসরণের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলমান শিক্ষা-দীক্ষায়, আচার-আচরণে, কৃষ্টি-কালচারে তথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজাতীয়দের অনুসরণকে সাফল্য মনে করতে আরম্ভ করল, তখনই তাদের মান-মর্যাদা লোপ পেতে আরম্ভ করল। বর্তমানে মুসলমানরা পৃথিবীতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত জীবন-যাপন করছে। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তাদের দ্বীনি জ্ঞান না থাকার কারণে তারা শত্রুকে মিত্র বানিয়ে নিয়েছে। তাই দ্বীনদারদের অনুসরণ না করে তারা কাফের সম্প্রদায়ের অনুসরণ করছে। এই শত্রুরা ইসলামী জ্ঞান থেকে অজ্ঞ মুসলমানদেরকে জাহান্নামের দরজায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। কিন্তু আফসোস, মুসলমানরা জাহান্নামের দরজাকে অর্থাৎ- বিজাতীয়দের অনুসরণকে সম্মানের স্থান মনে করছে।

আল্লাহ তাআলা তাঁর দয়া ও মেহেরবানীতে কুরআন মাজীদের অনেক স্থানে মুসলমানদেরকে তাদের শত্রু সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং এই শত্রুদের মানসিকতা ও স্বভাব কী, তা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোনো ক্রটি করে না- তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্য নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।

দেখ! তোমরা তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবই বিশ¡াস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালোই জানেন।

তোমাদের যদি কোনো মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয়, তাহলে আনন্দিত হয়। আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনোই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে”। (আলে ইমরান- ১১৮-২০)।

“পার্থিব জীবনের উপর কাফেরদেরকে উন্মত্ত করে দেয়া হয়েছে। আর তারা ঈমানদারদের প্রতি লক্ষ্য করে হাসাহাসি করে। পক্ষান্তরে যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায় থাকবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযি দান করেন”। (বাকারাহ-  ২১২)।

উল্লিখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রতি কাফেরদের মানসিকতা কীরূপ, তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন এবং তাদের দশটি নিকৃষ্ট চরিত্র বর্ণনা করে মুসলমানদেরকে সতর্ক করেছেন।

১. কাফেররা মুসলমানদের ক্ষতিসাধন করতে ত্রুটি করে না।

২. মুসলমানগণ কষ্টে থাকলে তারা আনন্দ পায়।

৩. সময়ে সময়ে তারা শত্রুতার ঘোষণাও করে।

৪. কিন্তু তাদের অন্তরে মুসলমানদের প্রতি যে শত্রুতা লালন করে, তা প্রকাশ্য শত্রুতার চেয়েও অতি ভয়াবহ।

৫. মুসলমান যদিও তাদেরকে ভালোবাসে, কিন্তু তারা মুসলমানদেরকে ভালোবাসে না।

৬. মজলিসে তারা তোমাদের সাথে সামাজিকতা রক্ষা করলেও উঠে চলে যাওয়ার পর রাগে তারা দাঁত কামড়াতে থাকে।

৭. মুসলমানদের সুখ-শান্তি দেখলে তারা বিচলিত ও অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে।

৮. মুসলমানদের উপর কোনো বিপদ আসলে তারা উল্লাস করে।

৯. কাফেররা মুসলমানদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে।

১০. সমস্ত কাফেরদের মনের আকাক্সক্ষা হচ্ছে, মুসলমানরা যাতে কাফের হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষের রুচি ও স্বভাবের সৃষ্টিকর্তাও তিনি। তাই আল্লাহ তাআলা কাফেরদের রুচি ও মন মানসিকতার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহের অবকাশ নেই।

গত দেড়/দুইশত বছর থেকে যখন মুসলমানরা দ্বীনি শিক্ষাকে পরিহার করে জাগতিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং তারা অতি নির্লজ্জতার সাথে বিধর্মী ও বিজাতিদের অনুসরণ করতে আরম্ভ করে, তখন থেকেই তাদের আত্মমর্যাদা লোপ পেতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক ও অনেক জেনারেল শিক্ষিত মুসলমানরা কাফেরদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠে এবং কাফেরদের আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ও তাদের কৃষ্টি-কালচার তাদের অন্তরে প্রিয় ও রুচিশীল হয়ে পড়ে।

আরও পড়তে পারেন-

সর্বশেষ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে স্যার সৈয়দ আহমদ ও মোস্তফা কামাল পাশা গংদের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে এক নতুন জাতিসত্তা অস্তিত্ব লাভ করে, যারা নামে মুসলমান কিন্তু কৃষ্টি কালচার ও মনমানসিকতায় কাফেরদের মত।

অথচ আল্লাহ তাআলা কাফেরদের সাথে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন-যাপনের হুকুম দিলেও তাদেরকে মুহাব্বত করা, পরামর্শদাতা বানানো, তাদেরকে হিতাকাক্সক্ষী মনে করা ও তাদেরকে অভিভাবক ও অনুসৃতের মর্যাদায় আসীন করা থেকে বিরত থাকতে কুরআন মাজীদে একাধিকবার বলেছেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদেরকে বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে? নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী কখনও পাবে না”। (সূরা নিসা, ১৪৪-৪৫)।

এই আয়াতে বলা হয়েছে কাফেরকে বন্ধু বানানো মুনাফিকের কাজ এবং মুনাফিকের ঠিকানা জাহান্নামের সর্বনি¤েœর কু-ে। তাই যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের আদেশ নিষেধকে কার্যকর করে, তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে মুসলমান গণ্য করা হলেও তাদের হাশর হবে মুনাফিকদের মতো ভয়াবহ।

আল্লাহ তাআলা অরো ইরশাদ করেন, “হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

বস্তুতঃ যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হই। অতএব, সেদিন দূরে নয়, যেদিন আল্লাহ তাআলা বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ দেবেন-ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্যে অনুতপ্ত হবে।

উপরের আয়াতে সব ধরণের কাফেরকে বন্ধু বানাতে নিষেধ আসছে। আর এই অয়াতে ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। উপরের আয়াতে ওইসব মুসলমানকে মুনাফিক বলা হয়েছে।

কিন্তু এই আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ”। (মায়েদা, ৫৭-৫৮ আয়াত)।

ইসলামের ইতিহাসে ইবনে ‘আলকমী, মীর জাফর ও মীর সাদিকের মতো অনেকেই কাফেরদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে ইসলামী রাষ্ট্রকে কাফেরদের হাতে তুলে দিয়েছে এবং কাফেরদের দ্বারা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে শহীদ করিয়েছে।

কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বের রাস্তা খুবই ভয়ংকর, যারা এই রাস্তায় চলে তারা সব সময় কাফেরদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত থাকে। সাধারণত ওইসব শিক্ষিত যারা কোনো দ্বীনি মজলিসে বসার সুযোগ পায় না অথচ সব সময় কাফেরদের পরিবেশে তাদের সময় অতিবাহিত হয় এবং ওইসব মুসলমান রাষ্ট্রনায়ক যাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য কাফের রাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন তারা পরিষ্কার কাফের না হলেও কাফেরদের প্রেম ভালোবাসায় এই পর্যায়ে চলে যায় যে, তাদের আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ও মন-মস্তিষ্ক কাফেরদের মতো হয়ে যায়। তাই তারা আলেম-উলামা এবং দ্বীনদার মুসলমানদেরকে শত্রু মনে করে এবং ইসলামের উপর চলাকে লজ্জাজনক মনে করে।

কোনো মুসলমান এক শক্তিধর কাফেরের সাথে সম্পর্ক রাখবে আর তার নিজের ধর্মীয় ও জাতীয় চেতনা লালন করবে এটা খুবই মুশকিল। কাফেররা মুসলামনদেরকে কাফের বানানোর জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকে এটাই তাদের স্বভাব। তা না হয় তবে কমপক্ষে মুসলমানদেরকে তাদের প্রোগ্রামের আওতাধীন করে রাখে। তারপরও আল্লাহর ফযলে অনেক মুসলমান ওই পরিবেশে থেকেও ইসলামী ভাব-ধারার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে সচেষ্ট রয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা কাফেরদের স্বভাব সম্পর্কে ইরশাদ করেন- “কোন কোন আহলে-কিতাবের আকাক্সক্ষা, যাতে তোমাদের গোমরাহ করতে পারে, কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকেই গোমরাহ করে না। অথচ তারা বুঝতে পারে না”। (আলে ইমরান, ৬৯)।

সাহাবায়ে কেরামের কঠিন ঈমানের কারণে তারা সফল হতে পারেনি।

যদি কোনো মুসলমান এলাকার উপর কাফেরদের আধিপত্য স্থাপন হয়, তখন তারা মুসলমানদের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনোরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও”। (মুমতাহিনা- ২)।

এই আয়াতসমূহ দ্বারা পরিষ্কার হলো যে, কাফেররা সুযোগ পেলে সর্বদিক দিয়ে মুসলমানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে থাকে। ইতিহাসে এমন কোনো মুসলমান পাওয়া যাবে না যে, সে কাফেরদের সাথে সম্পর্ক রেখেছে আর তার ঈমানী চেতনা  অক্ষত  থাকছে। বরং অধিকাংশই ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়।

আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের শত্রুতাকে শক্তভাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের ইসলাম বিরোধী প্রোগ্রামের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।

“ইহুদী ও খ্রিস্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হলো সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাক্সক্ষাসমূহের অনুসরণ করেন, ওই জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই”। (বাকারাহ- ১২০)।

এই আয়াতে পরিষ্কার জানা গেল যে, কোনো মুসলমান যতক্ষণ কাফের না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইহুদী-খ্রীস্টান মুসলমানদের উপর সন্তুষ্ট হবে না। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সতর্ক করে দিলেন যে, যদি তোমরা ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রোগ্রামে তাদের অনুসরণ করো, তবে জাহান্নাম থেকে তোমাদেরকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে পুরুষ-মহিলার সহ-অবস্থান, নারী উন্নয়নের নামে মুসলিম মহিলাদেরকে কাফের মহিলাদের মতো জীবন যাপনে অভ্যস্ত বানানো, মানবাধিকারের নামে ধর্মীয় চেতনাকে বিলুপ্ত করা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় শিক্ষা থেকে মুসলিম সন্তানদের দূরে রাখা, সর্বত্র মুসলমান জনসাধারণের উপর মুসলমান প্রশাসনের জুলুম নির্যাতন ও মসজিদ-মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সবই কাফেরদের থেকে সংগ্রহ করা প্রোগ্রাম, যার ইসলামের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বায়নের স্লোগান দিয়ে কাফেরদের অনুসারী কোনো মুসলমান (সরকার বা পাবলিক) জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাবে না।

ইরশাদ হয়েছে- مَا لَكَ مِنَ اللّٰهِ مِنْ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیْرٍ  তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই। (বাকারাহ- ১২০)।

যারা   কাফেরদের  ভালোবাসা,  তাদের  কৃষ্টি-কালচার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, প্ল্যান-প্রোগ্রামকে মনে প্রাণে ভালোবাসে, এবং ইসলামী পোশাকাদি, টুপি, জামা, বোরকা-নেকাব, দাড়ি ও আলেম উলামাকে নিয়ে তিরস্কার করে, মাদরাসা, ওয়ায মাহফিল ইত্যাদি সহ্য করতে পারে না। তাদেরকে শত্রু মনে করতে হবে। যদিও সে আমাদের পরিবারের সদস্য হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার পরিষ্কার নির্দেশ-

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা সীমালঙ্ঘনকারী।

বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা- যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান- যাকে তোমরা পছন্দ করো; এসব কিছু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (তাওবা, ২৩-২৪ আয়াত)।

যাদের কাছে কুফর ও কুফরি প্রোগ্রাম প্রিয়, তাদেরকে কোন দ্বীনদার মুসলমান কীভাবে ভালোবাসতে পারে!

উপরোল্লিখিত আয়াতসমূহের নির্দেশনায় কোন মুসলমানের পক্ষে তার এমন পরিবার, সমাজ, সমিতি, দল ও সরকারের পক্ষ অবলম্বন করার কোনো বৈধতা নেই, যদি তারা কুফরি প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে চায়।

হত্যা, নিপীড়ন, জুলুম নির্যাতনে ব্যস্ত, ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত কোনো শক্তির সাথে সুসম্পর্ক রেখে যে আলেম চলবে সে ‘উলামায়ে সূ’ এর মধ্যে পরিগণিত হবে এবং সে-

وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی١۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ١۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ

“সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা (মায়েদা- ২)” এই আয়াতের বিরুদ্ধাচরণকারী রূপে গণ্য হবে। [চলবে]

লেখক: প্রখ্যাত প্রবীণ আলেম, শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।