মোবাইল ফোন নাপাকযুক্ত হলে পবিত্র করার শরয়ী পদ্ধতি

।। মুফতি ফরীদুল হক ।।

আল্লাহ তাআলার নেয়ামত সমূহের মধ্যে অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে পানি। পানির অপর নাম জীবন। যা এক অমূল্য ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সম্পদ। মানুষের জীবনযাত্রায় পানি অনেক বড় সহযোগী। পানির দ্বারা আমরা সবচেয়ে বেশি যেসব বিষয়ে উপকৃত হই, তন্মধ্যে পবিত্রতা হলো মূল কারণ পানি স্বভাবজাত ভাবে পবিত্র এবং তার মধ্যে অপরকে পবিত্র করার গুণও রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وأنزلنا من السماء ماء طهورا “এবং আমি আসমান থেকে বর্ষণ করি পবিত্রকারী পানি” (সূরা ফোরকান- ৪৮)।

নবী করীম (সা.) বলেছেন- الماء طهور لا ينجسه شيء “পানি স্বভাবজাতভাবে পবিত্র। তাকে কোনো জিনিস অপবিত্র করে না।গ্ধ আবু দাউদ শরীফ, ১/৪৯, দারুর রিসালাতিল আলামীয়া।

যে কোনো অপবিত্র জিনিসকে পবিত্র করার মূল মাধ্যম হলো পানি। বস্তুর ভিন্নতার কারণে পবিত্র করার পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন হয়। বস্তু যদি নিংড়ানো যায়, তাহলে পানি দ্বারা ধৌত করে নিংড়ানোর মাধ্যমে তা পবিত্র করতে হয়। যেমন: কাপড়-চোপড় ইত্যাদি।

আর যদি নিংড়ানো না যায়, তাহলে শুকানোর মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়। যেমন- আয়না, তলোয়ার ও কাঁচের তৈরি জিনিসপত্র ইত্যাদি। শুকানোর মাধ্যম বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন- সূর্যের, বাল্বের, আগুনের তাপ এবং হাওয়ার মাধ্যমে।

আল্লামা কাসানী (রহ., ৫৮৭হি.) বলেন-
ومنها: العصر فيما يحتمل العصر، وما يقوم مقامه فيما لا يحتمله. والجملة فيه إن المحل الذي تنجس إما إن كان شيئا لا يتشرب فيه أجزاء النجس أصلا، أو كان شيئا يتشرب فيه شيئ يسير، أو كان شيئا يتشرب فيه شيئ كثير، فإن كان مما لا يتشرب فيه شيئ أصلا كالأواني المتخذة من الحجر، والصفر، والنحاس، والخزف العتيق ونحو ذلك فطهارته بزوال عين النجاسة أو العدد على ما مر
“কোন বস্তুকে পবিত্র করার পদ্ধতি সমূহের একটি পদ্ধতি হলো, যদি নাপাক বস্তুটি নিংড়ানোর উপযুক্ত হয় তা নিংড়ানো, আর নিংড়ানো সম্ভব না হলে এমন কোন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে নিংড়ানোর উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে যায়।

মোটকথা, যে বস্তুতে নাপাক লেগেছে তা তিন ধরনের হতে পারে। (ক) যা নাপাকির কোন অংশকেই চুষে নেয় না, অর্থাৎ যার মধ্যে নাপাকের কিছুই প্রবিষ্ট হয় না। (খ) যাতে অল্প পরিমাণ নাপাক ঢুকে। (গ) যা অনেক পরিমাণ নাপাকি চুষে নেয়।

প্রথম প্রকার অর্থাৎ অল্প পরিমাণ নাপাকিও চুষে নেয় না। যেমন পিতল, তামা কিংবা পুরাতন চিনা-মাটি ইত্যাদির তৈরি কৃত পাত্র। এর বিধান হচ্ছে তা থেকে নাপাকি দূর হয়ে গেলে অথবা তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থাৎ তিনবার ধোয়ার দ্বারা পবিত্র হয়ে যাবে”। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/২৫০)।

তিনি আরো বলেন-
وكذا السكين إذا موه بماء نجس… ٱن تعذر العصر فإن التجفيف ممكن، فيقام التجفيف مقام العصر دفعا للحرج

“অনুরূপভাবে ছুরি, যদি তা নাপাক পানি দ্বারা প্রলেপ দেয়া হয়, তাহলে তা নিংড়ানো সম্ভব না হলেও শুকিয়ে ফেলা সম্ভব। সুতরাং তাই নিংড়ানোর স্থলাভিষিক্ত হবে অর্থাৎ এতে নিংড়ানোর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাবে”। (বাদায়েউস সানায়ে, ১/২৫১)।

মোবাইল যে সমস্ত পার্টস দ্বারা তৈরি, সবগুলোই শক্ত ও মজবুত। যাতে পানি চোষার সক্ষমতা নেই, ফলে তাতে কোন ভাবেই পানি প্রবেশ করে না, হ্যাঁ! মোবাইলে পানি ঢুকলে তা বিভিন্ন পার্টসে জমে থাকে, পার্টসের ভেতরে প্রবেশ করে না। এজন্য মোবাইলে নাপাক পানি পড়লে তা শুকানোর মাধ্যমে পবিত্র করতে হবে। শুকানোর পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, অকটেন, অয়েল বা স্প্রিটের মাধ্যমে, সূর্য বা বাল্বের তাপের মাধ্যমে অথবা চাউল ইত্যাদির মাধ্যমে। মূলত নাপাকির চিহ্ন বা আসর দূরীভূত হওয়াটা মুখ্য ও উদ্দেশ্য।

মুহাক্কিক আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহ., ৮৬১হি.) বলেন-
قوله: ্রفجفت بالشمسগ্ধ اتفاقي لا فرق بين الجفاف بالشمس أو النار أو الريح، والمراد من الأثر الذاهب اللون أو الريح
মুসান্নিফের কথা ‘অতঃপর তা রৌদ্রে শুকানো হলো’: এই কয়েদটি إتفاقي। রোদে শুকানো এবং আগুন বা বাতাসের মাধ্যমে শুকানোর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আর নাপাকির নিদর্শন চলে যাওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নাপাকির রং বা ঘ্রাণ দূরীভূত হওয়া। (ফাতহুল কাদীর, ১/২০০)।

গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, যে সকল বস্তুতে পানি চোষার সক্ষমতা নেই এবং শক্ত ও গাঢ়, সে সকল বস্তু পবিত্র করার আরেকটি উপায় হলো মাসেহ করা। অর্থাৎ ভালো পানি বা ভিজা কিছু দিয়ে বস্তুটি মুছে ফেলা। যেটা নববী যুগেও প্রচলিত ছিল। যেমন, সাহাবায়ে কেরামগণ জিহাদের ময়দানে রক্ত মিশ্রিত তলোয়ার মাসেহ করার মাধ্যমে পবিত্র করতেন।

ছাহেবে হিদায়া ইমাম আবু বকর মারগীনানী (রহ., ৫৯৩হি.) বলেন-
والنجاسة إذا اصابت المرأة أو السيف اكتفي بمسحهما، لأنه لا تتداخله النجاسة وما على ظاهره يزول بالمسح
যদি আয়না অর্থাৎ কাঁচ জাতীয় বস্তু, বা তরবারীতে নাপাক লাগে, তা মুছে ফেলাই যথেষ্ট হবে। কেননা, এগুলোতে নাপাক প্রবিষ্ট হতে পারে না। আর বাহ্যিক অংশে যা লেগেছে, তা মুছে ফেলার দ্বারাই চলে যাবে।গ্ধ (হিদায়া- ১/৭১, মাকতাবাতুল ফাতাহ)।

ইবনুল হুমাম (রহ.) তার ব্যাখ্যায় বলেন-
يفيد أن قيد صقالتها مراد، حتى لو كان به صدأ لا يطهر إلا بالماء بخلاف الصقيل. قال المصنف رحمه الله في التجنيس: صح أن أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم كانوا يقتلون الكفار بالسيوف ويمسحونها ويصلون بها، وعليه يتفرع ما ذكر: لو كان على ظفره نجاسة فمسحها طهرت، وكذلك الزجاجة والزبدية الخضراء أعني: المدهونة، والخشب الخراطي والبوريا القصب

“উপর্যুক্ত মাসআলায় মসৃণ হওয়ার শর্ত প্রযোজ্য হবে। এ কারণে যদি তাতে ঝং থাকে, ধোয়া ছাড়া পবিত্র হবে না। মসৃণ হলে ধোয়ার প্রয়োজন নেই, মাসেহই যথেষ্ট হবে।

(সাহেবে হিদায়া (রহ.) কিতাবুত তাজনীস) এ বলেন- সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)এর ব্যাপারে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা কাফেরদের সাথে তলোয়ার দ্বারা লড়াই করতেন। অতঃপর তা মুছে ফেলতেন এবং সাথে নিয়ে নামায আদায় করতেন। এর উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন যে, কারো যদি নখে কোন নাপাকি লেগে থাকে তাহলে মুছে ফেললেই পবিত্র হয়ে যাবে”। (ফাতহুল কাদীর- ১/২০০, মাকতাবায়ে যাকারিয়া)।

সারকথা, মোবাইলের পার্টসগুলো শক্ত ও গাঢ়। তাতে পানি চোষার সক্ষমতা নেই। অতএব, যদি মোবাইল নাপাক পানি বা নাপাক বস্তুতে পড়ে যায়, তাহলে তা পবিত্র করার বিভিন্ন উপায় হতে পারে।

এক. রোদ্রে বা যেকোন উপায়ে শুকিয়ে ফেলা, যদি শুকানোর মাধ্যমেই নাপাকের নিদর্শন চলে যায়।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো মাসেহ করা বা মুছে ফেলা। এতে নাপাকের নিদর্শন পূর্ণভাবেই দূরীভূত হয়।

আরও পড়তে পারেন-

অপবিত্র অবস্থায় মোবাইলের স্ক্রীনে কুরআন মাজিদ স্পর্শ করার বিধান
কুরআন মাজিদ আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। তার সম্মান ও মর্যাদা অতুলনীয়। কাজেই প্রত্যেক মুমিনের ওপর ওয়াজিব হলো তার যথাযথ সম্মান ও আদব বজায় রাখা। আর কুরআন মাজিদের অন্যতম আদব হলো পবিত্র অবস্থায় তা স্পর্শ করা । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لا يمسه إلا المطهرون
অর্থ: যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। (সূরা ওয়াকিয়া, ৭৯)।

হযরত আবূ বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাযম (রাযি.) হতে বর্ণিত, হযরত নবী কারীম (সা.) বলেন-
لا يمس القرآن إلا طاهر
অর্থ- “অপবিত্র ব্যক্তি যেন কুরআনকে স্পর্শ না করে”। (ইবনে হিব্বান, ৬৫৫৯)।

অতএব, অপবিত্র ব্যক্তি, জুনুবী (যার ওপর গোসল ফরয), ঋতুবর্তী বা নেফাস ওয়ালি মহিলাদের জন্য গোসল ব্যতীত কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা না জায়েয । কারণ, তাতে কুরআন মাজিদের মান ক্ষুণœ হয়। ইমাম আলাউদ্দীন কাসানী (রহ. ৫৮৭ হি.) বলেন-

ولا مس المصحف من غير غلاف عندنا… (ولنا) قوله تعالىগ্ধلا يمسه إلا المطهرونগ্ধ وقول النبي صلى الله عليه وسلم:গ্ধلا يمس القرآن إلا طاهرগ্ধ. ولأن تعظيم القرآن واجب، وليس من التعظيم مس المصحف بيد حلها حدث

আমাদের (হানাফী মাযহাব) মতে গিলাফ (আবরণ) ব্যতীত কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা নাজায়েয। এ সম্পর্কে আমাদের দলীল হলো, আল্লাহ তাআলার পবিত্র বাণী- যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। তদুপরি নবী কারীম (সা.) বলেন- অপবিত্র ব্যক্তি যেন কুরআনকে স্পর্শ না করে। কারণ কুরআন মাজিদের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখা ওয়াজিব। আর অপবিত্র হাতে তা স্পর্শ করা, তার সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থি। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪১)।

হানাফী মাযহাবের স্বীকৃত বিষয় যে, কুরআন মাজিদের উপর পৃথক গিলাফ বা আবরণ থাকলে সেক্ষেত্রে, পৃথক গিলাফ বা আবরণের দ্বারা অপবিত্র ব্যক্তির জন্যে কুরআন কারীম স্পর্শ করা জায়েয । যুগের ইমাম বায়হাকী বিখ্যাত মুফাসসির ও ফকীহ কাযী ছানাউল্লাহ পানিপতি (রহ. ১২২৫ হি.) বলেন-

يجوز مس القرآن وحمله بغلاف متجاف عند أبي حنيفة رح. وقال مالك والشافعي رح لا يجوز مع الغلاف أيضا
পৃথক গিলাফ দ্বারা ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)এর নিকট কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা ও বহন করা জায়েয; কিন্তু ইমাম মালেক (রহ.) ও শাফেয়ী (রহ.)এর নিকট গিলাফ দ্বারাও স্পর্শ করা নাজায়েয”। (তাফসীরে মাযহারী, ৯/১৬৩ মাকতাবায়ে যাকারিয়া)।

এছাড়া পৃথক রুমাল বা চাঁদর দ্বারা স্পর্শ করা জায়েয। এখন প্রশ্ন হতে পারে, গিলাফ বলতে কী বুঝায়, যা দ্বারা অযুবিহীন ব্যক্তির জন্যেও কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা বৈধ? এ প্রসঙ্গে ফিকহ শাস্ত্রের কিতাবাদি অধ্যয়নে প্রতীয়মান হয় যে, ‘গিলাফ’ বলা হয় এমন পৃথক বস্তুকে যার ভিতরে কুরআন মাজিদ ঢেকে রাখা হয়, চাই তা কাপড় হোক কিংবা চামড়া ইত্যাদির থলে। যেমন- ইমাম আলাউদ্দীন কাসানী (রহ.) বলেন-

والصحيح أنه الغلاف المنفصل عن المصحف، وهو الذي يجعل فيه المصحف، وقد يكون من الجلد وقد يكون من الثوب وهو الخريطة، لأن المتصل به تبع له، فكان مسه مسا القرآن، ولهذا لو بيع المصحف دخل المتصل به في البيع، والكم تبع للحامل، فأما المنفصل فليس بتبع حتى لا يدخل في بيع المصحف من غير شرط

“বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে গিলাফ বলা হয়, এমন বস্তুকে যা কুরআন মাজিদ থেকে পৃথক থাকে এবং তার ভিতরে কুরআনকে ঢেকে রাখা হয়। চাই তা কাপড়ের হোক কিংবা চামড়ার থলে। (সুতরাং যে বস্তুটি কুরআন মাজিদের সাথে মিলিত বা সেলাই করা থাকে তা বিশুদ্ধ বর্ণনানুসারে গিলাফ নয়)। কারণ, মিলিত বস্তুটি কুরআনের অধীন, ফলে তাকে স্পর্শ করা মানে কুরআন স্পর্শ করা। অতএব, কুরআন বিক্রয় করা হলে কুরআনের সাথে মিলিত বস্তুটিও বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এবং আস্তিন হলো বহনকারীরই অধীন। সুতরাং কুরআন থেকে পৃথক বস্তুটি কুরআনের অধীন না হওয়ায় কুরআন বিক্রয়ের সময় শর্ত না করা হলে বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না”। (বাদায়েউস সানায়ে- ১/১৪১, মাকতাবায়ে আশরাফিয়া)।

কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকহশাস্ত্রের উপর্যুক্ত ভাষ্য থেকে মোবাইল ফোনের হুকুমটি সুস্পষ্ট যে, ঝশরহ ঞড়ঁপয মোবাইলের স্ক্রীনে কুরআন মাজিদের আয়াত দৃশ্যমান অবস্থায় অযুবিহীন ব্যক্তির জন্যে মোবাইলের স্ক্রীনে হাত লাগানো নাজায়েয। এবং মোবাইলের স্ক্রীনে হাত দ্বারা স্পর্শ করে পৃষ্ঠা উল্টানো জায়েয হবে না। কারণ, মোবাইল ফোনের ওপর যে গ্লাস লাগানো থাকে তা মোবাইলের সাথে মিলিত ও সংযুক্ত। গ্লাসটি পৃথক করা হলে বলা চলে মোবাইলের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তদুপরি বিক্রয়ের সময় উল্লেখ বা শর্ত করা ব্যতীত মোবাইলের গ্লাসটি বিক্রিত বস্তুর অন্তর্ভুক্ত থাকে। এমনকি গ্লাস ছাড়া উক্ত মোবাইলের কোনো মূল্য আছে বলা যায় না।

অতএব, মোবাইল ফোনের ওপর লাগানো গ্লাসটি আদৌ গিলাফ হিসেবে গণ্য করা চলে না। কারণ, পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে পরিস্ফুট হয়েছে যে, গিলাফ দ্বারা এমন বস্তুই উদ্দেশ্য যা সংযুক্ত ও মিলিত থাকে না; বরং সম্পূর্ণ পৃথক থাকে। অথচ, মোবাইলের গ্লাস মোবাইলের সাথে মজবুতভাবে মিলিত ও সংযুক্ত থাকে। সুতরাং স্ক্রীন টাচ্ মোবাইলের স্ক্রীনে কুরআন মাজিদ দৃশ্যমান অবস্থায় অযুবিহীন ব্যক্তির জন্যে হাত লাগানো জায়েয হবে না। কারণ তাতে কুরআনের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণœ হয়। আর এটি স্বীকৃত যে, কুরআন মাজিদের সম্মান ও আদব বজায় রাখা ওয়াজিব ।

উল্লেখ্য যে, মোবাইল যদি ইঁঃঃড়হ বিশিষ্ট হয়, তখন অযু ছাড়াও বাটন টিপে কুরআন পড়া ও পৃষ্ঠা উল্টানো জায়েয। যা ইমাম যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম (রহ. ১৭০ হি.) এর নিন্মোক্ত ভাষ্য থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। তিনি বলেন-
يجوز للمحدث الذي يقرأ القرآن من المصحف تقليب الأوراق بقلم أو عود أو سكين

“অযুবিহীন ব্যক্তি, যে মোছহাফ থেকে কুরআন তেলাওয়াত করছে তার জন্যে কলম, কাঠ কিংবা ছুরি (ইত্যাদি) দ্বারা কুরআন মাজিদের পৃষ্ঠা উল্টানো জায়েয”। (আল বাহরুর রায়েক- ১/২০১-২০২, মাকতাবায়ে রশীদিয়া)।
তবে বাটন বিশিষ্ট মোবাইলের পর্দায় কুরআন মাজিদ দৃশ্যমান থাকলে অযুবিহীন অবস্থায় গ্লাসের উপর হাত রাখা জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য যে, এ সকল বিধান ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। কেননা, জুনুবি অর্থাৎ যার উপর গোসল ফরয হয়েছে, এবং ঋতু¯্রাব ও নেফাসওয়ালি মহিলাদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা নাজায়েয। হ্যাঁ! দুআ সম্বলিত আয়াতসমূহকে দুআ হিসেবে পড়তে পারবে।

মোটকথা, কুরআন মাজিদ দৃশ্যমান অবস্থায় মোবাইলের স্ক্রীন অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ না করাই হচ্ছে শরীয়তের তাকওয়া ও কুরআন কারীমের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। মহান আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

লেখক: মুফতি ও সিনিয়র শিক্ষক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।