।। মুহাম্মদ আমিনুর রশিদ গোয়াইনঘাটী ।।
আমাদের গ্রাম বাংলায় একটা আশঙ্কার খুব প্রচলন আছে। সেটা হলো, কুলক্ষণের আশঙ্কা। যেমন- কোনো অসুস্থ ব্যক্তির বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে যদি রাতের বেলা হুতুম পেঁচা ডাকে, কিংবা দুপুর রাতে যদি হঠাৎ আঙ্গিনায় কুকুর কাঁদে অথবা দাঁড়কাক ডেকে ওঠে, সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে যদি কেউ খালি কলসি হাতে কোনো নারীকে দেখে, অথবা দিনের বেলা হঠাৎ শেয়াল ডেকে ওঠে, তাহলে কুসংস্কারবাদী গ্রামীণ মন ধরে নেয়, ঘোরতর অকল্যাণ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এগুলোর আসলে কোনো যুক্তিও নেই, ভিত্তিও নেই এবং এর পক্ষে কোন যুক্তি উপস্থাপন করলেও তা জোর করে করা হয়। হলেও তা করতে হবে জোর করে। তারপরও কিন্তু ব্যাপারটাকে এভাবেই মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন আমাদের গ্রামীণ পূর্বপুরুষগণ।
আমাদের দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা, ঠাট্টা-মশকরা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাটাও যে একটা কুলক্ষণ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সমস্ত গর্হিত কর্মকা- ধর্মের অমঙ্গল নির্দেশ করে। তবে এই কুলক্ষণ কুসংস্কারবাদী গ্রামবাসীদের ন্যায় ভিত্তিহীন নয়।
ইহুদি-খ্রিস্টানরা যে কখনোই মুসলমানদের কল্যাণ চাইবে না, পবিত্র কুরআন হাদীসের বর্ণনা মতে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। ব্রাহ্মণ্যবাদী তথা মুশরিকরাও এতে কম যায় না। তারা ও তাদের সহযোগী ইসলামনির্মূলবাদী নাস্তিকরা চায় বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নাম-নিশানা ও মুসলিম চেতনাবোধ মুছে দিতে। অপর পক্ষে ব্রাহ্মণ্যবাদীরাও চায় এ দেশে তাদের চিন্তা-চেতনা ও পূজার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু তাদের ইচ্ছার পথে সবচে’ বড় বাঁধা হচ্ছেন, দেশের আলেম সমাজ। আলেম সমাজের প্রতি এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। আলেম সমাজের প্রতি সাধারণ মুসলমানের অনাস্থা-অনিহা সৃষ্টি করতে পারলেই কেল্লা ফতে।
তাই তারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি অবলম্বন করে আমাদের দেশের একশ্রেণির নামধারী মুসলমানকে আলেম সমাজের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। এ সমস্ত নামধারী মুসলমান তাদের প্রভুদের তৈরি করা বিভিন্ন হাতিয়ার সময়ে সময়ে আলেম-ওলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে। মৌলবাদ ও মৌলবাদী হচ্ছে সম্প্রতি তাদের ব্যবহৃত প্রধান এক হাতিয়ার। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের মান ক্ষুণœ করার হীন উদ্দেশ্যে মৌলবাদ এবং মৌলবাদীকে বিশেষ একটা অর্থে ব্যবহার করে থাকে। পক্ষান্তরে তাদের উদ্দেশ্যমূলক ভুল অর্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু সংখ্যক সরলমনা আলেম-ওলামা ও মুসলমান ‘মৌলবাদ’ এবং ‘মৌলবাদী’ আওয়াজ শুনলেই যাতে এর হাওয়া গায়ে না লাগে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে ‘লা হাওলা’ পড়ে ভাগতে থাকেন। সুতরাং ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্র থেকে মুসলমানদের ঈমান-আমল হেফাজতের নিমিত্তে ‘মৌলবাদ কী এবং মৌলবাদী কারা?’ এ সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনা করার আজকের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মৌলবাদের উৎপত্তি: ইংরেজি Fundamentalism শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘মৌলবাদ’। আর যারা এ মতবাদের অনুসারী তাদেরকে বলা হয় ‘মৌলবাদী’। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মৌলবাদের উৎপত্তি হয়েছে মূলত পাশ্চাত্য জগতে। বাইবেলের নির্ভুলতা ও যীশু-খ্রিস্টের জন্ম-মৃত্যু নিয়ে পাশ্চাত্য জগতের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিলে কতিপয় ধর্মযাজক এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৮৩০ সালের শুরুতে তারা বাইবেলের সূত্র ধরে প্রচার করতে থাকেন যে, যীশু-খ্রিস্ট হাজার বছরের শান্তি নিয়ে পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন। তখন শয়তান কারারুদ্ধ থাকবে। হাজার বছর পরে শয়তানকে কারামুক্ত করা হবে এবং গগ (ইয়াজুজ) ও মেগগের (মাজুজের) আবির্ভাব হবে। অতঃপর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং যীশুর আবির্ভাবের পূর্বে সারা বিশ্বে এক নতুন শৃঙ্খলা (New world order) স্থাপন করতে হবে।
এ জন্যে তারা পাশ্চাত্যের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খ্রিস্টানদের প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের মতে এগুলো হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মের মূলনীতি বা Fundamental Principle. তাদের এ মতবাদকে বলা হয় Fundamentalism বা মৌলবাদ এবং এ মতবাদের অনুসারীদেরকেই বলা হয় Fundamentalist বা মৌলবাদী।
মৌলবাদীদের এ আন্দোলন অদ্যবধি অব্যাহত রয়েছে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তারা আমেরিকান বাইবেললীগ গঠন করেন এবং Fundamental বা মূলনীতি নাম দিয়ে ১২টি বই প্রকাশ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তারা World’s Christian Association গঠন করেন। বর্তমানে এ সংগঠনের মাধ্যমেই মৌলবাদীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে ‘মৌলবাদ’ শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ১৯২২ সালে আমেরিকায়।
আরও পড়তে পারেন-
আহলে কুরআন: কুরআন বলে ‘তুমি মিথ্যাবাদি’
মুমিন জীবনে নামাযের গুরুত্ব
আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
মৌলবাদ যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের একটা গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদ। সমস্ত আধুনিক চিন্তা-চেতনাকে বাদ দিয়ে প্রাচীন বাইবেলের রীতিনীতিকে আঁকড়ে রাখাই এর মূল উদ্দেশ্য এবং যারা এ মতবাদে বিশ্বাসী তারাই মৌলবাদী বলে খ্যাত, তবুও শাব্দিক অর্থে মৌলবাদ ব্যাপক।
শাব্দিক বিশ্লেষণ: মৌলবাদ ও মৌলবাদী সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে ইসলামই হচ্ছে মৌলবাদ এবং মুসলমানেরাই হচ্ছেন প্রকৃতপক্ষে মৌলবাদী। অন্ততপক্ষে মৌলবাদের শাব্দিক বিশ্লেষণ দ্বারা এমনটাই বুঝা যায়। মূল থেকেই মৌল। সৃষ্টিজগতের মূলে ছিলেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ বিশ্বাস রাখাও জরুরি যে, যখন কোনো কিছুই ছিল না, তখন ছিলেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আবার যখন কোনো কিছুই থাকবে না, তখন থাকবেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, একমাত্র আপনার মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া। (আর-রাহমান-২৬-২৭)।
সুতরাং আল্লাহ তাআলাই মূল এবং তাঁর সাথে সম্পৃক্ত কুরআন-সুন্নাহ হলো তাঁর মৌল। এ সবের সামগ্রিকতাই হলো মৌলবাদ।
বিজ্ঞানীরা সৃষ্টির মূলের দিকে নানানভাবে নানানদিক থেকে পর্যবেক্ষণ অভিযান পরিচালনা করে বার বার একই চিরন্তনী মূলে পৌঁছান। কখনোই তারা একাধিক অথবা স্বতন্ত্র মূলের সাক্ষাৎ পাননি। অর্থাৎ কেউবা আকাশ সৃষ্টি করেছেন, কেউবা পাতাল সৃষ্টি করেছেন, কেউ হয়তো সূর্য, কেউবা সৃষ্টি করেছেন চন্দ্র; বরং বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন যে, সমস্ত সৃষ্টি এক অনন্য মূলের দ্বারা সৃষ্টি সূত্রে সমন্বয় সমীকরণে বাঁধা।
সুতরাং যিনি বিশ্বজগত এককভাবে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তো মূল। এ মূল (আল্লাহ তায়ালা) তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে যুগে যুগে সংবিধানসহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। তাই এ মূল (আল্লাহ তাআলা) এবং তাঁর প্রেরিত সংবিধান ও প্রতিনিধি (মৌল)এর তাবেদারী যারা করেন এবং করবেন, তারাই (মূলে আত্মসমর্পণকারী) মুসলমান এবং মূলবাদী বা মৌলবাদী মুসলমান।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ড. গোলাম ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, ইসলামের মৌলনীতিতে যারা বিশ্বাসী, তারাই মৌলবাদী। (দৈনিক সংগ্রাম-৭ আগষ্ট ১৯৯৩ ইং)।
সত্যি বলতে কি, যারা মৌলবাদ উৎখাতের নামে এ দেশ থেকে ইসলাম ধর্মকে মুছে ফেলতে চায়, তাদের জানা উচিত যে, ইসলাম ধর্মের শেকড় এত নড়বড়ে নয় যে, ফুৎকারের সাথে সাথে তা উড়ে যাবে। ইসলাম ধর্মের মূল অনুপ্রেরণা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ইসলামী পরিভাষায় যাকে বলা হয়, কালিমায়ে তায়্যিবাহ বা কলিমায়ে তাওহীদ। কালিমায়ে তায়্যিবার স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন- (হে নবী) আপনার কি জানা নেই, আল্লাহ তাআলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন? কালিমায়ে তায়্যিবাহ হলো পবিত্র বৃক্ষের মতো। তার শেকড় খুব মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। (ইবরাহীম-২৪)।
পক্ষান্তরে যারা মৌলবাদ বিরোধী কাফের-মুশরেক; তাদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন- এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির ওপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোনো স্থিতি নেই। (সূরা ইবরাহীম- ২৬)।
কাফেরদের কাজকর্মকে নোংরা বৃক্ষের সাথে তুলনা করার তিনটি কারণ বলা হয়েছে। (১) কাফেরদের ধর্মবিশ্বাসের কোনো শেকড় ও ভিত্তি নেই। অল্পক্ষণের মধ্যেই নড়বড়ে হয়ে যায়। (২) দুনিয়ার আবর্জনা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। (৩) বৃক্ষের ফলমূল অর্থাৎ কাফেরদের ক্রিয়াকর্ম আল্লাহর দরবারে ফলদায়ক নয়। (সংক্ষিপ্ত বাংলা মাআরিফুল কুরআন-৭১৭)।
সুতরাং মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের মূল এবং ভিত্তি আছে বিধায় তারা মৌলবাদী। উপরন্তু কাফিরদের ধর্মবিশ্বাসের মূল এবং ভিত্তি নেই বিধায় তারা মৌলবাদ বিরোধী। তাই যারা বাংলাদেশ থেকে (মজবুত শেকড় ওয়ালা) মৌলবাদ (ইসলাম) উৎখাতের হুমকি-ধমকি দেয়, তাদের এ আস্ফালন পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে।
তবে আমার নিজস্ব একটা মত হলো, (জানি না আমার সাথে কতজন একমত হবেন) ‘মৌলবাদ’ শব্দটা ব্যবহার না করাই উত্তম। যদিও তার শাব্দিক অর্থ ভালো। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষীরা হীনোদ্দেশ্যে শব্দটাকে ব্যবহার করে ইসলাম ও মুসলিম জাতির গায়ে কালিমা লেপন করতে চায়। মৌলবাদ শব্দটিকে তারা কট্টরপন্থা, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতি অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করে বুঝাতে চায় যে, মুসলমানরা কট্টরপন্থি, সন্ত্রাসী, অন্ধবিশ্বাসী ইত্যাদি। আমরা যখন বলে থাকি, আমরা মৌলবাদী, (অনেকে আবার ভাবাবেগে বলে থাকেন আমি মৌলবাদী) তখন ইসলাম বিদ্বেষীরা আমাদেরকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার সুযোগ পেয়ে যায়। তাই তাদেরকে যথা সম্ভব এ সুযোগ আমাদের না দেয়া উচিত। সুতরাং শব্দটি আমাদের পরিহার করাই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রা’য়িনা’ বলো না, ‘উনযুরনা’ বলো এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (সূরা বাক্বারা-১০৪)।
মদীনার ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ (সা.)এর মাজলিসে এসে তাঁর কথাবার্তা শুনত। তারা যে কথা ভালো করে শুনত না, সেটা দ্বিতীয়বার শুনতে চেয়ে বলত ‘রা’য়িনা’ অর্থাৎ আমাদের প্রতি লক্ষ করুন। তাদের দেখাদেখি অনেক মুসলিমও এ শব্দটি ব্যবহার করতেন। এতে ইহুদীরা নবীজী (সা.)কে নিয়ে মশকরা করার সুযোগ পেয়ে যেত। তখন আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে আয়াত নাযিল করে মুসলমানদেরকে নিষেধ করে দেন যে, তোমরা এটা বলো না; বরং বলো- ‘উনযুরনা’।
রা’য়িনা এবং উনযুরনা একই অর্থবোধক শব্দ, অর্থাৎ-আমাদের প্রতি লক্ষ করুন। কিন্তু ইহুদীরা ‘রা’য়িনা’ শব্দটিকে তাচ্ছিল্য বা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করত। তারা কাউকে নির্বোধ ও বোকা বুঝাতে চাইলে ‘রা’য়িনা’ বলত। তাই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে তা বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন; যদিও রা’য়িনার বাহ্যিক অর্থে দোষনীয় কিছু নেই।
মুফাসসিরীনে কেরাম এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যে শব্দের অপব্যাখ্যা করার আশঙ্কা থাকে, তা ব্যবহার না করা উচিত। যদিও বক্তার উদ্দেশ্য ভালো থাকে। আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.) বলেন- এতে প্রমাণ রয়েছে দ্ব্যর্থবোধক যেসব শব্দে মানহানি করার অবকাশ রয়েছে, সেসব শব্দ পরিহার করার। ইমাম মালিক (রহ.)এর মতে, এ ধরনের শব্দ ব্যবহারকারীর ওপর ‘হদ’ সাব্যস্ত হবে।
ইমাম কুরতবী (রহ.) বলেন, এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, কোনো বৈধ কাজের দ্বারা যদি অন্যরা অবৈধ কাজের সুযোগ পেয়ে যায়, তাহলে সে বৈধ কাজটিও অবৈধ হয়ে যায়। তার প্রমাণ বহন করে নিম্নোক্ত হাদীসটি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- আমার ইচ্ছে হয় কাবাঘরকে ভেঙে পুনরায় হযরত ইবরাহীম (আ.)এর ভিত্তির ন্যায় করে দেই। কিন্তু কাবাঘর ভেঙে ফেললে মূর্খলোকদের গোমরাহ হওয়ার ভয় রয়েছে বিধায় আমার ইচ্ছে কার্যকর করছি না। (তাফসীরে রুহুল মাআনী-১/৩৪৮, নূরুল কুরআন-১/৩৭৮)।
সুতরাং মৌলবাদ ও মৌলবাদী বলে দাবি করলে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম ও মুসলিম জাতির মানহানি করার একটা সুযোগ পেয়ে যায়। তাই আমরা এ সুযোগ তাদেরকে যাতে না দেই, সে দিকে লক্ষ রাখা আমাদের প্রয়োজন বলে মনে করি।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে সুমতি দান করুন। আমীন।
- মুহাম্মদ আমিনুর রশীদ গোয়াইনঘাটী, শিক্ষক, লাফনাউট মাদরাসা, গোয়াইনঘাট, সিলেট।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/