ভারতীয় হিন্দি ছায়াছবির আলোচিত নায়িকা সানা খান গত এক বছর আগে সিনেমা জগতকে গুডবাই জানিয়ে ইসলামসম্মত জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি ভারতের বিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দে উত্তীর্ণ একজন তরুণ আলেম মুফতিকে বিয়ে করেছেন। তাঁর ইতিবাচক এই পরিবর্তন তরুণ প্রজন্মের মুসলমানদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সানা খান তার ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে তাঁর এই পরিবর্তন নিয়ে একটি অনুভূতি শেয়ার করেছেন। অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে বিবেচনা থেকে বক্তব্যটির অনুবাদ নি¤েœ উপস্থাপন করা হল।
“আমি আপনাদের সাথে এমন একটি বিষয় শেয়ার করতে চাচ্ছি, যে বিষয়টি আমি অনেক বার শুনেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাতো সত্য, এটাই তো বাস্তব। যে কারণে বিষয়টা আমি বার বার ভেবেছি এবং সেই সাথে আমল করারও চেষ্টা করছি।
আলহামদুলিল্লাহ! এতে করে আমার মধ্যে যথেষ্ট পরিবর্তন আসছে। এ কারণে আমার এই অভিজ্ঞতাটি আপনাদের সাথেও শেয়ার করতে চাই।
হয়তো বিষয়টি আমরা সবাই জানি এবং সবাই শুনেছিও। কিন্তু কিছু জিনিস আছে, যখন আমরা সেটাকে আলাদা কোন পদ্ধতিতে শুনি, অথবা কোন গল্প আকারে শুনি, তখন দেখা যায়, ঐ বিষয়টা আমাদের মনে অন্য গল্প থেকে আলাদা এক বিশেষ ধরনের প্রভাব তৈরি করে।
বিষয়টি হলো- দুনিয়াতে সামান্য আনন্দ এবং সামান্য সময়ের মজা বা সুখের জন্য মানুষ এটা করে, ওটা করে, কত কিছু করে। এতে অনেক সময় আল্লাহর নাফরমানি হয়ে যায়। আর ঐ নাফরমানীর দ্বারা কি হয়? ঐ ক্ষণিকের সময়টা তো চলে যায়, সময়ের সাথে সাথে ঐ মজাও চলে যায়। কিন্তু মাঝখান দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করার দ্বারা শুধুমাত্র গুনাহই আমাদের সাথে থেকে যায়। আর ঐ গুনাহ আমাদের সাথে কবর পর্যন্ত যায়। কিয়ামতের দিন এই গুনাহ আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। এমনকি ঐ গুনাহ আমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। সুতরাং সামান্য মজা বা সামান্য বিনোদনের জন্য আমাদের গুনাহের কাজে লিপ্ত না হওয়া খুবই জরুরী।
আরও পড়তে পারেন-
- মুসলমানদের জন্য রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা করানো সুন্নাত
- করোনা মহামারি ও আমাদের করণীয়
- জান্নাত পেতে চাইলে শিরকমুক্ত নেক আমল করতে হবে
- দুর্দিন ও দুঃসময়ে নবী জীবন থেকে সান্ত্বনা
- মাহে মুহাররম ও আশূরা: করণীয় ও বর্জনীয় আমলসমূহ
আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, এই ক্ষণিকের মজা তো শেষ হয়ে যাবে ক্ষণিকেই। কিন্তু এর গুনাহ আমাদের সাথে চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে। আর আমরা তো জানিই এর শেষ কোথায়।
অনুরূপভাবে, সামান্য কষ্টের কারণে বা অলসতার কারণে আমাদের নেক আমল ছাড়া অনুচিত। এর দ্বারা কি হবে? এই যে, সামান্য কষ্ট হবে ঐ সময়, মজার সময়ের মত কষ্টের সময়টাও চলে যাবে। যেমন- আপনি তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে উঠবেন, ফজরের নামায পড়ার জন্য উঠবেন। এর দ্বারা সামান্য কষ্ট হবে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। আমারও কষ্ট হয়। কিন্তু এই সামান্য সময়ের কষ্ট বা অলসতা ত্যাগ করার দ্বারা কি হবে? কষ্টের সময়তো শেষ হয়ে যাবে, মাঝখান দিয়ে আপনার আমলনামায় নেকি থেকে যাবে। আর এই নেকি আপনার সাথে কবরে যাবে। হাশরের ময়দানে আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে। এবং আপনাকে কঠিন মুসিবতের দিন জান্নাতে প্রবেশ করাবে।
তাই আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী হলো, সামান্য কষ্টের কারণে নেকি না ছাড়া। সামান্য মজার জন্য গুনাহে লিপ্ত না হওয়া। যদি আমরা দুনিয়াতে সামান্য সুখের জন্য গুনাহ করে ফেলি, তাহলে আখেরাতে এই গুনাহ আমাদের জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়াবে। যা আমরা কখনো চাই না। আর সামান্য কষ্ট স্বীকার বা অলসতা ত্যাগ করে যদি নেকির মধ্যে সময় খরচ করি, তাহলে আখেরাতে এই সাওয়াব আমাদের জন্য জান্নাতে যাওয়ার সেতু হয়ে যাবে।
সুতরাং আমাদের চেষ্টা করা উচিত, নামায এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীর উপর তো যতœবান হবোই। এছাড়াও আমরা বাকি জীবন কীভাবে কাটাবো, মানুষের সাথে কীভাবে উঠাবসা, চলাফেরা, লেনদেন করবো, কীভাবে তাদের সাথে কথাবার্তা বলবো, তাদের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলছি না তো, কাউকে তো ধোঁকা দিয়ে ফেলছি না, কারো টাকা পয়সা তো অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করছি না, কারো আমানতের খেয়ানত তো করছি না।
তো, এই সব দিকগুলো ভাবনা-চিন্তা করে সঠিকভাবে ও সৎভাবে জীবন-যাপন করা, সময় খরচ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে যদি আমরা আমাদের জীবনকে সাজিয়ে তুলতে পারি, তাহলে আমরাও একজন আদর্শ মানুষ হতে পারবো। পরোপকারী হতে পারবো। পার্থিক জগতের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে অর্থবহ করতে পারব।
আর সব থেকে বড় হলো, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বদা দেখতেছেন। মাঝে মাঝে আমরা কোন ভাল কাজ করে তার প্রতিদান দুনিয়াতেই পেতে চাই। কিন্তু সবসময় আমরা দুনিয়াতে তার প্রতিদান পাই না। এজন্য হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে, মু’মিনের প্রতিদান পাওয়ার জায়গা দুনিয়া না। আমাদের উত্তম কাজের প্রতিদান তো আখেরাতে পাওয়ার বাসনা লালন করা উচিত।
সুতরাং যা কিছুই আমরা জীবনে করবো ভেবে চিন্তে করবো, বুঝে শুনে করবো।”
[সানা খানের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে পোস্ট দেওয়া বক্তব্যের অনুবাদ]
অনুবাদ: মাওলানা মতিউর রহমান
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/