।। রাকিবুল হাসান ।।
বর্তমানে আমরা যে ন্যাশন স্টেট বা জাতিরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বে বসবাস করি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পরিভাষায় একে বলা হয় ওয়েস্টফালিয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার। ১৬৪৮ সালে ট্রিটি অব ওয়েস্টফালিয়ার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এই সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুতর মূলনীতি হচ্ছে ভিন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণা এই সিস্টেমের প্রাণ।
এই সিস্টেম আছে বলেই প্রবল প্রতাপশালী ইন্ডিয়ার পাশে অতিকায় ক্ষুদ্র নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের মতো দেশ টিকে আছে। মালদ্বীপের মতো সেনাবাহিনীহীন দেশও টিকে থাকতে পারে। বিশ্বমোড়ল আমেরিকার নাকের ডগায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো প্রবল দাপটে কিউবার শাসন চালিয়ে যেতে পারে।
এবং মোস্ট ইম্পোর্ট্যান্টলি, এই সিস্টেমের কারণেই জাতিসংঘ বা বিশ্বের কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাই সদস্য রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই মূলনীতি ইউএন চার্টারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমে রাষ্ট্রকে ধরা হয় ইগোইস্টিক এন্টাইটি। অর্থাৎ রাষ্ট্র কখনো নিজের সার্বভৌমত্বে ছাড় দেয় না।
যদি জাতিসংঘের চার্টারে থাকত যে জাতিসংঘ চাইলে সদস্য রাষ্ট্রসমূহে হস্তক্ষেপ করতে পারবে, তাহলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হতো? পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে জাতিসংঘ যে হানা দিবে না, এর কী নিশ্চয়তা? মূলত আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই নীতি জানা না থাকার কারণে আমাদের মাঝে ভুরি ভুরি অলীক কল্পনা এবং অবান্তর আশার জাল তৈরি হয়েছে। সাথে আছে অসংখ্য ষড়যন্ত্রতত্ত্ব।
জাতিসংঘ কেন কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করে না? আজকে যদি কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করে, আগামিকাল যে সৌদিতে করবে না, বেলুচিস্তানে করবে না, তুরস্কের কুর্দি অঞ্চলে করবে না, চট্টগ্রামে করবে না এর নিশ্চয়তা কী? ইউএন চার্টার এই বিশ্ববাস্তবতাকে সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে, ফলে এর কার্যক্রম প্রক্রিয়া অতি ধীর, ততোধিক জটিল, এবং সদস্যরাষ্ট্রসমূহের জটিলতর অনুমোদন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
ধীরে ধীরে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের ত্রুটিগুলো সামনে আসতে শুরু করেছে। সবচেয়ে উৎকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে গত শতাব্দির শেষভাগে। রুয়ান্ডা গণহত্যা, খেমাররুজ গণহত্যা, সর্বশেষ চাক্ষুষ উদাহরণ; বাপবেটা হাফিজ আল আসাদ ও বাশার আল আসাদের গণহত্যা, রোহিঙ্গা গণহত্যা, গুজরাট গণহত্যা, কাশ্মীর গণহত্যা ও দিল্লি গণহত্যাসহ অসংখ্য মর্মবিদারি ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের নিকৃষ্টতম অপব্যবহার হচ্ছে। রক্তপিপাসু শাসকরা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ছদ্মাবরণে নিরীহ মানুষের রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে।
বিশেষত কোল্ড ওয়ার সমাপ্তির পর থেকে যুদ্ধের ডাইনামিজটাই চেঞ্জ হয়ে গেছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে যে দেশে দেশে যুদ্ধের সংখ্যা কম, হাতেগোনা কয়েকটা। আফগানিস্তান, ইরাক, আর এখন ইউক্রেন। পক্ষান্তরে দেশের ভেতরের সংঘাত তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে বিশ্বব্যবস্থায় নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটে; রেস্পনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট। একে আরটুপি বলা হয়।
যার সারকথা হচ্ছে যদি কোন দেশ নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়, ব্যাপকহারে মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এটি হচ্ছে লিগ্যাল দিক।
তবে বিশ্বমোড়লদেরকে ধোয়া তুলসিপাতা ভাবার কোন কারণ নেই। অনুরূপ কোন দেশ আইন লঙ্ঘন করলে তাকে আইন মানতে বাধ্য করানোর মতো কোন ক্যাপাসিটিও বিশ্বব্যবস্থায় নেই। এক্ষেত্রে আবারো জাতিসংঘের কথা আসে। অনেকের দুঃখ, জাতিসংঘ কেন আমেরিকাকে সাজা দেয় না, ইসরাইলকে সাজা দেয় না। জাতিসংঘের পুলিশ কোথায়? সেনাবাহিনী কোথায়? জাতিসংঘ কী নিয়ে আমেরিকার সাথে লাগতে যাবে? আমেরিকা চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দিলে জাতিসংঘের অস্তিত্বেই টান পড়ে যায়।
ফরেন এ্যাফেয়ার্সের তথ্যমতে ডোনাল্ড ট্রাম্প চাঁদা বন্ধ করেনি, শুধু একটু কমিয়েছিল, এতেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাজেট মাত্র ছয়শ মিলিয়ন কমাতে হয়েছে! ভাবা যায়?
যেহেতু বিশ্বপুলিশ নেই, তাই বিশ্বমোড়লরাই বিশ্বপুলিশ। কোল্ড ওয়ার পিরিয়ডে দুই পরাশক্তি যথেচ্ছভাবে বিশ্বে ছড়ি ঘুরিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে আমেরিকা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনসমূহকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ডজন ডজন দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করেছে, সরকার পরিবর্তন করেছে, দখল করেছে, বিদ্রোহিদের সমর্থন দিয়ে জাতীয় সরকারের পতন ঘটিয়েছে এবং সরাসরি আগ্রাসনও চালিয়েছে।
আরও পড়তে পারেন-
পরিবেশ বিপর্যয়— রুশ সাম্রাজ্যের শাপে বর?
আহলে কুরআন: কুরআন বলে ‘তুমি মিথ্যাবাদি’
আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
কুরআন অবমাননা: আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বনাম হিন্দুত্ববাদ
যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
নিউ ইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি স্টিফেন কিনজার এই টপিকে দারুণ একটা বই লেখেছেন; ওভারথ্রো- আমেরিকা’স সেঞ্চুরি অব রেজিম চেঞ্জ। সাম্রাজ্যবাদের পথে আমেরিকার প্রথম পদক্ষেপ হাওয়াই থেকে নিয়ে ইরাক পর্যন্ত সমস্ত অপকর্মের ফিরিস্তি আছে এতে।
রাশিয়ার বর্তমান আগ্রাসনে অনেকে অনেক কারণে খুশি। প্রত্যেকের খুশির কারণ ভিন্ন ভিন্ন। সমাজতন্ত্রী বিপ্লবীরা খুশি তাদের সাবেক প্রভু সাদাদেরকে ধুয়ে দিচ্ছে, সেকারণে। আমেরিকা ও ন্যাটোর হত্যা-খুন-যুদ্ধে বিধ্বস্ত অনেকে খুশি এবার যুদ্ধের আগুন খুনিদের ঘরে লেগেছে বলে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যুদ্ধ যুদ্ধই। ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের প্রধান কনসার্নগুলোর একটি হচ্ছে- হাও টু প্রিভেন্ট ওয়ার এন্ড মেইনটেইন পিস। অর্থাৎ কিভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায়, শান্তি বজায় রাখা যায়। যদিও ধরা হয় যুদ্ধ অনিবার্য, তবে কখনোই কাম্য নয়। ফলে বিশ্বের যেখানেই হোক, যুদ্ধ কাম্য নয়। এর অনেক অনেক কারণ আছে।
প্রথমত, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সব দেশ এক সূত্রে গাঁথা। পৃথিবীর কোথাও একটা ঘটনা ঘটলে, এর চেইন রিএ্যাকশন বহু জায়গায় পড়ে। এবং এমন এমন ক্ষেত্রেও পড়ে যা কল্পনাতীত।
একটি উদাহরণ দেই। ইউরোপিয়ানরা, বিশেষত বৃটিশরা ভারতবর্ষে মনোযোগবৃদ্ধি করেছিল কেন? বৃটিশদের ভারতমুখীতার অন্যতম একটা কারণ ছিল নতুন তুলার সন্ধান। আমেরিকা থেকে ইউরোপে তুলা যেত। ১৭৭৬ এ মার্কিনিরা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় তুলার উৎস হাতছাড়া হয়ে যায়। ওদিকে ইউরোপে তখন শিল্প বিপ্লব চলে।
হাজার হাজার কলকারখানা। হস্তচালিত কয়েকশত তাঁতে যে পরিমাণ তুলা লাগে, একটা ফ্যাক্টরিতে হয়ত সপ্তাহেই এরচে বেশি তুলার দরকার। কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে, তাদের অর্থনীতি ধ্বসে যাবে, গোটা দেশ বসে যাবে। নতুন তুলার সন্ধান তীব্রতর করতে বাধ্য হয় তারা। সেই ধারাবাহিকতায় ভারতবর্ষে মনযোগী হয়। তুলা আর নীল নিয়ে উপমহাদেশে যে বেদনাদায়ক ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, দুইশতবছরের দাসত্ব, উপনিবেশ, উত্থানপতন ও ভাঙ্গন; সবকিছুর অন্তরালে কিন্তু আমেরিকার স্বাধীনতার একটা ভূমিকা রয়েছে! যদি আমেরিকা স্বাধীন না হতো, আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত সম্পদ-অর্থ-কাচামাল ইউরোপিয়ানদের হাতছাড়া না হতো, হয়ত ভারতবর্ষ তাদের নিকট বি ক্যাটাগরিতেই থাকত।
সেই শত সহস্র মাইল দূরে, দুই মহাসাগর বেষ্টিত, গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহাদেশের স্বাধীনতার ধাক্কা যদি দিল্লি-কলকাতা-ঢাকায় পড়ে, তাও তিনশ বছর আগে, আজকের পৃথিবীতে বিশ্বরাজনীতির ঘটনাবলীর প্রভাব কতটা অবিচ্ছিন হতে পারে সহজেই অনুমেয়।
রাশিয়া ইউরোপের দুঃখ। সবসময় হয়ত ইউরোপ রাশিয়াকে শাসন করেছে, নয়ত রাশিয়া ইউরোপ দাপিয়ে বেড়িয়েছে। জোর যার মুল্লুক তার। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের প্রভাব কি সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এই ঘটনার ফলে ইউরোপে যে নজিরবিহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে, আমরা কি তার কুফলের বাইরে থাকব?
আন্তর্জাতিক ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানেন ইউরোপের ইতিহাস যুদ্ধের ইতিহাস। যখনই তাদের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, প্রথমে সেটা নিজেদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। পরস্পরকে মারকাট করে ক্লান্ত হয়ে গেলে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন তাদের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হলে আজ হোক কাল হোক, বাকি বিশ্ব ভোগবেই। অনিবার্য।
ইউরোপ বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাজার, আমাদের দেশের মেরুদ- গার্মেন্টস শিল্প, এই শিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি শিল্পের প্রধান বাজার ইউরোপ। রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান জ্বালানির উৎস। তেলের দাম ইতোমধ্যেই ব্যারেলপ্রতি বিগত আট বছরের সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করেছে। তেলের দামে বৃদ্ধি ঘটলে আমাদের জীবনে কী প্রভাব পড়ে তা সিঙ্গাপুরতূল্য এই দেশের মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ ইতোমধ্যেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তেলের মূল্যবৃদ্ধির ‘মূল্য’ নিজেদের রক্ত-ঘাম-শ্রম দিয়েও শোধ করে কুলাতে পারছেন না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে, বিশ্বরাজনীতির চিন্তায় এর যে প্রভাব পড়বে, সেটা। রাশিয়া পুনর্জাগরণে সংকল্পবদ্ধ। পুতিন মহান রুশ সা¤্রাজ্যের সম্মান, গৌরব, প্রতাপ পুনরুদ্ধারের স্বপ্নচারি। কথা হচ্ছে- আমাদের আশেপাশে কি এরকম রাষ্ট্র আছে? যারা হিন্দুত্ববাদী বা যেকোন ধরনের আধিপত্যবাদী স্বপ্নে বিভোর? সে দেশের পাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র আছে? উত্তর নিশ্চয়ই জানা।
আজকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়েছে, থামানোর কেউ নেই। বাস্তবিকই কেউ নেই। ন্যাটোর ক্ষমতা নেই রাশিয়াকে লাগাম দেয়ার। ন্যাটো শতধাবিভক্ত সামরিক জোট। ভঙ্গুর নেতৃত্ব। সবশেষে আছে জাতীয়তাবাদ। জার্মানি আর ফ্রান্সের সেনা কেন ইউক্রেনের জন্য জীবন দিবে? সেদেশের জনগণ মেনে নিবে? বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ভারতের স্বার্থে আত্মাহুতি দিক, কেউ চাই? ইউরোপিয়ানরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
তো আজকে রাশিয়াকে থামানোর কেউ নেই, আগামিকাল মোদি কিংবা যোগিকে (যোগি আদিত্যনাথ; বিজেপির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রি পদপ্রার্থী, যার হিং¯্রতার তুলনায় মোদি নস্যি) কে থামাবে? এরচেয়েও স্বৈরতান্ত্রিক চীনকে কে থামাবে? রাশিয়া ইউক্রেনে যা করছে, এ থেকে ভবিষ্যত সুযোগসন্ধানিরা যে জ্বালানি সংগ্রহ করবে না, এর নিশ্চয়তা আছে কি?
রুশ আগ্রাসন আর মার্কিন আগ্রাসনের একটা মৌলিক তফাত আছে। এই বিষয়টি কেউই ফোকাস করছে না। সেটা হচ্ছে; আমেরিকা যেখানেই হস্তক্ষেপ করেছে, কোন না কোনভাবে সেটা বৈধতা দিতে চেয়েছে, এবং বাস্তবে সে বিশ্বের বৃহৎ একটা অংশের সমর্থন আদায়ও করে নিয়েছে। এবার চাই তা ওয়ার অন টেরর হোক বা ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রোপাগান্ডা।
আগে সে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, ঘটনার একটা মতাদর্শিক ব্যাখ্যা হাজির করেছে, নৈতিক বৈধতা দেয়ার কোশেশ করেছে। এবং এরকম ‘ইজম’ তৈরিতে যে বিপুল মিডিয়াশক্তি, গবেষণাগার, রিসার্চার, ইন্সটিটিউট, বিশ্লেষক দরকার, এক কথায় গোটা একটা সেট দরকার, তা আমেরিকা ছাড়া কারো নেই। কোল্ড ওয়ারে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের, এখন তাদেরও নেই।
ফলে অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের আগ্রাসনের পক্ষে বৈধতা উৎপাদনের মতো যথেষ্ট সক্ষমতা নেই। যেমন ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে নৈতিক বৈধতা তৈরি করতে পারছে না। চীন পারবে না। রাশিয়াও পারবে না। কারণ, তাদের সেই ‘সেট’ নেই। সেটি থাকে শুধুমাত্র সুপার পাওয়ারের। এবং এই কারণেই সে সুপার পাওয়ার। ফলে যেহেতু নৈতিক বৈধতা উৎপাদন করতে পারছে না, সবসময় সে দেশ একটা অস্বস্তিতে থাকে। এবং নির্দিষ্ট একটা মাত্রায় এটা আগ্রাসনবিরোধি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
রাশিয়া ইউক্রেনে যা করছে সেটা পিউর জিওপলিটিক্স, নগ্ন ভূরাজনীতি। সে এই আগ্রাসনের পক্ষে বৈধতা উৎপাদন করতে পারবে না, সেই সক্ষমতা তার নাই, এবং মোস্ট ইম্পোর্ট্যান্টলি- ইচ্ছাও নাই। এখানে খেলাটা পুরোটাই পেশিশক্তির। জোর আছে তো ‘ধরো তক্তা, মারো পেরেক!’ এটা একটা ভয়ংকর খেলা। এটা সেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাক্ষসদের মনোবল যোগাবে যাদের ভিন দেশকে গিলে খাওয়ার সাধ আছে, সাধ্য নাই; বিশ্বজনমত প্রভাবিত করার ক্ষমতা নাই।
ফলে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের যে সুরক্ষাকবচ, তা ভাঙতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। এই কবচ ভাঙলে শুধু ইউরোপিয়ানরাই মরবে না, আমাদের দেশও ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের সুবিধাভোগি। এই প্রটেকশন ভেঙে পড়লে অত্র অঞ্চলের বড়ভাইদের সামনে দশ মিনিটও দাঁড়ানোর ক্ষমতা এদেশের নেই। জাহাজ ফুটো হলে শুধু উপরতলার যাত্রীরা মরে না, নিচ তলার নিম্নবিত্তরাও ডুবে।
লেখক: তাকমিল- মাদরাসা বাইতুল উলূম ঢালকানগর, শিক্ষার্থী- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল- rakibulhasanduir@admin_767
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/