।। মুুনির আহমদ ।।
পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য, গন্তব্য, করণীয় সম্পর্কে জ্ঞানদান এবং মানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্যই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, কিতাব নাযিল করেছেন এবং শরীয়তের বিধান দিয়েছেন। আর এই নবী-রাসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ নবী হচ্ছেন আখেরী নবী মুহাম্মদ সা:। যিনি উম্মাতের পরকালীন স্থায়ী জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেমন ঈমান-আক্বিদা ও সঠিক ইবাদত-বন্দেগীর শিক্ষা দিয়েছেন, তেমনি মানুষের দুনিয়াবী ক্ষণস্থায়ী জীবনকেও শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সকল দিক-নির্দেশনা ও অনুশীলন করিয়ে গেছেন। তিনি সঠিক ইবাদত-বন্দেগীর শিক্ষাদানের পাশাপাশি জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, বংশ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, ধর্ম রক্ষা এবং মানুষের সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার পন্থা বতলে গেছেন। যে কারণে তাঁকে সরদারে দো-আলম, রহমতে দো-আলম তথা উভয় জগতের সরদার ও রহমত বলে সম্বোধন করা হয়।
সে সময় ছিল ‘আইয়ামে জাহিলিয়াত’ বা অন্ধকার যুগ। অজ্ঞানতা, পাপাচার, যুদ্ধবিগ্রহ, সহিংসতা, শিশুহত্যা ও কন্যাশিশুকে জীবন্ত মাটিচাপা দেয়ার মতো অমানবিক প্রথার প্রচলন ছিল। তিনি মানবতাবিরোধী সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধকে ‘কবিরা গুনাহ’ বা মহাপাপরূপে আখ্যায়িত করেন এবং এর জন্য দুনিয়াতে কঠিন শাস্তি ও পরকালে ভয়াবহ আযাবের বিষয়ে সতর্ক করেন।
তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে সুস্পষ্ট বলেন, সব মানুষ একই উপাদানে তৈরি, সবাই এক আল্লাহর বান্দা। সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান, সব মানুষ একই রক্ত-মাংসে গড়া। তাই ইসলামে সাদা-কালোয় কোনো প্রভেদ নেই। সব মানুষ আখেরি নবী হযরত মুহাম্মাদ সা:-এর উম্মত। কবরে ও হাশরে সকলকে তাদের কৃতকর্মের উপর প্রশ্ন করা হবে।
হযরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগের ৪০ বছর এবং নবুওয়াতের ২৩ বছর পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তিনি জীবনের বড় অংশ সংগ্রাম, সাধনা করে গেছেন মানবসেবায়। কুফর-শিরক পরিত্যাগ করে ঈমানের পথে আনতে যেমন অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঝুঁকি মাথাপেতে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেছেন, তেমনি শান্তিপূর্ণ দেশ গড়া, সুবিচার ও ইনসাফপূর্ণ আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ এবং সর্বস্তরে সাম্য, ইনসাফ ও মানবতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ছড়িয়ে দিতে তিনি দিন-রাত কাজ করে গেছেন। রাসূল সা: নির্দেশিত পথে যদি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সাজানো যেতো, তাহলে অধিকার, সুবিচার, ইনসাফ, শান্তি, নিরাপত্তা ও মর্যাদার জন্য দুনিয়ার চতুর্দিকে যে হাহাকার দেখা যায়, সেটা হতো না। মুমিনদের পরকালীন জীবনের মতো দুনিয়ার জীবনও সকলের জন্য হতো শান্তির জীবন।
বর্তমানে সমাজে অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ আছে, তাদের খবর নেয়ার কেউ নেই। কত লোক অনাহারে দিন যাপন করছে, অথচ কেউ জানে না যে সে কে? নবীজীর আদর্শ হলো, মানুষের দ্বারে দ্বারে তাদের ঈমান ও আমলের খোঁজখবর নেয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার বিষয়াদি জিজ্ঞাসা করা। অভাবীদের অভাব দূর করার সাধ্যমতো চেষ্টা করা। হযরত সাহাবায়ে কেরাম নবীজী সা:-এর আদর্শ পূর্ণ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করেছেন। তাই তো বহু সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, তারা রাতের আঁধারে ঘর থেকে বের হয়ে অপর ভাইয়ের খোঁজখবর নিতেন। অভাবীদের অভাব সাধ্যমতো দূর করার চেষ্টা করতেন। এ কারণেই মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাতের শুভ সংবাদও তারা অর্জন করেছিলেন।
আর্তমানবতার সেবার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, কওমের নেতা সফরের অবস্থায় তাদের খাদেম থাকবে। যে ব্যক্তি খেদমতের মাধ্যমে তাদের মাঝে অগ্রগামী হবে, কেউ তাকে আমলের মাধ্যমে পেছনে ফেলতে পারবে না। অবশ্য শহীদ ব্যক্তি (শহীদ ব্যক্তি অগ্রগামী হতে) পারবে। (মিশকাত)।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে রয়েছে ইসলামের পদচারণা। অর্থাৎ- সব ক্ষেত্রেই ইসলামের বিধান রয়েছে। ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপিত হয়েছে। শুরুর সময় এমন একটি সমাজে ইসলাম শান্তি স্থাপন করছে, যে সমাজে নৈতিকতার চরম বিপর্যয় ঘটেছিল। এ সমাজে মানুষের কাছে মানুষের কোনোই মূল্য ছিল না। হ্যাঁ যাদের কাছে ক্ষমতা ও অর্থ ছিল তাদের কথা ভিন্ন। সেখানে দুর্বলের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিল না। কথা বলার সুযোগ ছিল না। সে সমাজে মানুষ পণ্যের মতো বেচাকেনা হতো।
ইসলামের শুরু লগ্নের তৎকালীন সময় এমন কিছু সমাজসেবকের আগমন ঘটেছিল, তারা মানবতার সেবা বলতে কিছুই করতো না। তারা শুধু সাধারণ মানুষকে শোষণ করতো, জুলুম করতো। ফলে সীমিত সংখ্যক মানুষের হাতে সম্পদের পাহাড় জমা হতো। এতিম ও শিশুদের মাল পাহারা দেয়ার নামে আত্মসাৎ করতো। এ ঘুণেধরা সমাজে রহমতে আলম সা: আল্লাহর নির্দেশে প্রদত্ত বিধানের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনেন। তিনি কৈশোর থেকে যৌবনের ৪০ বছর পূর্ব পর্যন্ত মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার দারুণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস পুরোপুরি অর্জন করেছিলেন। তাই তো জনসাধারণ সবাই একসঙ্গে তাকে উপাধি দিয়েছিল ‘আল-আমিন’।
নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে থেকেই মহানবী সা: মানবসেবায় নিজের পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছিলেন। মানুষের কল্যাণে তিনি ছিলেন সদা নিবেদিতপ্রাণ। তিনি জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি মানুষের সেবায় কাজ করেছেন। তিনি সাহাবাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন মানবসেবায় ব্রতী হতে। ধর্ম-বর্ণের বৃত্তের বাইরে গিয়ে নানা জনহিতকর কাজ করার মহান শিক্ষা তিনি প্রচার করেছেন।
আরবের হানাহানি, যুদ্ধবিগ্রহ ও অরাজকতা নিরসন করার লক্ষ্যে যখন জনকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সা: তাতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হিলফুল ফুজুল’ সংগঠনের কর্মসূচি ছিল- সমাজ থেকে হানাহানি, রক্তপাত ও অশান্তি দূর করা। বহিরাগতদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান। নিঃস্ব-অসহায়দের সাহায্য প্রদান। দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর শক্তিমানদের জুলুম-নিপীড়ন প্রতিহত করা। (ইবনে হিশাম, ১/১৩৪-১৪০)।
নবুওয়তের সুদীর্ঘ ২৩ বছরে রাসূলুল্লাহ সা: মানুষের বহুমুখী সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। আর্তমানবতার সেবায় তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলো অতি ব্যাপক ও বিস্তৃত। অভাবীদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা তিনি করেছেন। মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। বেকারদের কর্মসংস্থানে নিয়েছেন কার্যকর পদক্ষেপ।
আর্ত-পীড়িত মানুষের সেবার প্রতি রাসূলুল্লাহ সা: গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রোগীদের সেবা করো।’ (বুখারি)।
সাহাবি বারাআ রা: বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের সাতটি বিষয়ে বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন। তার একটি হলো আমরা যেন রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করি’। (বুখারি)।
আরও পড়তে পারেন-
- নূপুর শর্মা, হেট স্পিচ ও বাকস্বাধীনতা
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
অসুস্থ ব্যক্তি যেই হোক, রাসূলুল্লাহ সা: তার সেবায় এগিয়ে যেতেন। ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিম, আত্মীয়-অনাত্মীয়র পার্থক্য করতেন না। মদিনার এক ইহুদি ছেলের অসুস্থতার সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ সা: তার বাড়িতে দেখতে যান।
মদীনার আনসাররা মুহাজিরদের খেদমতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাসূলুল্লাহ সা:-এর নির্দেশের আলোকে মুহাজিরদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সব ব্যবস্থা তারা করে দেন। নিজেদের সম্পদ ও সুখ-দুঃখের অংশীদার করে নেন মুহাজিরদের।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘এবং তাদের জন্যও, যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে এই নগরীতে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাক্সক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের ওপর মুহাজিরদের প্রাধান্য দেয়, নিজেরা অভাবী হওয়া সত্ত্বেও। যারা কৃপণতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখে তারাই সফলকাম’। (সুরা হাশর)।
মসজিদে নববীর পাশে একটি স্থানে রাসূলুল্লাহ সা: পরিজনহারা সহায়-সম্বলহীন মানুষের বসবাস ও পানাহারের জন্য সুফফা নামের একটি ছাউনি প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রয়হীন লোকজন সেখানে আশ্রয় নিত। রাসূলুল্লাহ সা: নিজ তত্ত্বাবধানে তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনের বন্দোবস্তু করতেন। রাসূলুল্লাহ সা: নিজের দস্তরখানে বসিয়ে তাদের খাবার খাওয়াতেন। বাইতুল মাল থেকে তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য করতেন। এই আশ্রয়কেন্দ্রে আসহাবুস সুফফার সংখ্যা কখনো কখনো চার শতাধিকও হয়ে যেত। (সীরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৪৮৩)।
অন্যের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হওয়ার পরিবর্তে সমাজের প্রত্যেক কর্মক্ষম ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সা: জীবিকা উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি প্রকৃত বিপদগ্রস্তকে দান করতেও তিনি উৎসাহ যুগিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত হলো সাহায্যপ্রার্থীর’। (মুসলিম ১২/৩২, হাদিস নং- ১০৩৩, আহমাদ- ৪৪৭৪)।
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, ‘নিজের হাতে কাজ করে খাওয়ার চেয়ে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী হযরত দাউদ আ. নিজ হাতে কাজ করেই খেতেন’। (সহীহ বুখারি, হাদিস নং- ২০৭২)।
ইসলাম হালাল উপায়ে ব্যবসা করাকে সব সময় উৎসাহিত করেছে। রাসূলুল্লাহ সা: নিজে ব্যবসা করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামও ব্যবসা করেছেন। তিনি কখনোই ভিক্ষাবৃত্তিকে প্রশ্রয় দেননি। এক বেকার আনসার সাহাবী রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তখন তিনি তার একটি বস্তু নিলামে বিক্রি করে তা দিয়ে উপার্জনের পরামর্শ দেন।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর আবির্ভাবকালে আরবে কড়া সুদের প্রচলন ছিল। নৈরাজ্যমূলক অর্থব্যবস্থায় সমাজ পরিচালিত হতো। ভারসাম্যপূর্ণ ও সুখী-সমৃদ্ধ একটি সমাজ বিনির্মাণে তিনি কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে ক্রমেই দারিদ্র্য বিমোচন হয়। এমনকি খলিফা ওমর বিন আবদুল আযীয রহ:-এর যুগে যাকাত দেয়ার মতো দরিদ্র লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল। (সীরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড- ১১, পৃষ্ঠা- ২৬)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর আবির্ভাবকালে আরবে কড়া সুদের প্রচলন ছিল। নৈরাজ্যমূলক অর্থব্যবস্থায় সমাজ পরিচালিত ছিল। ভারসাম্যপূর্ণ ও সুখী-সমৃদ্ধ একটি সমাজ বিনির্মাণে তিনি কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এ লক্ষ্যে তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন- (১) বিত্তশালীদের সম্পদের যাকাত প্রদান। খ. যাকাত ছাড়াও অতিরিক্ত দান-খয়রাতে উৎসাহ প্রদান। (২) বাইতুল মাল থেকে কর্জে হাসানা প্রদান। (৩) ধনীদের কর্জে হাসানা প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ। (৪) সুদি কারবার নিষিদ্ধকরণ। (৫) যাকাত ছাড়াও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কর থেকে অভাবী জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকরণ। (৬) অসহায়, অক্ষম, এতিম ও মুসাফিরদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। (৭) কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন।
এই কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে ক্রমেই দারিদ্র্য বিমোচন হয়। এমনকি খলিফা ওমর বিন আবদুল আযিয রহ:-এর যুগে যাকাত দেয়ার মতো দরিদ্র লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল।
গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাসূলুল্লাহ সা: নানা উদ্যোগ নেন। তিনি জনচলাচলের রাস্তা ও ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করেন। গোসল করে সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসমাবেশে যাওয়ার আদেশ দেন। পরিবেশ রক্ষায় গাছপালা রোপণে উৎসাহিত করেন। খাবার পানির সুবন্দোবস্ত করতে উৎসাহ এবং পানির অপচ করতে নিষেধ করেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ সা: সমাজের এতিম, অক্ষম ও প্রতিবন্ধীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপালন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। বাইতুল মাল থেকে তাদের সহায়তা দানের ব্যবস্থা করে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ সম্পদ রেখে মারা যায়, তা তার উত্তরাধিকারীর। আর যদি কেউ সহায়হীন, এতিম ও বিধবা রেখে যায়, তার ব্যবস্থাকারী আমি’। (তিরমিযী)।
মুসলিম উম্মাহর জন্য হযরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন সর্বোত্তম আদর্শ। আর্থ-সামাজিক কাজে তিনি যেভাবে সম্পৃক্ত থেকে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, তাঁর উম্মাত হিসেবেও আমাদের সকলকে মানবতা ও সমাজের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় নবীপ্রেমের দাবি করা নিছক মুখের বুলি ছাড়া কখনোই অর্থপূর্ণ হবে না।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/