।। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ।।
সীমিত সম্পদের অতি জনবহুল বাংলাদেশে সাড়ে ১১ লাখ শরনার্থীর সংকটের ৬ বছর অতিবাহিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিবৃতি মতে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত গত ৬ বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তার পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার, বিপরীতে চীন মাত্র একবার চার লাখ ডলার দিয়েছে এবং রাশিয়া দিয়েছে মোট ২০ লাখ ডলার। একদিকে রোহিঙ্গা সহায়তা খাতে আন্তর্জাতিক দান ও অনুদান সময়ের সাথে কমে আসছে, অন্যদিকে চীন রাশিয়া ও ভারতের মত বাংলাদেশেরই বড় বড় উন্নয়ন সহযোগিরা মিয়ানমারের জান্তার কাছে অস্ত্র বিক্রি করে, তাদেরকে সামরিকভাবে ক্ষমতায়িত করে, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে ক্রমাগতভাবে ভেটো দিয়ে মিয়ানমারের পক্ষে থেকে এই সংকট সমাধানের পথে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে জাপানের ভূমিকাও হতাশাজনক!
আবাসন, খাদ্য, পানীয়, ঔষধ সরবরাহ, সামাজিক নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ বিপর্যয় সবকিছু আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন খুব জরুরি। বাংলাদেশের দান ও অনুদানের প্রয়োজন নেই, মূল প্রয়োজন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। নতুন আপদসীমান্ত অঞ্চলে বার্মিজ অভ্যন্তরীণ পক্ষগুলোর মধ্যকার যুদ্ধ, গোলাগুলি, ধেয়ে আসা গোলাবারুদ এবং উপর্যুপরি বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন। স্পষ্টতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরাকান আর্মির তৎপরতার সাথে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে, উল্টো নতুন শরণার্থী প্রবাহ তৈরির চেষ্টাও হচ্ছে। জান্তা সমর্থিত বার্মিজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কাগুজে ও শরীরী প্রতিবাদ ছাড়া দৃশ্যত কিছুই করতে পারেনি ঢাকা।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যাকে জাতিসংঘ ‘টেক্সট বুক এথনিক ক্লিনজিং’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই গণহত্যা পরবর্তীতে বাংলাদেশে আসা বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আশ্রয় ও মানবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যেসব বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের সাহায্যের পরিমাণ ও সহানুভূতি ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। পুরো সমস্যাটি যেখানে চীনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে তৈরি, সেখানে চীনের অনুদানও নেই তেমন, নেই প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও। এমতাবস্থায় বাংলাদেশকে মার্কিন কংগ্রেসে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গৃহীত ‘বার্মা এ্যাক্ট’ অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়েছে। কিন্তু চীন সরাসরি এবং ভারত পেছনের দরজা দিয়ে ‘বার্মা এ্যাক্ট’ বাস্তবায়নকে প্রতিহত করতে গেলে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার নতুন সঙ্কট তৈরি হবার ভয় আছে। অথচ চীন এবং ভারত চাইলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান অনেক সম্ভব ছিল।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং আরাকান আর্মির তৎপরতা প্রশ্নে বাংলাদেশের নিজের জাতীয় কৌশল আছে কি, যেটা কি না কূটনৈতিক অংশীদারদের সাথে দর কষাকষির প্রশ্নে উত্তীর্ণ! স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অন্ধকারে রেখে চীন প্রভাবিত পথে রোহিঙ্গা সংকটকে যতো বেশি ‘ডিল’ করার চেষ্টা হচ্ছে, সমস্যাটা ততই গভীর হচ্ছে। বিষয়টা প্রথমে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক, দ্বিতীয়ত সামরিক এবং তৃতীয়ত অর্থনৈতিক। বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে আরাকান সংকটের স্টেইক হোল্ডার কারা, কার লক্ষ্য কী! এবং লক্ষ্যগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কোথায় ও কীভাবে ‘বেষ্ট ফিট’ করবে?
১। মিয়ানমার জান্তা- নাগরিকত্ব অস্বীকার করে জান্তা আসলে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার চায়। জাতিগত নিধনের মাধ্যমে বার্মিজ রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের গণবিলুপ্তিই তাদের প্রধানতম চাওয়া। রোহিঙ্গাদের বসতভূমি, চাষের জমি, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বন্দর ইত্যাদি উপরি পাওনা।
২। চীন- মিয়ানমারের রাজনীতিকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সেনাবাহিনী। এই অবস্থান মেনেই বার্মিজ জান্তাকে হাতে রাখতে রোহিঙ্গা প্রশ্ন চীনের কাছে গৌণ, অর্থাৎ চীনের কাছে রোহিঙ্গারা খরচযোগ্য। রোহিঙ্গা শরণার্থী কিংবা রাখাইনদের জাতিগত নিধন প্রশ্নে চীন চোখ বন্ধ করে রাখে, জাতিসংঘে জান্তা বিরোধী প্রস্তাবে ভেটো দেয়।
অভিযোগ আছে চীনের চাপে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তড়িঘড়ি একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছে। যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে জাতিসংঘ কিংবা কোন আন্তর্জাতিক পক্ষকে জড়িত করা হয়নি। রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছর অতিবাহিত হলেও প্রত্যাবাসন শুরুর কোন ইঙ্গিত নেই, বরং প্রতীয়মান হচ্ছে যে, চুক্তিটির মাধ্যমে চীন বাংলাদেশকে ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে ধোঁকা দিয়েছে। ভাসানচর প্রশ্নে চীন যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক কৌশলকে টেক্কা দিয়েছে হয়ত, কিন্তু সেখানেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সংযোগ দুর্বল বলে পুরো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনাই পরিত্যাক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বৈধতার সংকটে থাকা আওয়ামীলীগ সরকার রোহিঙ্গা শরনার্থীর বোঝা বহনের শর্তে চীন থেকে ২০১৮ সালের রাতের ভোটের একতরফা নির্বাচনে গঠিত সরকারের সমর্থন যুগিয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ একদিকে চীন বাংলাদেশের সাথে প্রতারণা করেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও আত্মঘাতী কাজ করেছে।
৩। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-এশিয়া-প্যাসিফিক ও অর্থনৈতিক বিশ্বে চীনের ক্রমাগত উত্থানের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের বহুবিধ সামরিক, বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্বগত মোকাবেলার কৌশল আছে। দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান, হংকং, কোয়াড কিংবা চীনকে প্রযুক্তিগত মোকাবেলার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর-আরাকান কেন্দ্রিক নতুন একটি মার্কিন ফ্রন্ট খোলার পরিকল্পনা কিংবা চেষ্টা আছে কি না, সেটা সামরিক ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে গভীরভাবে যাচাই করা দরকার। তবে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার আন্তর্জাতিক সক্রিয় পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়তে পারেন-
- নূপুর শর্মা, হেট স্পিচ ও বাকস্বাধীনতা
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
৪। জাপান- চীনের সাথে পাল্লা দিয়ে জাপান মিয়ানমারের অর্থনীতি ও বিনিয়োগে সক্রিয়। জাপান সেনা শাসনের বদলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সচল করতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা ম্রিয়মাণ। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে জাপান সরকার অনেকটাই উদাসীন’।
৫। আসিয়ান- আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষদের প্রভাব ও ঝামেলায় মিয়ানমার নিয়ে নিরুপায়। আসিয়ান ভুক্ত দেশসমূহও প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনঃসচল করতে চায়। জান্তার সাথে যুদ্ধ শুধুমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই হচ্ছে না বরং আরও কয়েকটি দেশের সীমান্তেও হচ্ছে। ফলে অব্যাহত অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের পুরোনো সমস্যার পাশাপাশি নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীল সীমান্ত, যুদ্ধ ও শরণার্থী সমস্যা। এমতাবস্থায় সঠিক কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের সহানুভূতি ও সমর্থন পেতে পারে।
৬। ভারত- রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বড় খেলোয়াড় না হলেও ভারত আরাকানে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কালাদান বন্দরে বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উপযোগিতা নিশ্চিত করতে চায়। ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের আন্তরিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। কোয়াডসহ চীনকে ঠেকানোর অপরাপর বিষয়ে ভারত আমেরিকার ছায়ায় কাজ করলেও আরাকান প্রশ্নে ভারতের একটা ভিন্ন দৃষ্টি থাকতে পারে। একই সাথে ভারত চীনকে বিরক্ত করতে চায় কিন্তু সে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন উপস্থিতি চায় না। মার্কিন দিক থেকে বিষয়টা পরস্পর বিরোধী বলে আরাকান ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান অস্পষ্ট।
৭। ইউরোপ-রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রশ্নে ইউরোপ এবং হেগের আন্তর্জাতিক আদালত সরব। বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের বারবার মর্টার শেল নিক্ষেপসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাইন পুঁতে রাখা, মর্টার শেল নিক্ষেপে হত্যাসহ সীমান্ত সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টার আহবান জানিয়ে আসিয়ান ও ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সাথে আলাদা বৈঠক হয় ঢাকায়। ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিরা বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছেন।
৮। আরাকান আর্মি- চীন-জান্তা বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো একে অপরকে সাহায্য করছে বলে মিয়ানমারের বিশাল এলাকা জান্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এতে আরাকান আর্মিও শক্তি পাচ্ছে। ১৯ সেপ্টেম্বর আরাকান আর্মির মূল রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ) অনলাইন প্রেস কনফারেন্স করে নাটকীয় এক ঘোষণায় বলেছে, ‘আরাকানের যেকোনো বিষয়ে বৈশ্বিক সবাইকে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে ইউএলএ এবং আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। সে রকম হলে ইউএলএ নিজে থেকে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করবে’। (সূত্র- আলতাফ পারভেজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, প্রথম আলো)। এমতাবস্থায় মার্কিনিরা আরাকান আর্মিকে সাহায্যের উপায় খোঁজছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। ইউএলএ’র ঘোষণাকে মার্কিনিরা মৌনসমর্থন দিলে জান্তা বিরোধী জোট এনইউজে এবং ‘আরাকান আর্মি’র সাথে বাংলাদেশকে একটা সমঝোতার চাপ তৈরি হবে। এতে জান্তা ও চীন সমর্থন দিবে না বলে আদতে প্রত্যাবাসন আরও কঠিন হবে এবং বিষয়টা আরাকান বিচ্ছিন্নতার প্রশ্ন, অস্ত্র সরবরাহে সহযোগিতা, গোয়েন্দা সাহায্য ইত্যাদি বহু বিষয়ে জড়িয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামে দুটি চুক্তি সই করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে মার্কিন বাহিনীর খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় হয়ে থাকে। জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে হয় সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময়। অনেকেই মনে করেন এর সাথে আরাকান বিচ্ছিন্নতার সম্ভাব্য প্রস্তুতির সংযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকায়নে ফান্ডিং এর প্রস্তাবও দিয়েছে।
অনেকের মতে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান ও মূল লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত যে, “আরাকানের বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্রয় না দিয়েই অর্থাৎ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতাকে মেনেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্থায়ী প্রত্যাবাসন ও নিরাপত্তা প্রশ্নে সরাসরি জান্তাকে চাপ দেয়া। সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া প্রত্যাবাসন না হলে বাংলাদেশ আরাকানের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকান্ডের দায় নিবে না”। এর জন্য বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা ও সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। চীনকে সাক্ষী রেখে বার্মিজ জান্তার সাথে দর-কষাকষিতে ব্যর্থ হলে বিপদ আরও বড় হবে। বাংলাদেশের অনির্বাচিত দুর্বল সরকার ক্ষমতার জন্য বিদেশি সমর্থন নির্ভর বলে তার কূটনৈতিক সক্ষমতা কম।
দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে, চীনকে মোকাবেলা কিংবা বিরক্ত করতে আমেরিকার আকাক্সক্ষাকে বুঝা। ২০ বছর পরে আমেরিকা আরাকানে কোন সামরিক ভূমিকা নিবে কি না সেটা বুঝা। এর দুটি ডাইমেনশন আছে। এক- সরাসরি টেবিলের উপরের কূটনীতি। এখানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রশ্নে মার্কিন রপ্তানি বাজারে দায়বদ্ধ। র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতি দিয়ে তারা সরকারের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। ফলে গণতন্ত্র উন্মুক্ত করা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করে দর কষাকষির শক্তি বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কম। অন্যথায় করতে হবে টেবিলের নিচের কূটনীতি।
মার্কিনিদের সাথে যত বেশি আন্ডার-টেবিল ডিল হবে, মূল লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ তত বেশি সরে যাবে। ভাসানচর, আকসা-জিসোমিয়া’র চাপ, মার্কিন অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব এবং আরাকান আর্মির ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রকৃতি নির্ণয় করে এই আকাক্সক্ষা বুঝতে হবে।
যে কোন ভুল ক্যালকুলেশন চীন ও আমেরিকা দুই পক্ষের সাথে দর কষাকষিকে কঠিন করে তুলবে। সঠিক কৌশল নিতে বাংলাদেশকে দলীয় রাজনীতির এবং অবৈধ ক্ষমতার বহিঃসমর্থনের বাঁকা পথের বাইরে এসে সাবেক ও বর্তমানের দেশিয় ও আন্তর্জাতিক সামরিক ও কূটনৈতিক ‘মেধাবী’দেরকে জড়ো করতে হবে। পাশাপাশি নিজের বৈধ দর কষাকষির শক্তি বাড়াতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় সচল করতে হবে, মানবাধিকার পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে, এতে টেবিলের নিচের অবৈধ দর কষাকষির দায় ও চাপ কমে আসবে। মিয়ানমার এমন বড় সমস্যা হয়ে আসছে, এটা অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সামলানোর মতো মামুলি বিষয় নয়।
– ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশঃ অর্থনীতির ৫০ বছর, অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা, বাংলাদেশের পানি, পরিবেশ ও বর্জ্য। ই-মেইল- faiz.taiyeb@gmail.com
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/