শাতিমে রাসূলের বিধান এবং শানে রেসালাতের গুরুত্ব

।। মুফতি রাশেদুল ইসলাম মেখলী ।।

সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত অগণিত মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে। তাদের মাঝে এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ সম্মাননায় আর কারো তুলনা নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বিশ্বনবীর মর্যাদা, সম্মান ও আলোচনাকে সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়গুলো ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَرَفَعْنَا لَـكَ ذِكْرَك ‘আর আমি আপনার খ্যাতিকে সুউচ্চ করেছি’। (সূরা আলাম নাশরাহ)।

وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّـلْعٰلَمِيْنَ ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি’। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত- ১০৭)।

وَمَاۤ  اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا كَآفَّةً  لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلٰـكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ

‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সূরা সাবা, আয়াত- ২৮)।

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللّٰهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللّٰهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللّٰهَ كَثِيْرً

‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য তো রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’। (সূরা আহযাব, আয়াত- ২১)।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মহামানব এটা শুধু পবিত্র মহাগ্রন্থ কুরআন ও হাদিস তথা ইসলামী মানষিকতারই বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর অকল্পনীয় সহনশীলতা, ধৈর্য শক্তি, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, চলাফেরা, আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, সুমধুর ব্যতিক্রমী ব্যবহার, নিষ্ঠাবান সংগ্রামী জীবন, তার পর্যবেক্ষণ পারদর্শিতা, বিচক্ষণতা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা, নারী অধিকার, মানবাধিকার, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে এবং সেগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিশ্বের বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী অমুসলিম মনীষীরাও মহানবী (সা.)এর প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব বিশ্বজোড়া খ্যাতনামা মনীষীরা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, তিনিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহামানব।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্বীয় গুণাবলীর কারণে তিনি যে সমগ্র জাতির মধ্যে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সেটা পৃথিবীর বহু বিখ্যাত অমুসলিম ঐতিহাসিক তথা চিন্তাবিদগণ নানা প্রসঙ্গে স্বীকার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকজন বরেণ্য অমুসলিম মনীষীদের উক্তি এখানে তুলে ধরা হলো-

(১) প্রখ্যাত খ্রিস্টান লেখক, মাইকেল এইচ হার্ট ১৯৭৮  সনে “ঃযব যঁহফৎবফ” নামে একটি বই প্রকাশ করেন এবং তাতে জগত সেরা ঐতিহাসিক’ ১০০ মনীষীর মধ্যে প্রথমেই লেখেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর নাম। দ্বিতীয়ত যিশুখ্রিস্টের (হযরত ঈসা আ.)। মাইকেল হার্ট তার ঐতিহাসিক গ্রন্থে বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব বা সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে আমি মুহাম্মদ (সা.)কে নির্বাচন করায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু সর্বকালের ইতিহাসে মুহাম্মদ (সা.) এমনই এক ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় এবং ধর্মের বাইরের উভয় ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেছেন। সে নিজের বক্তব্যের দৃঢ়তা প্রদর্শন করে বলেছেন- muhammad unlike jesus was secular as well as religious leader… he may well rank as the most influential political leader of all times.it is the unparalleled combination on secular and religious influence which i entitle muhammad to be considered most influerrtial single person in humman history.

(২) ইংরেজ পন্ডিত জর্জ বার্নাড’শ এভাবে মন্তব্য করেন।

“I believe if a man like him were to assume the dictatorship of the modern world he would succeed in solving its problems in a way that would bring much needed peace and happiness.”

যদি মহানবী (সা.)এর মতো কোনো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি আধুনিক বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারতেন তবে তিনি বর্তমান জগতের সমস্যাবলীর সকল সমাধান টেনে দিতেন। যিনি মানুষের বহু আশা-আকাক্সক্ষা আর সুখ-শান্তি এনে দিতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হতেন। এজন্যই বলা হয়- “Islam is a complete code of life”

(৩) ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকার সুবিখ্যাত লেখকের বক্তব্য- “OF ALL THE RELIGIOUS PERSONALITIES OF THE WORLD HAZRAT MOHAMMAD WAS THE MOST SUCCESSFUL বিশ্বের সকল ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে হযরত মুহম্মদ ছিলেন সবচেয়ে সফল। (???)

(৪) মহিশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেএস রামকৃষ্ণ ১৯৭৯ সনের হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতি অভিভূত হয়ে “MUHAMMAD-THE PROFET OF ISLAM” নামে একটি বই প্রকাশ করেন। তার মতে, পৃথিবীর একজন সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে হলে বিশ্বের মানবজাতিকে প্রভাবিত করা ধর্ম আর দর্শনসমূহ অধ্যয়ন অপরিহার্য যে, প্রতিবেশি অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি করে। তিনিও বিভিন্ন মহান ব্যক্তিত্বের উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন।

(৫) বিশ্বনবী (সা.)এর জীবনী লিখতে গিয়ে খ্রিস্টান লেখক ঐতিহাসিক উলিয়াম মুর বলেছেন-

He was the mater mind not only of his own age but of all ages অর্থাৎ- “মুহাম্মদ (সা.) যে যুগে পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়েছিলেন তাকে শুধু সেই যুগেরই একজন মনীষী বলা হবে না, বরং তিনি ছিলেন সর্বকালের,সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী”।

বাস্তবতার নিরিখে ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে বিষয়টি শতভাগ ফুটে উঠে। ইতিহাস সাক্ষী! পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে, যে কোন যুগে,যারাই আল্লাহর নবীকে সম্মান,শ্রদ্ধা ও পূর্নাঙ্গ অনুসরণ করেছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের স্মরণ ও আলোচনাকেও যুগে যুগে সমুন্নত রেখেছেন। যেমন, সম্মানিত সাহাবীগণ মুসলিম উম্মাহর জীবনে প্রাতস্মরণীয় হয়ে আছেন।

এছাড়াও যুগে যুগে নবী প্রেমিক মনীষীগণ মানবজাতির ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তারা নিজেদের জীবনের চেয়েও রসূলুল্লাহ (সা.)কে অধিক মুহাব্বত করতেন। নবীর সাথে মুমিনদের ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَلنَّبِىُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ‌ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمْ‌

নবী মুমিনদের নিকট তাহাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। (সূরা আহযাব, আয়াত- ৬)।

রাসূলের অনুসরণকে আল্লাহ তাআলা স্বীয় ভালোবাসার মাপকাঠি বলে উল্লেখ করেছেন, ইরশাদ হয়েছে-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِىْ  يُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ وَيَغْفِرْ لَـكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ‌ وَاللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ 

অর্থাৎ- বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত- ৩১)।

অপরদিকে রাসূল (সা.)এর সাথে শত্রুতা পোষণ ও বিষোদগারকারীরা পড়ে আছে, ইতিহাসের অভিশপ্ত অতীতে। নবী করিম (সা.)এর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের ফলে বহু শক্তি সভ্যতা ও রাজত্ব ধ্বংস হয়ে গেছে। এরমধ্যে পারস্য সম্রাটের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক যুগেও আদর্শিকভাবে পরাজিত কিছু কুলাঙ্গার সভ্যতার সকল নিয়ম-নীতি অমান্য করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে, মুসলমানদের কলিজার টুকরা নবীকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে। কার্টূন আঁকে। ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। হযরতকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও বিষোদগার করার দুঃসাহস করে। এরা কোনো মূলধারার সুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, বরং এরা হলো সমাজের কীট।

কারণ,অন্যান্য ধর্মের মনীষীরা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা নবী করিম (সা.) সম্পর্কে এত সুখ্যাতি ও উন্নত মন্তব্য করেছেন, যা কোনো অংশেই মুসলিম মনীষীদের চেয়ে কম হবে না। বিশ্ব সাহিত্য মহানবী (সা.)এর প্রশংসাতেই ভরপুর, এখন ইসলামের উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষাপরায়ণ কোনো অসুস্থ মানসিকতার ব্যক্তি নবীজী (সা.)কে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও ব্যঙ্গ করলে এর দায় ঐ ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা এর সমর্থক রাষ্ট্র ও সভ্যতাকেই নিতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)এর অবমানাকারীর ওপর আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে লানত করেছেন। তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম অপমানজনক শাস্তি। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ওপর আল্লাহ লানত করেছেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন এমন শাস্তি, যা লাঞ্ছিত করে ছাড়বে’। (সুরা আহজাব- ৫৭)।

‘রাসূলুল্লাহ (সা.)এর অবমাননাকারী’ বিষয়ে চার মাজহাবই দুটি পয়েন্টে একমত যে, ১) সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। ২) তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু ইখতেলাফের জায়গা হলো- শাতেমে রাসূলকে বা রাসূলুল্লাহর (সা.) গালিদাতা বা কটূক্তিকারীকে হত্যার পূর্বে তার কাছে তাওবা চাওয়া হবে কি না? বা সে যদি নিজ থেকে তাওবা করে তাহলে কি তা গ্রহণযোগ্য হবে? এখানে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো শাতেমে রাসুলের শাস্তির বিষয়ে চার মাজহাবের ফাতওয়া কী।

হানাফি মাজহাবের ফাতওয়া

হানাফি মাজহাবের সকল আলেম একমত যে, কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কটাক্ষ করলে কিংবা তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলে অবশ্যই তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে ৷ হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ করা হয়েছে-

قال ابو بكر بن المنذر أجمع عوام أهل العلم علی من سب النبی صلي الله عليه وسلم يقتل وممن قال ذالك مالك بن انس والليث وأحمد واسحاق وهو مذهب الشافعي

হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আবু বকর ইবনে মুনজির (রহ) বলেন, “এ ব্যপারে সকল উলামায়ে কেরাম একমত যে, যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে কটাক্ষ করবে বা গালি দিবে তাকে হত্যা করতে হবে। ইমাম মালিক ইবনে আনাস, লাইস, আহমদ, ইসহাক ও ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। (ফতোয়ায়ে শামি- ৪/৪১৭ পৃষ্ঠা)।

শাফেয়ী মাজহাবের ফতোয়া

قال الخطابي لا أعلم أحدا من المسلمين اختلف في وجوب قتله

শাফেয়ী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, “নবী (সা.)-এর গালিদাতাকে হত্যা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই”। (আস সারেমুল মাসলুল- ১/৯ পৃষ্ঠা)।

মালেকী মাজহাবের ফতোয়া

মালেকি মাজহাবের আলেমগণ সকলেই একমত যে, কোনো ব্যক্তি যদি নবী (সা.)-কে কটাক্ষ করে কিংবা গালি দেয় তাহলে তাকে হত্যা করা জরুরি এবং তার তওবা গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং তাকে মুত্যুদণ্ড দিতে হবে। দলিল-

ومن سب الله او رسوله أو غيره من ألانبياء عليهم السلام قتل حدا ولا تسقطه التوبة

যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূল (সা.) কিংবা অন্য কোনো নবীকে গালি দেয় তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হবে। তওবার কারণে তার হত্যার বিধান রহিত হবে ন। (আজ জাখিরা ফি ফিকহিল মালেকি, ১১/৩০ পৃষ্ঠা)।

হাম্বলী মাজহাবের ফতোয়া

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)এর মাজহাবের আলেমগণ সকলেই একমত যে, কোনো ব্যক্তি নবী (সা.)কে কটাক্ষ করলে কিংবা গালি দিলে তাকে হত্যা করা হবে। তাকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হবে না। দলিল-

وقد نص أحد علی ذلك فی مواضع متعددة قال حنبل سمعت ابا عبد الله يقول كل من شتم النبي صلي الله عليه وسلم أو تنقصه مسلما كان أو كافرا فعليه القتل واري أن يقتل ولا

ইমান আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) একাধিক স্থানে একথা ব্যক্ত করেছেন যে, যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে গালি দেবে অথবা মানহানী করবে, তাকে অবশ্যই হত্যা করা হবে। চাই সে মুসলিম হোক বা কাফের। আমি মনে করি, তাকে তাওবার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা হোক। (আস সারেমুল মাসলুল- ১/১০ পৃষ্ঠা)।

শাতিমে রাসূল সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য

 ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বক্তব্য-

قالَ أبُو يُوسُف: وأيُّما رَجُلٍ مُسْلِمٍ سَبَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أوْ كَذَّبَهُ أوْ عابَهُ أوْ تَنْقُصُهُ؛ فَقَدْ كَفَرَ بِاللَّهِ وبانَتْ مِنهُ زَوْجَتُهُ؛ فَإنْ تابَ وإلا قُتِلَ. وكَذَلِكَ المَرْأةُ

কোনো মুসলমান যদি রাসূল (সা.)কে গালি দেয় বা তাঁর দোষ বর্ণনা করে অথবা তার সম্মানকে খাটো করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। যদি সে তাওবা করে তাহলে তা কবুল হবে অন্যথায় তাকে হত্যা করে ফেলা হবে। এই বিধান নারী পুরুষ উভয়ের জন্যে। (কিতাবুল খারাজ- ১৯৯ পৃষ্ঠা)।

ইমাম তাহাবী (রহ.) এর বক্তব্য-

ইমাম ত্বহাবী ( রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে গালি দেবে অথবা তাঁকে খাটো করে উপস্থাপন করবে তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। ইমাম জাসসাস (রহ.) বলেন, এই কথা থেকে প্রমাণিত হলো- রাসূল (সা.)কে গালি দিলে ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে যায়, অর্থাৎ শাতেম আর মুরতাদের বিধান একই। (শরহে মুখতাসারুত তাহাবী- ৬/১৪১-১৪২, শায়খ সায়েদ বাকদাশ তাহকিককৃত নুসখা)।

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এর বক্তব্য-

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উল্লেখ করেন, সব মাজহাবের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত- নবী করিম (সা.)এর অবমাননাকারী কাফের; তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই।

আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) এর বক্তব্য-

আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হলো, নবী করিম (সা.)এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) বলেন, নবী (সা.)এর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই, এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেছেন বলে আমার জানা নেই। ইমাম আবু বকর আল ফারেস এবং কাজি আয়াজও ইজমার বিষয়ে একই বক্তব্য পেশ করেছেন।

শাস্তি কার্যকরের দায়িত্ব কার?

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং ইমাম শাফেয়ী (রহ.)এর মতানুসারে শাতিমে রাসূলের শাস্তির বিধান কার্যকর করবে রাষ্ট্রপ্রধান, দেশের বিচার বিভাগ বা তার প্রতিনিধিরা।

বর্তমানে উলামায়ে কেরাম এমত পোষণ করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)এর অবমানকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করবে মুসলিম উম্মাহ। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। কখনো নিজের হাতে নবী অবমাননাকারীকে হত্যা করবে না। কারণ, প্রশাসনিক ব্যবস্থার বাইরে এমন অনুমতি থাকলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি হবে।

উপরে উল্লিখিত ইমামদের মতামত, ফাওতয়া ও আলোচনা থেকে ৪টি বিষয় স্পষ্ট। যথা-

১। রাসূল (সা.)এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে।

২। তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই।

৩। মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্র বা সরকারের।

৪। শাসকদের জন্য আবশ্যক এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, সাধারণ মুসলমানদের জন্য এক্ষেত্রে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী নাযেমে দারুল ইকামাহ, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।