শিশুকে নামাযে অভ্যস্ত করে তুলুন

।। উম্মে আব্দুল্লাহ ।।

শিশু আল্লাহ তাআলার বিস্ময়কর এক নেয়ামত। কোমল এক সৃষ্টি। শিশু মানেই সুন্দর, নিষ্পাপ এক মুখচ্ছবি। নির্মল চাহনি। শিশুকে আল্লাহ তাআলা এমন উর্বর এক পাত্র দান করেছেন, শিশুর জীবনে সর্বপ্রথম ঐ পাত্রে যা পড়ে, তা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার মাঝে বদ্ধমূল হয়ে থাকে।

কাজেই শিশুদেরকে ভবিষ্যতের উত্তম ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, তার শৈশবের যতœ নিতে হবে। শৈশবকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে। শিক্ষা দিতে হবে দ্বীন, আদব ও শিষ্টাচার। একটি চারা গাছের যতœ নিলে যেমন বড় হওয়ার পর গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়, তদ্রুপ একজন শিশুর জীবনও তেমন। উপমহাদেশের ইসলামি দার্শনিক ও চিন্তাবিদ আল্লামা আবুল হাসান আলি নদভী (রহ.) বলেন, একটি শিশু হয়তো বাগানের ফুল নয়তো কাঁটা’। শৈশবে শিশুর যত্ন নিলে বড় হয়ে সে ফুলের মতো সুবাস ছড়াবে। আর যদি অবহেলিত হয়, তাহলে কাঁটার মতো বিঁধবে।

শিশুরা অনুকরণ ভালোবাসে। বড়রা কী কী কাজ করে? তা তারা অনুসরণ করার চেষ্টা করে। একজন শিশুকে নামাযে অভ্যস্ত করতে হলে সর্বপ্রথম তার মা-বাবাকে নামাযে অভ্যস্ত হতে হবে। বিশেষভাবে মাকে। কারণ, সন্তান লালনপালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মা। প্রতিটি ঘরে দৈনন্দিন পনেরো থেকে বিশ মিনিট এমন একটি বৈঠক হওয়া উচিত, যেখানে বাচ্চাকে আল্লাহ তাআলার পরিচয় দেয়া হবে। তার হৃদয়ে মহান রবের ভালোবাসার বীজ বপন করবে। ঘরের বড় শিশু ছোটদেরকে নিয়ে আল্লাহর পরিচয়, তাঁর নেয়ামত ও ইহসানসমূহের গল্প করবে। নবীজি ও সাহাবিদের সীরাত থেকে গল্প শোনাবে।

আরও পড়তে পারেন-

এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাব বিস্তারকারী। কারণ, আমরা যখন সারাদিন দুনিয়ার খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক, খেলাধুলা ও স্কুল-বাজারে আসা যাওয়া করি তখন শিশুর মনে এই কল্পনাটাই বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, দুনিয়াতে আমাদের কাজই হয়তো এগুলো। কিন্তু তার সামনে যখন প্রতিদিন পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর্যন্ত আসল দুনিয়ার, মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা হবে, তখন সারা দিনের রঙিন দুনিয়ার প্রভাব তার অন্তর থেকে মুছে যাবে। আল্লাহ ও ইসলামের প্রতি তার হৃদয়ে ভালোবাসার চারাগাছ জন্ম নিবে। তাকে আর নামাযের জন্য বকাঝকাও করতে হবে না। সে নিজেই বলবে, আম্মু আমার সাত বছর কখন হবে? আমি কখন নামায পড়বো? তখন আপনি তাকে বলবেন, বাবা! এইতো আর মাত্র দুইমাস, একমাস, এক সপ্তাহ বাকি আছে। তুমি নামায পড়তে পারবে।

যখন শিশু নিয়মিত কোনো ভালো কাজ শুরু করবে, যেমন- নামায আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি, তখন তাকে উৎসাহ দিতে হবে। পুরষ্কৃত করতে হবে। চল্লিশ দিন লাগাতার নামায আদায় করলে তাকে বিশেষ পুরস্কার দিতে হবে, মিষ্টিমুখ করতে হবে। কুরআন পড়া শুরু করলে তাকে পুরস্কৃত করতে হবে। মানুষ যেভাবে বাচ্চার জন্মদিনে উৎসব পালন করে, আপনি তার ভালো কাজের উপর আনন্দিত হোন, উৎসাহ যোগান। এর দ্বারা তার মাঝে আমলের প্রতি শ্রদ্ধা ও আগ্রহ তৈরি হবে।

সাত বছর বয়স থেকে শিশুদের নামাযের প্রতি পাবন্দ করে তুলুন। নবীজি বলেন- তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের নির্দেশ দাও, যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। (নামায আদায় না করলে) তাদেরকে প্রহার করো যখন তাদের বয়স দশ বছর হবে। (সুনান আবু দাউদ- ৪৯৫)।

প্রথম দিন থেকেই ফজরের প্রতি শিশুকে উৎসাহ দিন। স্নেহ-মুহাব্বত দিয়ে ঘুম থেকে জাগান। কোলে নিয়ে ওযু করান। তার নামাযের জন্য মুসল্লা বিছিয়ে দিন। অতঃপর দেখবেন, সে এমনিতেই নামাযের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠবে। এছাড়া প্রতিদিনের দ্বীনি আলোচনায় ইসলামের ইতিহাস, সাহাবিদের ঈমানদীপ্ত কাহিনীগুলো শোনাবেন। এর মাধ্যমে শিশুর দ্বীনি আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হবে। সর্বশেষ শিশুকে নামাযের প্রতি আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে নামাযের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। এবং আল্লাহ তাআলার কাছে বিনয়াবনত হয়ে এই দুআ করতে হবে-

رَبَّنَا ھَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّاجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا

এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করে এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করো। (সূরা ফুরকান- ৭৪ আয়াত)।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।