স্বাধীনতা: ইসলামের দৃষ্টিতে

।। হাফেয মাওলানা আবু সালেহ ।।

ইসলাম শান্তি, ইনসাফ ও মানবতার ধর্ম। ব্যক্তিতে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে ও পররাষ্ট্রে মানবতা ও ইনসাফ বজায় রাখা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই মানবতা প্রতিষ্ঠায় যখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কোন প্রকার জুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচার অথবা পেশিশক্তির জোরে চাপিয়ে দেয়া কোন মতবাদ, তখন ইসলাম সে প্রতিকুলতার মূলোৎপাটনে তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়। কোনো বিদেশি শক্তি অথবা দেশি স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি-গোষ্ঠী যদি কোনো জাতির উপর কর্তৃত্বশালী হয়ে বসে, তাদের গোলাম বানাতে চেষ্টা করে, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করে, তখন ইসলাম সে গোলামীর জিঞ্জির ছিঁড়ে ফেলতে প্রাণপণে লড়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। ‘প্রকৃতিগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন’ এই নীতিরই জয়গান গায় ইসলাম। যুগ-যুগান্তরে ইসলাম এই নীতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। ইসলাম কারো পদলেহন বা চাটুকারিকাতাকে প্রশ্রয় দেয় না। মূলত চাটুকাররা দেশ ও জাতির শত্রু।

স্বাধীনতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

‘স্বাধীনতা’ অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টির গোলামি না করা, কারো কাছে মাথা নত না করা যেহেতু মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, তাই তা স্বভাবধর্মেরও অন্তর্ভুক্ত। আর বাস্তব অর্থে স্বভাব ধর্মের নামই হলো ইসলাম। এ প্রসঙ্গে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ফিতরাতের (প্রকৃতির) অনুসরণ করো। যার ওপরে তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন’। (সূরা রুম, আয়াত- ৩০)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতকই স্বভাব ধর্মের উপর জন্ম গ্রহণ করে। তাই তারা কারো গোলামী স্বীকার করে না। স্রষ্টা ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না। গোলামী করতে হয় তো কেবল একক, সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। কেবল তাঁকেই মালিক হিসাবে সিজদা করে। এভাবেই মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব বিকশিত করে ইসলাম। ব্যক্তির ভেতর থেকে স্বাধীনতার মানসিকতাকে উজ্জীবিত করে এই ফিতরতী দ্বীন। সব পরাধীনতার জিঞ্জির, সব ব্যক্তি ও প্রাণী এবং জড় পদার্থের নাগপাশ থেকে মুক্ত থাকার নির্দেশনা দেয় ইসলাম।

ইসলামের এই স্বাধীনতা-দর্শন এত সুস্পষ্ট  এবং দ্ব্যর্থ যে, ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারেও জবরদস্তি বা বলপ্রয়োগের অনুমোদন দেয় না। কুরআন নাযিল হওয়ার পরেও শেষ নবী এবং তার উত্তরাধীকারীদের পক্ষ থেকে দাওয়াত পাওয়ার পরও যদি কেউ স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ না করে- তাকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার এখতিয়ার নেই কারো।

এ ক্ষেত্রে ইসলাম মানুষকে বিবেকের স্বাধীনতা দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ইসলাম গ্রহণে কারো প্রতি কোনো জোর জবরদস্তি নেই। (বাকারা, আয়াত- ২৫৬)।

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা অর্জন, রক্ষা এবং স্বদেশ প্রেমের গুরুত্ব

একটু আগে আমরা উল্লেখ করেছি, এক আল্লাহ ছাড়া কারো গোলামীর স্বীকৃতি দেয় না ইসলাম। স্রষ্টার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ হয় এমন কারো কোনো নির্দেশ পালন করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয় না। সকল অবস্থায় যে কোন জালিম, জবরদখলকারী ও শোষকের নির্যাতন, জবরদখল এবং শোষণ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত-স্বাধীন করতে নির্দেশ দেয় ইসলাম। যেমন- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তি বা শক্তির এমন আনুগত্যের অনুমতি নেই, যদ্বারা স্রষ্টার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ হয়। (বুখারী ও মুসলিম)।

তিনি আরো ইরশাদ করেন, জালিম সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা (প্রতিবাদ করা) উত্তম জিহাদ। (তিরমিযী)।

যদিও ইসলাম রক্তপাত, হানাহানি, মারামারি, হত্যা, অথবা ইসলাম গ্রহণে জবরদস্তির অনুমোদন দেয় না। কিন্তু অন্যায় হত্যা, অত্যাচার-অবিচার প্রতিরোধে প্রয়োজনের সময় শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধ করতেও নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আপন স্বাধীন রাষ্ট্রকে স্বাধীন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে তাকিদ দেয় ইসলাম। কেননা, কোনো জুলুমকেই  প্রশ্রয় দেয় না ইসলাম। জালিমদের খপ্পর থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করতে লড়াই করার তাকিদ দিয়ে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কী হলো! তোমরা কেন লড়াই করছো না আল্লাহর রাহে অসহায়, মজলুম, দুর্বল, নারী ও শিশুদের রক্ষা করতে। অথচ তারা আর্তনাদ করে বলছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নির্যাতিত, নিপীড়িত! এই জালিম ও অত্যাচারী জনপদ থেকে আমাদের মুক্ত করে দাও! তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সহায় শক্তি প্রেরণ করো, আমাদের জন্য সাহায্যকারী অভিভাবক নিযুক্ত করো’। (নিসা- ৭৫)।

জুলুম, শোষণ ও বৈরিশক্তির রাহুমুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পাশাপাশি কল্যাণকর ও ইনসাফপূর্ণ শাসন কাঠামো গড়ারও নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অধিক কঠিন। তাই তো আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন, ‘তোমরা সর্বদাই তোমাদের শত্রুদের প্রতিহত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সাবধান থাকবে। এই প্রস্তুতি দ্বারা তোমরা তোমাদের এবং আল্লাহর দুশমনদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখবে’। (সূরা আনফাল, আয়াত- ৬০)।

রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনে আমরা এই স্বাধীনতা ও ঈমান রক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রিম প্রস্তুতি গ্রহণের নিদর্শন দেখতে পাই। সূরা আহযাবে যা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

হিজরী ৫ম বর্ষে উপনিত হয়েছেন রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম। ইতিপূর্বে মদীনা সনদের মাধ্যমে মদীনা শহর একটি স্বাধীন নিরাপদ কল্যাণ রাষ্ট্রের অবয়ব ধারণ করেছে। এখানে সুখে-শান্তিতে, সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে বসবাস করছেন মুসলিম, (মুহাজির-আনসারী সাহাবী) ইহুদি ও কিছু সংখ্যক মুশরিক সম্প্রদায়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। কেউ কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না। কারো প্রতি কারো কোনো অভিযোগ নেই। সর্বোচ্চ আইনপ্রণেতা ও প্রয়োগকারী খোদ মুহাম্মদ (সা.)।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি কোনো অন্যায়, হত্যা, জুলুম, শোষণ অথবা পক্ষপাতকে প্রশ্রয় দেন না। এমন অনাবিল পরিবেশেই বয়ে চলেছে মদীনায় সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন। তারপর হঠাৎ করেই মুসলমান বিদ্বেষী কিছু সংখ্যক মুনাফিক ইয়াহুদীদের সংকীর্ণ হৃদয়ে হিংসার অনল জ্বলে উঠলো। তারা মক্কায় গিয়ে কট্টরপন্থি মুশরিকদের সাথে আত্মঘাতী চুক্তি করলো। সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে তারা ইসলামের নাম নিশানা মিটিয়ে দিতে সংকল্প করলো। নিরাপদ, শান্ত, স্বাধীন মদীনা রাষ্ট্রকে তাদের দখলে নিয়ে নিবে। মুসলিম জাতিকে নিশ্চি‎হ্ন করে দিয়ে সেখানে ইহুদী ও শিরকবাদী শোষণব্যবস্থা কায়েম করবে। এতে নবীন মদীনা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হলো। জবরদখলে উন্মত্ত কূটিল সাম্রাজ্যবাদী ইহুদীরা তাদের মিত্র শক্তি মক্কার মুশরিকদের নিয়ে মদীনার উপকণ্ঠে উপস্থিত হয়ে গেলো। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) তার অনুগত ও আল্লাহর রাহে জান দিতে সর্বদা প্রস্তুত আনসার ও মুহাজির সাহাবিদের সাথে নিয়ে মদীনা রাষ্ট্র রক্ষায়, মদীনার স্বাধীনতা রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করলেন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বীর সিপাহসালার হযরত মুহাম্মদ (সা.) মদীনার স্বাধীনতা রক্ষার্থে শত্রু বাহিনীকে হটাতে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। যথাযথ সমর কৌশল অবলম্বন করলেন। বিশাল সংখ্যার শত্রু বাহিনী যাতে মদীনার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য দীর্ঘ পরিখা খননের সিদ্ধান্ত নিলেন। (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন, খণ্ড ৭)।

উল্লেখ্য, রাসূল (সা.) ও তার যোগ্য অনুসারী, ত্যাগী সাহাবায়ে কেরাম যে কারণে জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তার মূলে ছিলো তাঁদের খাঁটি ঈমানী জযবা এবং অকৃত্রিম স্বদেশ প্রেম। এ যুগের আমাদের মতো তাদের দেশপ্রেমে কোনো ভেজাল ছিল না। দেশপ্রেমের উজ্জ্বল বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই রাসূলের প্রাত্যহিক জীবনে। বুখারী শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, দূর-দূরান্ত থেকে ফিরে আসার সময় তৎকালীন স্বাধীন রাষ্ট্র মদীনার সীমা, ওহুদ পাহাড়ের ওপর যখন রাসূল (সা.)এর দৃষ্টি পড়তো, তখন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলে উঠতেন, ‘এ ওহুদ আমাকে ভালোবাসে, আর আমিও তাকে ভালবাসি’। উল্লেখ্য, স¦াধীনতা যুদ্ধে এবং স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ের সময় জীবন উৎসর্গ করা ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন অপরিহার্য, তেমন মর্যাদারও। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লার রাহে (স্বদেশ হেফাজতের কাজে) একদিনের প্রহরার দায়িত্ব পালন করা মাস ভর রোযা ও নামায আদায়ের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর। অন্য হাদীসে তিনি ঘোষণা করেছেন, নিজের (অথবা দেশের) সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে জীবন দেয়,  সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজের ঈমান এবং ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষায় জীবন বিলায় সেও শহীদ। (মুসলিম, তিরমিযী)।

স্বাধীনতা ভোগ এবং স্বেচ্ছাচারিতা এক কথা নয়

এই আধুনিক যুগে দেশ বিদেশের অভিজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের মতে একটি কল্যাণকর ও ইনসাফপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো এমন একটি দেশ বা রাষ্ট্র হওয়া, যার- ১. স্বাধীন ও নিরাপদ একটি ভূখণ্ড থাকবে। ২. এ ভূখণ্ডে বিদেশি কোনো শাসক শাসনকার্য পরিচালনা করবে না, বরং শাসনকার্য পরিচালনা করবে একজন নিয়মতান্ত্রিকভাবে মনোনীত শাসক। ৩. সে দেশের জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, ও চিকিৎসার অবাধ অধিকার পাবে। ৪. সে দেশের জনগণ যথাস্থানে ন্যায়বিচার পাবে। তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।  বৈষম্য অথবা অবিচার চাপিয়ে দেয়া হবে না। ৫. সে দেশে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা থাকবে, সে দেশ অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হবে না। ৬. সব সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্ম পালনে বাধা সৃষ্টি করবে না। অনধিকার চর্চা করবে না। ৭. সে দেশের মানুষের ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিক মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। দেশি বিদেশি কোন বৈরি শক্তি যে দেশটির জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন আমাদের কাম্য। কিন্তু উল্লিখিত বিবরণের বাস্তবতা সমৃদ্ধ স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা বর্তমান পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার এখানে অবকাশ নেই। তবে এখানে এই মুহূর্তে  যে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উল্লেখযোগ্য, তা হলো ‘স্বাধীনতা’ অর্থ কোনক্রমেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে দেশে অনেকেই অধুনা তাদের বাস্তব কার্যক্রমে বলনে চলনে ‘স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারিতার অর্থে’ ব্যবহার করছেন। ‘বাক স্বাধীনতা’ বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে চরম খামখেয়ালিপনার  প্রদর্শন করছেন। অন্যদিকে গুজব আর অসত্য প্রচার করছে অবলীলায়। কেউ কেউ ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে চরম অসভ্যতা ও অশ্লীলতাও ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

সভ্য মানবসমাজে এসব কখনও স্বাধীনতা বা অধিকার বলে বিবেচিত হতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, বাক-স্বাধীনতার নামে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া যাবে না।

ইসলাম মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মিথ্যা, বিকৃত তথ্য বা বানোয়াট অপবাদ প্রচারের অধিকার যেমন কাউকে দেয় না, তেমনি স্বেচ্ছাচারিতা বা খামখেয়ালিপনাকেও স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেয়ার অধিকার দেয় না। বরং ইসলামে মিথ্যাচার, প্রতারণা, ধোঁকাবাজী, অপবাদ রটনা, অশ্লীলতা প্রদর্শন সবকিছুই নিন্দনীয় এবং যথাস্থানে দণ্ডযোগ্য অপরাধ। বাস্তবতা এই যে, স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা ও নীতিহীনতা প্রদর্শনের কারণেই দেশে দেশে চলছে অরাজকতা, অস্থিরতা, অবিচার, ব্যভিচার, মনুষ্যত্ব্যহীনতা।

মনুষ্যত্ব বাদ দিয়ে মানব সমাজ যে কখনোই সুন্দর, সুশৃঙ্খল, কল্যাণকর হতে পারে না- তা বলাই বাহুল্য। ইসলাম এ সত্যটি সকল মানুষকে বোঝানোর সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “আপনি (রাসূল) কি তাকে দেখেননি, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ লোক শোনে অথবা বুঝে? তারা কেবল পশুদের মতো; বরং তারা আরো অধিক পথভ্রষ্ট”। (ফুরকান- ৪৩-৪৪)।

* যে বিষয়ে তোমার জানাশোনা নেই, সে বিষয়ে অনধিকার চর্চা করতে যেও না। কেননা, তোমার কান, চোখ এবং হৃদয়ানুভূতি সম্পর্কে তোমাকে জবাবদেহি হতে হবে তাঁর দরবারে। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত- ৩৬)।

* রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই একেকজন দ্বায়িত্বশীল (জিম্মাদার)। আর প্রত্যেককেই তার দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে কৈফিয়ত দিতে হবে। (বুখারী ও মুসলিম)।

* যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি অথবা প্রতারণায় লিপ্ত, সে আমাদের (ইসলামের) দলভুক্ত নয়।

* যার লজ্জা-শরম নেই, সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে (বলতে পারে)। মূলত: লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ।

* ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো মতবাদ আল্লাহর কাছে ধর্ম হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত- ৮৫)।

* ওরা আল্লাহ ব্যাতিত অন্য যা কিছুকে মাবূদ বানায় তোমরা (মুসলমানরা) সেগুলোকে গালি দিও না। তাহলে ওরাও অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে। (সূরা আনআম, আয়াত- ১০৮)।

* অশ্লীল ও খারাপ কথার প্রচার প্রপাগান্ডা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তবে যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে (তার কথা আলাদা), আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা নিসা, আয়াত- ১৪৮)।

* যারা কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির (নারীর) প্রতি অপবাদ দেয় এবং তাদের অভিযোগের পক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তাদের প্রত্যেককে ৮০ বেত্রাঘাত করো। আর কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। এরা প্রত্যেকেই ফাসিক।  (সূরা নূর- ৪)।

* যে ব্যক্তি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, সে যেনো পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করে। (সূরা মায়িদা, আয়াত- ৩২)।

* বলুন হে রাসূল (সা.), আমার রব অশ্লীলতা ও অসভ্যতাকে হারাম করেছেন তা প্রকাশ্য হোক অথবা গোপনীয়। তদ্রুপ সকল পাপাচার ও খোদাদ্রোহিতাও তিনি নিষিদ্ধ করেছেন। (সূরা আরাফ- ৩৩)।

* হে মুমিনগণ, তোমরা অনুমান করে কোনো কথা বলো না (কাজ করো না)। কেননা, অনেক অনুমান (ধারণা) সুস্পষ্ট পাপ। তোমরা কারো দোষ ত্রুটি খুঁজে বেড়িও না। একে অপরের গীবত করো না। তোমরা কি তোমাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা পছন্দ করবে না। সুতরাং অন্যের সমালোচনা, গীবত, পরনিন্দা, অহেতুক সমালোচনার ব্যাপারে আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করো। (সূরা হুজরাত, আয়াত- ১২)।

কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত বর্ণনার আলোকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাঝে পার্থক্য বোঝার তাওফিক দান করুন। সাগর সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আরো সূদৃঢ়, আরো অর্থবহ করে দিন। যেসব বিশ্বাস ও মানসিকতা এবং যেসব কার্যকলাপ আমাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিবে, আমরা প্রত্যেকেই যেন তা বর্জন করি। তাহলেই আমরা হতে পারবো সত্যিকারের মানুষ, সত্যিকারের সভ্য, ভদ্র ও সুশীল জাতি।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।