।। বিনতে এন এম জাহাঙ্গীর ।।
আসসালামু আলাইকুম! আমার শিশু-কিশোর বন্ধুরা! আজ হতে আমি তোমাদের মজলিসের নতুন সদস্য! আমি হলাম এই মজলিসের প্রজাপতি! কিচির মিচির রবে ডানা মেলে তোমাদের নিয়ে যাব সোনালী অতীতে! বয়ে নিয়ে আসবো সাহাবীদের, মনীষীদের ছোট হতে বড় হবার গল্প। নেবে তো আমায় আপন করে?! এই দেখো আমি এসেই পড়েছি। নাও এসো এক মহান সাহাবীর কিশোর-তরুণ বয়সের গল্প শুনাই, নবীজি ছিলেন যার দুনিয়া ও আখিরাতের অভিভাবক! সুবহানাল্লাহ!!
আভিজাত্যছোঁয়া যে চেহারা:
আবু সুফিয়ান রাযি. একবার তাঁর মেয়ে উম্মে হাবীবা রাযি. এর ঘরে এলেন। তখনও আবু সুফিয়ান রাযি. ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেননি। তিনি কন্যার কামরায় একটি ছোট্ট বালক দেখতে পেলেন। তিনি বিস্ময়ভরে অপলক নয়নে বাচ্চাটি দেখছিলেন। মুগ্ধ কন্ঠে তিনি কন্যাকে বললেন, মা! এই বাচ্চাটি কে? ওর নিষ্পাপ চেহারা তো দানশীলতা, আভিজাত্যের দ্যুতি ও লাজ-নম্রতায় আরো উদ্ভাসিত-আলোকিত হয়ে উঠেছে!
উম্মে হাবীবা রাযি. বললেন, আপনার কী মনে হয় আব্বু? কে হতে পারে বাচ্চাটি? তিনি বললেন: চেহারা সুরতে তো হাশেমী বংশেরই মনে হচ্ছে। উম্মে হাবীবা রাযি.বললেন, হ্যাঁ ও হাশেমী। এবার বলুন তো আব্বু হাশেমী বংশের কার সন্তান? আবু সুফিয়ান রাযি.খানিক ঠোঁট কামড়ে বললেন, সে যদি জা’ফারের সন্তান না হয়, তবে এমন সন্তান আর কোন আরবের হতে পারে? কন্যা বললেন: হ্যাঁ আব্বু, আপনার অনুমান যথার্থ। ও জা’ফারেরই সন্তান। তিনি বললেন, একটি বিষয় জানো মা, এ বাচ্চাটা মারা গেলে, এমন সন্তান আর দুনিয়াতে আসবেনা।
ছোট্ট বন্ধুরা! এই ছিলো শিশু আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফার রাযি. সম্পর্কে বিচক্ষণ আবু সুফিয়ান রাযি. এর বিজ্ঞচিত সুধারণা। পরবর্তী ঘটনাগুলোতে আমরা জানতে পারবো এর সত্যতা।
যে বংশের ঔজ্জ্বল্য তিনি:
আবদুল্লাহ রাযি. এর পিতা জা’ফার রাযি. হলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরমপ্রিয় চাচা আবু তালেবের ছেলে। হযরত আলী রাযি. এর আপন ভাই। তাঁর মাতা ছিলেন আসমা বিনতে উমাইস রাযি.। তিনিও অনেক পূণ্যবতী ছিলেন। তাঁরা দু’জনই ইসলামের প্রথম যামানায় নবীজি দারুল আরকামে প্রবেশের পূর্বেই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন।
হাবশার হিজরত ও হিজরতের আলোকবাহী শিশু:
মক্কায় ধীরে ধীরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীনের অনুসারী বেড়েই চলছিলো। এতে তৎপর হয়ে উঠলো কুরাইশী কাফেরগোষ্ঠী। তারা নিজ নিজ গোত্রের মুসলমানদের আটকে নির্যাতনে অতিষ্ঠ করতে লাগলো। মুসলমানদের জন্য স্বাভাবিক জীবনধারণও বড় কষ্টের হয়ে গেলো। দয়ালু নবীজি সাহাবীদের এহেন মাজলুমানা হালত দেখে খুউব ব্যথিত হলেন। নিজের চিন্তা ভুলে সাহাবীদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় উদ্বিগ্ন হলেন। একদিন তিনি সাহাবীদের গোপনে বললেন, হাবশা নামে একটি দেশ রয়েছে। সেই দেশের স¤্রাট খুব ন্যায়পরায়ণ। হাবশা দেশটিও বেশ চমৎকার! তোমরা ওখানে হিজরত করো। আল্লাহ পাক তোমাদের প্রশস্ততা দান করতে পারেন।
নবীজির আশ্বাসবাণীতে কিছুসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম ঘরদোর, স্বজন-সম্পদ সব ছেড়ে পাড়ি জমান হাবশার উদ্দেশ্যে। দ্বীন বাঁচাতেই তাঁরা হিজরত করেন। জলস্থল, মরু-কান্তার আর পাহাড়ী এলেবেলে দুর্গম পথ পেরিয়ে এগিয়ে চললো ইসলামের প্রথম হিজরতী কাফিলা। মরু সাইমুম আর সামুদ্রিক ঝড়ের আশঙ্কা নবীপ্রেমিক এ সাহাবী দলকে রুখতে পারেনি হিজরত হতে।
বেশ শান্তিতে কাটছিলো মুহাজির সাহাবীদের হাবশার জীবন। ওদিকে মক্কার কাফেরদের তা বরদাশত হচ্ছিলো না। তারা হাবশায় গিয়ে সম্রাট নাজাশীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে চাইলো সাহাবী কাফেলা। নাজাশী ছিলেন বিচক্ষণ। তিনি ডেকে পাঠালেন সাহাবীদের। এগিয়ে এলেন জা’ফার রাযি.। সুললিত কন্ঠে তিলাওয়াত করলেন সূরা মারইয়ামের কতিপয় আয়াত। মুগ্ধ হলেন নাজাশী! অভিভূত কন্ঠে বললেন, এতো মূসা ও ইসা নবীর আনীত দ্বীনের মতোই (সত্য)! ফিরে যাও হে কুরাইশ প্রতিনিধি! দেবো না আমি এমন মেহমানদের তোমাদের হাতে!
হাবশার মুহাজির সাহাবীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লো এ আনন্দবার্তা! কুরাইশী প্রতিনিধিদের অপমানিত হয়ে ফিরে যাবার সংবাদ! চারদিকে গুঞ্জরিত হতে লাগলো রবের হামদ ও ছানা! আনন্দের রেশ না কাটতেই প্রতিধ্বনিত হলো এক নবজাতক শিশুর কান্না! জা’ফারের রাযি. পুত্র হয়েছে! মুহাজির কাফিলায় শুকরিয়ার নবধ্বনি উচ্চকিত হলো! জা’ফার রাযি.পরম মমতায় তুলে নিলেন পুত্রকে। খুশিতে নাম রাখলেন ‘আবদুল্লাহ’! ভুলে গেলেন স্বদেশ ত্যাগের বেদনা! দু’টো বকরি জবেহের মাধ্যমে আকীকা দেন আবদুল্লাহর। এসময় নাজাশীর এক পুত্র পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলে। তিনি জা’ফারের কাছে জানতে চাইলেন ‘কী রেখেছো তোমার পুত্রের নাম?’ জা’ফার রাযি. বললেন, ‘আবদুল্লাহ’। নাজাশী বললেন, আমরাও তোমার ছেলের নামানুসারে রাখলাম আবদুল্লাহ।
হাবশা নানা কারণে স্মৃতি হয়ে আছে। হয়ে আছে ইতিহাস! বিশেষ করে জা’ফার ও আসমা রাযি. এর জীবনে। তা হলো হাবশার প্রথম মুহাজির শিশু, তাদের কলিজার টুকরো আবদুল্লাহর ধরায় পর্দাপণ। প্রথম কেঁদে উঠা ও হেসে ওঠার কতো স্মৃতিমালা!
প্রিয়নবীর বিরহমাখা প্রতীক্ষা অবসানে মদীনায় আগমন:
হাবশার মুহাজির সাহাবীরা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই দিনাতিপাত করছিলেন। তবু মক্কার কথা মনে হলেই মনটা কেমন উদাস হয়ে যেতো। সব আয়েশ যেনো বিস্বাদে পরিণত হতো! যেনো তাঁদেরই অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে (আমার) এই কবিতা পঙ্ক্তিতে:-‘স্বদেশের ধূলোমাখা পথের ছায়া / তবুও তো তাতে আছে স্বজনের ছোঁয়া’!
প্রিয়নবীর সান্নিধ্যে কাটানো দিনগুলো তাঁদের মনকে বড় আকুল করে তুলতো ! নবীপরশ পেতে বড় ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন মুহাজির সাহাবী কাফেলা। ইতোমধ্যে তাঁরা খবর পেলেন, নবীজি স্থায়ীভাবে মদীনায় হিজরত করেছেন। সেখানে কাফেরদের বেশ কয়েকটি জিহাদে পরাজিত করেছেন। তাঁরা আরও জানলেন, মুসলমানদের কাফেলায় এখন নয় শুধু দুর্বলগণ। বরং রয়েছেন ফারুকে আজমের মতো সাহসী বীর। তাঁরা জানলেন ও শুকরানা সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে লিখিত হলো ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার চুক্তি। যার ফলে মুসলমানদের জন্য জল-স্থল অনেকাংশে নিরাপদ হয়ে গেলো। নবীজি তাই নাজাশী বরাবর চিঠি প্রেরণ করলেন। মুসলমানদের আশ্রয়দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেন এবং সাহাবীদের কাফেলাটিকে মদীনায় প্রেরণের অনুরোধ জানালেন। নাজাশী খুশিমনে ৭ম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে দুজাহাজ ভর্তি মানুষ, মালামালসহ সাহাবীদের প্রেরণ করেন। জাহাজ ঘাটে নেমে, মাত্র একদিনের পথ পেরিয়েই সাহাবীগণ মদীনায় পৌঁছেন। নবীজি আনন্দের আতিশয্যে বারবার জা’ফার ও তাঁর পুত্রদ্বয়কে জড়িয়ে নিচ্ছিলেন বুকে। আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ বিন জা’ফারকে চুমুয় চুমুয় দু’গাল ভরে দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন-
مَا اَدْرِيْ بِاَيِّهِمَا اَفْرَحُ؟ بِقُدُوْمِ جَعْفَرَ, اَوْ بِفَتْحِ خَيْبَرَ؟
(জানি না জাফরের আগমনে আমি বেশি খুশি হয়েছি নাকি খায়বার জিহাদের বিজয়ে অধিক খুশি হয়েছি!- হাকেম- ২/৬২৪)।
ইয়াতিম আবদুল্লাহ রাযি. এর মাথায় নববী পরশ:
আবদুল্লাহ বিন জা’ফার রাযি. পরিবার যখন মদীনায় পৌঁছলো, তখন ইসলামি পয়গাম আরব ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন রাজাদের নিকটও দাওয়াতী চিঠি প্রেরণ করেন নবীজি। সেমতে বসরার গভর্নরের নিকট হারেস বিন উমায়ের রাযি. এর হাতে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে মুতা নামক স্থানের (সিরিয়ার মধ্যবর্তী লোকালয়) গভর্ণর শুরাহবিল বিন আমর গাসসানী দূতকে হত্যা করে। যা ছিলো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। দূত হত্যা করা, পত্রপ্রেরক ও তাঁর রাজত্ব হত্যার শামিল। নবীজি অত্যন্ত ব্যাথিত হলেন এবং শুরাহবিলকে সমুচিত শাস্তি দিতে চাইলেন। তিনি বিশিষ্ট সাহাবী রাযি.দের এক জামাত একত্র করলেন। জোহর নামাযান্তে তাঁদের যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বিদায় জানালেন এবং যায়েদ বিন হারেসা, আবদুল্লাহ বিন জা’ফার ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রাযি.কে যথাক্রমে আমীর নিযুক্ত করেন এবং বলেন, তিনজনই যদি শহীদ হয়ে যান, তবে পরামর্শ করে যেনো আমীর নির্ধারণ করা হয়। সেই জিহাদে যায়েদ রাযি. এর শাহাদাতের পর জা’ফার রাযি. পতাকা তুলে নেন। এমনকি কাফেররা তাঁর ঘোড়ার পা , তাঁর উভয় হাত কেটে দেয়। একপর্যায়ে তিনি শহীদ হন। তাঁর দেহে ৯০টিরও অধিক আঘাত ছিলো।
নবীজি আসমা রাযি. এর কাছে যেয়ে বললেন জা’ফারের সন্তানেরা কোথায়? তাঁরা এলে নবীজি তাঁদের বুকে জড়িয়ে হু হু করে কাঁদলেন। জা’ফার রাযি.পুত্রদ্বয়ের ঘ্রাণ শুঁকলেন! দু’ভাইকে বসিয়ে ছাতু খেতে দিলেন। নাপিত ডেকে মাথার চুল চেঁছে দিলেন। আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, আমাদের মা নবীজির দরবারে এসে আমাদের দরিদ্রতার আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:اَلْعِيْلَةُ تَخَافِيْنَ عَلَيْهِمْ, وَ اَنَا وَلِيُّهُمْ وَ الدُّنْيَا وَ الْاخِيْرَة؟ (ওদের দরিদ্রতার ভয় করছো, অথচ আমি দুনিয়া ও আখিরাতে ওদের অভিভাবক!) -আবু দাউদ:৪১৯২, নাসায়ী- ৮/১৮২)
নবীজির হাতে বায়াত:
আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফার ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি. একদিন নবীজির দরবারে এলেন। ছোট্ট হস্তযুগল এগিয়ে দিলেন নবীজির সমীপে, বায়াতের পরশে সৌভাগ্যবান হতে। তখন শিশু সাহাবীদ্বয়ের বয়স ছিলো মাত্র সাত বছর। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দেখে মুচকি হাসলেন এবং পবিত্র হস্তদ্বয় এগিয়ে দিয়ে বায়াত করে নিলেন।
নবীজির রিদাফ বা বাহন সঙ্গী:
আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফার রাযি. নিজে বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে ফিরে আহলে বাইতের খবরাদি নিতেন। তবে সর্বাগ্রে আমাদের অবস্থা জানতেন। আমাকে নবীজির বাহনের সামনে বসাতেন এবং তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন রাযি.কে পিছনে বসাতেন। এভাবে একবাহনে বহুবার আমরা চারজনে চড়ে বেড়িয়েছি।
নবীজির অবয়ব-সাদৃশ্য তিনি: আবদুল্লাহ রাযি. বলেছেন, আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমন একটি কথা শুনেছি, যা আমার নিকট লাল উটের চেয়েও বেশী প্রিয়। নবীজি বলেছেন:-جَعْفَرُ اَشْبَهُ خَلْقِيْ وَ خُلُقِيْ , وَ اَمَّا اَنْتَ يَا عَبْدَاللّهِ فَاَشْبَهُ خَلَقَ اللّهُ بِاَبِيْكَ (জা’ফার আমার অবয়ব ও চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর আবদুল্লাহ! তুমি তোমার বাবার আল্লাহপ্রদত্ত চরিত্রের অধিকারী। – ইবনে আসাকির- ৭/৩২৯) নবীজি আরো বলেছেন, مَرْحَبًا يَا عَبْدَ اللّه! خُلِقْتَ مِنْ طِيْنِيْ وَ اَبُوْكَ يَطِيْرُمَعَ الْمَلَاِ ءِكَةِ فِي السّمَاءِ (আবদুল্লাহ! তোমাকে স্বাগতম! তুমি আমার চরিত্র পেয়েছ। আর তোমার বাবা আকাশে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়ান। – কানযুল উম্মাহ- ৩২৫৯৩)
সাহাবীদের স্নেহ-মমতা:
আবু বকর রাযি. রাষ্ট্রীয় ভাতাদানের সময়, আহলে বাইতের (নবীজির পরিবারভুক্ত) দ্বারা বন্টনকার্য আরম্ভ করতেন। এমন সময় এক বুদ্দু ভাতা নিতে এলে প্রহরী তাকে বাঁধা দিলো (অপেক্ষা করতে বললো)। একটু পর এক বালক আসলো। প্রহরী তাঁকেও বাধা দিলো। আবু বকর রাযি. দেখলেন তিনি আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফার রাযি.। তিনি সোৎসাহে বললেন- مَرْحَبًا بِاِ بْنِ الطَّيّاَرِ , اُدْ خُلْ “জান্নাতে উড়ন্ত (জা’ফার রাযি. এর উপাধি) ব্যক্তির পুত্র ! মারহাবা!! এসো এসো”!! বুদ্দু ব্যক্তি বুঝলো এই বালকের সম্মান তার চে’ও বেশি। জা’ফার রাযি. তাঁকে সান্তনা দিয়ে বললেন, তোমার মর্যাদাও কম নয় ভাই! এরপর খলীফা আবদুল্লাহ রাযি.কে এক হাজার দিরহাম দিলেন। আবদুল্লাহ রাযি. খলীফার দরবার হতে বের হয়ে পুরোটাই ঐ বুদ্দুকে দান করে দিলেন।
হযরত উমর বিন খাত্তাব রাযি.ও আবদুল্লাহকে অনেক ভালবাসতেন। সর্বদা তাঁর খোজ-খবর রাখতেন। সাক্ষাতে যেতেন ও কুশল বিনিময় করতেন। তাঁর পাশ ঘেষে বসাতেন। অনেকে বলতো, আবদুল্লাহ রাযি. আপনার দরবারে বেশি আসে এবং আপনি এতে প্রীত হন। উমর রাযি. বলতেন, “যদি তাঁর বাবাকে তোমরা দেখতে, তবে তাঁকে আমার চে’ অধিক ভালবাসতে। শাহাদাতকালে তাঁর বাবার দেহে ৭০এর অধিক তলোয়ার ও বল্লমের আঘাত ছিলো”।
দারিদ্র্যপ্রীতি ও দানশীলতা:
আবদুল্লাহ রাযি. তাঁর বাবার জীবদ্দশায় কিছুটা বড় ছিলেন। তিনি দেখতেন, তাঁর বাবা একজন আদর্শবান যোদ্ধা ও নিপুণ তীরন্দাজ। তিনি আরো লক্ষ্য করতে, তাঁর বাবা জা’ফর রাযি. দরিদ্রদের প্রতি খুবই দয়ার্দ্র। এতিম গরিবদের নিজ সন্তান গণ্য করে তাঁদের সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করেন। আবু হুরায়রা রাযি. এর এক বর্ণনাতে আছে, “জা’ফার রাযি. মিসকিনদের খাইয়ে নিজে পেটে কাপড়ভর্তি থলে বেঁধে রাখতেন। আবদুল্লাহ রাযি. পিতার প্রতিটা অভ্যাসের পদাঙ্ক অনুসারী ছিলেন। শৈশব হতেই তিনি ব্যবসা করতেন। নবীজি একবার তাঁকে বকরি বিক্রি করতে দেখে দুআ করলেন ‘হে আল্লাহ! তাঁর ব্যবসায় বরকত দাও”। আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, এরপর আমি যত ব্যবসাই করেছি, প্রভূত লাভবান হয়েছি। (ইবনে আসাকির: ৭/৩২৯)
এ অভ্যাস চাই না ছাড়তে:
একবার হযরত হাসান ও হুসাইন রাযি. আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফার রদ্বি,কে বললেন, আপনি সহায়-সম্পত্তি অপচয় করেন! এতে তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, আমার মা-বাবা আপনাদের দু’ভাইয়ের চরণে উৎসর্গিত হোক। আল্লহ আমাকে যেমন অকৃপণ দান করে চলেছেন, আমিও আল্লাহর বান্দাদের মাঝে তদ্রুপ অকৃপণ হস্তে বিলিয়ে যেতে চাই। এই যে একটা অভ্যাস গড়ে তুলেছি, তা আর ছাড়তে চাই না আমি!
প্রিয় বন্ধুরা! আব্দুল্লহ বিন জা’ফার রাযি. এর জীবন হতে আমরা কী শিখলাম?
১. ছোট হতেই তিনি নেক কাজে আগ্রহী ছিলেন। ছোট্ট বয়সেই বায়াত লাভে ধন্য হন।
২. অপরের সামান্য কষ্টেও সমবেদনাশীল হতেন ও খুশি করার চেষ্টা করতেন। যা বুদ্দুকে দান করার দ্বারা করেছেন।
৩. বড়দের ভাল অভ্যাসগুলো রপ্ত করতেন। ছোট হতেই কাজকর্মে এমনকি ছোটখাটো ব্যবসায়ও অভ্যস্ত ছিলেন।
৪. আমীর বা যোগ্য ইমামের অধীনে ও পরামর্শে চলার ব্যাপারে গুরুত্ব বুঝে আসে, মুতার যুদ্ধে নবীজির এই উক্তিতে ‘তিনজনই যদি শহীদ হয়ে যান, তবে পরামর্শ করে যেনো আমীর নির্ধারণ করা হয়’।
৫. তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস ছিলো ‘দানশীলতা’।
এসো বন্ধুরা! আজ হতে আমরা এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলি। নিজেকে প্রস্ফুটিত করি এযুগের “আবদুল্লাহ” হিসেবে। তবে আখিরাতে নবীজি ইনশাআল্লাহ হতে পারেন আমাদেরও অভিভাবক।