হিজরত ও হিজরী সন: ত্যাগের মহিমা ও উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা যোগায়

।। মুনির আহমদ ।।

মুসলমানদের ঈমানী চেতনাকে যে সব উপাদান উজ্জীবিত করেছে তন্মধ্যে হিজরী সন  অন্যতম।  বিশ্বের  মুসলিম   উম্মাহর  কৃষ্টি কালচারে হিজরী সন ও তারিখের গুরুত্ব অপরিহার্য। হিজরী সন গণনার সূচনা হয়েছিল ঐতিহাসিক এক অবিস্মরণীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তদীয় সাথীবর্গের মক্কা থেকে মদীনা হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই আরবি মুহাররাম মাসকে হিজরী সনের প্রথম মাস ধরে সাল গণনা শুরু হয়েছিল। দ্বীনের স্বার্থে মক্কা থেকে মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কিরামের হিজরত থেকেই হিজরী সনের সূচনা। মুসলমানগণ হিজরী সনকে ভিত্তি করে বিভিন্ন ধর্মীয় বিধি-বিধান যথা- রমযানের রোযা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা, শবে-বরাত, শবে-কদর, শবে-মি’রাজ এবং বিভিন্ন মাসের নফল রোযা ইত্যাদি পালন করে থাকেন।

উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক দিন বা ঘটনাভিত্তিক বহু সনই বিশ্বে প্রচলিত হয়ে আসছে। উদাহরণতঃ খ্রিস্টীয় স্মারক সন খ্রিস্টান ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত। জাতিগতভাবে কোন জাতির পক্ষেই আপন ঐতিহ্য ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তেমনিভাবে মুসলিম পরিবারগুলোও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত অন্যান্য সন তারিখ অনুসরণ করা সত্ত্বেও সূচনালগ্ন থেকেই হিজরী সনকে পাশাপাশি গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরী সনের অনুসারী। খ্রিস্টীয় সন, বাংলা সনসহ অন্যান্য সনের প্রচলন সত্ত্বেও আরবি সনের দিন মাসের হিসাব চর্চা এতটুকুও ম্লান হয়নি।

হিজরী সন মুসলিম উম্মাহকে মনে করিয়ে দেয় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর মক্কা থেকে সুদূর মদীনায় হিজরতের ঘটনাকে। বস্তুত তাঁর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সেই ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতিবাহী হচ্ছে হিজরী সন। এই হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী ঘটনা। হিজরতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর মক্কী জীবনের অবসান ঘটে এবং মাদানী জীবনের সূচনা হয়। হিজরতের মাধ্যমেই ইসলামের সুদীর্ঘ বিজয়ের পথ সুপ্রশস্ত হয়।

এ হিজরতের মধ্য দিয়েই ইসলাম এক নবশক্তি লাভ করেছিল। এতদিন পর্যন্ত মুসলমানরা কেবল আত্মরক্ষাই করে এসেছে, মুখ বুজে যুলুম অত্যাচার সহ্য করে এসেছে। অবশেষে হিজরতের মধ্য দিয়ে এতসব যুলুম-অত্যাচারের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষমতা তাঁদের অর্জিত হয় এবং রাষ্ট্রশক্তি হিসাবে ইসলাম আত্মপ্রকাশ করে। হিজরত পরবর্তী সময়ে মুসলমানরা ক্রমেই সুসংহত ও সম্প্রসারিত হয়েছে। ইসলাম বিশ্বজনীন রূপে ভাস্বর হয়ে উঠেছে। ইসলামের অবদানে বিশ্ব সভ্যতা সমৃদ্ধশালী হয়েছে।

এক সময়ে মুসলমানরা বিশ্বের এক অজেয় শক্তিতে পরিণত হয়েছিল, জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখাকে অবিস্মরণীয় অবদানে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল, তার শুভ সূচনা এই হিজরত থেকেই। হিজরত পূর্ব প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণের ন্যায় বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানগণ অমুসলিমদের হাতে নিপীড়িত নিগৃহীত হচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে সে সময়কার মুসলমানদের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে সুসংহত হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়াতে হবে।

হিজরতের পূর্বে তৎকালীন মক্কায় হস্তি সনের প্রচলন ছিল। অবশ্য ৬১০ খ্রীস্টাব্দে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর নবুওয়াত লাভের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য সাহাবায়ে কেরামের মাঝে নবুওয়াতি সনও কিছুকাল প্রচলিত ছিল। ১২তম নবুওয়াতি সন, মোতাবেক ৬২২ খ্রিস্টাব্দের রবীউল আউয়াল মাসে হিজরতের শুভ সূচনা হয়। একে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মদীনায় হিজরী বর্ষ হিসাবে বর্ষ গণনার রেওয়াজের প্রচলন হয়ে যায়।

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাযি.) তাঁর শাসনামলে একটি স্থায়ী সনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। হিজরতের বছর থেকে মানুষের মুখে মুখে হিজরতের ঘটনা স্মরণ করে যে বর্ষ গণনা ইতোমধ্যে প্রচলিত হয়ে আসছিল, ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে সে বর্ষ গণনাকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সংস্থাপন করে হযরত উমর (রাযি.) হিজরী সনের প্রবর্তন করেন। যা চান্দ্র সন হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, আমাদের এদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয় হযরত উমর (রাযি.)এর খিলাফত কাল থেকেই। তখনকার ইসলাম প্রচারকগণই এদেশে হিজরী সনের প্রচলন করেন। হিজরী সনের বিভিন্ন মাসে ইসলামী বিধি-বিধান থাকার কারণে এদেশের জন-সমাজে হিজরী সনের ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যার প্রতিফলন ঘটেছে মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে ও ভারতে প্রচলিত বাংলা সন সম্পর্কে বলা যায়, হিজরী সনেরই চলমান পথে এক পর্যায়ে সৌরকরণের মাধ্যমে বাংলা সনের জন্ম। আর হিজরী সনই বাংলাদেশে প্রচলিত একমাত্র সন, যা প্রায় জন্মকাল থেকেই এখানে প্রচলিত রয়েছে। এখানে হিজরী সনের প্রচলন ৬৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে হলেও এটি রাষ্ট্রীয় সনের মসনদে অধিষ্ঠিত হয় ১২০১ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে।

হিজরী সন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, যা অন্য কোন সন পারেনি। পূর্বেই বলেছি, বাংলা সনের জন্ম হিজরী সনের সৌরকরণের মাধ্যমে। আমরা জানি মুগল স¤্রাট আকবর বিভিন্ন কর্মকান্ডে অনেক সংস্কার করেছিলেন। তন্মধ্যে সন সংস্কারও অন্যতম। স¤্রাট আকবর রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে একটি নতুন সৌর সনের উদ্ভাবনের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বলে হিজরী সনকে সৌর গণনায় এনে যে সন উদ্ভাবিত হয়, সেটিই আজকের বাংলা সন। ৯৬৩ হিজরী মোতাবেক ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিজরী সনের ৩৫৪ দিনে এক বছরের স্থলে সৌর সনের ৩৬৫ দিনে এক বছর হিসেবে এনে স¤্রাট আকবর প্রবর্তিত সনটির হিসাব নির্ণয় করা হয়। বর্তমানে যা বাংলা সন হিসেবে পরিচিত। এই সনের মূল উদ্ভাবক মরহুম আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী।

হিজরী সন বাংলাদেশের সংস্কৃতির নিজস্ব ধারায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনার হৃদয় গভীরে লালিত বিশ্বাসে হিজরী সন একক প্রভাব ফেলেছে।

হিজরী সনের কথা আসলেই এই সনের উৎপত্তি তথা রাসূলুল্লাহ (সা.)এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার কথা এসে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.)এর স্মৃতি বিজড়িত সে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ হিজরতের অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে কিছু আলোকপাত করার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।

হিজরত তথা দেশত্যাগের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

হিজরত ও দেশত্যাগ মানব ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশত্যাগ ও হিজরত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যুগে যুগে এ প্রক্রিয়ায় সমাজ সভ্যতা এবং জাতির উত্থান-পতন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজো এর ভূমিকা শেষ হয়ে যায়নি।

সাধারণতঃ দেশত্যাগ বলতে আপন জন্মভূমি বা আবাসস্থলের যাবতীয় মোহ-মায়া ত্যাগ করে কোন ব্যক্তি বা জাতিগোষ্ঠীর অন্য কোন এলাকায় বা অঞ্চলে স্থানান্তর হওয়াকে বুঝায়। এক কথায় বাস্তুভিটা পরিত্যাগ করে অন্যত্র স্থায়ীভাবে গমন করা।

দেশত্যাগ বাধ্যতামূলকও হতে পারে, আবার স্বেচ্ছামূলকও হতে পারে। দেশত্যাগের পেছনে থাকতে পারে নানাবিধ কারণ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক কারণে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশত্যাগের ব্যাপক উদাহরণ রয়েছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আদর্শিক কারণেও দেশত্যাগের ঘটনা ইতিহাসে ভুরি ভুরি। আবার বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণেও মানুষ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মোটকথা, দেশত্যাগের পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক কারণসমূহ সক্রিয় থাকে।

হিজরত হচ্ছে দেশত্যাগেরই একটি বিশেষ রূপ। যখন কোন মুসলমান ধর্ম ও ধর্মীয় আদর্শ রক্ষার্থে অথবা আদর্শিক কোন প্রয়োজনে নিজের জন্মভূমি বা স্থায়ী আবাসস্থল ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায় বা যেতে বাধ্য হয়, তখন তাকে হিজরত নামে অভিহিত করা হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হিজরত হচ্ছে, জন্মভূমি বা স্বদেশে যখন মুসলমানদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা থাকে না, যখন সেখানে স্বীয় আদর্শ নিয়ে বাস করা যায় না, তখন সে স্থান ত্যাগ করে সম্ভাব্য নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তর হওয়া। কোন দেশ যখন শত্রু কর্তৃক বিজিত হয়ে পড়ে, যখন সে অঞ্চলে থেকে শত্রুর সাথে মোকাবিলা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন সে দেশ পরিত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যাওয়াকে হিজরত বলে।

এককথায় ধর্মীয় প্রয়োজনে বাস্তুভিটা ত্যাগ করে কোন মুসলমানের অন্যত্র গমন বা আশ্রয় গ্রহণকে হিজরত বলা হয়। হিজরত বাধ্যতামূলক বা স্বেচ্ছামূলক উভয়ই হতে পারে। যখন কোথাও মুসলমানদের পক্ষে ধর্মীয় জীবন যাপন করা সম্ভব না হয় বা ধর্মীয় কারণে তাদের উপর নির্যাতন চলে, অথবা কোথাও ধর্মীয় কারণে তাদের জান-মাল ইজ্জত-সম্মানের কোন নিরাপত্তা থাকে না, তখন তথাকার মুসলমানদেরকে বাধ্য হয়ে হিজরত করতে হয়। আবার বৃহত্তর দ্বীনি প্রয়োজনেও যেমন, দাওয়াতের সম্প্রসারণ, ইলম চর্চা ও প্রসার ইত্যাদি কারণেও কোন মুসলমান বাস্তুভিটা পরিত্যাগ করে অন্যত্র স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের হিজরত হচ্ছে স্বেচ্ছামূলক হিজরত। তবে পারিভাষিকভাবে হিজরতের সঙ্গে বাধ্য-বাধকতার বিষয়টি গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট।

মানব জাতির জন্মলগ্ন থেকেই দেশত্যাগ ও হিজরতের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে আসছে।     পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানবজাতির বিস্তৃতি লাভের প্রধান প্রক্রিয়া হচ্ছে দেশত্যাগ। দেশত্যাগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানব জাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আবিষ্কার ও আবাদীকরণ সম্ভব হয়েছে হিজরত ও দেশত্যাগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই। সভ্যতার বিকাশ ও প্রসারে হিজরত ও দেশত্যাগের ভূমিকা বিরাট।

জাতি বা সভ্যতার উত্থানে হিজরত ও দেশত্যাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও দেশত্যাগ ও হিজরত অসামান্য ভূমিকা রেখেছে। কোন জাতির কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা-সংস্কৃতি বা ধর্মের সংরক্ষণেও দেশত্যাগ তথা হিজরত অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি বা জাতির ভাগ্য উন্নয়নে দেশত্যাগ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।    এককথায়  ধর্ম,  সভ্যতা,  সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রচার প্রসার এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্রে হিজরত ও দেশত্যাগ একটি মৌলিক প্রক্রিয়া। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ সত্য সহজেই প্রতিভাত হবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতির ইতিহাসেও হিজরত ও দেশত্যাগের ঘটনা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে ইসলামের ইতিহাসে হিজরত অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। হযরত ইবরাহীম (আ.) ব্যাবিলনের অধিবাসী ছিলেন। ধর্মীয় ও আদর্শিক কারণে সেখান থেকে তাঁকে হিজরত করতে হয়। হিজাযের এলাকা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের সদূর বিস্তীর্ণ এলাকা পর্যন্ত তাঁকে বিভিন্ন সময়ে হিজরত করতে হয়েছে। তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরা ও পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)কে মক্কায় থাকতে হলো। অপর পুত্র হযরত ইস্হাক (আ.) ফিলিস্তিন এলাকায় এবং ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত (আ.) প্রাচীন মাদায়েন (ট্রান্সজর্দান) এলাকায় হযরত ইবরাহিম (আ.)এর নির্দেশে হিজরত করেছিলেন। আবার হযরত ইসহাক (আ.)এর পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর পুত্রগণ স্বীয় পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.)এর ব্যবস্থাপনায় মিসরে হিজরত করেছিলেন। সে হিজরতকারীদের বংশধররাই বনি ইসরাঈল নামে পরিচিত। এই বনি ইসরাঈলরাই কয়েক শ’ বছর পর আবার হযরত মূসা (আ.)এর নেতৃত্বে মিসর ত্যাগ করে অন্যত্র হিজরত করতে বাধ্য হয়। তাছাড়া বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবীগণ দ্বীনের স্বার্থে হিজরত করেছেন। হিজরতের মাধ্যমে তাঁরা দ্বীনের প্রচার প্রসার করেছেন।

আখেরী নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)এর মক্কায় ইসলামের প্রচার শুরু করার পাঁচ বছরের মধ্যেই নওমুসলিমদের দু’টি দলকে সুদূর হাব্শায় (ইথিওপিয়া) হিজরত করতে হয়। পরবর্তীতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)কেও তাঁর সমস্ত সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করতে হয় এবং সে হিজরতের মাধ্যমেই ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়।

পরবর্তীকালে মুসলিম বিশ্বের সম্প্রসারণে হিজরত একটি বড় ধরনের উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন এবং ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামের ব্যাপক প্রসারের মূল কারণ আরব ও মধ্যএশীয় মুসলমানদের, বিশেষ করে বাগদাদ পতনের প্রেক্ষিতে ব্যাপকহারে স্বীয় এলাকা থেকে হিজরত করে এসব এলাকায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন এবং ইসলামী দাওয়াতের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন। বর্তমান ইউরোপ আমেরিকায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হচ্ছে, সেসব দেশে মুসলমানদের নানা কারণে বসতি স্থাপন।

প্রাচীনকালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেমিটিক বংশোদ্ভূত লোকেরা এসে উপমহাদেশে হরপ্পো ও মহেনজোদাড়ো সভ্যতা গড়ে তুলে। আবার পারস্য থেকে আর্যরা এসে উপমহাদেশে আর্য ধর্ম ও সভ্যতার গোড়াপত্তন করে। অন্যদিকে উপমহাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আর্যদের নির্যাতনের ফলে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে বিশেষ করে দূরপ্রাচ্যে চলে যেতে বাধ্য হয়। ফলশ্রুতিতে গোটা দূরপ্রাচ্যে বৌদ্ধধর্ম ও সভ্যতার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

ইউরোপে জাতি গঠন প্রক্রিয়ায়ও দেশ ত্যাগের ভূমিকা অত্যন্ত মৌলিক। নবম শতকে বার্লিনে একজন জার্মানও বাস করতো না। মস্কোতে ছিল না কোন রুশ, বুদাপেস্টে ছিল না কোন হাঙ্গেরিয়ান, আর আঙ্কারায় ছিল না কোন তুর্কী। অথচ আজ বার্লিন, মস্কো, বুদাপেস্ট, আঙ্কারা যথাক্রমে জার্মান, রুশ, হাঙ্গেরিয়ান ও তুর্কীদের কেন্দ্র। দেশত্যাগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এ সমস্ত জাতি গড়ে উঠেছে।

আরও পড়তে পারেন-

১৫ শতক পর্যন্ত স্পেন বিশেষ করে মাদ্রিদ ছিল মুর মুসলিমদের আবাসস্থল। অথচ আজ সেখানে কোন মুর মুসলিম নেই। খ্রিস্টীয় অত্যাচারে সেখানকার বিপুল সংখ্যক মুসলিম যেমন শহীদ হয় তেমনি অবশিষ্টরা সেখান থেকে হিজরত করতে বাধ্য হয়। ফলে এককালের মুসলিম সভ্যতার কেন্দ্রটি আজ মুসলিম জনশূন্য হয়ে পড়েছে।

বিগত চারশ’ বছরে দেশত্যাগ প্রক্রিয়ায় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আফ্রিকার কোন কোন অংশ এবং এশিয়ার কয়েকটি এলাকা সাদা মানুষের বংশে পরিণত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এসব এলাকায় ধর্ম হিসেবে খ্রিস্ট ধর্মই আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯ শতকের পূর্বে ১ কোটির মতো আফ্রিকানকে জোর করে আমেরিকায় চালান দেয়া হয়। তারাই আমেরিকা আবাদ করে বাস উপযোগী করে তোলে। এদের মধ্যে অনেকেই মুসলমান ছিলেন বলে আজ আমেরিকায় মুসলমানদের এত উপস্থিতি দেখা যায়। পরবর্তী পর্যায়ে ইউরোপ থেকে লোকজন আমেরিকায় গমন করে। বিশেষ করে ১৮৪৬-১৯৩২ সালের মধ্যে প্রায় সোয়া ৫ কোটি ইউরোপীয় আমেরিকায় গমন করে।

আমেরিকায় আজো দেশত্যাগীদের বসতি স্থাপনের ব্যাপক প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কমিউনিস্ট শাসনের ফলশ্রুতিতে ১৯২৬-৩৯ সালের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মুসলমানসহ প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। উপমহাদেশের বিভক্তির সময় উভয় অঞ্চলের প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুভিটা ত্যাগ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে জাপানে ৬৩ লাখ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ লাখ, হংকংয়ে ১৩ লাখসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক বাস্তুত্যাগী বনিআদম প্রবেশ করে। সে সময়ই দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ ইহুদী পরাশক্তিগুলোর আনুকূল্যে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করে একটি অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। আর সেখানকার ১০ লাখ মুসলমান অন্যত্র চলে গিয়ে আজো যাযাবরের জীবন যাপন করছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দশ বছরে রাজনৈতিক কারণে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ বাস্তুহারা বা মুহাজির শরণার্থী রয়েছে। যাদের অধিকাংশের হয়ত নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবার সম্ভাবনা নেই। এ সমস্ত শরণার্থীর মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা বিপুল। আজ ফিলিস্তিন, বসনিয়া, চেচনিয়া, কাশ্মীর, আরাকানসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উৎখাত করার ষড়যন্ত্র চলছে। ফলে সেসব অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুভিটা ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে।

মোটকথা, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, দেশত্যাগের ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে সভ্যতার বিকাশে, জাতির উত্থান-পতনে, ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রসার ও মিশ্রণে, জনসংখ্যা বন্টনে এবং নতুন নতুন অঞ্চল আবাদকরণে দেশ ত্যাগ ও হিজরত অত্যন্ত বড় ধরনের উপাদানরূপে কাজ করছে।

হিজরত ইসলামের ইতিহাসে যুগে যুগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানেও এর গুরুত্ব শেষ হয়ে যায়নি। বস্তুত হিজরত বিভিন্ন কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণগুলো প্রধানত নিম্নরূপ-

ঈমান রক্ষা

যদি কোন পরিবেশে কোন মুসলমানের ঈমান রক্ষা ও প্রকাশ দুরূহ হয়ে পড়ে, দ্বীন অনুযায়ী চলা সম্ভব না হয়, তখন সেখান থেকে হিজরত করে অনুকূল পরিবেশে নিরাপদ অঞ্চলে বা দেশে গমন জরুরি হয়ে পড়ে।

ধর্ম পালন

যদি কোথাও একজন মুসলমান তার ন্যূনতম ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে বাধাগ্রস্ত হয়, তখন সেখান থেকে অবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রামে অন্যথায় হিজরত ছাড়া বিকল্প কোন পথ থাকে না।

ইসলামী বিপ্লবের প্রস্তুতি

কোন দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে যদি সেখানকার পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব না হয়, ইসলাম কায়েম যদি কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন অন্য কোন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে আন্দোলন ও সংগ্রাম পরিচালনার জন্য হিজরত প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

ইসলামী রাষ্ট্র গঠন

যদি কোন এলাকায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখন প্রতিকূল পরিবেশ থেকে হিজরত করে এসে অনুকূল পরিবেশের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যেতে পারে।

ইসলামের দাওয়াতের প্রসার

ইসলামের দাওয়াতের প্রসারের ক্ষেত্রে হিজরতের ভূমিকা সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানগণ যুগে যুগে হিজরতের মাধ্যমেই দেশে দেশে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছেন। প্রাথমিক যুগে অনেকেই নিজেদের বাস্তুভিটা ছেড়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়েছিলেন বলেই পৃথিবীর বিরাট অংশে আজ মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পৃথিবীর কোণে কোণে আজ ইসলাম পৌঁছে গেছে।

বিশ্বব্যাপী খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি

বিশ্বব্যাপী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য হিজরত ও দেশত্যাগ খুবই প্রয়োজন। মুসলিম বিশ্বের সম্পদকে কাজে লাগানো, উম্মাহ কেন্দ্রিক ভাবধারা তৈরি, বিভিন্ন রক্তের মিশ্রণ, স্থানীয় ও ভাষাগত সংকীর্ণতা দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে হিজরত ও দেশত্যাগের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া মুসলিম উম্মাহকে এককেন্দ্রিক করতে হলেও ব্যাপকভাবে হিজরত ও দেশত্যাগের প্রয়োজন হতে পারে। যাতে একটি আন্তর্জাতিক চরিত্র সম্পন্ন উম্মাহ গড়ে উঠতে পারে। বস্তুতঃ ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বহুবিধ কার্যকারণেই মুসলিম উম্মার জন্য হিজরত ও দেশত্যাগ প্রক্রিয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

আত্মরক্ষা ও যুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি

যেখানে মুসলমানদের জানমাল ও সম্মানের নিরাপত্তা থাকে না, যেখানে যুলুম অত্যাচার প্রকট আকার ধারণ করে, সেখানে নিরাপদে বসবাস করা সম্ভব হয় না। সুতরাং সেখানকার উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রতিকারের কোন সম্ভাবনা না থাকলে সেখান থেকে হিজরত করা ছাড়া উপায় থাকে না।

শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুতি

কোন মুসলিম দেশ যদি অন্যরা দখল করে নেয়, সেখান থেকে যদি মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন শত্রুর মোকাবিলার প্রস্তুতির জন্য অনুকূল কোন অঞ্চলে হিজরত করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

স্থবিরতা পরিহার

একটি জাতির স্থবিরতা কাটাতে হলে হিজরত গুরুত্বপূর্ণ। হিজরতের মাধ্যমে জাতির মধ্যে আসে গতিশীলতা, দৃঢ়তা, ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা এবং সংগ্রামী মনোভাব। হিজরতের মাধ্যমে জাতীয় জীবনে আসে উজ্জীবন ও জাগরণ।

জনসংখ্যার সুষম বণ্টন

বিশ্বের জনসংখ্যার সুষম বণ্টন ও যেসব এলাকায় মুসলমানরা সংখ্যায় অপ্রতুল, সে এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রক্রিয়া হচ্ছে হিজরত ও দেশত্যাগ। হিজরতের মাধ্যমে আমরা বিভিন্নদেশে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়াতে পারি।

আবাদকরণ

যেসব এলাকা অনাবাদী হয়ে আছে, যেসব দেশে ভূমির প্রাচুর্য রয়েছে অথচ আবাদ নেই, সেসব এলাকায় হিজরত ও দেশত্যাগের মাধ্যমে মুসলিম আবাদিতে রূপান্তর করা সম্ভব।

অব্যবহৃত সম্পদ কাজে লাগানো

যেসব এলাকায় সম্পদ অব্যবহৃত আছে, সেখানে হিজরতের বা দেশত্যাগের মাধ্যমে সম্পদ কাজে লাগানো সম্ভব। এতে সামগ্রিকভাবে মানব সম্পদ কাজে লাগানো সম্ভব। এতে সামগ্রিকভাবে মানব জাতির সম্পদ স্বাচ্ছন্দে বৃদ্ধি পাবে।

আন্তর্জাতিকতা

হিজরত ও দেশ ত্যাগের মাধ্যমে মৌলিক দেশীয়, গোত্রীয় বা ধর্মগত সংকীর্ণতা দূর হয়ে আন্তর্জাতিক চরিত্র সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে আন্তর্জাতিক ভাবধারা প্রসার লাভ করে। সংকীর্ণতা দূরীভূত হয়ে উম্মাহ কেন্দ্রিক চেতনাবোধ প্রবল হয়।

ইসলামের উত্থান ও চেতনাবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য হিজরত অনিবার্য। তবে হিজরত শুধু নিজেদের বাস্তুভিটা ত্যাগ করা নয়, হিজরত হতে হবে লক্ষ্যাভিমুখী। হিজরত হবে জুলুম-অত্যাচারের উৎখাত এবং ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠ আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ত্যাগী প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। যে হিজরত অত্যাচার উৎখাত করে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রূপান্তরিত হয় না, বা যে হিজরত নিছক দেশত্যাগ, নিছক আত্মরক্ষার কারণেই হয়ে থাকে, সে হিজরত মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। যে হিজরত মুসলিম উম্মাহর প্রয়োজন পূরণ করবে, কেবল সে হিজরতই অর্থবহ ও ফলপ্রসূ হতে পারে।

যে হিজরত মুসলমানদের মধ্যে আদর্শিক শক্তি সঞ্চার করে, ঈমানী চেতনা বাড়িয়ে দেয়, দাওয়াত ও তাবলীগের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, শোষণ-নিপীড়নের উৎখাত ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ় সংকল্প সৃষ্টি করে দেশাত্মবোধ ও সমাজ জীবনে আলোড়ন তোলে, আপন কর্তব্যবোধে স্থবিরতা ও নিস্পৃহতা কাটিয়ে দেয়, আদর্শ সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ঐক্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে, সর্বোপরি সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠতার সুরক্ষায় আত্মত্যাগের মানসিকতাকে শাণিত করে, আজ সে ধরনের হিজরতই মুসলমানদের প্রয়োজন। তাহলে মুসমলমানদের হক্ব ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের বিকাশ এবং সর্বস্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ হবে গতিশীল।

– মুনির আহমদ, নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।