শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হোক


চলমান করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। গত বছরের ১৭ই মার্চ থেকে লাগাতার প্রায় ১৫ মাস যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছোট-বড় সকল শিক্ষার্থী যে অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও গণপরিবহণ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাটবাজার, শপিং মল, গার্মেন্টস, কলকারখানাসহ অন্যান্য সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলছে।

এর মধ্যে উলামায়ে কেরামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার গত বছরের আগস্ট মাসে দেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষাকার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা বলে গত ৬ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসাসমূহ পুনরায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। এতে আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মাঝে গভীর হতাশা নেমে আসে।

শিক্ষার ধারাবাহিকতা থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকার কারণে দেশের প্রতিটা শিক্ষার্থী আজ দিশেহারা। বই-পুস্তকের সাথে কোমলমতি ছোট শিক্ষার্থীদের যেমন ব্যাপক ফারাক তৈরি হয়েছে, তেমনি কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। তাদের ভিতর ক্রমবর্ধমান হারে তৈরি হচ্ছে নেতিবাচক মনোভাব। যে সময়টা তারা স্কুল-কলেজ বা বই পুস্তকের পিছনে ব্যয় করত, সেটা তারা পার করছে মোবাইল বা টেলিভিশনের পিছনে, অথবা বন্ধু-বান্ধবের সাথে অহেতুক আড্ডা দিয়ে। অনেকে ক্ষতিকর অনলাইন গেমিংসহ সোশ্যালমিডিয়া ও প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ভঙ্গুর পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন ব্যবস্থা তাদেরকে আরো বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। এতে অভিভাবকরা চরম অসহায়ত্ব ও দু:শ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন। তারা চোখের সামনে দেখছেন, পড়াশোনা থেকে দূরে সরে পড়ায় অনিয়মিত ও উদাসীন জীবন তাদের ছেলেমেয়েদের উচ্ছৃঙ্খল করে তুলছে।

অপরদিকে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশে যেমন হু হু করে বাড়ছে কিশোর অপরাধ, পাশাপাশি কিশোর গ্যাং কালচারও বিস্তার লাভ করছে পাল্লা দিয়ে। লাখ লাখ শিশু-কিশোর মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল ও অপ্রকৃতস্ত হয়ে পড়ছে। একেকটি পরিবার ও জাতির জন্য এটা অনেক বড় ক্ষতির। ইতোমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছে। অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে গভীর মানসিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। বেশ কিছু হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবরও পত্রপত্রিকায় এসেছে। তন্মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই রয়েছে ১১ জন।

আরও পড়তে পারেন-

শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের অন্য সব কিছু কথিত ‘সীমিত আকার’ বা ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ যে গতিতেই হোক স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে নিশ্চয়ই বাধা থাকবার কথা নয়। সরকারী নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি ভেবে দেখা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে যদি কোনো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা তো খুব কঠিন কাজ নয়।

ইতোমধ্যে দেশের আলেমসমাজও সরকারের প্রতি মাদ্রাসাসমূহ খুলে দিতে বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। যাতে করে লাখ লাখ মাদ্রাসা ছাত্রের শিক্ষার ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ থাকার পাশাপাশি কুরআন-হাদীস ও ইসলামী জ্ঞান চর্চার বরকতে করোনাসহ সকল বিপদাপদ থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পায়।
উল্লেখ্য, দেশের হাজার হাজার নাজেরা, হেফজখানা ও কওমি মাদ্রাসা গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত লাগাতার ৮ মাস চালু ছিল। কিন্তু এ সময়ে কোন মাদ্রাসায় করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সঙ্কটের খবর পাওয়া যায়নি। কওমি মাদ্রাসাসমূহের এমন ইতিবাচক অভিজ্ঞতার আলোকে শুধু মাদরাসা নয়, বরং কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ রাখার বাস্তবভিত্তিক কোন যুক্তি থাকতে পারে- অনেকেই এটা মনে করছেন না।

করোনায় দেশের অর্থনীতির ক্ষতি নানাভাবে পুষিয়ে নেয়া গেলেও শিক্ষা ব্যবস্থা ও কোটি কোটি শিক্ষার্থীর অপূরণীয় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হয়তো কখনো সম্ভব হবে না। গত প্রায় দেড় বছর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে লকডাউনের কারণে নানাবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা জরুরি। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্য সবকিছু চলতে পারলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদানও সম্ভব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে সঠিক রোডম্যাপপ্রণয়ন করে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে, এমনটাই জনপ্রত্যাশা। এতে করে একটা প্রজন্মকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।