পরিচালনায়- ফাতওয়া বিভাগ, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
তালাক প্রসঙ্গে
(৯৪৬৯) মুহাম্মদ একরামুল হক, চারিয়া, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা: সম্প্রতি কোনো এক কারণে আমার স্ত্রীকে মারধর করি। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে সে আমাকে বলে, তোকে তালাক দিবো। এরপর সে ১,২,৩,৪ তালাক বলে। তারপর থেকে সে আমার সাথে আর কথা বলে না। এরকম দুই তিন দিন যাওয়ার পর আমরা আবার আগের মতো হয়ে যাই। কিন্তু কিছু মানুষ বলতে শুরু করেছে যে, এ কথা বলার কারণে নাকি আমার স্ত্রী আমার জন্য হারাম হয়ে গেছে। এ পর্যায়ে আমার জানার বিষয় হলো, এরকম স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়ার দ্বারা তালাক হবে কি না এবং এখন আমাদের করণীয় কী- জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: ইসলামী শরীয়তে তালাক দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র স্বামীকে দেয়া হয়েছে; স্ত্রীকে নয়। তাই কোনো অবস্থাতেই স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। তালাক দিলেও তালাক পতিত হয় না। তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে তার নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার দেয়, তাহলে স্বামীর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারবে। অন্যথায় পারবে না। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত বর্ণনা মতে আপনার স্ত্রী আপনাকে যে ১,২,৩,৪ তালাক দিয়েছে- এতে কোনো ধরনের তালাক পতিত হয়নি এবং আপনার স্ত্রী আপনার জন্য হারামও হয়নি। তাই আপনার জন্য তার সাথে ঘর-সংসার করতে কোনো বাধা নেই। (সূরা নিসা- ৩৪, মুসান্নিফে আব্দির রাজ্জাক- ৭/২৩৬, বায়হাকী- ১৫১১৬, দুররে মুখতার- ৪/৪৩১, ফিকহুল ইসলামী- ৭/৩৬৮, ফাতাওয়ায়ে শামী- ৪/৩৬১)।
যাকাত প্রসঙ্গে
(৯৪৭০) মুহাম্মদ হুযাইফা, ঘোড়াখাল, কামালপুর, মৌলভীবাজার।
জিজ্ঞাসা: কী পরিমাণ সোনা-রূপা এবং টাকার মালিক হলে যাকাত ফরয হয়?
সমাধান: যদি কোনো ব্যক্তি সাড়ে সাত ভরি সোনা কিংবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা কিংবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য পরিমাণ নগদ টাকা অথবা ব্যবসায়িক পণ্যের মালিক হয় এবং তার উপর এক বছর অতিবাহিত হয়, তাহলে যাকাতের অন্য শর্তাদি বিদ্যমান থাকলে, তার উপর যাকাত ফরয হবে। (আবু দাউদ- ২২১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/২৪০, হিদায়া- ১/১৯৫)।
(৯৪৭১) মুহাম্মদ শফিউল আলম, কাশিপুর, মুজাহিদাবাদ, রানিশংকৈল, ঠাকুরগাঁও।
জিজ্ঞাসা: বর্তমানে আমরা অনেক সময় নিজেরা চাঁদ না দেখেও রেডিও ও টেলিভিশনের খবরের উপর ভিত্তি করে ঈদের নামায আদায় করে থাকি। এ ধরনের খবরের উপর ভিত্তি করে ঈদের নামায আদায় করা যাবে কি?
সমাধান: যদি শরীয়ত মোতাবেক গঠিত চাঁদ কমিটি ঈদের চাঁদ উঠার ফায়সালা দিয়ে থাকে আর সেই ফায়সালাটিই রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়, তাহলে রেডিও-টেলিভিশনের এমন খবরের ভিত্তিতে ঈদের নামায আদায় করা যাবে। (সুনানে আবি দাউদ- ১/৩১৯, দুররে মুখতার মাআ রদ্দি মুহতার- ৩/৪০৭-৮, বাহরুর রায়েক- ২/৪২৪, জাওয়াহিরুল ফিকহ- ৩/৪৮৩)।
নামাযের নিয়ত ও জুমআর ওয়াক্ত প্রসঙ্গে
(৯৪৭২) মুহাম্মদ মুসলিম, চরবিভাগদী, কালকিনি, মাদারীপুর।
জিজ্ঞাসা: ফিকহের সকল কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, নামাযের নিয়ত তাকবীরের সাথে মুত্তাসিল হতে হবে। হাদিস শরীফে এর কোনো ভিত্তি আছে কি? তাছাড়া জুমআর নামাযের আখেরী ওয়াক্ত হাদিসের আলোকে কোন পর্যন্ত?
সমাধান: (১) নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হাদিসসমূহে তাকবীরের সাথে নিয়ত মুত্তাসিল হওয়ার বিষয়টির বর্ণনা সরাসরি পাওয়া না গেলেও রূপক অর্থে তাকবীরের আগে নিয়ত করার বিষয়টি কুরআন ও হাদিস উভয় দ্বারা প্রমাণিত।
তাছাড়া নামাযের নিয়ত তাকবিরের সাথে মুত্তাসিল হওয়ার যে কথা ইলমে ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে বর্ণিত রয়েছে, তা ফিকহে শাফেয়ীর ভাষ্যমতে আবশ্যক হলেও ফিকহে হানাফির ভাষ্যমতে আবশ্যকীয় নয়, বরং মুস্তাহাব। তাকবিরের আগ মুহূর্তে নিয়ত করার মধ্যেই সতর্কতা বিদ্যমান।
(২) সিহাহ সিত্তাহসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে জুমআর আখেরী ওয়াক্ত সংক্রান্ত হাদিস পাওয়া যায় না। কিন্তু যোহরের আখেরী ওয়াক্ত সংক্রান্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। তাছাড়া বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও তিরমিযী শরীফের গ্রন্থ প্রণেতা ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (মৃত্যু-২৮৯ হি.)সহ অধিকাংশ আহলে ইলম এ বিষয়ে একমত যে, যোহরের নামাযের ওয়াক্তই হলো জুমআর নামাযের ওয়াক্ত।
যোহরের আখেরী ওয়াক্তের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিসের আলোকে ফিকহে হানাফির ভাষা হলো, মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে। (সূরা মায়েদা- ৬, সুনানে ইবনে মাযাহ- ৫৮, তাফসীরে কবীর- ৪/২৯৭, সহীহ বুখারী- ১/২, ফাতহুল বারী- ১/১৭, আশবাহ ওয়ান নাযায়ের- ১৪৯, বাহরুর রায়েক- ১/৪৭১, সুনানে তিরমিযী- ১/১১৬, শরহে মাআনিল আছার- ১/১১১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১০৭, জামেউত তিরমিযী- ১/৪০, দরসে তিরমিযী- ১/৩২০)।
ফজরের নামাযের পর কাযা নামায আদায় প্রসঙ্গে
(৯৪৭৩) মুহাম্মদ ইসমাঈল মিয়া, মিটফোর্ড রোড, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা: ফজরের নামাযের পর অর্থাৎ ফরয আদায়ের পর কোনো কাযা নামায আদায় করা যাবে কি? যদি আদায় করা না যায়, তাহলে কেউ অজান্তে আদায় করে ফেললে সে গুনাহগার হবে কি না?
সমাধান: সূর্যোদয়, দ্বিপ্রহর, সূর্যাস্ত এ তিন সময় ব্যতীত বাকি যেকোনো সময় কাযা নামায আদায় করা জায়েয। তবে ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ও আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো নফল নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত অবস্থায় কাযা নামায আদায় করা যাবে। (সহীহ বুখারী- ৫৯৭ ও ৫৮৪, জামেউত তিরমিযী- ১৩৪, কিতাবুল আসল- ১/১২৬, বাদায়েউস সানায়ে- ১/৫২৬, বাহরুর রায়েক- ১/৪৩৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১০৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া- ১/৬৮, মাবসুত- ১/৩০৪-৫, শরহে মুখতাসারুত ত্বহাবী- ১/৫৪৩, হিদায়া- ১/৮৫-৮৬)।
মৃত ব্যক্তির ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে খানার আয়োজন প্রসঙ্গে
(৯৪৭৪) মুহাম্মদ রূহুল আমীন, ইসখালী, হাশিমপুর, যশোর।
জিজ্ঞাসা: আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে তার রূহের মাগফিরাতের জন্য আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীদেরকে দাওয়াত করে যে বিরাট খানার আয়োজন করা হয়, তা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
সমাধান: ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে গরিব-মিসকিনদেরকে খাওয়ানো অথবা দান-সদকা করা নেকির কাজ, তবে কিছু দিনকে বিশেষ ও সাওয়াবের দিন মনে করে যেমন, তিন দিনা, চার দিনা, চল্লিশা ও বছরী ইত্যাদি (যার প্রচলন আছে) আয়োজন করা বিদআত। অতএব, প্রচলিত দিন তারিখ নির্ধারণ করা ব্যতীত এবং লোক দেখানো উদ্দেশ্য ছাড়া যখন যে পরিমাণ সম্ভব হয়, ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে গরিব-মিসকিনদের মাঝে দান-সদকা করা অথবা খাওয়ানো সাওয়াবের কাজ এবং হাদিসে এমনই উল্লেখ আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি পূর্ণ লক্ষ রাখতে হবে। এক. নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে হতে হবে। দুই. শরীকি সম্পদ দ্বারা হলে শরীকদারদের স্বতঃস্ফূর্ত পূর্ণ অনুমতি থাকতে হবে। তিন. নাবালকের সম্পদ থেকে হতে পারবে না এবং এক্ষেত্রে নাবালকের অনুমতিও শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। (সহীহ বুখারী- ১/৩৮৬, রদ্দুল মুহতার- ২/১৮৬, ফাতহুল কদীর- ২/১৫১, হাশিয়াতুত ত্বহাবী- ৬১৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া- ৫/৩২৫ ও ৩৩১, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম হাটহাজারী- ২/১৬৭ ও ১৬৯)।
মেয়েদের পোষাক প্রসঙ্গে
(৯৪৭৫) মুছাম্মত সেলিনা আক্তার সেলি, অফিস টিলা চিকনছড়া, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা: মাসিক মুঈনুল ইসলামে প্রশ্ন করে জানতে পারি যে, মেয়েদের ইসলামী পোষাক ঢিলেঢালা সেলোয়ার-কামিস। তবে শাড়ি ব্লাউজও শালীন পোষাক। আমার স্বামী যেহেতু আলেম তাই তিনি সেলোয়ার কামিস পরিধান করতে আমাকে বার বার চাপ প্রয়োগ করছেন। কিন্তু আমার শশুর-শাশুড়ি ও প্রতিবেশী মহিলারা এতে নারাজ ও আমাকে নানারকম ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে কথা বলেন। এ পরিস্থিতিতে আমি কী করতে পারি, জানালে খুশি হব।
সমাধান: ইসলামী শরীয়তে মহিলাদের জন্য পর্দাকে ফরয করা হয়েছে। তাই মুসলিম নারীদের জন্য পর্দা করা আবশ্যক। সুতরাং তাদের জন্য সর্বদা এমন পোশাক পরিধান করা জরুরি যার মাধ্যমে পর্দার হেফাযত হয়। তেমনিভাবে স্বামীর আদেশ পালন করাও আবশ্যক। প্রশ্নোল্লিখিত বর্ণনানুযায়ী আপনার জন্য করণীয় হলো যে, আপনি আপনার স্বামীর চাহিদা ও আদেশ অনুযায়ী-ই (এমন পোশাক পরিধান করতে হবে, যাতে আপনার পর্দার হেফাযত হয়) চলতে হবে। কেননা, স্বামীর বৈধ আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। আর এক্ষেত্রে আপনার শ^শুর-শাশুড়ি ও প্রতিবেশী মহিলারা যে যা কিছু-ই বলুক না কেন আপনি তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না; বরং ধৈর্যধারণ করবেন। এ পর্যায়ে আপনি তাদের প্রতি কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে এ বিষয়ে চুপচাপ থেকে স্বাভাবিক ভালো ব্যবহার করবেন। পারলে তাদেরকে শরয়ী পর্দা ও স্বামীর আদেশ পালন করার গুরুত্ব ও ফযীলত বুঝাবেন। (সূরা আহযাব- ৫৯, সূরা নিসা- ৩৪, সূরা যুমার- ১০, সহীহ বুখারী- ৫১৯২ ও ৫১৯৪, সুনানে আবি দাউদ- ২১৪০ ও ২১৪১, ইবনে মাযাহ- ১৮৫৭)।
মসজিদের আদব প্রসঙ্গে
(৯৪৭৬) মুহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ, লালখান বাজার মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
জিজ্ঞাসা: একটি ধর্মীয় পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, মসজিদের ভেতরে ছাত্রদের হাজিরা নেওয়া ও মারপিট করা উচিত নয়। এই রকম কাজ করলে মসজিদের গাম্ভীর্যতা নষ্ট হয় এবং এটা একটি গুরুতর পাপও। আমাদের প্রশ্ন হলো, আসলেই কি পাপ?
সমাধান: প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে মসজিদের আদব রক্ষা করে মসজিদে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া জায়েয। আসাতেজায়ে কেরাম তালীম, তারবিয়াত ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মসজিদের ভেতর ছাত্রদের হাজিরা নিতে পারবেন এবং প্রয়োজনে তাদের কল্যাণার্থে শরীয়ত নির্ধারিত সীমার মধ্যে শাস্তিও দিতে পারবেন। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ১/১৬৯ ও ৫/৩৮০, রদ্দুল মুহতার- ২/৪৩৬ ও ৯/৬১৬, আবু দাউদ- ৪৯৫ ও ৫৯৬)।
ভিডিও ক্যামেরায় ছবি উঠানো প্রসঙ্গে
(৯৪৭৭) মুহাম্মদ আশরাফুল হক, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা।
জিজ্ঞাসা: ভিডিও ক্যামেরায় ছবি উঠানো বা ধারণকৃত ছবি দেখা জায়েয আছে কি? যদি নাজায়েয হয় তবে পবিত্র হজ্জের ছবি কীভাবে ধারণ করা হয় এবং বিশ্বের সকল দেশ থেকে তা দেখানো হয়?
সমাধান: প্রাণীর ছবি অংকন করা কিংবা করানো নাজায়েয। ডিজিটাল ডিভাইস তথা স্মার্টফোন ভিডিও ক্যামেরা ইত্যাদির মাধ্যমে ছবি তোলা ছবি তৈরির একটি মাধ্যম। তাই বিনা প্রয়োজনে স্মার্টফোন, ভিডিও ক্যামেরা ইত্যাদির মাধ্যমেও মানুষ অথবা পশু-পাখির ছবি তোলা কিংবা তোলানো নাজায়েয। তবে প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েয। যেমন- পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদির প্রয়োজনে ছবি তোলা জরূরতের কারণে জায়েয। প্রাণীর ছবি ব্যতীত অন্যান্য ছবি যেমন- গাছপালা, ফল-ফুল, বাড়ি-ঘর ইত্যাদির ছবি তোলা জায়েয। যেসব ছবি অংকন বা তোলা নাজায়েয, সেসব ছবি স্বেচ্ছায় দেখাও নাজায়েয। তবে অনিচ্ছায় দৃষ্টি পড়ে গেলে সমস্যা নেই। হজ্জ ও কাবা শরীফের ছবি ধারণের সময় মানুষের ছবিও স্পষ্টভাবে আসার দরুণ তা ধারণ ও দেখা উভয়টি নাজায়েয। কর্তৃপক্ষ উক্ত ভিডিও ধারণ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে শরীয়তের তোয়াক্কা না করেই এসব করে থাকে। (সহীহ বুখারী- ২২২৫, উমদাতুল কারী- ২২/১১০, রদ্দুল মুহতার- ২/৪১৬, আশবাহ ওয়ান নাযায়ের- ২৫১, জাওয়াহিরুল ফিকাহ- ৩/২৩৯, কিফায়াতুল মুফতী- ১৩/৮৩-৮৪, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া- ১/৯৫-৯৭)।
নামায প্রসঙ্গে
(৯৪৭৮) মুসলিমা বেগম, লাফনাউট, গোয়াইনঘাট, সিলেট।
জিজ্ঞাসা: সুন্নাত অথবা ওয়াজিব নামাযরত অবস্থায় স্বামী অথবা মা-বাবা ডাক দিলে বা বাহির থেকে দরজা খুলে দেয়ার জন্য বললে ঐ নামায ভঙ্গ করে ডাকে সাড়া দেয়া বা দরজা খুলে দেয়া জায়েয হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
সমাধান: কোনো ব্যক্তি যদি ওয়াজিব নামাযরত অবস্থায় তার মা-বাবা বিপদে পড়ে বা জরুরি কোনো প্রয়োজনে তাকে ডাকে এবং প্রয়োজন পূরণ করার মতো কেউ না থাকে, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে তাদের ডাকে সাড়া দিবে। অন্যথায় নামায ভাঙবে না। আর যদি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা নফল নামাযে থাকে, তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে মা-বাবার ডাকে সাড়া দিবে। কারণ, নফল নামাযের চেয়ে মা-বাবার প্রয়োজন অপরিহার্য।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মায়ের হকের বিষয়টি বারবার বলেছেন। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নফল নামায আপনি যে কোনো সময় আদায় করতে পারবেন। কিন্তু মা-বাবার একটা প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সেটা আপনাকে তখনই পূরণ করতে হবে। এ অবস্থায় আপনি নফল নামায ভেঙে মায়ের প্রয়োজনটুকু পূরণ করে, পরে নফল নামায আদায় করতে পারেন।
মা-বাবা যদি জানেন, আপনি নামাযে আছেন। তাহলে নামায ভেঙে তাদের ডাকে সাড়া না দিলেও সমস্যা নেই; তবে দেয়া উত্তম। আর যদি না জানেন, তাহলে তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া আবশ্যক।
তবে মায়ের তেমন কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি সন্তানের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য যদি ডাক দেন, সে ক্ষেত্রে নফল নামায ভঙ্গ করে সাড়া দিতে হবে না। আপনি নফল নামায শেষ করে মায়ের প্রয়োজন মেটাতে পারেন। আর যদি স্বামী ডাকেন বা বাহির থেকে কেউ দরজা খুলতে বলেন, তাহলে নামায ভাঙবে না; নামায একটু দ্রুত শেষ করে স্বামীর ডাকে সাড়া দিবেন বা দরজা খুলে দিবেন। (সূরা ইসরা- ২৩-২৪, রিয়াজুস সালীহীন- ২৬৪, মারাকিউল ফালাহ- ৩৭২, আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতিহী- ২/৩৭, রদ্দুল মুহতার- ২/৬৪৪)।
মিলাদ কিয়াম প্রসঙ্গে
(৯৪৭৯) মুহাম্মদ কবির হুসেন, নতুন বাস টার্মিনাল মসজিদ, ভোলা।
জিজ্ঞাসা: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা এবং কিয়াম করা জায়েয আছে কি?
সমাধান: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা এবং প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে কিয়াম করা নাজায়েয ও বিদআত। (সূরা হাশর- ৭, আবু দাউদ- ২/৭১০, কিফায়াতুল মুফতী- ২/২২৯)।
তিন তালাক প্রসঙ্গে
(৯৪৮০) মুহাম্মদ মানিক, নোয়াখালী।
জিজ্ঞাসা: জনাব বিনিত নিবেদন এই যে, আমি মুহাম্মদ মানিক। গত কয়েকদিন পূর্বে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরে যখন খানা খেতে বসি, তখন আমার স্ত্রী আমাকে বাসি তরকারি দেয়। তা নিয়ে স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়, এমনকি তাকে মারধরও করি। এক পর্যায়ে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন আমি তাকে বলি, তোমার যদি আমার সাথে সংসার করতে মনে না চায়, তাহলে আমাকে কষ্ট না দিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও। সে বলে, তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও। আমি চলে যাবো। তখন আমি বলি, যাও তোমাকে ১ তালাক ২ তালাক ৩ তালাক। তুমি চলে যাও।
এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের সংসারে দুটি সন্তান আছে। তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে উক্ত ঘটনার শরয়ী সমাধান অনুযায়ী বৈবাহিক জীবন-যাপন করতে চাচ্ছি। আশা করি সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: শরীয়ত কর্তৃক জায়েয কাজসমূহের মধ্যে সর্ব নিকৃষ্ট ও অপছন্দনীয় কাজ হচ্ছে ‘তালাক’ দেয়া। উপায়হীন সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য শরীয়ত তালাকের ব্যবস্থা রেখেছে। তাই কথায় কথায় তালাক দেয়া এবং একসাথে তিন তালাক দেয়া জঘন্যতম অপরাধ। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীকে মৌখিক বা লিখিতভাবে স্ত্রীর সম্মুখে বা তার অনুপস্থিতিতে তিন তালাক প্রদান করে, তাহলে কুরআন হাদিসের মতে তা পতিত হয়ে যায়।
সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনামতে যেহেতু আপনি আপনার স্ত্রীর উক্তি “তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও আমি চলে যাব” এর প্রতিউত্তরে স্বজ্ঞানেই আপনার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন। তাই এমতাবস্থায় আপনার স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে তিনি আপনার জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে গেছে। বিধায় বর্তমানে তার সাথে সংসার করার শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি হলো, সে যদি আপনার তালাকের ইদ্দত (অর্থাৎ তিন ঋতুস্রাব) শেষে অন্য স্বামী গ্রহণ করে এবং সেই স্বামী, তার সঙ্গে স্ত্রী সুলভ মেলামেশা (সহবাস) করার পর তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিয়ে দেয় অথবা মারা যায়, তখন সেই স্ত্রীকে পুনরায় ইদ্দত পালন শেষে আপনি বিবাহ করে নিতে পারবেন। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত। (সূরা বাকারা- ২৩০, সহীহ বুখারি- ২/২২৫, রদ্দুল মহতার মাআ দুররিল মুখতার- ৪/৪৪৩, কিতাবুল আসল- ৪/৪৬৬, বাহরুর রায়েক- ৪/৯৪, দুরুল মুখতার মাআশ শামী- ৫/৪৩)।
তালাক প্রসঙ্গে
(৯৪৮১) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের কাছে আমার জানার বিষয় হলো, কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে গিয়ে গান শুনলে অথবা গান শোনে হাত তালি দিলে, বউ তালাক হয়ে যাবে কি?
জনৈক আলেম সাহেব ফাতাওয়া দিয়েছেন যে, এরূপ শ্রোতাদের বিবাহ পুনরায় দোহরাতে হবে। এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা কি- জানিয়ে বাধিত করবেন!
সমাধান: কোনো অনৈসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শোনা সর্বাবস্থায় হারাম এবং কবিরা গুনাহ। কেউ যদি এগুলো শোনার আদেশ দেয়, তা মান্য করা যাবে না। কেননা, আল্লাহর নাফরমানিতে বান্দার ইতাআত বা আনুগত্য জায়েয নেই। কবিরা গুনাহের ক্ষেত্রে শরিয়তের মূলনীতি হলো, উক্ত গুনাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে খাস দিলে তাওবা করা। আর তার দ্বারা ঈমান এবং বিবাহের মধ্যে কোনো রকমের প্রভাব ফেলে না।
জনৈক আলেমের ফাতওয়া ঐ সময় প্রযোজ্য হবে, যদি গানে কোনো ধরনের কুফরি কথা-বার্তা থাকে এবং শ্রোতারা তা বুঝে তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করে হাত তালি দেয়। কিংবা অশ্লীল গান শোনা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ- তা জানা সত্ত্বেও তাকে জায়েয মনে করে শুনলে।
সাধারণত যেটা হয়ে থাকে, গান শোনার সময় উত্তেজনা বশত: হাত তালি দেয়, তাঁর দ্বারা বিবাহের মধ্যে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে উক্ত হারাম এবং কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমিন। (সূরা লোকমান- ৬, আবু দাউদ- ৩১৮ ও ৫৬৯, মিশকাতুল মাসাবীহ- ৩১৮, ফাতাওয়ায়ে শামী- ৯/৫০৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৪০৬, ফাতাওয়ায়ে কাযীখান- ৯/২৯৩, আশরাফুল ফাতাওয়া- ৩/৪৮৭)।
টিভিতে ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখা প্রসঙ্গে
(৯৪৮২) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, টিভিতে প্রচারিত ভালো ভালো ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখা যাবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: টিভি সম্পর্কে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, এই নব আবিষ্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ক্রিয়াকর্মের সয়লাব বইয়ে দেয়া হচ্ছে। বেহায়াপনা, নোংরামী, মহিলাদের সাজগোজ করিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ করলে টিভি দেখা সম্পর্কে বলা যায়, তা নিঃসন্দেহে হারাম এবং কবিরা গুনাহ। তবে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, যদি টিভিতে প্রচারিত ইসলামিক ভালো ভালো অনুষ্ঠানগুলো দেখে, তাহলে কোনো গুনাহ হবে কি না? যা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে হক্কানি উলামায়ে কেরামের মতামত হলো, টিভিতে প্রচারিত ভালো ভালো ইসলামিক অনুষ্ঠানগুলোও দেখা জায়েয হবে না। কারণ, তাতে পূর্বে ধারণকৃত সম্প্রচারসহ শরীয়ত গর্হিত নানা বিজ্ঞাপন প্রচার হয়। (সূরা লুকমান- ৬, সূরা নূর- ৩০, মিশকাতুল মাসাবীহ- ২৭০, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৩৭৯, আশরাফুল ফাতাওয়া- ৩/৫৭৬, কিতাবুন নাওয়াযিল- ১৬/৪৪৩-৪৪, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ- ১৬১৩৫১ নং ফাতাওয়া)।
(৯৪৮৩) কামরুল ইসলাম, মাইজদী, নোয়াখালী।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, টিভি দেখা ইসলামের দৃষ্টিতে কোন ধরনের পাপ- জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: বর্তমান চিত্তবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম মনে করা হয় টিভি, কম্পিউটার, স্মার্টফোন ইত্যাদি দেখাকে। পরিবারের সবাই একসাথে বসে টিভি, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে একটু খোলামেলা প্রেমনির্ভর প্রোগ্রামগুলো দেখাকে বিনোদন মনে করা হয়। ভদ্রতা, শালীনতা, আত্মমর্যাদাবোধ ও সুস্থ বিবেককে পেছনে ফেলে আকাশ সংস্কৃতির অশ্লীলতাপূর্ণ, চরিত্র বিধ্বংসী, বেহায়াপনায় ভরপুর প্রোগ্রামগুলো মানুষ গিলছে সপরিবারে। এতে তারা বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করছে না। এসব শুধু শরীয়ত ও ইসলাম বিরোধীই নয়; বরং মানবতা ও সভ্যতারও পরিপন্থি। ইসলাম এসব দেখা কখনোই অনুমোদন করে না; বরং তা দেখা নাজায়েয ও হারাম তথা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এহেন গর্হিত কাজ করা এবং দেখা থেকে হেফাজত করুন। আমিন। (সূরা লোকমান- ৬, সূরা নূর- ৩০, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ- ১৬১৩৫১ নং ফাতাওয়া, কিতাবুন নাওয়াযিল- ১৬/৪৩৩)।
ব্যাংকে চাকরি করে বেতন ভোগ করার হুকুম প্রসঙ্গে
(৯৪৮৪) মুহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান, ঠিকানা বিহীন।
জিজ্ঞাসা: যে সমস্ত ব্যাংকের অধিকাংশ লেনদেন সুদি প্রক্রিয়ায় হয় সে সমস্ত ব্যাংকে চাকরি করা এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকার হুকুম কী?
অপারগ অবস্থায় এ ধরনের ব্যাংকে চাকরি করার হুকুম কী এবং শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে অপারগতার মানদণ্ড কী? এমন টাকা দিয়ে নির্মাণকৃত বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকার হুকুম কী? এবং কেউ ওয়ারিশ সূত্রে এমন বাড়ীর মালিক হলে তার জন্য সেই বাড়ী ব্যবহার করার হুকুম কী?
সুদী ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকা দ্বারা যদি কেউ কোনো জমি ক্রয় করে, তাহলে সেই জমির বিক্রিত মূল্য ভোগ করার হুকুম কী? এবং সেই বিক্রিত মূল্য ভোগ করার হালাল তরীকা কী?
এরূপ টাকা মসজিদে দান করা, গরিব দুঃখিদের দেওয়ার হুকুম কী? এবং এরূপ টাকা দ্বারা কুরবানী, হজ্জ ও যাকাত আদায় করার হুকুম কী?
যদি কেউ নফস-শয়তানের ধোকায় পড়ে দীর্ঘদিন সুদী ব্যংকে চাকরি করে এবং দ্বীনি বুঝ আসার পর এরূপ টাকা বা পেনশনের টাকা দিয়ে হালাল ব্যবসা করতে চায়, তখন তার পদ্ধতি কী?
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিষয়াদির বিস্তারিত উত্তর না দিয়ে সঙ্গত মনে হচ্ছে একটি মূলনীতিমূলক জবাব প্রদান করা। সুদী লেনদেন ইসলামী শরীয়ার আলোকে হারাম ও নাজায়েয। তাই সুদভিত্তিক কোনো লেনদেনে জড়িত হওয়া বা এমন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করার অনুমতি শরীয়ত দেয় না; সুতরাং যে সমস্ত ব্যাংকের অধিকাংশ লেনদেন সুদী প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়, ঐ সকল ব্যাংকে চাকরি করা নাজায়েয ও হারাম এবং ঐ সকল ব্যাংক হতে উপার্জিত টাকাও হারাম মালের অন্তর্ভুক্ত।
ব্যাংকের চাকরি হারাম হওয়ার মূলত কারণ দু’টি। যথা ১) হারাম কাজে সহায়তা করা। ২) হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার আশংকা থাকা।
শরীয়তে সব ধরনের সহায়তা হারাম নয়; বরং সেসব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে জড়িত হতে হয়। যেমন- সুদী লেনদেন লেখা, সুদী টাকা উসূল করা ইত্যাদি।
আর যদি সুদী কাজে সরাসরি জড়িত না হতে হয়; বরং তার কাজের ধরন এমন হয়, যেমন- ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েয কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি। তাহলে যেহেতু এসব কাজে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই, তাই এমন সহায়তা করার সুযোগ আছে।
আর হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ে শরয়ী মূলনীতি হলো, যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা থেকে বেতন নেয়া জায়েয নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয়, তাহলে বেতন নেয়া জায়েয হবে।
আরও পড়তে পারেন-
- নূপুর শর্মা, হেট স্পিচ ও বাকস্বাধীনতা
- রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাথে হযরত আয়েশা (রাযি.)এর সংসার ও দাম্পত্য জীবন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ ইসলাম কী বলে?
- আল্লাহর অসীম কুদরত ও মহিমা আত্মোপলব্ধির উৎকৃষ্ট উপায়
- যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আলেম সমাজের প্রস্তুতি
ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি খাতের সমষ্টি। যথা- ১) মূলধন। ২) সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩) জায়েয ব্যবসার আমদানি। ৪) সুদ ও অন্যান্য হারাম ব্যবসার আমদানি।
এ চারটি খাতের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম।
যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি খাতের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ খাতটি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকের ঐসব পদে চাকরি করা জায়েয; যেখানে হারাম কাজ করতে না হয় এবং বেতন নেওয়াও জায়েয হবে। তবে উত্তম হলো এ চাকরিও ছেড়ে দেয়া। বর্তমান এ ধরনের ব্যাংক পদ্ধতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু যদি হারাম আমদানি বেশি হয়, হালালের তুলনায় বা অন্য হারাম কাজে জড়িত হতে হয়, তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরি করা জায়েয নয় এবং তা থেকে বেতন নেয়াও নাজায়েয; বরং গৃহীত বেতন হারাম হিসেবে গণ্য হবে। (ফাতাওয়ায়ে উসমানী- ৩/৩৯৪-৩৯৬)।
অতএব, হারাম চাকরির বেতনে যা কিছু করা হবে ততটুকুু পরিমাণ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দেয়া আবশ্যক। যদি ততটুকু পরিমাণ সম্পদ সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করা না হয়, তাহলে উক্ত সম্পদ হালাল হবে না। তাই উক্ত সম্পত্তিতে হজ্জও ফরয হবে না, যাকাত, কুরবানী, সদকায়ে ফিতর কিছুই ওয়াজিব হবে না। সে হিসেবে কেউ মিরাসসূত্রে তার মালিক হলে তার কর্তব্য হলো, হারাম পরিমাণ টাকা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দেয়া। তখন সে টাকা দিয়ে যে সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে তা হালাল বলে গণ্য হবে, অন্যথায় নয়।
অতএব, ব্যাংকে চাকরিরত ব্যক্তি উপায়হীন অবস্থায় বৈধ চাকরি পাওয়া পর্যন্ত উক্ত চাকরি হারাম জেনে অনুতপ্ত এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করতে থাকবে ও চাকরিহীন ব্যক্তির ন্যায় জীবিকা নির্বাহের মতো কোনো হালাল পন্থা তালাশ করতে থাকবে। জায়েয চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে উক্ত চাকরি ছেড়ে দিবে।
হালাল চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত উপার্জিত হারাম টাকা থেকে উপকৃত হওয়ার শরয়ী হীলা হলো, সে কোনো অমুসলিম ব্যক্তি থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের খরচ, হজ্জ, ওমরা ও ব্যবসা ইত্যাদি আনজাম দিবে, অতঃপর ওই হারাম টাকা দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করবে। এমতাবস্থায় তার জন্য হজ্জ, ওমরা করা ও ব্যবসা ইত্যাদির মুনাফা হালাল বলে গণ্য হবে। যদিওবা ঋণদাতার ঋণ হারাম টাকা দিয়ে আদায় করার দ্বারা গুনাহগার হওয়ায় খালেস নিয়তে আল্লাহর কাছে তাওবা করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হারাম থেকে বেঁচে হালাল উপার্জন করার তাওফিক দান করুন, আমিন। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত। (সূরা বাকারা- ২৭৮-৮১, সূরা মায়েদা- ২, সহীহ মুসলিম- ১৫৯৮, মাজমাউল আনহার- ৩/৫৩৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া- ৫/৩৯৬, ফাতহুল মুলহিম- ১/২১৯, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল- ৩৪৯, ফাতাওয়ায়ে উসমানী- ৩/৩৯৮, ইয়াহইয়াউল উলূম, খুলাসাতুল ফাতাওয়া)।
ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে
(৯৪৮৫) মুহা. হাফিজুর রহমান, খুলনা।
জিজ্ঞাসা: মুহতারাম বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা আর্থিক দিক থেকে খুবই গরিব ছিলাম। তাই আমার মায়ের ধনী চাচাতো ভাইয়েরা সুযোগ বুঝে আমার মা থেকে তার পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো নিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সময়ে সময়ে দুইশ, তিনশ, চারশ, পাঁচশ করে টাকা দিত। মাও তা নিয়ে নিতো। তারা মাকে বলতো, তোমার একমাত্র ভাই তার অংশের জমি বিক্রি করে দিয়েছে। তোমার এ সামান্য জমি রেখে কী করবে? তা আমাদের দিয়ে দাও।
তারা আমার মায়ের জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে এরকম করে করে মোট টাকা দিয়েছে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু আমার মা কখনও বলেনি যে, আমি আমার জমি বিক্রি করব; বরং গরিব বলে শুধু ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকিয়েই টাকা নিয়ে নিতো এবং তারা জায়গা নিয়ে নিবে বললে, মা চুপ করে থাকতো। তবে পরে তাদের পিড়া-পিড়িতে একসময় মা বলে, যেহেতু তোদের থেকে টাকা নিয়েছি তাই তোদেরকে জায়গা দিয়ে দিবো।
উল্লেখ্য যে, মা তখন থেকে আজ পর্যন্ত এখনও জানে না যে, তার পৈত্রিক সম্পত্তি কতটুকু আছে। (তবে হ্যাঁ আমরা জানি মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি ৯০ শতাংশ জমি) এবং মা তাদেরকে কখনও এ কথা বলেনি যে, আমি আমার এত পরিমাণ জায়গা এত টাকা দিয়ে বিক্রি করতেছি। ঠিক মামারাও মাকে কখনও এ কথা বলেনি যে- তোমার পৈত্রিক এত গন্ডা জায়গা আমরা দশ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করতেছি; বরং তারা চাইতো যে এই সহজ সরল মানুষকে কিছু টাকা দিয়ে তার জমিগুলো ক্রয়-বিক্রয় বলে ভোগ দখলে নিয়ে নিতে। তাদের এরকম টাকা দিয়ে মা থেকে এই জায়গা নেয়ার ব্যাপারে কোনো লোকই জানতো না। এমনকি আমার বাবা পর্যন্ত কিছুই জানতো না। এখন তারা ২৪ বছর পর এসে মাকে বলে যে, জমিতো রেজিষ্ট্রি করানো হয়নি, চলো আমাদের সাথে জমিগুলো রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে আসো। আমরা খুশি করে দেবো তোমাকে। এখন আমার মা আমার থেকে পরামর্শ চাচ্ছে যে, এখন কী করবে। কিন্তু আমার কথা হলো- মা যেহেতু তাদেরকে ওই জায়গা বিক্রি করেনি বরং শুধু কিছু টাকা নিয়েছে নিজের জন্য, তার বিক্রি উদ্দেশ্য ছিল না। তাই এখন আমি চাচ্ছি তাদেরকে তাদের ওই টাকা ফেরত দিয়ে দিবো, আমরা তাদের কাছে ওই জায়গা বিক্রি করব না।
এখন হুজুরের কাছে জানার বিষয় হলো, উক্ত ঘটনার শরয়ী সমাধান কী হবে এবং আমাদের কী করণীয় তা জানিয়ে আমাদেরকে তাদের এই জুলুম থেকে রক্ষা করবেন।
সমাধান: ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে এক অন্যতম শর্ত হলো, বিক্রয়ের পণ্য ও তার মূল্য উভয়টা ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের কাছে নির্ধারিত হওয়া। যাতে পরবর্তীতে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে বিক্রয় পণ্য ও তার মূল্য আদায় করার ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ ও পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কোনো প্রকার ঝগড়া বিবাদ না হয়। প্রশ্নের বর্ণনা সত্য হওয়ার নিমিত্তে প্রশ্নোক্ত সূরতে যেহেতু বিক্রয় পণ্য ও তার মূল্য উভয়টা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে অজ্ঞাত ও অনির্ধারিত ছিলো (যার কারণে আজ তারা উভয়ে উক্ত প্রশ্নের জায়গার পরিমাণ ও তার মূল্য নিয়ে অসন্তুষ্টিতে লিপ্ত) তাই উক্ত ক্রয়-বিক্রয় শরীয়তে ইসলামির মূলনীতির পরিপন্থি হওয়ার কারণে সহীহ হয়নি।
অতএব, এখন যদি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উক্ত জমিন ক্রয়-বিক্রয়ের উপর সম্মতি পোষণ করেন, তাহলে তাদের জন্য জরুরি হলো উক্ত জমির পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণ করে শরয়ী পন্থায় নতুন আঙ্গিকে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি সম্পাদন করা। আর যদি তাদের যে কোনো একজন ক্রয়-বিক্রয়ের উপর রাজি না হয়, এমতাবস্থায় বিক্রেতার জন্য ক্রেতার কাছ থেকে নেয়া সম্পূর্ণ অর্থ তাকে ফেরত দেয়া আবশ্যক। (হিদায়া- ৩/২০, বাদায়েউস সানায়ে- ৪/৩৫৫, রদ্দুল মুহতার মাআ দুররিল মুখতার- ৭/৪৬, বাহরুর রায়েক- ৫/৪৩৬)।
মান্নত প্রসঙ্গে
(৯৪৮৬) নাম-ঠিকানা বিহীন।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মান্নত করা যাবে কি না?
সমাধান: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মান্নত করা হারাম। কারণ, মান্নত ইবাদত। আর আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো জন্য ইবাদত করা শিরক। (সূরা বাকারা- ১৭৩, সূরা নিসা- ৩৬, সুনানে ইবনে মাজাহ- ৪৪৬, দুররে মুখতার- ৩/৪৯১, বাহরুর রায়েক- ২/৫২০, শরহুল আকায়েদ- ৮০)।
নামাযে সন্দেহ হওয়া প্রসঙ্গে
(৯৪৮৭) উম্মে ইসমাইল খান, ঠিকানা বিহীন।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, বয়স বেশি হওয়ার কারণে স্মৃতি শক্তি আগের মতো নেই। তাই নামায পড়ার সময় সন্দেহ সৃষ্টি হয়, কত রাকআত পড়েছি আর কত রাকআত পড়িনি। এই বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে আমার জন্য করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: যদি আপনার নামাযের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, চার রাকআত পড়েছেন নাকি তিন রাকআত পড়েছেন। তবে এই সন্দেহ নতুন হলে, এক দিকে সালাম ফিরিয়ে সেই নামায ছেড়ে দিবেন। অতঃপর উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নিবেন।
আর যদি প্রায়ই এরূপ সন্দেহ হয়, তবে ভেবে দেখবেন যে, আপনার প্রবল ধারণা তিন বা চারের কোনদিকে বেশি ঝোঁকে। যদি প্রবল ধারণা তিন রাকআত পড়ার দিকে বেশি ঝোঁকে তবে তিন রাকআত পড়েছেন ধরে নিয়ে, আর এক রাকআত পড়ে নামায সমাপ্ত করবেন। আর যদি চার রাকআত পড়ার প্রতি প্রবল ধারণা হয়, তবে চার রাকআত পড়া হয়েছে ধরে নিয়ে নামায সমাপ্ত করবেন। আর কোনো রাকআত সংযুক্ত করতে হবে না।
এরূপ সন্দেহের কারণে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। (অবশ্য যদি চিন্তা করতে করতে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় নামাযের কোনো কাজ ছাড়াই কাটিয়ে দেন তবে সিজদায়ে সাহু করতে হবে)। আর যদি ধারণা উভয় দিকে সমান হয় এবং তিন রাকআত বা চার রাকআত কোনো দিকেই ধারণা বেশি প্রবল না হয়।
তাহলে তিন রাকআত (অর্থাৎ কমটাই) পড়া হয়েছে ধরে নেবেন। কিন্তু এ তৃতীয় রাকআতেও বসে তাশাহুদ পাঠ করবেন। (কেননা, এটাই চতুর্থ রাকআতও হতে পারে) তারপর আরও এক রাকআত পড়ে চার রাকআত পূর্ণ করবেন এবং চতুর্থ রাকাতেও বসে তাশাহহুদ পাঠ ও সিজদায়ে সাহু করতে হবে। (দুররে মুখতার- ২/৬৭, হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন- ২/২৭৭, বাহরুর রায়েক- ২/১৯৬)।
বিতির নামায প্রসঙ্গে
(৯৪৮৮) মুহাম্মদ আবু সাঈদ, জিদ্দা, সৌদিআরব।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, হারাম শরীফ আর মসজিদে নববীতে বিতির নামায দুই সালামে শেষ করা হয়। এমতাবস্থায় হানাফী মাযহাবের লোকেরা কীভাবে তা আদায় করবে। জানিয়ে বাধিত করবেন।
সমাধান: হানাফি মাযহাবের বিশুদ্ধ মত হলো, এক সালামে তিন রাকাত বিতিরের নামায আদায় করা। তবে হারামাইন শরীফাইনে যদি কোনো হানাফি মাযহাবের লোক ইমাম সাহেবের মতো বিতির নামায আদায় করে, তাহলে তার বিতিরের নামায আদায় হয়ে যাবে; ইমাম আবু বকর আল-জাসসাস আল-রাযীর মত অনুযায়ী এবং বর্তমান যামানায় এই মতটাই অধিক গ্রহণযোগ্য।
তবে সতর্কতাস্বরূপ একাকি বিতির নামায আদায় করা উত্তম। অথবা তাদের সাথে পড়ার পর পুনরায় পড়ে নিবে। (মাআরিফুস সুনান- ৪/১৭০, বাহরুর রায়েক- ২/৬৮, ফয়জুল বারী- ৩৫২, ফাতাওয়ায়ে কাসিমিয়া- ৮/১১৬)।
হায়াতুন নবী প্রসঙ্গ
(৯৪৮৯) নাম-ঠিকানা বিহীন।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, পবিত্র রওজা শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবিত আছেন কি না?
সমাধান: কুরআন-হাদীস এবং ফিকহের কিতাবসমূহ অধ্যয়নে একথা প্রতীয়মান হয় যে, সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুর পর ‘আলমে বরজখ’ তথা দুনিয়াবী হায়াত ও কিয়ামতের পূর্ববর্তী হায়াতের মধ্যবর্তী সময়ে যা সাধারণত কবরে হয়ে থাকে। হায়াতে বরজখীর সাথে স্ব-শরীরে জীবিত আছেন। এটা তাঁদের বৈশিষ্ট্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এটাই বিশুদ্ধ আকীদা। (সূরা আলে ইমরান- ১৬৯, মিরকাতুল মাফাতীহ- ১/২৪২, আল আকীদাতু ওয়া ইলমুল কালাম- ৫৩২, কিফায়াতুল মুফতী- ১/৪১২)।
তাহারাত প্রসঙ্গে
(৯৪৯০) মুহাম্মদ আবুল বাশার, শেরপুর।
জিজ্ঞাসা: যদি জুনুবী মহিলার (অপবিত্র অবস্থায়) মাসিক চলে আসে, তাহলে তার উপর মাসিক আসার পূর্বের ফরয গোসল সম্পন্ন করতে হবে কি না?
সমাধান: যেহেতু জুনুবী মহিলার মাসিক চলে আসার পর মাসিক চলাকালীন গোসল করার দ্বারা গোসলের উদ্দেশ্য (নামায ইত্যাদি) আদায় হবে না। অতএব, মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে গোসল করে পবিত্র হওয়ার বাধ্যবাধকতা আর বহাল থাকে না। মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর একবার গোসল করে নিলেই হবে। (ফাতহুল কাদীর- ১/৫৬-৫৭, বাহরুর রায়েক- ১/৮৯, রদ্দুল মুহতার- ১/১৯১, দুররে মুখতার- ১/৩০৯)।
ওরশ প্রসঙ্গে
(৯৪৯১) নাম-ঠিকানা বিহীন।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের গ্রামে কিছু লোক ওরশ করে এবং সেখানে ঢোল, তবলা বাজায় এবং গান গায়। তারা বলে এটা নাকি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাদের এই দাবি কি সঠিক?
সমাধান: উপরে উল্লিখিত কার্যকলাপ কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়; বরং তা হারাম ও বিদআত। বিধায় উক্ত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। স্বপক্ষের দাবিদারের দাবি সঠিক নয়; সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুরআন সুন্নায় এমন অপকর্মকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা লুকমান- ৬, আবু দাউদ- ৫৭০, তাফসীরে মাযহারী- ৭/২৪৬-৫০, তাফসীরে রুহুল মাআনী- ২১-২২/৯০, রদ্দুল মুহতার- ৯/৬৫১)।
ওরশ প্রসঙ্গে
(৯৪৯২) নাম-ঠিকানা বিহীন।
জিজ্ঞাসা: মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের গ্রামে কিছু লোক ওরশ করে এবং সেখানে ঢোল, তবলা বাজায় এবং গান গায়। তারা বলে এটা নাকি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাদের এই দাবি কি সঠিক?
সমাধান: উপরে উল্লিখিত কার্যকলাপ কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়; বরং তা হারাম ও বিদআত। বিধায় উক্ত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। স্বপক্ষের দাবিদারের দাবি সঠিক নয়; সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুরআন সুন্নায় এমন অপকর্মকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা লুকমান- ৬, আবু দাউদ- ৫৭০, তাফসীরে মাযহারী- ৭/২৪৬-৫০, তাফসীরে রুহুল মাআনী- ২১-২২/৯০, রদ্দুল মুহতার- ৯/৬৫১)।
#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ
মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/