কিশোর মুঈন

পরিচালকের চিঠি

প্রিয় কিশোর বন্ধুরা!

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশাকরি সকলেই ভালো আছো। আমিও আলহামদুলিল্লাহ তোমাদের দুআর বরকতে ভালো আছি। বন্ধুরা, আল্লাহ তাআলার লাখো-কোটি শোকরিয়া যে, তিনি আমাদেরকে মুসলিম পরিবারে জন্ম দিয়েছেন। মুসলিম এবং ইসলামের পরিচয়ে আমাদেরকে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। নিজের মুসলিম পরিচয় রক্ষা করা এটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মুসলমানের জন্য এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যা তাঁর মুসলিম পরিচয়কে দুর্বল করে তুলে, ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। কারণ, ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যার রয়েছে আলাদা স্বাতন্ত্র্য, আলাদা বৈশিষ্ট্য ও নিজস্ব সংস্কৃতি।

তাই তো নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অর্ন্তভুক্ত। এখন পৃথিবীজুড়ে বিশ^কাপ ফুটবলের জোয়ার শুরু হয়েছে। এই খেলাকে কেন্দ্র করে আরো শত রকমের গুনাহের আয়োজন চলছে। কুফফার আর ফাসিকদের এই জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে কতো মুসলিম যুবক তাঁর মুসলিম সত্তাকে নষ্ট করে দেয়, হারাম কাজে লিপ্ত হয়, যার কোনো হিসেব নেই। আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম যুবককে এমন হারাম কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

ইতি- তোমাদের পরিচালক ভাইয়া

সুরভিত ফুল হতে চাই

মাদ্রাসা থেকে প্রথম যেদিন ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম, সেদিন আম্মা বলেছিলেন, আমি নাকি শুকিয়ে গেছি। আম্মার দৃষ্টিতে আমি সব সময়ই ‘শুকনো’ ছেলে। তাই তিনি খাবারের পর ভিটামিন-সিরাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন, ভিটামিনের ঘাটতি দূর করতে আমাকে নাকি এটা খেতেই হবে। ওষুধ হিসেবে সিরাপ-টিরাপ আমার একেবারেই অপছন্দ। আম্মা এও  বলে দিলেন, খেতে মিষ্টি হবে, আমার তেমন অসুবিধে হবে না। মায়ের মমতাময় আবদারকে আমি না করতে পারিনি। তবে ওষুধের গায়ে দৃষ্টি পড়তেই আমি মনে মনে খুব হাসলাম। ওষুধের গায়ে কার্টুনের একটি ছবি লাগানো।

বুঝতে পারলাম, এটা ছোট বোনের ওষুধ। ওর বয়স দুই থেকে আড়াই হবে। বয়স আমার বিশ ছুঁইছুঁই। অথচ আম্মার কাছে আমি এখনো দুই বছরের শিশু। বয়সের হিসেবে সন্তান যতই বড় হোক না কেন, মায়েদের কাছে আদরের শিশুর মতোই। এখানেই আছে রহস্যঘেরা মমতা, স্নেহ ও ভালোবাসা। আম্মা খুব বিস্ময় নিয়ে আমার কাছে জানতে চান, মাদ্রাসায় আমি কীভাবে রান্না করি। ছাত্রাবাসে কীভাবে থাকি। পড়ালেখা কেমন হয়। তার বিস্ময়ে ফুটে ওঠে অদ্ভুত মমতা। এই তো গতকাল রাতে জিজ্ঞেস করলেন- আমি কি খেতে চাই, ফ্রিজ থেকে কোন মাছ বের করবেন। আমি কোনোটাই  বলিনি। তাঁর ইচ্ছের উপর ছেড়ে দিয়েছি।

আজ আমার মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়ার দিন। আমার পা দু’টোকে কে যেন কামড়ে ধরেছে। যেতে দিচ্ছে না। এক আকাশ মমতা আমাকে চেপে ধরেছে। তবুও যে আমাকে যেতে হবে ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে। মনে হচ্ছে, আমার সবটুকু শরীর রেখে আসছি বাড়ির ওই মমতামাখা আঙিনায়, আর আমি হাওয়ায় ভাসছি। সমতল আর নিখুঁত আদুরে জীবনের পথ ছেড়ে বন্ধুর অসমতল পথে আমার যেতে মন চাচ্ছে না। ভেতরে ভেতরে শ্রাবণের মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে পড়ার  মতো আমি কাঁদছি।

আমার এক ওস্তাদজীর মুখে শুনেছিলাম, তুমি যদি ইলমের জন্য নিজের সবটুকু বিলিয়ে দাও তাহলে ইলম তোমাকে তার থেকে খুব অল্পই দিবে। ইলমের জন্য অনেক ত্যাগ, অনেক কুরবানী করতে হবে। অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হবে। যারা ইলমের জন্য নিজের আরাম-আয়েশ, আনন্দ-ফূর্তি কুরবান করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কবুল করেছেন। যুগ থেকে যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অন্যদের জন্য নিদর্শন বানিয়ে রেখেছেন। ইসলাম কখনো কারো জন্য থমকে যায়নি, যাবেও না। এ দায়িত্ব আল্লাহ সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দিয়ে আসছেন।

আল্লাহ আমাকে ইলমের জন্য কবুল করেছেন। এর থেকে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে!? ভাবতে অবাক লাগে, তিনি আমার মতো অযোগ্যকে পছন্দ করেন। আমাকে ইলমের পথে রেখে দিয়েছেন। আমাকে তিনি কত ভালোবাসেন! তিনি আমাকে আমার মায়ের চেয়েও বেশি স্নেহ করেন। কত ভালো তিনি। কত উত্তম অভিভাবক তিনি!

আমি তো ইলমের জন্য কিছুই করিনি। কিছুই করছি না। তাহলে? তিনি আমায় ভালোবাসবেন! স্নেহ করবেন!

দুআয় মিনতি করে আল্লাহকে খুব করে বলি, তুমি আমাকে একটি সুগন্ধি ফুল বানাও। ইলমের ফুল। যে ফুলের সৌন্দর্যে, যে ফুলের সৌরভে উপকৃত হবে সবাই। সবার মন উৎফুল্লিত হবে। আমাকে কোনো ঝরে যাওয়া ফুল বানিয়ো না যাকে দেখে সবাই নাক ছিটকাবে। ঘৃণাভরে তাকাবে। আচ্ছা আমরা কেন সময় নষ্ট করছি! কেন নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছি কোন ঘৃণিত বস্তুয় রূপান্তর করতে! আমরা কি চাই না ফুল হতে! ইলমের ফুল।

-ফাহিমুল ইসলাম

আরও পড়তে পারেন-

আমার রাত

রাত। রাত মানে নীরবতা। রাত মানে নিস্তব্ধতার চাদর। রাত মানে চাঁদের হাসি। রাত মানে ঘুমন্ত নগরী। রাত মানে অন্ধকারের মেলা। রাত মানে তারাদের হাতছানি। রাত মানে জোনাকির আলো। রাত মানে জোসনার সমাগম। রাত মানে নতুন ভোরের পূর্বাভাস। এই রাত কারো জন্য যন্ত্রণার। কারো জন্যে আনন্দের। কারো রাত কাটে চোখের জলে ভেজা বালিশে। কারো আবার নেশার ঘোরে। কারো বা আবার প্রভুর সাথে প্রেমালাপে। কারো কাটে ফোনালাপে। কেউ মাখলুকের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে সলিল সমাধি হয়ে যায়। আর কেউ খালেকের প্রেম দরিয়া সাঁতারের প্রতিযোগিতায় মত্ত। এই রাত মানে মুক্ত প্রেমের মঞ্চ। এই তো রাত। কতো রাত আসে যায়। রাতের অজানা কাহিনীগুলো অজানাই থেকে যায়। রাতে ঘুমিয়ে যায় নগরী। জেগে থাকে আমার কলম। কলমের সাথে রাতের বেশ মিতালি। কলমবন্ধুকে রাতে পাওয়া যায় খুব কাছে। একান্ত আপন করে। তাই তো সবাই ঘুমিয়ে যায় রাতে। জেগে থাকি আমি আর আমার পরম বন্ধু কলম। এই তো আমার রাত এভাবেই কেটে যায় আমার রাত।

-মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সাদী

নির্দয়তা

নির্দয়-নিষ্ঠুর এই শহর। মায়াহীন ভূবন। দিন পেরিয়ে রাতের শুভাগমন। সন্ধে ছায়ায় ছেয়ে গেছে পূর্বগগন। সূর্যাস্তের লালিম আভায় লালিমাময় পশ্চিমাকাশ। ক্লান্তশ্রান্ত সাদিক। কতইবা বয়স তাঁর! আট বা নয় হবে। লিকলিকে ছোট্ট এই কিশোর এই বয়সে শহরময় দাপিয়ে বেড়ানোর কথা। কিন্তু সারাবেলা কাটে তাঁর নিষ্ঠুর এই শহরের গলি-ঘুপচিতে ঘুরেফিরে। নেতিয়ে গেছে শরীর। ক্লান্ত শরীরে বিকেলের মুক্ত হাওয়ায় ধপাস করে বসে পড়লো কমলাপুর রেলস্টেশনের অলিন্দে। সারা শরীরময় ব্যথা অনুভব করছে।

সেই সকালে এক টুকরো বাসি রুটি খেয়ে বেরিয়ে ছিলো সাদিক। আর খাওয়া-নাওয়ার খোঁজ নেই। স্টেশনের চাতালে বসে সাদিক এই শহর নিয়ে ভাবছে। প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে শূন্যেÑশহর তুমি এতোটা নিষ্ঠুর কেন? এসব ভাবতে ভাবতেই ঘন অন্ধকারে ছেয়ে আসছে নীলাভ আকাশ। ক্রমশ রাত ঘনীভূত হয়ে আসছে। তড়িঘড়ি করে ওঠে দাঁড়ায় সাদিক। বসে থাকার সময় যে নেই তাঁর হাতে।

সাদিকের মা হাসপাতালের বেডে শুয়ে তড়পাচ্ছে। মৃত্যুর প্রহর গুণছে অনবরত। তার মায়ের দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। অভাবী সংসার। জন্মের আগেই তাঁর বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। সাদিকরা দুই ভাই-বোন। ছোট বোন রুহি। তার বয়স সাত। ফুটফুটে মোহনীয় তাঁর গড়ন। চাঁদের মতো সুন্দর তাঁর চেহারা। টানা টানা আঁখিজল। চটপটে ও চাঞ্চল্যতায়ই কাটে তাঁর সারাবেলা। সাদিকের মা বাসায় বাসায় কাজ করে, ইট ভাঙে, ধোপার কাজ করে কোনমতে সাদিক-রুহিকে লালন করছিলো। অকস্মাৎ এক অবর্ণীয় বিপদ তাকে ঘিরে ধরে। তাঁর দুটো কিডনিই অচল হয়ে পড়ে।

মায়ের অপারেশনের জন্য বিশ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। সাদিক কী এত টাকা কখনো দেখেছে! আর এতটুকুন ছেলে কীভাবেই বা এত টাকার যোগান দেবে! তবুও চেষ্টায় কমতি নেই। “আমি মা’কে নিয়ে বাঁচতে চাই-মা’ই আমার জীবন এবং আমার স্বপ্ন” এই লেখাযুক্ত প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে পাগলের মতো শহর থেকে শহর ঘুরে-বেড়াচ্ছে সাদিক। দু-মাসে মাত্র বিশ হাজার টাকা যোগাড় হয়েছে। গত পরশু সাদিক তাদের ইউপি চেয়ারম্যানে সুরুজ মন্ডলের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলো। সহযোগিতার বদলে চেয়ারম্যান তাকে ঘাড় ধাক্কায় বের করে দেয় এবং তাঁদের ভিটেমাটিটুকুও দখল করে নেয়।। সেদিন চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ছিলো সাদিক। তবুও গ্রামের কেউ তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো সাদিক। হাসপাতালের এরিয়ায় ঢুকতেই বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে ভেসে এলে কান্নার সুর। সাদিকের কাছে খুব আপন এবং চিরচেনা লাগছে কান্নার সুর। আরেকটু এগোলেই সাদিকের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো এই কণ্ঠ তো রুহির। সাদিকের হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠলো। রুহি চিৎকার করে ডাকছে- ভাইয়্যা…ভাইয়্যা… তুমি কোথায় গেলা!? মা তো আর বেঁচে নেই।

মায়ের লাশের সামনে নিস্তব্ধ জড়পদার্থের ন্যায় সটান দাঁড়িয়ে আছে সাদিক। মুখে কোন কথা নেই। ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সাদিক- যেন বোবা হয়ে গেছে। ছোট্ট মেয়ে রুহি কান্নার সুরে সুরে জানান দিচ্ছে মায়ের মৃত্যু মুহূর্তগুলোর পূর্বাবস্থা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে টাকা না দিতে পারায় ডাক্তার ও নার্সরা মিলে আমাকেসহ মা-কে  হাসপাতালের বাইরে বের করে দেয়। স্বাস্থ্যের অবনতি ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকায় মা এই পৃথিবীকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানায়।

রুহি হাসপাতের রেলিং ধরে শুধু মা মা বলে চিৎকার করছে। এই চিৎকার বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়। মায়ের শবদেহের পাশে দাঁড়িয়ে বোবাকান্নার মতো ঠুকরে ঠুকরে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে সাদিক। মাকে নিয়ে বাঁচতে চাই, মা’ই আমার জীবন এবং আমার স্বপ্ন ।

– মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম

শিক্ষার্থী: জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া উত্তরা, ঢাকা।

ইতিহাসের শিক্ষা

উমাইয়্যা খলিফা মারওয়ান ইবনুল হাকামকে তার সমসাময়িক প্রবীণ তাবেঈদের মাঝে গণ্য করা হতো। তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। শিক্ষা-সাহিত্য, সামরিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দক্ষতা, বীরত্ব ও শরঈ মাসায়েলের ব্যুৎপত্তি জ্ঞানে তিনি ছিলেন উচ্চস্তরের মানুষ। কিন্তু রাজনীতির ময়দানের বিভ্রান্তি তাকে কালিমাযুক্ত করে দিয়েছে। ইতিহাসে তাঁর পরিচিতি মারওয়ানি (উমাইয়্যাহ) খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। যদি তাঁর আস্তিনে সাহাবি তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাযি.)এর হত্যার দাগ না থাকতো এবং তিনি যদি আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়েরের (রাযি.) শরীয়াহ সম্মত খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করতেন, তাহলে ইসলামের ইতিহাসে তিনি হাসান বাসরি ও সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহ.)এর মতো তাবেঈদের মধ্যে গণ্য হতেন। তাকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধাপূর্ণ শব্দে স্মরণ করা হতো। কিন্তু যোগ্যাতার অপব্যবহার তাকে সেই স্থানে পৌঁছতে দেয়নি।

সূত্র- তারীখে উম্মতে মুসলিমাহ

– মাওলানা ইসমাঈল রেহান

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।