বিবর্তনের ভ্রান্ত দর্শন এবং প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা

।। শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

لَوْ اَرَادَ اللّٰهُ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًا لَّاصْطَفٰی مِمَّا یَخْلُقُ مَا یَشَآءُ١ۙ سُبْحٰنَهٗ١ؕ هُوَ اللّٰهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ۝۴ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بِالْحَقِّ١ۚ یُكَوِّرُ الَّیْلَ عَلَی النَّهَارِ وَ یُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَی الَّیْلِ وَ سَخَّرَ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ١ؕ كُلٌّ یَّجْرِیْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی١ؕ اَلَا هُوَ الْعَزِیْزُ الْغَفَّارُ۝۵ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ اَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ الْاَنْعَامِ ثَمٰنِیَةَ اَزْوَاجٍ١ؕ یَخْلُقُكُمْ فِیْ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنْۢ بَعْدِ خَلْقٍ فِیْ ظُلُمٰتٍ ثَلٰثٍ١ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ١ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ فَاَنّٰی تُصْرَفُوْنَ۝۶  (الزمر)

অর্থাৎ- আল্লাহ যদি সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছা করতেন, তবে তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যা কিছু ইচ্ছা মনোনীত করতেন, তিনি পবিত্র। তিনি আল্লাহ, একক পরাক্রমশালী। তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছো? (সূরা যুমার- ৪-৬ আয়াত)।

সৃষ্টিজগতের উদ্দেশ্য মানুষ

আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানী ও দয়া, তিনি যে মানবজাতিকে এক নাপাক পানি থেকে সৃষ্টির সর্বোত্তম গঠনে মায়ের পেটে সৃষ্টি করে لقد كرمنا بني آدم -র খেতাবে ভূষিত করেছেন। আমাদের থাকা- খাওয়ার জন্য আমাদের সৃষ্টির পূর্বেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আরো প্রশংসা আমাদের খালিক হান্নান ও মান্নানের যে, তিনি আমাদেরকে কুকুর-বিড়াল, বানর-শুকর না বানিয়ে মানুষ বানিয়েছেন। লক্ষ কোটি প্রশংসা আমাদের পরম দয়ালু খালিক ও মালিকের যিনি আমাদেরকে কোনো কাফেরের ঘরে জন্ম না দিয়ে মুসলমানের ঘরে জন্ম দিয়েছেন এবং আমাদেরকে সর্বশেষ ও সর্ব শ্রেষ্ট নবীর উম্মত বানিয়েছেন। আরো অশেষ হামদ ও সানা আমাদের মাওলায়ে করীমের যিনি আমাদেরকে সভ্য ও শিক্ষিত বানানোর জন্য রাসূল (সা.) এবং অলৌকিক কিতাব কুরআন মাজীদ পাঠিয়েছেন।

সৃষ্ট জগতের মূল উদ্দেশ্য মানুষ। মানুষের খেদমতের জন্য বিভিন্ন প্রাণী, গাছ-পালা, নদী-নালা, চাঁদ-সূর্য, আলো-বাতাস, ফল-ফুল, শাক-সবজি ও তরুলতা সবই। মানুষ যেন আল্লাহ তাআলার এসব নিয়ামত ব্যবহার করে এবং আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে, আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলে- তারা মারা গেলে জান্নাত লাভ করবে। আর যদি সে আল্লাহর হুকুম-আহকাম না মানে, তাহলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

সুখ-শান্তির পরিপূর্ণতা জান্নাত এবং দুঃখ-কষ্টের পরিপূর্ণতা জাহান্নাম। এই জান্নাত-জাহান্নামের অধিবাসী হওয়ার জন্যই আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তাআলা লক্ষ লক্ষ জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সৌন্দর্য ও মানুষের খেদমতের জন্য। পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন এসব জীবও থাকবে। পৃথিবী যেদিন শেষ হবে সে দিন তার গাছ-পালা, নদী-নালা, শাক-সবজী, ফল-মূল ও জীব-জন্তু সবই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ পৃথিবীর সৌন্দর্য নয় এবং অন্যান্য জীবের মতো মানুষের উৎপত্তিস্থল পৃথিবী নয়। তাই পৃথিবী শেষ হয়ে গেলে মানুষ শেষ হয়ে যাবে না।

মানুষের উৎপত্তিস্থল ‘আলমে আরওয়াহে’ আসমানে। ওই স্থান থেকে মানুষ তার নিজ বাড়ি ও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সফর আরম্ভ করেছে। রাস্তায় ছোট-বড় চারটি দেশ অতিক্রম করে তাকে গন্তব্যে পৌঁছতে  হবে।

আলমে আরওয়াহ থেকে বের হয়ে যে দেশে প্রথম প্রবেশ করতে হয় তা হলো মায়ের পেট। এই দেশ অতিক্রম করতে ৯-১০ মাস লাগে। বাহন ভালো হলে ছয় মাসেও এদেশ অতিক্রম করা যায়। দ্বিতীয় দেশ পৃথিবী। এদেশ অতিক্রম করতে ৭০-৮০ বছর লাগে। তিন নম্বরে যে দেশে প্রবেশ করতে হয় তার নাম কবর বা আলমে বারযাখ। ওই এলাকা অতিক্রম করতে ৪০ হাজার বছর লাগে। চতুর্থ পর্যায়ে যে দেশ অতিক্রম করতে হয় তার নাম হাশরের ময়দান, যা ৫০ হাজার বছরে অতিক্রম করতে হয়। তারপর গন্তব্য জান্নাত বা জাহান্নাম।

মানুষ এই সফরে যখন দ্বিতীয় দেশে অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রবেশ করে তখন ১৪/১৫ বছর সফরের পর এক পয়েন্ট পাওয়া যায়। এখান থেকে রাস্তা দুটোÑ একটি ডান দিকে চলে গেছে, জান্নাতে। অপরটি বাম দিকে জাহান্নামে। আল্লাহ তাআলা দুই রাস্তার বর্ণনা দিয়ে দিয়েছেন কুরআন মাজিদে- وهديناه النجدين অন্যত্র বলেন- انا هديناه السبيل إما شاكرا وإما كفورا

ডান দিকের রাস্তার যাত্রীকে ‘আসহাবুল ইয়ামীন’ বলা হয়। তাদের বাড়ি ও ল্যান্ড প্রোপার্টির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে গাইড বুকে এভাবে-

وَ اَصْحٰبُ الْیَمِیْنِ١ۙ۬ مَاۤ اَصْحٰبُ الْیَمِیْنِؕ۝۲۷ فِیْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍۙ۝۲۸ وَّ طَلْحٍ مَّنْضُوْدٍۙ۝۲۹ وَّ ظِلٍّ مَّمْدُوْدٍۙ۝۳۰ وَّ مَآءٍ مَّسْكُوْبٍۙ۝۳۱ وَّ فَاكِهَةٍ كَثِیْرَةٍۙ۝۳۲ لَّا مَقْطُوْعَةٍ وَّ لَا مَمْنُوْعَةٍۙ۝۳۳ وَّ فُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍؕ۝۳۴ اِنَّاۤ اَنْشَاْنٰهُنَّ اِنْشَآءًۙ۝۳۵ فَجَعَلْنٰهُنَّ اَبْكَارًاۙ۝۳۶ عُرُبًا اَتْرَابًاۙ۝۳۷ لِّاَصْحٰبِ الْیَمِیْنِ٢ؕ۠۝۳۸  (واقعه)

অর্থাৎ- * যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান। * তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষ মাঝে। * এবং কাঁদি কাঁদি কলায়। * এবং দীর্ঘ ছায়ায়। * এবং প্রবাহিত পানিতে, * ও প্রচুর ফল-মূলে, * যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়, * আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। * আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। * অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। * কামিনী, সমবয়স্কা। * ডান দিকের লোকদের জন্যে। (সূরা ওয়াকিয়া- ২৭-৩৮)।

 اِنَّ الْاَبْرَارَ یَشْرَبُوْنَ مِنْ كَاْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُوْرًاۚ۝۵ عَیْنًا یَّشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللّٰهِ یُفَجِّرُوْنَهَا تَفْجِیْرًا۝۶ یُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَ یَخَافُوْنَ یَوْمًا كَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِیْرًا۝۷ وَ یُطْعِمُوْنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّهٖ مِسْكِیْنًا وَّ یَتِیْمًا وَّ اَسِیْرًا۝۸ اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللّٰهِ لَا نُرِیْدُ مِنْكُمْ جَزَآءً وًّ لَا شُكُوْرًا۝۹ اِنَّا نَخَافُ مِنْ رَّبِّنَا یَوْمًا عَبُوْسًا قَمْطَرِیْرًا۝۱۰ فَوَقٰىهُمُ اللّٰهُ شَرَّ ذٰلِكَ الْیَوْمِ وَ لَقّٰىهُمْ نَضْرَةً وَّ سُرُوْرًاۚ۝۱۱ وَ جَزٰىهُمْ بِمَا صَبَرُوْا جَنَّةً وَّ حَرِیْرًاۙ۝۱۲ مُّتَّكِـِٕیْنَ فِیْهَا عَلَی الْاَرَآىِٕكِ١ۚ لَا یَرَوْنَ فِیْهَا شَمْسًا وَّ لَا زَمْهَرِیْرًاۚ۝۱۳ وَ دَانِیَةً عَلَیْهِمْ ظِلٰلُهَا وَ ذُلِّلَتْ قُطُوْفُهَا تَذْلِیْلًا۝۱۴ وَ یُطَافُ عَلَیْهِمْ بِاٰنِیَةٍ مِّنْ فِضَّةٍ وَّ اَكْوَابٍ كَانَتْ قَؔوَارِیْرَاۡۙ۝۱۵ قَؔوَارِیْرَاۡ مِنْ فِضَّةٍ قَدَّرُوْهَا تَقْدِیْرًا۝۱۶ وَ یُسْقَوْنَ فِیْهَا كَاْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِیْلًاۚ۝۱۷ عَیْنًا فِیْهَا تُسَمّٰی سَلْسَبِیْلًا۝۱۸ وَ یَطُوْفُ عَلَیْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَ١ۚ اِذَا رَاَیْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنْثُوْرًا۝۱۹ وَ اِذَا رَاَیْتَ ثَمَّ رَاَیْتَ نَعِیْمًا وَّ مُلْكًا كَبِیْرًا۝۲۰ عٰلِیَهُمْ ثِیَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَّ اِسْتَبْرَقٌ١٘ وَّ حُلُّوْۤا اَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ١ۚ وَ سَقٰىهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُوْرًا۝۲۱ اِنَّ هٰذَا كَانَ لَكُمْ جَزَآءً وَّ كَانَ سَعْیُكُمْ مَّشْكُوْرًا۠۝۲۲ (الدهر)

অর্থাৎ- * নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে কাফুর মিশ্রিত পানপাত্র।

* এটা একটা ঝরণা, যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে-তারা একে প্রবাহিত করবে।

* তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।

* তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।

* তারা বলে- কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের    কাছে    কোন  প্রতিদান ও  কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।

* আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ঙ্কর দিনের ভয় রাখি।

* অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন সজীবতা ও আনন্দ।

* এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমি পোশাক।

* তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।

* তার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তে রাখা হবে।

* তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফটিকের মতো পানপাত্রে।

* রূপালি স্ফটিক পাত্রে, পরিবেশনকারীরা তা পরিমাপ করে পূর্ণ করবে।

* তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র।

* এটা জান্নাতস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝরণা।

* তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।

* আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নেয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন।

* তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করোনো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকণ এবং তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন ‘শারাবান-তহুরা’।

* এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে। (সূরা দাহার, ৫-২২ আয়াত)।

গাইডবুকে বায়ের রাস্তার টুরিস্টদের গন্তব্যস্থানের বর্ণনা দেয়া হয় যে-

وَ اَصْحٰبُ الشِّمَالِ١ۙ۬ مَاۤ اَصْحٰبُ الشِّمَالِؕ۝۴۱ فِیْ سَمُوْمٍ وَّ حَمِیْمٍۙ۝۴۲ وَّ ظِلٍّ مِّنْ یَّحْمُوْمٍۙ۝۴۳ لَّا بَارِدٍ وَّ لَا كَرِیْمٍ۝۴۴ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُتْرَفِیْنَۚۖ۝۴۵ وَ كَانُوْا یُصِرُّوْنَ عَلَی الْحِنْثِ الْعَظِیْمِۚ۝۴۶ وَ كَانُوْا یَقُوْلُوْنَ١ۙ۬ اَىِٕذَا مِتْنَا وَ كُنَّا تُرَابًا وَّ عِظَامًا ءَاِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَۙ۝۴۷ اَوَ اٰبَآؤُنَا الْاَوَّلُوْنَ۝۴۸ قُلْ اِنَّ الْاَوَّلِیْنَ وَ الْاٰخِرِیْنَۙ۝۴۹ لَمَجْمُوْعُوْنَ١ۙ۬ اِلٰی مِیْقَاتِ یَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ۝۵۰ ثُمَّ اِنَّكُمْ اَیُّهَا الضَّآلُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَۙ۝۵۱ لَاٰكِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍۙ۝۵۲ فَمَالِـُٔوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَۚ۝۵۳ فَشٰرِبُوْنَ عَلَیْهِ مِنَ الْحَمِیْمِۚ۝۵۴ فَشٰرِبُوْنَ شُرْبَ الْهِیْمِؕ۝۵۵ هٰذَا نُزُلُهُمْ یَوْمَ الدِّیْنِؕ۝۵۶

* বামপার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগা তারা। * তারা থাকবে উত্তপ্ত বায়ু ও ফুটন্ত পানিতে, * এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়। * যা শীতল নয় এবং আরামদায়কও নয়। * তারা ইতঃপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল। * তারা সদাসর্বদা ঘোরতর পাপকর্মে ডুবে থাকত। * তারা বলত- আমরা যখন মরে অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাব, তখনও কি পূনরুত্থিত হব? * এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণও! * বলুন- পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ, * সবাই একত্রিত হবে এক নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। * অতঃপর হে পথভ্রষ্ট, মিথ্যারোপকারীগণ। * তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে, * অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে, * অতঃপর তার উপর পান করবে উত্তপ্ত পানি। * পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়। * কেয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন। (সূরা ওয়াকিয়া- ৪১-৫৪ আয়াত)।

وَ اَمَّا مَنْ اُوْتِیَ كِتٰبَهٗ بِشِمَالِهٖ١ۙ۬ فَیَقُوْلُ یٰلَیْتَنِیْ لَمْ اُوْتَ كِتٰبِیَهْۚ۝۲۵ وَ لَمْ اَدْرِ مَا حِسَابِیَهْۚ۝۲۶ یٰلَیْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِیَةَۚ۝۲۷ مَاۤ اَغْنٰی عَنِّیْ مَالِیَهْۚ۝۲۸ هَلَكَ عَنِّیْ سُلْطٰنِیَهْۚ۝۲۹ خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُۙ۝۳۰ ثُمَّ الْجَحِیْمَ صَلُّوْهُۙ۝۳۱ ثُمَّ فِیْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُؕ۝۳۲ اِنَّهٗ كَانَ لَا یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ الْعَظِیْمِۙ۝۳۳ وَ لَا یَحُضُّ عَلٰی طَعَامِ الْمِسْكِیْنِؕ۝۳۴ فَلَیْسَ لَهُ الْیَوْمَ هٰهُنَا حَمِیْمٌۙ۝۳۵ وَّ لَا طَعَامٌ اِلَّا مِنْ غِسْلِیْنٍۙ۝۳۶ لَّا یَاْكُلُهٗۤ اِلَّا الْخَاطِـُٔوْنَ۠۝۳۷ (الحاقة))

* যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে- হায় আমাকে যদি আমার আমল নামা না দেওয়া হতো। * আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! * হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হতো। * আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসল না। * আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল। * ফেরেশতাদেরকে বলা হবে; ধরো একে গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও, * অতঃপর নিক্ষেপ করো জাহান্নামে। * অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত করো সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। * নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। * এবং মিসকীনকে আহার্য দিতে উৎসাহিত করত না। * অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোন সুহৃদ নাই। * এবং কোন খাদ্য নাই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত। * গুনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না। (সূরা আল-হাক্কাহ- ২৫-৩৭ আয়াত)।

আরও পড়তে পারেন-

এসব হলো, বাইরোড যাত্রীদের অবস্থা। আর যারা বাই-এয়ার যাত্রা করবে, তাদের গন্তব্যস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে-

وَ السّٰبِقُوْنَ السّٰبِقُوْنَۚۙ۝۱۰ اُولٰٓىِٕكَ الْمُقَرَّبُوْنَۚ۝۱۱ فِیْ جَنّٰتِ النَّعِیْمِ۝۱۲ ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِیْنَۙ۝۱۳ وَ قَلِیْلٌ مِّنَ الْاٰخِرِیْنَؕ۝۱۴ عَلٰی سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍۙ۝۱۵ مُّتَّكِـِٕیْنَ عَلَیْهَا مُتَقٰبِلِیْنَ۝۱۶ یَطُوْفُ عَلَیْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَۙ۝۱۷ بِاَكْوَابٍ وَّ اَبَارِیْقَ١ۙ۬ وَ كَاْسٍ مِّنْ مَّعِیْنٍۙ۝۱۸ لَّا یُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَ لَا یُنْزِفُوْنَۙ۝۱۹ وَ فَاكِهَةٍ مِّمَّا یَتَخَیَّرُوْنَۙ۝۲۰ وَ لَحْمِ طَیْرٍ مِّمَّا یَشْتَهُوْنَؕ۝۲۱ وَ حُوْرٌ عِیْنٌۙ۝۲۲ كَاَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُوْنِۚ۝۲۳ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ۝۲۴ لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا وَّ لَا تَاْثِیْمًاۙ۝۲۵ اِلَّا قِیْلًا سَلٰمًا سَلٰمًا۝۲۶ (واقعه)

* অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। * তারাই নৈকট্যশীল, * অবদানের উদ্যানসমূহে, * তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। * এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে। * স্বর্ণ খচিত সিংহাসন। * তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে। * তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। * পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, * যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না। * আর তাদের পছন্দমত ফল-মূল নিয়ে, * এবং রুচিমতো পাখির মাংস নিয়ে। * তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ, * আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, * তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ। * তারা তথায় অবান্তর ও কোন খারাপ কথা শুনবে না। * কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম। (সূরা ওয়াক্বিয়া- ১০-২৬ আয়াত)।

মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ

সৃষ্টি জগতের মধ্যমণি মানুষ। পৃথিবী এক প্যান্ডেল স্বরূপ যা সাজানো হয়েছে মানুষের সমাবেশের জন্য, আর এই সমাবেশের বক্তাগণ হলেন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম। আল্লাহ তাআলা আদম সৃষ্টির পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছেন- إني جاعل في الأرض خليفه আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠাবো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করেন এবং ফেরেশতাদের বলেন আদমকে সম্মান    প্রদর্শন   করতে।  আদমকে  পৃথিবীতে পাঠানোর প্রাক্কালে জরুরি হিদায়াত দেন। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে তার আলোচনা এসেছে-

وَ اِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْۤا اِلَّاۤ اِبْلِیْسَ١ؕ اَبٰی وَ اسْتَكْبَرَ١٘ۗ وَ كَانَ مِنَ الْكٰفِرِیْنَ

অর্থাৎ- এবং যখন আমি হযরত আদম (আ.)কে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারাহ- ৩৪ আয়াত)।

পরবর্তীতে যত মানুষ দুনিয়াতে এসেছে সব আদমের সন্তানাদি। সৃষ্টিগতভাবেই এরা মানুষ-আদমের বংশধর। এমন নয় যে, বন জঙ্গল ও মাঠে ময়দানে কালের পরিবর্তনে এমনিতেই এরা মানুষে পরিণত হয়ে গেছে। কুরআন মাজিদে আদম থেকে মানুষের উৎপত্তির বিষয়টি পরিষ্কার বলা হয়েছে-

يۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّ خَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ بَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِیْرًا وَّ نِسَآءً١ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَ الْاَرْحَامَ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلَیْكُمْ رَقِیْبًا.

১. হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনিকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাকো এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সূরা নিসা- ১)।

خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ اَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ الْاَنْعَامِ ثَمٰنِیَةَ اَزْوَاجٍ١ؕ یَخْلُقُكُمْ فِیْ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنْۢ بَعْدِ خَلْقٍ فِیْ ظُلُمٰتٍ ثَلٰثٍ١ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ١ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ فَاَنّٰی تُصْرَفُوْنَ

৬. তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছো? (সূরা যামার- ৪)।

মানুষের সৃষ্টি তথ্য এটাই যে, প্রথমত হযরত আদমকে জান্নাতে তৈরি করা হয়। আদম-হাওয়া দীর্ঘকাল সেখানেই ছিলেন। পরে তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়। পৃথিবীর সকল মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী এই দর্শনে বিশ্বাস করে। এটাই বাস্তব, এটাই প্রমাণিত। [আগামী সংখ্যায় সমাপ্য]

লেখক: প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, গবেষক ও শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

#মাসিক মুঈনুল ইসলাম/এমএ

মাসিক মুঈনুল ইসলাম পড়তে ক্লিক করুন-
https://mueenulislam.com/

ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা ও মাসআলা-মাসায়েলবিষয়ক লেখা পেতে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।